১.
দরজার কাছে যেতেই মা আবার দৌড়ে আসল। একটু আগেই কিন্তু বিদায় নিয়েছি!
- বাবা, তুই কিন্তু ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবি।
- হুমম।
- প্রতি শনিবার রাতে আমাকে ফোন দিবি।
- আচ্ছা।
- সারা সপ্তাহ কি কি করলি সব বলবি।
- পিঠা গুলো তোর রুমমেটদের দিস।
- তাহলে আমি কী খাব? (মাকে খেপানোর জন্য বললাম)
- ধুর আমি তো বেশি করে দিয়েছি!
- শোন মা! আমার জন্য একদম চিন্তা কোরনা! তোমার ছেলে এখন বড় হয়েছে। গিয়েই নতুন মোবাইল নিয়ে নিব। আর দু'মাসের মধ্যেই তো একবার আসা হবে।
- ঠিক আছে।
- ওমা আবার কাঁদছ!
- আচ্ছা যা বের হ! আর কাঁদব না!
২.
ট্রেনে উঠে দেখি আমাদের আগের বাসার বাড়িওয়ালা চাচা আমার পাশের সিটে!
- আরে তুমি! কোথায় যাচ্ছ?
- স্লামালেকুম চাচা! কেমন আছেন? আমি প্রমগহাট যাচ্ছি!
- ওরে বাবা! প্রমগহাট! নতুন চাকরী-টাকরী নাকি?
- জী চাচা! দোয়া করবেন। গত সপ্তাহে কনফারমেশন পেলাম!
- দোয়া তো করবই! প্রমগহাট বলে কথা! এতদিন শুধু শুনেছি! এবার আমার চেনা-জানার মধ্যে কাউকে পেলাম যে সেখানে যাচ্ছে। গত শুক্রবার তোমার চাচীকে বলছিলাম, তুমি হচ্ছে আমাদের এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছেলে। এখান থেকে কেউ যদি কোনদিন প্রমগহাটে চাকরী পায় তাহলে তুমিই পাবে। দেখলে তো কথা কেমন ফলে গেল!
চাচা'র চোখমুখে অহংকারের ছাপ। ভালই লাগছিল! অনেক লম্বা রাস্তা। ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নেই। কিছু তো করার নেই!
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। চাচার ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভেঙে গেল। লোকটার সমস্যা কী!
- কি ব্যাপার? অনেকক্ষণ ঘুমালে দেখি! ফ্রেশ হয়ে আছ। তোমার চাচী একটা বক্সে কিছু পাতার বড়া করে দিয়েছে। একটু খাও।
না বললে মন খারাপ করতে পারে। উঠতেই হল। আমার একদম খেতে ইচ্ছা করছিল না।
খেতে খেতে দেখলাম চাচা আমার পকেটের দিকে তাকাচ্ছে। এপয়েন্টমেন্টে লেটারটা পকেটে রেখেছি বলে একটু ফুলে আছে। কিন্তু তাকানোর কী আছে! একটু পরে তাকিয়ে বুঝলাম খামের যে অংশটা বেরিয়ে আছে তাতে স্পষ্ট করে 'প্রমগহাট' কথাটা ছাপানো আছে। আমরা যে প্রত্যন্ত এলাকায় থাকি সেখানে প্রমগহাটের কথা কেবল টিভিতে আর কাগজেই দেখি। আমি নিজেও সে জায়গায় থাকতে যাচ্ছি বলে যথেষ্ট উত্তেজিত। কিন্তু চাচা তো দেখি তার চেয়েও বেশি উত্তেজিত!
- বাবা! ওটা কি? এপয়েন্টমেন্ট লেটার? একটু দেখি?
ভালই যন্ত্রণা দেখি! দিলাম চিঠিটা।
- অনেক দামী কাগজ! একটু খুলে দেখি?
চাচার চোখে স্পষ্ট মিনতি। উত্তেজনায় কাঁপছে।
- দেখুন না! অসুবিধা কি?
- বাহ! কোম্পানীর নামটা তো খুব সুন্দর, 'মকরটেক'। নিশ্চয়ই অনেক বড় কোম্পানী!
- সেরকমই শুনেছি।
- ওরে বাবা একেবারে 'সিনিয়র প্রদায়ক'! খুব ভাল, খুব ভাল! তা তোমার যে স্বাস্থ্য, নিশ্চয়ই হবে। আমি তো তোমার চাচী কে বলি, তোমাকে ১০০ জনের মাঝে সবসময় আলাদা করে চিনতে পারা যায়।
চাচার কথাবার্তার লাইন ভাল ঠেকছে না। ওনার ছোট মেয়েটা আমার সমবয়সী! ওই ছাগীটাকে আমার একদম ভাল লাগে না। চাচা এত তেলতেলে ভাষায় কথা বলছে কেন? যাকগে, আবার ঘুম পাচ্ছে। এবার উঠলে চোখ খোলা যাবে না। মটকা মেরে পড়ে থাকতে হবে।
- চাচা, চিঠিটা!
- ওহ! হ্যাঁ বাবা। নাও, যত্ন করে রেখ। নাও!
৩.
ঘুমের মধ্যে মনে হল আমি শূন্যে ঝুলে আছি। আমার চারপাশে সময় থমকে গেছে। আমি একটা স্থবির অবস্থায় চিরকালের জন্য ঝুলে আছি। কিছু নড়ছে না। আতংকে ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি আসলে ট্রেনটা থেমে গেছে। ঘাম মুছে বাইরে তাকিয়ে বুঝলাম মহাকাল ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন দিন শুরু হয়ে গেছে। তার মানে আর দু'ঘন্টা পরেই নামব! ট্রেন পাল্টে এক ঘন্টা পর ধরতে হবে প্রমগহাটের ট্রেন। আহ! প্রমগহাট! আমার স্বপ্নের প্রমগহাট! চাচার যাত্রা এখানেই শেষ। এখন ওনার দিকে তাকালেই ওনার মেয়ে চেহারাটা কল্পনায় ভেসে উঠছে। পরের ট্রেনে আর ভাসবে না। শোকর আলহামদুলিল্লাহ!
৪.
নতুন ট্রেনে উঠে একটু অস্বস্তি লাগছে। কামরায় আরো বার তের জন আমার বয়সী। কথাবার্তা বুঝলাম ওরাও বিভিন্ন জায়গা থেকে মকরটেকের অফার পেয়েছে। রীতিমত ঝকঝকে তকতকে চেহারা। আমি তো গণ্ডগ্রাম থেকে আসা। এদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে বেশির ভাগই অন্যান্য বড় বড় শহর থেকে আসা। ছুটে আসা কথা থেকে একটা অদ্ভুত জিনিস জানলাম। মকরটেকের চাকরীর পরীক্ষায় পাশ করানো জন্য ওইসব শহরে নাকি আলাদা কোচিং হয়! আমি যেখানে থাকি সেখানে তো আমি এই কোম্পানীর নাম প্রথম জানলাম পত্রিকা থেকে। শহরের ওরা কত এগিয়ে! একটা বড় নিশ্বাস বের হয়ে আসল। আবার গর্বও হচ্ছে। গ্রাম থেকে এসেছি তো কি হয়েছে, যোগ্যতা দিয়েই কাজ পেয়েছি। ছ'মাস পর থেকে ওরকম কট কট করে আমিও শুদ্ধ ভাষা বলতে পারব!
৫.
ট্রেন থেমে গেছে। আমি নেমে ওদের পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলাম। দেখি চান্সে দলে ঢুকে যেতে পারি কিনা। কিভাবে যেতে হবে কে জানে!
৬.
বাসে পুরো চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। ভীষণ নীচু! শিংয়ে সব আটকে যাচ্ছে। একটা ব্যাপার বুঝলাম না। শহরে অনেকেরই শিং ছাঁটা! খুব বিশ্রী ব্যাপার। আমাদের ওখানে এই শিং নিয়ে বৌ জোগাড় করাই তো কঠিন হয়ে যাবে। একটু টেনশনে পড়ে গেলাম। কোম্পানী যদি আবার যোগদানের সময় শিং ছোট করতে বলে?
৭.
বাসস্টপ থেকে মাত্র দশ মিনিট লাগল পৌঁছাতে। বড় রাস্তার উপরের খুব সুন্দর গেট। রিসেপশনের মেয়েটার সাথে একজন দাঁড়িয়ে আছে। দেখি আগে খালি হোক।
৮.
- জী বলুন, আপনার জন্য কি করতে পারি?
- আমি এখানে সিনিয়র প্রদায়ক হিসেবে জয়েন করতে এসেছি।
- কোন সেকশন?
- ছাগল।
- জী?
- ছাগল সেকশন।
- স্যরি। বুঝলাম না।
এই মেয়ের সমস্যা কি? ফাজলামি করছে? অফিসে অপরিচিত লোকের সাথে?
- আপনি তো আমার এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেখেছেন। আমার ব্যাখ্যা করার তো দরকার নেই।
- আসলে স্যার আমাদের এবার একটা ভুলের কারণে কোন এপয়েন্টমেন্ট লেটারেই সেকশন উল্লেখ করা হয়নি। আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পারছি মকর সেকশনে জয়েন করবেন। কিন্তু ছাগল বলায় আমি কনফিউজড হয়ে গেছি।
- মকর মানে কি?
- স্যরি স্যার?
- আমি জানতে চাচ্ছি মকর মানে কি? এই সেকশনটি কিরকম?
- স্যার, আপনি মকর হয়ে জানতে চাচ্ছেন মকর মানে কি?
- আমি মকর কে বলল? আমি তো ছাগল!
- আপনি স্যার আমাকে আবারও কনফিউজ করে দিচ্ছেন। আমাদের এখানে ছাগলদের জন্য কোন সেকশন থাকার কথাই না আর আপনিও নিশ্চিত ভাবেই ছাগল না!
আমার মাথা ইতিমধ্যে মকরের কচকচানিতে ব্যাথা করছে। আমি কি কোথাও কোন বড় ভুল করে ফেলেছি? আবার এপয়েন্টমেন্ট লেটারটা ভাল করে পড়ে দেখলাম। আমার কোন বন্ধু ফাজলামি করে আমাকে এটি পাঠায়নি তো? তা কি করে হবে? ওরা তো ফোন করে আমাকে কনফার্ম করে টিকেট পাঠালো। বন্ধুরা ফাজলামি করলেও টিকেট নিশ্চয়ই পাঠাবে না। টিকেটের যা দাম!
- স্যার আপনি কি একটু বসবেন? চিঠিটি আমাকে দিন। আপনি বসুন আমি একটু আমার সুপারভাইজারের সাথে কথা বলব।
সোফাতে বসলাম। যা উত্তেজনা ছিল সব মিইয়ে গেছে। চিঠি পড়ে যে স্বপ্ন বুনেছিলাম সেটা মনে হচ্ছে পাতলা হওয়া শুরু হয়েছে। আহ কী ভাষা! "নিজের যৌবনের আগুন ছড়িয়ে দিন সারা দেশে।" ! শুনলেই গায়ে কাটা দেয়। "আপনার চরম পুলক আমাদের জাতি গড়ার হাতিয়ার", "মকরটেক! আপনার পৌরুষ আমাদের গর্বের ফানুস!", "শিঙে শিঙে তুলুন ঝংকার, উন্নত জাতের রামছাগল আমাদের অঙ্গীকার" - আরো কত সুন্দর সুন্দর কথা! আমি স্বপ্নে দেখতাম মকরটেক থেকে সুন্দর সুন্দর নিষ্পাপ ছাগশিশুরা পিকআপে চড়ে চড়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের অনেকের লেজের সাদা ছোপ, শিঁঙ্গের বাঁকানো প্যাঁচ বলে দিচ্ছে ওরা আমার সন্তান। আমার বাবা আর দাদা মস্ত পালোয়ান ছিলেন। তাদের সবল দেহের শক্তিশালী ডি.এন.এ. পৃথিবীর এক নম্বর উন্নত প্রজাতির ছাগলের খামার মকরটেকের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছি। আমিই হলাম সেই বিপ্লবের চে গুয়েভারা!
হঠাৎ চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল। আচ্ছা, মকরটেকের মকর আর রিসেপশনের মেয়েটার মকর সেকশনের মকর কি এক? ছাগলের খামারের নাম মকরটেক কেন? ছাগলটেক হল না কেন? মকর মানে কি? এই প্রশ্ন আগে কেন আসল না আমার মনে?
৯.
- ইয়ংম্যান, তুমিই কি আমাদের এই মিষ্টি মেয়েটিকে সাত সকালে এসে জ্বালাতন করছ?
ভারী গলার স্বরে চমকে উঠলাম। দেখলাম একজন মধ্যবয়সী আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। অনেকক্ষণ পর একজনকে পেলাম যিনি শিং ছাঁটেন নাই। মনে হয় হাল ফ্যাশানে অভ্যস্ত হতে পারেন নাই।
- স্লামালেকুম স্যার।
- ওলায়কুম। কি ব্যাপার তুমি নাকি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছ? তোমার মত হ্যান্ডসাম স্বাস্থ্যবান যুবককে দেখে কোথায় আমার ইয়ং ফিমেল স্টাফরা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে পড়বে, তা না, তুমি নিজেই সেই ক্রাইসিসে! তাও জয়েনিংয়ে এসে!
- স্যার আমি আসলেই একটু কনফিউজড!
- আরে কোন চিন্তা নেই। আমার সাথে এস। ওই যে ওদিকে লিফট!
- জী স্যার!
১০.
লিফটেই ওনার বিজনেস কার্ড পেলাম। ড. খাসখাসী, ডেপুটি ডিরেক্টর, মকর সেকশন। বাপরে, অনেক উঁচু পদে নিশ্চয়। ২৮ তলায় বের হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে তারপর ওনার চেম্বার। এসির বাতাসে দাঁড়ি প্রায় জমে যাচ্ছে। আমাকে কাঁপতে দেঁখে উনি টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিলেন।
- পাঁচ মিনিট!
- জী স্যার!
আমি আর কি করব! উনি ফাইলে ডুবে আছেন। আমি বসে বসে ফার্নিচার গোণা শুরু করলাম। তারপর দূর থেকে আলমারির বইয়ের নাম পড়ার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ হয়ে টেবিলের কাঁচের নিচে রাখা বিজনেস কার্ড গুলো পড়া শুরু করলাম।
হঠাৎ একটি কার্ডে চোখ আটকে গেল। ড. খাসখাসীরই কার্ড। হলদে হয়ে গেছে। কমপক্ষে বছর দুয়েকের পুরোনো। ওখানে লেখা ছাগলটেক প্রাইভেট লিমিটেড। মকরটেক না! ছাগলটেক! কী আশ্চর্য!
- এত মন দিয়ে কী পড়ছ ইয়ংম্যান?
- স্যার আমি কি একটি প্রশ্ন করতে পারি?
- নিশ্চয়ই!
মনে হয় একটা বড় ভুল করে ফেললাম! প্রথম দিনেই প্রশ্ন করতে হয়! ইশ! এটি আমি কী করলাম! বোকার মত প্রশ্ন শুনে যদি বলে, তোমাকে আমাদের দরকার নেই, বাড়ি চলে যাও! যাই হোক! তীর বেরিয়ে গেছে। কিছুই করার নেই।
- শুনি তোমার প্রশ্নটা?
- স্যার, মকর মানে কি?
উনি একটু চিকন দৃষ্টিতে তাকালেন। একটু চিন্তা করলেন। তারপর নতুন আর পুরোনো দুটি কার্ডই দেখলেন। এরপর ঘটল বিস্ফোরণ।
- ওওওও! হা! হা! হা! হাহ! হাহ! হাহ!
আমি কোন বয়স্ক ছাগলকে এই প্রথম এভাবে হাসতে দেখলাম। তাও আবার অফিসে!
- শুন ইয়ংম্যান। আমি আসলেই ভীষণ মজা পেয়েছি!
- জী স্যার?
- শুন, মকর মানে ছাগল...
- মকর মানে ছাগল, স্যার?
- ওয়েট, ছিল, এখন আর নেই!
- মানে, স্যার?
- তোমাদের ওখানে কি ব্যাপার জানিনা। প্রমগহাটে বছর খানেক আগে সরকারী ভাবে আমাদের ছাগল ডাকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দাবীতেই। আমরা বলে দিয়েছি আমাদের মকর ডাকতে। কাজেই, কেউ যদি ছাগলের পুরোনো অর্থ জানেও অফিসে কখনই সেটি ব্যবহার করবে না।
- তার মানে স্যার আমি এখন থেকে ছাগল না, আমি এখন একজন মকর!
- অন্তত যতদিন এখানে আছ।
আমার জীবনে আমি এত অদ্ভুত কোন ঘটনা দেখিনি। আস্ত একটা জীবের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা! মানুষদের দেখি অহরহ গরু, গাধা, ছাগল বলে নিজেদের মধ্যে গালাগালি করতে। কেন এতে ওরা রেগে যায় এখন বুঝতে পারছি।
তার মানে আমি এখন থেকে আর ছাগল না, আমি মকর! কী ভয়াবহ ব্যাপার!
- আচ্ছা স্যার, তাহলে এখানে ছাগল মানে কি?
- তাহলে তোমাকে একটু ইতিহাস বলি। বোরড হবে না তো?
- একদম না স্যার!
- গুড! প্রায় বছর দশক আগে এখানে একটি নতুন ধরণের শিল্প বিপ্লব হয়। এটির নাম ছিল আই.টি. বিপ্লব। আস্তে আস্তে যখন দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি স্তরে আই.টি. ছড়িয়ে পড়ল তখন চারপাশের সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন হল। মানুষ খাবার বানায় কম্পিউটারে রেসিপি দেখে, ঘুমাতে যায় কম্পিউটারে এলার্ম দিয়ে, রাগ করলে অন্যকে পেন্টিয়াম টু বলে গালি দেয়, খুশি হলে ওয়ালে লাইক দিয়ে আসে, দুষ্টামি করতে চাইলে পোক করে আসে - মানে সব কিছু্তেই আই. টি. একদম ঢুকে গেল। তো সব প্রজাতিতেই কিছু চিড়িয়া থাকে যাদের কেউই পছন্দ করে না। মানুষের মধ্যেও এরকম কিছু ছিল যারা আই.টি.কে ব্যবহার করত তারা যে অপদার্থ ও দুষ্ট লোক সেটি প্রমাণ করার জন্য। আই.টি. তে যেহেতু সব খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়, বেশ তাড়াতাড়ি এরা হাজার হাজার লোককে যন্ত্রণা দিয়ে খেপিয়ে তুলতে সক্ষম হল। তো রেগে যাওয়ার কোন এক পর্যায়ে প্রায় দেড়-দু'বছর আগে কোন এক মানুষ কোন এক চিড়িয়াকে 'ছাগল' বা 'ছাগু' বলে সম্বোধন করলে, সেটি ইন্টারনেটে দাবানলের মত ছড়িয়ে যায়। তো বছর খানেক পড়ে দেখা গেল, ট্রেনে বসে আমি বই পড়ছি। কেউ একজন তুই একটা ছাগু বলে চিৎকার দিল। আমি ঘুরে তাকিয়েছি দেখার জন্য যে আমি ছাগল হলে কার কী সমস্যা! কারণ আমিও একই টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছি। দেখি ঝগড়া চলছে দু'জন মানুষের মধ্যে। একজনকে আরেকজন রেগে ছাগু ডাকছে। যাকে ডাকা হচ্ছে তার সে কী চিৎকার।
- সম্পূর্ণ অন্য একটা জাতের নিজেদের মধ্যেকার ঝগড়ার জন্য আমরা আমাদের পরিচয় পাল্টে ফেললাম?
- নিখিল মকর কাউন্সিলে এটা নিয়ে ছয় মাস ঝগড়া চলল।
বয়স্করা বিশেষ করে স্পীকার নিজে তোমার যুক্তিতেই অটল ছিল।
- তাহলে পাশ হল কী করে?
- হা হা! মজার কাহিনী। স্পীকার নিজে একদিন ট্রেনে করে আসছিলেন পার্লামেন্টের অধিবেশনে বসার জন্য। তো উনি মার্কেজের একটা বই পড়ছিলেন। হাতে কাঁঠালগাছের একটি কচি ডাল। উঠের অল্প আগেই নাকি কিনেছিলেন। পাতা চিবানো শুরু আগেই নাকি পাশের সিটে এক মানুষ আরেক মানুষকে ধমকানো শুরু করল ছাগু-ছাগল এসব বলে। এক পর্যায়ে স্পীকারকে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে তার হাত থেকে ডালটি নিয়ে রেগে যাওয়া লোকটি অন্য লোকটিকে বলল, নে, তোর জন্য কাঁঠালপাতা, ব্যাটা ছাগু! আর ট্রেন থেকে নামার সময় থাকবে একটি গদাম লাথি!
- তারপর!
- তারপর আর কি? পার্লামেন্টে এসেই উনি এক ঘন্টার মধ্যে সেই বিল আনার ব্যবস্থা করে কণ্ঠভোটেই পাশ করিয়ে নিলেন!
আমি হাঁ করে খালি শুনছিলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিল না এরকম একটি ঘটনা বাস্তবে ঘটতে পারে।
- আচ্ছা, স্যার আমি কি আরেকটি প্রশ্ন করতে পারি?
- শিওর!
- স্যার, ছাগু বা ছাগল যেটিই বলেন তার এখনকার অর্থ কি?
নিজেই দেখে নাও বলে উনি একটি নতুন ডিকশনারী আমার দিকে ঠেলে দিলেন।
পাতা উল্টে 'ছাগু' খুঁজে বের করলাম।
"ছাগু" - (উচ্চারণ: ছাআগউ) - বিশেষ্য - গালি - এক ধরনের বিকৃতমস্তিষ্ক ও দুর্বৃত্ত মানুষ যারা জামাত-শিবিরকে সাপোর্ট করে, দেলু রাজাকারকে জেরার সময় কেঁদে বুক ভাষায়, গোলাম আজমকে অধ্যাপক বলে সম্বোধন করে, অন্যধর্মের লোকজনকে ঘৃণা করে বা ছোট করে দেখে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা আসলে খালি অন্য লাইনে ভুল ভাল যুক্তি দিয়ে জনগণের সময় নষ্ট করে। উদাহরণ: আব্দুল জলিল অনন্ত বিশ্বাস করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দেলু রাজাকারের জেরার সময় তাকে জীনেরা বাতাস করে, কাজেই সে একজন ছাগু।
-------------------
শেহাব
বাল্টিমোর
মন্তব্য
দারুণ কনসেপ্ট। আরও কিছু ছাড়েন
০২
সচল চত্বরে স্বাগতম
ডাকঘর | ছবিঘর
ভালোই। লেখা চলুক। বাই দ্যা ওয়ে, অনন্তর ব্যাপারটা কি সত্যি?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ভালো লাগল।
লিখে যান।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ইমা
facebook
নতুন ধরনের গপ্পো! শেষটা বেশি ভালো লাগলো!
নির্ঝর অলয়
আমি ব্যাপক মজা পেয়েছি লেখা পড়ে
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
কনসেপ্টটা ভালো লেগেছে, কিন্তু লেখাটা বেশ জোর করে পড়তে হয়েছে। লেখাটা আমার খুব বেশি ঝরঝরে মনে হয়নি যদিও কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছিল গল্প কোনদিকে যাচ্ছে।
কনসেপ্ট টা মজার, কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলে বেশী ভালো লাগতো মনে হল।
লেখার সাবলীলতায় মুগ্ধ হলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন