ভাষা ও সাহিত্যঃ শুদ্ধতাই সুন্দর?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৩/১০/২০১২ - ৮:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্লগে লেখালেখি করেন এমন এক ছোটবোনের সাথে গতকাল কথা হচ্ছিল, তিনি এখনকার খিচুড়ি মার্কা বাংলার প্রচার ও প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন। চেষ্টা করছেন নিজে সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা ও লেখা শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করবেন। আমি উনার উদ্দেশ্যকে শ্রদ্ধা করি। দেশের বাইরে থাকার কারণে আমি নিজেও এই দোষে দোষী। তবে উনার চিন্তাটা আমার ভেতরে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আপনাদের মতামত জানার জন্য ব্লগে শেয়ার করছি।

উনার মূল উদ্দেশ্য ভাষার সৌন্দর্য ধরে রাখা, এবং পাঠকদের আমাদের মূল ভাষা ও সাহিত্যে ফিরিয়ে আনা। এ নিয়ে আমার কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু পদক্ষেপটা কি খুব একটা লাভজনক হবে? ভাষার বিকৃতি হচ্ছে বা সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে - তার একটা বড় কারণ ত মিডিয়া, গল্প, পত্রিকায় বাংলা ইংরেজির মিশ্রণ করে লেখালেখি/অনুষ্ঠান হচ্ছে, এবং পাঠক/দর্শক এটাকেই স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিচ্ছে। ইংরেজি বাক্য বা শব্দের সংযোজন তাদের মনে একটা বাড়তি সম্মানের ধারণা এনে দিচ্ছে। পশ্চিম বাংলায় একেবারে হাল আমলের লেখকরাও যেখানে প্রমিত বাংলাকে অবলম্বন করে লিখছেন, নাটকগুলোতে শুদ্ধ বাংলায় কথা হচ্ছে, এখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান নিয়ে গীতিনাট্য হয় - সেখানে আমাদের মিডিয়া, প্রকাশনায় একজন কি দুইজন লেখক/পরিচালকের জয়জয়কার। আমরা ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের ছড়া পড়ে বড় হয়েছি। এর পরে এতদিনে একটা শিশুদের লেখক/ ছড়াকার তৈরি হয়েছে? বাচ্চারা ডিজনীর বই ছাড়া যাবে কোথায়? সুতরাং আমাদের প্রজন্ম রবীন্দ্র/শরৎ/বিভূতি চিনে আসলেও, নব্বইএর দশক থেকেই ছেলেমেয়েরা বাংলা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।

এর প্রভাব হচ্ছে শুদ্ধ বাংলায় এখন আর লেখাও বেশি হয়না, কথা ত হয়ই না।

তারপরের প্রশ্ন ছিল, ভাষার মিশ্রণ হলেই কি বলা যায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বা ভাষা কলুষিত হচ্ছে? সমাজভাষাবিজ্ঞানে দুই ভাষার মিশ্রণ এর কারণ হিসেবে Diglossia ও Code-switching কে উল্লেখ করা হয়। কোড সুইচিং হয় যখন অন্যভাষায় অনেকটা সময় কাটানোর কারণে ভাব প্রকাশের সুবিধার্থে দু'ভাষা থেকেই শব্দ ধার করে জোড়াতালি দিয়ে কথা বলা হয়। প্রবাসী ব্লগার থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীদের ভাষার মিশ্রণ সম্ভবত কোড সুইচিং এর কারণে। ডাইগ্লসিয়া অপরদিকে একটা শ্রেণীবিভাজন এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সোজা বাংলায়, 'ইংলিশে ফুটানি মারা' যাকে বলে আর কি!

সে আপুর কাছে আমার প্রশ্ন ছিল, তুমি কোন ধরণের মিশ্রণকারীদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চাও? কোড সুইচিং এর বেলায় এটা ফিজিবল হবে না, কারণ ওদের জন্য একটা ভাষা শুদ্ধ করে বলাটা কঠিন (এই যেমন ফিজিবল শব্দটার উপযুক্ত বাংলা খুঁজে বের করতে হলে আমাকে দুই মিনিট চিন্তা করতে হত।) আর ডাইগ্লসিয়ার মূল কারণ হচ্ছে উপরে যেটা বললাম, মিডিয়াতে প্রমিত ভাষাকে মানসম্পন্ন বা গর্ব করার মত বস্তু বলে প্রচার করা হয়না। পশ্চিম বাংলার লোকজন আমাদের ভাষাকে বলে 'বাঙাল ভাষা।' এর মধ্যে একটা তাচ্ছিল্যের প্রকাশ আছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বাংলার শুদ্ধরূপ নিয়ে একটা গর্ব আছে। আমাদের ত নেই!

মোটকথা, আমি জানতে চাইছি, সে ব্লগার তার ইনিশিয়েটিভ নিয়ে এগিয়ে যাবে কি না, এগোলে আদৌ কোন লাভ হবে কি না, আর উদ্দেশ্যটা যেহেতু ভাল, একই পরিমাণ চেষ্টা ও সময়ে এর চেয়েও ভাল কিছু করা যায় কিনা (ভাষার জন্য।) আমি আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় আছি। সে ব্লগারের উদ্দেশ্যকে আমি সম্পূর্ণ সাধুবাদ দেই। তার চেষ্টা যেন সত্যিকারের ভাল পরিবর্তন আনতে পারে - সে আশায় আপনাদের মতামত আশা করছি। তারপর আবার ওকে জানাব। আশা করছি সচলে আলোচনা করে কিছু একটা ভাল আইডিয়া বের হয়ে আসবে। (আচ্ছা, আইডিয়ার বাংলা কী?)


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

আমরা ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের ছড়া পড়ে বড় হয়েছি। এর পরে এতদিনে একটা শিশুদের লেখক/ ছড়াকার তৈরি হয়েছে?

অনেকেই আছেন তো! যেমন, রিটন ভাই।

আর পশ্চিমবঙ্গের ওরা কি বললো না বললো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। যার যার ভাষা তার তার কাছে।

*
আইন করে ভাষার বিবর্তন আটকানো যায় না। যে ভাষার যে রূপে যত সুন্দর, গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, লেখা হয়, যে রূপে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করা হয় সে রূপটাই প্রমিত হিসাবে টিকে থাকে। আর মুখের ভাষা স্বাভাবিক ভাবেই ঐ প্রমিত রূপের থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়।

ফারুকীর (উদাহরণ হিসাবে বললাম) নাটকের ভাষা আপনার পছন্দ না হলে বাধা দেওয়া বা আইন করে তাকে থামানোটা হবে বর্বরতা। আপনি বা আপনার সমমনারা স্রেফ আপনার পছন্দসই ভাষায় আরো সুন্দর নাটক বানাতে পারেন। মানুষই বেছে নেবে সে কোনটা চায়। সেই ভাষাই প্রমিত হিসাবে টিকবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, ভাল লাগল। আপনি তাহলে বলছেন বিশুদ্ধতা রক্ষায় নতুন নতুন লেখক তৈরি করাটাই হবে বেস্ট উপায়? সচল যেমন করছে?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি


স্পর্শ দা সব বলে দিলেন।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

স্পর্শের সাথে একমত। তবে অনেক সময় জোর করে ভাষার দিক ঘোরানোর চেষ্টাও দেখা যায়। সেটাও একটা হাস্যকর প্রচেষ্টা হয়ে যায়। একবার এক ব্লগার স্বরবর্ণটাই তুলে দেবার প্রস্তাব করেছিলেন। আরবীর যেমন নুকতার প্রচলন উঠে যাচ্ছে অনেকটা সেরকম। এরকম জোর করে "আধুনিকীকরণ" কিংবা "পরিবর্তনের" প্রচেষ্টাটা হাস‌্যকর। সংক্ষেপে, আমি ভাষার বিবর্তনের পক্ষে কিন্তু আরোপিত পরিবর্তনের বিপক্ষে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবও পাবেন, উর্দুর মত।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব বহু আগেই এই বাংলায় পেশ হয়েছে। এটা নতুন কিছু না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যতদুর জানি আদি আরবীতে নুকতার প্রচলন ছিল না। আরব মুসলমানরা যখন আরবের বাইরে রাজ্য বিস্তার করে তখন নও-মুসলিমদের কোরআন পড়ার সুবিধার জন্য "জের", "যবর", "পেশ" ইত্যাদি নুকতার প্রচলন হয়। মেমোরী (ঋ-ফলা দিতে পারছি না) থেকে বললাম। কেউ কি একটু কনফামর্ করবেন?

- কাজী

কাজি মামুন এর ছবি

এরকম জোর করে "আধুনিকীকরণ" কিংবা "পরিবর্তনের" প্রচেষ্টাটা হাস‌্যকর। সংক্ষেপে, আমি ভাষার বিবর্তনের পক্ষে কিন্তু আরোপিত পরিবর্তনের বিপক্ষে।

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক সহমত!

নির্ঝর অলয়

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ভাষা বহতা নদীর মত। তাকে বাঁধ দেবার চেষ্টা না করাই শ্রেয়। আর চেষ্টা করলেও তা আটকানো যায় না। ১৮৩৫ সালের আগে বানান একরকম ছিলো, এখন আমরা অন্যরকম লিখি, সামনে আরো পরিবর্তন আশবে। আসতেই থাকবে। যতি চিহ্নগুলো আগে ছিল না, এখন আছে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

তাই বলছেন? মিশ্রণ তাহলে আপনাদের ভাবায় না? কিন্তু সচলে ত বেশ সুন্দর ভাষা দেখি। এটা কি স্বতঃস্ফূর্ত? আমার ত একটু আরোপিত মনে হয়েছে।

স্পর্শ এর ছবি

প্রিয় লেখক, আপনি আপনার মন্তব্য এবং লেখার নিচে নিজের (বা অন্তত পক্ষে কোনো কলমনাম) যুক্ত করুন। এতে বোঝা যাবে একই ব্যক্তি প্রশ্নগুলো করছে কি না। আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এতে সুবিধা হয়।

আর সচলের ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা। এটাকে আরোপিত মনে হলে আপনি আপনার পছন্দ সই ভাষাতে লিখবেন। এখানে সেটা কেউ গ্রহন না করলে অন্য কোথাও গিয়ে লিখবেন! আর, কেউ কোনো আঞ্চলিক ভাষায় কিছু লিখলে এখানে নিশ্চয়ই তাকে গালি দেয় না!! সবুজ বাঘ বা মুখফোঁড়ের লেখা পড়লে দেখবেন তারা কি চমৎকার একটা ভিন্নতর ভাষা ভঙ্গিতে লিখছে সচলেই।

তাই বলে চুদুর বুদুর চৈলত ন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝলাম। ধন্যবাদ। (লেখকের নাম নুসরাত, এরপর থেকে নাম সংযোজন করব।)

শুভায়ন এর ছবি

ভাষা নিয়ে আমার ধরনা খুবই ভাসা ভাসা - তবুও বলতে ইচ্ছে হয় - যে মুখের ভাষা আর লেখার ভাষা তো এক নয় - প্রত্যেক ২০ কিলোমিটার পর পর মুখের ভাষা যেখানে পরিবর্তিত হয়ে যায় - সেখানে কি করে আমরা বাংলা ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে কথা বার্তা চালাই? এগুলি সুনীল বাবুর মত কিছু তালপাতার সেপাইদের জঙ্গিপনা ছাড়া আর কিছু না! ছোটবেলায় কোচবিহার জেলায় ছিলুম - সেখানে ইস্কুল (পাঠশালা) তে শেখানো হত

"ব" এ হ্রস্বীকার "ড়" এ আ'কার "ল" = মেগুটা (বিড়াল নয়)

পূব বঙ্গীয় লোকেরা তবু শুনেছি - টেবিল / পকেট - এই সব বিদেশী শব্দাবলীর দেশজ বিকল্প ব্যবহার করে থাকেন - যদিও সেগুলও - বিদেশী - তবে কম - এশীয় বলা চলে - তবে এদেশীয় বা স্থানীয় নয় ! আমাদের একটি ব্যাপার অনুভব করা উচিত - যে সব কিছুর "বাংলা" হয় না - ব্লু লেবেল এর যেমন হয় না - সেরকম-ই কিছু শব্দ - দেশ / স্থান / কাল / পাত্র নির্ভর - সেগুলির অনুবাদ অসম্ভব - ভাবানুবাদ তবু চলতে পারে - তাও অতি সাবধানে - ইংরিজি সেকুলার কথার অর্থ বাংলায় করা যেত - পার্থিব বা অনৈশ্বরিক - হয়েছে - ধর্ম-নিরপেক্ষ - আমরা নাকের বদলে পেলুম নরুণ - ফলত: এই ভাষাতাত্ত্বিক কট্টরতা - আমি ব্যক্তি গত ভাবে অপছন্দ করি - ইংরিজি তে নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি বললে - সবাই যখন বোঝেন - তখন রিক্সাওলা কে উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বলে ঘাবড়ে দেবার কোনো মানেই হয় না!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ব-ইস্বারে বি; ড়এ-আকারে ড়া; ল= মেকুর...। পয়কারে পে; পয়কারে পে= কফল
[সিলেটি পদ্ধতির বাংলা শিক্ষা। ছোটবেলা আমি শিখেছি]

শুভায়ন এর ছবি

মেকুর কথাটা খুব চেনা ঠেকলো - সম্ভবতঃ এটা রংপুরি ভাষাতেও রয়েছে - মেকুরে হুরুম খায়া হুক্কা করছে - কথাটা কচিবেলায় শুনেছি বটে! মনে করিয়ে দেবার জন্য - ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় যেটা সাধারন মানুষ গ্রহন করবে, তাকে আটকে রাখা যায় না, আবার তাকে জোর করে প্রচলনও করা যায় না। মানুষের জন্যই ভাষা, ভাষার জন্য মানুষ না। তাই সময়ের সাথে সাথে ভাষার পরিবর্তনও স্বাভাবিক। ক্লাস নাইনে বিদ‌্যাসাগরের "সমভিব্যাহারে" নিয়ে কত আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি তার লেখাজোকা নেই। সেবা প্রকাশনী তো দূর্গেশনন্দিনীর বাংলা অনুবাদ(!) দিয়েই কিশোর ক্লাসিক সিরিজ শুরু করেছিল! বাংলা ভাষায় লেখালেখি যে ধাঁচে শুরু হয়েছিল, তা থেকে তো এখন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে - কিন্তু পরিবর্তনটা হয়েছে "সময়ের প্রয়োজনে"। এবং অনেক পরিবর্তনের মধ্যে টিকে গেছে সেগুলোই যেগুলো আপামর জনসাধারণ গ্রহন করেছে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

-অয়ন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি যদি লিখি - "আমাড় বারী ফেনি", তাহলে সেটা ভুল হবে। কারণ আমি এখানে তিনটা শব্দেরই বানান ভুল লিখেছি। কিন্তু আমি যদি লিখি - "আঁর বাড়ি হেনী", তাহলে সেটা ভুল হবে না। কারণ এখানে আমি ফেণী অঞ্চলের ডায়ালেক্টটা যতদূর সম্ভব ঠিক করে লেখার চেষ্টা করেছি। এখন, আমি ফেণীর ডায়ালেক্ট-এ কথা বললে বা লিখলে কোন এলাকার বাবুরা যদি হাসাহাসি করে সেটা কি আমার গায়ে মাখার মতো কোন ব্যাপার হবে? নিঃসন্দেহে না।

ভাষার প্রমিতরূপ কোনটি সেটা ঠিক করার ইজারা কাউকে দেয়া হয়নি। ভাষা কি আসমানী কিতাব যে তার পরিবর্তন করা যাবে না? ভাষা মানুষের জীবনের মতোই স্বতঃগতিশীল। এভাবে দিনে দিনে ক্রিয়াপদের রূপ পরিবর্তন হয়েছে, নতুন নতুন প্রতিশব্দ তৈরি হয়েছে, নতুন নতুন বাগধারা-বাক্যসংকোচন-সন্ধি-সমস্তপদ তৈরি হয়েছে। এই সত্য না জেনে যারা হাসাহাসি করে তারা নিতান্তই মুর্খ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাষার ক্ষেত্রে শুদ্ধতা শব্দটার বিষয়ে আমার আপত্তি আছে। এই শব্দটা ব্যবহার শুরু হয়েছিল আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণির ভাষা/চাষার ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য
আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে অশুদ্ধ ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যই এই 'শুদ্ধভাষা' কথাটার প্রচলন; যা একসময় (এবং এখনো) অধ্যাপক আর মিডিয়ামোগলদের বর্ণবাদী হাতে ব্যবহৃত হয়েছে...

০২

শুদ্ধভাষা শব্দটা একটা বর্ণবাদী শব্দ...

০৩

পশ্চিম বাংলায় একেবারে হাল আমলের লেখকরাও যেখানে প্রমিত বাংলাকে অবলম্বন করে লিখছেন, নাটকগুলোতে শুদ্ধ বাংলায় কথা হচ্ছে, এখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান নিয়ে গীতিনাট্য হয়

বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলার বাংলা; দুটো কিন্তু দুই ধারায় এগোচ্ছে... দুটোকে এখন আর এক গতিতে আনা সম্ভব না; ধীরে ধীরে দুটো আলাদা হয়ে যাচ্ছে (কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনই অনুবাদ প্রয়োজন হয়)

পশ্চিম বাংলার বাংলা নতুন বাংলা শব্দের সংকটে আছে কিংবা তৈরি হচ্ছে না অন্যান্য ভাষার প্রভাবে। দৈনিন্দিন যোগাযোগেও বাংলার ব্যবহার খুবই কম। ফলে তাদেরকে পেছন থেকেই নতুন সাহিত্যের ভাষা নিতে হয় প্রায় সময়...

০৪

রবীন্দ্রনাথের ভাষা এখনো সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ঠিক আছে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের ভাষার জন্য রবীন্দ্রনাথের বাংলা কিন্তু এখন বেশ পুরোনো এবং অচল...

০৫

আমরা ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের ছড়া পড়ে বড় হয়েছি। এর পরে এতদিনে একটা শিশুদের লেখক/ ছড়াকার তৈরি হয়েছে?

হ। সুযোগের অভাবে চরিত্রবান। আপনার ছোটবেলা কি সুকুমারের বইয়ের বাইরে টিভির কার্টুন দেখার সুযোগ ছিল? থাকলে বুঝতাম দরত কত

সুকুমারের অনেক ছড়ার কনটেক্সটই কিন্তু এখন অপরিচিত হয়ে গেছে... ওগুলো থেকে মজা নিতে গেলে কিন্তু প্রাচীন সমাজ আর বিষয়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দরকার এখন...

০৬

কোড সুইচিং এর মাধ্যমেই কিন্তু ধীরে ধীরে একটা ভাষায় ভিন্নভাষী শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়

০৭

ভাষাকে ফিরিয়ে আনাটানা কিন্তু একটা বাজে ধারণা... ওটাকে চলতে দেয়াই ভালো... চলতে চলতে হয় থাকবে না হয় বদলাবে না হয় একেবারে নাই হয়ে যাবে... হাজার দেড়েক বছর আগে বাংলা ভাষা ছিল না কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ ছিল... তারা যে ভাষায় কথা বলত সে ভাষায় এখন আর বাংলাদেশের কোনো মানুষ কথা বলে না... সুতরাং চলুক....

দিফিও এর ছবি

চলুক চলুক
আর সুকুমার রায়ের পর্যায়ের লেখক যে সবসময় আসবেন এমনো কোনো কথা নেই, তবে শিশু-সাহিত্যিক আমাদের দেশে আছেন , যেমন স্পর্শ বললেন লুৎফর রহমান রিটনের কথা। আর ভারত-বাংলাতেও কিন্তু সুকুমারের পর্যায়ের লেখক আর আসেননি।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

এভাবে ভাবিনি ত আগে! চমৎকার বলেছেন। (লেখক)

ক্রেসিডা এর ছবি

লীলেন ভাই@ কোড সুইচিং এর ব্যাপারে একটু ব্যাখ্যা দিলে ভালো হতো; জানতে ইচ্ছুক।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মারিচ্চে। ব্যাখ্যা দিতে হবে শুনলে তো এই কথা বলতাম না। গুগলে গুতা মারলেই কিন্তু পুরা সংজ্ঞা (শুদ্ধসংজ্ঞা!) পাওয়া যাবে...

আর সোজা সাপটা বিষয় হলো কথা বলতে বলতে কোনো কিছু বোঝানোর জন্য যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে সে ভাষার কোনো একটি/আংশি প্রতিশব্দ/বাক্য বক্তব্য প্রকাশের জন্য যথেষ্ট উপযোগী মনে না করলে অন্য ভাষা থেকে বাক্য বা শব্দ বা ফ্রেজ ঢুকিয়ে দেয়া/ ব্যবহার করাই হলো পন্ডিতদের ভাষায় কোড সুইচিং

এইটা করতে করতেই 'গ্র্যান্ড এরিয়া' বদলাতে বদলাতে বাংলায় 'গেন্ডারিয়া' হয়ে যায়....

অতিথি লেখক এর ছবি

'গ্র্যান্ড এরিয়া' বদলাতে বদলাতে বাংলায় 'গেন্ডারিয়া' হয়ে যায়.... হো হো হো

(লেখক)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুল্লি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সহমত!

শুভায়ন এর ছবি

এক্কেরে ঠিক কথা!

ব্রুনো এর ছবি

চলুক অত্যন্ত চকৎকার কমেন্ট, লীলেন দা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আজ থেকে ১০০-১৫০ বছর আগের কিছু বাংলাভাষী লোকজন হয়তো একী চিন্তা করেছিল। ঐ সময়কার বই বেশী পড়িনি, কিন্তু ভাষা যে অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেটা বোঝা যায় সহজেই। পরিবর্তন হবেই, এটাতে আঁতকানোর কিছু নেই, আটকানোরও কিছু নেই।

ডিমপোচ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

স্বয়ং বাংলা ভাষারই উদ্ভব হয়েছে ভাষার তথাকথিত বিচ্যুতির পথ ধরে- সংস্কৃত>প্রাকৃত>মাগধী প্রকৃত>অপভ্রংশ>গৌড়ীয় অপভ্রংশ>বাঙ্গালা>বাংলা। ভাষার প্রমিতকরন এবং তা বজায় রাখা আগেও সম্ভব হয় নি, এখন আরও সম্ভব নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সময়ের সাথে সাথে ভাষা পরিবর্তিত হবে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা । আর এ পরিবর্তনের জোয়ার একটা নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত হবে । আমাদের বাংলা ভাষার পরিবর্তন প্রধানত ইংরেজিমুখি । এর কারন আমরা নিজেরাই । আমরাই এ পরিবর্তন ডেকে এনেছি । অনেক আগে থেকেই ইংরেজি বলাটাকে এদেশে একধরনের বিশেষ আভিজাত্য হিসেবে বিবেচনা করা হত । অভিজাত হতে চাওয়াটা তো আর দোষের না, তাই না ? তাই এদেশের নব্য শিক্ষিত অভিজাত মহোদয়গন বাংলা-ইংরেজির মিশ্রনে এক অতি সুস্বাদু রেসিপির প্রচলন করেছিলেন যা আজ বাঙ্গালির রান্নাঘর থেকে রাজপথ পর্যন্ত, সর্বত্রই ব্যাপক জনপ্রিয়তার সাথে ব্যাবহৃত হচ্ছে । এই রেসিপিদুষ্ট নয় এমন লোক খুজে পাওয়া মুশকিল । তারপরও আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা মৌলিকতা বজায় রাখা যায় । আর পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাভাষার শুদ্ধিস্থল মনে করে যারা তারা মূলত সুনিল-সমরেশের অন্ধ ভক্ত ছাড়া আর কিছুই না । যারা শুধুমাত্র নিজেদেরকেই সাহিত্যের প্রভু ভাবে তাদের কাছ থেকে ভাষার সার্টিফিকেট না নিলেও চলবে ।

oparazita99@gmail.com

আয়েশা আখতার এর ছবি

ভাষার যেমন নিজস্ব গতি তেমনি তার বিভিন্ন রূপও আছে। অঞ্চলভেদে তার রূপের পরিবর্তন হয়। তার প্রতিটি আঞ্চলিক রূপই আমাদের সম্পদ। তথাপি সবার বোধগম্য ভাষা হিসেবে পৃথিবীর প্রায় সব আধুনিক ভাষারই মানভাষারূপ আছে, যে ভাষা একাডেমিক শিক্ষার মাধ্যম হবে, হবে প্রশাসনের ভাষা। আমরা ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের সময় ঠিকই মান ইংরেজি বলার এবং লেখার চেষ্টা করি। তবে আমাদের নিজের ভাষার ক্ষেত্রে কেন যত্নবান হব না.। সাহিত্যের ভাষা কী হবে, সেটা সাহিত্যক নির্ধারণের স্বাধীনতা রাখেন। আমরা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতায় আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার দেখেছি, কারো কোনো আপত্তিতো শুনিনি। তবে এখন বাংলা ভাষা নিয়ে এত আশঙ্কা উৎকণ্ঠা কেন? কারণ মিডিয়াতে প্রায়শই যে বাংলা ভাষার ব্যবহার দেখছি তা না আঞ্চলিক ভাষা না মানভাষা। এ অবস্থায় কার ক্ষতি হবে বেশি? আমাদেরই। কারণ পরবর্তী প্রজন্মকে এভাবে বিভ্রান্ত করা হবে। তারা ঠিক কী শিখবে?

তাপস শর্মা এর ছবি

এক কথাতেই শেষ - ভাষা পরিবর্তনশীল ভাষার পরিবর্তন হবে। এখানে আঞ্চলিক আর প্রমিত উভয়ের ক্ষেত্রেই একই কথা বলা যায়। এইবার কথা হল ভাষার ক্ষেত্রে 'শুদ্ধ' বলে কি কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যখ্যা দেওয়া যায়? মনে হয় তো যায় না

০২

আমি আমার মুখের ভাষা কিংবা প্রমিত কিংবা অধুনা বাংলিশ এবং আরও হাজারো ভাষা বিধান বা পদ্ধতিতে আমার প্রকাশ ঘটাব। এটা আমার অধিকার। যে নেবে তো নেবে আর যে নেবে না সেটা তার ব্যাপার। কারো উপর ভাষার বৈষয়িক রূপরেখা চাপিয়ে দেওয়াটাও নির্যাতন/সন্ত্রাস/মৌলবাদ এর আওতায় আসে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শুধু ভাষা কেন? ভাষা বদলাবে, কালচার বদলাবে, সেই কালচার যারা ধারণ করে তারাও তো বদলায়। শুধু বদলানোর টাইমফ্রেমটা ভিন্ন। ইভোল্যুশান/বিবর্তন একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে আবেগী হওয়ার কোন সুযোগ নাই। মিলিয়ন বছর পরে 'হোমো স্যাপিয়েন্স' নামে পৃথিবীতে কিছু থাকবে না হয়ত। 'হোমো ডিফারেন্টকিছু' আসবে, কিন্তু সেটাকে 'হোমো সুপিরিয়র' বা 'হোমো ইনফেরিয়র' হিসাবে চিহ্নিত করারও কোন যৌক্তিকতা নেই। ভাষার ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। ভাষা বদলাবে, আমাদের এখনকার যে ভাষা সেটাও বিবর্তনের মাধ্যমেই এসেছে। ভাষা নিয়ে অতিরিক্ত 'ফান্ডামেন্টালিজম' আমার কাছে 'রিলিজিয়াস' লাগে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মন মাঝি এর ছবি

আমার প্রিয় একটা বিষয়ে চমৎকার আলোচনা। ভাষা বিষয়ে আমাদের প্রথাগত রক্ষণশীল ঘরাণার মোলায়েম ও ইষৎ আধুনিকতর সংস্করণের একটা চমৎকার নমুনা মনে হয়েছে আপনার লেখা। আর পাঠকের মন্তব্য চেয়েছিলেন, সেগুলিও পেয়েছেন অকৃপন ও জবরদস্ত ভাবে! প্রায় সবগুলি মন্তব্যই দুর্দান্ত হয়েছে। আমার বিশেষ করে সচল স্পর্শ, ষষ্ঠ পাণ্ডব আর তাপস শর্মার মন্তব্য সবচেয়ে ভাল লেগেছে। আর মাহবুব লীলেনেরটা তো এক কথায় সেরা! আমিও আমার মতামত দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এরা বলার কিছু বাকি রাখেননি - যা বলার সবই বলে দিয়েছেন অনেক ভাল ও চমৎকার ভাবে।

****************************************

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

দক্ষতা, যোগ্যতা ও শিল্পবোধের বিচারে স্বর্ণকার আর কর্মকারের কাজে প্রভেদ অনেক। স্বর্ণকারের সুক্ষ্ম নকশার কাজের বিচার্য উৎকর্ষতা, কর্মকারের মোটা দাগের কাজের বিচার্য প্রয়োজনীয়তা। বিচারের মাপকাঠিটি ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্নরূপ হতেই হবে।

যামিনী রায় কিম্বা কামরুল হাসানের চিত্রকলা যুগপৎ আধুনিক ও লোকজ। সেখানে এই সময়ের চেতনাকে স্বচ্ছন্দ খুঁজে পাই। ভাষার বহতা নদীতে আঞ্চলিক শব্দরাজি তবে পালতোলা রঙ্গিন বাদামের মতো তরতরিয়ে চলতে পারবে না কেন?

আসল কথা হলো, মাঝিটি কতটা দক্ষ। একজন গুণী কবি কিম্বা সাহিত্যিক আঞ্চলিক শব্দরাজির আত্মীকরণের মধ্যদিয়ে ভাষার মর্মমূলে শক্তিসঞ্চার ঘটান।

আদালতের ভাষা বিকৃতি রোধের প্রয়াসটি সম্ভবত অধুনার এফ এম রেডিও চ্যানেলের সাথে সম্পর্কিত। অডিও কিম্বা ভিডিও, আমাদের এখন অনেক চ্যানেল। অনেক চ্যানেল, তাই অনেক ক্ষুধা। সেসব ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে খাদ্য ছাপিয়ে অখাদ্য-আবর্জনাও ভক্ষণ করতে হচ্ছে। আবর্জনা ভক্ষণ কি সুস্বাস্থের জন্য মঙ্গলপ্রদ?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কথাটা ভাল লাগল। (লেখক)

আবরার  এর ছবি

সেসব ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে খাদ্য ছাপিয়ে অখাদ্য-আবর্জনাও ভক্ষণ করতে হচ্ছে। আবর্জনা ভক্ষণ কি সুস্বাস্থের জন্য মঙ্গলপ্রদ? //

আবর্জনা সুস্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গলপ্রদ কী না তার চাইতে বিবেচ্য যে খাচ্ছে সে খেতে ইচ্ছুক কী না। একটা সমাজের বা রাষ্ট্রের অধিকাংশ লোক স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে আবর্জনা খাওয়া শুরু করে তাহলে ধরে নিতে হবে আবর্জনাই হবে সেই জনপদের ভবিষ্যৎ খাদ্য। আমি মনে করি সবকিছুর স্বাধীনতা থাকা উচিত, একই সাথে ধ্রুপদী বাঙলা ভাষায় সাহিত্য রচিত হোক যদি কারও ইচ্ছা থাকে এবং যুগপৎ অখাদ্য ডিজ্যুসীয় ভাষায় সাহিত্য শিল্প চর্চিত হোক যদি কেউ চায়, অধিকাংশ মানুষ যেটাকে গ্রহণ করবে সেটাই টিকে থাকবে বাকিটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে এখানে "নাজ" বা বাইরে থেকে কোনও ফোর্স এপ্লাই করা হচ্ছে কী না সেটা নিয়ে। যেমন ডিজ্যুসীয়-ফারুকীয় ভাষার প্রচলনে বা প্রসারের পেছনে কর্পোরেটদের হাত ছিলো। কিন্তু মনে রাখতে হবে কালচার-ভাষা-সঙ্গীতে সবসময়ই কোনও না কোনওভাবে বাইরে থেকে বল আরোপিত হয়েছে (অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশী শাসকদের দ্বারা)। সময়ের প্রবাহে ভাষার পরিমার্জন বা পরিবর্তন কিন্তু একমুখী ছিলো না, বহুমূখী ছিলো কিন্তু তার ভেতর অনেকগুলোই এখন আর পাওয়া যায় না কারণ তৎকালীন মানুষ সেসব গ্রহণ করেনি। গ্রহণ করেছে সেই ধারাটা যেটা দিয়ে এখন আমরা বলছি।

বুনো পথিক এর ছবি

ভাষা পরিবর্তনশীল।ভাষা পরিবর্তিত হতে থাকবে।

শিশিরকণা এর ছবি

সুকুমারের পর বাংলাদেশে রিটন ভাই* এসেছেন ছড়াকার হিসেবে, তাও তো ১৫-২০ বছর আগের কথা, এরপর কি নতুন কোন ছড়াকার এসেছেন সেইরকম ছন্দ নিয়ে, জানতে চাই, পড়তে চাই, কারণ আমার চোখে পড়েনি এই পর্যন্ত।

* রিটন ভাই ডাকতে আটকে গেল, কারণ, ছোটবেলায় রিটন আঙ্কেল সম্বোধন করে টইটম্বুরে লেখা পাঠিয়েছি, কিন্তু এখন সেটা বললে যদি চিরতরুণ রিটনকে বুড়ো ট্যাগ করা হয়ে যায়, ...

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সজল এর ছবি

সুকুমার রায়ের পরে আর সেরকম ছড়াকার আসে নাই? আফসোস, প্রচারবিমুখ বলে আমার ছড়াগুলা প্রকাশই করলাম না।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব খারাপ করেছেন।

(লেখক)

উচ্ছলা এর ছবি

আপনার চমৎকার পোস্ট আরও চমৎকার এবং প্রয়োজনীয় একটি আলোচনার সূত্রপাত করল। ধন্যবাদ নিন।

সাবেকা  এর ছবি

মন্তব্যগুলো দারুন হয়েছে, অনেক কিছু শেখার আছে এ থেকে । সব কিছু মিলিয়ে ভাল লাগল আলোচনাটি ।

নিলয় নন্দী এর ছবি

হাততালি
লেখাটা ভাল লাগল।
আরো ভাল লাগল লেখক সমর্থনযোগ্য মন্তব্যগুলোকে নির্দ্বিধায় সমর্থন করছেন দেখে।

সুকুমার রায়ের সমকক্ষ আর কাউকে পাওয়া যাবে না, ঠিক আছে।
কিন্তু এই বাংলায় সুকুমার বড়ুয়ার নাম অনুল্লেখিত থেকে গেল দেখে দুঃখ পেলাম।

নুসরাত  এর ছবি

ধন্যবাদ! গায়ে লাগালে শিখব কী করে? নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছে থাকলে গায়ে একটু লাগত বৈকি।

সুকুমার বড়ুয়া!! হ্যা... পড়েছিলাম ত ছড়া। শ্রদ্ধা

পথিক পরাণ এর ছবি

লীলেন দার মন্তব্যটা ভালো লাগলো।

শুদ্ধ ভাষা- এই তকমাটায় আমার আপত্তি আছে। আমরা পত্রিকায় যে ভাষাটি পড়ে থাকি- দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা তা নয়। এইরকম কেতাবি ভাষায় কথা না বলা বা বলতে না পারাকে অপরাধ ধরলে দেশের অনেকেই মনে হয় শাস্তি পাবে। একজন সিলেটী কিংবা চট্টগ্রামের অথবা রংপুরের মানুষ তাঁর নিজ এলাকার আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলতে চাইবে সবসময়- এইটিই স্বাভাবিক এবং সুন্দর।

একটা বিষয়। আজকে আমরা রবীন্দ্রনাথের ভাষাকে (আসলে প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্র- ১৯১৪ পত্রিকার ভাষা) প্রমিত সাহিত্যের ভাষা হিসেবে মর্যাদা দিচ্ছি। অথচ দেখুন- চলিত ভাষায় সবুজপত্র প্রকাশের শুরুতে অন্য সাহিত্যিকগণ এই ভাষারীতিকে তীব্র আক্রমণ করেছিল। আমি আসলে বলতে চাচ্ছি আজকের বহুল ব্যবহৃত রাবিন্দ্রিক ভাষাটিও মাত্র একশ বছর আগে অপ্রচলিত ছিল। এই ভাষাটিকেও অনেক সমালোচনা পেরিয়ে সাহিত্য সভায় আসন জুটাতে হয়েছে।

কে জানে- হয়তো আজকে যে ধরণের ভাষা/ শব্দকে আমরা অসুন্দর বলছি- তাই হয়ত একসময় প্রতিষ্ঠিত হবে সুন্দর আর শুদ্ধ হিসেবে!

পরমাণুঅণুজীব এর ছবি

ভাষা বিবর্তিত হবেই- সময়ের সাথে, পরিস্থিতির সাথে, এলাকার সাথে। এটা আমরা কেউই বন্ধ করতে পারবোনা।
কিন্তু সেই সাথে এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে স্বাভাবিক বিবর্তন আর বিকৃতি এক না। স্বাভাবিক বিবর্তন আমরা বেশীর ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষার মধ্যেই দেখতে পাই।
বিকৃতি দেখার জন্য পাশের দেশের ভাষা হিন্দি দেখলেই হবে ! যে যত বেশী ইংলিশ শব্দ জোর পূর্বক প্রবিষ্ট করাতে পারবে সে তত বেশী স্মার্ট হিসাবে উপবিষ্ট হবে ! যে কোন অনুষ্ঠানে তাদের বলিউডি মহাতারকাদের দেখা যায় এই বিচিত্র ভাষাতে কথা বলতে।
ভারতের মত বিশাল দেশে সেতু হিসাবে হিংলিশ চলতেই পারে। কিন্তু তাই বলে নিজেদের নিজের বাসার শয়নকক্ষে- বারান্দায় নিজের পরিবারের সাথে তো না !
অন্যের থেকে ধার নিয়ে তা পরিমার্জন - পরিবর্ধন করাটাই শালীনতা। রবি বাবু বিদেশী সুর এনে সংস্থাপন করেছেন এমনভাবে, ওটা তো একদম নিজের জিনিস বলে মনে হয়, তাই ওই গানগুলো আমাদের এখন। এই দেশের ৮০-৯০ এর দশকের ব্যান্ডের গানগুলোর কথাই বলা যাক। বিদেশী সুরে নিজের কথা। এখন ওটা আমাদেরই সুর আমাদের মত করে।

কিন্তু অসুরও আছে। বিদেশ ফেরত ( নাকি বিতাড়িত কমু !!) ফুয়াদ বাবাজি অথবা হাবিব রিমিক্স এর নামে যা করছেন - তাতে নিজের হাজারবার শোনা গানগুলোও অপরিচিত ঠেকে !

ভাষাও এমন। পরিবর্তন আসবেই। কেউ বেত হাতে দাড়িয়ে থাকাটা ঠিক না। কিন্তু বাপু ! তাই বলে ব্রেক হারিয়ে বেজায়গায় পরিওনা !

আইডিয়ার বাংলা আপনি করতে পারবেন বাক্যের সুর বুজে। যেমন আপনার এই বাক্যে - "আশা করছি সচলে আলোচনা করে কিছু একটা ভাল আইডিয়া ( উপায়) বের হয়ে আসবে"।

আবার আপনি ধরেন ল্যাবের কাজ ফাঁকি দিয়ে ছুটি চান (আমার মত!!) তখন সহকর্মীকে বললেন - আমার তো সামনের সপ্তাহে ৩ দিন টানা ছুটি লাগবে ! কি করে ছুটি ম্যানেজ করব একটা আইডিয়া ( বুদ্ধি অথবা কুবুদ্ধি !! ) দেন !!

নুসরাত  এর ছবি

মনে হয় বেশির ভাগ সময় আইডিয়ার বাংলা কুবুদ্ধিই হবে আমার জন‌্য হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধাড়ন লেখা, দাড়ুন জোস লাগ্ল।
আবাড় জিগস!! নুদড়াত, কিবড়িয়াদেড় ভীশষণ মাইন্ডব্লোয়িং লাগবে!

আচ্ছা, এই বিষয়গুলোর মত বিটকেল আমদানীগুলো কেমন? গণমানুষের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে সংযোগহীন এই সংকর বস্তুগুলো এমনিতেই হারিয়ে যাবে। এগুলো কোডসুইচিং না, মূর্খতা! (নাকি 'মূড়খতা? চিন্তিত ) ব্যাঙ্কে কমসে কম ৫ কোটি টাকা না থাকলে এই ভাষা উৎপাদন হয় না। যেহেতু ওটা বেশি লোকের নেই তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ দেখিনা। ভাষার বিবর্তন সাধারণ নিয়মেই হবে, ঠিক যেমন লুইপা থেকে রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর থেকে সুনীল। এ নিয়ে আইন করা বাড়াবাড়ি যদিও ভাষা আন্দোলনের আবেগের কথা চিন্তা করলে আমাদের পূর্বজদের এই গোঁড়ামির একটা জাস্টিফিকেশন করা যায়।

বাংলা ভাষার কোন বিবর্তনই কিন্তু ভুঁইফোঁড় নয়। সংস্কৃতির রাজ্যে ভুঁইফোঁড়দের কোন স্থান নেই।
সুকুমার রায়ের পর অনেকেই ভালো ছড়া লিখেছেন। সুকুমার রায় অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান ছিলেন। আর তাঁর প্রতিভাবান পুত্রের মতে "প্রতিভা সর্বকালে সর্বদেশে বিরল।"

আমি বিদেশি শব্দের আত্মীকরণের পক্ষে, কিন্তু ব্যাকরণ ও উচ্চারণগত ভুলকে কোনভাবেই সমর্থন(নাকি লাইক? চোখ টিপি ) করি না।

নির্ঝর অলয়

Sangit Kumar Mandal এর ছবি

আমার মতে পূর্ববঙ্গের ভাষা (বাঙাল ভাষা) খুবই শ্রুতিমধুর এবং এই ভাষায় একে অন্যের সহিত ভাব আদান প্রদান যত সহজে এবং দ্রুত করা যায় তা পশ্চিমবঙ্গীয় ভাষায় করতে গেলে বেশ কয়েকবার ঠোক্কর খেতে হয়! পশ্চিমবঙ্গীয় লোকেরা অনেক ক্ষেত্রে বাংলার বিকৃত উচ্চারণ করেন, উদাহরণ স্বরূপ - লেবু কে নেবু - আম কে আব - প্রভৃতি! এখানকার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকায় 'র' উচ্চারণ 'অ' হয় | স্থানীয় লোকজন দ্বারা অভিনীত একটি যাত্রা পালার সংলাপ নিম্নরূপ

প্রকৃত উচ্চারণ - রাণী : রাজা রাজা তোমার কপালে এত রক্ত কেন?
রাজা: রক্ত নয় রক্ত নয় রাণী, আমি রং মেখেছি |

অভিনেতাচ্চারণ : রাণী: আজা আজা তোমার কপালে এত অক্ত কেন ?
রাজা: অক্ত নয় অক্ত নয় আনি, আমি অং মেখেছি |

অনুরূপ ভাবে 'আমরা সবাই রাজা' এই গান টি নিম্নলিখিত ভাবেই গাওয়া হয় ঐখানে -

আমরা সবাই ল্যাজা আমাদেরই ল্যাজার লাজত্বে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।