প্রফেসরের কাছ থেকে ব্রাজিলের সম্মেলনে যোগদানের খবরটা যেদিন পাকাপাকিভাবে পেলাম সেদিন খুব খুশি হয়েছিলাম। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, তাই সাথে একটু উত্তেজনাও কাজ করছিল। কাগজপত্র হাতে পেয়ে দেখি সম্মেলন তিনদিনের, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। “জীবনের জন্য সম্মেলন, সম্মেলনের জন্য জীবন নয়” বলে মাঝখানে কফি ব্রেক আর লাঞ্চ ব্রেক আছে। হোটেল আর সম্মেলনের বাইরে দুনিয়া দেখা বলতে তৃতীয় দিনে একটা দুই ঘণ্টার সাইট ভ্রমণ, যেখানে ২০১১ সালে ব্রাজিলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। চতুর্থ দিন ব্যাক টু প্যাভিলিওন (জার্মানি, যেখানে পড়াশোনা করছি আপাতত)।
কর্পূরের মত আমার সব খুশি উবে গিয়ে তলানিতে শুধু উত্তেজনাটুকুই পড়ে রইল।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি ছাড়া আরও যে দুই জন যাবে তারা হল ব্রাজিলের মার্সেলো জোসে বিয়ানকো আর গুয়াতেমালার ডিয়েগো ভেলাসকাস হফরে। যেতে আমাদের তখন আরও মাস দেড়েকের মত বাকি, ভিসা টিকেট কিছুর ব্যবস্থা হয়নি, এইসময় একদিন মার্সেলো জানাল, আমরা যদি তিন দিনের পরিবর্তে দশ দিন থাকি তাহলে ও ওর কিছু বিশেষ ব্যক্তিগত কাজ সারতে পারে। এই অতিরিক্ত সাত দিন থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা সে করবে। যাতায়াতের খরচ নিজস্ব। এখন শুধু আমরা রাজি হলেই হয়। আমি তো না চাইতেই যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলাম কিন্তু সমস্যা হল এই ১০ দিনের জন্য ছুটির ব্যবস্থা করাটা নিয়ে। যেহেতু পুরো ব্যাপারটা সামাল দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সেক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত সাত দিনের ছুটিটাকে কিভাবে তাদের এখতিয়ারে রেখেই হালাল করা যায় সে বিষয় নিয়ে একটা সমাধান দেয়ার জন্য আমরা আমদের প্রফেসরকে তিন জন মিলে তিন দিক থেকে চেপে ধরলাম। দেবদূতের মত তিন দিন পর তিনি আমাদের জন্য খবর আনলেন, কর্তৃপক্ষ এই শর্তে রাজি যে, এই সম্মেলনের বাইরের সাত দিনের জন্য আমরা কোন অতিরিক্ত টাকাপয়সা, হোটেল ভাড়া, যাতায়াত খরচ কিচ্ছু পাব না।
ব্যাপার না বস! লেগে গেলাম সোৎসাহে আমরা আমাদের বাক্স প্যাঁটেরা বাঁধতে।
মোটামুটি আমাদের পরিকল্পনা বা বলা ভালো মার্সেলোর পরিকল্পনা এমন – ১ম তিন দিন তেরেসোপোলিস, রিও ডি জেনিরোর উপকুলে একটি ছোট্ট পাহাড়ি শহর যেখানে আমাদের কনফারেন্স হবে; এরপরে ওর দূর সম্পর্কের এক তুতো বোনের বাসায় থেকে রিও ডি জেনিরো ভ্রমণ এবং সবশেষের তিন-চার দিন মার্সেলোর নিজের শহর সাওপাওলো, যেখানটায় ওর বিশেষ কাজ আছে এবং যে কাজের কাছে আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
নির্ধারিত দিনে ট্রেনে করে প্রথমে ফ্রাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্ট এ গিয়ে পৌঁছলাম। আই.সি.ই ট্রেনে করে আমাদের শহর ভাইমার থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এখানকার ট্রেনগুলো আমাদের বঙ্গদেশের চিরপরিচিত কুঝিকঝিক শব্দ না তুলে বরঞ্চ নিঃশব্দে ছুটে চলে। এতে অভ্যস্ত রেলেপথ ভ্রমণের মাজেজাটা কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয় বটে কিন্তু এদের রেলব্যবস্থার অতুলনীয় সুযোগ সুবিধা সেটা অনেকখানি হলেও ভুলিয়ে রাখে।
পরের দিন স্থানীয় সময় ভোর ছয়টায় উত্তর গোলার্ধের মানুষ আমি জীবনে প্রথমবারের মত দক্ষিন গোলার্ধে পা রাখলাম।
*****
তেরেসোপোলিস
বাংলাদেশ মানেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় আর ব্রাজিল মানেই ফুটবল নয়- কথা হচ্ছিল এ ব্যাপারে সম্মেলনের এক জন অতিথির সঙ্গে। ভদ্রমহিলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রাজিলের ভাবমূর্তি নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত। স্বামীর কর্মসূত্রে বেশ ক’বছর ইউরোপের কিছু দেশে ছিলেন। নিজের এক বোনের বিয়ে হয়েছে ভারতের মাদ্রাজের এক হিন্দু পরিবারে। দেখলাম ভারত সম্পর্কে উনার জ্ঞান কোন অংশেই অবহেলা করবার মত নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছেন উপমহাদেশে ব্রাজিল মানে ফুটবল, ইউরোপ আরেকটু মুক্তমনা বলে এর সাথে যুক্ত হয় সুন্দরী নারী আর বিকিনি! অথচ কেউ বর্তমান দোদুল্যমান বিশ্বঅর্থায়নের প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের উদীয়মান অর্থনৈতিক অবস্থানের কথা বলে না; ধর্মের নামে পুরো বিশ্ব যেখানে প্রতিনিয়ত অন্ধ যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে সেই সময় ব্রাজিলে বিভিন্ন ধর্মের, বিশ্বাসের মানুষের পারস্পরিক সহাবস্থানের কথা বলে না। পৃথিবীর মানচিত্র বিছিয়ে “ব্রাজিল কই, দেখাও দেখি” বললে অধিকাংশ মানুষ নাকি প্রথমে আফ্রিকা মহাদেশের আশেপাশে খোঁজা শুরু করে।
যেহেতু প্রসঙ্গটি আমি উত্থাপন করেছিলাম, সেই দায়বদ্ধতা থেকে অনেক কিছু বলতে চেয়েও অদ্ভুতভাবে আবিষ্কার করলাম বলার মত সেরকম শক্তি পাচ্ছি না। পুরো সম্মেলনটি ইংরেজি ভাষায় হলেও গুটিকয়েকজন বাদে বাকি সবার ইংরেজির অবস্থা তথৈবচ, কিন্তু এ নিয়ে কারো মাঝে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, অনুশোচনা নেই। কারণ এরা পড়ছে, লিখছে, চিন্তা করছে এদের মাতৃভাষা পর্তুগিজে, সেখানে ইংরেজির অবস্থান শুধুই দেয়ালে পিঠ ঠেকানোর নামান্তর। আর আমি হচ্ছি সেই পাপীদের দলে যে সুযোগ পেলেই জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে গর্ব করি আর রফিক, বরকত, জব্বারের লাশ ধোয়া পানি গিলি ঢকঢক করে। স্বাধীনতার ৪১ বছরেও চোখের সামনে মা-বোনদের ধর্ষণকারীরা লালসবুজের পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় অথচ সাহস হয় না প্রীতিলতার মত মুখে সায়ানাইড ঢেলে ঠাস ঠাস ঐ জানোয়ারগুলোর মাথায় গুলি করার। দেশের জন্য কুটোটি না নাড়িয়েও দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি, ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি এই ধরনের বক্তৃতা দেবার কেন জানি সেদিন প্রবৃত্তি হচ্ছিল না।
যাই হোক, তিন দিনের সম্মেলনটি শেষ হল আমাদের একটি ক্ষুদ্র সাইট ভ্রমণের মাধ্যমে।
তেরেসোপোলিস শহরটি রিও ডি জেনিরো প্রদেশের অন্তর্গত একটি ছোট্ট ব্রাজিলিয়ান পৌরসভা।
খুব সংক্ষেপে এর ইতিহাস এরকম : ব্রাজিলে ৪০০ বছরের অধিক সময় ধরেও দাসপ্রথা আইনগতভাবে জারি ছিল। ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা (তৎকালীন পর্তুগালের অধিবাসী) ব্রাজিল দখল করার পর বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় আদিবাসীদের মাধ্যমে দাসপ্রথার কাজটি সারতে চেয়েছিল কিন্তু দিনে দিনে পর্তুগিজরা তাদের অমানবিক আচরনের কারণে আদিবাসীদের কাছ থেকে তাদের আনুগত্য হারিয়ে ফেলে। স্থানীয় আদিবাসীদের বিকল্প হিসেবে ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ শাসকরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে দাস আনার ব্যবস্থা করে। এরই ফলশ্রুতিতে ষোলশ শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত চলা মানব জাতির ইতিহাসে জঘন্যতম কাল অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত দাসব্যবসার অধীনে ‘অতলান্তিক দাসব্যবসা’র প্রায় ৩৫ শতাংশ দাস শুধুমাত্র ব্রাজিলেই আসে।
এই দাসদের মধ্যে মারুন গোত্রের লোকজন স্থানীয় আদিবাসীদের সমন্বয়ে তেরেসোপোলিস অঞ্চলে প্রথম জনবসতি গড়ে তোলে কিন্তু তার সঠিক দিনক্ষণ অজ্ঞাত। ইতিহাসের পাতায় প্রথম তেরেসোপোলিসের নাম লেখা হয় ১৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক বালতাসার দা সিলভো লিসবোয়া্র মাধ্যমে। ইতিহাসে ঠাই হলেও পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা এ অঞ্চল লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায় পরবর্তী আরও ৩০ টি বছর। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ নাগরিক জর্জ মার্চ প্রথম এখানে এসে রাবার ব্যবসা চালু করলে সাধারন জনগনের নজরে আসে এই এলাকাটি। এর মাত্র ২৭ বছর পরই অর্থাৎ ১৮৪৫ সালে ইনি মৃত্যুবরন করলে স্থানীয় জনগণ পুরো ব্যবসাটিকে ভেঙ্গে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ১৮৫৫ সালে সম্রাজ্ঞী তেরেসা ক্রিস্টিনার নামানুসারে অত্র এলাকার নামকরণ তেরেসোপোলিস হয় এবং এটি তখন গ্রামের মর্যাদা পায়।
১৮৭০ সালে তৎকালীন ব্রাজিল সাম্রাজ্যের শেষ শাসনকর্তা পেদ্র-২ পাহাড়ঘেরা গ্রামটির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে একে পৌরসভা হিসেবে মনোনীত করেন। তেরেসোপোলিস ১৮৯১ সালে প্রথম একটি পৌরসভা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
৭৭০ বর্গকিলোমিটারের এই অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় এক লাখ পচাত্তর হাজার মানুষের বসবাস। ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে টানা বেশ কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে তেরেসোপোলিস এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে ধারাবাহিক ভূমিধ্বস ও বন্যার কারণে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই মৃত্যুসংখ্যা ব্রাজিলের ইতিহাসে দ্বিতীয় অন্যতম। আমাদের গন্তব্য এখন সেখানেই।
পুরো এলাকাটি পাহাড়ি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাড়িঘর, মাটি কেটে আঁকাবাঁকা সাপের মত রাস্তা উঠে গেছে অনেকটা আমাদের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির মত। দুর্যোগের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক জনজীবনের অনুপস্থিতি সবখানে লক্ষ্যনীয়। পাহাড় থেকে ভুমিধ্বসের সাথে নেমে আসা প্রচুর পরিমানে ছোট বড় পাথরের চাই পড়ে আছে সর্বত্র। দুর থেকে হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় যেন পাহাড়ের গা থেকে কেউ কামড় দিয়ে মাংস তুলে ফেলেছে।
বিগত কয়েকদিনের পড়াশোনা এবং স্বচক্ষু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঘটনার আগাপাশতলা বিবেচনা করলে যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হচ্ছে, এটাকে কি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলা উচিৎ না মনুষ্যসৃষ্টি বিপর্যয় বলা উচিৎ? ধরে নিই যদি, এই পাহাড়ি অঞ্চলে কেউ কখনো বসতি গড়েনি, তাহলে সেদিনের এই তুলকালাম বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ভূমিধ্বস নিয়ে কি কেউ আজ মাথা ঘামাত? বাহ্যিক কোন প্রভাবকের যদি কোন ধরনের ভূমিকা না্ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ভূমিধ্বস একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা মাত্র। আমরা প্রায়শই ‘ঘটনা’ এবং ‘দুর্যোগ’ এর মধ্যে যে গোলমাল লাগিয়ে ফেলি, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।
এই ছবির পাথরটার মত কিছু কিছু পাথরের ওজন ছিল কয়েক টন পর্যন্ত।
দুরের পাহাড় দুটোকে বলা হয় ঈশ্বরের আঙুল।
একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ের শীর্ষদেশের মাটি নরম হয়ে পরে এবং ছোট বড় পাথর আলগা হয়ে ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করে। আমরা জানি, একটি ঘূর্ণায়মান বস্তুকে যত বেশী খাড়া ঢাল থেকে নীচের দিকে ফেলা হবে, সে বস্তুর গতিবেগ তত বৃদ্ধি পাবে। আলগা মাটির স্তুপের সাথে এই আলগা পাথরগুলো যখন ঢাল বেয়ে প্রচণ্ড বেগে নীচের দিকে নামতে থাকে, তখন সে তার সাথে ধুয়ে নিয়ে যায় পথিমধ্যে পরা সকল ঘরবাড়ি, দালানকোঠা।
সর্বডানের ভদ্রলোক একজন ভূবিজ্ঞানী। তিনি পর্তুগিজ ভাষায় তার সাথের দু’জনকে বর্ণনা করছেন কেন এবং কিভাবে ভূমিধ্বস হয়েছিল সেই রাতে।
মানুষ এখনো ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছে, আর যারা ফিরে আসছে তারা আবার সেই একই জায়গায় নতুন করে ঘর তুলছে। পাহাড়ি এলাকায় নিরাপদ স্থান নির্বাচন করা এখন আর কোন অভিজ্ঞতার বিষয় নয়। সরকারী অনুদানে কিছু ভূতাত্ত্বিক জরিপ করে সে ফলাফল নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যায়। যেহেতু একজন দরিদ্র ব্যক্তি কখনই বাড়ি বানানোর পূর্বে ব্যয়বহুল ভুমি জরিপ করবে না তাই সরকারী উপাত্তে নামমাত্র খরচে সাধারন জনগনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করলে এ পরিস্থিতি থকে পরিত্রান পাওয়াটা অনেকাংশেই সম্ভব।
(আমাদের দেশে সমতল এলাকায় বাড়ি বানানোর পূর্বে যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ করা হয়, তার সাথে পাহাড়ি এলাকার ভূতাত্ত্বিক জরিপের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় পাহাড়ি এলাকার ভূতাত্ত্বিক জরিপ ব্যয়বহুল এবং অভিজ্ঞ জনশক্তির প্রয়োজন হয়। ব্যাঙের ছাতার সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা এপার্টমেন্ট বানিজ্যের জন্য জমির আকার দেখে আন্দাজে আন্দাজে ৫/৭/৯ টা বোরহোল করে ভূতাত্ত্বিক জরিপের যে প্রতিবেদন দেয়া হয়, তার সাথে এর অনেক পার্থক্য।)
নীচের এই ঘরবাড়িগুলো নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। অথচ ধ্বস পরবর্তী পাথর পরে আছে সর্বত্র। মানবমন বড়ই বিচিত্র।
সাদা গেঞ্জী পরা ভদ্রমহিলা আমাদের ভ্রমণ পথপ্রদর্শক। সেই কালরাত্রির পরের দিন এখানে তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে লাশের সারি যেতে দেখেছেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের দিকবিদিক ছুটতে দেখেছেন, স্বজনদের জন্য হাহাকার দেখেছেন; আর পাঁচ দশজনের মত। তাঁর নিজের কোন স্বজনের মৃত্যু না হলেও এখানে এসে বাস থেকে নামার মুহূর্তে সেদিনের ঘটনার প্রাকবর্ণনা দেয়ার সময় তিনি অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন। এই অশ্রু অপরের দুঃখকে নিজের হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারার জন্য। আর আমি স্বার্থপর নীচমনা মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেখছিলাম, এত পবিত্র দৃশ্য তো সচরাচর আমার পোড়া,পাপী দু’চোখে পরে না!
দু’ঘণ্টার অবস্থানকালে সাকুল্যে তিন-চার জন মানুষের দেখা মিলল। আর পুরোটা সময় দূরে কোথাও একটি কুকুরের ক্রমশ আর্তনাদ। খোলা আকাশের নীচে পাহাড়ঘেরা জায়গায় সেই ডাক প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে বারে বারে, সৃষ্টি করছে এক অদ্ভুত বিষণ্ণ পরিস্থিতির।
অত্যন্ত মন খারাপ করে ফিরে আসলাম সবাই হোটেলে। ফেরার কতক্ষণ পর দুপুরের খাওয়াদাওয়া পর্ব সেড়ে আমাদের বাস রওনা হল রিও ডি জেনিরোর উদ্দেশ্যে।
আর পুরোটা রাস্তায় আমার মাথায় একটি নিঃসঙ্গ কুকুর ক্রমাগত ডেকে চলল।
(চলবে)
----------------------------------------------------------------------------
১। আমি গরীব মানুষ। আমার ক্যামেরা ডিজিটাল, হাত অ্যানালগ। তাই ছবির গুণগত বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কখন পয়সা হলে ভাল একটা ক্যামেরা কিনে ফেলব। তবে হাতের ব্যাপারে কথা দিতে পারছি না।
মন্তব্য
চমৎকার। পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
সচলায়তনে স্বাগতম। [একটা ধানদূর্বা ইমো দরকার]
অতিথি নাম লিখতে ভুলে গেছেন
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ।
ধানদূর্বা ইমো না, "ফেইলুর ইজ দা পিলার অফ শুরু"র ইমো দরকার।
-- ঠুটা বাইগা
এক্কেরে হাছা কথা কইছে ঠুটা ভাই
আপু
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ জাবেদ ভাই।
ভাল্লাগছে, পরের পর্বের জন্য রেডী হইতেছি
--বেচারাথেরিয়াম
ছবি দেখতে পাচ্ছিনা একটাও
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভাইয়া, আমি তো দেখতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কেন আপনারা দেখতে পারছেন না
আমি পাচ্ছি। ব্রাউজার নাকি?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমিও পাচ্ছি না। বলে ইমেজ আনএভেইলেবল
..................................................................
#Banshibir.
এই অনিচ্ছাকৃত পরিস্থিতির জন্য আমি দুঃখিত, ভাইয়া।
সমস্যা না থাকলে আপনের ফ্লিকার এর অ্যাড্রেসটা দেন, ঐখানে গিয়া দেইখা আসি। ক্রোম ফায়ারফক্স ইন্টার্নেট এক্সপ্লোরার কোনটাতেই খুলতার্লাম্না
..................................................................
#Banshibir.
আমি ক্রোম, ফায়ারফক্স, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার চেষ্টা করলাম উইন৭ ৩২ বিটে। ডলফিন, ম্যাক্সথন, নেটিভ ব্রাউজার চেষ্টা করলাম এন্ড্রয়েড ৪-০-৩ তে। ফলাফল একই। ছবি দেখতে পাইনা।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
-- ঠুটা বাইগা
-
ছবি দেখতে পাচ্ছি না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভাইয়া, আমি তো দেখতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কেন আপনারা দেখতে পারছেন না
আমি ছবি দেখতে পারছি। ক্রোম উইন্ডোজ ৭, ৬৪।
ধন্যবাদ ভাইয়া। শান্তি পাইলাম শুনে।
-- ঠুটা বাইগা
লেখা উত্তম-ঝাঝা!! এরকম লেখা পেলে আমি গোগ্রাসে গিলতে থাকি! ছবির সাইজ খুব বেশী বড় হয়ে গিয়েছে, নেক্সট টাইম ফ্লিকার এ মিডিয়াম সাইজটা সিলেক্ট করবেন, দেখতে ভালো লাগবে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম!
----------
রংতুলি
ধন্যবাদ রংতুলি।
আসলে প্রথম লেখা তো, কি থেকে জানি কি হয়েছে। এখন একগাদা বানান ভুল ও চোখে পরছে।
কিছু লাইন মনে গেঁথে গেল, আর কিছু আগেই গাঁথা ছিল মনে হল আমার মনে কথা বললেন।
facebook
দিনশেষে আমরা সবাই আসলে অন্তত নিজের কাছে হলেও মানুষ। সে মন যে একই সুরে গান গাইবে এ আর ব্যাতিক্রম কি?
আপনি সাহস দিয়েছিলেন বলেই লেখাটা লিখেছি।
অনেক ধন্যবাদ।
ভাই ছবি কই ?? দেখা যায় না।
যারা লেখাটা পড়ছেন কষ্ট করে কিন্তু ছবি দেখতে পারছেন না, তাদের কাছে আমি অত্যন্ত লজ্জিত।
উইন্ডোজ ৭, ৬৪ বিট, গুগল ক্রোম দিয়ে যারা দেখছেন শুধু তারাই ই কি দেখতে পারছেন?
আমি মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাকে এ ব্যাপারে যদি কোন সাহায্য করা যায়।
--- ঠুটা বাইগা
ছবি দেখতে পাচ্ছি। 32-bit XP, Opera Browser. লেখা ভাল হয়েছে।
নামটা পছন্দ হইসে
-- ঠুটা বাইগা
ভালো লাগলো । পরের পর্বের অপেক্ষায় র’লাম।
ভাল লাগল ব্রাজিল কথন। আশা করি পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ছবি দেখতে পারি না
লেখা খুব ভালো লাগলো
একটা কৌতূহল, 'ঠুটা বাইগা' অর্থ কী?
একটি বইয়ের আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্রের নাম।
এর বেশী কিছু বললাম না
সম্ভবত মাধুকরী উপন্যাসের চরিত্রটা হতে পারে। নাকি অন্য কেউ? আপনার লেখা ভাল লেগেছে খুব।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
আপনার লেখাও আমার খুবই ভাল লাগে।
-- ঠুটা বাইগা
ধন্যবাদ ভাইয়া। চেষ্টা করব পরের পর্ব তাড়াতাড়ি লেখার।
কি বলব? এখন তো আমিও ছবি দেখতে পারছি না!
-- ঠুটা বাইগা
আহা, প্রথম যৌবনের স্বপ্নের ব্রাজিল। ভ্রমণের জন্য নয়, তখন ছিল, ব্রাজিল ফুটবলের জন্য।
অতি সুন্দর সব ছবি আর ততোধিক সুন্দর আপনার প্রকাশভঙ্গি।
(বানান গুলো একটু খেয়াল করে...)।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার এতো সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
বানান ভুলগুলো আমারও চোখে পরেছে, কিন্তু প্রকাশ হবার পর।
লেখার সময় কেন যে খেয়াল হয় না কে জানে!
-- ঠুটা বাইগা
চমৎকার ছবি! মোটেই এনালগ হাতের না, রীতিমত ঝানু ডিজিটাল হাতের তোলা।
বর্ণনা চমৎকার, "বড়ই" শব্দটির বেহেশত-নিবাসী হুমায়ুন আহমেদসুলভ সার্থক প্রয়োগে বড়ই পুলকিত হয়েছি। লিখে যান!
অলয়
ধন্যবাদ ভাইয়া। সাহস দেয়ার জন্যেও।
"বড়ই" শব্দটি প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ যে খুব ব্যবহার করতেন, তা আমি আসলে জানতাম না। তবে মিল পেয়ে মজা লাগছে।
--- ঠুটা বাইগা
দেরীতে পড়লাম ছবি ছাড়া যদিও
দারুণ পোস্ত - নিয়মিত লিখবেন আশাকরি
ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর আন্তরিকভাবে দুঃখিত ছবি দেখতে না পাওয়ার জন্য। আশা করি পরবর্তী পর্বে ছবি দেখতে পাচ্ছেন।
আপনার নামটি লিখেননি।
--- ঠুটা বাইগা
নতুন মন্তব্য করুন