নানা বৈচিত্র্যে আইভরি কোস্ট ( আইভরি কোস্ট টুকিটাকি - ৪ )

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৯/০৯/২০১২ - ২:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
DSC02215 পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ আইভরি কোস্ট । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক সম্পদ, পাহাড় ও সমতল ভূমির সংমিশ্রণ , বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক পরিমণ্ডলে বয়ে চলেছে এখানকার মানুষের জীবন। দেশটির আয়তন ৩,২২,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার । বেশ কিছু ছোট বড় শহর নিয়ে এখানকার এক একটি রিজিয়ন গঠিত । অধিকাংশ শহর দেখতে অনেকটা একই রকম বিশেষ করে ঘরবাড়ি, দোকানপাটের নির্মাণ শৈলী । (১) SAM_3124 (২) SAM_0503 ইট পাথরের এই সব ঘর বাড়ির অধিকাংশেরই উপরে টিনের চালা । রাজধানী ইয়ামাসুক্রু আর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র আবিদজান ছাড়া দেশটির অধিকাংশ শহরের চাক্ষুষ চিত্রটি অনেকটা এরকম । (৩) SAM_1135 রাস্তার দুই ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে দোকান । ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সি , সাইকেল, মোটরসাইকেল , পায়ে চলা পথচারীদের পদচারনায় এসব বাজারগুলো একেবারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখর থাকে। (৪) DSC03640 দেশটির প্রধান সড়কটি ছাড়া বিভিন্ন বাইপাস সড়ক গুলো এখনও কাঁচা আধপাকা। প্রধান সড়কটি একেবারে পাকা যা ১৯৮৬ সালে তৈরি করার পর এখন পর্যন্ত ওইরকম অক্ষত অবস্থায়ই আছে। (৫) DSC03576 বিশাল দেহি মালবাহী গাড়ি যখন এই রাস্তার বুক দিয়ে চলে তখন প্রতি বছর মেরামত করে চলা আমাদের দেশের ওইসব নাজুক রাস্তার কথা মনে পড়ে। আজ ছাব্বিশ বছর ধরে একেবারে নতুনের মত চকচক করছে এদেশের রাস্তাঘাট । এখনও ঠিক সেইরকমই আছে ঠিক ছাব্বিশ বছর আগে যেমনটি ছিল। (৬) DSC03578 মূল শহর ছাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে একেবেকে চলেছে মেঠো পথ। দূর থেকে একেবারে শাপের মত মনে হয় আঁকাবাঁকা এসব লাল মাটির রাস্তাগুলোকে । (৭) DSC03183 এই লাল রাস্তাগুলো বিভিন্ন গ্রাম প্রদক্ষিণ করে আবার মিলিত হয়েছে প্রধান সড়কের সাথে। (৮) SAM_2080 দেশটির গ্রাম দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মত।ঘরের উপরে কোথাও ছনের চালা কোথাও আবার টিন, আর ঘরের চারপাশ দিয়ে হয় বাঁশের বেড়া অথবা মাটি । তবে ছনের এসব খুপরিগুলোকে অনেকটা ধান রাখার গোলার মত দেখায়। আর মাটির কারণে গ্রামগুলো দেখায় লালচে। (৯) DSC02800 (১০) SAM_1052 এখানে যে কোন শহর অথবা গ্রাম চেনা খুব সহজ। রাস্তার পাশে কিছুদূর পর পর সাইন পোস্টিং দেয়া আছে যেখানে লেখা আছে ওই শহর অথবা গ্রামের নাম। কাজেই দিক ঠিক রেখে শুধু রওনা দিলেই হয় হারানোর কোন ভয় নেই। (১১) DSC02810 গ্রামের এই লাল রাস্তা দিয়ে হাঁটলে হঠাৎ চোখে পড়ার মত মনে হয় ছোট্ট ছোট্ট ডালে ঝুলে থাকা কদম ফুল। এরকম ছোট ছোট গাছে ফুটে থাকা অজস্র কদম এখানেই আমার প্রথম দেখা। বর্ষাকালে রাস্তার দুপাশ দিয়ে এরা মাথা দুলিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে যায়। (১২) DSC03180 (১৩) DSC03205 এদেশে মূলত তিনটি ঋতু বিরাজ করে। নভেম্বর থেকে মার্চ অবধি শীত, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম আর জুন থেকে অক্টোবর অবধি বর্ষা। মেঘ আর বৃষ্টি নিয়ে এর আগেই লিখেছি তাই এবার কিছু নীল বিকেলের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেই। (১৪) DSC03582 মেঘমুক্ত নীলাকাশ, মৃদুমন্দ বাতাস আর চারপাশের সবুজ প্রকৃতি এক অপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করে এখানে। একটানা লম্বা রাস্তা দিয়ে এই নীল চাদরে ঢাকা আকাশের তল দিয়ে তখন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় দূর অজানায়। (১৫) DSC03572 (১৬) DSC03570 বর্ষাকালে দেশটি মুড়ে যায় একেবারে সবুজ এক চাদরে। শুকানো গাছের পাতারা অধীর আগ্রহে বর্ষার আগমনের প্রহর গুনতে থাকে। (১৭) DSC03082 (১৮) DSC03620 প্রচণ্ড খরায় পুড়ে বর্ষার আগমন এখানে বয়ে আনে সবুজ বার্তা।গাছপালা লতাপাতা একেবারে সবুজ হয়ে যায়। খরার লালচে ভাব থকে হঠাৎ করেই দেশটি ঘন সবুজে ছেয়ে এক নতুন মূর্তি লাভ করে। (১৯) SAM_2224 (১৯) DSC03103 তবে বর্ষার সময় প্রায়শয় দেখা মেলে কালো এইসব ভয়ঙ্কর প্রাণীদের। (২০) DSC03173 গাছের বাকল অথবা গর্ত থেকে বের হয়ে ঘরে প্রবেশ করার প্রবণতা তখন এদের বেড়ে যায় তাই দরজা না খুলে রাখাটায় এই সময় শ্রেয়। সবুজ গাছ আর ঘাসের মাঝে বেড়ে ওঠা এখানকার ছোট বড় সব বয়সী কিশোরের প্রিয় খেলা ফুটবল। ফুটবলার দ্রগবা এদের স্বপ্নের মানুষ। তাকে দেখেই প্রেরণা পায় এখানকার ফুটবল। একজন মানুষ যে এত বড় একজন আইকন হতে পারে দ্রগবা তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । (২১) DSC04005 প্রতিদিন বিকালে ছোট বাড়ের পোস্টে এখানে চলে ফুটবল অনুশীলন। অল্প বয়সী ছেলেদের খেলা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে কোন উপায় নেই। আর্থিক সচ্ছলতা তেমন নেই তাই বুটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের এই স্যান্ডেল সুজ গ্রামাঞ্চলের ছেলেদের কাছে ফুটবল খেলার জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি জুতা। (২২) DSC03689 (২৩) DSC03692 পুরুষপ্রধান এই দেশে যৌথ পরিবারের সংখ্যায় বেশি। মা বাবা ভাই বোন সবাই মিলে একটি ঘরের মধ্যেই গড়ে ওঠে এদের বসবাস। প্রতিটি গ্রামেই আছে একজন ভিলেজ সেফ। তিনিই গ্রামের প্রধান ব্যক্তি। গ্রামে কোন কিছু করতে গেলে তার অনুমতির প্রয়োজন হয়।গ্রামে কোন অনুষ্ঠান হলে সেফ সেখানকার প্রধান হিসেবে সেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। বিভিন্ন উপলক্ষে এখানে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য প্রদর্শন হয়। কম, মধ্য ও বৃদ্ধ এই তিন বয়সী মহিলারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নৃত্য প্রদর্শন করে। তখন এদের গায়েও জড়ানো থাকে তিন ধরনের বিশেষ পোশাক ।গান আর নৃত্যের তালে তালে একে একে এই তিন বয়সী মেয়েরা অনুষ্ঠানকে উপভোগ্য করে তোলে । এক্ষেত্রে তাদের সামগ্রিক বিষয়টি একেবারেই ঐতিহ্যবাহী । (২৪) DSC02255 (২৫) DSC02217 (২৬) DSC02253 এখানে পুরুষের চেয়ে মেয়েরাই বেশী পরিশ্রমী । অধিকাংশ ছোট বড় শহর আর গ্রামের রাস্তা দিয়ে গেলেই দেখা মিলবে মাথায় বিশাল কোন এক বোঝা আর পিঠের সাথে শক্ত করে বাঁধা বাচ্চাটিকে নিয়ে নিজ কর্মে অথবা নিজ গৃহের দিকে ছুটে চলেছে মেয়েরা।পিঠের সাথে নিজের ছোট বাচ্চাকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে মাইলের পর মাইল মায়েদের হেটে চলা এখানে খুব পরিচিত একটি দৃশ্য। (২৭) SAM_2035 (২৮) SAM_5422 এখানকার রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে দুই পাশ দিয়ে দৌড় দিয়ে ছুটে চলে আসে ছোট ছোট শিশু । কারো গায়ে কাপড় নেই কারোরটা আবার ছেড়া । কিন্তু তাতে কি যায় আসে, এক দৌড়ে কাছে এসে বলে মোনামি অর্থাৎ বন্ধু। আর যে আসতে পারে না সে দূর থেকেই হাত নাড়িয়ে বলে মোনামি বিস্কি। (২৯) SAM_1655 এক টুকরা বিস্কিট অথবা বিস্কিটের একটি প্যাকেট যেন এদের কাছে অমৃতের সমান। এটা পাবার আশাও যেন বেশ তীব্র। আর যদি কেউ সে আশা পূরণ করে তবে যে তৃপ্তির রেখা এদের ঠোঁটে একে যায় তা দেখেই দূর হয়ে যায় ওই দিনের সকল ক্লান্তি। ভালো থাকুক এদেশের মানুষ। দু বেলা পেট পূরে যেন খেতে পারে প্রতিটি শিশু । বন্ধ হোক এদেশের সকল হানাহানি , রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ –পরাশক্তির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হোক এদেশের মানুষ । আইভরি কোস্ট নিয়ে আমার অন্যান্য এই লিংক এ ঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/45698 অমি_বন্যা

মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বিছাটা দেখতে সেরকম।

ছবি-লেখা সেরকম হয়েছে। চলুক

আইভরির মানুষদের জন্য শুভকামনা রইল।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ রাজা ভাই। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অমি_বন্যা

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবি এবং লেখাগুলো এখানে এলোমেলো দেখাচ্ছে। তাই লেখাটি আবার প্রকাশের জন্য দিলাম। মডারেটররা আমার ২য় বার দেয়া একই লেখাটি প্রকাশ করলে বাধিত হব। ছবি এবং লেখার মধ্যে যে অগোছালো ভাব তা ২য় বার দেয়া লেখাটিতে নেই।

তারেক অণু এর ছবি

সেখানে কদম হয় জানতাম না, ভাল লাগল কদমের ছবি দেখে।

ভাই, লেখা আর ছবি পারলে আরেকবার সাজিয়ে দেন, চোখে খুব লাগছে পড়তে গেলে, বিন্যাস খুব বাঁকাতেড়া হয়েছে। ছবিগুলোর সাবজেক্ট এত দারুণ, কিন্তু রঙ মিসিং মনে হচ্ছে, অবশ্য আমার মনিটরের কারণেও হতে পারে।

স্যাম এর ছবি

লেখা আর ছবি পারলে আরেকবার সাজিয়ে দেন চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সাজিয়ে দিয়ে আবার পোস্ট করেছি দেখা যাক।

অমি_বন্যা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনু দা, আরেকবার সাজিয়ে দিলাম। মডারেটররা পোস্ট করলে হয়।

অমি_বন্যা

অতিথি লেখক এর ছবি

কদম!!!!! অনেক ভাল লাগল ছবি গুলো। চলুক

ইমা

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ ইমা। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

যুমার এর ছবি

ওখানেও কদম !‍ভালো লাগল। চলুক

অমি_বন্যা এর ছবি

এখানেও কদম ফুল ফোটে মন খারাপ । ্মন্তব্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ

কানিজ ফাতেমা  এর ছবি

ভালো লাগল লেখা এবং ছবি।

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কানিজ ফাতেমা  এর ছবি

লেখা ও ছবি চমৎকার হয়েছে।

রংতুলি এর ছবি

বৃশ্চিক!! ভয় পাইছি!

কদম ফুল দেখে ভালো লাগলো... হাসি

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কানা বাবা এর ছবি

এই বিছার কামড়ে কি মানুষ মরে?

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

অমি_বন্যা এর ছবি

ভালো ডাউট দিছেন। একবার দেখি কামড় খেয়ে দেখতে হবে। খাইছে

ক্রেসিডা এর ছবি

আইভরি কোষ্ট দেখলেই বুঝে যাই, আপনার লেখা। কেন যে আপনার নিক অতিথি হচ্ছে না। এতোদিন পর এসে সেটা দেখবো ভেবেছিলাম।

ভালো থাকবেন।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অমি_বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
আপনার মত যেদিন মডুরা ভাববে সেদিন দেখবেন অতিথি হয়ে যাবো।

আপনিও ভালো থাকবেন । আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

একবারে পোড়া থেকে নয়নজুড়ানো সবুজে রূপান্তরটা অসাধারন লাগলো।

-অয়ন

অমি_বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে , অয়ন । ভালো থাকবেন।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আহা, জীবন্ত ছবিগুলোতে অনাঘ্রাতা ষোড়শীর মতো প্রকৃতি যেন প্রাণবন্তী মোহিনী!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রকৃতি উদার হস্তে সৌন্দর্য সব বিলিয়েছে সেখানে। ছবিগুলো অছাম! দেঁতো হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অমি_বন্যা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

জুন এর ছবি

পোস্টটি বিষয় এবং ছবি দুদিক দিয়েই অসম্ভব মন কাড়া। ভাল থাকুক মানুষেরা। ভাল থাকতে দিক এই সুন্দর গ্রহটিকে।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

অমি_বন্যা এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে জুন । ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।