বুয়েটের আন্দোলন হোক সকল শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয়
আমাদের দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ জঘন্য ছাত্ররাজনীতির কবলে আবদ্ধ। তথাকথিত নামধারী বহিরাগত প্রৌঢ় বয়সী কিছু নামেমাত্র ছাত্রের কবলে আজ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবরুদ্ধ হয়ে আছে। টেন্ডার বাজি , চাঁদাবাজি, হল দখল, ক্যান্টিনে মাগনা খাওয়া , সাধারণ ছাত্রদের পেটানোই যেন এখনকার ছাত্র রাজনীতির মূলমন্ত্র । আমার মনে আছে যখন আমি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়েছি তখনকার ভয়াল ছাত্র রাজনীতির এক পৈশাচিক পাশবিক মূর্তি আজও আমার কাছে এক দুঃসহ স্মৃতি।মাথা নিচু করে অনেকটা ডানে বামে না তাকিয়ে চোরের মত হলের মূল ফটক দিয়ে কত দিন যে নিজেকে নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে শশব্যস্ত হয়ে সোজা হলের গেস্ট রুমের পাশ ঘেঁসে নিজের রুমের দিকে ছুটেছি তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা আমার জানা নেই।
তখন বহিরাগত ক্যাডারদের চোখ ফাকি দিয়ে হলের মধ্যে কিভাবে রুমের বাইরে থেকে তালা দিয়ে ভেতরে লুকিয়ে ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয় সেই কৌশল বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলাম। সবাই যে আমার মত নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল তা কিন্তু না , নতুন ছাত্রদের সামনে দেয়া পাতি ক্যডারদের অনেক আশ্বাস আর তিন বেলা ক্যান্টিনে ফাউ খাওয়ার মন্ত্র মুগ্ধ ভাষণে অনেক ছাত্রকে মুগ্ধ হতে দেখেছি। মুগ্ধ হওয়া এসব নবীনদের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একইসাথে দেখেছি চাঁদাবাজি আর হল দখলের ভয়াল তাণ্ডবে লিপ্ত থাকতে। কোন দল করিনা অথবা মিছিলে যাইনা সে কারণে অনেকের মত আমাকেও মধ্য রাতে আমার রুমের চারজন সহ বের করে দেয়া হয়েছিল । চার রুম মেট মুহূর্তেই ছিটকে পড়েছিলাম প্রায় এক বছর ধরে তিল তিল করে ঘিরে রাখা নানা স্মৃতিতে জড়ানো সেই ছয় তলা থেকে। সেদিন কারণ হিসেবে আমাদেরকে জানানো হয়েছিল যে রাজনৈতিক কারণে ছয়তলার আমাদের এই কর্নারের কক্ষটি নাকি কৌশল গত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ । প্রতিপক্ষকে ঠিক হলের মুল ফটক থেকে নাকি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা যায় এখান থেকে । অর্থাৎ হলের কিছু ছাত্র সাথে কিছু বহিরাগতদের নিয়ে সারারাত ধরে এখান থেকে হল পাহারা দেবে। আমি জানিনা ছাত্র রাজনীতি করা এসব ছাত্রদের কাজ যদি হল পাহারা দেয়া হয় তাহলে শিক্ষাজীবনের মুল মন্ত্রটা আসলে তাদের জন্য কি?
ছাত্র রাজনীতিতে লিপ্ত এসব ক্যাডারদের ফাউ খাওয়াতে সহসাই কিভাবে খাবারের দাম বেড়ে যেত , গেস্ট রুমে কোন ছাত্রের অতিথি আসলে অছাত্র অথবা ছাত্রনেতাদের কুরুচিপূর্ণ আলোচনা ও বিভিন্ন আচরণে ওই অতিথির কাছে অপেক্ষমাণ সময়টা কিভাবে অনেকটা দীর্ঘ হয়ে যেত , টিভিরুমে সাধারণ ছাত্রদের কেমন অসহায় হয়ে সামনের চেয়ারে বসে থাকা ছাত্রনেতাদের মর্জির বশবর্তী হয়ে বস্তা পচা নানা অনুষ্ঠান দেখে বিনোদনের চেয়ে কত যে বিরক্ত হতে হত, অনিচ্ছা সত্ত্বেও কত নিরীহ ছাত্রকে রাজনৈতিক মিছিলে যেতে হত, রাতারাতি হলের বড়ভাই বনে যাওয়া এসব নেতাদের ঠিকমত সালাম না দিতে পারার অপরাধ যে কতটা গুরুতর হত, রাজনীতি কিভাবে হলের বিভিন্ন রুমকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের রুম হিসেবে পরিচিতি পেত, কিভাবে একজন সাধারণ ছাত্রের উপরে এসব নেতারা অকারণে চড়াও হত, কিভাবে একজন হল সভাপতির নামের পূর্বে ডগ শব্দটি গৌরবের সাথে তিনি সহ সবার মাঝে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠত তা আজ সত্যি এক দুঃসহ স্মৃতি ।
আজ এইসব স্মৃতিচারণ করছি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অরাজনৈতিক প্রকৃত ছাত্র আন্দোলনকে দেখে । যেই ছাত্র আন্দোলনের সাথে কোন রাজনৈতিক যোগ সাজস নেই , যেই ছাত্র আন্দোলনের মুল সূরের সাথে সকল ছাত্র একমত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত যেখানে তাদের রাজনৈতিক কোন ফায়দা লুটের সেই অপচেষ্টাকে বাস্তবায়ন করার সাহস দেখাতে পারিনি। হ্যাঁ আমি বুয়েট প্রসঙ্গে বলছি।
গত চার মাসের বেশী সময় ধরে বুয়েটে অচলাবস্থা চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ভিসি প্রো ভিসির পদত্যাগের দাবীতে শুরুতে শিক্ষকরা এই আন্দোলন শুরু করলেও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এখানে শুরু থেকেই একটা বিষয় আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে আর তা হল দাবী আদায়ের এই আন্দোলনে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। কোন রাজনৈতিক ব্যানার নয় শুধুমাত্র ভিসি প্রো ভিসির পদত্যাগের দাবীতে একীভূত হয়ে নিজেদের দাবী আদায় ও তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সকল শিক্ষার্থীর যে প্রচেষ্টা তাকে সাধুবাদ জানাই। বুয়েটের আজকের এই আন্দোলন আজ যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে অর্থাৎ ছাত্রদের দাবী আদায়ের এই নিরন্তর প্রচেষ্টা যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে আন্দোলনটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার কারণে। বিভিন্ন মতাদর্শের , বিভিন্ন ভাবনাকে লালন করে থাকলেও বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীরা যে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে , অন্যায়ের বিপক্ষে, ন্যায়ের স্বপক্ষে এক ও অটুট তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই তারা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর দাবী আজ গন দাবীতে পরিণত করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিকে এগিয়েছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ।
বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব ছাত্র আন্দোলন হয়েছে তাতে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের একটি প্রভাব সর্বদায় লক্ষণীয়। ২০০২ সালের ২৩ শে জুলাই রাতে শামসুন্নাহার হলের পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে বিশাল ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল যা স্মরণ কালের সেরা ছাত্র আন্দোলন সেখানেও কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন যারা তখন ক্ষমতায় ছিলেন তাদের নিষ্ক্রিয়তা এই আন্দোলনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সার্বজনীন ছাত্র আন্দোলনে পরিণত করতে পারেনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে। সেখানে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল দুইভাগে ছিল দ্বিধা বিভক্ত। সেখানেও অপসারণের দাবি উঠেছিল ভিসি প্রো ভিসির সেই সাথে ছিল ছাত্রদলের তাণ্ডবলীলা যার কিয়দংশ বুয়েটেও ছাত্রলীগ নামধারী কিছু বহিরাগত করার একটা অপচেষ্টা চালিয়েছে। এদের একজন আবার নিজেকে বুয়েটের কমার্স ফ্যাকাল্টির ছাত্র বলে নিজেকে দাবী করেছে। যদিও বুয়েটে এমন একটি অনুষদ নিয়ে পুরো জাতিই আজ বিভ্রান্ত। কিন্তু ২০০২ সালের সেই আন্দোলনের সাথে বুয়েটের এই আন্দোলনের তফাতটা হল প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তফাৎ , রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে সকল শিক্ষার্থীর একই প্লাটফর্মে দাড়িয়ে একীভূত হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্য ও অধিকার আদায়ের তফাৎ । রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ছাত্রদের দাবী ছাত্রদের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নয় – এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজ বুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছে আর তাকে বাস্তবায়িত করার শিক্ষার্থী সুলভ যে ভাষা তারা ব্যবহার করেছে তাকে স্যালুট জানায়। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে একটি সৎ ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজ যেই আন্দোলন বুয়েটে চলছে তার সফল বাস্তবায়ন হোক , ছাত্রদের দাবী আর অধিকার আদায়ের মধ্যম হোক কেবলমাত্র ছাত্ররা কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয় যা বুয়েটের ছাত্ররা ইতিমধ্যেই লালন করে চলেছে। সেই সাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলবো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে , শিক্ষার স্বার্থে অসত্যের বিপক্ষে থেকে নিজেদের ন্যায়ের পথে ব্রত রাখুন। আর এক্ষেত্রে অনুসরনিয় এবং অনুকরণীয় হিসেবে সর্বদায় থাকবে ঐতিহ্যবাহী বুয়েট ও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের এই চলমান আন্দোলন সফল হোক সেই কামনা করছি।
টেন্ডার বাজি, হল দখল আর নিরীহ সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতনের ছাত্র রাজনীতি থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুক্ত হোক । ছাত্র রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্যে তবে সেই অধিকারের কথা রাজনীতির প্রভাব মুক্ত থেকেও বলা যায় । রাজনীতির এই করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হোক সকল শিক্ষার্থী , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ।বন্ধ হোক ছাত্রদের অধিকার আদায়ের অজুহাতে প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান ধারার ছাত্ররাজনীতি । আর এক্ষেত্রে বুয়েটের এই আন্দোলন হোক সকলের জন্য পথিকৃৎ ।
অমি_বন্যা
মন্তব্য
ছাত্র রাজনীতির সমালোচনা করার নামে ছাত্রসমাজের সামগ্রিক বিরাজনীতিকরণের সাফাই গাওয়া লেখায় ১ তারা।
রাজনৈতিক আদর্শ, রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতি আর দুর্বত্তপনা ও মাস্তানির তফাৎ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রদের যে গড় ধারণা সেইটা এই লেখায় প্রতিফলিত হয় নাই, এইরকম আশা রাখি।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বর্তমান সময়ে যে ছাত্র রাজনীতির ধারা বিদ্যমান সেটা কি আদৌ কোন সুস্থ ধারার রাজনীতি ? ঠিক এই অবস্থান থেকে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে কি?
আমার লেখাটি ছাত্রসমাজকে বিরাজনীতিকরনের সাফাই গাওয়ার উদ্দেশ্যের জন্য নয় , মূল বক্তব্যটি কিন্তু বুয়েটের চলমান একটি অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলন যেটাতে রাজনীতির কোন আঁচড় এখনও পড়েনি এবং একিসাথে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া যে ছাত্রদের দাবী সঠিক এবং সফলভাবে কেবলমাত্র ছাত্রদের দ্বারাই উপস্থাপিত হতে পারে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।
অমি_বন্যা
বর্তমান সময়ের জাতীয় রাজনীতিও অসুস্থ। কিন্তু তার বদলে আমরা সামরিক শাসন চাইতে পারি কি?
অজ্ঞাতবাস
টুইটার
রাজনীতি, দলীয় রাজনীতি আর ছাত্র রাজনীতি এই তিনটি বিষয়ের তুলনামূলক একটি বিশ্লেষণ লেখাটাতে আসলে ভালো হতো। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতির প্রয়োজন আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। আমি বর্তমানের প্রেক্ষিতে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
'প্রেক্ষাপট' রাজনীতির মাধ্যমেই বদলাইতে হবে। ১৮ থেকে ২৪ এর শিক্ষিত তরুণেরা রাজনীতি না করলে কারা করবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও প্রশাসনের স্ট্যান্ডার্ড আর স্থানীয় থানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করুক। তারপরে রাজনীতি করার, দল সমর্থন করার, দলের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অধিকার সবার আছে। সে ছাত্র হোক আর অছাত্র।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দেশের স্বার্থে বর্তমানে রাজনীতি ঠিক কতোটা হচ্ছে এটাই প্রশ্ন, ছাত্ররাজনীতির পূর্বের অর্জন অস্বীকার করার প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু এই রাজনীতি এখন যেই হালে এসছে তার দায়িত্বও ছাত্রদেরই, ক্ষমতার লোভে রাজনীতি ছাত্ররাই করে। তাই বছরের পর বছর ধরে সেশন জট আর নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যে বেহাল অবস্থা তাতে এখন ছাত্র রাজনীতিরে সমর্থন করার কোনো কারন আমি দেখিনা। ছাত্রদের নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির আবশ্যকতা আমি দেখিনা। বুয়েটে যেভাবে ছাত্ররা এক হয়ে আন্দোলন করছে সেটা অন্য জায়গাতেও সম্ভব। তার জন্য সারা বছর রাজনৈতিক কর্মসূচির কোনো প্রয়োজন নাই। আর বাংলাদেশ এই মুহূর্তে এমন কোনো ক্রান্তিকালেও নাই যে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে আন্দোলন সম্ভব নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতি মুক্ত করার দাবি অনেক আগের। সেটা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেই এসেছে। এখন ছাত্ররা রাজনীতি করে দলীয় রাজনীতির মদদে, রাজনৈতিক দলের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে, এটা ছাত্রদের নিজেদের রাজনীতি সেটা তো মনে হয়না। এই রাজনীতি তারা মাঠে-ময়দানে গিয়ে করলে আপত্তি নাই, কিন্তু যেই সাধারণ ছাত্ররা এটা করতে চায়না তাদেরকে অযথা হয়রানি করার অধিকারও ছাত্ররাজনীতি যারা করে তাদের নাই। গুন্ডামি আর দুর্নীতি তো বাদ দিলাম। আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনার বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করছি অরফিয়াস ভাই ।
অমি_বন্যা
আমিও। ছুরি দিয়া আপেল ও কাটা যায় আবার পেটও কাটা যায়। যারা দুইটারে এক কইরা দেখে তাদের হাত থেইকা থাবড় দিয়া ছুরি কাইড়আ নেওন দরকার। এটারে আরও ভিতরে গিয়া চুলচেরা বিশ্লেষন করলে অনেক "দ্য ডেভিল ইস ইন দ্য ডিটেইলস" বাইরাইবো। ফাক দ্যাট।
-মেফিস্টো
ছুরি কাইড়া নেয়া আর ছুরি জিনিসটা উধাও কইরা দেয়া যে এক বিষয় না এইটা আশা করি মাথায় আছে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার সাথে এই প্রসঙ্গে বাতচিতের আগ্রহ হারাইলাম। ভালো থাকেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অনিন্দ্য দা, দেখেন আমি আমার মতামত বললাম, ভিন্নমত থাকতেই পারে। আর আমি কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির বিরুদ্ধে, প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছাত্ররা ব্যক্তি পছন্দমত রাজনীতিতে অংশগ্রহন করতেই পারে, তার বিরুদ্ধে আমি না। ভালো থাকুন আপনিও।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
একেবারে একমত।
---------------------
আমার ফ্লিকার
ভাই অনিন্দ্য , আপনার কথা ঠিক আছে যে, " 'প্রেক্ষাপট' রাজনীতির মাধ্যমেই বদলাইতে হবে" কিন্তু সেটা করার উপযুক্ত জায়গা আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলা না। কারণ আমাদের মূল রাজনীতিতে যারা আছেন, তারা চান না যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলাতে সুস্থ রাজনীতি থাকুক। তারাই সমস্ত ছাত্রনেতাদের অন্যায় করতে উৎসাহ দেন তাদের নিজের স্বার্থে। কথাগুলা নিজের ব্যক্তিগত ছাত্র জীবনের কাছ থেকে দেখা অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। খুব সোজা সমীকরণ (y=mx). x(ছাত্রনেতা) যত শক্তিশালী হবে তার মদদদাতা নেতা , তত শক্তিশালী হবে। এখন বলেন কেমন করে ছাত্ররাজনীতি কলুষতা মুক্ত হবে? তাই এখন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলা ছাত্ররাজনীতি মুক্ত করার সময় আসছে। তারপরও যদি কেউ তার রাজনীতির অধিকার চর্চা করতে চায় তার জন্য তো পুরা দেশ-ই উন্মক্ত আছে।
আসুন একটু বিষয়ে আলাপ করি।
সবকিছুর-ভেতরে-রাজনীতি থাকবে ঠিক আছে। কিন্তু তারপরে তো আলাপও এগুতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে স্তরে রাজনীতি রেখে সেখানে আবার রাজনীতির "অসুস্থ ধারা" কিংবা কুপ্রভাব, দলীয় পক্ষপাত থেকে কীভাবে তাকে মুক্তও রাখবেন? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে যে দলীয় নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সরকার দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কর্মকাণ্ড, সর্বোপরি রাজনৈতিক যে অসুস্থ ধারার প্রতি অনেকের অভিযোগ, এটা কি কোনো অসাধারণ ঘটনা? এটা আমাদের আটপৌরে জীবনের মতোই সরল সাধারণ ঘটনা। বরং সবকিছুর-ভেতরে-রাজনীতি রেখে আবার রাজনীতির দুঃশাসন কুপ্রভাব আর অবিচার থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত রাখাটাই হবে কাঙ্ক্ষিত কিন্তু অসাধারণ ঘটনা। সবকিছুর-মধ্যে-রাজনীতি থাকবে বলেই ফলে থামলে হবে না, সুস্থ ধারার সেই অসাধারণ পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হবে সেই রূপরেখা নিয়েও মাথা ব্যথা তো করতে হবে। আমার তো মনে হয় না এ নিয়ে কারও স্পষ্ট ধারণা আছে যে সেই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হবে। হয়তো রাতারাতি সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়া নিয়ে আপনিও সন্দিহান। হয়তো আপনার অবস্থান এইটুকুই যে বিরাজনীতিকরণের কারণে যে ভয়ানক পরিস্থিতি দেশের জীবনে তৈরি হবে বলে আপনি আশঙ্কা করছেন, তার থেকে বর্তমান এই অতিসাধারণ রাজনৈতিক দুরাবস্থাটাও শ্রেয়।
আপনি লাইনে আছেন মনে হয়। আমার পয়েন্ট ছিল দুইটা। দুইটাই বেসিক রাইটস সংক্রান্ত। কিন্তু এই পোস্টে আলোচনা চালাইতে আগ্রহ পাইতেছি না। পরে হবে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বুয়েটের আন্দোলন রাজনীতি নয়?! রাজনিতী বলতে যারা কেবল প্রচলিত আওয়ামীলীগ বিনপি সমর্থন করে দল করা বুঝে তাদের আসলে রাজনীতি কি সেটা বুঝানো যাবে না। যেখানে সমগ্র বুয়েট তাদের নৈতিক দাবীর জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে, সেটাও তাদের কাছে অরাজনৈতিক, এবং বুয়েটের ছেলে-মেয়েরা রাজনীতি বুঝে না, রাজনৈতিক জ্ঞানহীন বলতে চাই, তাদের চিন্তা-ভাবনার সীমাবদ্ধতা দেখে বলতেই হয়, মারহাবা। ১৮ থেকে ২৪ এর ছেলেরাই রাজনীতি করছে, কেবল মাত্র ছাত্রলীগের কোপানিতে আহত ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রক্তপাত, জীবনপাত না করে স্বেচ্চায় রক্তপাত করে প্রচলিত ধারার সন্ত্রাসের রাজনীতির গালে একটা কষে থাপ্পড় লাগিয়ে প্রতিবাদের রাজনীতি করছে। এই রাজনৈতিক বোধটা আপনাদের মত রাজনীতি বিশারদদের মাথায় ঢুকল না দেখে আমি অবাক হলাম!
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
হুমম। রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে কি রাজনীতি নেই? ভাবনাটা প্রণিধানযোগ্য।
অটঃ "স্বেচ্ছায় রক্তপাত" করার স্বাধীনতার প্রতি সম্মানজ্ঞাপনপূর্বক এমন আত্মঘাতী পন্থার প্রতি নিন্দাও পোষণ করছি। যার রক্ত, তারই বেশি মায়া থাকা উচিত। নিজে সেটা কোরবানি দিয়ে অন্যের থেকে সেই রক্তের প্রতি অধিক দরদ আদায়ে করুণা প্রাপ্তি আর বশ্যতা স্বীকার ছাড়া আর কী লভিবে বোধগম্য নয়। প্রতিবাদের মাঝখানে প্রেয়সীর অভিমান প্রদর্শন বালখিল্যতা।
একই কথা কি অনশন কারীদের উদ্দেশ্যেও বলা যাবে? ("নিজের শরীরের প্রতি নিজের মায়া নাই, কর্তৃপক্ষের মায়া আশা করে লাভ কী")
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অনশনও কি প্রেয়সীর অভিমান নয়? অনশন কীভাবে ভাঙে? মুখে দুধ তুলে দেওয়ার নাটকে নয় কি? দাবি আদায়ের আন্দোলনে মান অভিমান কীসের? যেনো, আমি দুর্বল, অসহায়, মরে যাচ্ছি, অথচ তুমি আমাকে একটুও দেখছো না। আমাকে তুমি চেয়ে দেখো। প্রকারান্তে কর্তৃপক্ষের সার্বিক শক্তি ও ক্ষমতা মেনে নেয়ার রোমান্টিক আয়োজন।
এটা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শক্তি ও প্রতিরোধ তৈরি করার বদলে নির্ভরতা তৈরি করে। আমার নিয়ম কানুন মানতে সমস্যা নাই। তবে খোদা, রাষ্ট্র, কর্তৃপক্ষ, এইসব উচ্চতর শক্তির উপর প্রেয়সীসুলভ নির্ভরতা প্রদর্শনে আছে। অন্য অনেকের নাই। তাদের কিছু বলিও না। কিন্তু রক্তপাত, আত্মহুতির হুমকি এই পর্যায়ে গেলে কিছু বলার তাগিদ বোধ হয়।
আমার মূল পয়েন্ট ছিল দুইটা যে একই সেটা আপনি খেয়াল করেছেন কিনা। নির্ভরতার ব্যাপারটাতো থেকেই যায়। এই ফ্যাক্টরটাই মনে হয় আন্দোলন আর যুদ্ধের মধ্যে তফাৎ গড়ে দেয়। যতক্ষণ না আমরা অ্যানার্কিস্ট হয়ে যাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের কিছু একটার উপর আমরা নির্ভর করছিই।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আবশ্যকীয়ভাবে নয়। অ্যানার্কিস্ট না হয়েও রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষকে অবজেক্টিভ ও জাগতিকভাবে দেখা যায়। আমরা নিয়ম কানুন মানি প্রয়োজনে, এবং কেবলমাত্র প্রয়োজনে। একমাত্র প্রয়োজন ক্ষমতাকে জাস্টিফাই করে। ক্ষমতা বাই ইট সেল্ফ জাস্টিফাইড না। এটা ক্ষমতাকে দেখার সহজ স্বাভাবিক উপায়। "সরকারের কিছু একটার উপর আমরা নির্ভর করছিই" কথাটা ক্ষমতাকে ঘুরিয়ে দেখার উপায়। আর প্রেয়সীসুলভ নির্ভরতা হলো সেই দেখার উপায়ের প্রকট রূপ। এটা ক্ষমতাকে মিস্টিফাই করছে। প্রয়োজনের বাইরেও ক্ষমতাকে আবেগ, অসহায়ত্ব, প্রচলিতের প্রতি অ্যাপিল, অথোরিটির প্রতি অ্যাপিল, ইত্যাদি উপাদান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করছে। রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের প্রয়োজনের সম্পর্কটাকে নির্ভরতার সম্পর্ক ভাবার ফলে যে মিস্টিফিকেশন ঘটছে, এতে প্রতিষ্ঠানটি উপাসনালয় বা মাজারে পরিণত হচ্ছে।
ফলে আমি এভাবে দেখি না যে আমি রাষ্ট্রের উপর "নির্ভর" করছি। এটাকে প্রয়োজন হিসাবে দেখলে রাষ্ট্রের সাথে আমার বোঝাপড়া হয় অবজেক্টিভ, জাগতিক, চোখাচোখি। রাষ্ট্রযন্ত্রও সেটা মাথায় রাখার তাগিদ বোধ করে। তার বদলে এটাকে নির্ভরতা হিসেবে দেখলে রাষ্ট্রের সাথে আমার বোঝাপড়ার উপাদান হয় অনশন, আত্মাহুতির হুমকি, রক্তপাত, আবেগ ও মান-অভিমানমূলক। সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে এই মেসেজটাই পৌঁছে যে তার ক্ষমতা ও শক্তি তার সাবজেক্টের কাছে প্রয়োজনের বাইরেও জাস্টিফাইড। এটা প্রয়োজনের সম্পর্ককে ইররিলেভেন্ট করে দেয়।
তুলনায় সিভিল ডিসাবিডিয়েন্সের (বর্জন, অসহযোগ, ইত্যাদির) কথা ভাবা যেতে পারে। এটা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাকে আনজাস্টিফাইড ও অবসলিট করে দেয়। ফলে কর্তৃপক্ষকে এখন তার ক্ষমতার জাস্টিফিকেশন প্রদর্শন করতে হবে সাব্জেক্টের প্রয়োজন মিটিয়ে।
অনশন, রক্তপাত আগেই মেনে বসে আছে যে আমাকে দেখার জন্যে এখন একটা কর্তৃপক্ষ লাগবেই। সে ক্ষমতাকে জাস্টিফিকেশন দিয়েই বসে আছে। এখন কর্তৃপক্ষ সাবজেক্টের প্রয়োজন মেটাবে কেবল দয়া আর আবেগের বসে।
অনিন্দ্য রহমানের এই কথাটির সাথে চরমভাবে একমত।
বর্তমানে আমাদের দেশে মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার প্রেসক্রিপশন দেওয়ার প্রবণতা খুব বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে - এইটা একটা হার মেনে নেওয়ার লক্ষণ। ছাত্র রাজনীতি চালু রেখেই তার সংশোধন করতে হবে। "সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু এই কাজ তো আমার না, আরেকজন করুক" - আমাদের সবার ভিতরে পাশ কাটানো এই মনোভাবটা শিকড় গেঁড়ে বসেছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রবেশের আগে অভিভাবকরা তাদের (ভালো) সন্তানদের মগজ ধোলাই করে দেন "ভুল করেও রাজনীতি করবা না এইটা খারাপ ছেলেরা করে"। তারা একবারও ভেবে দেখেন না রাজনীতি করা সেই খারাপ ছেলেরাই ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে একদিন তাদের হর্তাকর্তা মন্ত্রী/এমপি হয়ে বসবে। সেই খারাপ ছেলেদের হাতে দেশ পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়ে তারা টিভি, পত্রিকার খবর পড়ে মাথা কুটে মরেন "একজন ভালো মানুষও কি রাজনীতিতে নেই"। একবারও ভাবেন না এই পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী। প্রয়োজন ছিলো পারিবারিকভাবে অনুপ্রেরণা পাওয়া ও পারিবারিকভাবে রাজনীতির সঠিক উদ্দেশ্য জানা, কিন্তু সবাই রাজনীতির প্রথম পাঠ পাচ্ছে পাড়ার মোড়ের মাস্তান কিংবা হলের ফাউখোর বড়ভাই আর নাহলে শেষমেষ কোন দাড়িওয়ালা বাটপার এর কাছে। এই মাস্তান-বড় ভাই-দাড়িওয়ালাও রাজনীতির প্রথম পাঠটা একই ধরনের লোকদের কাছে পেয়েছিল, এইভাবে "রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, মারামারি, দুর্নীতি, রগকাটা" এই প্রাচীন রাজনৈতিক মনোভাবটা এখনো টিকে আছে। যতদিন পর্যন্ত অভিভাবকরা তাদের ভালো সন্তানগুলোকে রাজনীতির ময়দানে না নামাবেন, ততদিন পর্যন্ত রাজনীতির এই অসুস্থধারা চলতেই থাকবে।
আমরা আমাদের ভালো সন্তানদের রাজনীতিতে নামালে তারা হয়ত একটু কষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের নাতি-নাতনিরা অবশ্যই ভালো থাকবে।
তাহলে "ভালো" সন্তানদের রাজনীতির ময়দানে নামাটাই হলো সুস্থধারার রাজনীতির সোনার হরিণ? রাজনীতিতে এখন কেবল দুষ্টরা বিরাজ করে? আর বর্তমানে লুকিয়ে থাকা ভালো সন্তানেরা এসে একদিন রাজনীতি উদ্ধার করে দিবে?
বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রাজনীতি থাকতে হবে।
রাজনীতি ছাড়া রাজনীতির কোন চিকিৎসা নাই।
অজ্ঞাতবাস
আমরা অসুস্থ রাজনীতিকে দোষ দেই, কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখি কারা এই রাজনীতি করছে? আপনার লেখাতেই উঠে এসেছে বর্তমানে রাজনীতি কাদের হাতে জিম্মি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি মুক্ত করলে কি এই জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব? উপরে সুমন চৌধুরী তার একটি মন্তব্যে বলেছেন, 'বর্তমান সময়ের জাতীয় রাজনীতিও অসুস্থ। কিন্তু তার বদলে আমরা সামরিক শাসন চাইতে পারি কি?'। আমার বক্তব্যও এটাই। অসুস্থ রাজনীতি বা অসুস্থ গণতন্ত্র থেকে মুক্তি মানে কিন্তু গণতন্ত্রহীনতা নয়। ঠিক একই ভাবে ছাত্র রাজনীতির যে অবস্থা আজ দেখা যাচ্ছে, তাতে পরিবর্তন আনতে হলে ছাত্র রাজনীতিই বন্ধ করে দেয়াটা সমাধান নয়। তাতে বরং জাতীয় রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। উপরে অনিন্দ দা এ বিষয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে বলেছেন; তাই আর বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। আমার মতে ছাত্র রাজনীতির পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর জন্যে আইন হতে পারে, বয়সসীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে; কিন্তু বন্ধ করে দেয়া কোন সমাধানই নয়।
টুইটার
এটা সত্যি যে ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকটাই মেধাশূণ্য হয়ে পড়েছে। এর কারণ বহুবিধ। মূল কারণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব এবং ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া পকেট কমিটি। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি অন্তত সবাই বদমাশ ছিল না। কিন্তু দেখা যায় বদমাশ না হলে মহানগর কমিটির ল্যাংটা নেতাদের প্রিয় হওয়া যায় না। তাই মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন নেতারা নানাভাবে হারিয়ে যায়। আমার ডাইনিং অভিজ্ঞতার কথা বলছি- আমি কলেজ থেকে ডাইনিং এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই এবং অত্যন্ত সৎ ছেলেদের জুনিয়র নিয়োগ দিই। দেখা গেল ছাত্রলীগের ডাক্তার হয়ে যাওয়া সভাপতির বাকি আড়াই হাজার টাকা এবং সেক্রেটারির বাকি দুই হাজার টাকা। আমি বারবার তাদের নোটিস দেই। আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি করে, শেষে তারা আমাকে চাপ দিলেন পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য, আমিও তাদের টাকা আদায় না করে দায়িত্ব ছাড়বো না বলে আরো ৩ মাস দায়িত্বপালন করি এবং হল-তত্ত্বাবধায়ককে খবর দেই। এরা কিন্তু আমার সংগঠনই করত! এরপর আমিও ভুলের বশে একটা অভাবী ছেলেকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে দিই, পরে দেখি ছেলেটা ধান্দাবাজ। বাকি টাকা আদায় তো দূরের কথা, সে মেস প্রায় বন্ধ করে দেবার অবস্থা করল! মহানগরের নেতাদের দাপটে ক্যাম্পাসে নেতারা সবই করতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে অসম্ভব কঠিন- করলে তাদের লাশ পাওয়া যাবে ম্যানহোলে। প্রতিষ্ঠানটি বুয়েট বলেই এই গণান্দোলন সম্ভব হয়েছে, যা কিনা পুরোপুরি সফল হয়নি। ঢাকার বাইরে এমন একটি আন্দোলন অসম্ভব এবং অত্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে এসব আন্দোলন দমন করা হয়। পুলিশের লাঠি, টিয়ার গ্যাস আর গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হয়ে আন্দোলন করা অনেক বেশি কঠিন।
ছাত্ররাজনীতি উন্নত দেশগুলোতে কেমন তা আমি জানিনা। তবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হলে আগে ৩টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবেঃ
১।শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
২।সকল ভাইভা পরীক্ষার ভিডিও রেকর্ডিং নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের ইচ্ছামূলক বিদ্বেষের শিকার না হয়। অনিশ্চিত হলে রেজাল্টের প্রকৃত ও নিরপেক্ষ পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩।ছাত্ররা দোষ করলে যেমন শাস্তির বিধান আছে, তেমনি শিক্ষকদের অন্যায়ের শাস্তির বিধানও নিশ্চিত করতে হবে।
এগুলো নিশ্চিত না করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া একটা অবাস্তব ইউটোপীয় ধারণা। এসব নিশ্চিত না করতে পারলে অন্তত সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা ল্যাংটাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। রাজনীতিতে প্রতিটা ছেলেই নোংরা না। প্রচুর ভাল ছেলে আছে। পারলে ওপরওয়ালাদের সাথে ফাইট করে এদের নির্বাচিত করে দেখান।
অলয়
অলয়, আমি আপনার প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানাই।
আসলে আমরা যারা বুয়েটে পড়ি তারাই একমাত্র বুঝি এই আন্দোলন কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রয়োজন ছিলো। কিছু ব্লগ এ বুয়েটের এ আন্দোলনকে রাজনৈ্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছিলো। তা সত্তেও আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচু্যত হই নি । আপনার পোস্ট টি পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে এই গঠনমূলক লেখটির জন্য।
অর্বাচীনের উপকথন
আপনাকেও ধন্যবাদ।
এই বাস্তবতা আমিও দেখেছি হলে। বাস্তবসন্মত লেখা।
ছাত্রদের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়াটা সমর্থন করি না- উল্টো মনে করি আরও বেশি করে রাজনীতি সচেতনতা নিজেদের মধ্যে ধারণ করা প্রয়োজন । আপনি নিজেও বলেছেন যে ছাত্রদের বিরাজনীতিকরণের পক্ষে আপনি লিখেন নাই । কিন্তু মন্তব্যে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন যে, সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি যেহেতু বিদ্যমান নেই সেহেতু ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে কিনা । দেখুন, যেখানে অসুস্থতার প্রশ্ন সেখানেই কিন্তু সুস্থ অবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরী । আবার যেখানে অসুখের বালাই নাই সেখানে প্রয়োজন সেই অবস্থা টিকিয়ে রাখা ।
আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করলে ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে কে? উপরে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন । ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলগুলো ভরে যাচ্ছে ব্যবসায়ী-আমলা, বিভিন্ন চকরা-বকরা রঙে । এভাবে চলতে থাকলে, রাজনীতি অমুক-তমুক ভবনে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলে, তো চরম আশংকার কথা । খেটে খাওয়া রাজনীতিবিদ তখন তো সোনার হরিণ হয়ে যাবে । উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির চর্চা হতে হবে, লেজুড় বৃত্তির নয় । আর এই লেজুড় বৃত্তির জন্য কেবল ছাত্রদের দোষ কিভাবে দেবেন? ছাত্র সংগঠনগুলো মূল দলগুলোর সহযোগী হিসেবে কাজ করে । আর মূল দলের নেতৃবৃন্দ তাদের ইচ্ছামত ছাত্রদের ক্যাডার বাহিনী হিসেবেই ব্যবহার করে । যার ভুক্তভোগী আপনিও- আরও অনেকে । এই অসুস্থ চর্চা শুরু করার জন্য দায়ী মূল দলগুলো । এর জন্য কী দেশের রাজনীতি শূন্য অবস্থা আমরা চাই? স্লোগান দেই যে রাজনীতি নিপাত যাক? বরং আশা করি যে সুস্থ অবস্থা ফিরে আসুক । আর এই সুস্থতার চর্চাটা জরুরী ছাত্রাবস্থায় । বড় সড়, ক্যাডার পোষা “রাজনীতিজীবী” হওয়ার পরে নয় ।
আজ একটি ইস্যুতে বুয়েটের শিক্ষার্থীগণ এক হয়েছেন । যখন এই ইস্যু থাকবেনা তখন তাঁরা কী আলাদা হয়ে যাবেন? সেটা কাম্য হতে পারে না । তাঁরা এক হয়ে থাকুন যেকোনো ভাল কাজে । এর থেকে সুস্থ রাজনীতির পুনঃ পাঠ ছড়িয়ে পড়ুক । পথিকৃৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েট । এর শিক্ষার্থীরাও পথিকৃৎ হোক যে লেজুড় বৃত্তির রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে এসেও ন্যায় ভাবে দাবী আদায় করা যায় । রাজনীতিবিদদেরকেই রাজনীতিজীবীদের পরাজিত করতে হবে ।
দেখুন এই লেখার বিষয়বস্তু মোটেও ছাত্ররাজনীতি নয়। ছাত্রছাত্রীদের যে কোন আন্দোলনে বাংলাদেশে প্রচলিত ধারা হল একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাব এবং অন্য আর একটির বিরোধিতা। বুয়েটের বর্তমান আন্দোলনটি এই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে। বিভিন্ন ধরনের, মতের হাজার হাজার শিক্ষক/শিক্ষিকা/কর্মকর্তা/কর্মচারী/ছাত্রছাত্রী/এলামনাই সবাই এক ব্যানারে, এক দাবিতে এসেছেন বুয়েট ক্যাম্পাসে। লেখার মূল বিষয় মনে হয় এইটাই। এখানে আমরা শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করতে পারি, যা হবে অফ টপিক। ছাত্র রাজনীতি থাকুক বা না থাকুক, ভাল হোক বা খারাপ হোক এই সব বিষয়ের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হল বুয়েটের বর্তমান আন্দোলন যে একটি নতুন ধারার আন্দোলন (উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি দুই দিক থেকেই) তা স্বীকার করা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। আমাদের দেশে ব্যাবসায়ী-আম্লারা রাজনীতিক বনে যান কারন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা মেধাবী রাজনীতিক তৈরী করতে পারছিনা। ডাকসু, ইউকসুর মত প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুজ্জীবন ছাড়া মনে হয় এই কলুষতা দূর করা সম্ভব নয়। অরফিয়াস ভাইয়ের সাথে দ্বিমত পোষন করছি, "আর বাংলাদেশ এই মুহূর্তে এমন কোনো ক্রান্তিকালেও নাই যে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে দেশে আন্দোলন সম্ভব নয়"---ক্রান্তিকালেই যদি ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন হয় তাহলে ক্রান্তি মুহুর্তে আমরা একেবারে প্রস্তুত রাজনীতিক কই পাবো? ক্রান্তিকালের প্রস্তুতি তো আগে থেকেই নিতে হবে। আর বিশ্বের অনেক দেশেই ছাত্ররাজনীতি আছে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের অধিকার, সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্থানীয়, জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক/সভা/সমিতি/আন্দোলন করে থাকে। একটা উদাহরন মনে পড়ে, সম্ভবত জার্মানীর কাহিনী (পুরোপুরি নিশ্চিত নই), যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা স্থানীয় সরকারের সাথে negotiation এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য মেট্রো রেল টিকেটে মূল্যহ্রাসের ব্যবস্থা করেছিল। এর জন্য তাদের জনমত গঠন থেকে শুরু করে গবেষনা পর্যন্ত করতে হয়েছিল কিভাবে এই মূল্যহ্রাস cost-benefit হিসাবে সরকারের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তাই বলতে চাই ছাত্ররাজনীতির জন্য ক্রান্তিলগ্নের অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
তবে এটা স্বীকার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে, সব আন্দোলন not necessarily রাজনৈতিক, যেমন বুয়েটের বর্তমান আন্দোলন। কিছু বিষয় আছে, যেগুলো কে রাজনৈতিক রঙ দেয়ার চেষ্টা করা হলে মূল উদ্দেশ্যই অর্জিত হয়না। এই লেখাটি আমার কাছে এই বার্তাটি দেয়। লেখককে এই সাফল্যে সাধুবাদ জানাই।
রাজনীতি খুব খারাপ জিনিস। ছাত্র রাজনীতি আরো পঁচা। ছাত্র রাজনীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক ক্যাচাল হয়, হরতাল, ভাঙচুর, সেশন জট হয়। এজন্যই বুয়েট প্রশাসন অনেক আগেই বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বুয়েটে প্রায় টানা এক সেমিস্টার ক্লাস বন্ধ থাকলে সেইটা সমস্যা না।
এই দেশে জলপাইয়ের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো বিপুল সংখ্যক ভুদাই তৈরি করা। যারা গণতান্ত্রিক সরকারকে উঠতে বসতে গালি দিয়েও নিজেকে অরাজনৈতিক এনটিটি বলে ভাববে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন