শুক্রবার সকাল – সপ্তাহান্তের দু’দিন ছুটির কেবল শুরু; এই কিছুদিন আগেও এসময়টাতে আমাকে বিছানা থেকে উঠানো কারো সাধ্যে ছিলোনা! আজকাল অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে; ছেলের ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার মা তাকে কট থেকে তুলে বিছানায় রেখে উঠে পড়েন প্রাত্যহিক কাজে। ছেলে আপন মনে হাত-পা ছুঁড়ে খেলতে থাকে, আর তার হাসির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমিও যোগ দেই তার সাথে। ‘পৃথীবিতে স্বর্গ বলে কিছু যদি থাকে – তবে তা এখানে, তবে তা এখানে!’
এই স্বর্গের মাঝেও মর্ত্যলোকের যে কাজটি প্রায়শঃই করি তা হলো মোবাইলে ইমেইল আর ফেইসবুক এক নজর দেখে নেয়া। ছেলের সাথে খেলতে খেলতেই চোখ আটকে গেলো এক বন্ধুর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে; পাবলিক বনাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কে এক-কালের সহপাঠি বন্ধু’র গণপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবস্থানসূচক এক প্যারা-ব্যাপী ‘সংগৃহীত’ বক্তব্যে।
মর্ত্যলোক নানান তর্ক-বিতর্ক আর বাদ-বিসম্বাদে ভরা! কেউ কেউ গায়ে পড়ে লাগতে ভালবাসে – কখনো অযথাই, আর কখনোবা নানান অসৎ উদ্দেশ্যে। উল্লেখিত বিবাদটি যারা শুরু করেছেন তারা শুধু কূট-তর্ক করার জন্য আসেননি। স্বজাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে হলেও বৃহৎ কায়েমি বানিজ্যিক স্বার্থ হাসিল করার জন্যে তারা আঁটঘাঁট বেঁধেই নেমেছেন। এদের দৃষ্টি আর হাত দু’ই অনেক প্রসারী, আর তাই এদের শায়েস্তা করতে শুধু সামাজিক ব্লগ ও কলম যুদ্ধই যথেষ্ট নয়; দরকার অনেক দৃঢ়তর, বাস্তবভিত্তিক প্রতিরোধ।
যাইহোক, আমি কঠোর ‘আচরণবিধি’-নিয়ন্ত্রিত একজন মানুষ; আর হাতের মুঠোয় এখন ফেইসবুক, তাই ঠিক এই মূহুর্তে এটাই আমার সীমানা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত সৃষ্টি হিসেবে, শুক্রবার সকালের স্বর্গলোকের মায়া ছিন্ন করে – অন্যথায় কদাচিৎ-কোথাও-লিখিত-মন্তব্য-করা এই আমারও – মন্তব্য লিখতে ব্যস্ত হতে ইচ্ছে হলো। লিখবো বাংলায়, আলাদা এডিটর আছে সেজন্যে। কিন্তু যতোটা ছোট করে লিখবো ভাবছিলাম, ততোটা সংক্ষেপ করা যাচ্ছে না; খানিকটা বোধ হয় ‘ইমোশনাল’ হয়ে পড়েছি! আমি কি নিজেকে প্রশ্রয় দিচ্ছি – জ্ঞাতসারে, নাকি অজান্তেই?
না, মন্তব্য খানিকটা লম্বাই হোক তবে; বিছানা ছেড়ে পিসি খোলা হোক। বাংলায়, অনেকদিন হাতেই কিছু লিখিনি, পিসি-তে তো তেমন কখনোই কিছু করা হয়নি। হোক না, অভ্র তো আছেই জানি ভরসা! লাগুক সময়, তবুও লিখা যাক। দুপুর বেলায় বৌ-বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত খানিকটা ইন্ডালজেন্স মেনে নেয়াই যায়।
***
যা নিয়ে লেখা, সেই বক্তব্যটি হুবহু উদ্ধৃত করা গেলোঃ
হ্যাঁ ভাই, আমি ঢা.বি.তে পড়ি... আমার বেতন মাসে ৩০-৪০ টাকা, আমাদের প্রায় সবারই বাপের টাকা নাই, টাকা তো দূরের কথা, অনেকের বাপ-ই নাই... টিউশনি কইরা চলি; ময়লা চুল, জিন্স আর সস্তা টিশার্ট পইড়া ক্লাসে আসি... আমগোর কোন গ্ল্যামার নাই... আছে শুধু ইমোশন... যে ইমোশনের জন্য ভার্সিটির কোন ছেলে মানেই আমাদের ভাই- আপন ভাই, তার কিছু হলে আমরা সইয্য করতে পারি না... রাস্তায় নামি, গাড়ি ভাংচুর করি... হ্যাঁ কাজটা একেবারেই অনুচিত, এবং ঢা.বি.র বিশাল ছাত্রছাত্রীর একটা ক্ষুদ্র অংশই এ কাজটা করে... এবং করার কারণ, প্রতি বছর ক্যাম্পাস এ ২/৩ টা লাশ পড়ে থাকে... এগুলা আপনারা বুঝবেন না। আপনারা শুধু বুঝেন, ঢা.বি.র ছাত্র মানেই ইমোশনাল ফকিরা পোলাপান, যারা রাস্তাঘাটে শুধু ভাঙ্গাভাঙ্গি করে... এতই যখন বুঝেন তখন এইটাও বুইঝা রাইখেন, এই ইমোশনের জোরেই হলে দুই বেলা অখাদ্য খেয়ে হইলেও, সারাদিন বিনা পয়সায়ে অজানা অচেনা মানুষরে আমরা রক্ত দিয়া বেড়াই... এই ইমোশনের জোরেই '৫২, '৬৯, '৭১ এ আমরা রাস্তায় নেমে গুলি খাইসি... স্বাধীন বাংলাদেশের সবগুলা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ব্যাক্কলের মত আমরাই রাস্তায় ছিলাম... এবং ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনারা বিলাশবহুল ফ্ল্যাটে বইসা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবেন, তখনও আমরাই রাস্তায় থাকব... এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় !!
[সংগৃহীত]
***
মন্তব্য লেখা শুরু হলোঃ
“… এবং ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজনের মুহূর্তে যখন” আপনাদেরই কেউ বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসে কিংবা শুয়ে ফেইসবুকে লিখবেন আপনার স্ত্রী বা কন্যা বা ভাইয়ের অস্ত্রোপাচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন, তখন এই আমরাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে – নিজের রক্ত পানি করে – আপনাদের জন্য রক্ত খুঁজে বেড়াবো। আর তা করবো আবেগের বশে; বাঙ্গালীর অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য যে আবেগ, তার কিয়দংশ হলেও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে বলে।
এইতো সেদিনও এ দেশে উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিম কোনও বেসরকারি বিদ্যাবাণিজ্যালয় ছিলো না। তবে শুধু ভাবছি, আপনার মতো অনেকেই যারা দেশে-বিদেশে দেশের মুখ ‘আলো’ করেছেন; যারা আজকের হর্তা বা কর্তা, তারা আসলেন কোথা থেকে? আপনারা যেসব অতি-বিজ্ঞ বুদ্ধিজীবি আমাদের এই ফকিন্ন্যালয়গুলার ধ্বংস চান, কীইবা তাদের আলমা ম্যাটার? ধারণা করছি আপনিও এককালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই ছিলেন হয়তো! নইলে এমন কোন অক্সফোর্ড-হার্ভার্ডে পড়ানো সম্ভব হয়েছিলো আপনাকে? সময়ের কী অদ্ভুত খেলা; নিয়তির আহা কী বিধান! যে ফকিরের বাচ্চাগুলির আবেগ আজ আপনার ব্যাখ্যার অতীত, সেই ফকিন্নিগুলির শামিল একদিন হয়তো আপনিও ছিলেন, ফকিরস্য ফকির হয়তোবা ছিলেন আপনার পিতা-পিতামহ! জোতদারের খামারে মাসভর কায়িক পরিশ্রম করে আপনার দিনমজুর পিতার যা জুটতো, তা আর যাই হোক, ঢাকায় আপনাকে পাঠানোর মতো যথেষ্ট নিশ্চিতভাবেই ছিলোনা। হলের গণ-রুমের মেঝেতে শয্যা পেতে বসবাস, আর কেন্টিন-ডাইনিঙ্গের স্বচ্ছ ডাল খেয়ে বেঁচে থাকতেও যেটুকু অর্থের প্রয়োজন, তার সঙ্কুলানের জন্যেও আপনাকে টিউশনির দ্বারস্থ হতে হয়েছিল!
ও, আপনার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি? তবে আপনার পিতার বা তাঁর পিতার ক্ষেত্রে ঘটেছিলো; খোঁজ নিয়ে জানুন, আপনাদের কোনও একটা প্রজন্মের জন্য এই চিত্রটিই বাস্তব ছিলো! আপনার চৌদ্দপুরুষ ধানমন্ডিতে আসমান ফুঁড়ে উদয় হননি! আর এই চিত্রকল্পের নায়ক যদি আপনিই হয়ে থাকেন, তবে তো আপনি অবশ্যই ভুলে যাননি যে, লোকাল বাসের প্রায় দরজায় বাদুরঝোলা হয়েও প্রতিদিন টিউশনিতে যাতায়াত করতে নিদেনপক্ষে দু’টি টাকা খরচ হয়ে যেত বলে আপনি সতত যাতায়াতের কাজটি হেঁটেই করতেন। আপনার ছাত্রের আত্মীয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েও আপনি যাওয়ার সাহস করেননি; কারণ শহুরে মধ্যবিত্তের বিয়েতে যেতে হলে যে ভদ্রস্থ পরিধেয় আবশ্যক, সেকালে আপনার তা ছিলোনা। সময় বদলায়; বদলেছেও। পশ্চিমা ভোগবাদি বাণিজ্যের জন্যে লাখে লাখে জামা বানায় আজ আপনার মালিকানাধীন একাধিক কারখানা।
আজ আমাদের প্রিয় সতীর্থকে হত্যা বা নিপীড়নের প্রতিবাদে আমরা শাহবাগের বা নীলক্ষেতের মোড়ে রিকশা বা মিনিবাস ভাঙ্গছি। আমাদের যৌবনের দিনগুলিতে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে এমনকি তাবৎ সভ্যতাকে ভেঙ্গে চুরে নতুন করে বিনির্মাণ করতে চাইছি। আপনাদের উত্তাল দিনগুলির কথা ভাবুন তো, আপনারাও চেয়েছিলেন, চান নি? আপনাদের কেউ কেউ বুকে গুলি নিয়েছেন, গোলাগুলি করেছেনও; মরেছেন, মেরেছেনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে, আর পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ইমোশনাল ফকিন্নির বাচ্চাগুলা বার বার আত্মত্যাগ না করলে, আজকের এই ‘নাই-নাই’-এর মাঝের যেটুকু প্রাপ্তি তাও তো আসতো না!
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, খয়রাতির অর্থনীতির অনেকটাই ইতি ঘটেছে, জীবনযাত্রার মানে উন্নয়ন এসেছে। আর এর সবটাই যে আপনার এক সময়কার আশ্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালইয়ের একক অর্জন, তা নয় বটে। তবে, এই অর্জনের বড় অংশের কৃতিত্ব নিশ্চিতকরেই তথাকথিত ‘ইমোশনাল ফকিরা পোলাপানের’। কৃতিত্বের পাশাপাশি দায়ও আছে। মেনে নিবেন আশা করি, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে সেদিনের আপনার অবদানের স্বীকৃতিটুকু গণপ্রতিষ্ঠানেরই বৃহৎ প্রাপ্তি। তবে আজকের যে বিত্তশালী, অর্থঘৃধ্নু আর বিলাসকামী আপনি তাও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই দায়, তাই না? এই দায় আমরা মাথা পেতে নিচ্ছি বিনয়ের সাথে। আজকের আপনাকে পয়দা করার লজ্জা আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানের কপালে কলঙ্কের তিলক হয়েই থাকবে। আলোকিতো আর মুক্তিকামী মানুষ হবার দীক্ষা পেয়েছিলেন যে সুতিকাগারে, স্বার্থপরের মতোন আপন লালসার মুক্তি নিশ্চিত করার পর সেই প্রতিষ্ঠানকেই আপনাদের পথের আড়াল মনে করছেন আজ!
লাশের ব্যাপারটা যে বোঝেন না, তাও তো না! এক দিন ছিলো, আপনারা ছিলেন লাশের দলে; আর আজ আছেন লাশের যারা বেনিয়া তাদের দলে! দুনিয়ার মজুরদের এক করে লড়াই করার প্রচেষ্টা ছিলো আপনার একদিন, আজ গরিবের রক্তঝরা পরিশ্রমে বৈভবের পাহাড় গড়েছেন। পণ্যের উৎপাদন আর বাণিজ্যের পাশাপাশি শিক্ষার বাণিজ্যও শুরু করেছেন অধুনা। দু’চার-দশটা মিল কারখানার পাশাপাশি সম্প্রতি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ও কিনেছেন! আর সেই বাণিজ্যিক শিক্ষালয়ের বিপণন করতে গিয়েই আপনার আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে!
আপনার সদ্য কেনা বিশ্ববাণিজ্যালয়ে; কিংবা রাজনৈতিক দলের হোমড়া চোমড়া আপনার কোনও এক ইয়ার বখশি’র পিছনে জুটেছেন আমদের কিছু শিক্ষকও। অন্যের রক্তে পাওয়া বাক-স্বাধীনতার সুযোগ অসৎভাবে নিয়ে আপনার বন্ধুরা যে টিভি চ্যানেলের মালিক হয়েছেন, শুধুই অর্থের বিচারে তাতেও নিয়মিত হাজিরা দিতে ব্যস্ত থাকেন আমাদের শিক্ষাগুরুদের কেউ কেউ। অর্থের বিনিময়ে তাদের মুল্যবান সময়টুকু কিনে নিয়েছেন আপনারা; তবু চিন্তা নেই, অতিরিক্ত সময়টুকু পেলেও চলবে আমাদের। সবাইকে কিনতে পারেননি অবশ্য; পারবেনও না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সৃষ্ট - জাতির অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে দেশ-বিদেশের কোনও প্রলোভনই বিচ্যুত করতে পারেনি; আমিরের জীবন বাদ দিয়ে এইসব ‘ইমোশনাল’ খ্যাপাটেরা ফকিরের জীবন বেছে নিয়েছেন; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফকিন্নিগুলির মগজের ভিতরে ঢুকে পড়েছেন, আমাদের জীবনের আদর্শ হবার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন অজান্তেই – আমরা আছি তাদের সাথেই।
আমরা পরিবেশ রক্ষায় অনশন করে বেড়াই আর শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করতে দেখলে আমরা আন্দোলন করি সবায় মিলে। আমরা রক্ত দিয়ে বেড়াই; আমরা জীবনের দাবিতে ভাংচুর করতেও ছাড়িনা – আমরা থাকবো আমাদের মতো করেই! তোমাদের পছন্দ হলে হবে, আর না হলে, যেচে-পরে ছাপার অযোগ্য কথা শুনতে এসো না!
***
লেখা শেষ করতে হলো। ফনেটিক বাংলা লেখার সাথে তেমন পরিচয় নেই – এটুকু লিখতেই প্রায় দুপুর হয়ে এলো – খন্ড-ত এখনো খুঁজেই পাইনি, রেখে দিয়েছি সম্পাদনার জন্যে, কোথাও থেকে কপি করে করে দিয়ে দেয়া যাবে! বৌয়ের তাড়ায় উঠতে হলো, বেরোনোর সময় প্রায় হয়ে গেলো বলে! কিন্তু লেখা তো মন্তব্যের মাপে অনেক বড় হয়ে গেছে; স্ট্যাটাস আপডেটের জন্যেও তো বটেই! … কী করা যায়? কী করা যায়? … আর যাই হোক সচলায়তনে ছাপার মতো লেখা যে হয়নি, তা তো নিশ্চিত! আর এই ইসুতে ইতোপূর্বে সচলায়তনে আলোচনাও হয়েছে; উদ্ধৃতি-সূত্রসমেত অনিন্দ্য রহমানের একটা লেখা, ও লেখার সুবাদে যুক্তি-তর্কে শাণিত আলোচনা-সমালোচনার কথা মনে এই মুহুর্তে মনে পড়ছে। যুক্তি’র একেবারে বাইরে না হলেও, আমি যা লিখতে চেয়েছি তা মূলতঃ আবেগ-নির্ভর। যদিও জানিনা বলতে পেরেছি কিনা, তবে যা নিয়ে বলতে চেয়েছি, যা আমাকে বলতে অনুপ্রাণিত করেছে আর যা লিখেছি তার পুরো ভিত্তিটাই আবেগের! ঠিক এইভাবে চিন্তা করে – মন্দ কী – রোজনামচা হিসেবেও তো আমার প্রথম লেখাটা পাঠিয়ে দিতে পারি, বাকিটা বুঝবেন সচলায়তনের মডারেটর ওরফে ‘মডু’রাই!
তা-ই করা হবে ভেবে নিয়ে বের হয়ে পড়া গেলো। যাদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য লিখতে যাওয়া, তাদের প্রতি ভাষা আরেকটু কঠোর হতে হতো; ছাপার অযোগ্য কিছু কথা ছাপানোর আবদার করাই যেতো। কিন্তু ওই যে, জীবিকাজনিত কারণে আমি আচরণবিধি-নিয়ন্ত্রিত এক মানুষ!
নিমন্ত্রণ খেয়ে দেয়ে বিকেল বেলা ফেরার পথে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে আসা হলো। একদিন যে যায়গাটাকে আমার প্রায় স্থায়ী ঠিকানার মতো মনে হতো, সেই হল-এর সামনে গাড়ী থেকে নেমে দেখছিলাম, আর স্ত্রী ও আট মাস বয়েসী ছেলেকে সন্তানকে দেখাচ্ছিলাম। আমি আবেগী মানুষ – তা পাবলিক প্রতিষ্ঠানে পরা আম-পাবলিক হওয়ার কারণেই হোক, আর পিতৃদত্ত জিনের কল্যাণেই হোক। স্ত্রীকে হতভম্ব করে দিয়ে আমার চোখে কী যেন পড়ে গেলো!
বাসায় ফেরার আগেই চোখ যখন স্বাভাবিক হয়ে আসলো – আর্দ্র কন্ঠ যখন স্থির হলো, তখন স্ত্রীকে ক্ষণকাল পূর্বে আমার নেয়া সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলোঃ আজ থেকে অনেক বছর পর আমাদের সন্তান যখন বড় হবে তাকে এই দেশেই পড়াবো, এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার দিকে ঈঙ্গিত করেও স্ত্রী তার সম্মতিই জানালেনঃ ছেলে যদি চায়, তবে তা-ই হবে!
মন্তব্য
আরেব্বাহ! লেখাটা তাহলে মডুদের কাঁচি পেরোতে পেরেছে! ভালো লাগছে অনেক, প্রথম ব্লগ লেখা বলে কথা! তবে খারাপ লাগছে বেশ কিছু ভুল-ভাল রয়ে গেছে বলে।
আর, মনে হয় একটা নিক জুড়ে দেয়া দরকার ছিলো। ইতোপূর্বে আমার করা সম্ভবতঃ একমাত্র মন্তব্যটিতে 'আজই প্রথম' নিক ব্যবহার করেছিলাম; সেটিই থাকুক। রোজ রোজই না হয় প্রথম হলাম!
সবশেষে, ধন্যবাদ সচলায়তনকে।
সচলের মডুরা কিন্তু কাঁচি চালায় না। আপনার লেখা হয় প্রকাশিত হবে, নয়তো হবে না। মাঝেমধ্যে বেখাপ্পা সাইজের ছবি অ্যাটাচ করলে পাপিষ্ঠগুলি গিয়ে ছবির মাপ ঠিক করে, এ ছাড়া তারা কারো লেখায় হাত দেয় না।
ধন্যবাদ।
দুঃখিত, আমি আসলে বলতেই ভুল করেছি, সম্পাদনার কথা বলতে চাইনি বোধ হয়! 'হ্যাঁ'/'না'-এর কঠিন সিদ্ধান্তে 'হ্যাঁ' জয়ী হয়েছে এটাই আমার খুশির কারণ। আর ভুলের দায়িত্বের পুরোটা তো অতি অবশ্যই আমার।
আর, প্রাপ্তি আসলে দ্বিগুন হয়ে গেলো, প্রথম লেখায় [আমি ব্যতিত] প্রথম মন্তব্যকারী হিমু বলে।
-আজই প্রথম
বাংলাদেশের মেধাসত্তার মূলস্তম্ভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস। অন্যায় হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন হবে। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিবাদ হার্ডলাইনে যাবে-ভাংচুর হবে- এটা এক ধরণের অসমর্থনযোগ্য প্রয়োজনীয়তা, কিছু করার নাই-এটা হবেই। তবে নির্বিচারে ভাংচুরে কিছুটা যৌক্তিকতা আনয়ন প্রয়োজন; ব্যক্তিগত ছোট কার, রিকশা, সিএনজি এগুলো ভাঙাটা কম যৌক্তিক। ভাঙার আগে যানবাহন খালি করে নেওয়াটাও জরুরি। মানুষের শারীরিক ক্ষতি কাম্য নয়।
তবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিপাত করতে চাইলে ভাংচুর না করে অন্য পথে কার্যকর প্রতিবাদ করার উপায় খুঁজে নেওয়াটা উত্তম বলবো।
আর প্রাইভেট ভার্সিটি গুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে বসা উচিৎ। দেশ ও জাতি গঠনে তারা ঠিক কীভাবে অবদান রাখতে চায় তা ঠিক করা উচিৎ।
(সচলে স্বাগতম)
_____________________
Give Her Freedom!
অনেক ধন্যবাদ – পড়ার জন্যে, আর মন্তব্যের জন্যেও।
যথার্থই বলেছেন, কখনো কখনো ভাংচুর ‘এক ধরণের অসমর্থনযোগ্য প্রয়োজনীয়তা, কিছু করার নাই-এটা হবেই।’ আর ঠিক সে কারণেই আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল সমাজে অন্যপথে, বিশেষতঃ সফট লাইনে, ‘কার্যকর প্রতিবাদ করার উপায় খুঁজে নেওয়াটা’ এখনো প্রায় অসম্ভব। তবে ভালো সময় নিশ্চয়ই আসবে এক দিন।
সহমত।
(ধন্যবাদ আবারো। লেখার ধরণ-ধারণ/মান নিয়ে উপদেশ থাকলে সানন্দে গৃহীত হবে!)
লেখাটায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রতি একটা তাচ্ছিল্যের ব্যাপার আছে। ভালো লাগল না। আপনে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করসি দেখে আমাদের যেরকম এর প্রতি সফট কর্নার কাজ করে প্রাইভেট থেকে পাস করা মানুষেরও সেইরকমই লাগে বোধ করি। "বিশ্ববাণিজ্যালয়" কথাটা কানে লাগল।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান নানাভাবেই হওয়া যায়। এর জন্য পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র হওয়া লাগে না।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ, সত্যপীর! আপনার বিচারবোধ সত্যিই প্রশংসনীয়।
তবে কিনা সময়টা এখন আর সত্যযুগ নেই! আর মুশকিল হল, কলিযুগে তাচ্ছিল্য ব্যাপারটা চলে! আমি না চাইলেও লোকে আমাকে উপহাস্যের বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলছে হামেশাই! লেখাটা আমার একক বয়ান হলেও, খেয়াল করে থাকবেন আশা করি, পুরোপুরি একতরফা নয়। কেউ একজন – বা কোন এক গোষ্টি – পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তাটাই অস্বীকার করছে; অথবা এই আঙ্গিকের প্রতিষ্ঠানগুলিকে দরিদ্রের সন্তানদের পাঠশালা বলে উপহাস করছে! তাকে বা তাদেরকে এই তাচ্ছিল্য খানিকটা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি কঠোরতর কোন কিছুর প্রস্তাব করা হয়েছে, জ্ঞানতঃই। একটা অযাচিত বিতর্কের উদ্রেককারী হিসেবে তারা এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আমার বিচারে পৃথক পৃথক সত্ত্বা!
দুঃখিত, কাউকে আঘাত দিতে চাইনি। তবে, যেখানটায় কোন কিছুর বিনিময় হয় -- এবং যেখানে বিশেষতঃ অর্থ, এই বিনিময়ের অন্যতম ‘বিবেচনা’ – সেই যায়গাটাকে বাণিজ্যালয় বলাতে দোষের কিছু দেখি না! দৃষ্টিহীনকে কানা এবং পা-বিহীন ব্যক্তিকে খোঁড়া বলাটা অবশ্যই দোষের, তবে ব্যবসায়কে ব্যবসায় বললে কারোর আঘাত পাওয়ার কারণ তো নেই! আর হ্যাঁ, "বিশ্ববাণিজ্যালয়" কথাটা কানে লেগে থাকলে, তাকে "বিদ্যাবাণিজ্যালয়" বলতে সম্মত আছি। বিদ্যা + বাণিজ্যিক আদান-প্রদান + স্থান; একেবারেই শাব্দিক অর্থে (পূর্ণবিরাম)
হওয়া যায়না তা তো আমি বলিনি, বলেছি কি! আমার কথাটা অন্যভাবে বললে এমন শোনাতোঃ জাতির অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি; আর অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানই সকল প্রলোভনকে উপেক্ষা করেছেন ... ইত্যাদি। এই প্রপঞ্চে ‘শ্রেষ্ঠ সন্তান’ আর ‘পাবলিক ভার্সিটি’ মোটেও ‘সকল’ শব্দটি দিয়ে সংযুক্ত নয়, বরং ‘অনেক’ দিয়ে; শতভাগ অপরিহার্যতা কল্পনা করে নিলে তো মুশকিল! (উদাহরণঃ আরজ আলী মাতুব্বার কোন প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থারই প্রত্যক্ষ ফসল নন)
লেখার অভ্যেস নেই, তাই দুর্বলতাকে গায়ের জোরে অস্বীকার চাইনা; তার উপর আবেগের বশে লেখা, গবেষণাপ্রসূত তো নয়ই। তাই আপনার সমালোচনা চিন্তার খোরাক যোগাবে সন্দেহ নেই।
হা হা হা। তাচ্ছিল্য করে যুগের দোহাই দিলেন মজাই লাগল। তবে আবেগজর্জরিত লেখায় যুক্তি খোঁজা আমারই ভুল হয়েছে কথাটা ঠিক।
..................................................................
#Banshibir.
আবেগ আর যুক্তির মাঝে এখানে ফাইন-লাইন আছে! লেখাটা আবেগ-নির্ভর; কিন্তু আপনার মন্তব্যের জবাবে দেয়া যুক্তি খুবই তী্ক্ষ্ণ আর যুতসই! যুগের দোহাই দেয়াটা সারকাসম্; আর ভুলক্রমে আমার ধারণা ছিলো আপনি যুক্তি, রস ও আবেগ, এ তিন-এরই সমঝদার হয়ে থাকবেন!
পোস্টের উদ্দেশ্য কেনো বার বার আপনার নজর এড়িয়ে যাচ্ছে বুঝলাম না! শুরুতেই পরিষ্কার করে দেয়া আছে যে কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তামাশা করছে, তাকে বা তাদেরকে জবাব দেয়া হয়েছে। এর মাঝে আপনি খুঁজে পেলেন প্রাইভেট ভার্সিটির প্রতি কটাক্ষ! মন্তব্যে ব্যাখ্যা দেয়া হলো, পৃথক অস্তিত্বের কথা বলা হলো, তারপরও বুঝার চেষ্টা না করাটা তাজ্জব ব্যাপার বৈকি!
নিজের দুর্বলতাকে স্বীকার করে নেয়াটা মোটেও দুর্বলতা নয়! ঠিক এই যায়গাটাকে টার্গেট করে আপনার ছোট্ট মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে তাচ্ছিল্যপূর্ণ – এবং এক্ষেত্রে তা নিতান্তই একতরফা।
ধন্যবাদ।
ভার্সিটিতে যা কিছু শিখেছি ক্লাসরুমে, তার থেকে অনেক বেশী শিখেছিলাম বাইরের সুবিশাল ক্যাম্পাস থেকে। শত শত একরের ক্যাম্পাসে সমাজের সব স্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা শিখিয়েছে - সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা । সদ্য ইন্টারপাস একটা ছেলে/মেয়ে যখন ক্যাম্পাসে ঢুকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তার মাঝে প্রকট হয়ে উঠে অপরিনত আচরণ, টিনঅ্যাজ - অহমিকা। প্রথম বর্ষ পার হতে হতে বিভিন্ন ধাক্কা খেতে খেতে এটা কেটে যায় যেমন - গ্রামের কলেজ থেকে আসা "গাইয়া" ছেলেটা যখন রেকর্ড মার্কস পেয়ে বসে, ক্লাসের ভ্যাবলা কৃষ্ণ মেয়েটি কোন অনুষ্ঠানে হাহাকার ভরা এক রবীন্দ্র গীতি গেয়ে বুকের গভীর থেকে সম্মান আদায় করে নেয় নাক উঁচা সুন্দরী ক্লাসমেটটার,ক্যান্টিনের মামা - হকার - গার্ড - হোটেলবয় এমন অনেকের সাথে গড়ে উঠে কি এক সম্পর্ক ! বিদায়ের দিন এমন এক ক্যান্টিন বালক যখন জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় ওটাই হয়ে যায় জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। জি, দুর্দান্ত ফলাফল, স্কলারশিপ, উজ্জ্বল ক্যারিয়ার - এসব ছাপিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠে শ্রেণীহীন - জাতহীন এক ক্যাম্পাসের ছবি, যেখানে দিন মজুরের ছেলে, কাজের বুয়ার মেয়ে থেকে শুরু করে গাড়ি দাবড়িয়ে আসা ছেলে - মেয়েটি একাকার হয়ে যায়। আমাদের প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে এমনটা পুরো না হলেও অনেকটা এমন পরিবেশ কি বানানো যায় না ? উচ্চ শিক্ষা সুযোগ, অধিকার তো না। যোগ্যতা দিয়েই এটা অর্জন করা উচিত। মাথার মধ্যে কিছু না থেকেও মোটা ব্যাংক বালান্স দিয়ে ডিগ্রি অর্জনের এমন সুযোগ আর অবারিত রাখা যায় না। কিছু প্রাইভেট ভার্সিটি অবশ্যই ভাল করছে। কিন্তু বাকী "এক ফ্লোর - এক ভার্সিটি" এমন "বিশ্ববিদ্যালয়"গুলোকে নজরে আনার সময় হল। আমরা আমাদের চিকিৎসা সেক্টর শেষ করে দিয়েছি, এখনি রাশ না ধরলে শিক্ষা সেক্টরও যাবে "ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া"র পাকস্থলীতে।
"ডিগ্রী হোক যথাতথার, কর্ম হোক ভাল।"
-- ঠুটা বাইগা
"আজকে প্রথম" ভাই আমি ও পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র, ২টাকা দিয়া বাসে ঝুইলায় টিউশনি কইরা খরছ মিটাইছি। কিন্তু আমি আপনার লেখাটাকে ঠিক সমর্থন করতে পারলামনা। হয়তো আমার বোঝার ভুল।
একজন সহপাঠী- সে হোক চেনা বা অচেনা মারা গেলে রাগ হবে, ক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো, সেই ক্ষোভটা একজন নিরীহ মানুষের উপর ঢেলে দেয়া। যা কোনক্রমেই উচিত না।
একবার চিন্তা করুন আপনি যখন আপনার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরছিলেন তখন রাগের মাথায়, জীবনের দাবিতে কেউ যদি আপনার গাড়ির কাচটা ভাঙ্গতে আসতো- হয়তো আপনি মেনে নিতেন। কিন্তু যে লোকটি টাকা লোন করে গাড়িটা কিনেছে, সে কী তার ভাঙ্গা গাড়ির সান্ত্বনা খুজতো ভার্সিটির উজ্জ্বল ইতিহাসে?
ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্ট হিসেবে গর্বটা ম্লান হয়ে যায় যখন কর্পোরেট অফিস মাস-মেইল দেয়, অফিসের গাড়ি ঢাকা ইউনিভার্সিটির দিকে যাবেনা কারন ঢাকা ইউনিভার্সিটি একটি সহিংসতাপ্রবন অঞ্চল। প্রাইভেট ভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের সামনে তখন অতীত গৌরবের ফুলঝুরি দিয়ে লজ্জা ঢাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
মন্তব্ব্যে ।
নতুন মন্তব্য করুন