আমার পাশের গ্রাম ঢোলসমুদ্র। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নে অবস্থিত ঢোলসমুদ্র গ্রাম। এই গ্রামের রয়েছে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। ঢোলসমুদ্র দিঘি তাদের একটি। স্থানীয় লোকজন এই দিঘিকে বড়পুকুর বলেও ডাকে। এই দিঘির নামানুসারে গ্রামের নামকরন হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
ঢোলসমুদ্র গ্রামটি ভাওয়াল পরগনার ডাকুরাইল মৌজার অন্তর্গত। এই ডাকুরাইল বা ডাকুরাই বা ডবাক জনপদের নাম থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। সপ্তম শতাব্দীতে ডাকুরাইল এলাকা শাসন করতেন পাল বংশের রাজা যশোপাল। যশোপালের রাজবাড়ি ঢোলসমুদ্র দিঘির পাড়েই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়।
ঢোলসমুদ্র দিঘি বেশ গভীর। লালমাটির এই দিঘিতে সারা বছর পানি থাকে। এর নামকরনের সাথে জড়িয়ে আছে একটি জনশ্রুতি।
এই দিঘির খনন কাজ শেষ হলে রাজা দিঘির গভীরতা মাপার জন্য কয়েকজন ঢুলীকে দিঘির তলদেশে নামিয়ে দেন। রাজার আদেশমত ঢুলীগন জোরে জোরে ঢোল বাজানোর পরেও দিঘির পাড়ে অবস্থানরত জনগনের কানে ঢোলের আওয়াজ পৌঁছায়নি। তাই রাজা এই দিঘির নাম রাখেন ঢোলসমুদ্র দিঘি।
দিঘির তীরে রয়েছে উঁচু সমতল ভূমি। এই উঁচু ভূমি খনন করলে হয়তো বৌদ্ধবিহারের মত পরাতন নিদর্শন বের হয়ে আসবে।
উঁচু সমতল ভূমি
লোকশ্রুতি আছে যে যশোপালের রাজপ্রাসাদের প্রাচীরের ভিতরেই ছিল আর একটি রাজপুকুর।
রাজপুকুর
রাজবাড়ির পশ্চিমে ছিল বিশাল মাঠ এবং দক্ষিণে বৌদ্ধবিহার।
উঁচু সমতল ভূমি
এই দিঘির আশেপাশে সহ পুরো গ্রামেই ছড়িয়ে আছে প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ ইট। স্থানীয় জনগন সেগুলো নানা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করছে।
বর্তমান অবস্থাঃ স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই দিঘি দখল নেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দিঘিকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা সংঘর্ষও ঘটেছে। ভূমিদস্যুরাও তাদের পদচারনার নিদর্শন রাখতে শুরু করছে।
অবিলম্বে এই প্রাচীন নিদর্শন গুলো সংরক্ষণ করতে না পারলে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়।
যাতায়াতঃ গুলিস্তান থেকে কালিয়াকৈর গামী আজমেরী বা বনশ্রী পরিবহনে করে সফিপুর বাজার নামতে হবে। সেখান থেকে ছিএনজি করে বড়ইবাড়ী ঢোলসমদ্র গ্রাম। দিঘির পাড়ঘেঁষে রাস্তা চলে গেছে। দিঘির পাড়েই নামতে পারবেন। ছিএনজি ভাড়া ১২০ টাকা।
তথ্য সূত্র:
রাজা ভাওয়াল সন্ন্যাস ও ভাওয়াল পরগণা (জয়নাল হোসেন )
আমার অন্যান্যঃ
রাঙ্গামাটির পথে লো...
বান্দরবন-১: নীলগিরির পথে লো..
বান্দরবন-২: নীলাচল ও অন্যান্য
অবশেষে কক্সবাজার...
ইদ্রাকপুর কেল্লা : কালের সাক্ষী..
লালকমল
pronaya@yahoo.com
মন্তব্য
বাঙালি এমন এক জাতি যারা সত্যেন বোসের বাড়িটা অবলীলায় ভেঙ্গে ফেলে তারপর পয়সা খরচ করে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে আইনস্টাইনের বাড়ি দেখে আসে।
সুতরাং, কোন সমস্যা নাই। দেশে যতো খাল-বিল-দীঘি-নালা আছে সব ভরাট হয়ে সুরম্য অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠুক। তারপর আমরা পয়সা খরচ করে ইউরোপে গিয়ে দীঘি দেখে আসবো।
আসলেই। এই বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। এইগুলি ঠিকমত সংরক্ষণ করতে পারলে বাংলা হয়ে উঠবে ইতিহাসের আন্যতম আগ্রহবিন্দু।
এইটা একটা কড়ড়া মন্তব্য হইছে মেম্বর।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দেখার লিস্টিতে তুলে রাখলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বেশি দেরি করলে আবার নাও পাইতে পারেন
জয়নাল হোসেন কি কৃষিবিদ জয়নাল হোসেন? ওনার কয়েকটি অপরিচিত বই আছে। তথ্যের জন্য চমৎকার। ইতিহাসের জন্য প্রয়োজনীয়। কেউ জয়ত জানতেই পায়না!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
হ্যাঁ । বর্তমানে সার্ডি তে কর্মরত আছেন।
ঢাকার খুব কাছেই দেখবার মতো একটা জায়গার সন্ধান পেলাম।
ধন্যবাদ।
চলে আসেন। ভালো লাগবে। জ্যাম না থাকলে ২-৩০ মিঃ এর পথ।
আশা করছি এই প্রাচীন দীধি ও সাথে বরেন্দ্রভূমিটিও রক্ষা পাবে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে!
আপনার অন্যান্য পোস্টগুলোও দেখলাম, নিজের দেশের রূপ দেখতে অন্যরকম ভালো লাগল। অনেক ধন্যবাদ!
দেশের উপেক্ষিত একটা ঐতিহাসিক স্থানকে নিয়ে এই প্রতিবেদনের জন্য আপনাকে সাধুবাদ।
বাড়ীর পাশে থাকলে যা হয়। ঠিক মত গুরুত্ব দেয়া হয় না। অনেক দিন ধরে লিখব লিখব করে শেষ পর্যন্ত লিখতে পারলাম ।
দারুন জায়গা। যদিও আমার বাড়ি কালিয়াকৈর এই কিন্তু এই গ্রামের নাম শুনি নাই।
কালিয়াকৈর থেকে ৭/৮ কিমি পূর্বদিকে।
গুরুত্বপূর্ণ লেখা, দেখেন যদি কোন জায়গায় দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা যায়।
এমন অনেক দেখেছি, কিছুই করতে পারি নি, এখনো মহাস্থানগড়ের ইট খুলে নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়
facebook
১। ডাকুরাইল > ডাকুরাই > ডবাক > ঢাকা - এই অতি কষ্টকল্পিত তথ্যটির রেফারেন্স প্রয়োজন। আর কোথাও কখনো এই কথা পড়তে পাইনি।
২। পাল ডায়নাস্টির শুরু ৭৫০ খ্রীস্টাব্দে মানে অষ্টম শতকে। তাহলে সপ্তম শতকে পাল রাজা কোথা থেকে আসলেন? জ্ঞাত ২২ জন পাল রাজার মধ্যে কারো নাম যশোপাল নয়। তাছাড়া যেখানে কালিয়াকৈর পাল রাজ্যভুক্ত ছিল কিনা সেটা নিশ্চিত নয় সেখানে যশোপালের রাজবাড়ী থাকা আরও অতি কষ্টকল্পনা।
৩। দীঘি কত গভীর হলে তার তলার ঢোলের শব্দ উপর থেকে শোনা যাবে না? বরং প্রতিধ্বনির জন্য ঢোলের শব্দ তো আরও বর্ধিত রূপে শোনা যাওয়ার কথা।
৪। অপার সৌন্দর্যের আধার গাজীপুরের বন-জলাভূমি বহু কাল আগেই ভূমিদস্যুদের কবলে পড়েছে। এবং এগুলো ধ্বংস করে নানা শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। এই ১১ বছরে ঢোলসমুদ্র দিঘী টিকে আছে কিনা তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন