(১)
“হ্যালো, অরুন বাসু বলছি, কি খবর রাজেশ? ”
“পাকা খবর পেয়েছি স্যার, দীপক জালাল আজ বিকেলের জেট-এয়ারওয়েসের ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছচ্ছে।“
“হুঁ, তাহলেই বোঝ রাজেশ, কাল তাজ-বেঙ্গলে ইন্টার্ন্যাশানাল ডায়মন্ড এক্সিবিশন আর আজ-ই দীপক জালাল হঠাৎ কলকাতা আসছে, তার মানেই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। প্লাস, দিল্লী থেকে কাল নীতিন জানিয়েছে জালাল কুখ্যাত ক্রিস্টাল-ক্র্যাফটস্ম্যান মিস্টার গোলিকের সঙ্গে বার-দুয়েক অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছে। মানে বুঝছ? আবারো নির্ঘাত গোলিক ওর জন্যে একটি নিখুঁত ফেক ডায়মন্ড বানিয়েছে স্বরোভ্স্কি ক্রিস্টাল দিয়ে! অর্থাৎ এবারও দীপক এই এক্সিবিশন থেকে কিছু সরানোর তালে আছে আর রিপ্লেস্মেন্টটা রেডী রেখেছে। ওর শাঁশালো মক্কেল আমেরিকান ধনকুবের মিস্টার উইন্ডারম্যান এমনি এমনি তিন দিন ধরে দিল্লীতে ঘাঁটি গেঁড়ে বসে থাকার পাত্র নয়।”
-“কিন্তু স্যার বিনা প্রমানে তো আর দীপক জালালের মত বিগ-শটের টিকি ছোঁওয়া যাবে না। খোদ সেন্ট্রাল মিনিস্টারের শালা বলে কথা। তাছাড়া আমরা পুলিস মহলে যতই সন্দেহ করি না কেন যে লোক-টা জুয়েলারির আন্ডারওয়ার্ল্ড মার্কেটের একজন বড়সর চাঁই, এখনো কিন্তু দীপক জালালকে পুলিস একবারও হাতেনাতে ধরতে পারেনি। কাজেই সন্দেহের বশে কিছু করা যাবে না।”
-“সেতো জানি, কিন্তু এই এক্সিবিশন থেকে কিছু খোওয়া গেলে বড়কর্তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। সেখানেও অনেক বিগ-শট আসছেন। কিরকম পাব্লিসিটি পেয়েছে দেখেছ এই এক্সিবিশন? এটা আমাদের কোন বউবাজারের ব্যাবসায়ীর মামুলি এগ্সিভিশান নয় হে, “ফার্স্ট ওয়াটার্স অফ ওরাপা” হ’ল ডি-বীয়ার্স কোম্পানীর সিগ্নেচার এগ্সিভিশান – গোটা বিশ্বের ইমার্জিং ডায়মন্ড মার্কেটকে প্রলুব্ধ করতে এর জন্ম! লস্-অ্যাঞ্জেলেস, নিউ-ইয়র্ক, লাক্সেম্বার্গ, হং-কং, নিউজিল্যান্ড, কুয়ালালাম্পুর ঘুরে এবার কোলকাতায় এসেছে এই শো। এই এগ্সিভিশান থেকে কিছু খোয়া গেলে, ইন্টার্ন্যাশানাল প্রেস কোলকাতা পুলিশকে সাতদিনের ফাঁসি ছাড়া কিছু দেবে না। মরতে কেন যে আমারই ওপর এর সিকিউরিটীর ভার এসে পড়ল, কে জানে! যাক-গে যেটা আমরা করতে পারি সেটাই কর। জালালকে চব্বিশ ঘন্টা সার্ভেইল্যান্সের ব্যাবস্থা কর। এক-মুহূর্তের জন্যও যেন লোকটা চোখের আড়াল না হতে পারে।”
-“সে নিয়ে আপনি ভাববেন না স্যার। আমি ইসমাইল আর রাজুকে বলে দিয়েছি এয়ারপোর্টের গেট থেকে ওরা জালাল কে ফলো করবে।”
“ভেরি গুড, তুমি প্রতি ঘন্টায় ওদের থেকে আপডেট নেবে আর সন্দেহজনক কিছু দেখলেই আমাকে কল করবে। রাখছি এখন জালাল ল্যান্ড করলে জানিও।“
ফোনে কথোপকথনের মধ্যেই কলকাতা পুলিসের সি-আইডি অফিসার অরুন বাসু ব্রেকফাস্ট শেষ করে ফেলেছেন। টেবিলে মিসেস বাসু আর ওঁদের ছেলে রনি ছাড়াও রয়েছে রনির বন্ধু তিষ্যা । ওরা একসাথে কলেজের প্রোজেক্টের কাজ করছিল রনিদের বাড়িতে, এখন এখান থেকেই ব্রেকফাস্ট করে কলেজ যাবে। তিষ্যা সি-আইডি ডিপার্টমেন্টের কাজকর্ম নিয়ে খুব ইন্টারেস্টেড। প্রায়-ই অরুন কাকুর থেকে রিয়েল ওয়ার্ল্ডের ক্রাইম স্টোরি শুনতে চায়। আজও ফোনের একপ্রান্তের কথোপকথন শুনে কৌতুহল চাপতে না পেরে তিষ্যার প্রশ্ন, “আচ্ছা কাকু ফোনে কথা শুনে মনে হল আপনারা সন্দেহ করছেন জনৈক মিস্টার জালাল কোনো জুয়েলারি চুরি করতে পারেন। পুলিশ আগে থেকে এরকম জানতে পারে, তাও ধরতে পারে না?”
অরুনবাবু বললেন “সেটাই ট্র্যাজেডী। জালাল এরকম কাজ আগেও করেছে। এইসব জুয়েলারি সরানোর কাজে লোকটা খুব ক্লোজলি ইনভল্ভড্ থাকে। হয়ত জানে মন্ত্রীর শালা বলে ওকে পুলিশ সহজে বাগে পাবে না, চোরাইমাল সহজে পাচার করা যাবে। আগেরবার তো একটা বিশাল এমেরাল্ড ঊধাও করে দিল লোকটা। এদিকে আবার প্রতিষ্ঠিত বিজনেস্ম্যান, দাগী চোর নয় যে লক-আপে পুরে বেদম প্যাঁদানি দিয়ে কথা উগ্লিয়ে নেব।”
অরুনবাবু তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। মিসেস বাসুকে তিষ্যা প্রশ্ন করল, “আচ্ছা কাকিমা, আপনি তো খুব জুয়েলারি কেনেন, এই এগ্সিভিশানে আপনি যাচ্ছেন নাকি?”
-“আরে, তুইও যেমন, এই সেল-কাম-এগসিভিশান্টা কিরকম হাই-প্রোফাইল দেখছিস তো! খবরের কাগজের ফুল্-পেজ অ্যাড, টিভিতে লাগাতার প্রাইম-টাইমে পাব্লিসিটি, কোলকাতার রাস্তায় ব্যানারে, হোর্ডিং-এ সর্বত্র তো এখন খবর বলতে একটাই। এখানে শুধু সেলিব্রিটি, বিজ্নেস টাইকুন, মাল্টি-মিলিওনেয়ার ছাড়া সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে, মিথ্যে বলব না, আমার যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল রে, নামটা শুনছিস তো, ‘ফার্স্ট ওয়াটার্স অফ্ ওরাপা’! নামটাই তো আদার ব্যাপারীদের বোধগম্য হবে না!”
-“হ্যাঁ, যা বলেছ কাকিমা, আমিও সেই দলেরই। ডি-বীয়ার্সের নামটা জানি, বিশ্বের সর্ব-বৃহৎ হীরের মার্চেন্ট, কিন্তু এগসিভিশানের নামটা কেমন দুর্বোধ্য!”
-“ইচ্ছে করেই দিয়েছে, শুধু সমঝদাররাই বুঝবে। ‘ওরাপা’ হ’ল বিশ্বের লার্জেস্ট হীরের খনি, আফ্রিকার বট্সোয়ানায় অবস্থিত। তার বিখ্যাততম হীরেগুলো নিয়েই এই এগ্সিভিশান। কিছু আসছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মিউজিয়াম থেকে, আবার কিছু আসছে প্রাইভেট কালেকশান থেকে। এই এগ্জিবিশানটায় কিন্তু বিক্রি-বাটাও হবে। কোন কোন প্রাইভেট পার্টির মাল্টি-মিলিয়ান ডলারের সম্পত্তি এই সু্যোগে হাত-বদল হবে। এই সব জিনিস তো আর হকার্স কর্ণারে কেনাবেচা হয়না, তাই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষই এইধরণের এগ্জিভিওশানের অপেক্ষা করে।”
-“ওরাপা নাহয় বুঝলাম, কিন্তু ডায়মন্ড না ব’লে ফার্স্ট ওয়াটার্স বলছে কেন বলুন তো?”
-“আরে, জেম-স্টোন ট্রেডে এই ‘ফার্স্ট ওয়াটার্স’ বলতে বোঝায় সর্বোচ্চ কোয়ালিটী। হীরের স্বচ্ছতা মাপার একটা সাধারণ টার্ম। যে হীরের ক্ল্যারিটি যত বেশী, তাকে বলে ফার্স্ট ওয়াটার্। হীরেটা শিশিরবিন্দুর মত পিওর হ’লে তবেই জুটবে এই খেতাব। আরেকটু কম স্বচ্ছ হীরেকে বলে সেকেন্ড ওয়াটার, তারপর থার্ড ওয়াটার এইরকম আরকি। এরকম ভাবে নামতে নামতে হীরেটা কালার্ড হয়ে যায়, তখন আর ওয়াটার দিয়ে বোঝানো হয়না। রঙ্গিন মানেই কম দামী, তা অবিশ্যি নয়, পিঙ্ক, ব্লু, ব্ল্যাক, এসব হীরেরও আকাশছোঁয়া দাম।”
-“বাপ্রে, কাকিমা, আপনি তো হীরের ব্যাপারে একেবারে চলমান উইকিপিডিয়া!”
-“কিনতে তো পারব না, কিন্তু হীরে নিয়ে লেখালিখি হ’লেই গোগ্রাসে গিলি। এই প্রদর্শনীতে শুধু ফার্স্ট ওয়াটার্সগুলোই থাকছে, যেমন অরোরা, পীস্, ফারিশ্তা, ইউরেকা, শবনম, জুবিলী, আরও এইরকম বিশ্ব-বিখ্যাত হীরে।”
-“কোহিনূর নেই, কাকিমা?”
-“ভাগ্যিস নেই, ওটা চুরি গেলে তোর কাকুর কি হ’ত আন্দাজ করতে পারিস?” চোখ টিপে হেসে মিসেস বাসু টেবল থেকে উঠে পড়ে রান্নাঘরে ঢুকলেন।
তিষ্যা বলল “তোর কি মজা রনি, কাকু পুলিশে আছেন বলে কত এক্সাইটিং কেস জানতে পারিস।“
রনি বলল “তুই আর ন্যাকামো করিস না। এসব স্টোরি তো নিউসপেপার আর নিউস চ্যানেলে গাদা গাদা পাবি কিন্তু তুই কাকুর থেকে যেসব ম্যাজিকের ট্রিক শিখিস সেগুলো জাস্ট অ্যামেজিং। আমি ওরকম সুযোগ পেলে বর্তে যেতাম।”
তিষ্যা ঠোঁট উলটে বলল “ধুর আমার ম্যাজিক ব্যাপারটা পুরো ছেলেখেলা মনে হয়, নেহাত বাবা প্রমিস করিয়ে রেখেছে কাউকে শেখানো চলবে না তাই তোদের শেখাতে পারি না, না হলে কবে শিখিয়ে দিতাম। তবে একটা ছোট ট্রিক শেখাতে পারি। এটা বাবার শেখানো নয়, আমার নিজের আবিস্কা্ তাই কপিরাইট আমার। এই দেখ।“
তিষ্যা টেবিল থেকে একটা কাঁচের বাটি তুলে নিল। তারপর রান্নাঘরে ঢুকে মিসেস বাসু কে বলল ‘কাকিমা এই বাটিতে কিছুটা ভেজিটেবল অয়েল মানে সাদা তেল দেবেন?” রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে রনি কে বলল “বাটিতে কি আছে বল তো?”
রনি বলল “ভেজিটেবল অয়েল।“
-ভাল করে দেখে বল? আর কিছু আছে?”
রনি বাটির চারপাশে ঘুরে খানিকক্ষন পর্যবেক্ষন করে বলল “নাহ্ আর কিছু দেখছি না।“
তিষ্যা বলল “অ্যাব্রাকে ড্যাব্রা গিলিগিলি ফুঃ” তারপর বাটির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটা ইঞ্চি চারেকের কাঁচের রড বের করে আনল। রনির মুখটা বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। বলল “কি করে করলি? হাতসাফাই?”
তিষ্যা একটু তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল “নাহ্ হাতসাফাই না, সিম্পল সায়েন্স। তুইও পড়েছিস ক্লাস সেভেনে। রিফ্রাকটিভ ইন্ডেক্সের কথা মনে আছে? না ভুলে মেরে দিয়েছিস?”
রনি বলল “ভুলব কেন? কোনো মিডিয়ামের মধ্যে আলোর কোন স্পিডে যায় সেটা রিফ্রাকটিভ ইন্ডেক্সের সাহায্যে মাপে।“
-“আরে সেতো বই এর কথা। আসল কন্সেপ্টটা বুঝিস তো? ধর একটা কাঁচের বাটিরে জল নিয়ে তার মধ্যে একটা কাঁচের রড ডোবালে রডটা ব্যঁকা মনে হয়। কারন জল আর কাঁচের রিফ্রাক্টিভ ইন্ডেক্সের তফাতের জন্য এরকম দেখতে লাগে। কিন্ত নর্মাল কাঁচের রডের বদলে পাইরেক্স কাঁচের রড একবাটি ভেজিটেবল অয়েলে ডোবালে সেটা ভ্যানিস হয়ে যায়। তার কারন হল পাইরেক্স কাঁচ আর ভেজিটেবল অয়েলের রিফ্রাক্টিভ ইন্ডেক্স সমান। তাই আলো যখন ভেজিটেবল অয়েল থেকে পাইরেক্স কাঁচের মধ্যে যায় তখন আলোর স্পিড চেঞ্জ হয়না বা আলো বেঁকে যায় না। সেইজন্য ভেজিটেবল অয়েলের মধ্যে পাইরেক্স কাঁচের রডটা আর খুঁজে পাওয়া যায়না। আমি রান্নাঘর থেকে বেরোনোর আগেই রডটা ভেজিটেবল অয়েলে ডুবিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু তুই বাইরে থেকে দেখতে পাসনি।“
রনি বলল “মার্ভেলাস। ক্লাস সেভেনের সায়েন্স বই থেকে এরকম একটা অসাধারন ম্যাজিক দেখানো যায়? তুই এটা শো তে দেখাবি নিশ্চই?”
“হ্যাঁ আজকের শো-তেই বাবা রেখেছে এই আইটেমটা। তবে লাইট, সাউন্ড, মিউসিক, স্টোরি সব মিলিয়ে সে একটা রূপকথা রূপকথা ব্যাপার। তুই ভাবতেই পারবি না এটা কোনো সায়ান্টিফিক ইভেন্ট। ট্রিকটা আবিস্কার করা ছাড়া ম্যাজিকটাতে আমার সেরকম কোনো ইনভল্ভমেন্ট নেই। পুরো ইভেন্টটাই বাবার আইডিয়া।”
রনি বলল “আরে সায়ান্সের সাথে ফ্যান্টাসিকে মেলানোর নামই তো ম্যাজিক।”
(২)
পুলিশের সবরকম সতর্কতা সত্ত্বেও তাজবেঙ্গলের ‘ফার্স্ট ওয়াটার্স অফ ওরাপা’ এক্সিবিশন থেকে একটা রেয়ার ফার্স্ট ওয়াটার ডাউমন্ডের উধাও হয়ে যাওয়া আটকানো গেল না। আলজিরিয়ার প্রিন্স হামিদ মহম্মদের কালেকশনে আছে, থুড়ি, ছিল শবনম নামে একটি রেয়ার হীরে। পয়েন্ট এইট ক্যারাটের এই হীরেটার বিশেষত্ব হল এর ক্লারিটি এবং কালার। শবনমের ক্লারিটি ইন্টারনালি ফ্ল-লেস ক্যটেগরির, কালার এক্সসেপ্শনাল হোয়াইট ক্যাটেগরির। বলা যায় স্বচ্ছতার দিক থেকে একনম্বর। সত্যি ভোরের শিশিরের মত স্বচ্ছ এই হীরে। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে শবনমের দাম প্রায় তিরিশ মিলিয়ন। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হল শবনম আলজিরিয়া রাজবংশের একটা এয়ারলুম। কমিশনার চ্যাটার্জীকে দিল্লি থেকে খোদ হোম সেক্রেটারি ফোন করে বললেন, “প্রিন্স মহম্মদ জানিয়েছেন যেভাবে হোক হীরেটা খুঁজে বের করতে হবে। না হলে ভারতের সাথে আলজিরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।”
কমিশনার চ্যাটার্জী অরুন বাসু কে ডেকে বললেন “চব্বিশ ঘন্টা সময় দিচ্ছি মিস্টার বাসু, হীরেটা খুঁজে বের করতে হবে। আপনার টীমের উপর আমার পুরো ভরসা আছে।”
অরুনবাবু বসে ছিলেন না কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। বললেন, “দুটো খবর আছে স্যার, গুড অ্যান্ড ব্যাড। গুড নিউজ হল দীপক জালালকে শ্যাডো করছে আমাদের রাজু আর ইসমাইল। ওরা দুজনেই কনফার্ম করেছে শবনম দীপক জালালের হাতে পৌছেছে। জালাল নিজে চুরি করেনি কারন ও জানে আমরা ওকে শ্যাডো করছি। ও অন্য লোক দিয়ে চুরিটা করিয়েছে। এবং চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বোঝাও যায়নি, কারণ একটি নিখুঁত স্বরোভ্স্কি ক্রিস্টালের তৈরি নকল হীরে দিয়ে আস্লি মাল রিপ্লেস্ড্ করা হয়েছিল। আমাদের সন্দেহ সেইজন্যেই জালালের বিরুদ্ধে জোরালো হয় কারণ দিল্লীর নীতিন জানিয়েছে যে জালাল কুখ্যাত ক্রিস্টাল-ক্র্যাফটস্ম্যান মিস্টার গোলিকের সঙ্গে বার-দুয়েক অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছে যা থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে আবারো নির্ঘাত গোলিক ওর জন্যে একটি নিখুঁত ফেক ডায়মন্ড বানিয়েছে স্বরোভ্স্কি ক্রিস্টাল দিয়ে! তো যা বলছিলাম, সেই ভাড়াটে চোর হীরেটা চুরি করে জালালের হাতে তুলে দিয়েছে। হাত বদলটা ঘটেছে সোনার বাংলার এক্লুসিভ সুইটে। জালাল ওখানেই উঠেছে। তারপর থেকে জালাল আর কোথাও বেরোয়নি। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর স্যার শবনম এখোনো সোনার বাংলার এক্লুসিভ সুইটে আছে।”
-“ব্যাড নিউজটা নিশ্চয়ই এই যে সেই লোকটাকে তোমাদের কারোর শ্যাডো করার কথা মনে হয়নি!”
-“না স্যার, ইয়ে মানে, মনে হয়েছিল, কিন্তু কি জানেন, তাজের এগ্জিভিশান থেকে তো কত লোকই বেরিয়েছে তাদের তো প্রত্যেকের ওপর নজর রাখা সম্ভব না, প্লাস সেইসময় আমরা জানতামও না যে আদৌ কিছু চুরি গেছে। জালালের সাথে কেউ দেখা করতে আসলে আমরা ঠিক করেছিলাম তাকে শ্যাডো করব, কিন্তু বাইরের লোক কেউ আসেনি।”
-“আসেনি তো বলছ কেন যে হাত-বদল হয়েছে হীরেটা ওর স্যুটে?”
-“ইয়ে মানে, হোটেলের নিজস্ব উর্দিপরা রুম সার্ভিস স্টাফ কয়েকজন ঢুকেছিল, কেউ রাত্রের বিছানা ঠিক্টহাক করে দিতে, কেউ ডিনার নিয়ে, কেউ ড্রিঙ্কস্ নিয়ে... তাদেরকে আমরা আইডেন্টিফাই করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম, কিন্তু এদের মধ্যে একজন রুম থেকে বেরিয়ে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল, বাথ্রুমে ডুকেছিল, কিন্তু তারপর আর বেরোয়নি। এখান বুঝতে পারছি, উর্দির ছদ্মবেশে ঢুকে, বাথ্রুমে পোশাক চেঞ্জ্ করে সম্পূর্ণ অন্য ড্রেস পরে বেরিয়ে গেছে। অনেকেই বেরোচ্ছে, তাই অত খেয়াল করে দেখা হয়নি, প্লাস যা বললাম স্যার, তখনও চুরির খুবরই আসেনি।”
-“তাহ’লে ব্যাড নিউজ্টা কি?”
-“ব্যাড নিউজ হল দীপক জালাল আজ রাত বারোটার ফ্লাইটে দিল্লি চলে যাচ্ছে। একবার বেরিয়ে গেলে কিন্তু আর হীরেটা পাওয়া অসম্ভব হবে। যা করার আমাদের ছ-সাত ঘন্টার মধ্যে করতে হবে।“
-“তোমার কি প্ল্যান? কি করতে চাও?”
-“সোনার বাংলায় জালালের এক্লুসিভ সুইটটা সার্চ করতে চাই আপনি অর্ডার ইস্যু করুন।”
কমিশনার চ্যাটার্জী আঁতকে উঠে বললেন “কিন্তু জালালের এগেন্সটে আমাদের তো কোনো প্রুফ নেই। সার্চ অর্ডার ইস্যু করব কোন বেসিসে? প্লাস জালালের তো প্রচুর হাই লেভেল কনেকশন! এভাবে উইদাউট এনি প্রুফ ওর রুম সার্চ করা অসম্ভব।”
-“সেই জন্যই তো আপনার থেকে অর্ডার চাইছি, না হলে সার্চ ওয়ারেন্ট লোকাল থানার ওসি ইস্যু করতে পারে। এছাড়া কোনো পথ নেই হীরেটা খুঁজে পাবার।”
“কিন্তু যদি হীরেটা জালালের রুমে না পাওয়া যায়, তা হলে আমাদের পজিসন কি হবে ভেবে দেখেছ? চাকরি থেকে রেজিগ্নেশন দেওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। প্লাস আবার কেউ যে হীরেটা নিয়ে ছদ্মবেশে বেরিয়ে যায়নি তার কি প্রমাণ? তোমাদের ছদ্মবেশ ধরার এলেম তো দেখতেই পাচ্ছি!”
অরুন বাসু শ্লেষটা হজম করে শক্ত গলায় বললেন “হীরে পাওয়া যাবে স্যার। পরে আর কোন বাইরের লোক আসেনি। পরে যে রুম সার্ভিসের লোক ঢুকেছে তাদের প্রত্যেককে রীতিমত জেরা করেছি, তারা সবাই সোনার বাংলার বোনাফাইড পুরোন স্টাফ্। প্লাস হীরে নিয়ে বেরিয়েই যদি যাবে তাহলে সেটা জালালের সুইটে নিয়ে আসারই কোন প্রয়োজন ছিল না। তা না স্যার, আমি ফাইভ হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর হীরে ওর সুইটেই আছে।”
-“দেখ আমার চাকরি তোমার হাতে। সার্চ টীম রেডি কর, আমি অর্ডার ইস্যু করছি।“
(৩)
“উইদাউট এনি প্রুফ আপনারা আমার রুম সার্চ করতে পারেন না। আমাকে এভাবে হেনস্থা করার ফল ভাল হবে না। আমার একটা ফোনে আপনাদের সবার চাকরি খতম বুঝেছেন।” ফোনের ওপ্রান্তে বোমার মত ফেটে পড়লেন দীপক জালাল। সার্চ অর্ডার নিয়ে সোনার বাংলার লবি থেকে মিস্টার জালালের সুইটে ফোন করেছিলেন অরুনবাবু, তার উত্তরেই এই বিস্ফোরণ।
অরুন বাসু নম্র গলায় বললেন “দেখুন স্যার আমরা ডিউটি করতে এসেছি। আপনার যদি সত্যি কিছু না থাকে তাহলে আমাদের কাজ করতে সহযোগিতা করুন। আমরা ঘন্টা তিনেকের মধ্যে কাজ সেরে চলে যাব।“
“কোন সাহসে ভাবলেন আপনাদের মত পাতি অফিসারদের আমার সুইটে থ্রি আওয়ার স্পেন্ড করার পারমিশন দেব?”
“আমাদের কাছে সার্চ অর্ডার আছে স্যার, আপনি কো-অপারেট না করলে আমরা ফোর্সফুলি সার্চ করতে পারি কিন্তু আমরা সেটা চাইছি না।“
ফোনের ও-প্রান্তে দীপক জালাল এক মিনিট নীরব রইলেন। তারপর ধারালো গলায় বললেন “ওকে আপনারা আসুন, আমি রাত দশটা পর্যন্ত এঘরে আছি, তারমধ্যে যা পারেন করুন। তারপর আমি আপনাদের স্টেটের হোম-মিনিস্টার কে কল করব। আপনার পুরো টিম আর যে এই অর্ডার ইস্যু করেছে তাকে সাস্পেন্ড করে আমি কলকাতা ছাড়ব।”
তারপরের দুঘন্টা অরুন বাসু এবং তার চারজন সার্চ স্পেশালিস্ট সহকর্মী কাকলি মিত্র, রাজেশ গোয়েল, অমিত জানা, সঞ্জয় সিং সোনার বাংলা হোটেলে দীপক জালালের এক্সিকিউটিভ সুইট তছনছ করে ফেললেন। চারজন সার্চ স্পেশালিস্টের কাজের ধরন চার রকম। সেই জন্যই অরুনবাবু এদের নিয়ে এসেছেন। অমিত অল্পবয়সি ছেলে খুব টেকনোলজির পোকা। লেটেস্ট সার্চ টেকনোলজির খোঁজখবর রাখে। সাথে করে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন নিয়ে এসেছে। জালালের ফুলবডি এক্স-রে করে দেখল হীরেটা বডিতে লুকানো আছে কিনা। আরো সাম্ভাব্য কয়েক জায়গাতে এক্স্-রে করে দেখল কিন্তু শবনমের পাত্তা করতে পারল না। সঞ্জয়ের খুব ফিট বডি আর ওর বিশ্বাস লোকে যেকোনো জিনিস অন্যের নাগালের বাইরে লুকিয়ে রাখে। সঞ্জয় মই লাগিয়ে সিলিং এর প্রতিটি কোনা চেক করল। সাত তলা সুইটে জানলা গলে বেরিয়ে জানলার কার্নিস চেক করে বিফল হয়ে ফিরল। কাকলি খুব মেথডিকাল। ঘরে ঢুকে দরজার কোনায় উবু হয়ে বসে কার্পেট তুলে সার্চ শুরু করল তারপর সিটিং রুম, বেডরুম, বাথরুমের একটা কোনাও বাদ দিল না। বিছানা, বালিস, কাপ, ডিস, সোফা, পর্দা, বাথটব, বেসি্ন, ফোন, ফ্রিজ, টিভি, সমস্ত নিজে হাতে চেক করল কিন্তু কোথাও শবনমের হদিশ পাওয়া গেল না। রাজেশ গোয়েল পোড় খাওয়া ঝানু অফিসার। নরমে গরমে কথাবার্তা বলে দীপক জালালের পেট থেকে কথা বার করার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু একেবারেই ফেল মারলেন। বডি সার্চ হবার পর দীপক জালাল একটা হুইস্কির গ্লাস হাতে করে বসে এদের কাজ দেখছিলেন আর মুচকি মুচকি হাসছিলেন। কোনো প্রশ্নের কোনো রকম উত্তর দিলেন না। এমনকি কোনো প্রশ্নের ফলে ওঁর মুখের অভিব্যাক্তির কোনোরকম পরিবর্তন হল না। দু ঘন্টা টানা সার্চের পর অরুনবাবুর চার সহকর্মী হতাশ বসে পড়লেন। অরুনবাবুও নিজস্ব পদ্ধতিতে গত দু ঘন্টা সার্চ করেছেন কিন্তু হীরেটা কোথায় থাকতে পারে কোনোরকম ক্লু পাননি। নিজের চাকরি নিয়ে তিনি ভয় পান না। সুন্দরবনে ট্রান্সফারের ভয় ও তাকে কাবু করতে পারে না। কিন্তু চার সহকর্মীর কেরিয়ারে একটা বড় দাগ পড়বে ভেবে উনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। আর সব থেকে বড় কথা কমিশনার চ্যাটার্জীকে তিনি কি করে মুখ দেখাবেন। হোম মিনিস্টারের কাছে সমস্ত জবাবদিহি কমিশনার চ্যাটার্জীকেই করতে হবে, হয়ত সাসপেন্ড হতে হবে বা পদত্যাগ করতে হবে। ভাবতে ভাবতে অরুনবাবুর মাথা গরম হয়ে উঠল। কি করবেন কিছুই যখন স্থির করে উঠতে পারছেন না হঠাৎ মনে পড়ল ম্যাজিসিয়ান গুপ্তর কথা। সেবার সেই ‘হিংটিং চট্চট্’ কেসে (http://www.sachalayatan.com/guest_writer/44657) একটা বড়সড় হীরে চুরির গ্যাং কে হাতেনাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত। মোবাইল নাম্বারটা সার্চ করতে করতে ভাবলেন একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক।
(৪)
সায়ান্স সিটির অডিটরিয়ামের দর্শকরা ভুলে গেছেন আজ মে মাসের একটা ভ্যাপ্সা গরম দিন। বাতানুকুল অডিটরিয়ামের ভিতরে এখন ইউরোপিয়ান কোনো দেশের ক্রিসমাসের আবহাওয়া। স্টেজে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত ও যাদুকরী তিষ্যা। জিংগল বেল নামের এই ম্যাজিকের প্রেক্ষাপট বরফের রাজ্যে ক্রিসমাস। স্টেজের ব্যাকগ্রাউন্ড একটি বিশাল বরফে ঢাকা প্রান্তর। স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে আছে একটা স্লেজ তাতে সওয়ার সান্তাক্লজের পোষাকে ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক বাজছে “জিংগল বেল, জিংগল বেল, জিংগল অল দ্য ওয়ে...”। স্টেজের উপর ভেসে বেড়চ্ছে পেঁজা তুলোর মত বরফের কুচি। তিষ্যা দাঁড়িয়ে আছে স্টেজের মাঝখানে। ওর সামনে দু ফুট লম্বা একটা কাঁচের বাক্স যার মধ্যে ভরা স্বচ্ছ তরল। দর্শক ভাবছে জল আসলে সেটা ভেজিটেবল অয়েল। কাঁচের বাক্সের মধ্যে জল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তিষ্যা ওর যাদুদন্ড বাক্সের চারপাশে ঘোরাল কয়েকবার তারপর বাক্সের মধ্যে দুহাত ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে বের করে আনছে একটা ফুট দেড়েক লম্বা সবুজ ক্রিসমাস ট্রি। হাততালিতে হল ফেটে পড়ছে। এটা তিষ্যার আবিস্কৃত ম্যাজিকের কৌশল। ভেজিটেবল অয়েলে ডোবানো পাইরেক্স গ্লাসের স্বচ্ছ ক্রিসমাস ট্রি। তিষ্যা যখন ধীরে ধীরে ক্রিসমাস ট্রিটা ভেজিটেবল অয়েল থেকে তুলছিল তখন স্টেজের বিভিন্ন জায়গা থেকে সবুজ আলো ফেলার ব্যাবস্থা ছিল যার ফলে ক্রিসমাস ট্রিটা সবুজ রঙের মনে হয়। এই মায়াবি, মনভোলানো পরিবেশে ম্যাজিকটি পরিবেশনের পুরো পরিকল্পনাটাই ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের। তবুও তিনি সপ্রশংস দৃষ্টিতে তিষ্যার দিকে তাকালেন।
শো শেষ করে ব্যাকস্টেজে এসে সবে কফির কাপে চুমুক দিয়েছেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত, রনি এসে ঢুকল। উচ্ছসিত হয়ে রনি বলল “জিংগল বেল ম্যাজিকটা অসাধারন হয়েছে কাকু।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত ম্লান হেসে বললেন “কিন্তু এটা বোধহয় আর দেখানো যাবে না, তিষ্যা ট্রিকটা তোর কাছে ফাঁস করে দিয়েছে।“
রনি বলল “আমি প্রমিস করছি কাউকে বলব না কাকু, এরকম দারুন ম্যাজিক বন্ধ করে দেবেন না প্লিজ।“
এইসময় ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের সেলফোনটা বেজে উঠল। পুলিশ অফিসার অরুন বাসুর নাম্বার। একটু আশ্চর্য হয়ে ফোনটা ধরলেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত।
-“মেঘনাদ গুপ্ত বলছি।“
-“মিস্টার গুপ্ত, আমি অরুন বাসু বলছি, আপনি কি এখোন ফ্রি আছেন? কথা বলা যাবে?”
-“নিশ্চই, বলুন কি ব্যাপার। আপনার গলা শুনে মনে হচ্ছে গুরুতর কিছু হয়েছে।“
-“হ্যাঁ একটা কম্পলেক্স কেসে আপনার হেল্প চাই। এবারো একটা হীরে চুরির ব্যাপার।“
অরুনবাবু সংক্ষেপে ম্যাজিসিয়ান গুপ্তকে পুরো কেসটা বললেন। শেষে বললেন “আর এক ঘন্টা মোটে সময় আছে, দীপক জালাল একবার হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলে হীরেটা নাগালের বাইরে চলে যাবে। আমি সিওর এই সুইটেই হীরেটা লুকিয়ে আছে। আপনি একবার চেষ্টা করে দেখুন না যদি খুঁজে পান।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বললেন “আপনারা এভাবে সার্চ করে পেলেন না, আমি খুঁজে পাব কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে, তবে নিশ্চই চেষ্টা করব। আমি সায়ান্স সিটি অডিটরিয়ামে আছি, দশ মিনিটে পৌঁছে যাব সোনার বাংলায়। আপনি মোটামুটি সব-ই বলেছেন আর দু-একটা ইনফরমেশন দেবেন?“
-“নিশ্চই। বলুন কি জানতে চান?”
-“এর মধ্যে মিস্টার জালাল কি কাউকে ফোন করেছিলেন? কোনো ফোন এসেছিল বা কেউ দেখা করতে এসেছিল ওঁর সাথে?”
-“নাহ্ ফোন বা ভিজিটর কেউ আসেনি। লোকটা সেই থেকে ঘরেই আছে। বসে বসে গা জ্বালানো হাসি হাসছে আর মদ খাচ্ছে। একজন ওয়েটার একবার স্ন্যাক্স দিয়ে গেল আর একজন বারদুই বরফ দিয়ে গেল ড্রিংক্সের জন্য। ব্যাস আর কেউ আসেনি।“
ফোন রেখেই ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত বেরিয়ে পড়লেন। তিষ্যা আর রনিও সঙ্গে গেল। বলাই বাহুল্য এরকম একটা থ্রিলিং কেসে জড়িয়ে পড়তে পেরে তিষ্যা খুব এক্সাইটেড। ওইটুকু পথ গাড়িতে যেতে যেতেই ওর স্মার্ট ফোন থেকে নেট সার্চ করে দীপক জালাল, প্রিন্স হামিদ, শবনম সম্পর্কে একগাদা তথ্য ম্যাজিসিয়ান গুপ্তকে জানিয়ে দিল। ওরা যখন সোনার বাংলার লিফটে করে সাততলায় উঠছে দীপক জালালের সুইটের উদ্দেশ্যে তখন তিষ্যার চোখ ফোনের স্ক্রিনে। “জানো বাবা শবনম হল রেয়ার ফার্স্ট ওয়াটার কোয়ালিটির ডায়মন্ড। ক্লারিটি আর কালারে একনম্বর। এরকম কালার আর ক্লারিটির ডায়মন্ড সারা বিশ্বে পঞ্চাশটাও নেই।”
কথা বলতে বলতে ওরা দীপক জালালের সুইটে পৌছে গেল। ঢোকামাত্র দীপক জালাল ব্যাঙ্গের হাসি হেসে অরুনবাবু কে বললেন “ কি ইন্সপেক্টর, এই রামলীলা পার্টিও কি আপনার কলকাতা পুলিসের স্টাফ নাকি?” তিষ্যা আর ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত শো শেষ করেই চলে এসেছেন, ড্রেস চেঞ্জ করার টাইম পাননি। ওদের ঝলমলে ড্রেস দেখেই দীপক জালালের ওই মন্তব্য। তিষ্যা রাগে জ্বলে উঠল।
কিন্তু ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত হাসি মুখে দীপক জালালের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন “না রামলীলা কখোনো করার সৌভাগ্য হয়নি, আমি পেশাদার ম্যাজিসিয়া্ন, যাদুকর মেঘ্নাদ গুপ্ত। শুনলাম আপনি নাকি এখানে একটা দারুন ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। একটা বড়সর হীরে ভ্যানিস করে ফেলেছেন। দেখুন আমাদের ম্যাজিকের পরিভাষায় যেকোনো ট্রিকের তিনটে ধাপ আছে। প্রথম ধাপকে বলা হয় ‘প্লেজ’। এই ধাপে যাদুকর কোন সাধারণ জিনিস দর্শককে ভালো করে পরীক্ষা করতে বলে, এই যেমন ধরুন কোন টুপি, বা ফুলদানি, বা তাস ইত্যাদি। দর্শককে দেখানোর উদেশ্য হ’ল এটা প্রমাণ করা যে জিনিসটা রীয়াল ওয়ার্ল্ডের, কোন চালাকি নেই। এক্ষেত্রে প্লেজের খেলাটা হয়েছে তাজবেঙ্গলের এক্সিবিশনে। দ্বিতীয় ধাপকে বলে ‘টার্ন’। এই সময়ে যাদুকর জিনিসটাকে ‘ভ্যানিশ’ করে দেয়! সেই খেলাটা দেখিয়েছেন আপনি। শবনমকে ভ্যানিস করে দিএছেন। কিন্তু এটা শেষ ধাপ নয়। আসল কেরামতি হল সেই জিনিসটা স্থানবদল, ফিরিয়ে আনা। তাই ম্যাজিকের তৃতীয় আর শেষ ধাপকে বলে ‘প্রেস্টিজ’, এটাই সবথেকে কঠিন, আর এর পরেই হাততালির শব্দে কান পাতা দায় হয়। আমি এসেছি হীরেটা ফিরিয়ে এনে বাহবা নিতে।”
দীপক জালাল মুখে একটা চটকার মত আওয়াজ করে বলল “এই রুমে কোনো হীরে টীরে নেই মিস্টার বাজিগর। আপনার ভেল্কিবাজি দেখিয়ে বাহবা নেওয়া হল না। কলকাতার পুলিস ডিপার্টমেন্ট একেবারে ওয়ার্থলেস। শুধুমুধু এখানে টাইম ওয়েস্ট করছে। এতক্ষনে আসল চোর হীরে নিয়ে ভেগেছে। আমি কাল দিল্লী পৌছেই সেন্টারে কমপ্লেন করব এইসব ওয়ার্থলেস অফিসারদের সরানোর জন্য।”
অরুনবাবু আর ওঁর সহকর্মীদের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। অরুনবাবু ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত কে বললেন “কথা বাড়িয়ে লাভ নেই মিস্টার গুপ্ত। আপনি কিভাবে শুরু করতে চান বলুন।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত কোনোরকম তাড়াহুড়ো করলেন না। হাল্কা গলায় বললেন “বাইরে যা গরম প্লাস তিন ঘন্টা শো করে গলা শুকিয়ে গেছে ঠান্ডা কিছু পানীয় পাওয়া যাবে?”
অরুনবাবু জবাব দেবার আগেই দীপক জালাল সিভাস রিগ্যালের একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন “এটা চলবে নাকি? এই পুলিশওয়ালাদেরও অফার করেছিলাম। এরা নাকি কেউ অনডিউটি ড্রিংস করেন না। শালা একেই বলে পেটে ক্ষিদে মুখে লাজ। তা আপনি তো আর অনডিউটি নন। নিন না এক পেগ। আইস, সোডা মিশিয়ে নিজের মত বানিয়ে নিন।“
তিষ্যাকে অবাক করে দিয়ে ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত সিভাস রিগ্যালের বোতল খুলে গ্লাসে মাপ মত ড্রিংক্স ঢেলে নিলেন। তিষ্যা কোনোদিন বাবাকে মদ খেতে দেখেনি। এমন কি বিদেশে শো করতে গিয়েও উনি কখোনো হার্ডড্রিংক্স স্পর্শ করেননি। আজ হঠাৎ কি হল কিছুই বুঝল না।
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত আইস-ট্রেটা নেড়ে চেড়ে বললেন “আরো কিছু বরফ লাগবে। চিলড হওয়াটাই সবথেকে জরুরী।“
দীপক জালাল ফোনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন “রুম সার্ভিস বলে দিচ্ছি আইস দিয়ে যাবে।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত উঠে পড়ে রেফ্রিজেরটরটা খুলতে খুলতে বললেন “রুম সার্ভিস দরকার নেই আপনার রুমের ফ্রিজেই কিছু আইস থাকবে নিশ্চই।“
দীপক জালাল প্রায় লাফিয়ে উঠে ফ্রিজের কাছে গিয়ে ম্যজিসিয়ান গুপ্তের হাত চেপে ধরে বললেন। “না না এই ফ্রিজের আইস-ট্রের আইসে কেমন একটা গন্ধ পেয়েছি। আমি বলেছিলাম চেঞ্জ করে দিতে এখোনো দেয়নি। ফ্রাঙ্কলি স্পিকিং আপনাদের বাঙ্গালিদের ওয়ার্ককালচার বলে কিছু নেই।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত কিন্তু জালালের কথা শুনলেন না। এক ঝটকায় জালালের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন দেখা যাক কেমন গন্ধ, বাঙ্গালির বদনাম দিচ্ছেন, তা আমি-ই না হয় আপনার আইস-ট্রে সাফ করে দিচ্ছি।“ দীপক জালাল কিছু বুঝে ওঠবার আগেই ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত পৌঁছে গেলেন রিডিং টেবলের টেবল ল্যাম্প এর সামনে। দ্রুত স্থান পরিবর্তন ম্যাজিকের কলাকৌশলের অংগ হিসাবে ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের নখদর্পনে। টেবল ল্যাম্পের বাহারি শেড সরিয়ে আইস-ট্রেটা ল্যাম্পের উপর চেপে ধরলেন ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত। ল্যাম্পের উত্তাপে আইস-ট্রে থেকে বরফ গলে ঝরঝর করে জল পড়তে শুরু করল মার্বেলের মেঝেতে। দীপক জালাল দৌড়ে পৌঁছতে চাইলেন আইস-ট্রেটার কাছে কিন্তু বরফ গলা জলে আছাড় খেয়ে পড়লেন প্রায় ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের পায়ের কাছে। আর তখুনি জলের সাথে মাটিতে পড়ল একটা বরফের টুকরো যেটা মেঝেতে পড়েও গলে গেল না। বরং তার থেকে ঠিকরে পড়া আলো বুঝিয়ে দিল ওটা বরফের কুচি নয়। ভোরের শিশির, শবনম। দীপক জালাল হাত বাড়িয়ে হীরেটা ধরতে যাবার আগেই সেটা চলে এল তিষ্যার হাতের মুঠোয়। দ্রুত হাতসাফাই এর বিদ্যা সেও রপ্ত করেছে যে।
(( (৫)
দীপক জালালকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার জন্য সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে অরুনবাবু ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত আর তিষ্যাকে নিয়ে নিচে নেমে এলেন। অরুনবাবুর চোখে তখন বিস্ময় লেগে আছে। ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের হাতদুটো ধরে বললেন “শুধু আমি নই, আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবার তরফ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা দুঘন্টায় যা পারলাম না আপনি দশ মিনিটে কিভাবে খুঁজে বের করলেন?”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত অল্প হাসলেন। তার বহু পরিচিত পেটেন্ট হাসিটি নয়, অনাবিল খুশির অন্যরকম একটা হাসি। বললেন “এই কেসের নাইন্টি পার্সেন্ট ক্রেডিট তিষ্যার। এই কেসের মেইন দুটো ক্লু ওই দিয়েছে।“
তিষ্যা অবাক গলায় বলল “আমি! আমি তো ওই সুইটে ঢোকার পর একটা কথাও বলিনি। আমার তো মাথাতেও আসেনি হীরেটা বরফের মধ্যে থাকতে পারে।“
ম্যাজিসিয়ান গুপ্ত অরুনবাবুকে বললেন “তিষ্যা একটা নতুন ম্যাজিক ট্রিক আবিস্কার করেছে। ট্রিকটা আপনাকে বলতে বাঁধা নেই কারন তিষ্যা অলরেডি আপনার ছেলে রনিকে শিখিয়ে দিয়েছে। তবে আপনি আর কাউকে বলবেন না। আপাতদৃষ্টিতে ট্রিকটা খুব সিম্পল। কোনো সলিডকে যদি এমন কোনো তরলে ডোবানো যায় যার রিফ্রাক্টিভ ইন্ডেক্স সেই সলিডের যে রিফ্রাক্টিভ ইন্ডেক্সের সমান তাহলে সলিড বস্তুটি ওই তরলে ভ্যানিস হয়ে যাবে। আমাদের আজকের শো তে এই ম্যাজিকটা দারুন হিট করেছে। কাজেই এই ব্যাপারটা মাথার মধ্যে ঘুরছিল। এটা হল প্রথম ক্লু। দ্বিতীয় ক্লুটা দিয়েছেন আপনি। আপনি বলেছিলেন দীপক জালাল রুম সার্ভিসকে ডেকে দুবার বরফ অর্ডার করেছে। অথচ এই সব সুইটের রেফ্রিজেরেটরে আইস মজুত থাকে। এই কথাটাও মাথায় ছিল। তৃতীয় ক্লুটা আবার দিল তিষ্যা। এখানে আসার পথে নেটে সার্চ করে ও বলল শবনম হীরেটার রেয়ার হবার প্রধান কারন হল এর স্বচ্ছতা যা একে নাকি ‘ফার্স্ট ওয়াটার’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। তখনই প্রথম আমার মাথায় এল ওয়াটারেরই আরেকটা ফর্ম অর্থাৎ বরফের মধ্যে হীরেটা লুকিয়ে রাখা যায়। দীপক জালালের সুইটে গিয়ে চেষ্টা করছিলাম এমন কিছু করতে যাতে বোঝা যায় হীরেটা সত্যি বরফের মধ্যে লুকানো আছে। সুযোগ পেয়ে ফ্রিজ থেকে আইস-ট্রেটা বার করতেই জালাল যেভাবে বাঁধা দেবার চেষ্টা করল তখনি সিওর হলাম হীরেটা ওখানেই আছে।”
অরুনবাবু বললেন। “আশ্চর্য কি জানেন, কাকলি রেফ্রিজেরেটর খুলে ফ্রিজারটা চেক করেছে। আইস-ট্রেটা নেড়েছে চেড়েছে অথচ জালালের মুখের ভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে। আপনি যেইমাত্র আইস-ট্রেটা হাতে নিলেন জালাল বুঝতে পারল বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তখন মরিয়া হয়ে ভুল স্টেপ নিয়ে ফেলল। তবে আপনার ডিডাকশন ক্ষমতা অসাধারন। দুইয়ে দুইয়ে মিলিয়ে চার করেছেন ঠিক-ই তবে সোজা যোগ অংক নয়। টু প্লাস টু ফোর নয়। টু টু দি পাওয়ার টু ফোর। আর তিষ্যাকে অবশ্যই সাবাস বলতে হয় এমন একটা ট্রিক আবিস্কার করার জন্য।
রনি বলল “কাকু তিষ্যা আমাকে ট্রিকটা শিখিয়ে দিয়েছি বলে আপনি দুঃখ করছিলেন। কিন্তু দেখুন সমান রিফ্রাক্টিভ ইন্ডেক্সের সাহায্যে ভ্যানিস করার ট্রিকটা দীপক জালালের মত অসৎ লোকও জানে। আসল কথা হল কে কিভাবে প্রয়োগ করছে। দীপক জালাল প্রয়োগ করল চুরির উদ্দেশ্যে। আপনি সেই এক-ই ট্রিক প্রয়োগ করে একটা মায়াবি সুন্দর ম্যাজিক দেখালেন আবার শবনমকে উদ্ধার করে দেশের সন্মান বাঁচালেন। আপনি এই ম্যাজিকটা কনটিনিউ করতেই পারেন অন্য কোনো আঙ্গিকে। আর সেটা আপনি খুব ভালই পারবেন কারন আপনি-ই প্রথম ম্যাজিসিয়ান যিনি ম্যাজিক দিয়ে রিয়াল ওয়ার্ল্ডের প্রব্লেম সল্ভ করতে পারেন।“
ঋণস্বীকারঃ
১) প্রেস্টিজ নামক একটি হলিউডের সিনেমার ডায়লগ ব্যাবহার করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।
২) বরফের মধ্যে হীরে লুকানোর বুদ্ধিটা রোয়াল্ড ডালের একটা গল্পে পড়েছি। গল্পটার নাম ‘দ্য সার্জেন’।
আমরা এই ম্যাজিশিয়ান গুপ্তকে নিয়ে একটা সিরিজ লিখব ঠিক করেছি। আগেও বলেছিলাম। হিংটিং চট্চট্ ছিল সিরিজের প্রথম গল্প। পরেরটা এইটা। ত্ব্বিতীয়টা একটা উপন্যাস যার শেষ ঘষামাজা নিয়ে এখন বর-বউ ব্যাস্ত আছি। আশা করছি পরের মাসে উপন্যাসটা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করতে পারব।
- ঈপ্সিত/চম্পাকলি
মন্তব্য
অরুণ বাসুর ম্যাজেসিয়ানের সাহায্য নেবার ব্যাপারটা মাথায় আসলো কেন? তিষ্যার আবিষ্কার আর জালাল সাহেবের হীরে লুকানোর কৌশলটা মিলে যাওয়া একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না?
সবমিলিয়ে ভালই, তবে গোয়েন্দা গল্পের টানটান উত্তেজনাটা মিস করেছি।
একদম ঠিক। ।গোয়েন্দা গল্প ঠিক হয়নি। ঈপ্সিত আর চম্পা একটা সিরিজ লিখবে ঠিক করেছে যেটা 'হু-ডান-ইট' হবে না, হবে 'হাউ-ডান-ইট'; কে করেছের থেকেও কিভাবে করেছে। তাই ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে আনা হয়েছে আতে ম্যাজিশিয়ানের চোখে ট্রিক গুলো ধরা পড়ে যায় সহজে।
পরের গল্পটা লেখা প্রায় শেষ, ঘষামাজা চলছে। খুব বড়। পার্ট বাই পার্ট তুলব ভাবছি। আশা করি ভালো লাগবে। চেষ্টা করব বেশী টানটান উত্তেজনাটা জমাতে।
শুরুতে দুই পিচ্চির রিফ্রেক্টিভ ইন্ডেক্স নিয়ে আলোচনাতেই বুঝা গিয়েছিলো গল্প কোনদিকে যাচ্ছে। তবু ভালো লাগলো
ভাবছিলাম, কিভাবে শুরুতে একটু হিন্ট্স্ দেওয়া যায়। তাই ইন্ডেক্স নিয়ে আলোচনা। তবে হিন্ট্স্টা বেশী হয়ে গেছে বোধহয়।
ভাল লেগেছে।
অসংখ্য
রোয়ান্ড ডালের গল্পটা পড়িনি তবে ছোটবেলায় তিন গোয়েন্দার একটা বই 'ছায়াশ্বাপদ' এরকম একটা ব্যাপার ছিল। কাঁচের মুর্তি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল সুইমিংপুল এ।আমারো মনে হয়েছে হিন্টস একটু বেশি দেয়া হয়ে গেছে।ম্যাজিশিয়ানের বদলে অরুন বসু খুঁজে পেলে মনে হয় বেশি বিশ্বাসযোগ্য হত।যেমন ধরুন কালো পেইন্টিং এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোন কা্লো মাকড়সার বেরিয়ে আসা থেকে তার মাথায় আইডিয়াটা এলে বেশি বাস্তবসম্মত হত হয়তবা।একান্তই আমার নিজের মতামত।গল্পটা পড়তে ভাল লেগেছে।ভাল থাকবেন,আরো লিখুন।
-গগন শিরীষ
ঠিক বলেছেন। তবে আমাদের সিরিজের নায়ক কিন্তু ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা। উপন্যাসেও তাই থাকবে। তবে হিন্ট্স্এর ব্যাপারে এরপর থেকে আরও কৃপণ হব।
হিন্টস আগে থেকেই পুরোপুরি পেয়ে গিয়েছিলাম বলে মনে হলো। লিখতে থাকুন দুইজন মিলে
হ্যাঁ, এর পরের উপন্যাসটায় শিখে নিলাম, আর এত বেশী হিন্ট্স্ থাকবে না।
তিষ্যা তো আগেই সব ফাঁস করে দিলো!
উপন্যাসের অপেক্ষায়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রায় তৈরি, আসিতেছে! আসিতেছে!!
লিখতে থাকুন.....
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
অনেকদিন পর লিখলেন। কড়া হিন্ট্স থাকা সত্তেও আমার ভাল লেগেছে।
অসংখ্য
ছোট মানুষ তো তাই সব হড়বড় করে বলে ফেলেছে...
ব্যাপার না- চলুক...
হ্যাঁ।
আপনাদের লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সামনের উপন্যাসের অপেক্ষায় থাকলাম।
এইবারের লেখা নিয়ে অন্য অনেকের মতই একই কথা বলি, ঘটনা আগেই বুঝে ফেল্লাম বলে মজা কম পেয়েছি। তবে আমি ভেবেছিলাম জালাল মিয়া বোধহয় হুইস্কির গ্লাসের মধ্যে বরফের সাথে হিরাটা রেখে আরাম করে চুমুক দিচ্ছে আর পুলিশের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
ভালো থাকুন দুইজনই।
খুব ভালো লাগে যখন কেউ আমাদের লেখার জন্য প্রতীক্ষীয়া থাকে।
একটা কথা মানতেই হবে, আপনার ক্লাইম্যাক্স আমাদের দুজনেরই মনে হল যে আমাদের গল্পটার থেকে বেটার। নিজের গ্লাসে রেখে দেওয়াটা আরও মজার!!
আশা করি উপন্যাসটা ভালো লাগবে।
আপনাদের গল্পের অপেক্ষায় থাকি, সময় নিয়ে পড়ি। বরাবরের মত ভাল লাগল, তবে ক্লু বেশি হয়ে যাওয়ায় অন্যদের মত বুঝে গেছি।
আর লেখার সময় প্যারাগুলোর মাঝে একটু বেশি স্পেস দিলে পড়তে আরাম হয়।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
খুব ভালো লাগল। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
পরেরবার কম হিন্ট্স্ আর বেশী স্পেস দেব আমরা।
ভালো লেগেছে আর সবার মত একই মত ,রহস্য আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল । পরের বারের অপেক্ষায় রইলাম ।
মৌটুশি বাশার
হ্যাঁ, পরেরটায় অনেক কম হিন্ট্স্ দেব।
চমতকার শুরুটা, তবে শেষ দিকে মন উঠে যেতে চায়। বলতে চাচ্ছি, মনোযোগ ধরে রাখার জন্য লেখাতে শাফলিং আরেকটু থাকতে পারতো। রিনস্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ, এই একটা জিনিস যা কেউ করতে চায় না! (স্বপ্নীল সমনামবিউলিস্ট)
নতুন মন্তব্য করুন