আরব্য রজনীর রূপকথা নয়, স্যার অ্যালেক্স ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রূপকথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০৯/২০১২ - ৫:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্যারের ১০০০তম লিগ ম্যাচ আজকে। আরব্য রজনী ১০০০ রাত পরে শেষ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এক হাজার রাতের প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের পরেও স্যার এখনো সমান উৎসাহে তার ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ার চালিয়ে যাচ্ছেন, যাবেন। রূপকথার এই রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ সাউদাম্পটন। আসুন কি হলো এই রূপকথার রাতে তা পড়তে থাকি. . .

স্যারের ১০০০তম লিগ ম্যাচ আজকে। আরব্য রজনী ১০০০ রাত পরে শেষ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এক হাজার রাতের প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচের পরেও স্যার এখনো সমান উৎসাহে তার ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ার চালিয়ে যাচ্ছেন, যাবেন। রূপকথার এই রাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ সাউদাম্পটন। আসুন কি হলো এই রূপকথার রাতে তা পড়তে থাকি. . .

শুরুর কথাঃ
পুরো এক সপ্তাহ ধরে এই ম্যাচের জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছে রেডডেভিলরা। সাউদাম্পটন টিমটা ডিবক্সের ভিতর উড়ে আসা বলে স্কোর করতে পারদর্শী তাই এই জিনিসটা আটকাতে প্র‍্যাকটিস সেশন হয়েছে অনেকগুলি। কিন্তু ২০১১ এর ডিসেম্বর পর এই প্রথম ফার্ডিনান্ড ও ভিদিচ একসাথে নামছে, তাই ডিফেন্সের ব্যাপারে অনেকটাই নির্ভার সবাই। ডানে গত সিজনে ভালো পারফর্ম করা রাফায়েল ও বামে এভরা, সুতরাং ডিফেন্স নিশ্ছিদ্র মোটামুটি। মিডফিল্ডে হোল্ডিং মিডে নামছে ক্যারিক, তার সামনে কাগাওয়া এবং কাগাওয়ার ডানে-বামে ভ্যালেন্সিয়া এবং ক্লেভারলি। অ্যাটাকিং মিড ও ফরোয়ার্ডের সামনে ওয়েলবেক এবং সবার সামনে রবিন ভ্যান পারসি। কাগাওয়া মূলত মিডফিল্ডে স্পেস নিয়ে খেলে থাকে তাই সে স্পেস বের করতে না পারলেও তাকে আটকাতে যেয়ে ক্লেভারলি ফাকা হয়ে যাবে ফলে তখন ক্লেভারলি বল রেডি করে ভ্যান পারসি-কে দিবে অথবা ওয়েলবেককে দিবে এবং ওয়েলবেকের কাজ হবে ফাইনাল পাস দেয়া। ফলে ফর্মেশনটা দাড়াচ্ছে এরকমঃ

----------------Lindegaard- (GK)----------
------------------------------------------------
-----------Fardinand----Vidic-------Evra--
-Rafael---------------------------------------
----------------------Carrick-----------------
-------------Kagawa----------Kleverly-----
-Valencia-------------------------------------
---------------------------Welbeck----------
------------Van Parsi------------------------

প্রথম হাফঃ
খেলা শুরু হল ঠিক ১৫:০০ তে। নিজ স্টেডিয়ামে ৩১,০০০ দর্শকের সামনে খেলার প্রথম মিনিট থেকেই ঝাপিয়ে পড়লো সাউদাম্পটন, ম্যানইউকে হতভম্ভ করে দিয়ে। একের পর এক অ্যাটাক চলতে লাগলো, ঠিক যেন কোন মেশিনগান থেকে গুলি বের হচ্ছে। ক্রমাগত অ্যাটাকে পর্যদুস্ত ম্যানইউয়ের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডাররা নিজেদের হাফে নেমে এলেন ডিফেন্সিভ মিডের কাজ করতে। সাউদাম্পটন উইংগারদের কাছে বারবার পরাজিত হতে লাগলেন রাফায়েল ও এভরা, ফলে ভিদিচ ও ফার্ডিনান্ডকে মূল প্রেশারটা নিতে হচ্ছিলো। সাউদাম্পটনের উইং ছাড়া মাঝামাঝি অ্যাটাকগুলো আটকে দিচ্ছিলেন ম্যানইউ প্লেয়াররা কিন্তু প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে অ্যাটাকে উঠার আগেই সব শেষ, বল মাঝমাঠেই ভুল পাস কিংবা দুর্বল পাস কিংবা লং পাস করতে যেয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারের হাতে বল তুলে দেয়াঃ বারবার এই হচ্ছিলো।
এই সময়টায় ম্যানইউ একবারও বল নিয়ে বিপক্ষের ডিবক্সে ঢুকতে পারেনি এবং গোলে কিক নেয়াতো দূরের কথা। ১৭ মিনিটে এসে ঝড় একটু থামলো, কারণ এই পর্যায়ে গোল খেয়ে বসলো ম্যানইউ। ডান দিকে উইংগারের তোলা ক্রস গোলকিপার সঠিকভাবে প্রেডিক্ট করে সেইমত ঝাপ দিয়েও বাঁচাতে পারলেন না কারণ সেখানে ডিফেন্ডার ছিল রাফায়েল, যার কম উচ্চতার বেনিফিট নিয়ে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকার গোল করে ফেললেন ঠিক ৭ বছর পরে এই ম্যানইউয়ের সাথেই।

গোল খাওয়ার পরে একটু গা-ঝাড়া দিয়ে উঠলো ম্যানইউ প্লেয়াররা। হারিয়ে যাওয়া উইংয়ের পায়ে ২/১ বার বল যেতে লাগলো, মাঝমাঠে কাগাওয়া'র পায়েও কিছু বল দেখা যেতে লাগলো কিন্তু সেই অ্যাটাকে প্রাণ নেই। শুধুই নির্বীষ কিছু অ্যাটাক....সাউদাম্পটন এদিকে গোল করেও পিছিয়ে নেই, তারাও অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে অ্যাটাক করেই চলেছে। সাউদাম্পটন এর প্লেয়ারদের স্ট্যামিনা দর্শনীয় ছিল কারণ যেই স্পিডে তারা নিজেদের হাফ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের হাফে বল নিয়ে উঠে আসছিলো সেটা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর সময়কার ১১ সেকেন্ডে কর্নার থেকে বল পেয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে আসার স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছিলো......

খেলার এই পর্যায়ে এসে যদি মনে হয়যে আপনারা হাফ টাইমের মাঝামাঝি পৌছে গেছেন, তাহলে সেটি ভুল ধারণা কারণ খেলার মাত্র ২৩ মিনিট শেষ তখন। এই সময় ম্যানইউয়ের রাইট উইংয়ের দিকে কাগাওয়া বল পেলেন ডিবক্সের সামনে, সামনে ৩ জন সাউদাম্পটন ডিফেন্স দেখে পিছিয়ে আসতে চেয়েও যখন দেখলেন ডানে ভ্যালেন্সিয়া ওভারল্যাপ করতে চাইছেন তখন দারুন একটা থ্রু পাসে বল দিলেন তাকে। ভ্যালেন্সিয়া বল নিয়ে ক্রস তুললেন গোলপোস্টের ১০ গজ সামনে। ক্রসটা অত একটা পিক্সেল পারফেক্ট হয়নি কারণ সাউদাম্পটনের ৪ জন ডিফেন্স তখন সেখানে উপস্থিত কিন্তু যেই ডিফেন্সের সবচেয়ে কাছে ভ্যান পারসি সেই ডিফেন্ডারটি পা পিছলে পড়ে গেলেন এবং ভ্যান পারসি সরাসরি রিসিভ করলেন বলটি। এরপরেই বল সরাসরি গোলে কারণ ভ্যান পারসি'র কাছে এরকম গোল করা প্রত্যাশিতই........

ছবি: ম্যানইউ ওয়েবসাইট থেকে

স্কোর হয়ে গেলো ১-১। সাউদাম্পটনের হতাশা লিড হারানোর, ম্যানইউ শিবিরে স্বস্তি'র নিশ্বাস সমতা ফেরানোর জন্যে। হতাশা এবং স্বস্তি মিলিয়ে এর পরের অংশটুকু ২ দলেরই সমানভাবে। উভয় টিম বারবার চাইছিলো অ্যাটাকে উঠতে কিন্তু সাউদাম্পটনের হোল্ডিং মিডফিল্ডারদের কাছে আটকে যাচ্ছিলো ম্যানইউয়ের কাগাওয়া এবং ক্লেভারলি, আর ভ্যালেন্সিয়া বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলো লং পাস দিয়ে ভ্যান পারসি'র কাছে যেখানে প্রতিটাই মিস হচ্ছিলো। ম্যানইউ এই পর্যায়ে চেষ্টা শুরু করে ডিবক্সের বাইরে থেকেই কিক নেয়ার কিন্তু তাতেও কোন কাজ হলো না। অন্যদিকে সাউদাম্পটনের খেলোয়াড়রা অ্যাটাকে উঠছিলেন ডান/বাম ২দিক দিয়েই কারণ রাফায়েল আটকাতে পারছিলো না উইংকে তার পাশের মিডফিল্ডারের সাথে খুব ভালো বোঝাপোড়ার জন্যে আর ওদিকে এভরা আরেক উইংয়ের গতির সাথে পারছিলো না। কিন্তু এরপরেও ম্যানইউ গোল খাচ্ছিলো না কারণ ফার্ডিনান্ড ও ভিদিচ দারুন সব সেভ করে চলছিলেন এবং গোলকিপার লিন্ডেগার্ডের ডিরেকশনও যথাযথ ছিলো।

শেষ হলো প্রথম হাফ

দ্বিতীয় হাফঃ
সেকেন্ড হাফের শুরুতেই আবার পুনরুজ্জীবিত সাউদাম্পটন প্লেয়াররা অ্যাটাকে নেমে পড়লো। ম্যানইউয়ের দিক থেকেও চেষ্টা চলছিলো অ্যাটাকের কিন্তু প্রথম হাফের শেষ দিকে নোটিশ করা জিনিসটা এখন আরো প্রকট হয়ে উঠলোঃ ওয়েলবেকের কাছে বল গেলেও সে পারছে না সেটা ফরোয়ার্ড পর্যন্তু পৌছে দিতে। ম্যানইউতে এই কাজটা রেগুলার রুনি করে থাকে যখন ওয়েলবেক কিংবা হার্নান্দেজ ফরোয়ার্ডে খেলে এবং রুনি ফরোয়ার্ডের কাছে বল যোগান দেয়া ও নিজেও একজন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে। ওয়েলবেক সম্পূর্নভাবে এই কাজে ব্যর্থ বলাই যায়।

সামনে ওয়েলবেক ব্যর্থ, তার পিছনে ক্লেভারলি কোন ইমপ্যাক্ট তৈরী করতে ব্যর্থ, ডানে উইংয়ে ভ্যালেন্সিয়া লংপাসে ব্যর্থ, তার নিচে রাফায়েল ওভারল্যাপ করতে পারছেনা কারণ বিপক্ষের উইংকে সেইক্ষেত্রে থামানো সম্ভব হবেনা তার পক্ষে। এতসবের মাঝে সাউদাম্পটের প্লেয়ারদের সামনে ২ ডিফেন্ডার ও ক্যারিক যা একটু নিজের কাজটা করতে সমর্থ হচ্ছেন দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় হাফের শুরুতেই ম্যানইউয়ের এই হতাশাজনক পারফর্মেন্সে ৫৫ মিনিটে কফিনে পেরেক পড়লো যখন আবার গোল করে বসলো সাউদাম্পটন। এবারের গোল যেন ভাগ্যদেবতার ক্ষতিপূরণ সাউদাম্পটনকে কারণ ম্যানইউয়ের প্রথম গোলটায় যেমন বিপক্ষের ডিফেন্ডার পিছলে পড়ে গিয়েছিলো এবার তেমনি এভরা পিছলে পড়ে গিয়েছিলো ফলে সাউদাম্পটনের প্লেয়ারটি সহজেই গোল করে ফেললো হেড করে।

স্যারের ১০০০তম লীগ ম্যাচের রাতে প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল টিমটি এখন ২-১ গোলে পিছিয়ে। তার প্লেয়াররাও নিজেদের খুঁজছে পারফর্ম করতে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সিজন মাত্র শুরু হয়েছে তাই এই ম্যাচ হারলেও আরো ৩৫টি ম্যাচ থাকবে কিন্তু এই যদি হয় পারফর্মেন্স তাহলে কিছুতেই সম্ভব না কিছু। গত ম্যাচেও ম্যানইউ জিতেছে কোনভাবে, প্রথম ম্যাচ তো হেরেই বসেছে এভারটনের কাছে (ওটা নাহয় প্রতি সিজনেই হয়, তাই স্কিপ করা যায় হারটা)। ম্যাচ ঘড়ি তখন বলছে ৫৬ মিনিট হয়েছে ম্যাচের, মাঠে প্লেয়ারদের অ্যাভারেজ পারফর্মেন্স খুবই প্যাথেটিক।

এই সময়টা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ন মনে হয় কারণ এই মুহুর্তগুলোয় নিজের সাথে নিজের কথা হয়। আমার মনে হয় সবারই এমন হয়, কারণ এইসময়গুলোতে আপনি অনুভব করবেন ক্লাবের প্রতি আপনার ভালোবাসা কেমন। আপনি জানেন আপনার টিম এখন হেরে যাবে, আপনি জানেন ট্রোল-ফুটবল পেজে আপনার টিমকে কাপড়ধোয়ার মত ধোয়া হবে এবং ফ্রেন্ডদের টিজ অন দ্য ওয়ে। হতাশা কাটানো সম্ভব না কোনভাবেই কারণ যা হচ্ছে তা তো মেনে নিতেই হবেঃ নিজের টিম হারবে বোধহয় আজ, যদিনা কোন রূপকথা ঘটে। লড়াই করে হারলে কষ্ট ছিলো না, কিন্তু ফাইটিং স্পিরিটটাই অনুপস্থিত................................কিন্তু নিজের সাপোর্ট বলে কথা, অকৃত্রিম এই ভালোবাসা কোনভাবেই কমার জন্যে নয় তাই যাই ঘটুক না কেন শুধু এটাই অনুভব করি সবসময়: লাভ ইউ ইউনাইটেড

***
ম্যাচের তখন ৬০ মিনিট। ক্রমাগত ফ্লপ করে চলা ক্লেভারলিকে বসিয়ে স্যার নামালেন স্কোলসকে এবং কাগাওয়াকে নামিয়ে নানি। মাঠের ফরমেশন আপাতত পাল্টে গেলো যেখানে স্কোলস দায়িত্ব নিলেন মাঝমাঠের এবং নানি চলে গেলেন লেফট উইংয়ে।
এই পর্যায়ে এসে হঠাৎ করেই যেন খেলার আবহাওয়া পাল্টে গেলো। স্কোলসের ম্যাজিকাল সবকয়টা পাস কিভাবে যেন মিডফিল্ড থেকে পৌছে যেতে লাগলো অ্যাটাকিং মিডের দিকের ম্যানইউ প্লেয়ারদের পায়ে। হঠাৎ করেই ম্যানইউ প্লেয়াররা ছন্দ খুঁজে পেলেন যেখানে কাউন্টার অ্যাটাক করে খেলে তারা অভ্যস্থ, এতক্ষন ডিফেন্স থেকে ভুলপাসের কারণে যেই আক্রমনগুলো শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলো সেগুলো যেন নতুন জীবন পেলো। স্কোলসের ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা কত তীব্র তা এইসময় পুরোপুরিই বোঝা গেল যখন দেখা গেলো সে বল নিয়ে মিডফিল্ড বরাবর ১০/১৫ গজ এসেই ডানে/বামে/সেন্টার বরাবর এমন একটা ম্যানইউ প্লেয়ারকে পাস দিচ্ছে যে বলটা নিয়ে অ্যাটাকে ঢুকে যেতে পারছে। এদিকে নানিও মুগ্ধ করে চলেছে তার স্বভাবসুলভ বল পেয়ে পায়ে রেখে একাই অ্যাটাক করতে চাওয়া থেকে গোলপোস্ট বরাবর উঠে যাচ্ছে, ফলে বাকি ম্যানইউ প্লেয়াররাও প্রতিপক্ষের অর্ধে উঠে যেতে পারছে যেটা এতক্ষন অনেকটাই অনুপস্থিত ছিলো.....

এইসময় খেলার ৬৫ মিনিট, সাউদাম্পটনের গোললাইনের কাছাকাছি বল নিয়ে চলে যাওয়া একজন যখন দেখলেন যে তিনি পারবেন না ক্রস করতে তখন ভ্যান পারসিকে লক্ষ্য করে পাস দিলেন এবং ভ্যান পারসি উড়ে এলেন বলটা রিসিভ করার আগে। কিন্তু রিসিভ করার সময় প্রতিপক্ষের ক্যাপটেন ফাউল করে ফেলায় ম্যানইউ পেয়ে যায় একটি পেনাল্টি। অনেক অনেক আশা নিয়ে তখন সমতা ফেরানোর আশায় ম্যানইউ।

পেনাল্টি নিতে আসেন ভ্যান পারসি। দৌড় শুরু করলেন, গোলকিপারও নড়াচড়া শুরু করে বামে ঝাপ দিলো আর সেই মুহুর্তে ভ্যান পারসিও বলটা আলতো করে তুলে দেয়ার চেষ্টা করলো গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে। কিন্তু. . .গোলকিপার সেভ করে ফেলেছেন ভ্যান পারসি'র সেই শট। পরে রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিলো ভ্যান পারসি ওই শটটা নেয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে থমকে গিয়েছিলেন যার কারণে সেই অবস্থা হয়েছিলো।

এই পেনাল্টি মিসে ম্যানইউ ভেঙ্গে না পড়ে ম্যাচে প্রথমবারের মত তাদের হার-না-মানা মেজাজে ফেরত আসে এবং পরবর্তী সময়টা একের পর এক ট্রাই করে যেতেই থাকে। কিন্তু ২-১ এ পিছিয়ে থেকে সমতা ফেরানোর জন্যে মনে হচ্ছিলো সেই চেষ্টাগুলো একের পর এক সাউদাম্পটন ওয়ালে আটকে পড়ছে। দুর্দান্ত ম্যান-মার্কিংয়ে সাউদাম্পটন এসময় আটকে দিয়েছে ভ্যান পারসিকে এবং ইচ্ছা করেই ওয়েলবেক মোটামুটি ফাকা করে দিয়েছে কারণ ওয়েলবেকের যে পারফর্মেন্স তাতে ম্যানইউয়ের কেউ তাকে আপাতত বল দিতে যাচ্ছে না। এই জিনিসটার তাড়াতাড়িই ইতি টানা গেল যখন ৭১ মিনিটে স্যার হার্নান্দেজকে নামালেন ওয়েলবেককে তুলে নিয়ে। এবার ম্যানইউ আলাদা একটা ফোর্স পেলো কারণ হার্নান্দেজ, পারসি, নানি সবাই দ্রুতগতিতে অ্যাটাক করতে অভ্যস্থ ফলে স্কোলসের পাস পেয়ে খুব তাড়াতাড়িই এদের কেউ বল নিয়ে উঠে যেতে লাগলো এবং ম্যাচের প্রথম গোল করা পর্যন্ত সাউদাম্পটন যেভাবে অ্যাটাক করে গিয়েছে ঠিক সেভাবে অ্যাটাকের পর অ্যাটাক করে চললো ম্যানইউ সমতা ফেরানোর জন্যে।

খেলার ৮৭ মিনিট, কর্নার পেলো ম্যানইউ। কর্নারে জয়েন করলেন ফার্ডিনান্ড, ভিদিচ রক্ষন ছেড়ে কারণ এখন গোল করাই মূল উদ্দেশ্য। কর্নার কিক নেয়া হলো, উড়ে এলো বল এবং ফার্ডিনান্ড হেড করতে পারলেন এবং বল প্রায় পৌছে গেল ফাকা গোলবারে কিন্তু সেই মুহুর্তে ফেরত আসলো বল....হেডটা দুর্দান্ত ছিল কারণ সরাসরি হেড না করে মাটিতে ড্রপ খাইয়ে হেড করেছিলো ফার্ডিনান্ড গোলকিপারকে বোকা বানাতে কিন্তু গোলকিপার সেভ করে ফেলে সেটা। তবে এই সেভটা যথেষ্ঠ ছিলো না কারণ সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রবিন ভ্যান পারসি যিনি মুহুর্তের মাঝে ফেরত আসা বলটিকে পাঠিয়ে দিলেন গোলে.......কিছুক্ষন আগে যিনি পেনাল্টি মিস করেছিলেন তার কল্যানে এখন স্কোর ২-২ হাসি মারা যাওয়া ম্যাচ ফিরিয়ে আনলেন ভ্যান পারসি।

এরপরের সময়টায় সাউদাম্পটন ভেঙ্গে পড়ে এই ম্যানইউয়ের সামনে যারা অসম্ভব বাজে শুরু থেকে খেলে এসে সেই খেলার উন্নতি করে ড্র করে ফেলেছে ম্যাচটি। এই ম্যানইউ তখন শুধুই তাদের চিরপরিচিত লড়াকু মনোভাবে খেলেই যাচ্ছে তখন। এবার ম্যাচের অতিরিক্ত ৪ মিনিটে প্রবেশ করে ঘড়ির সময়। ঠিক এইসময় সাউদাম্পটনের অ্যাটাকটা ব্যর্থ হলো এবং বল নিয়ে সাথে সাথে উঠে এলো ম্যানইউ। বামদিকে অ্যাটাকে যেতে চেয়ে ক্লিয়ার করলেন সাউদাম্পটন ডিফেন্ডার এবং কর্নার ম্যানইউয়ের পক্ষে। কর্নার নিতে এলেন নানি।
কর্নারটি হয়ে গেলো, নাকি উড়ে গেলো আইস-এজ মুভির স্ক্র‍্যাটের সেই অ্যাক্রনটি? অসাধারন এক কর্নারে যেই ফাকা জায়গায় বল ফেললেন নানি ঠিক সেই জায়গাটাতেই আনমার্কড হিসেবে উড়ে এসেছিলেন ভ্যান পারসি এবং সেখান থেকেই গোল। স্কোর এখন ৩-২, ম্যাচের ৯২তম মিনিটে। রচিত হলো যেন আরেকটি ম্যানইউ রূপকথা।

ছবি: ম্যানইউ ওয়েবসাইট

*******
ইংলিশ লীগ যারা দেখেন তারা ভালো করেই জানেন যেকোন টিম যেকোন দিন যেকাউকে হারাতে পারে। নিজের টিমকে হারতে দেখা কষ্টের, তবে বাজে সূচনা করতে দেখা আরো কষ্টের। কিন্তু হাল না ছেড়ে যখন এভাবে একটি টিম রূপকথা ঘটিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ায় তখন সেটার জন্যেই মনে হয় জীবনটা স্বার্থক.........এটাই এই যুগের রূপকথা, যদি আপনার মনে হয় আপনিও এই পুরো সময় আপনার টিমের সাথে ফাইট করে গিয়েছেন তাহলে সেটাই রূপকথার গল্পের সুখ সমাপ্তি। আমি জানিনা আপনি কেন এবং কোন টিমকে সাপোর্ট করেন, শুধু চাইবো আপনার টিমও আপনার জন্যে এমন কিছু করুক যেটায় আপনি গর্ব বোধ করেনঃ জয়ে অথবা হারে উভয় ক্ষেত্রেই। আপনিও উপভোগ করবেন এই রূপকথা'র আনন্দ।

**************
শেষ কথাঃ
এই পোস্টের ঘটনাবলী গতকাল রাতের (০২-সেপ্টেম্বর-২০১২)। এবং উৎসর্গ করা হলো স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে যিনি গতকাল ১০০০তম লীগ ম্যাচ পরিচালনা করলেন ম্যানইউয়ের হয়ে।

-সিউল।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চমৎকার লেখা। তবে মাঝের ধারাবর্ণনায় খানিক রসকষ দিলে ভালো লাগতো বেশি। অল্প একটু একঘেঁয়ে লেগেছে দুয়েক জায়গায়।
সচলের পোষা ক্রীড়াভাষ্যবিদ সুহান পোলাডা প্রেম করার পর থেকে আর লেখালেখি করে না! আপনি সেই অভাব মেটান! হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কস্কি মমিন! আমি লেখা দিই না !!

রত্না মডু, দূরে গিয়া মরেন !!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুহান একজনই গুরু গুরু

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যে হাসি লেখায় রসকষ হয়তোবা দেয়া যেত কিন্তু নিজের টিমের খেলা দেখে পারলাম না। মানে কোন সার্জন নিজের সন্তানের অপারেশন করার সময় যেমন থমকে যান, সেরকম ব্যাপার

কড়িকাঠুরে এর ছবি

ভাল লিখেছেন- চলুক

স্যার ফার্গুসনকে সবসময় শ্রদ্ধা করি ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ এবং ভাল থাকবেন হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সিজনের শুরুতেই একটা চমৎকার ম্যাচ দেখে ফেললাম হাসি

তবে স্যার ফার্গির ১০০০তম ম্যাচের পূর্তির ম্যাচ বলেই বেশি মনে রাখবো এটাকে। পার্সি নিজের সাইনিং এর কার্যকারিতাটা প্রমাণ করে দিলো আর কি হাসি

আরো লিখবেন পারলে খেলা নিয়ে আশা রাখি। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরা সিজন যদি এভাবে টেনশন এ ফেলে ম্যাচ জেতে তাইলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

কপাল ভালো যে পার্সিকে কেনা হইসিলো, রুনি ১ মাস মাঠের বাইরে। স্যার ফার্গির ১০০০তম ম্যাচ আসলেই সারাজীবন মনে থাকবে।

আপনার লেখার আমি একজন ফ্যান, আপনার মন্তব্য পেয়ে অনেক ভালো লাগলো হাসি

জিকো এর ছবি

একজন পাক্কা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সমর্থক ই জানে যে ওরা শেষ মুহূর্তেও জিতে আসতে পারে। সেই আসায় ছিলাম আর তা আবারও করে দেখালো তারা। স্যার এর ১০০০ তম ম্যাচে এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতেই পারে না আমার মতে। ইয়েস বাঘ মামা, ইয়েস!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ঠিক বলেছেন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকগুলো মন্তব্য করেছিলাম সকালে এসে কিন্তু ওগুলো বোধহয় হারিয়ে গেলো। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্যে হাসি ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দ্রোণ মৈত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

কোলাকুলি

Fruhling এর ছবি

মাস্টার মশাই কবে যে থামবেন। তবে ম্যানইউ'র পারফরম্যান্স দিনদিন খারাপ হচ্ছে। গত ইংলিশ লীগ, উয়েফা তে ভালো করতে পারেন নাই।
নতুন সিজন শুরু হলো। খেলা দেখতে থাকি......

ধারাবাষ্য ভালো লাগলো

--ফ্রুলিংক্স

অতিথি লেখক এর ছবি

এই সিজনেও ভালো কিছু করতে পারবে না। ম্যানইউয়ের আসলে একটা উত্থান-পতন সময় থাকে, রোনাল্ডো যাওয়ার পরের সময়টা মোটামুটি সমান্তরাল গেলেও এখন একটু পতন চলবে। ২০১৪টা দেখবেন আমাদের হবে হাসি

শান্ত এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার লেখা। আমি নিজেও ম্যানইউর ফ্যান। আশা করবো প্রতিটি ম্যাচের পর আপনি এইরকম একটি রিভিউ লিখবেন।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে বললেন জন্যে অনেক ধন্যবাদ। সবসময় লেখা হবেনা হয়তো তবে এরকম ম্যাচ হলে লেখার চেষ্টা করবোই হাসি

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আপনার জন্যে একটা কুইজ। বলুনতো নিচের সিরিজটা কী বোঝাচ্ছে? হাসি

Wayne Rooney - Debut, Robin van Persie - 3rd game, Sir Bobby Charlton - 6th game, Andy Cole - 7th game, Stuart Pearson - 9th game, Jimmy Greenhoff - 15th game, Denis Law - 16th game, Michael Owen - 20th game, Ruud van Nistelrooy - 22nd game, Dwight Yorke - 24th game, Willie Morgan - 30th game, Brian McClair - 43rd game.

লেখাটা দারুণ লাগলো, যদিও প্রতিটা সেকেন্ড দম বন্ধ করে উপভোগ করেছি সেদিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইটা বুঝে ফেলছি---ফেসবুকের ম্যান ইউনাইটেড পেজেও দেখলাম এইটা শেয়ার হইছে দেঁতো হাসি

@লেখক, লেখা চমৎকার লাগলো। ম্যান ইউ ভক্ত হিসাবে আরো ভালো লেগেছে। দেখা যাক এই মৌসুমে কী হয়, তবে লীগ জেতাটা কষ্টকরই হবে। মিডফিল্ডে পল শোলস আর মূলত রয় কীনের অভাব এখনো পূরণ হয়নি, এছাড়া চেলসি আর ম্যান সিটির টাকা-পয়সা তো আছেই।

--দিফিও

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ দিফিও হাসি

আপনার কমেন্টটা ঠিক, প্রতিটা কথাই ঠিক মন খারাপ তারপরেও নিজের টিম বলে কথা তাই আশায় থাকবো ভাল করার। ফিংগারস ক্রস হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

Robin van Persie - 3rd game: এটাতে যা মনে হচ্ছে হ্যাট্রিক বলছেন দেঁতো হাসি

আরেকটা তথ্য দেই তাহল: রুড ভ্যান নিস্টলরয়ের প্রথম গোল ছিল ফুলহ্যামের বিপক্ষে এবং প্রথম হ্যাট্রিক ছিল সাউদাম্পটনের সাথে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।