ওস্তাদের মার শেষ পাতে - পর্ব ১

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি
লিখেছেন ঈপ্সিত আর চম্পাকলি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৪/১০/২০১২ - ১২:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

~উপক্রমণিকা~

- “হ্যালো, রিমি পালের সাথে কথা বলা যাবে?”
- “হ্যাঁ, বলছি, আপনি কে বলছেন?”
- “আমি লালবাজার থেকে ডেপুটি কমিশানার অফ্‌ পুলিস অরুণ বাসু বলছি। কালকে রাতে ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ রীয়ালিটী টিভি শো-এর স্টুডিওয় মিস্টার বান্টি ঘোষের আকস্মিক মৃত্যু সংক্রান্ত কিছু রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করছি আরকি। ব্যাপারটা বেশ হাই প্রোফাইল বলে আমি নিজেই আপনার সাথে কথা বলতে চাই।”
- “ও, হ্যাঁ, ওইটা এমন হুট করে সব্বার সামনে হল, যে কি বলব। আসলে কোনদিন কোন মানুষের শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় তো থাকিনি, এইবার চোখের সামনে দেখে সারারাত আর দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।”
- “আপনি ঘন্টাখানেকের মধ্যে লালবাজার থানায় একবার চলে আসতে পারবেন?”
- “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।”
ঘন্টাখানেকের মধ্যে বছর পঁচিশেকের ছিপছিপে তন্বী রিমি এসে উপস্থিত হল লালবাজার থানায়। চোখে রোদ-চশমা। সমস্ত অভিনেতা অভিনেত্রীরাই মনে করে চোখে সান্‌-গ্লাস থাকাটা বোধহয় তারকা-স্ট্যাটাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খুব দামী একটা পারফিউমে চারদিকে একটা খুশী খুশী গন্ধ হয়ে গেল।
- “ডিসিপি অরুণ বাসুর সঙ্গে আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে”, মৃদুকন্ঠে রিমির মন্তব্য।
- “আমিই অরুন বাসু। আপনি রিমি?”
- “হ্যাঁ”
- “কালকে রাতে ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ স্টুডিওর সেটে আপনি শেষ অবধি ছিলেন?”
- “হ্যাঁ”
- “আপনাদের এই রিয়্যালিটি শো-এ বান্টি ঘোষ কি প্রত্যেকটা এপিসোডেই বিচারকের আসনে বসতেন?”
- “হ্যাঁ। রান্না কম্পিটিশানের এই রিয়্যালিটি শো-এ আমাদের শো এর প্রোডিউসার অনিল বাজাজ প্রথম থেকেই বিখ্যাত ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’ চেইন রেস্টুরেন্টের মালিক বান্টি ঘোষকে বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ করেছিলেন।”
- “আর কাকে কাকে বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল?” ডিসিপি অরুণ বাসুর বাড়ির লোক রোজই টিভিতে খেতে বসে এই জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো-টি হাঁ করে গেলে, আর তাই অরুণ বাসুকে খানিকটা বাধ্য হয়েই এই শো-টা দেখতে হয়। মোটামুটি নিয়ম-কানন পাত্র-পাত্রী সবই মুখস্থ হয়ে গেলেও কিছু রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হবে।
- “প্রখ্যাত শেফ্‌ কুনাল গোস্বামি, বড় পর্দার নায়িকা রূপা রায়, আর ম্যাজিসিয়ান মেঘনাদ গুপ্তা।”
- “কতদিন ধরে চলছিল আপনাদের এই শো?”
- “সীজন ওয়ান চলেছিল ৬ মাস আর সীজন টু-ও তাই। গতকাল সীজন টু-এর মেগা-ফাইনাল ছিল।”
- “আর আপনিই আগাগোড়া অ্যাংকরিং-এর দায়িত্ত্বে ছিলেন, তাই তো?”
- “হ্যাঁ, সেই সীজন ওয়ানের প্রথম শো থেকেই।”
- “বেশ কাকতালীয় ব্যাপার, তাই নয়কি? একেবারে মেগা ফাইনালের দিন বিচারকমন্ডলীর একজনের অনুষ্ঠান চালাকালীনই রহস্যজনকভাবে ম্রৃত্যু!”
- “আপনি রহস্যজনক কেন বলছেন জানিনা, কারণ হার্ট অ্যাটাক তো আকস্মিকই হয়, সবার ক্ষেত্রেই তাই। তবে সত্যি বলতে কি, আমি ঠিক্ ভাবিনি যে বান্টিজির সত্যি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম আমাদের ডিরেক্টারের নির্দেশে হয়ত উনি আমাদের শো-এ একটু অভিনয় করছেন যাতে এই নিয়ে আবার একটু প্রেস কাভারেজ পাওয়া যায় আর আমাদের টি-আর-পি যথারীতি চড়চড় করে বেড়ে যায়।”
- “ও, আপয়াদের রিয়ালিটি শো-এ এইসব কি হামেশাই অভিনীত হয় নাকি?”
- “না না, তা নয়, তবে মেগা ফাইনাল তো, এর পরের সীজন শুরু হবে আবার একমাস পরে, তাই ভাবলাম হয়ত এটা একটা চমক দিতে চেয়েছেন। আর আমাকেও কিছু আগে থেকে জানাননি যাতে আমাদের রীয়াল ইমোশানগুলো সব ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তখন তো জানতাম না, ওনার সত্যিই স্ট্রোক হয়েছে!”
- “মিস পাল, আপনি হয়ত জানেননা, আমাদের প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট কিন্তু স্ট্রোক বলছে না।”
- “তবে?”
- “বলছে লিভার ফেইলিওর, এখন এটাই দেখার যে ফেইলিওরের কারণটা কি!”
- “ওঃ, লিভার ফেইলিওর যদি জেনে গিয়েই থাকেন, তাহলে রুটিন ইন্‌কয়্যারিরই বা কি দরকার?”
- “আমাদের পলিস ডিপার্টমেন্টকে আপনারা যাই ভাবুন না কেন, আমাদের কিন্তু খুব সিস্টেম্যাটিক্যালি আর সায়েন্টিফিক্যালি এগোতে হয়। লিভার ফেইলিওর কিন্তু টক্সিক ওভারডোজেও হয়। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে বলছি না, অন্যান্য সম্ভাবনাও আছে, যেমন এই লিভার ফেইলিওর হেপাটাইটিস বি বা সি হলেও হয়, আবার অত্যন্ত বেশী ড্রিঙ্ক করলেও হয়, সিরোসিস অফ লিভারেও হতে পারে, সাধারণ জ্বরের ওষুধ প্যারাসেটামল বেশী খেয়ে ফেললে ওভারডোজ হলেও লিভার ফেইল করে যায়, এরকম হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কাজেই ইনকোয়ারি আমাদের করতেই হবে। অ্যাক্সিডেন্টাল না ডেলিবারেট এই মিমাংসায় এখোনো পৌঁছোইনি আমরা।”

বান্টি ঘোষের রহস্যজনক মৃত্যুর চার পাঁচ দিন পর রনিদের ড্রয়িংরুমে জমায়েত হয়েছেন রনির বাবা কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশানার অফ্‌ পুলিস অরুন বাসু, মিসেস বাসু, রনির বেস্টফ্রেণ্ড তিষ্যা এবং তিষ্যার বাবা ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা। আজকাল রনিদের বাড়ি এরকম আড্ডা মাঝে মাঝেই জমছে। তিষ্যার আকর্ষন অরুনবাবুর ডিপার্টমেন্টের রিয়েল লাইফ রহস্যময় কেস গুলোতে। মিসেস বাসুর উদ্দেশ্য ম্যাজিসিয়ান গুপ্তার থেকে দেশ বিদেশের ম্যাজিকের গল্প শোনা। ম্যাজিসিয়ান বাসুর আকর্ষন মিসেস বাসুর হাতের সুস্বাদু রান্না। অরুনবাবুর উদ্দেশ্য জমিয়ে আড্ডা মারা। রনির উদ্দেশ্য বহুমুখী, মায়ের হাতের ফ্যান্টাস্টিক রান্না, তিষ্যার সঙ্গলাভ, ম্যাজিকের গল্প, সব মিলিয়ে দারুন একটা সন্ধ্যে।

আজ অবশ্য ম্যাজিকের গল্প ধামাচাপা পড়ে গেছে। প্রধান আলোচনার বিষয় হল বান্টি ঘোষের মৃত্যুর খবর। গোটা শহরে এখন একটাই চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অতগুলো ক্যামেরার সামনে একটা রিয়্যালিটি শো চলাকালীন কেউ মারা গেলে সেটা নিয়ে চরম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবার কথাই।

অরুনবাবু ফুলকপির পাকোড়ায় কামড় দিয়ে বললেন “এই কেসটা নিয়ে মিডিয়া এখন করে খাচ্ছে। একটা জিনিস আমি কিন্তু লক্ষ্য করেছি, পাব্লিক এইধরণের খবর খুব ভালোবাসে। এই যে ঘুম থেকে ঊঠে শান্ত হয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসেই প্রথম পাতায় যত রাজ্যের খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, যুদ্ধ, অ্যাক্সিডেন্ট এইসব খবর চোখে পড়ে, এটা কিন্তু খবরের কাগজের সম্পাদকেরা এডিটাররা ইচ্ছে করেই করে। যেই না একটা লোক মরল, কোথায় আহারে বলে তার আত্মার শান্তি কামনা করবি, তা নয়! দিনরাত ওই ক্লিপিংস্‌ দেখাচ্ছে সমস্ত চ্যানেল। শুনতে পেলাম ওই প্রোডিউসার নাকি অসম্ভব চড়া দামে ওই টেপ রিলিজ করেছে সব নিউজ চ্যানেল গুলোর কাছে। জ্যান্ত লোকটা মরে যাচ্ছে এটা দেখার উল্লাস সেই গ্ল্যাডিয়েটরের যুগ থেকেই চলে আসছে আরকি। তবে সত্যি কথা বলতে কি আমরা এখোনো এটাই বুঝে উঠতে পারিনি এটা অ্যাক্সিডেন্টাল মৃত্যু না পরিকল্পিত হত্যা।”

মিসেস বাসু ম্যাজিসিয়ান গুপ্তাকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি তো বিচারকদের মধ্যে ছিলেন। বান্টি ঘোষকে কাছ থেকে দেখেছেন, কি মনে হয় ওঁকে কেউ খুন করতে পারে?”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন “তা পারে ম্যাডাম। এই রিয়েলিটি শোতেই এমন তিন চার জন আছেন যাদের ওঁর সাথে শত্রুতা ছিল। সে কথা আপনার কর্তাও আন্দাজ করেছেন। তবে আমি কয়েক মাস এই শোতে যুক্ত ছিলাম, তাছাড়া জানেন তো আমাদের যাদুকরদের দৃষ্টি, শ্রবন আর ঘ্রাণ শক্তি একটু বেশী হয়। তাই হয়ত আমি এমন দু একটা তথ্য জানি যা অরুনবাবুর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেই জন্যই আমার মনে হয় বান্টি ঘোষকে খুন করতে মোটিভের অভাব হবে না।”

অরুনবাবু বললেন “তাহলে আপনার দৃষ্টি থেকে পুরো ব্যপারটা একবার বলুন না শুনি। আপনার অ্যানালিসিস আগের দুটো কেস সলভ করতে সাহায্য করেছে। এবারও হয়ত কোন ফল পাব।”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন “তা হলে প্রথম এপিসোড থেকে শুরু করা যাক। বরং সীজন টু-এর ভিডিও সিডিটা চালান। সবাই মিলে আরেকবার এডিট করার আগের র-প্রিন্টটা দেখা যাক।”

~ ফিরে দেখা - পর্ব ১: ‘আপ রুচি খানা’ ~

- “স্বাগতম! শাস্রিয়াকাল্! খুশ্‌আম্‌দিদ! ওয়েল্কাম! ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ শোয়ের সীজন টু-এর রাউন্ড ওয়ানে আপনাদের সবাইকে সুস্বাগতম্‌! আমি আপনাদের বন্ধু রিমি এসে গেছি আপনাদের পছন্দের সেরা শো ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’র সীজন টু-এর রাউন্ড ওয়ানে বাংলার সেরা পঞ্চাশজন প্রতিযোগী নিয়ে। আজকে আমাদের মধ্যে রয়েছেন সত্তর বছর বয়সী শ্রীমতী প্রতিমা পালিত, এই শো-এর বয়ঃজ্যেষ্ঠ প্রতিযোগিনী, আবার রয়েছেন আক্ষরিক অর্থেই অষ্টাদশী রিয়া চ্যাটার্জী, আমাদের কনিষ্ঠতমা প্রতিযোগিনী। সত্তর আর আঠারো – এই দুই এক্সট্রীম্‌সের মধ্যে রয়েছেন আরো আটচল্লিশ জন বিভিন্ন বয়সী প্রতিযোগী। আমরা দর্শক বন্ধুদের আরেকবার মনে করিয়ে দি আমাদের অনুষ্ঠানের যোগদানের প্রাথমিক শর্তই হল এই যে কোন পেশাদার রাঁধুনি বা শেফ্‌ এই শো-এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আমাদের আজকের পঞ্চাশজন প্রতিযোগীরই প্যশান রান্না, কিন্তু কারোরই রান্নাটা প্রোফেশান নয়। দেখা যাক, প্রথম রাউন্ডে কার কার ভাগ্যে রাউন্ড টু-র শিকে ছেঁড়ে। প্রথম রাউন্ডের নিয়মগুলো আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক!”, প্রতিযোগিনীদের দিকে ফিরে রিমির মন্তব্য, “রাউন্ড ১ – ‘আপ রুচি খানা’তে আপনাদের পছন্দসই যে কোন একটা পদ রান্না করতে হবে আমাদের পছন্দের উপকরণ দিয়ে। সময় থাকবে ঠিক পঞ্চাশ মিনিট। সবগুলো উপকরণই কিন্তু ব্যাবহার করতে হবে। আপনাদের প্রত্যেকের রান্না চেখে দেখবেন আমাদের বিচারক-মন্ডলী। আলাপ করিয়ে দিই, আমাদের মধ্যে বিচারক হিসেবে রয়েছেন জিবে জল আনা খাঁটি বাঙ্গালি ফাস্ট-ফুড চেইন রেস্টুরেন্ট ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’এর মালিক বান্টি ঘোষ! রয়েছেন বাজাজ ফাইভ-স্টার গ্রুপ অফ্‌ হোটেলসের সাথে যুক্ত একমাত্র বাঙ্গালী আমাদের সব্বার ফেভারিট মাস্টার শেফ্‌ কুনাল গোস্বামি। রয়েছেন ‘এই রাত তোমার আমার’ ছায়াছবির হিট্‌ এবং হট্‌ হার্টথ্রব রূপা রায়। আর আমাদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত ম্যাজিসিয়ান মেঘনাদ গুপ্তা!”
সমস্ত হল হাততালিতে ভরে গেল। বিচারকেরা একে একে তাঁদের চেয়ারে এসে বসলেন। পঞ্চাশজন প্রতিযোগিনীর সব্বাই নিজেদের নাম ও কি করেন সেটা বিচারক ও দর্শক মন্ডলীকে বললেন। এরপর রিমি বিচারকদের অনুরোধ করল অনুষ্ঠান সম্পর্কে দুএক কথা বলতে। “রূপাদি আপনি শুরু করুন।“

রূপা তার স্বভাবসিদ্ধ প্লাস্টিক হাসি মুখে মেখে ন্যাকা ন্যাকা ভঙ্গিতে বললেন “রান্না করতে আমি খুব ভালবাসি। সারা সপ্তাহ শুটিং এর কাজে ব্যাস্ত থাকি তাই রাঁধার সময় হয় না কিন্তু রবিবার আমি অন্তত একটি পদ নিজে হাতে রান্না করি। আমি মনে করি মেয়েরা বাইরে যত কাজ করুক, রান্নাঘরকে অবহেলা করা উচিত হয়। এই অনুষ্ঠানে জাজ হতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে।”

-“অনেক ধন্যবাদ রূপাদি, মিস্টার ঘোষ আপনার কি অনুভুতি?”

বান্টি ঘোষ মাঝবয়েসী বেঁটে খাটো মানুষ। কিন্তু বেশ রাসভারী ব্যাক্তিত্ব। রিমি তাকে সহসা বান্টিদা বলে ডাকতে পারেনি। রঙ ময়লা, ঠোঁটের উপর ছাঁটা গোঁফ, চোখ দুটি দেখলে মনে হয় পোড় খাওয়া ঝানু মানুষ। বান্টি ঘোষ সহাস্যে বললেন “আমার দারুন এক্সাইটেড লাগছে। কেমন মনে হচ্ছে রোল রিভার্সল হয়েছে। আমি রেস্টুরেন্টের বিজনেস করি। কাস্টমাররা হচ্ছে আমাদের জাজ। একটা নতুন ডিশ কতটা ভাল সেটা ডিপেন্ড করে পুরোপুরি কাস্টমারের জাজমেন্টের উপর। কিন্তু এখানে আমি এসেছি জাজ হয়ে। প্রতিযোগীদের রান্না খেয়ে বলতে হবে কেমন হয়েছে। কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন কিন্তু আমি খুব এনজয় করব।”

“বাহ আপনার কথা শুনে খুব ভাল লাগল। কুনালদা আপনি কি বলেন? শেফ এর ভূমিকা ছেড়ে বিচারকের ভূমিকায় কেমন লাগছে?”

কুনাল গোস্বামি কে না বলে দিলে মনে হয় না ফাইভ স্টারের মাস্টার সেফ। ছিপছিপে ফর্সা চেহারা, ধারালো কাটা কাটা চোখ, নাক, মুখ, রেমন্ডসের সুটে সুসজ্জিত চেহারা। দেখলে মনে হয় কোনো কর্পোরেট কোম্পানীর বিজি এক্সিকিউটিভ। কথাবার্তায় ও বেশ উন্নাসিক। চশমাটা নাকের উপর বসিয়ে বললেন “কুকিং ইজ অ্যান আর্ট। রন্ধন একটি শিল্প। যারা ভাবেন কড়াইতে নেড়েচেড়ে সুস্বাদু কোনো খাবার পাতে ফেলতে পারার নাম রান্না তারা ভুল ভাবেন। রান্না একটি শিল্প যার অনেকগুলো স্তর আছে। প্রথমে পরিকল্পনা কি রাঁধবেন, কিভাবে রাঁধবেন, কাঁচামাল নির্বাচন, যার সাথে জড়িত আছে পরিবেশ এবং প্রকৃতি। আপনি যদি ভাবেন অক্টোবর মাসে কাঁচা মিঠে আমের টক রাঁধবেন বা লাদাখে বসে ইলিসের পাতুরি করবেন তবে আপনার রেসিপি ফেল করতে বাধ্য। তারপর মূলপর্ব অর্থাৎ খাবারটি তৈরী করা। এইসময় সবথেকে প্রয়োজন মনে রাখা আপনি কি রাঁধছেন সেটাই আসল, কে খাবে সে কথা ভেবে রাঁধবেন না। আমরা বাঙ্গালিরা এই দোষে অন্যান্য দেশের কুইজিনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত। আমরা সমস্ত রেসিপি বেঙ্গলাইজ করে ফেলেছি। আমাদের নাম্বার ওয়ান চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে যে চাইনিজ কুইজিন পাওয়া যায় তা চায়নায় অন্তত কেউ খায় না। বাঙ্গালি পোলাওয়ের রংচঙ্গে ভার্শানকে চাইনিজ ফ্রায়েড রাইস বলে এইসব রেস্টুরেন্টে চালানো হয়। কাজেই রান্নার সময় রেসিপিকে মর্যাদা দিন। তারপর আসে প্রেসেন্টেশান। যে কোনো রেসিপির ফিফটি পার্সেন্ট হল প্রেসেন্টেসন। আজকাল অনেক বড় বড় রেস্টুরেন্টে বাফে সিস্টেম চালু হয়েছে। স্টার্টার থেকে ডেসার্ট পর্যন্ত এক টাইপের গামলায় সার্ভ করা হয়। এটা জাস্ট হরিব্ল। আমি প্রপার প্রেসেন্টেশান ছাড়া কোনো রেসিপি শেষ করার কথা ভাবতেও পারিনা। থার্ড হল কাস্টমারকে শিক্ষিত করা। যিনি খাবেন তাঁকে জানতে হবে তিনি যে খাবারটি খেতে চলেছেন তার টেস্ট কেমন। তার জন্য দরকার প্রত্যেক খাবারের প্রপার ডেস্ক্রিপশান। এই যে অনেক রেস্টুরেন্টে দেখবেন ফিস ওরলি বা চিকেন সিক্সটি-ফাইভ নামের ডিস পাওয়া যায়। কাস্টমার এই নাম থেকে কি বুঝবেন মাছ উড়ে যাচ্ছে না পঁয়ষট্টি টুকরো চিকেন পাওয়া যাচ্ছে? একটি রেসিপি সম্পুর্ণ হবে যখন আপনি এই সমস্ত স্টেপ ফলো করবেন। প্রতিযোগীদের কাছে আমার অনুরোধ প্রতিযোগিতা জেতার জন্য মুখোরোচক রেসিপি বানাবেন না। একটি রেসিপিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেবেন।”

কুনাল গোস্বামির চমৎকার বক্তৃতায় স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে প্রচুর হাততালি পড়ল। রিমি ধন্যবাদ সুচক কিছু বলার আগেই বান্টি ঘোষ তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে বললেন “কুণালবাবু যা বললেন শুনতে চমৎকার লাগল। তবে উনি ফ্রান্সে পড়াশোনা করেছেন, কাজেই আমাদের বাঙ্গালি রসনার সাথে সেভাবে মোলাকাত হয়নি। আমার বিজনেস এক্সপিরিয়েন্স কিন্তু বলে আমাদের বাঙ্গালি মা মাসিরা তাদের হেঁসেলে পৃথিবীর সমস্ত কুইজিনকে নিজেদের মত গড়ে-পিটে নেন। আর সেই টেস্টই বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত পছন্দ করেন। আমি বাপু খাবার জিভ দিয়ে খাই। খাবার চোখে দেখার থেকে চেখে দেখাতেই আমার বেশী আগ্রহ। পেট ভরানোটাই আসল কথা। পেহ্‌লে দর্শনধারী কোন খাবার যদি আমার রসনাকে পরিতৃপ্ত করতে না পারে তাহলে আমি তার গুণবিচারে শূণ্যই দেব।

রিমি বলে উঠল, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, “দেখিতে আপেল আর খাইতে মাকাল, সে ফল পাড়িতে যাওয়া কেবলই নাকাল?”
- “একদম ঠিক।”

দর্শকদের মধ্যে হাসির হর্‌রা উঠল। রিনি মাইকটা কুণালের দিকে আবার এগিয়ে দিয়ে বলল “কুণালদা, আপনি কি মিস্টার ঘোষের সাথে একমত?” রিনি জানে রিয়েলিটি শোতে এইসব টুকটাক কথা কাটাকাটি পাব্লিক ভালই খায়। তাই কুনালকে উস্কে দিল।
কুনাল মৃদু হেসে বললেন “খাদ্য পেট ভরানোর জন্য সে কথা একশবার মানি। কিন্তু পেটের কাছে শুকনো রুটি আর এক্সট্রা ক্রিমী চকোলেট কেকের ফুড ভ্যালু সমান। বিভিন্ন রকম রান্নার উদ্দেশ্য হল দৃষ্টি, ঘ্রান আর স্বাদেন্দ্রিয়র তৃপ্তি। অন্য যেকোনো আর্টের মতই এরও কোনো কম্প্রমাইজ হয়না। আপনি তো আর যামিনী রায় স্টাইলে মোনালিসা আঁকতে পারেন না। বা ধরুন কেউ রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে হার্ড রক স্টাইলে, বা পান্তাভাত সার্ভ করা হল চপস্টিক দিয়ে, কেমন লাগবে?”

বান্টি আবার নিজে থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে বললেন “যা মনে হচ্ছে কুণালবাবুর রেস্টুরেন্টে আমাদের মত আম-আদমির প্রবেশ নিষেধ। বইপত্র পড়ে টড়ে, মোনালিসা-টিসা সব জেনে-টেনে, আঙ্গুলের ফাঁকে চপস্টিক ধরা শিখে শিক্ষিত হয়ে তবে যেতে হবে। অত বিদ্যা আর এজন্মে হবে না।”

বান্টি ঘোষের মোটা দাগের রসিকতায় কয়েকজনের হাসি শোনা গেল তবে সেভাবে হাততালি পড়ল না।

কুনাল বললেন “সে কথা আমি বলিনি, বাংলার প্রাচীন কবি বলে গেছেন ‘দিজ্জই কান্তা, খান পুন্যবন্তা।’ আপনি বিদ্বান পুন্যবান না হলে আপনার ঘরের বউও পরিবেশন করবেন না।”

বান্টি ঘোষ মোটা দাগের ব্যাবসাদার, শিল্প সাহিত্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। কাজেই “বাপরে দাদা তো ছড়া কেটে গালি দিতে শুরু করলেন, শেষে ঘরের বউ ধরে টানাটানি...” ।

আলোচনা খারাপ দিকে যাচ্ছে দেখে রিনি ঝট করে মাইক সরিয়ে ম্যাজিসিয়ান গুপ্তার কাছে ধরে বললেন “ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা আপনি কিছু বলুন।”
ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা তার পেটেন্ট নেওয়া হাসিটা সারা মুখে ছড়িয়ে বললেন “দেখুন এই অনুষ্ঠানে আমি জাজ হিসেবে আসিনি, এসেছি ভালোমন্দ খাবার লোভে। আমি পেটুক মানুষ, তাই এই কম্পিটিশনে জাজ হবার অফার পেয়ে লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি সারা বিশ্বে ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াই কিন্তু কোন ম্যাজিকে আমাদের মা ঠাকুমারা সামান্য উপকরণ থেকে অসাধারন সব রান্না করেন তা আমার এখোনো অজ্ঞাত। সেই ম্যাজিক শেখার জন্যই আমি এই প্রতিযোগিতায় এসেছি।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার বক্তব্যের পর মনে হল যেন আগুনে জল পড়ল। এরপর রিমি প্রতিযোগীদের নিয়ে গেল বিশাল কিচেনে যেখানে প্রত্যেকের জন্যে বরাদ্দ একটা ওভেন, একটা ছোট্ট ফ্রিজ, ফ্রিজের ওপরে একটা মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন এবং প্রত্যেকের একটা করে কড়াই, কুকার, সস্‌প্যান এবং বিভিন্ন রকম হাতা-খুন্তি-চামচ। বাইরে সেটের বিশাল মনিটরে দেখা যাচ্ছে কিচেনে কর্মরত পঞ্চাশজন প্রতিযোগিনীদের। রিনি হাতে তুলে নিল একটি লাউ। মাইক হাতে নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ উচ্ছল ভঙ্গিতে গেয়ে উঠল “সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী। না বৈরাগী হতে হবে না, কিন্তু আমাদের প্রতিযোগীতার এন্ট্রি পয়েন্ট হল এই লাউ। লাউ দিয়ে বানাতে হবে একটা দারুন পদ। স্টার্টার থেকে ডেসার্ট যা খুশি। বানাতে পারেন বাঙ্গালি, চাইনিজ, মেক্সিকান, প্যারাগুয়ান যেকোনো পদ। তবে মূল উপকরণ হতে হবে লাউ। আমাদের কিচেনে মজুত আছে দেশ বিদেশের মশলা, সস, কেচাপ, রাঞ্চ, ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি একশো ত্রিশটি উপকরণ। মা, মাসি, দিদি, বৌদি, ঠাকুমা, দিদিমা সকলে কোমর বেঁধে লেগে পড়ুন। সময় এক ঘন্টা। এই রাউন্ডের শেষে জাজেরা সিদ্ধান্তে আসবেন কারা যাবেন দ্বিতীয় রাউন্ডে।”

এরপর দশ বারোটা ক্যামেরা প্রতিযোগীদের কার্যকলাপ ফলো করতে লাগল। রিনি কিচেনের বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা মন্তব্য করতে লাগল। এই একঘন্টার শুটিং এর এডিটিং করে মাত্র দশ মিনিটের ক্লিপিংস দেখানো হবে অনুষ্ঠানে। জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না। চা, কফি, কোল্ডড্রিংক্স খেতে খেতে হাল্কা গল্প-গুজব করছেন। কুণাল গোস্বামি একটা বই খুলে এক কাপ কফি নিয়ে বাইরে এসে বসলেন। রূপা ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “আমি আপনার খুব ফ্যান। ছোটবেলায় মহাজাতি সদনে আপনার শো দেখেছিলাম এখনো সব মনে আছে। এখন স্টেজ শো আর দেখতে যেতে পারিনা। কিন্তু আপনার টিভি শো গুলো মিস করিনা।”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন “আমি এখন কিছু বলতে গেলে আপনি ভাববেন আপনার কথাই রিপিট করছি। আমিও আপনার ফ্যান। সেই যখন আপনি হরলিক্স বেবীর বিজ্ঞাপন করতেন।” রুপা হো হো করে হেসে উঠল।

বান্টি ঘোষ ইতিমধ্যে শো-এর ডিরেক্টর রাজা বোসকে পাকড়াও করে বলছিলেন “কুনালের মন্তব্যগুলো সব এডিটিং করে বাদ দেবেন মিস্টার বোস। ও ইন্টেনশনালি আমার রেস্টুরেন্টের অ্যান্টি-পাব্লিসিটি করেছে। কলকাতার নাম্বার ওয়ান চাইনিজ রেস্টুরেন্ট তো আমারই। প্লাস আমার সব চেইন রেস্টুরেন্টেই বাফে সিস্টেম আছে। সব ওর বদমাইসি।”

রাজা বোস বললেন “এরকম হয়না মিস্টার ঘোষ এটা রিয়েলিটি শো। আমাদের সব রিয়েল ইম্প্রেশানগুলো ধরতে হবে।”
-“আরে নিকুচি করেছে রিয়াল ইম্প্রেশানের। আপনার শোতে এত টাকার অ্যাড দিচ্ছি আর আপনি এইটুকু এডিটিং করতে পারছেন না?”
-“অনেকগুলো কোম্পানী অ্যাড এর জন্য আমাদের স্লট চাইছে। আপনার ইচ্ছা না হলে অ্যাড তুলে নিতে পারেন। কিন্তু শো এর ডিরেকশনের কাজটা আমাকেই দেখতে দিন।”
বান্টি ঘোষ রাগটা গিলে ফেললেন। এই শোতে জাজ হলে প্রচুর পাব্লিসিটি পাওয়া যাবে। কুনালের দুটো আঁতেলমার্কা কথার অ্যান্টি পাব্লিসিটি তার কাছে তুচ্ছ। দেঁতো হাসি হেসে বললেন “আরে দাদা রাগ করেন কেন। আপনার শো আপনি চালান।”

কুণাল গোস্বামি কিছুক্ষন পর মিস্টার বোসকে ডেকে বললেন “সরি মিস্টার বোস আপনার শো-কে আমি আমার বা অন্য কারোর প্রফেশনাল জেলাসি মেটাবার মিডিয়া করতে চাইনি। আমার মনে হয়েছিল কিছু কথা এই শো এর ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। আপনার ইচ্ছে হলে আমার বক্তব্যের যেকোনো অংশ কাটতে পারেন। কিন্তু বিকৃত করবেন না।”
মিস্টার বোস বললেন “আপনার বক্তব্য কাটার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি জাজদের মধ্যে রেষারেষি চাইনা, কিন্তু শুধু আপনার চমৎকার বক্তৃতার কোনো পার্ট মিস করব না বলেই পুরো কথোপকথনটাই রাখতে হবে।”

কুণাল গোস্বামি বললেন “থ্যাঙ্ক ইউ।“ তারপর ম্লান হেসে বললেন “তবে আমার কথা গুলো কথা হয়েই থেকে যাবে বোধহয়। কলকাতার পাট আমার উথল। এই শহরে আর আমার কাজ করা সম্ভব হবে না।”
-“সেকি কেন?”
-“শুনেছেন কিনা জানি না আমাদের বাজাজ গ্রুপের হোটেলের অন্তর্গত রেস্টুরেন্টের কলকাতার মালিকানা বান্টি ঘোষের কিনে নেবার কথা হচ্ছে। তারপর সেখানেও মুখোরোচক বেংগলাইজড্‌ মাল্টিন্যাশনাল কুইজিন তৈরী হবে। সেটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
-“কিন্তু আপনি পনেরো বছর এই রেস্টুরেন্টে আছেন, সেই শুরুর সময় থেকে, ছেড়ে দিতে কষ্ট হবে না।”
-“কষ্ট খুবই হবে। একেবারে বিনা লড়াইতে ছেড়ে দেব সে কথা বলছি না। কিন্তু ফাইনালি হয় আমি থাকব বা বান্টি ঘোষ থাকবে। কোনো সমঝোতা হবে না।”

ইতিমধ্যে একঘন্টা শেষ। প্রতিযোগীরা রান্না শেষ করে প্রস্তুত বিচারের অপেক্ষায়। বিচারকদের মঞ্চে ডাক পড়ল। হাল্কা মেকআপ সেরে নিয়ে সবাই আবার মঞ্চে হাজির হলেন। রিমি জানালো বিচার হবে দুটি পর্বে। প্রথমে ঝাড়াই তারপর বাছাই। ঝাড়াই পর্বে বিচারকেরা রান্নাটি দেখে, বর্ননা শুনে এবং সামান্য চেখে জানাবেন সেটি চলবে না বাতিল। দুজন বিচারক বাতিল বললে সেটি পুরোপুরি বাতিল; তৃতীয় বিচারক আর চেখে দেখবেন না। ঝাড়াই পর্বে যে পঁচিশটা রেসিপি চূড়ান্ত করা হবে তারা যাবে দ্বিতীয় পর্বে।

বাছাই পর্বে বিচারকেরা প্রত্যেকে ওই পঁচিশটা রেসিপির স্বাদ গ্রহণ করে নাম্বার দেবেন। সকলের নাম্বার যোগ করে প্রথম পাঁচজনের নাম ঘোষনা করা হবে যারা হবেন দ্বিতীয় পর্বের পাঞ্চালী। এই পাঁচজন দ্বিতীয় পর্বে পাঁচটি টীমের নেত্রী হবেন।

ঝাড়াই পর্ব প্রায় দু ঘন্টা চলল। যদিও এই পর্বের জন্য শোতে বরাদ্দ মাত্র দশ মিনিট। বিচারকরা হিমসিম খাচ্ছিলেন রেসিপি বাতিল করতে। স্বাদের হিসাবে অনেকগুলোই অতুলনীয়। তবে রেসিপি বাতিল হল নতুনত্বের অভাবে। বেশীর ভাগ রান্নাই লাউ এর তরকারী। বড়ি বা ধনেপাতা বা রসুন সহযোগে রান্না। কয়েকটি বহু-প্রচলিত রেসিপিও অবশ্য প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পেরোলো অসাধারন রান্নার হাতের গুনে।

ঝাড়াই পর্বের পর বিচারকরা আধঘন্টা ব্রেক নিলেন। চা কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে এলেন। শুরু হল বাছাই পর্ব। বাছাই পর্বে প্রথমেই নজর কাড়ল ‘ওপো স্কোয়াস মুজে’। লাউ-এর আমেরিকান নাম ‘ওপো স্কোয়াস’। ‘ওপো স্কোয়াস মুজে’ হল লাউ দিয়ে তৈরী অসাধারণ একটি ডেসার্ট। দর্শনেই চোখ জুড়ায়। কাঁচের বোলের মধ্যে রাখা ঘন ক্রীম কালারের মুজে। লাল চেরী আর ছোট ছোট চকলেট চিপস দিয়ে সুসজ্জিত। দেখলেই স্বাদগ্রহনের ইচ্ছা জাগে। ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা দেখলেন চারজন বিচারক প্রথমেই চাখতে এসেছেন এই পদটি। রিনি মাইক হাতে ধরে বলল “নিয়ম হল মধুরেণ সমাপয়েৎ। কিন্তু বিচারকদের দেখে মনে হচ্ছে ওঁনারা মিষ্টিমুখেই শুরু করতে চান।”

‘ওপো স্কোয়াস মুজে’ মুখে দিয়ে ম্যাজিসিয়ান গুপ্তের মনে হলনা তার মধ্যে লাউ আছে। যেকোনো ফাইভস্টার রেস্টুরেন্টের বিদেশী ডেসার্টের সাথে তুলনীয়। রন্ধন শিল্পীর নাম ঝিলাম চন্দ্রা। রিমি মাইক নিয়ে ঝিলামের কাছে গিয়ে বলল “তুমি এই রান্নার আইডিয়াটা কোথায় পেলে ঝিলাম?”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা অবাক হয়ে দেখলেন ঝিলাম চন্দ্রা একটি একুশ বাইশ বছর বয়সী ছোটখাটো চেহারার মেয়ে। নীল জিনস আর সাদা টি-সার্ট পরা, চুল ছোট করে কাটা, কানে ছোট দুটো টপ ছাড়া কোনো গয়না নেই। টিভিতে মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়েও মেয়েটা সাজেনি! ঝিলাম একগুচ্ছ ছোট চুল কপালের উপর থেকে সরিয়ে বলল “আমি হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কুলের স্টুডেন্ট। আমাদের ডেসার্টের ক্লাসে একবার স্যার শিখিয়েছিলেন পাম্পকিন মুজে। আমি ভাবলাম ইনোভেটিভ কিছু ট্রাই করে দেখি। সেম রেসিপি। জাস্ট পাম্পকিনের বদলে ওপো স্কোয়াস আই মিন লাউ।”
ঝিলামের কথায় প্রচুর হাততালি পড়ল। বিচারকদের কাছেও ঝিলাম দারুন নাম্বার পেল। কুণাল আর ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা দিলেন দশে দশ। রূপা দিলেন দশে নয়। “এক নাম্বার কাটার কারণ হিসাবে বলল “ডেকরেশনে চকলেট চিপস ব্যাবহার করাটা সামান্য ক্লিশে।”
বান্টি ঘোষ দশে সাত দিলেন। কিন্তু সেটা মুলত কুনালের উল্টো পথে চলবেন বলে।

এরপর আবার সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে এটা ওটা টেস্ট করতে লাগলেন। রিমি খেয়াল রাখছিল কে কত নম্বর পাচ্ছে। কোনো রান্না প্রথম পাঁচে আসতে পারে এরকম নম্বর পেলে বিচারকদের ও প্রতিযোগীর বক্তব্য ক্যামেরা বন্দী করছিল।

ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার ঘুরতে ঘুরতে একজায়গাতে চোখ আটকে গেল। না কোনো চোখ ধাঁধানো ডেকরেশান নয়। একটা সাদামাটা পদ। পদের নাম দুধ-লাউ। সাদা লা-ওপালার বাটিতে পদটি রাখা। কিন্তু পাশেই ছোট ছোট চারটি বাটিতেও সাজিয়ে রাখা আছে দুধ-লাউ। প্রতিটি বাটির পাশে পরম যত্নে গুছিয়ে রাখা চামচ, হাত মোছার কাগজের ন্যাপকিন আর গ্লাসে ঢাকা দেওয়া জল। মনে হল কেউ যেনো পরম আদরে আমন্ত্রন জানাচ্ছে, এস, বসে খাও। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বাটি হাতে নিয়ে এক চামচ মুখে দিলেন। তারপর নম্বর দেওয়ার কথা মনে পড়ল না। তলিয়ে গেলেন স্মৃতির অতলে। কয়লা, ঘুঁটের গন্ধ ভরা ভেজা স্যাঁতস্যাতে ঠাকুমার রান্নাঘর। কানে আসে ঠাকুমার আদর ভরা গলা “অ আমার পোড়াকপাল দাদা, পাকা রুই মাছের কালিয়া ছেড়ে বিধবার হেঁসেলে লাউ খেতে এসেছিস?” সেই দুধ-লাউ!!
শেষ খেয়েছিলেন ঠাকুমা মারা যাবার আগে দেশের বাড়িতে। সেই স্বাদ ফিরে এল এই অচেনা পরিবেশে, শহর কলকাতার রিয়েলিটি শোতে! রিমির ডাকে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা স্মৃতি থেকে বাস্তবে ফিরে এলেন। রিমি বলছিল “দুধ-লাউ মেঘনাদদাকে মোহিত করেছে মনে হচ্ছে, কত নাম্বার দিচ্ছেন?”

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন “নম্বর দেওয়া ধৃষ্টতা মনে হচ্ছে। তবু দিতে হলে দশে দশ।“
ওদের কথোপকথনে আকৃষ্ট হয়ে বাকি বিচারকেরাও এগিয়ে এসেছিলেন। সবাই এক একটি বাটি তুলে নিলেন। দু-চামচ মুখে দিয়েই রূপা বলল দারুন, দশে দশ, এরকম আগে কখোন খাইনি। বান্টি ঘোষ কয়েক চামচ খেয়ে আড়চোখে কুনালকে একবার দেখলেন। কুনাল গম্ভীর মুখে খেয়ে চলেছেন, কিছুই বলছেন না। বান্টি ঘোষ বললেন “চমৎকার, একেই বলে জিভে জল আনা খাবার। যদিও প্রেজেন্টেসনের দেখনদারী নেই কিন্তু একে আমি দশে দশ দেব”, দশে দশ দেওয়ার অন্যতম কারণ এটা আন্দাজ করা যে কুনাল এই সাদামাটা প্রেজেন্টেশান দেখে নিশ্চয়ই কম নম্বর দেবে।

কুনাল কোনো কথা না বলে পুরোটা শেষ করলেন। রিমি জিজ্ঞেস করল “কুনালদা আপনি কত নম্বর দিচ্ছেন?”

কুনাল বললেন “দশে দশ।” একটু থেমে বললেন, “এমন রেসিপি সিলেকশন করার জন্য দশে দশ। এরকম সুস্বাদু, সহজ অথচ অথেনটিক বাঙ্গালি রান্না কম-ই আছে। রান্নার উপকরনে কোনো চমক নেই, জোর করে মুখোরোচক করার চেষ্টা নেই, অরিজিনাল রেসিপির সাথে কোনো কম্প্রমাইজ করা হয়নি। আর প্রেজেন্টেশানে অবশ্যই দশে দশ। প্রেসেন্টেশন মানে ডেকরেশন নয়। এই যে পরিপাটি করে ঘরোয়া ভঙ্গীতে পরিবেশন - এটাই তো বাঙ্গালি রান্নার পারফেক্ট প্রেজেন্টেশন।”

দর্শকদের মধ্যে হাততালির ঝড় উঠল। রিমি বলল "এই অসাধারণ রান্নাটির কারিগর প্রাক্তন শিক্ষিকা শ্রীমতি প্রতিমা পালিত, আমাদের সকলের সন্মানিয়া প্রতিমা মাসিমা। মাসিমা আপনি এই রান্নাটি কোথা থেকে শিখলেন? আজকাল তো এমন রান্নার কথা শোনাই যায় না।”

প্রতিমা পালিতের বয়স একাত্তর, সাধারন বাঙ্গালি বিধবার সাজ। ঘরোয়া ভাবে পরা সবুজপাড় সাদা শাড়ি, সাদা ব্লাউস। মাথায় কাঁচা পাকা চুলে বড়ি খোঁপা বাঁধা। বাঙ্গালি মহিলা আন্দাজে বেশ লম্বাই বলা চলে। বার্ধক্যের কারণে সামান্য ঝুঁকে পড়েছেন কিন্তু চলাফেরাতে কোনো জড়তা নেই। আর জড়তা নেই কথাবার্তায়ও। রিমির প্রশ্নের উত্তরে বললেন “শুনবে কি করে এতো আজকের রান্না নয়, আমার দিদিশাশুড়ির কাছে শেখা। তাঁর হাতের রান্না তো খাওনি, ক্ষেতের লাউ আর বাড়ির গরুর দুধ দিয়ে এমন দুধ-লাউ রাঁধতেন তিনি, আমার শ্বশুরমশাই তাই দিয়ে একসের চালের ভাত খেয়ে উঠতেন।”
এরপর বাকি রেসিপি গুলোও সকলে টেস্ট করলেন। কিন্তু দুধ-লাউ এর স্বাদ সকলের জিভে লেগে রইল। অমনটি আর একটাও পেলেননা।

সব শেষে রিনি ঘোষনা করল প্রথম রাউন্ডের পাঁচ দ্রৌপদীর নাম। এরাই হবেন দ্বিতীয় পর্বের পাঁচটি দলের দলনেত্রী। তেত্রিশ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থানে আছেন বিউটিশিয়ান রেখা হালদার। ইনি বানিয়েছিলেন লাউ সর্শে। গৃহবধূ মিঠু সরকার বানিয়েছিলেন হরাভরা লাউ কাবাব। চৌত্রিশ নম্বর পেয়ে আছেন চতুর্থ স্থানে। কুঁচানো লাউ, চালের গুঁড়া, আদা কুঁচি আরো বহুবিধ মশলা দিয়ে লাউ এর বড়া বানিয়েছিলেন স্পেকট্রাম বিপিও-এর কর্মরতা সাহানা বসু, ছত্রিশ নম্বর পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। সাঁইত্রিশ নাম্বার পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ওপো স্কোয়াস মুজের কারিগড় হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী ঝিলাম চন্দ্রা। চল্লিসে চল্লিস পেয়ে সবার মন জিতে নিয়ে প্রথম হয়েছেন অবসরপ্রাপ্তা শিক্ষিকা প্রতিমা পালিত।

প্রথম পর্বের ভিডিও সিডি দেখা শেষ হলে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “কুণাল গোস্বামি যে বান্টি ঘোষের উপর হাড়ে হাড়ে চটেছিলেন এটা প্রথম পর্বের শ্যুটিং এই বোঝা যাচ্ছিল। তবে দোষটা পুরোপুরি বান্টির। একে তো বিজনেস থেকেই উৎপাটিত করতে চাইছে বান্টি, তারপর আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত কুনালের স্পর্শকাতর জায়গা – রান্নার রেসিপি এবং পরিবেশনের শুদ্ধতা নিয়েই আবার হাসি-ঠাট্টা করছিল। কুণালের এটা একটা প্রিন্সিপ্লের মত। যা নিয়ে কিছুতেই ও আপোষ করতে চায়না, পারবেও না। হয়ত রান্না প্রোফেশান থেকেই দূরে চলে আসবে কিন্তু তাও জোর করে অন্য রান্নার গোদা বাঙ্গালীকরণ কিছুতেই মেনে নেবেনা। অনেকসময় টাকা পয়সা, মান, যশ, প্রতিপত্তির থেকেও বড় হয়ে ওঠে নিজের প্রোফেশানের প্রতি অন্ধ-আনুগত্য। কোন গায়ককে বেশী পয়সা দিয়ে বল বেসুরো গাইতে, বা কোন প্রোফেসারকে বল ভুল পড়াতে, দেখবে পারবেনা। সে তুমি যত টাকাই দিতে চাওনা কেন!”
তিষ্যা বলল “প্রফেশনাল জেলাসির জন্য কেউ খুন করে নাকি?” অরুনবাবু বললেন “ভুলে যেও না, বান্টি যদি বাজাজ গ্রুপ অফ হোটেলের রেস্টুরেন্টের কলকাতার স্বত্ত্ব কিনে নিত, তাহলে কিন্তু কুনাল কে কলকাতা ছাড়তে হত। তবে এর জন্য খুন করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে।”

মিসেস বাসু বললেন “আর কার কার উপর আপনার সন্দেহ হয় মিস্টার গুপ্ত?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা হেসে বললেন “সন্দেহ করাটা আপনার কর্তার কাজ, আমি শুধু পর্যবেক্ষন করেছি। প্রথম পর্বের কুনাল আর বান্টির দ্বন্ধটা কিছুটা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ঝিলমের একটা মোটিভের কথা আমি জানতে পারি যেটা ক্যামেরার আড়ালেই ছিল।”

রনি বলল “উরিব্বাবা, দারুণ ব্যাপার তো। তবে ওভাবে নয় কাকু, প্রথম থেকে শুরু করুন।”

[ক্রমশ]

- ঈপ্সিত/চম্পাকলি

লেখা শেষ হয়েছে। তাই এবার প্রত্যেক শনিবার একটা করে পর্ব আপ্‌লোড করার পরিকল্পনা আছে। পড়ে ভালো লাগলে পরের লেখাটায় হাত দেব।
লেখাটা আরও আগে শেষ হত। কিন্তু আগেরবার হিমুর "আত্মমগ্ন লোককে সচল করা হয়না" গালি খেয়ে এবার লেখার পাশাপাশি সব গল্প পড়ে মন্তব্য করার চেষ্টা করছিলাম বলে আরও দেরী হল শেষ করতে। হাসি


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

এত বড় ক্যানে?
পড়ে পড়ুম নে।
লিইখা যান।

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

আসলে ঠিক লজিক্যাল ব্রেক পাচ্ছিলাম না। পরের পর্বটা এত বড় হবে না।
তবে এটা একটা বড় গল্প বা অণু-উপন্যাস। কাজেই বেশ বড়। একেকটা পর্ব একেক সপ্তাহে আপ্‌লোড করব মনস্থির করেছি।
পড়ে বলবেন কিন্তু কেমন লাগল।

পরমার্থ এর ছবি

ভালো লাগলো, বিশেষত গত রাতে আলু পটলের দোলমা রান্না করার পর আজকের এই পোস্ট দেখে ..

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

লস্‌ অ্যাঞ্জেলেসে ফেশ পটল পাওয়া দুষ্কর। পেলেও পাঁচশ টাকা কেজি। আর ফ্রোজেন পটল অত স্বাদু হয়না। কাজেই আলু পটলের দোলমা বেশ ইয়াম্মি ব্যাপার! হাসি

পরমার্থ এর ছবি

এখানে একটি জিনিস অদ্ভুত লাগলো যে একবার আপনি গুপ্তকে উন্নাসিক বলছেন আবার অন্যদিকে বলছেন উনি আদর্শবাদী .. দুইটি ব্যাপারে একটি মন্দ দিক আর আরেকটি ভালো দিক .. মাঝে মাঝে কিছু গল্প পরি যেখানে দেখি যে ভালো তার ভালোর শেষ নেই আর যে খারাপ তার খারাপের শেষ নেই, যুধিষ্ঠির আর দুর্যোধন ধাচের চরিত্র .. তবে চরিত্র বিচারে আমার ঝিলমকেই প্রকৃত অপরাধী মনে হচ্ছে ..

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

হ্যাঁ। চরিত্রগুলো পুরোটাই সাদা-কালো হয়না তো। আমাদের গল্পেও তাই।
প্রথম পর্বটা পুরোটা পড়েছেন বলে কংগ্র্যাচুলেশান্‌স্‌!!। হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

আসুক পরের পর্ব।

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

হ্যাঁ, পরের শনিবার। শুরুতে কি "আগে যা ঘটেছে" সারসংক্ষেপ দেওয়ার দরকার আছে?

এক জোনাকি এর ছবি

গোয়েন্দা গল্পের আমেজ, উত্তেজনা সব টের পাচ্ছি, বেশ ভাল লেগেছে। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি হাসি

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

অসংখ্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- এক জোনাকি। আশা করি শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা বজায় রাখতে পারব আমরা।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

চলুক

*ডিরেক্টর রাজা বোসের সাথে বান্টি ঘোষ বা কুণাল গোস্বামির কথাগুলো কী রেকর্ড হচ্ছিলো? বলা আছে কিন্তু

জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না।

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

না রেকর্ড হচ্ছিল না। ওটা ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার 'স্মৃতিচারণ', সিডি দেখার ফাঁকে ফাঁকে। হাসি

আব্দুর রহমান এর ছবি

' ম্যাজিসিয়ান বাসুর আকর্ষন মিসেস বাসুর হাতের সুস্বাদু রান্না।'

চোখ টিপি

আমার কিন্তু গোয়েন্দা গল্প এক বসাতেই শেষ করতে ভালো লাগে।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

এঃ।
তবে আপনার ট্যাগ লাইনটা দেখে ভরসা পেলাম।

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

এমনিই ক'দিন ধরে খুব দেশি খাবার খাওয়ার লোভ হচ্ছিল। তার ওপর আজ দুপুরে দানাপানি ঠিকমতো পেটে পড়েনি। তার ওপর এই লেখা!! আপনার ভয়াবহ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। লেখা খুব ভাল হয়েছে।

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

দুপুরে দানাপানি পড়েনি কেন?
উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো। যত জলদি পারেন পরেরটা দিয়ে দিয়েন।

ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা দেখি মিসেস বাসুকে 'মাডাম' (ঠিক মতো লিখতে পারছি না) বলে সম্বোধন করলেন। মিসেস বাসু বা ভাবী/বউদি বললে মনে হয় বেশি মানাতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম দিতে ভুলে গেছিলাম। রু

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

ঠিক। পরের পর্ব থেকে নাহয় বৌদি বলবে। কিন্তু ম্যাডামও তো ব্বেশ প্রচলিত সম্বোধন। না?

কালো কাক এর ছবি

ভালো লাগছে। পরের পর্বের শুরুতে এটার লিঙ্ক দিয়েন

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

দেব। ভালো আইডিয়া। অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

CannonCarnegy এর ছবি

লাউ শুনেই মনে করছিলাম দুধ-লাউ এর কথা। আমার দারুণ পছন্দের পদ। সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেলো দেখে ভিষন আহ্লাদিত হলাম।
সাথে মনে পড়ে গেল দাদীর হাতের দুধ-লাউ এর কথা। প্রিয় মানুষটার সাথে প্রিয় ডেজার্টটিও হারিয়ে গেল। আমার বিচারে দাদী ছিলেন প্রথম, মা দ্বিতীয় আর বউ তৃতী‌য়।
পরের পর্ব দিয়ে দেন সময়মতো। লেখা ভাল হচ্ছে।

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

পরের পর্ব আসছে সাম্নের শুক্রবার।
বউ রাগ করবে না তো তৃতীয় হবার জন্য?

ধ্রুব এর ছবি

বিচারকদের কাছেও ঝিলাম দারুন নাম্বার পেল। কুণাল আর ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা দিলেন দশে দশ। রূপা দিলেন দশে নয়। এক নাম্বার কাটার কারণ হিসাবে বলল “ডেকরেশনে চকলেট চিপস ব্যাবহার করাটা সামান্য ক্লিশে।”
বান্টি ঘোষ দশে সাত দিলেন। কিন্তু সেটা মুলত কুনালের উল্টো পথে চলবেন বলে।

হিসেব অনুযায়ী ঝিলামের নম্বর পাওয়ার কথা ৩৬।
কিন্তু

সাঁইত্রিশ নাম্বার পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ওপো স্কোয়াস মুজের কারিগড় হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী ঝিলাম চন্দ্রা।

সজল এর ছবি

এখন এই বিদেশ বিভূঁই এ এসব খাবার কোথায় পাই?
এর চেয়ে কিছু ভুল ধরিঃ
১।

“আপনি রহস্যজনক কেন বলছেন জানিনা, কারণ হার্ট অ্যাটাক তো আকস্মিকই হয়, সবার ক্ষেত্রেই তাই।

এবং

তখন তো জানতাম না, ওনার সত্যিই স্ট্রোক হয়েছে!”

রিমি'র দুই রকম কথা বলার কারণ কী?

২।

জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না। চা, কফি, কোল্ডড্রিংক্স খেতে খেতে হাল্কা গল্প-গুজব করছেন। কুণাল গোস্বামি একটা বই খুলে এক কাপ কফি নিয়ে বাইরে এসে বসলেন।

--- তাইলে কি ঘটনার বর্ণনা ভিডিও থেকে ম্যাজিসিয়ান গুপ্তার মুখে সওয়ার হলো?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে।

রিক্তা এর ছবি

সব কয়টা পর্ব একসাথে পড়লাম। চলুক আপনার লেখার বর্ননা মারাত্নক। মনে হচ্ছিল সব চোখের সামনে দেখতে পারছিলাম। আমার আবার ভালো রান্না বান্নার নাম শুনলে মনটা কেমন আনচান করে। সব রান্নাই খেতে ইচ্ছা করছে বিশেষ করে থোড়ের রেসিপিটা মন খারাপ

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।