The bleeding Africa (পশ্চিম আফ্রিকা) পর্ব-একঃ একটি ভ্রূণ রাষ্ট্র হত্যার কাহিনী

রংতুলি এর ছবি
লিখেছেন রংতুলি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৩/০৯/২০১২ - ৯:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সতর্কীকরণঃ পোস্টের সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু ও আলোচনা দুর্বল স্নায়ুর মানুষের জন্য অসহনীয় হতে পারে। অনুগ্রহ করে নিজ দায়িত্বে প্রবেশ করুন!

অকল্পনীয় প্রাকৃতিক ভাণ্ডারে সমৃদ্ধ অঞ্চল পশ্চিম আফ্রিকা। চকচকে সোনার বালি (gold dust) দেখে আকৃষ্ট হয়ে এ অঞ্চলে প্রথম জাহাজ ভিড়িয়েছিল পর্তুগীজরা পনেরো শতাব্দীর শুরুতেই। লাল মাটির পরতে পরতে লুকানো হীরে, স্বর্ণ, তেল, আইভরি, অতি মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। একে একে এ অঞ্চলগুলোতে নজর পড়তে থাকে পশ্চিমা পরাশক্তিধর অন্য দেশগুলোর। আধিপত্য বিস্তারের হানাহানি, দখল পালটা দখল, বেহিসেবি সম্পদ ও মানব পাচার, ফলাফল- তিনশ বছরের অধিক সময় ধরে কলোনিভিত্তিক সামন্ত শাসন ও শোষণ। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত কলোনিগুলোর মধ্যে ছিলো - দা গাম্বিয়া, সিয়েরা লিওন, ঘানা, নাইজেরিয়া। অন্যদিকে ফ্রান্সের দখলে ছিলো সেনেগাল, গিনি, মালি, বুরকিনা ফাসো, বেনিন, কোট ডি আইভরি (আইভরি কোস্ট) এবং নাইজার। শেষে পর্তুগাল রাজত্য করে গিনি-বিসাও, অন্যদিকে জার্মানরা দখলে রাখে টোগোলান্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্ব-জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ অঞ্চলে প্রথম ব্রিটিশ কলোনির হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ঘানা ১৯৫৭ সালে। এরপর গিনি ১৯৫৮ সালে, সেনেগাল ১৯৬০ সালে, মোটামোটি ১৯৭৪ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো সব একে একে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। অবসান ঘটে তিনশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার-নিপীড়ন, লুঠ-তারাজ ও দাসত্বের রক্তিম ইতিহাস সম্পৃক্ত এক কালো অধ্যায়ের। নরবড়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি জাতিগোষ্ঠির চিরাচরিত মতভেদ, সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার অভাব, সর্বোপরি নিজ নিজ হাতে ক্ষমতার দখল বজায় রাখতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রগুলোর মধ্যে সহিংসতা ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করে, সূচনা করে আফ্রিকার ইতিহাসে পশ্চিমা কলোনি পরবর্তী আরেক নির্মম ও বর্বরতর অধ্যায়ের। শুরু হয় অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশেপাশের অঞ্চলসমূহে। এর কবলে পড়ে নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, গিনি বিসাও, আইভরি কোস্ট। ফলাফল - গণহত্যা, দুর্ভিক্ষ এবং পশ্চাদপদতা। যেগুলোর আসল রূপ বরাবরই রয়ে যায় প্রচার মাধ্যমগুলোর ধরাছোঁয়ার বাইরে, হয়ত যে মুহূর্তে ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীর কোনো প্রান্তে ইতিহাসের জঘন্যতম নজিরবিহীন পাশবিকতা ও ম্যাসাকার, মিডিয়ার অনীহা বা কাভারেজের অভাবে থেকে যায় অন্য প্রান্তের মানুষের জানার আওতার বাইরে। ফলে পাশবিকতার চিত্র, অসহায় মানুষ, অসংখ্য নারী ও শিশুর আর্তনাদ বিঘ্ন ঘটায় না সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার। প্রশ্নবিদ্ধ করে না সভ্যতার আড়ালে চাপা পড়া মনুষ্যত্বকে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া কিছু অনাক্ষাংকিত গৃহযুদ্ধ ও পাশবিক গণহত্যার নেপথ্যে কারণ, প্রকৃত রূপ এবং এর প্রভাব তুলে ধরাই এই আলোচানার উদ্দেশ্য।


ছবিসূত্র

নাইজেরিয়া ব্রিটিশ কলোনির হাত থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৬০ সালে। প্রায় দেড় কোটি জনসংখ্যা, তিনশোর বেশী জাতি, ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি সম্বলিত বিশাল এ দেশটিতে ঐতিহ্যগত ভাবে Hausa-Fulani নামে ইসলামিক গোষ্ঠীর রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিলো। এই রক্ষণশীল ধর্মীয় রাজতন্ত্র পরিচালিত হতো দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মুসলিম আমীর বা সুলতানদের দ্বারা, যাদের হাতে দেশের সকল ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং তেলনির্ভর অর্থনৈতিক ক্ষমতার একছত্র আধিপত্য ছিলো। Hausa-Fulani দলটি সংগঠিত ছিলো দেশের উত্তর অঞ্চলের ৬০% জনগোষ্ঠীর দ্বারা। যেখানে দেশের অন্যদুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল - Igbo গঠিত ছিলো দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ৬০-৭০% এবং Yoruba গঠিত ছিলো দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ৭৫% জনগোষ্ঠী নিয়ে। শুধু অঞ্চলভিত্তিক সমর্থনেই এ দলগুলো Hausa-Fulani থেকে বৃহৎ ছিলো না বরং রক্ষণশীল ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত উত্তরাঞ্চলের তুলনায় আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার, উন্মুক্ত উদার মানসিকতায় Igbo ও Yoruba অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো ক্রমে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছিলো। উল্লেখ্য এসব অঞ্চল থেকেই প্রথম আফ্রিকান শিক্ষিত সিভিল সারভেন্ট শ্রেনী বেরিয়ে আসে, যেমন- ডক্টর, লইয়ার, টেকনিশিয়ান বা প্রফেশনাল গ্রুপ। অথচ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের সৃজনশীল দিক নির্দেশনাগুলো বরাবর কট্টরপন্থী Hausa-Fulani দলটি উপেক্ষিত করে আসছিলো। যেখানে ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এই দল দুটির ভূমিকাই অগ্রগামী ছিলো। অন্যদিকে তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়ায় আমিরদের দ্বারা পরিচালিত এই রাজতন্ত্র বৃটিশদের পক্ষে কলোনি পরবর্তী সামন্ত শাসন যথারীতি পুনর্বহাল রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছিল যা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ অন্য দলগুলোর পক্ষে মেনে নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। নাইজেরিয়াকে তিন ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। পরিণাম অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নড়বড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা, অঞ্চলভিত্তিক ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংঘর্ষ বা গৃহযুদ্ধ। Igbo সমর্থিত আর্মি দ্বারা মিলিটারি ক্যু নামানো হয়, হত্যা করা হয় উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের।


ছবিসূত্র

Igbo নিয়ন্ত্রিত মিলিটারি বাহিনী দেশের দক্ষিন-পশ্চিমের তেল মজুদ অঞ্চল Biafra কে ৩০ মে ১৯৬৭ সালে The Republic of Biafra নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। কেবল মাত্র পাঁচটি দেশ বায়াফ্রা-কে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে চিহ্নিত করেছিলো - (গেবন, তাঞ্জানিয়া, হাইতি, আইভরি কোস্ট এবং জিম্বাবুয়ে)।

নাইজেরিয়ান সরকার সমর্থনপুষ্ট হয় The UK এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের। অন্যদিকে কানাডা, ফ্রান্স সহায়তা করতে থাকে বায়াফ্রাকে। The United States এর অবস্থান আপাত নিরপেক্ষ মনে হলেও, মূলত তারা রেড ক্রসের মাধ্যমে বায়াফ্রাকেই মদত দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। ৬ জুলাই ১৯৬৭ অফিসিয়ালি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দুপক্ষই পশ্চিমা পেশীশক্তির মদতে এবং অবাধ বিদেশী অস্ত্রের যোগানে, বেপরোয়া হয়ে উঠে, শুরু হয় ব্যাপক ধ্বংসলীলা ও গণহত্যার। পরিস্থিতি আরোও ভায়ানক হয় যখন নাইজেরিয়া গভার্নমেন্ট বাহিনী দ্বারা Biafra কে সবদিক থেকে অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় অঞ্চলটিতে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ। নেমে আসে অমানবীয় বিপর্যয়, দ্রুত চারপাশ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে ছেয়ে যায়, হাজারে হাজার শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধায় মরতে থাকে, পথে-ঘাটে সবখানে অভুক্ত মানুষের আহাজারি ও মৃত্যুতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ধারণা করা হয় আনুমানিক ১০ লক্ষ প্রাণ শিকার হয় এই মনুষ্যসৃষ্ট কৃত্রিম দুর্যোগের।

ছবিসূত্র


ছবিসূত্র

ছবিসূত্র
বায়াফ্রিয়া-র প্রেসিডেন্ট জেনারেল Odumegwu-Ojukwu ব্রিটিশ সাহায্য নিতেও অস্বীকৃতি জানায়, যেহেতু ব্রিটশরা নাইজেরিয়া সরকারকে সমর্থন করছে তার আশংকা ছিলো হয়ত তারা খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দিবে। Ojukwu তার নিজস্ব পৈত্রিক সম্পত্তির প্রায় ৭ মিলিয়ন পাউন্ড সবটুকু ফুরায় খাদ্য ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে এই রাষ্ট্রটিকে রক্ষা করতে। রেডক্রসের ভলেন্টিয়াররাও Biafra থেকে ব্লকেজ তুলে নেয়ার জন্যে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আন্দলোন শুরু করে। উপরন্তু নাইজেরিয়ার সরকার রেডক্রজের উপর অভিযোগ আনে তারা ত্রাণের নামে বায়াফ্রা-কে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। নাইজেরিয়া সরকার যুদ্ধ জয়ের যে নিকৃষ্টতম পন্থা অবলম্বন করেছিলো তা হলো, একটি অঞ্চলকে চারপাশ অবরুদ্ধ করে দুর্ভিক্ষ এবং গণহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া।


ছবিসূত্র


ছবিসূত্র
বাইরের পৃথিবী এই অবরুদ্ধ দেশটির ব্যাপারে খুব বেশী জানতে পারে নাই। কারণ সেখানে মিডিয়া প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা ছিলো। কেবল মাত্র অল্প কিছু ফটোগ্রাফার সেসময় বায়াফ্রা তে প্রবেশ করতে পেরেছিলো। তাদের মধ্যে Don McCullin একজন। তার অটোবায়গ্রাফি তে তিনি লিখেছিলেন -

"As I entered I saw a young albino boy. To be a starving Biafran orphan was to be in a most pitiable situation, but to be a starving
albino Biafran was to be in a position beyond description. Dying of starvation, he was still among his peers an object of ostracism, ridicule and insult…The boy looked at me with a fixity that evoked the evil eye in a way which harrowed me with guilt and unease. He was moving closer. He was haunting me, getting nearer. Someone was giving me the statistics of the suffering, the awful multiples of this tragedy. As I gazed at these grim victims of deprivation and starvation, my mind retreated to my own home in England where my children of much the same age were careless and cavalier with food, as Western children often are. Trying to balance between these two visions produced in me a kind of mental torment…I felt something touch my hand. The albino boy had crept close and moved his hand into mine. I felt tears come into my eyes as I stood there holding his hand. I thought, think of something else, anything else. Don’t cry in front of these kids…He looked hardly human, as if a tiny skeleton had somehow stayed alive…If I could, I would take this day out of my life, demolish the memory of it."

প্রায় তিন বছর পর এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৫ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে। ব্যর্থ হয় Igbo বাহিনীর অপূরণীয় সংখ্যক জীবন, সম্পদ ও নিরন্তন প্রচেষ্টার। মূল্য দিতে হয়
আনুমানিক ৩০ লক্ষ প্রাণের, যার মধ্যে একটি বড় সংখ্যার মৃত্য ঘটে দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য অপুষ্টিজনিত কারণে। এবং মৃত্যু ঘটে বায়াফ্রা নামের রাষ্ট্রটিরও। জাতিগত ও ধর্মীয় টানাপোড়ন চিরস্থায়ী আকারে রয়ে যায় নাইজেরিয়ান রাজনীতিতে। বৃটিশ সমর্থিত মিলিটারি শাসন বলবত থাকে আরো অনেক বছর। যদিও নাইজেরিয়ায় জাতি বা গোত্রগত পলিটিকাল পার্টি নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করা হয়েছে, তবে বলাবাহুল্য সে আইন কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ, Biafra-র দুর্ভিক্ষ ও ব্যাপক গণহত্যার পেছনে প্রকৃত ইন্ধনদাতা দেশসমূহের প্রধান লক্ষ্য ছিলো মূলত এ অঞ্চলের ব্যাপক তেল মজুদ কব্জা করা।

সাংবাদিক Alex Mitchell এর মতে

"involvement of the British, Dutch, French and Italian oil companies whose battle for the rich Nigerian oilfields started the civil war and kept it going"।

.........
রংতুলি


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

* হাউসা, ফুলানী, ইগবো, ইউরোবা-এরা রাজনৈতিক সত্ত্বা নয়, নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বা।
* 'ইসলামিক গোষ্ঠীর রাজতন্ত্র' না বলে 'মুসলিম গোষ্টীর রাজতন্ত্র' বলাটাই শ্রেয়।
* সত্তরের দশকে নাইজেরিয়ার জন্য সংখ্যা দেড় কোটি নয়, পাঁচ কোটির বেশি ছিল।

উত্তর নাইজেরিয়ার সুলতান বা, আমিরদের ঔপনিবেশিক আমলের ভূমিকা ভারত উপমহাদেশের হায়দ্রাবাদের নিজামদের মত; এরা নিজেদের আয়েশের জন্য নিজেদের সিদ্ধান্ত বিশাল জনগোষ্টির উপরে চাপিয়ে দিত।

নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণ কিন্তু অনেক ব্যাপক। গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে আরেকটু ডিটেইলস লিখলে ভাল হত।

হাউসা, ফুলানী, ইগবো, ইউরোবার নেতৃস্থানীয়দের কাজগুলো দিয়ে পুরো জাতিকে মূল্যায়ন করা বোধ করি ঠিক হবে না।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে যেকোন অঞ্চলের বা, জাতির অধিকারের দাবিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটা হতে হবে ন্যায়ের পথে। বায়াফ্রা কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও কম নয়।

দুপক্ষই যখন প্রায় সমানুপাতে দুষ্ট, তখন বিশ্লেষক/বর্ণনাকারীর ন্যায়-অন্যায় বোধটুকু কিছুটা বিস্মৃত হয়ে যায় কি?

........আরো লিখতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

* হাউসা, ফুলানী, ইগবো, ইউরোবা-এরা রাজনৈতিক সত্ত্বা নয়, নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বা।

এই নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তাগুলো ১৯৪০-৫০ এর দশকে ব্রিটিশ কলোনি হতে নাইজেরিয়া স্বাধীনে বিশেষ রাজনৈতিক ভূমিকারাখে। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোতে রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ এগুলোকে নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক সত্ত্বায় পরিণত করে।

'ইসলামিক গোষ্ঠীর রাজতন্ত্র' না বলে 'মুসলিম গোষ্টীর রাজতন্ত্র' বলাটাই শ্রেয়।

'মুসলিম' শব্দটার বদলে 'ইসলামিক' শব্দটার ব্যবহার বিশেষ কোনো অর্থগত তাৎপর্য রাখে কি?

সত্তরের দশকে নাইজেরিয়ার জন্য সংখ্যা দেড় কোটি নয়, পাঁচ কোটির বেশি ছিল।

১৯৬০ সালে ব্রিটিশ কলোনি থেকে নাইজেরিয়া স্বাধীন হবার পর দেশটিতে ৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যা ছিলো, অর্থাৎ ৬ কোটি হবার কথা। এটা ছাড়াও ওয়েস্ট আফ্রিকার আরো কিছু গৃহযুদ্ধ ও গণহত্যা জানার চেষ্টা করছিলাম, লেখাটি লিখেছিলামও অনেক রাতে, সাম হাও তথ্যটি মিসপ্লেসড হয়ে গিয়েছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য। মডারেটরদের উদ্দেশ্যে বলছি - সচলে অতিথি লেখকদেরও পোস্ট এডিট করার সুজোগ রাখা উচিৎ! ইয়ে, মানে...

উত্তর নাইজেরিয়ার সুলতান বা, আমিরদের ঔপনিবেশিক আমলের ভূমিকা ভারত উপমহাদেশের হায়দ্রাবাদের নিজামদের মত; এরা নিজেদের আয়েশের জন্য নিজেদের সিদ্ধান্ত বিশাল জনগোষ্টির উপরে চাপিয়ে দিত।

সহমত

নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণ কিন্তু অনেক ব্যাপক। গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে আরেকটু ডিটেইলস লিখলে ভাল হত।

লেখাটির শুরু করাই আমার জীবনের একটা দুঃসাহসিক অভিযান শুরুর মত হয়ে গেছে! Blood Diamond, Hotel Rwanda দেখে রাতে ঘুমাতে পারছিনা! মন খারাপ পরের পর্বগুলোতে গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যদিও আফ্রিকায় চলমান এইসব গৃহযুদ্ধের পেছনের মূল কারণ দর্শানই আমার লেখার উদ্দেশ্য।

হাউসা, ফুলানী, ইগবো, ইউরোবার নেতৃস্থানীয়দের কাজগুলো দিয়ে পুরো জাতিকে মূল্যায়ন করা বোধ করি ঠিক হবে না।

পোস্টে হাউসা, ফুলানী, ইগবো, ইউরোবার নেতৃস্থানীয়দের কাজগুলো দিয়ে পুরো জাতিকে মূল্যায়ন করা করা হয়নি বরং এই গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের পেছনে বিদেশী পৃষ্টপোষকতার স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এতা স্বীকার করাই লাগবে স্বদেশী মানুষের উপর বর্বতা প্রদর্শনে এখানকার বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীগুলোও কম যায় না!

আমি ব্যাক্তিগতভাবে যেকোন অঞ্চলের বা, জাতির অধিকারের দাবিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটা হতে হবে ন্যায়ের পথে। বায়াফ্রা কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও কম নয়।

বায়াফ্রা তথা ইগবো কর্তৃক মানবতা লংঘন পোস্টে কোথাও অস্বীকার করা হয় নাই। মিলিটারি ক্যু দ্বারা উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা, বিদেশী অস্ত্রের যোগান পেয়ে দুই পক্ষের বেপরোয়া হয়ে উঠার কথা লেখাতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুপক্ষই যখন প্রায় সমানুপাতে দুষ্ট, তখন বিশ্লেষক/বর্ণনাকারীর ন্যায়-অন্যায় বোধটুকু কিছুটা বিস্মৃত হয়ে যায় কি?

নাইজেরিয়া সরকার সমর্থিত বাহিনীর প্রতি অভিযোগ হলো, তারা যুদ্ধে জয়ের জন্যে নিকৃষ্টতম পন্থা অবলম্বন করেছিলো, একটি অঞ্চলকে সবদিক থেকে ব্লক করে, মানুষের জীবনধারণের জন্য খাদ্য সরবরাহটুকু বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ বেসামরিক মানুষ, উল্লেখজনক সংখ্যক নারী ও শিশুকে ঠেলে দেয় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের মুখে। এবং এ ভয়ংকর নৃশংসতা আরো দীর্ঘায়িত করা হয়েছিলো পশ্চিমা (বৃটেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ইতালি ইত্যাদি) রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যক্ষ মদতে। এ অঞ্চলের ন্যাচারাল রিসোর্স এই তেলকোম্পানি ভুক্ত দেশগুলোর আগ্রহের বিষয় হলেও, এখানকার মানুষ তাদের কাছে জঞ্জাল বা নরকের কীট সম, তাই নিজেরদের স্বার্থ হাসিলে, নিজের সভ্যতার চাকচিক্য বাড়াতে, এরকম লাখ লাখ মানুষ কে নারকীয় দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেয়া আসলে তাদের কাছে কোনো বিষয়ই না! আর তারই বলি হয় বায়াফ্রা নামক রাষ্ট্রটি, পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের স্বাক্ষর রাখার আগেই!

অনেক ধন্যবাদ।

.........
রংতুলি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

* নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বা কিভাবে রাজনৈতিক সত্ত্বায় পরিণত হয়, তা বোধগম্য হলো না।
* ইসলামী রাজতন্ত্র/ইসলামী গোষ্ঠীর রাজতন্ত্র বলে কিছু নেই।

আমার আগের মন্তব্যটি আপনার লেখার সমালোচনায় লেখা ছিল না বরং এধরণের লেখায় আপনার থেকে আরো বেশি কিছু আশা ছিল বলেই ওভাবে আগের মন্তব্যটি লিখেছিলাম।

আফ্রিকার মানুষের কষ্ট লাঘব হোক, শান্তি ফিরে আসুক। এই কামনা করি।

এরকম আরো পোস্ট আসুক।

রংতুলি এর ছবি

লেখালেখির ব্যাপারে আমার সচলের আগে কোনো অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে, হয়ত আমারো কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যগুলো থেকে বরং অনেক কিছু জানছি। ব্যাপার না, আলোচনা চলুক স্বভাবিক গতিতে!

ধন্যবাদ।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

.........
রংতুলি

তানিম এহসান এর ছবি

সেই, গুটিকয় দেশ মিলে পৃথিবী উজাড় আর মুখে বড় বড় কথা। তবে আফ্রিকার মত করে আর কোন মহাদেশ’কে এত বেশি মানবিক মূল্য দিতে হয়নি এমনভাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

'ব্লান্ড ডায়ামন্ডে'র একটি ডায়ালগের কথা মনে পড়ে গেলো - "আফ্রিকায় এত মানুষ মরেছে যে এখানকার মাটি পর্যন্ত লাল হয়ে গেছে!"

.........
রংতুলি

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ব্যাপারে অল্প-বিস্তর জানতাম। ঘটনা খুবই দুঃখজনক, কিন্তু কিছুই করার নাই। মন খারাপ

দেবা ভাই
-----------------------------------------
'দেবা ভাই' এর ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই কিছু করার নাই! আমরা শুধু জানবো এই দেশে গৃহযুদ্ধে এত মানুষ মরেছে, ওই দেশে অত মানুষ মরেছে, তাও ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক দিন পরে, সত্যি বলতে যে পরিসংখ্যানটা আমরা পাই সেটাও হয়ত কখনো পূর্ণাঙ্গ নয়। আর এরকম অনেক নৃসংশতার প্রকৃত কারণগুলো সবসময় থেকে যায় আমাদের আওতার বাইরে।

ধন্যবাদ।

.........
রংতুলি

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

.........
রংতুলি

স্যাম এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

.........
রংতুলি

কাজি_মামুন   এর ছবি

ছোট থেকেই দেখে আসছি হাড়-জিরজিরে, কংকালসার আফ্রিকান শিশুদের, টিভির পর্দায় যাদের উপস্থিতি এখনো প্রকটভাবে বিদ্যমান। কেন অসহায় শিশুগুলোর এই প্রায় প্রাত্যহিক উপস্থিতি টিভি পর্দায় , তার কারণ অনুসন্ধান কখনোই করা হয়নি, শুধু মনে হয়েছে, আফ্রিকা এক চির-দুর্ভিক্ষের দেশ, মানুষজন আদিম প্রকৃতির, মরুভূমির দেশে এ যেন এক অতি স্বাভাবিক নিয়তি। আপনার লেখা সে ভ্রম দূর করেছে অনেকখানি, আফ্রিকাকে জানার জন্য তৈরি হয়েছে আগ্রহ।
Don McCullin এর অটোবায়োগ্রাফির উদ্ধৃতাংশটুকু, আমার মতে, আপনার লেখার সবচেয়ে মূল্যবান অংশ। যে কাউকে কাঁদাবে এই মর্মস্পর্শী বর্ণনা।
'Dying of Starvation, he was still among his peers an object of criticism, ridicule, and insult./'He was moving closer. He was haunting me, getting nearer./ I felt something touched my hand. The Albino boy had crept close and moved his hand into mine. I felt tears coming into my eyes as I stood there holding his hand. I thought, think of something else, anyone else./He looked hardly human, as if a tiny skeleton had somehow stayed alive.'
রাস্তায় চলতে চলতে কখনো প্রায় একই রকম শিশু আমাদের এই ঢাকা শহরেও চোখে পড়ে, ওদের অদ্ভুত চাহনি আমাদেরও অপ্রস্তুত করে, জাগিয়ে তোলে তীব্র অপরাধ-বোধ।
ডন ম্যাককুল্লিনের মত পৃথিবীর সব মানুষের বিবেক জাগ্রত হোক।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

.........
রংতুলি

ধুসর জলছবি এর ছবি

মন খারাপ

রংতুলি এর ছবি

মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বায়াফ্রা নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নয়। বায়াফ্রা'র পূর্বদিকে ক্যামেরুন, দক্ষিণ দিকে গিনি উপসাগর তাহলে নাইজেরিয়া বায়াফ্রাকে চারপাশ থেকে অবরুদ্ধ করলো কী করে? সাম্প্রতিককালে তেলসম্পদের মালিকানা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তায় সুদানের বিভাজনের সাথে নাইজেরিয়া-বায়াফ্রার ঘটনার অনেক মিল পাওয়া যায়। নাইজেরিয়া বায়াফ্রাতে যা করেছে সেটা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তবে উগ্র গোত্রবাদী ই'বো-রা যা করেছে সেটাও সমর্থনযোগ্য কিছু নয়। তেলের মালিকানা নিয়ে বাইরের লুটেরাদের সাথে স্থানীয় দালালদের কামড়াকামড়িতে পড়ে সাধারণ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এই ধরনের অন্যায়কে জায়জ করার জন্য প্রায়ই জাতীয়তাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ইত্যাদিকে উস্কে দেয়া হয়। এখানেও তাই হয়েছিল। সাউথ সুদান আলাদা হয়েও যেমন তার ভাগে তেলসম্পদের মাত্র ৫% পড়েছে (বাকিটা গণচীন, ভারত, মালয়েশিয়া ইত্যাদিদের ভোগে গেছে) বায়াফ্রা টিকে থাকলেও তার কপালে ঐ কাঁচকলাই জুটতো।

বেশ পরিশ্রমসাপেক্ষ লেখা দিয়েছেন, এর জন্য ধন্যবাদ। ক্যারি অন ব্রো!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রংতুলি এর ছবি

প্রিয় ব্লগারের কাছ থেকে মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগছে।

বায়াফ্রা নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম হয়ে গেছে, এটা আমি আগেই খেয়াল করেছি। অনেক রাতে তাড়াহুড়ার ফল, বিষয়টা হাস্যকর, মনে বলেছি সাউথ-ইস্ট অথচ লিখেছি সাউথ-ওয়েস্ট। এরকম একটা লেখায় তথ্যগুলোর ব্যাপারে আরেকটু সিরিয়াস হওয়া উচিৎ ছিলো, যেখানে পরে শুধরানোর সুযোগ নাই! মন খারাপ

বায়াফ্রা'র পূর্বদিকে ক্যামেরুন, দক্ষিণ দিকে গিনি উপসাগর তাহলে নাইজেরিয়া বায়াফ্রাকে চারপাশ থেকে অবরুদ্ধ করলো কী করে?

লেখায় যুদ্ধের বর্ণনার চেয়ে এর প্রভাব (বায়াফ্রার দুর্ভিক্ষ, গণহত্যা ইত্যাদি) মানবিক দিকটা বেশী তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। হয়ত কিছু প্রয়োজনীয় বর্ণনা বাদ পড়ে গিয়েছে, তাই ম্যাপ দেখে পাঠকের কিছুটা কনফিউশন সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। ১৯৬৮ এর এপ্রিল থেকে জুন অব্দি নাইজেরিয়ান সৈন্যরা উত্তরে দুটি প্রধান পয়েন্ট এবং উপকূলবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর Port Harcourt দখল করে বায়াফ্রাকে চারপাশ থেকে (ring around) ঘিরে ফেলে। বায়াফ্রা-র শরণার্থীরা বর্ডার ক্রস করে ক্যামেরুন পর্যন্ত যেতে পেরেছিলো কিনা জানিনা। যেহেতু গৃহযুদ্ধগুলো এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিলো তো অন্যদিক থেকে ক্যামেরুনের বর্ডার সিল করাও অস্বাভাবিক না (অনুমানভিত্তিক), এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পেলাম না।

এই ধরনের অন্যায়কে জায়জ করার জন্য প্রায়ই জাতীয়তাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ইত্যাদিকে উস্কে দেয়া হয়।

আবার এই অন্যায়গুলোর পেছনে থাকা আন্তর্জাতিক ইন্ধন ঢাকতে প্রায় সব ঘটনাই আঞ্চলিক এথনিক ক্ল্যাশ হিসাবেই চালানোর চেষ্টাও কিন্তু কম হয়না। বিবিসি-র এক রিপোর্ট মতে- ১৯৬০ এর মাঝামাঝি মিলিটারির হাতে ক্ষমতা যাবার পর থেকে হোসাসদের সাথে সংঘর্ষে প্রায় ত্রিশ হাজার ইগবো মারা যায় সাথে দশ লক্ষ ঘরছাড়া হয় এই পূর্বাঞ্চল থেকেই। তার প্রায় ছয় বছর পর ইগবো সংগঠিত হয়ে ১৯৬৬ সালে তাদের প্রথম ক্যূ নামায়, ১৯৬৭ সালে ইগবো উধ্যুষিত অঞ্চলটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে। উগ্রবাদীতা অবশ্যই কোনো পক্ষেই গ্রহণযোগ্য নয়। যখন কোনো ক্ষেত্রে তা নৃশংসতার মাত্রা ও সংজ্ঞাও ছাড়িয়ে যায়, তখন আসলেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি যে, কোন পক্ষের হয়ে কথা বলব। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জনগণ, আমার এই লেখাটা ঐ ভূখণ্ডটির জন্য নয়, বরং একটি স্বাধীন নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় নির্মমতার স্বীকার সেই সাধারণ মানুষগুলোর জন্যে।

বায়াফ্রা টিকে থাকলে তার কপালে কি জুটতো এটা অনুমান করা আসলেই কি সম্ভব? যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব বায়াফ্রা ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার হার কট্টরপন্থী উত্তরাঞ্চল থেকে অনেক বেশী ছিলো নাইজেরিয়ার স্বাধীনকাল থেকেই, আর সাথে পূর্বাঞ্চলীয় অধিকাংশ তেল রিসোর্সগুলো তো ছিলোই!

দাদা, আপনার কমেন্টগুলো সবসময় আমার জন্যে উৎসাহ মেশানো হয়। থ্যাঙ্কস ব্রো!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গত পাঁচশত বছরে আফ্রিকায় ঘটা সব বড় ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক ইন্ধন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহন আছে। সাবেক উপনিবেশগুলোতে সংশ্লিষ্ট কলোনিয়াল প্রভুরা আজো বিশাল ফ্যাক্টর। অনেক জায়গায় তো তাদের সামরিক উপস্থিতি পর্যন্ত আছে। এরা কলোনিগুলো ছাড়লেও এদের কোম্পানীগুলো বহাল তবিয়তে সেখানে হাড়-মজ্জা চুষে খাচ্ছে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপারে চর্যাপদের উক্তিটি স্মর্তব্য - "অপণা মাঁসে হরিণা বৈরী"।

বায়াফ্রা টিকলে কী হতো সেটা এমন অন্য উদাহরণ (আফ্রিকা থেকেই) লক্ষ করলেই বোঝা যাবে। তাছাড়া বায়াফ্রার তেলসম্পদই বায়াফ্রাকে সত্তরের দশকের দক্ষিণ সুদান বানাতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অরফিয়াস এর ছবি

এই বিষয়ে লিখতে থাকুন। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে কোটি কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে তা নিয়ে সাধারণ মিডিয়ার কাভারেজ কমই। নানা জাতিগোষ্ঠির মাঝে অবিশ্রান্ত সাম্প্রদায়িক লড়াইয়ে পঙ্গপালের মতো মানুষ মরছে। সভ্য সমাজের দৃষ্টি খালি এদের তেল/খনিজ সম্পদের দিকে, আফ্রিকান মানুষের জীবনের কোন মূল্য তাদের নেই!!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রংতুলি এর ছবি

আফ্রিকার সম্পদই আসলে এখানকার মানুষের কাল হয়েছে। এগুলা আদতে এদের জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনতে পারেনি। অপরিসীম সম্পদের বুকে থেকেও এরা না খেয়ে মরে, একে অন্যের সাথে কামড়াকামড়ি করে মরে, আর অন্যদিকে এদের সম্পদ শত শত ধরে জৌলুস বাড়ায় সভ্য সমাজের।

আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ অরফিয়াস!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার মন্তব্যের প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে একটু নিজের দামামা পিটলাম।
আফ্রিকায় নয়া ঔপনিবেশিক থাবা-১
আফ্রিকায় নয়া ঔপনিবেশিক থাবা-২
আফ্রিকায় নয়া ঔপনিবেশিক থাবা-৩


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অরফিয়াস এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ পান্ডবদা। আফ্রিকা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই, যত জানতে পারি ততই ভালো। হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

রংতুলি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ দাদা! আপনার সুন্দর গোছানো, তথ্যসমৃদ্ধ লেখাগুলো পড়ছি, অনেক কিছুই জানছি। আমার পরের কোনো লেখায় রেফারেন্স হিসেবে এগুলো ব্যবহার করতে পারবো তো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সানন্দে ব্যবহার করুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শাব্দিক এর ছবি

নৃশংস!
অজানা ইতিহাস জানাবার জন্য ধন্যবাদ, এসব বিষয় নিয়ে আরো লিখুন।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

রংতুলি এর ছবি

হুম, নৃশংস! মন খারাপ

লেখাটি পড়ার জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ। আরো লিখার ইচ্ছা আছে, আপাতত নিজে জানার চেষ্টা করছি।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বায়াফ্রার মানবিক দুর্যোগ সম্পর্কে খুবই হালকা ধারণা ছিল। আপনার লেখাটা পড়ে ফোকাস বড় করতে পারলাম একটু। তবে শেষটায় অতৃপ্তি রয়ে গেছে। আরেকটু বিশদ জানার আগ্রহ ছিল বায়াফ্রা নামের আড়াই বছর বয়সী একটা রাষ্ট্রের অকালমৃত্যুপরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে। আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

বর্তমানে আফ্রিকার রাজনীতি মানেই রক্তস্নান। অথচ উপনিবেশ সৃষ্টি হবার আগের আদিমযুগে আফ্রিকায় এত খুনোখুনির ঘটনা ঘটেনি, এত রক্তপাত হয়নি কথায় কথায়। বাস্তবতা হলো উপনিবেশবাদী সভ্য ইউরোপই আজকের আফ্রিকার সকল অসভ্যতার জনক।

ব্লাড ডায়মণ্ড বা হোটেল রুয়াণ্ডার বাস্তবতা সমগ্র আফ্রিকাতেই ছড়ানো আছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রংতুলি এর ছবি

লেখাটি পড়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আফ্রিকার গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা ইত্যাদি মানবিক বিপর্যয় এবং এর নেপথ্যে আরো অনেক অপেক্ষাকৃত কম আলোকিত বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিক পর্বে কিছু লেখা দেয়ার ইচ্ছা আছে।

আফ্রিকার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরা অঞ্চলগুলোতে জাতিবিদ্বেষ মূলত বিভিন্ন গোত্রপতিদের হাতে রাখতে বৃটিশদের দ্বারাই কৌশলে ছড়ানো হয়েছিলো, আজ যার পরিণাম ভয়ঙ্কর। ক্ষমতার মোহে এরা অন্ধ, একই দেশের এক গ্রুপ আর এক গ্রুপকে মেরে সাফ করে দিচ্ছে, ঘটে যাচ্ছে নজীরবিহীন ম্যাসাকার, আখেরে লাভ কিন্তু এদের কারো হচ্ছে না। বরং পরবর্তীতে বয়ে নিয়ে আসছে নিজেদের কপালে আরো কয়েকশ বছরের ভোগান্তি, পশ্চাদপদতা। বেশির ভাগ দেশগুলোই এইসব গৃহযুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা। তাতে অবশ্য সভ্য সমাজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়না!

তারেক অণু এর ছবি

চলুক

আফ্রিকার উপনিবেশিকতার পতন এবং বর্তমান কাল নিয়ে ভারী প্রিয় এক বই আছে আমার, রিভিউ লিখতে হবে সময় করে।

রংতুলি এর ছবি

বইটার নাম কি?? রিভিউ দেন জলদি!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক
মন খারাপ মন খারাপ নৃশংস! অমানবিক!
অনেক অজানা কিছু জানতে পারলাম আপু।
পর্ব এক এর পরে আর কই?

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।