কি ছিল সেই অনুষ্ঠানটা... সেটা ছিল আমির খানের ’সত্যমেভ জয়তে’ (Satyamev Jayate),মানে সত্যর মধ্যেই বিজয় নিহিত। আর পর্বটা ছিল ব্রেক দি সাইলেন্স(Child sex abuse), নীরবতা ভাঙতে হবে! মনে আছে খুব বেশী খুশি হয়েছিলাম সেদিন, দেরীতে হলেও তবে এই বিষয়টা নিয়ে মানুষ কথা বলছে।
ঠিক সেইদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যদি কোনদিন সময়, সুযোগ এবং লেখালেখি করার চেষ্টা করি, সেদিন এই বিষয়টি নিয়ে আমার বাক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা লিখব। এই লেখাটি খুব আবেগী লেখা, কোন গবেষণাধর্মী না, আর তাছাড়া অনেক সময় পরিসংখ্যান শুধু কিছু সংখ্যা হয়েই থেকে যায়, আমরা সেটাতে চোখ বুলিয়ে চলে যাই, কিন্তু মর্মটুকু বুঝিনা অথবা বুঝতে চাইনা!
মূল কথায় ফিরে আসি। প্রথমে আমার নিজের ছোটবেলার একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি, ছোটো থেকেই বই পাগলা আমি, কোথাও যদি শুনতে পেতাম বই আছে কারো বাড়িতে তো সাথে সাথে আমি সেখানে ছুট।। বই লাগবে আমার... ছোটো মানুষ, নিজের টাকা নাই, আর আমি যে হারে বই পড়তাম, রোজ রোজ বই কিনে দেবার সামর্থ্য বাসার কারো নাই। তখন আমি বেশ ছোটো , আজ মনে করতে পারছিনা সঠিক বয়সটা, তবে ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি...বর্ষার এক বিকেল, সারাদিন ঝম ঝম বৃষ্টি। আমার পড়ার মত কোন বই নাই, যা ছিল সব পড়ে শেষ করে ফেলেছি, প্রচণ্ড অস্থিরতা ভিতরে, কখন একটা নতুন বই হাতে পাবো। আমার মনে হয় যারা আমার মত বই দ্বারা নেশাগ্রস্ত তারা আমার অনুভূতিটুকু বুঝতে পারবেন। আমাদের পাড়ায় এক ভদ্রলোক(???) ছিলেন, উনার নিজস্ব একটা লাইব্রেরি মত ছিল। আমি প্রায় সময়েই সেখানেই ছুটে যেতাম। সেদিন বিকেলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলাতে পারিনি। বাইরে বৃষ্টি একটু কমতেই,মাথার উপর একটা গামছা ধরে বাসার বড়দের লুকিয়ে আমি সোজা রাস্তায়। কিছুদুর যাবার পর,আর ও দুই বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা... ওরাও ঘরে বসে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ, ছোটো মানুষ তখন আমরা, বেশিক্ষণ ধৈর্য থাকেনা কোন কিছুতেই। আমার গন্তব্যস্থল জানার পর, তিন জন একই পথের যাত্রী। আমি যাচ্ছি বইয়ের টানে ,আর ওরা যাচ্ছে আমাকে সঙ্গ দিতে। যার বাসা তাকে আমরা সবাই মামা ডাকি। সবার মামা, গণ মামা। মামার সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল বেশ মজার... আমি যখন তখন উনার বাসায় হাজির হতাম বইয়ের টানে... বেশিরভাগ সময়েই উনি বাসায় থাকতেন না...কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়ে যেত... আমি হয়ত তখন দুই বেনী ঝুলিয়ে তাইরে নাইরে করতে করতে নিজের খেয়ালে কোথাও যাচ্ছি... মাঝ পথে যাত্রাভঙ্গ...
”এই যে বিদ্যা সাগর, সেদিন যে বইটা নিয়েছিস, সেটা শেষ হয়েছে?”
আমার সলজ্জ হাসি... ”জি মামা”।
”কয়দিন পরেতো আমার লাইব্রেরি তে তোর কুলাবে না রে ...তখন কি করবি?”
আমার তখন সে কথার জবাব দেবার সময় নাই... ছুট ছুট ছুট, খেলায় দেরি হয়ে যাচ্ছে যে...
মোটকথা উনাকে আমার সব মিলিয়ে বেশ মজার মনে হতো। তো যা বলছিলাম, সেদিন উনার বাসায় পৌঁছান মাত্র আমি আমার জগতে ডুবে গিয়েছিলাম, এতো বই একসাথে দেখলে সত্যি সত্যি আমার মাথা খারাপ হয়ে যেতে থাকে।মামা তখন ঘরেই ছিলেন, আর আমার বাকি দুই বন্ধু মামার সাথে গল্প করছিলো। উনি বিয়ে থা করেননি, ভায়েরা সব মিলে একসাথে থাকে, দোতালা বাড়ি, প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ঘর। উনার ঘর ছিল দোতালার একদম কোনার দিকে, উনি আমার বইয়ের নেশার কথা জানতেন, তাই উনার ঘরে আমার ছিল অহরহ যাত্রা। বাইরে তখন বৃষ্টির বেগ আবার বেড়েছে, এবার সত্যিকার অর্থেই ঝর ঝর মুখর ও বাদল দিন!
আমি তখন বই বাছাই করছি নেবার জন্য ,কিছুটা তাড়া হুড়া করছি বাসায় না বলে এসেছি। হঠাৎ, মনে হল সব কিছু বড্ডও বেশী নীরব ..এতক্ষন বেশ, দুই বন্ধুর কলকল আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমার ঘোর ভাঙ্গে, চমকে তাকাই জানার জন্য কি হল। এবার আমি খেয়াল করি মামা ততোক্ষণে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, চোখ মুখ কেমন অচেনা লাগছে...আমার বন্ধুরাও বুঝতে পেরেছে, কোন কিছু ঠিক স্বাভাবিক নয়। ছোটরাও নিজ নিজ অনুভূতি দিয়ে অনেক কিছুই বুঝতে পারে!
”মামা, দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
”তোরা একটা মজার জিনিস দেখবি?”
”কি মামা?...অনেক মজার, ভয় পাবিনা তো?”
আমি আবার ছোটো থেকেই খুব ডানপিটে; গোরস্থানের ঠিক পাশে আমার বাড়ি, তবুও আমি রাতে একা বারান্দায় যেতে পারি, আমার বিরাট সাহস! নিজেকে নিয়ে খুব ই গর্ব, তাই ভয় এর কথায় পিছুপা হইনা।
”নাহ একটুও ভয় পাবনা”... বাকি দুই জন আমাকে সায় দেয়, "আমরাও ভয় পাবনা।”
”কাওকে বলবি নাতো?”
”নাহ কাওকে বলবনা।”
”বলিস না, নাহলে সবাই তোদেরকেই বকবে।”
তিন জনেই এক সাথে ঘাড় নেড়ে একমত। হঠাৎ উনি পরনের লুঙ্গিতে হাত দেন... "জানিস এর নিচে একটা শক্ত মোটা , লম্বা জিনিষ আছে, নাড়তেও খুব মজা, দেখতেও খুব মজা, দেখবি তোরা"...বলতে বলতেই উনি লুঙ্গি তুললেন।
তীব্র ভয়ে আমার হঠাৎ দম আটকে আসতে চায়, চোখ বন্ধ করে ফেলি... মনে হয় খুব ভয়ংকর কিছু আছে লুঙ্গির নিচে, একটা রাক্ষস, নাকি কোন দানব জানিনা, কিন্তু আমি কিছুতেই দেখতে চাইনা, কিছুতেই না... আমি প্রচণ্ড আতংকে মাথা নাড়ি... না না না, দেখব না.........
তারপর কিভাবে দরজা খুলে দৌড়ে বাসায় ফিরেছিলাম আজ আর সঠিক মনে নেই। কিন্তু সেই আতঙ্কের অনুভূতি টুকু আজও মনে আছে!!
বাসায় ফিরে এক দৌড়ে কাঁথার তলে... কিছুক্ষণ পর বমি। নিজেকে মনে হচ্ছিল সব আমার দোষ। আমিই খারাপ, তাই শুধু আমার সাথেই এমন হল, কই আর কারো সাথে তো এমন কিছু হয়না। যে আমি সারাদিন কুট কুট কথা বলি ... তার স্বাভাবিক জীবন বেশ অনেকদিন আটকে গেছিল সেই বৃষ্টির দিনে অন্ধকার ঘর, আর মামা নামক এক ভয়ানক বস্তুটায়! আমি ভয় পেতে শুরু করেছিলাম বড়দের, মামাদের, অন্য রকম একটা ভয়... স্বপ্নে সেই সন্ধ্যাটা বিভিন্ন ভাবে, বিচিত্র রূপে ফিরে আসতো বারবার।
আমি কোন কিছু নিজের ভিতরে বেশীক্ষণ চেপে রাখতে পারিনা,অনেক সময় অন্য মানুষের মুখের উপরে অনেক কথা বলে ফেলি হুট করে। সেই আমিই কিন্তু এই কথাটা কাওকে বলতে পারিনি...খুব কাছের ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু ছাড়া আজও কেও জানেনা। পরবর্তী কালে বার বার মনে হয়েছে, সেদিন যদি আমরা তিন জন না থেকে আমি একা থাকতাম, তাহলে কি হতে পারত! আজ আমি ভাবি আমি এতো চঞ্চল হয়েও কথাটা কাওকে বলতে পারিনি কখনো... এমন কি আমার পরিবারেরকেও না, তাহলে যারা আমার মত চঞ্চল না, যারা অন্তর্মুখী তারা যখন এমন অবস্থার মধ্যে পড়ে, তাদের মানসিক অবস্থাটা কি হয়??? আরও একটা কথা আমার বারবার মনে হয়, যে সব বাচ্চারা কথা বলতে পারেনা, অথবা মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী, যাদের প্রকাশ করার ক্ষমতাই নাই, কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল, কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। তাদের ঠিক কি অবস্থা হয় প্রতিনিয়ত???
বেশ কয়েক বছর আগে আমি মুহাম্মদপুরে একটা সাইন বোর্ড দেখেছিলাম সেভ দি চিলড্রেন এর, হুবুহু কথাটা মনে নেই, কিন্তু মূল ভাবটা ছিল অনেকটা এরকম যে, শিশুরা তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন, অথবা কাছের মানুষ, পাড়া প্রতিবেশি দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সবচেয়ে বেশী। কথাটা আমি অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করি, আর এ সম্পর্কিত যত জরিপ হয়েছে, যত পরিসংখ্যান, নিজের অভিজ্ঞতা এবং বন্ধুদের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বিষয়টা নিয়ে একেবারেই নিশ্চিত। তাহলে একবার ভাবুন সেই সব প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা যারা কিনা হয়তবা আদরের নামে প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক হল, আমরা যারা স্বাভাবিক তারা বুঝতে পারি ঘটনার ভয়াবহতা, সেই সব মানুষ গুলোর কাছ থেকে পালিয়ে থাকি কিন্তু সেই সব প্রতিবন্ধী শিশুরা তো বুঝতেই পারেনা!!! পরবর্তীকালে আমি আর আমার এক বন্ধু ঠিক এই রকম আর একটি ঘটনার মুখ মুখি হয়েছিলাম...তখন আমরা বেশ বড় , সেই মানুষটা ছিল অচেনা, আর ঘটনাটা ছিল একটা নির্জন গলিতে.... তখন কিন্তু আর সেই তীব্র ভয়টা পাইনি, ততদিনে আমরা অনেক কিছু বুঝা শিখেছি, তাই প্রতিবাদ করতে পেরেছিলাম... শুধু একটা অসম্ভব ক্রোধ আর ঘৃণার অনুভূতি ভিতরে রয়ে গেছে আজও।
আর একটি ঘটনার কথা না উল্লেখ করলেই নয়! আমরা তখন হাই স্কুল এ পড়ি। আমরা বন্ধুরা সব আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছে ব্যাচে প্রাইভেট পড়তাম। আমরা সব খুব দুরন্ত ছিলাম, তাই স্যার এর বাসা নিজের মনে করতে কখনো দ্বিধা করিনি। উনার পুরো পরিবার এর সাথে ছিল খুব সুন্দর সম্পর্ক। হঠাৎ একদিন, আমাদের ব্যাচের পড়া শেষ, আমরা যখন বাসার উদ্দেশে রওনা দিবো, স্যার তখন আমার এক বন্ধুকে হোম ওয়র্ক এর কথা বলে আলাদা করে ভিতরে ডেকে নেন, সেইদিন আমরা কোন কিছু ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করিনি... সেই দিনের পর মাঝে চার বছর পেরিয়ে যায়, এতো দীর্ঘ সময় পরে আমরা সব বন্ধুরা জানতে পারি... সেই দিন ছিল সেই বন্ধুটির জীবনের একটি ভয়াবহ দিন... যে স্যার কে আমরা এতো শ্রদ্ধা করতাম, এতো চমৎকার সম্পর্ক ছিল যার সাথে, যাকে আমাদের যে কোন সমস্যা যখন তখন বলতাম, সেই স্যার এর দ্বারায় সে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয় সে সেদিন!!!
ভাবা যায়! আমরা ছিলাম তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু অথচ এই দীর্ঘ সময়েও সে আমাদের কখনো কিছু জানতে দেয়নি... তার এই নীরবতা ভঙ্গ হয়েছিলো ঠিক সেইদিন যেদিন তার ছোটো বোনটিকে সেই একই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে পাঠানোর কথা ভাবছে তার পরিবারের লোকজন!
আমার সাথে সেইদিন তেমন কিছু বলতে গেলে হয়নি, কিন্তু এরপরেও বহুদিন আমি অস্বাভাবিক আচরন করতাম... অন্ধকার ভয় পেতাম, নিজেকে মনে হতো কেউ যদি জানে এই ঘটনার কথা, সবাই আমাকে দোষ দিবে, আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবেনা...কি যে ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণা, ছোটো মানুষ বুঝিও না যে আমার কোন দোষ ছিলনা।
আমি আমার ছোট বোনটাকে খুব ভালবাসি, সেই ঘটনার পর থেকে আমি ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখতাম,পাহারা দিতাম বড়দের থেকে, কেউ ওকে কোলে নিয়ে আদর করলে জোর করতাম নামিয়ে দেবার জন্য, স্কুল এ গেলে অস্থির লাগতো ও বাসায় একা তাই, ওর মুখ গোমড়া দেখলে মনে হত...তাহলে কি ওর সাথেও...অথচ পুরো বিষয়টাও ওকে কখনো খুলে বলতে পারিনি!!! এই অভিজ্ঞতা আমি আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দেখেছি, কম বেশী সবারই এমন অভিজ্ঞতা আছে, আর খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বেশিরভাগ সময় তারা নির্যাতিত হয়েছে পরিচিত কারো দ্বারা।
সেদিন Satyamev Jayate দেখেই আমি ভাবছিলাম, সত্যি আর কতদিন আমরা এই বিষয়টা নিয়ে খোলা মেলা কথা বলবনা? আর কতকাল আমরা জেনেও না জানার ভান করবো? যারা চোখ খুলে বন্ধ রাখে তারা কি আসলেই কখনো কিছু দেখবে? আমি আমার আত্মীয়দের একজন কে জানি যিনি এখন বেশ বয়স্ক,এবং বহুদিন যাবত scrisophenia নামক ভয়ংকর জটিল মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন। আমি জানি, scrisophenia অনেক ক্ষেত্রে একটি জেনেটিকাল রোগ কিন্তু কোন একটি বিশেষ ঘটনা এই রোগ টিকে তরান্বিত করে অর্থাৎ রোগটির সূচনা করে। এবং আমার পরিচিত সেই ভদ্রমহিলার ক্ষেত্রে ছোটবেলার এমন যৌন নির্যাতন ছিল দায়ী।
আমাদের দেশে এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা গবেষণা হয়না। যদি আমরা ঠিকমত মানসিক হাসপাতাল বা ডাক্তারদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণা করতে পারতাম, অথবা যে সব মানুষ অপরাধী হয় তাদের শৈশব পর্যালোচনা করতে পারতাম, আমি নিশ্চিত সেখানে ছোটো বেলায় যৌন নির্যাতনের ঘটনা অনেক বড় একটা প্রভাবক হিসাবে পেতাম।
যে বয়সে একটা বাচ্চার, হাসি গান আর আনন্দে সময় কাটানোর কথা সে বয়সে জীবনের সবচেয়ে বড় কদর্যতাটুকু অমানবিক ভাবে শিখিয়ে দেয় যে সব মানুষ তাদের মানসিকতা নিয়ে কথা বলে তো লাভ নাই। আমাদের সবার সতর্ক হতে হবে। আগে আমার ধারনা ছিল, শুধু মাত্র মেয়ে শিশুরাই এখানে ভুক্তভোগী, পরবর্তীতে জেনেছি ছেলেশিশু বা মেয়েশিশু, গরিব বা বড়লোক , সুন্দর বা অসুন্দর , সাদা বা কাল কেউ আসলে নিরাপদ নয়, যে কোন শিশুই হয়ত নির্যাতনের শিকার হতে পারে যে কোন সময়ে... এই বিষয়ে, কেউই নিরাপদ নয়। আমার জানামতে, আমাদের এক ক্লাসমেট এর ছোট ভাই তাদের বাসার এক তরুন গৃহকর্মীর দ্বারা নির্যাতিত হয়। বাবা, মা, পরিবারের সব সদস্যর মাঝেও সেই ছোটো ছেলেটি নির্যাতিত হয়ে গেছে প্রতিনিয়ত, অথচ বেশ অনেকদিন কেউ জানতেই পারেনি।
এই মানুষরূপী হিংস্র জানোয়ার হয়ত লুকিয়ে আছে আমাদের মাঝে, আমাদের অতি পরিচিত, অপরিচিত, স্বল্প পরিচিত, আমাদের আত্মীয় অনাত্মীয় সমস্ত রকম পরিচয়ের মুখোশের আড়ালে।
ছোটো শিশুরা যারা ভবিষ্যৎ দিনের নাগরিক তারা যদি জীবনের শুরুতেই এমন নোংরা একটা বিষয়ের মধ্যে দিয়ে যায়,একদম ছোটো থেকেই মানুষকে অবিশ্বাস করতে শিখে... তারা কিভাবে একটি সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ আর সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখবে??
আমাদের প্রত্যেকের তাই ব্যাক্তিগত সতর্কতা নিতে হবে...অনেক তো চুপ করে থেকেছি আর কেন, আর কত? এই শিশুরা আমাদেরই সন্তান, বোন অথবা ভাই, ভাইঝি, বোনঝি ... এরা আমাদের বিশ্বাস করে, আমাদের উপর নির্ভর করে, আমাদের সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে হবে। তাদের নির্ভরতার মানুষ হতে হবে। প্রতিদিন পেপার খুললেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা। আমরা শুধু সেই সব ঘটনাই জানতে পারি যা পত্রিকায় আসে... তার আড়ালে আবডালে প্রতিদিন যে অসংখ্য শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছে, প্রতিদিন হচ্ছে, তার খবর আমরা রাখিনা। আর তাছাড়া, ধর্ষণের মত সর্বোচ্চ পর্যায়ে না গেলেও তার বাইরেও শিশুরা ধর্ষণের চাইতে ও বেশী মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
আমাদের দেশে সেভ দি চিলড্রেন এর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৪ সাল থেকে ব্রেকিং দি সাইলেন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে এই বিষয়ে। এই প্রতিষ্ঠানের অফিস মুহাম্মদপুরে এবং তারা মিরপুর এলাকার মানুষজনকে সচেতন করার চেষ্টা করে চলেছে। এই লেখার নিচে আমি সত্যমেভ জয়তের বাংলা সাব-টাইটেল সম্বলিত লিঙ্ক এবং 'ব্রেকিং দি সাইলেন্স' এর ওয়েব সাইট লিঙ্ক দিয়েছি, আগ্রহীরা দেখতে পারেন।
সত্যমেভ জয়তের লিঙ্ক
ব্রেকিং দি সাইলেন্স লিঙ্ক
আমাদের করনীয়:
এই রকম অবস্থায় আমরা ঠিক কি করতে পারি... প্রথম কথা ’Prevention is always better than cure’ !
সুতরাং আমাদের আগে সচেতন হতে হবে বিষয়টা নিয়ে। প্রথমত পারিবারিক পর্যায়ে যে কোন সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আচরন করতে হবে। একটি শিশুর জন্মের পর থেকেই যেন সে বুঝতে পারে যাই ঘটুক না কেন, তাকে বাসার সবার সাথে আলোচনা করতে হবে অন্ততপক্ষে যেই মানুষটাকে সে বেশী বিশ্বাস করে, বা ভরসা করে তার কাছে বলতেই হবে (মা, বাবা, ভাই। বোন ,নানা, নানি, দাদা, দাদি যে কেও হতে পারে)।
দ্বিতীয়ত, একটি শিশু কিছুটা বুঝতে শেখার পর থেকেই তার নিজের শরীর নিয়ে তাকে সচেতন করতে হবে... তাকে ছবি এঁকে, গল্প বলে অথবা খেলতে খেলতে যেভাবে সহজ হয় সেভাবে চেনাতে হবে তার শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলো । বার বার বলতে হবে শরীরের এইসব অংশে কেও স্পর্শ করতে পারবেনা শুধু মাত্র তার বিশ্বাসের মানুষগুলো ছাড়া, তা ও কোন বিশেষ দরকারেই স্পর্শ করতে পারবে, যেমন গোসল করানো , বা কোন অসুখে বিশুকে।
শিশুদের খুব ভালো করে বুঝাতে হবে যদি কেও তাদের স্পর্শকাতর অংশ বা প্রাইভেট পার্টসে অকারনে হাত দেয়, প্রথমেই ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে হবে, সে যেই হোকনা কেন... আর তার সাথে সাথে চিৎকার করে বলতে হবে "তুমি ভালো কাজ করছ না, তুমি পচা মানুষ, আমি সবাইকে বলে দিব", এবং সেই স্থান ছেড়ে সবার মাঝে চলে যেতে হবে হবে। রবি বাবুর একটা কবিতা আছে, পথ-কুক্কুরদের সামনে প্রতিবাদ করলে তারা ভয় পায়... সুতরাং শিশুটিকে প্রতিবাদী হতে শিখাতে হবে।
অভিভাবকদের করনীয়:
এত কিছুর পরেও যদি তারপরেও খারাপ কিছু ঘটেই যায়, সেখানে শিশুর অভিভাবককে খুব দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রথমত নিজের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, এমন কোন আচরন করা যাবেনা যেন শিশুটি ভয় পায় অথবা নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে। শিশুটি যাকে নিয়ে অভিযোগ করছে, সে যেই হোক না কেন, যত আপনজনই হোক না কেন এক্ষেত্রে শিশুটিকে বিশ্বাস করতে হবে। শিশুটিকে এই বিশ্বাস এবং নির্ভরতা দিতে হবে, আমি জানি তুমি সত্যি কথা বলছ, যে মানুষটি কে নিয়ে বলছ সেই মানুষটি খারাপ... তুমি, আমার বাবুটার কোন দোষ নাই। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমি ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো যেন এমন ঘটনা আর কখনও না ঘটে।
প্রতিটি অভিভাবককে প্রয়োজনে আইনের সহায়তা নিতে হবে, এই বিষয়ে সমাজের ভয়, আশে পাশের সবাই কি ভাববে এই ভাবনা টুকু অবশ্যই বন্ধ করতে হবে... অন্যায় সব সময়েই অন্যায়, তাই প্রতিবাদ করা আমাদেরই শিখতে হবে। সামাজিক সচেতনতা এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে:
আমার এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা গুলো প্রকাশ করে মানুষকে কিছুটা সচেতন করা। আমি অবশ্যই চাই, শৈশবে কিছু সময় আমি বা আমার মতন বাচ্চারা যে নিদারুণ ভয়ংকর মানসিক যাতনার ভেতর দিয়ে গেছি, আর কোন শিশুকে অসচেতনার কারনে এমন ভয়াবহতার মুখোমুখি না হতে হয়। শিশুদেরকে আমরাই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছি... তাদেরকে খুব চমৎকার একটা শৈশব দেবার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের। আমাদের কিছুটা গাফিলতির জন্য কোন শিশুই যেন এমন মানসিক জটিলতার মধ্যে না পড়ে!!!
(লেখক : সাফিনাজ আরজু)
[/center]
[/left][/justify]
মন্তব্য
বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে শিশু যৌনহয়রানির ঘটনাগুলো প্রায় অনালোচিত, অনেক শিক্ষিত লোকের কথা শুনেছি যারা নিজের বাচ্চার কিছু হলে দায়ী লোকটিকে এড়িয়ে যাবার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ রেখেছে।
ব্যক্তিগত অভিমত, লেখাটা বোধহয় কিছুটা সংক্ষিপ্ত করতে পারতেন।
ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
আমিও একবার ভেবেছিলাম লেখাটি দুই খণ্ডে বিভক্ত করে লিখব, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম তাতে লেখার রেশটুকু কেটে যায়।
আর যদি শুধু ব্যাক্তিগত অংশটুকু দিতাম তাহলে আরও অন্য যে কথাগুলো বলতে চাই তা বলা হতোনা, সব মিলিয়ে লেখাটি বড় হয়ে গেল।
বিষয়টি আসলেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , যারা এর ভিতর দিয়ে গেছে তারা জানে এর যন্ত্রণাটুকু !!!
ভালো থাকবেন।
সাফিনাজ আরজু
আমি আর আমার বউ গতকাল নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছিলাম। কি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
ছোট ছোট তিনটে ভাগ্নী আছে , ওদের জন্য খুব চিন্তা হয় । কার কাছ থেকে সাবধান করবো তাও তো জানি না, কার ভিতরে লুকিয়ে আছে জানোয়ার। শুধু বুঝাই, মামণি - কোন সমস্যা হলে আম্মুকে বলবে কেমন? ভয় পেয়ো না, লজ্জা পেও না।
আমার এক সহপাঠিনী'র ছোটবেলার অভিজ্ঞতার পর একধরনের মানসিক বিকলন হয়ে গিয়েছিলো, পরে অনেক বুঝিয়ে তাকে বিয়েতে রাজী করাতে হয়েছে।
আসলে এই রকম অসংখ্য অভিজ্ঞতা কম বেশি অনেকের আছে। সমস্যা হল, আমরা নিজেরা বিষয়টা নিয়ে ভিতরে এত গুটিয়ে যায়, অন্য কারো সাথে আর শেয়ার করতে পারিনা। তাই ঘটনাগুলো আর সামনে আসেনা, অন্যরা সতর্ক হবার সুযোগ পায়না !!!
পারিবারিক পর্যায়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে হয়তবা শিশুদের জন্য বিষয়গুলো খোলামেলা আলোচনা করা অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়, শিশুটিও নিজের কাছে হালকা হতে পারে, মানসিক জটিলতার সম্ভবনা অনেক কমে যায়।
তাই বলছি, আমাদের নিজেদেরই সতর্ক হতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে!
প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে !!!
আপনার লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। সত্যিই ভদ্র চেহারার আড়ালে অনেক পশুই লুকিয়ে থাকে। নটরডেমের এক ফাদারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যৌন-নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। ইভ টিজিং আইন শক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও মেয়েদের রাস্তায় চলাই দায়। কিছুদিন আগে লালবাগ কেল্লায় বেড়াতে গিয়ে দেখেছি, ওটা এখন প্রকাশ্যে নেশাখোরদের অশ্লীলতার আড্ডা। বলিষ্ঠ লোক আমি। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে। এটাও মনে হয় আইন আসলে দিনে দুপুরে গাঁজা-ডাইল খেয়ে পথচারী মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণ করা মানুষগুলোকে ধরতেই পারছে না। নেশা-ভাং আপন মনে করা এক কথা আর সেটা দিয়ে জনজীবনকে অস্থির করে তোলা আরেক। প্রথমটি অনেক গুণি ব্যক্তিই করেছেন, করেন। দ্বিতীয়টি পশুদের কাজ। এদের উপযুক্ত বিচার না হলে আমরা অচিরেই একটি বর্বর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। আমার এক বান্ধবী বিয়েতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তার কাজিনের। এসব অপরাধের কোনদিন বিচার হবে না- ভাবতেই খারাপ লাগে।
নির্ঝর অলয়
"এসব অপরাধের কোনদিন বিচার হবে না- ভাবতেই খারাপ লাগে।"
আসলেই ভীষণ খারাপ লাগে, আর যারা এর ভিতর দিয়ে যায়, তারা জানে এর কষ্ট কতখানি!!!
সাফিনাজ আরজু
আপনার scrizophenia কথাটা ভুল। ওটা হবে schizophrenia। এটি একটি ডিলিউসনাল মেন্টাল ডিসঅর্ডার যার পুরোপুরি আরোগ্য এখনো সম্ভব নয়। এটা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে জেনেটিক রোগ নয়।
নির্ঝর অলয়
বানান ভুলের সংশোধন করিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ !
আমি কিন্তু বলিনি যে এটি সম্পূর্ণরূপে জেনেটিক রোগ, বলেছি যে অনেকাংশে । আসলে জেনেটিক্স এর সাথে সাথে আরও অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে, আমার সেই আত্মীয় কে খুব কাছ থেকে দেখেছি তো :(
আপনার মন্তব্য টুকুর জন্য ধন্যবাদ!
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ। এটা আমাদের সমাজের এখনো ট্যাবু হয়ে আছে, অথচ আলোচনা করে সচেতনতার মাধ্যমেই এই প্রকোপ কমানো সম্ভব, নচেৎ নয়।
facebook
ধন্যবাদ তারেকদা, এই ধরনের বিষয়গুলোতে আমাদের আসলে সবার সচেতন হতে হবে।
নীরবতা ভাঙ্গার জন্য আপনাকে টুপি খুলে সম্মান জানাই।
সব সমাজেই এইরকম বিকৃত মানসিকতার মানুষ (?) আছে। আমাদের সমাজে এর হার বেশি হবার দুইটা কারণ আমি দেখি...
১/ এইখানে অপরাধ করে ধরা খাওয়ার চান্স কম ফলে অনেকেই সুযোগ পেলে সুযোগ নিতে পিছপা হবে না। ধরা খেলেও শাস্তির মাত্রা খুবই নগন্য। কাজেই যাদের মনে সামান্যতম কুচিন্তা আছে তাদের নিরুৎসাহিত করার মত সিস্টেম নাই।
২/ অবদমিত যৌন বাসনা। আমাদের সমাজে বিয়ে করা ছাড়া যৌন বাসনা মেটাবার অন্যান্য পথ সুলভ নয়, এই স্বাভাবিক চাহিদা অবদমন করতে করতে একসময় সেই চাহিদা কদর্য রূপ ধারণ করে এবং ন্যায় অন্যায়বোধ বিলুপ্ত হয়ে যায়। কাজেই শিশুদেরকে ব্যবহার করা একটা সহজ কম ঝামেলাযুক্ত যৌনক্ষুদা নিবারণের যন্ত্র হিসেবে মনে হয়।
সমাধানঃ আমাদের সমাজে এখনো অভিভাবক আর শিশুদের মধ্যে সহজ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রচলিত না। শিশুর সাথে যদি প্রতিদিন খোলামেলা গল্প সময় কাটান অভিভাবকেরা তাহলে শিশু বুঝতে নাও পারে, তাহলেও গল্পের থেকেই বের হয়ে আসবে সে তার আশে পাশের মানুষদের থেকে কিরকম আচরণ পাচ্ছে। মুরুব্বি হওয়ার আগে শিশুর বন্ধু হোন।
বাংলাদেশী মেয়ে মাত্রই কি জীবনে কোন না কোন বিকৃত কাম মানুষের দেখা পেতেই হবে আমার জীবনেও আছে এমন একটা লুকানো ঘটনা। তবে পরিচিত মানুষ এর সঙ্গে জড়িত না। সেই মানসিক পীড়া কিশোরীবেলা পেরিয়ে এসে দাম্পত্যেও কালো ছায়া ফেলে রেখেছিল অনেকদিন। সব লুকিয়ে তাও বাঙ্গালী নারী হাসে, খোপায় ফুল দেয়, প্রেমে পড়ে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে রাস্তায় হেটে যাওয়া সব বালিকার চোখে দৃষ্টি ফেলে ঐ কালো অতলে লুকিয়ে রাখা দুঃখ গুলো পড়ে ফেলি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনার দুই নম্বর পয়েন্টের সাথে কিছুতেই একমত হতে পারলাম না। যৌন বাসনা অবদমিত রাখলেই সেটা বিকৃত রূপ নিতে পারে, মানতে পারলাম না। যেই পশুদের এই টেন্ডেন্সী থাকে সে দশটা বিয়ে করলেও একই কাজ করতে পারে।
আচ্ছা, আরেকটু বিস্তারিত বলি তবে। বিকৃত মানসিকতার মানুষ যারা তাদের কথা বাদ, তারা ৭০টা হুর পরী পেলেও শিশুকামে পৈশাচিক আনন্দ পাবে। এরকম বিকৃত ব্যক্তির সংখ্যা স্ট্যাটিসটিক্যালি সব রকম জনগোষ্ঠীর মাঝেই কাছাকাছি অনুপাতে হবে। সাধুপুরুষেরা ছয় রিপুর মধ্যে কাম কে দমন করতে প্রাধান্য দেন। তাদের সেই নৈতিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সর্বোপরি ইচ্ছা আছে যৌন বাসনাকে অবদমন করার। সুতরাং সেক্ষেত্রে সেটি বিকৃত রূপ নেয় না। কিন্তু যেখানে দুর্বল নৈতিক চরিত্রের কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে তার শারিরিক অবস্থা দমন করতে, তখন সেটা শোভন অশোভন বিচার পাশ কাটিয়ে যে কোন একটা আউটলেট খুজে নিচ্ছে। তুলনা করতে গেলে বলা যায়, কাউকে বলা হয়েছে মলত্যাগ করা যাবে না, এখন যার ইচ্ছা আছে মলত্যাগ করবেন না, তিনি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি উপায় করে সেটা নিয়ন্ত্রনে আনবেন। আর যার এত নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা বা ইচ্ছাশক্তি নেই, সে জোর করে হাগা চাপতে চাপতে একসময় সভ্য আচরণের খেতা পুড়ে কাপড় নষ্ট করে ফেলবে।...এমন না যে চিন্তা ভাবনা করে কাপড় নষ্ট করছে, সেটা হতো বিকৃত মানসিকতা। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে সে শুভ অশুভের পার্থক্য হারিয়ে ফেলছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিশিরকণার পুরো মন্তব্যে সহমত। খুব গুছিয়ে বলেছেন, ধন্যবাদ।
facebook
একমত হলাম আপু।
খুব সুন্দর বলেছেন!
শিশিরকণা, আমি এখনো ঠিক একমত হতে পারছি না কারণ আমার মনে হয় বাসনাকে অবদমন করার জন্য সাধু পুরুষ বা অতি কঠিন চরিত্রের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজন নাই। সাধারণ মানুষের পক্ষেই সম্ভব। আর যারা বাধ্য হয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রয়োজন মিটাতে পারছেন না তারা যৌনকর্মীর সেবা নিতেই পারে।
না সাধুপুরুষ হবার দরকার নেই। আমরা সবাই বিবেকবোধ থেকে ভাল মন্দ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করেই চলি। কিন্তু সবার আত্মনিয়ন্ত্রণের মাত্রা এক নয়। আবার একজনের আত্মনিয়ন্ত্রণ মাত্রাও সব সময় সমান নয়। দুর্বল মূহুর্ত আসেই এবং যেহেতু সমাজ পরিবেশ পরিস্থিতি যেহেতু খারাপ কাজটাকে দেখেও না দেখার ভান করছে, কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিচ্ছে না, তখন অনেকেই পা ফসকাতে পারে। হয়ত পরে সেই অপরাধী অনুশোচনায় ভুগতে পারে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা ততক্ষণে হয়ে গেছে, একটা শিশুর সারাজীবনের উপর কালো ছায়া পড়ে গেছে।
আমার নিজের জীবনের ঘটনাটি থেকে বলতে পারি, সেই লোকটি হঠাৎই একটা সুযোগ দেখে সুযোগ নিয়েছে, খুঁজে খুঁজে ভিক্টিম বের করেনি। যদি খোলাখুলি কথা বলার পরিবেশ থাকতো, তক্কখন তক্ষন বেটারে ধরে পেদানি দেয়ার মতো সামাজিক ব্যবস্থা থাকত, তবে হারামজাদা সুযোগ নেয়ার আগে দুইবার ভাবত এবং ঐ মূহুর্তে নিজেকে সংবরণ করত। কিন্তু আমাদের সমাজে তেমন কিছুই হবে না, মেয়েটাকে দোষ দেয়া হবে পুরুষের নাগালে যাওয়ার জন্য, কাজেই মূহুর্তের নীতি বিসর্জন দিলেও কেউ ধরবার নেই। ব্যাপারটা এমন কেউ দেখছেনা, আইসক্রীমগুলো একটা চাটান দিয়ে রাখলে কেউ টের পাবে না, তো চেটে রেখে দিলাম। আর যদি আস্ত খেতে মন চায় তবে অনেকভাবেই ব্যবস্থা করা যাবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হুম, বুঝলাম।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
শিশিরকণার পুরো মন্তব্যে সহমত । চমৎকার বলেছেন।
"সব লুকিয়ে তাও বাঙ্গালী নারী হাসে, খোপায় ফুল দেয়, প্রেমে পড়ে। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে রাস্তায় হেটে যাওয়া সব বালিকার চোখে দৃষ্টি ফেলে ঐ কালো অতলে লুকিয়ে রাখা দুঃখ গুলো পড়ে ফেলি। "
খুব সুন্দর লাগলো কথাটা ।
আমারও মনে হয় বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক মেয়েই আছে যারা কোন না কোন ভাবে এমন ঘটনার শিকার হয়নি।
"মুরুব্বি হওয়ার আগে শিশুর বন্ধু হোন।"
একদম সহমত! খুব ছোটতেই, বুঝতে শেখার আগেই যদি জীবনের কদর্যতা আর অশ্লীলতা কোন শিশুর উপর এমন নোংরা ভাবে আরোপিত হয় যেখানে কিনা শিশুটি বুঝতেও পারেনা,তার ভূমিকা কতটুকু ছিল - তার চেয়ে ভয়ংকর আর কিছু কি হতে পারে?তাই পরিবারের সবার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এখানে শিশুদের সচেতন করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আর আমার মনে হয়, অবদমিত যৌন বাসনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হতে পারে কিন্তু সবসময় এটি প্রধান কারন নয়।
অনেক সময় অনেক বিবাহিত এবং নানা দাদার বয়সী মানুষজন কেও এমন নোংরা কাজ করতে শুনেছি।
যাই হোক, আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময়!!!
সাফিনাজ আরজু
সালাম জানাই। আপনি আসলেই শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অনেক ধন্যবাদ।
শিশুদের নিরাপত্তা দেয়া বড়দের পবিত্র দায়িত্ব। সেটা অপবিত্র করে যে "দোপাইয়া জানোয়ার" তাদের শক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ এবং তার ভালোমত পাবলিসিটি হওয়া উচিৎ - তবে যদি কোন ফল হয়।
-অয়ন
আমিও ঠিক এই কারনেই নীরবতা ভাঙতে চেয়েছি, তাতে যদি কোন ফল হয়, তাই নিজের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগাভাগি করেছি।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ!
নীরবতা ভেঙে এই বিষয়ে লেখার জন্য আপনাকে কুর্নিশ।
নীরবতা শোনা যায় না, এই জন্যই সরব হওয়া দরকার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
উৎসাহিত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
সরব হলেই এবং আলোচনার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
সমাজের আরও সবাইকে সতর্ক করা যায়!
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
এরকম আরো লেখা আসুক। সংকোচের দেয়ালটা ভেঙে পড়ুক।
সকল প্রকার যৌন নির্যাতন সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ুক।
সকল প্রকার যৌন নির্যাতন বন্ধ হোক।
নারী ও শিশু নিপীড়ণ নিয়ে একটি সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম, চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
"সকল প্রকার যৌন নির্যাতন সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ুক।
সকল প্রকার যৌন নির্যাতন বন্ধ হোক।"
সকল রকম নির্যাতন বন্ধ হোক, আমাদের সচেতনতা আরও বৃদ্ধি পাক!!!
অবশ্যই পড়ে দেখব রাজা ভাই!
ভালো থাকবেন।
আপনাকে কুর্নিশ এরকম একটা লেখার জন্য। সচেতনতা ই পারে সকল প্রকার যৌন নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে। এরকম আরও লেখা আসুক। নিরবতা ভেঙ্গে প্রতিবাদ হোক।
নীরবতা ভেঙ্গে প্রতিবাদ করা আমাদেরই শিখতে হবে।
আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে!
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন