গ্লিম্পস অব হেভেনঃ বিরিশিরি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১২/১০/২০১২ - ১০:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
ঘোরাঘুরি করতে করতে আমি এবং আমার বন্ধুদের তেমন কোন যায়গা আর বাকি নেই বাংলাদেশে। তারপরেও কয়দিন পরপর আমাদের কারো না কারো মধ্যে ঘুরাঘুরির হাউস জাগ্রত হয়।এই হাউস বিভিন্নজন হয়ে এবার আসল আমাদের বউদির কাছে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের হঠাৎ রিনা বউদির ফোন। বউদি বললেন সামনের সপ্তাহে শুক্রবার এবং শনিবার ঢাকার আশেপাশে কোথাও যেতে হবে নতুবা উনি সম্পর্ক ত্যাগ করবেন। কি আর করার, এরূপ হুমকি শোনার পরে দাদার সাথে আলোচনায় বসতে হল। দাদা প্রস্তাব করলেন এবার আমরা বিরিশিরি যাব। এই যায়গাটি সম্পর্কে আমার পূর্ব ধারণা নেই তাই অনেকটা অন্ধকারে থেকে রাজি হয়ে গেলাম। বন্ধু রনি এবং ও বিলাশ রাজি হয়ে গেল যাবার জন্য। সৃতি যদি প্রতারণা না করে তবে আমরা রওনা হয়েছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসের নয় তারিখে।

দুই.
নয় ফেব্রুয়ারি আমাদের বিরিশিরি যাত্রার দিন। সকালে ঘুম থেক উঠে যে যার অফিসে, তবে সবার মাথার মধ্যে আছে যে বিকেল পাঁচটার মধ্যে মাহাখালি বাস স্ট্যান্ডে হাজির হতে হবে কারণ বিরিশিরি যাবার শেষ বাসটি ছাড়ে ছয়টার সময়। যাহোক অফিস যথাসম্ভব ফাকি দিয়ে, ঢাকা শহরের জ্যাম এর সাথে যুদ্ধ করে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম ছয়টা বাজার অল্প কিছুক্ষণ আগে। কাজকর্ম সেরে বিভিন্ন বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বাসস্ট্যান্ডে এসে সবার মধ্যে যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। অনেকেই দেখলে হয়ত বলবে এসব স্রেফ পাগলামি কিন্তু আমরা তাদেরকে বলি—

We know we are mad
But we live for little moment like that.

তিন.
ছয়টার গাড়ি মোটামুটি সাতটার দিকে যাত্রা শুরু করল। গাড়ি কথা কিছু বলব না, তবে মনে আনন্দ থাকলে মুড়ির টিনকেও স্ক্যানিয়া বলে মনে হয়। যাহোক ভয়াবহ রোড (তবে রোডের কাজ চলছিল পুরোদমে) শুধুমাত্র মনের আনন্দের জোরে পার করে আমরা বিরিশিরি বাস স্ট্যান্ড গিয়ে পৌঁছলাম রাত ১ টার দিকে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং শুনশান নীরবতা মধ্য দিয়ে হেটে হেটে আমরা উঠলাম বাস স্ট্যান্ড থেকে সামান্য দূরত্বে YWCA রেস্ট হাউসে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, YWCA তে নাকি আমাদের নামে কোন বুকিং নাই! যাহোক বেশ কিছুক্ষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে জানলাম আমাদের বুকিং আসলে YMCA তে। যাহোক সে রাতে আর YMCA তে যাওয়া হয়নি; YWCA তে দুটি রুম নিয়ে থেকে গেলাম। আগের থেকে খাবার অর্ডার করা হয়নি তাই বিস্কুট এবং পানি দিয়ে পাগলামিময় একটি দিনের শুভ সমাপ্তি করলাম। পরেরদিন সকাল থেকে অভিযান শুরু করতে হবে তাই তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যেতে হল।

চার.
হাত ঘড়িতে এখন নয়টা। সকালটা দেখেই বুঝলাম সামনে অসাধারণ কিছু মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। বিরিশিরি বাসস্ট্যান্ডের এক হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে আমরা তিনটি রিক্সা ঠিক করলাম। আমরা এখন যাচ্ছি সমেশ্বরী নদীর অন্য পারে অবস্থিত নীল পানি সহ আরো কিছু স্পট দেখবার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছলাম সুমেশ্বরী নদীর তীরে। মাঝে মাঝে অনেক কিছুর সৌন্দর্য লিখে বোঝান যায় না, সমেশ্বরী হচ্ছে ঠিক সেধরনের কিছু। ছোট্ট একটি শব্দ শুধু ব্যবহার করা যায় অসাধারণ। পদ্মার যেমন নিজস্ব রূপ আছে তেমনি সমেশ্বরীর আছে পাগল করে দেওয়া রূপ। নদীর ওপারে যেতে হবে নৌকায় করে। নৌকায় রিক্সা এবং মানুষ সবাই উঠল। নৌকা ছেড়ে দিল, আমরাও যে যার মত সমেশ্বরীর সাথে কিছু স্বর্গীয় মুহূর্ত কাটাতে লাগলাম, গ্লিম্পস অব হেভেন।

2

সমেশ্বরী

3

সমেশ্বরী

4

সমেশ্বরী

6

সমেশ্বরীতে দাপাদাপি

7

সমেশ্বরী

পাঁচ.
কিছু স্বর্গীয় মুহূর্ত কাটিয়ে আমরা এখন সমেশ্বরীর অন্য পাড়ে। আমাদের রিক্সা তিনটি নৌকায় করে পাড় হয়ে এখন রাস্তায় অপেক্ষা করছে আমাদেরকে নীল পানিতে নিয়ে যাবার জন্য। চলছি নীল পানির উদ্দেশ্যে, রাস্তার দুপাশের সবুজ এতটাই মুগ্ধ করে দিল যে বন্ধু আল- আমিনের দেওয়া আমেরিকান সিগারেট না ধরিয়ে পারলাম। বিশেষ কিছু মুহূর্তকে আরও একটি বেশি বিশেষ করে তুলতে সিগারেটে টান দিতে হয়—শ্রদ্ধেয় শিক্ষক স্বপন স্যারের এই কথাকে না মেনে পারলাম না। প্রকৃতির সাথে আবেগের আদান প্রদানের পরও কিছু একটা মিস করছিলাম—তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশের সিটটি খালি। এজন্য আমি সবসময় বলি—

Girls are special

l

যাহোক ক্ষণিকের আফসোস কেটে গেল নীল পানি এবং সাধু যোষেফের ধর্মপল্লী দেখে। এই জায়গাগুলা দেখার পরে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকল না যে আমাদের এই দেশ শুধুমাত্র পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভর করেই যথেষ্ট পরিমাণ উন্নতি করতে পারে।

8

নীল পানি

12

শান্তি কুটিরঃ সাধু যোষেফের ধর্মপল্লী

12.2

বিজিবি ক্যাম্পে

13

হজং মাতা শহীদ রাশিমণী সৃতি সৌধ

ছয়.
নীল পানি, সাধু যোষেফের ধর্মপল্লী দেখে আমরা এখন গাড়ো পাহাড়ে। চারিদিকে শুধু ছোট ছোট পাহাড় এবং সবগুলো সবুজ গালিচা দিয়ে ঢাকা। কিছুক্ষণ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিলাম সবাই। এই পাহাড়গুলো থেকে ভারত দেখা যায়।

14

গাড়ো পাহাড়ে

15

গাড়ো পাহাড় থেকে ভারত

17

বাংলার মাটিতে ফাকিস্তানের নাম

গাড়ো পাহাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে আমাদের ফিরবার পালা। ফেরার পথে দুর্গাপুর বাজারে কিছু সময়ের বিরতি নিলাম, উদ্দেশ্য বিরিশিরির মিষ্টি এবং পরোটা খাওয়া। কিছু বিকেল অন্য যেকোনো বিকেলের তুলনায় একটু আলাদা। আর বিরিশিরির এই বিকেল একটু বেশিই আলাদা। হোটেলে গিয়ে একটু আধটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যার পরে আবার বের হলাম সমেশ্বরীর তীরে গিয়ে একটি স্বর্গীয় আড্ডা দিব বলে। যাহোক ঘুটঘুটে অন্ধকারের কারণে আমাদের আর সমেশ্বরীর তীরে যাওয়া হয়নি। কিছুতেই ভুলতে পারছি না সমেশ্বরীকে। কিছুটা আফসোস নিয়ে পরেরদিন সকালে রওনা ঢাকার দিকে। গাড়ি চলছে আর পিছনে রয়ে গেল সমেশ্বরী। সবাই মনে হয় মনে মনে বলছে আবারো ফিরতে চাই সমেশ্বরীর তীরে; আরো একটি স্বর্গীয় মুহূর্তের জন্য।

তন্ময়_আহসান


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

ঘোরাঘুরি চলুক, লেখা চলুক।

সম্ভব হলে ভাষা আরেকটু কাটছাঁট করে ধারালো করে ফেলতে পারেন পরের লেখায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দারুন! দারুন!!
ভ্রমণ নিয়ে পোস্টে সচলায়তন ভরে উঠুক।

অতিথি লেখক এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ, বেশ সুন্দর বর্ণনা। আপনার লেখা পড়ে আমার মন বলছে চলো বিরিশিরি হাসি

-এক জোনাকি

অতিথি লেখক এর ছবি
ওডিন এর ছবি

নদীর নামটা কি 'সোমেশ্বরী' না? চিন্তিত

লেখালেখি আর ঘুরোঘুরি, দুটোই জারি থাকুক। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ কয়েকটি বানান পেয়েছি। নিশ্চিত না হবার জন্য দুঃখিত

ফেইসবুক

ফাহিম হাসান এর ছবি

চমৎকার ছবি তোলার হাত - আরো কিছু দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক গুলো ছবিই আমার বন্ধু রনির হাসি

ফেইসবুক

তাপস শর্মা এর ছবি

দারুণ লাগল। চলুক

আরও ছবি চাই। আসলেই মুগ্ধতা ধরে রাখার মতো ছবি তোলার হাত আপনার

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

ক্রেসিডা এর ছবি

১.থাকার ব্যবস্থা নেই কোন?
২. যেতে কতক্ষন লাগে?

ধন্যবাদ।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অতিথি লেখক এর ছবি

YWCA এবং YMCA দুটি হোটেল পাবেন। YWCA তুলনামূলক ভাল।
ঢাকা থেকে যেতে ৬-৮ ঘণ্টা লাগতে পারে, আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন রাস্তা ভাল ছিল না।
ফেইসবুক

ক্রেসিডা এর ছবি

আগরেটায় বলতে ভুলে গেছি, যে পূর্বে কোন বুকিং না দিলে বা YMCA ছাড়া আর কোন ব‌্যবস্থার কথা।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অতিথি লেখক এর ছবি

YWCA এবং YMCA দুটি হোটেল পাবেন। YWCA তুলনামূলক ভাল।

সত্যপীর এর ছবি

নীল পানির ছবি দেখায়া চোখ কপালে তুইলা দিলেন রে ভাই। অতি উত্তম জাঝা চলুক

পরের লেখায় বানান খিয়াল কৈরা এট্টু। পোস্টে পাঁচতারা দিলাম।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ!

যুমার এর ছবি

ছবি উত্তম জাঝা!

রু এর ছবি

পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানী।

ছবি খুব ভালো লাগলো। আরো লিখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

রু এর ছবি

বলতে ভুলে গেছি। লেখার নামটা বাংলাতে দিতে পারতেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

নামটা নিতে কেমন যেন ভাল লাগছিল, তাই দিলাম আরকি হাসি

শাব্দিক এর ছবি

দারুন, এই শীতেই বিরিশিরি যাবার প্ল্যান আছে। আপনার পোস্ট পড়ে দ্বিগুণ উৎসাহ পেলাম।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

জুন এর ছবি

দেঁতো হাসি আম্মোগেছি।। দেঁতো হাসি

ছবিগুলো দারুন।

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

কাজি মামুন এর ছবি

বিরিশিরিতে গিয়েছিলাম। অবশ্য রাস্তার দশা ছিল খুবই করুন। আমরা থেকেছিলাম ‌YMCA তে। সোমেশ্বরী নদী সত্যি সুন্দর। পানি খুব পরিষ্কার। নদী পার হলে পাওয়া যায় ছোট্র সবুজ গা, তার কিছু দূরেই সেই বিখ্যাত নীল পানির লেক, শ্বেতমৃত্তিকার পাহাড়ের পাশেই।

'সমেশ্বরী' ট্যাগ লাগানো ছবিটি অনবদ্য। অন্য ছবিগুলোও সুন্দর। তবে নীল পানির ছবিটিতে পানি অত নীল মনে হচ্ছে না কেন? আর সীমানা নির্দেশক পিলারটির ব্যাপারে বলতে হয়, এমন পিলার আরো কয়েক জায়াগাতেও দেখেছি, আশ্চর্য হল, স্বাধীনতার চার দশক পরেও পরাধীনতার চিহ্নগুলো রেখে দেয়া হয়েছে! কোন সরকারি উদ্যোগই নেয় এগুলো রিপ্লেসের।

লেখালেখি চলতে থাকুক। ভাল থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

তানিম এহসান এর ছবি

দেশের ভেতর আমার সবচাইতে পছন্দের জায়গাগুলোর একটি, এই নদী আমাকে প্রচন্ড টানে। বহুদিন হয়ে গেলো যাওয়া হয়না। আপনার লেখা পড়ে যাওয়ার আগ্রহ আরো তীব্র হলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলেন যাই।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দারুণ!

তন্ময়_আহসান এর ছবি

হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

বিরিশিরি সুন্দর জায়গা।

...........................
Every Picture Tells a Story

তন্ময়_আহসান এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।