বাংলাদেশে জন্ম অথচ রাজশাহীর আম, দিনাজপুরের লিচু এগুলো নিয়ে আগ্রহ নাই, এমন খুব কম মানুষই বাংলাদেশে পাওয়া যাবে! আমাদের অনেকেরই সবচাইতে প্রিয় ফল হচ্ছে আম। রাজশাহীর আম বললেও মূলত আমের বেশিরভাগ ফলন হয় চাঁপাই নবাবগঞ্জ , গোদাগাড়ী রাজশাহী বিভাগের পার্শ্ববর্তী এই সমস্ত এলাকাতে। দেশের বাইরে আসার পর মে, জুন, জুলাই মাসে খুব মনে হতো আমের কথা... খুব মিস করতাম আম, বিশেষ করে ফজলি আম, যদিও লিচু আমার সবচেয়ে পছন্দের ফল তবু ফজলি আমের প্রতি আমার বিশেষ ভালবাসা। ছোটো থেকে কখনো বাজার থেকে আম কিনে খাইনি, নিজেদের বাগান আছে আমের, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত আর ফজলি আম। গরমকালে সবসময় বাসা ভর্তি আম দেখেছি, আমের এত প্রাচুর্যতার কারনেই কিনা জানিনা একটু দাগ ধরা আম আমি খেতাম না কখনো। আমার এই নাক উঁচু ভাব আম নিয়ে, একটু দাগ আলা আম খাবনা, কিনে আম খাবনা, একটু টসকানো আম খাবনা , নানান ফ্যাঁকড়া। বন্ধুরা খুব বিরক্ত হত। আর তার জবাবে আমিও ছোটো থেকেই বন্ধুদের কাছে খুব ক্রেডিট নিতাম-
”জানিস না তো আমার দাদার বাড়িতে আম খেতে চাইলে গাছে উঠতে হয়না, গাছতলার নিচে শুয়ে তুই ঠোঁট দিয়ে আম স্পর্শ করতে পারবি।” এবং কথাটার মধ্যে যে আসলে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জিত কিছু ছিলনা সেটা প্রমানের উদ্দেশেই আমাদের সবাই চাঁপাই নবাবগঞ্জ গমন ঘটেছিলো সেইবার। যারা রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আম বাগানে গেছেন তারা প্রত্যেকেই জানেন, মাইলের পর মাইল ধরে আমের বাগান, কোন কোন গাছে এত বেশি আম ধরে, ফলের ভারে ডাল একদম মাটিতে নুইয়ে পড়ে, তখন আলাদা ভাবে বাঁশের সাপোর্ট লাগে ডাল খাড়া করে রাখার জন্য। তখন সত্যি কেও চাইলে শুয়ে শুয়েই আম স্পর্শ করতে পারবে হাত দিয়ে।
বছর দুয়েক আগে ভিসা গ্রহন উদ্দেশে আমাকে একবার ইন্ডিয়া যেতে হয়েছিলো, সময়টা ছিল জুন মাস... কলকাতার দমদম এয়ারপোর্ট এ নামার পর দিল্লী যাবার আগে কিছু ঘুরাঘুরির উদ্দেশে এয়ারপোর্ট এর পাশেই ছোটো এক বাজার এলাকাতে গিয়েছিলাম, এখন আর সঠিক মনে নাই জায়গাটার নাম, তো যাই হোক, বিভিন্ন ফলের দোকান ছিল, তার মাঝে বেশ কিছু দোকানদার ডাকাডাকি করছিলো, মালদহের ফজলি আম, বাংলাদেশের রাজশাহীর ফজলি আম, আসল ফজলি, ইত্যাদি ইত্যাদি... খুব মজা পেয়েছিলাম সেদিন, ভালো ও লেগেছিল অনেক। দেশের বাইরে অন্য দেশে নিজের দেশের কোন কিছুর প্রশংসা শুনতে কি যে অদ্ভুত ভালো লাগে যারা দেশের বাইরে গেছে হয়ত কম বেশি প্রত্যেকেই অনুভব করেছে বিষয়টা। সেদিন আমারও খুব গর্ব হয়েছিলো, আমার বাড়ি রাজশাহী, আমি আমের দেশের মানুষ, ফজলির দেশের মানুষ। এই তো আজ ঘণ্টা কয়েক আগে পেপার খুলে হঠাৎ জানতে পারলাম(সূত্র, প্রথম আলো ) আমি আর ফজলি আমের দেশের মানুষ না, জামদানি আর নকশীকাঁথায় আমার দেশের মানুষের আর অধিকার নাই ! এসবই নাকি ভারতের অধিকার ভুক্ত, তবে কি ভবিষ্যতে আমরা ফজলি আম খেতে চাইলে ভারতকে ট্যাক্স (রয়্যালিটি) দিয়ে খেতে হবে ! ভারত যদি দাবি করে ফজলি আম আমরা আর উৎপাদন করতে পারবনা, সেক্ষেত্রে কি আমাদের তাদের কাছ থেকে ফজলি আম কিনে খেতে হবে ?!
আমি পড়াশুনার উদ্দেশে ইউরোপের উত্তরের একটি দেশ ফিনল্যান্ডে থাকি। এখানে যদি কোন এশিয়ান দোকান থেকে আমি রাজশাহীর ফজলি আম কিনে খেতে চাই, তাহলে নাকি এখন থেকে আমাকে ভারত সরকারকে কর দিয়ে সেই আম খেতে হবে! এমনকি আমরা ভারতে আগের মত আম রপ্তানি করতে চাইলেও ভারত সরকারকে ট্যাক্স দিতে হবে! একি সত্যি, নাকি ভয়ংকর কোন দুঃস্বপ্ন?! প্রথমে প্রচণ্ড অবাক হয়েছিলাম, পরে রাগ, সেখান থেকে তীব্র একটা ক্ষোভ। যদিও আমি সম্পূর্ণ সত্যতাটুকু জানি, তবুও তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম-
ফজলি আম প্রথম উৎপাদিত হয় গৌড় জনপদে। গৌড় জনপদ রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, মালদহ এবং পশ্চিম দিনাজপুর নিয়ে গঠিত। দেশভাগের পর পশ্চিম দিনাজপুর ও মালদহ ভারতে পড়ে এবং বাকী অংশগুলো বাংলাদেশে পড়ে। ভারত দাবী করছে, ফজলি আম মালদহ জেলার এবং সেই সূত্রে তারা মেধাস্বত্ব নিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে এটা শুধু মালদহ জেলার নয়, সমগ্র গৌড় জনপদের।
(তথ্যসূত্রঃ হেরিটেজ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মাহবুব সিদ্দিকীর বই - "আম" ) দুই দেশের আম উৎপাদন সম্পর্কিত পরিসংখ্যান আমি অনেক খুঁজেও পেলাম না এই মুহূর্তে। সুতরাং এইটুকু আমরা বলতেই পারি, ভারত সরকার কোনভাবেই এটির একক মালিকানা দাবি করতে পারেনা। এই মুহূর্তে আমি কোনভাবেই ভাবতে পারছিনা, আমি আর গর্ব করে বলতে পারবনা, আমি আমের দেশের মানুষ, ফজলি আমের দেশের মানুষ!!!
আমার আম্মাকে দেখেছি ছোট থেকে, তার খুব জামদানি শাড়ির সখ। জীবনে প্রথম টিউশানির টাকায় আম্মাকে আমি একটা জামদানি শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম... কি যে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন আম্মা সেদিন হাল্কা সবুজ রঙের শাড়িটি পেয়ে। পরবর্তীকালে চোর শাড়িটি চুরি করে নিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত আম্মার সবচেয়ে পছন্দের শাড়ি ছিল সেই শাড়িটি। শুধু আমার আম্মার নয়, এমন আরও অসংখ্য মানুষের শখের, পছন্দের শাড়ি জামদানি, ঢাকাই জামদানি। ঢাকায় উচ্চমাধ্যমিকের পরে পড়তে এসে প্রথম মিরপুরে জামদানি পল্লীতে যাবার সুযোগ ঘটে... কি অদ্ভুত সুন্দর কারুকাজ! আমার রাজশহীর এক বন্ধু ভারতের জলপাইগুড়িতে পড়াশুনা করে, ছুটি ছাটায় দেশে আসলে দেশ থেকে যাবার সময় বেশ কিছু জামদানি শাড়ি কিনে নিয়ে যেত প্রত্যেকবার, তার ওখানকার বন্ধুদের নাকি বিশেষ আবদার ঢাকাই জামদানি শাড়ি... এই জামদানি শাড়িও নাকি আর আমাদের নয়, এবার থেকে মাকে জামদানি শাড়ি উপহার দিতে চাইলে ভারত সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে দিতে হবে? হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ!!!
অথচ ইতিহাস বলে, জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়, আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে, পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি বইতে এবং বিভিন্ন আরব, চীন ও ইতালীর পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনাতে। কৌটিল্যের বইতে বঙ্গ ও পুন্ড্র এলাকায় সূক্ষ্ম বস্ত্রের উল্লেখ আছে, যার মধ্যে ছিল ক্ষৌম, দুকূল, পত্রোর্ণ ও কার্পাসী। নবম শতাব্দীতে আরব ভূগোলবিদ সোলায়মান তার গ্রন্থ স্রিল সিলাই-উত-তওয়ারিখে রুমি নামের রাজ্যে সূক্ষ্ম সুতি কাপড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার বর্ণনা অনুসারে বোঝা যায়, রুমি রাজ্যটি আসলে বর্তমানের বাংলাদেশ। চতুর্দশ শতাব্দীতে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করেন এবং সোনারগাঁও এলাকাস্থিত সুতিবস্ত্রের প্রশংসা করেছেন। যোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজ পর্যটক র্যাকলফ ফিচ ও ঐতিহাসিক আবুল ফজলও ঢাকার মসলিনের প্রশংসা করেছেন। আরেক ঐতিহাসিক টেলরের জামদানির বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনানুসারে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১০x২ হাত মাপের ও ৫ শিক্কা ওজনের একটুকরা আব-ই-রওয়ান এর দাম ছিল ৪০০ টাকা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জন্য তৈরি জামদানির দাম ছিল ২৫০ টাকা। ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের জামদানির মূল্য ছিল ৪৫০ টাকা। (সূত্র - উইকিপিডিয়া)
সুতরাং সন্দেহাতিত ভাবে বলা যায় যে-পূর্ববাংলায় জামদানি শাড়ির উৎকর্ষতা তুঙ্গে উঠেছিল মুঘল আমলেই। মিহিন কাপড়ের ওপরের চমৎকার নকশাগুলি ছিল আসলে মুঘল -পারসিক শিল্পরীতিরই প্রভাব। জামদানির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল ঢাকা জেলার আশেপাশেই।
গবেষক ফোরবেস ওয়াটসন, ‘টেক্সটাইল মেনুফ্যাকচারাস্ অ্যান্ড কসটিউমস অভ দ্য পিপল অভ ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে ওয়াটসন লিখেছেন,‘নকশাদার মসলিন, জটিল ছাপচিত্রের কারণে, ঢাকার বস্ত্রপন্যের মধ্যে সবচে দামী ছিল।’ তখন ঢাকার জেলায় এমন কোনও গ্রাম ছিল না যে গ্রামে একটিও তাঁত ছিল না । গ্রামের তাঁতীরা ইউরোপ, ইরান, আর্মেনিয়া আর মুগল-পাঠান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করত । মুগল সম্রাট, বাংলার নবাবরা ও অন্যান্য অভিজাতরা এজেন্ট নিয়োগ করতেন এসব ঢাকাই মসলিন ও জামদানি পন্য কেনার জন্য। মুগল শাসনের সময় থেকেই ঢাকার মসলিনের স্বর্ণযুগ সূচিত হয়। তারপর থেকে দেশে-বিদেশে জামদানি ও মসলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এভাবে মসলিন ও জামদানি নির্মাতার উন্নতি হয়।’ ঢাকা, সোনার গাঁও, ধামরাই, বাজিতপুর ছিল জামদানি ও মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। মূলত ঢাকা অঞ্চলকে ঘিরে জামদানি তাঁতের প্রচলন এবং প্রসার ঘটে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাবার পরে ঢাকার ডেমরায় জামদানি পল্লীর তাঁতিদের আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়। জামদানি শাড়ির অতীত গৌরব এবং বর্তমান সম্ভবনা বিবেচনা করে ঢাকার মিরপুরে জামদানি পল্লী স্থাপিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সরকারের যথাযত উদ্যোগহীনতা, ন্যায্য বাজার ও বাজারে প্রবেশের জটিলতার কারণে প্রতি বছর জামদানি কারিগররা ঐতিহ্যগত পেশা ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামদানির চাহিদা প্রচুর। তবে সাম্প্রতিক কালে, বর্তমান বাজারে জামদানির উচ্চমূল্য ও বিপুল চাহিদার কারণে বাংলাদেশের এই শিল্পে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে ।বর্তমানে অনেক উদ্যোক্তায় এই শিল্পে গতি সঞ্ছারের উদ্দেশে কাজ করে চলেছেন। সঠিকভাবে প্রচারণা চালালে এই শাড়ি হয়ে উঠতে পারে বিদেশী মুদ্রা রপ্তানির একটা স্বর্ণক্ষেত্র । আর আজ কিনা বাংলার এই প্রাচীন শিল্পের মালিকানা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী বস্তুকে বিশেষ গুরুত্তের সাথে দেখা হয়। তার বিপণন, সম্প্রসারন এই ধরনের বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ করে দেখা হয়, সরকারের আলাদা বাজেট থাকে উন্নয়নের জন্য, আর আমরা???
তবে কি একদিন মসলিনের মতন জামদানিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে? এ কি তারই পূর্ব প্রস্তুতি?!
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের পূর্ব গোদাবরী জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের তাঁতিরা এবং দুটি নিবন্ধিত তাঁতি সংগঠন ’উপ্পাদা জামদানি’ নামে জামদানি শাড়ির নিবন্ধন করিয়েছে...!!! তাহলে কি ভবিষ্যতে ভারত সরকারকে কর দিয়ে তবেই জামদানি শাড়ি রপ্তানির ছাড়পত্র মিলবে! আর তাতে সফল হলে ভবিষ্যতে ভারতের ঐতিহ্য হিসাবে জামদানি পৃথিবীতে পরিচিত হবে, এবং বাংলাদেশকে জামদানি উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে । বর্তমানে কোথাপল্লী অঞ্চলের প্রায় ৪০০ পরিবার জামদানি শাড়ি বুননের সঙ্গে জড়িত, যাদের শাড়ি প্রায় ১০৮টি দেশে রপ্তানি হয়। জামদানি শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের এ নিবন্ধন কার্যকর করার ভেতর দিয়ে জামদানি শাড়ি-বাণিজ্যের মাধ্যমে ভারত বছরে প্রায় ছয়শ কোটি ভারতীয় রুপি রাজস্ব আয় করতে সমর্থ হবে।।
এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সুদূর ভবিষ্যতে জামদানি শাড়ির স্থান হবে পারিবারিক এ্যালবামে। এমনিতেই জামদানির দাম বেশ চড়া, ভারতীয় অধিকারভুক্ত হলে হয়ত ট্যাক্সের কারনে দাম সাধারনের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তখন কেবল মাত্র শৌখিন এবং ধনবানেরা ভারত অথবা সিঙ্গাপুরে গিয়ে জামদানি শাড়ি কিনে এনে সবার কাছে গর্ব করতে পারবে!!!
আর আমাদের নকশিকাঁথার (সূত্র- নকশি কাঁথা) কথা আর নতুন করে কি বলব... যারা বই পড়ে অথবা পড়েনা, জানে অথবা জানেনা তারা প্রত্যেকেই নকশিকাঁথার কথা জানে। নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরণের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। নকশি কাঁথা বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটা অংশ। নকশি কাঁথা বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। সাধারণত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতীদের থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়। নকশিকাঁথা এখনো বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক ঘনিষ্ঠ অনুষঙ্গ। পল্লিকবি জসীমউদ্দীন একে নাগরিক জীবন এবং পরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরেছিলেন তাঁর ১৯২৯ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ নক্সী কাঁথার মাঠ দিয়ে। এবং পল্লিকবির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান করে নেয় গ্রামীণ জীবনের এই ঐতিহ্য-মণ্ডিত লোকগাথা।
সাধারণত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময় নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। বিকেল বেলা বা রাতের খাবারের পর মহিলারা একসাথে বসে গল্প করতে করতে এক একটি কাঁথা সেলাই করেন। তাই বলা হয় নকশি কাঁথা এক একজনের মনের কথা বলে। নকশি কাঁথা সেলাইয়ের কোনো নির্দিষ্ট নকশা নেই। যিনি সেলাই করেন তাঁর মনে যা আসে তা-ই তিনি সেলাই করে যান। বলা যায় এটি হচ্ছে মনের ডাইরি। সূর্য, চাঁদ, গাছ, পাখি, মাছ, ফল, মানুষ, ময়ূরসহ বিভিন্ন নকশা করা হয় নকশি কাঁথায়।
এর আগে নিমগাছের স্বত্ব নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাসমতি চালের স্বত্ব নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। অন্য দেশের স্বত্ব নেওয়া পণ্যগুলো ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন এবং আমদানি-রপ্তানি করতে গেলে স্বত্ব পাওয়া দেশকে রয়্যালিটি দিতে হবে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পণ্য স্বত্ব পাওয়া দেশগুলোর নিজস্ব বলেই বিবেচিত হবে।
গ্রামবাংলার বিভিন্ন পিঠা, চান্দারবিলের কৈ, ঢাকাই জামদানি, বাবুরহাটের তাঁত, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেইন তাঁতে বোনা কাপড়, বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ মণিপুরি শাড়ি ও চাদর, রংপুরের শতরঞ্জি, মিরপুর কাতান, হাওর অঞ্চলের ধামাইল গান, উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গীত, দক্ষিণাঞ্চলের গাজীর গান, সুন্দরবনের মধু, টাঙ্গাইল শাড়ি, বগুড়ার দই, সিলেটের সাতকরা, পদ্মার ইলিশ, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, মধুপুরের আনারস, পোড়াবাড়ীর চমচম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, রাজশাহীর সিল্ক, কুমিল্লার খাদি, বৃহত্তর রংপুর অঞ্ছলের সিদল, পদ্মার রুপালী ইলিশ এ রকম অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যই চলমান রেখেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সার্বভৌমত্ব। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত একদিন সকালে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দেখতে হবে পদ্মার ইলিশ, রাজশাহী সিল্ক, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সবকিছুই ভারতীয় অধিকারভুক্ত।
এমনিতেই সুন্দরবনের কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে, আর পদ্মাও তো গঙ্গার একটি শাখা! একদিন ফেসবুক এ আমার এক বিদেশী বন্ধুর শাড়ি পড়া ছবি দেখেছিলাম, লিখেছিল- “I love Indian shari" , সেদিনও খুব কষ্ট হয়েছিলো। শাড়ি ভারতের সব অঞ্চলের মেয়েদের পোশাক নয়। আমাদের দেশে শাড়ি ঐতিহ্যে, বিভিন্ন উৎসবে, পার্বণে যেভাবে মিশে আছে, ভারতে নয়... অথচ দেশের বাইরে সবাই জানে শাড়ি ভারতীয় পোশাক! শুধু শাড়ি নয়, অনেক বিখ্যাত জিনিষ অথবা ব্যক্তিত্ব এখন ভারতের! উইকিতে দেখলাম রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, এমনকি সুন্দরবন কোনকিছুই আমাদের অধিকারভুক্ত নয়!!!
সরকারী পর্যায়ে আমাদের নিজস্ব এই দেশজ সম্পদগুলোর একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। অতি জরুরি ভিত্তিতে নিজেদের ভৌগোলিক পণ্যের মালিকানা স্বত্ব দাবি করার মতো আইন তৈরি করতে হবে শিল্প মন্ত্রণালয়কে। প্রথমে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করেই আইনের আওতায় নিজেদের নামে নিবন্ধন শুরু করতে হবে ।ভারতের এই অন্যায় নিবন্ধনের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ যেহুতু আছে, তাই অবশ্যই এই পেটেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে পেটেন্ট আমাদের নিজেদের নামে করতে হবে। এই জরুরী পদক্ষেপগুলো নিতে হবে এবং অতি দ্রুত নিতে হবে।
একটি দেশ বাঁচে তার ঐতিহ্যে, সংস্কৃতিতে, ভাষাতে, সম্পদে ... নিজেদের সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে আমরা কি তবে নিজেদের হারিয়ে ফেলব এভাবেই? এ কি তারই অশনি সংকেত?
এভাবে চলতে পারেনা, চলতে দেওয়া যায়না, এই সবকিছুই আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার... আমাদের অহংকার আমাদের ঐতিহ্য আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, নষ্ট করার মত সময় আর হাতে নাই। সরকারী পর্যায়ে গাফিলতির জন্য যেন ভবিষ্যতে আর কখনো যেন এমনটি না ঘটে। সরব হওয়ার সময় এখনই !!
সাফিনাজ আরজু
(safinaj_arju09@yahoo.com)
মন্তব্য
এ বিষয় নিয়ে প্রত্রিকার একটা ফিচার কদিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল, সেটা এড করে দিলাম।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-10-14/news/297713
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
অনেক ধন্যবাদ। আগেই পড়েছিলাম, আপনি অ্যাড করাতে লেখার সাথেই থেকে গেল।
ভালো থাকবেন।
পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ব্রো।
জামদানি, নকশিকাঁথা আর ফজলি আম-ভারতের একার সম্পদ, এটা শুনে ভিমরী খেলাম।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধি সরকার কি করবে এ বিষয়ে সেটা এখন দেখার বিষয়। বর্তমান সরকারে আসীন ব্যাক্তিগুলো বিরোধীদলের পশ্চাদদেশে আঙুল দেয়া, ভারতের পা চাটা ছাড়া ও মতের-বিরুদ্ধ মানুষদের দমন করা ছাড়া আর কি করতে পারে, সেটার একটা লিস্ট করলে হয়ত এক লাইনের বেশি লেখা যাবে না।
বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সব মানুষের যার যার অবস্থান হতে এ ব্যাপারে কাজ করা উচিত।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
জি রাজাভাই, আমিও শুনে ভিমরী খেয়েছিলাম।
আর আপনার বক্তব্যটুকুর সাথে সম্পূর্ণ সহমত।
যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, ঠিক একই চেহেরা নিয়ে আসে, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ!
এত সুন্দর দেশ আমাদের, সম্পদে, ঐশ্বর্যে ভরপুর, জনসংখ্যা কিছুটা বেশি, কিন্তু চাইলে সেটাকে সম্পদ হিসেবে খুব সুন্দর ব্যবহার করা যায়।
অথচ শুধু মাত্র স্বার্থনেশী কিছু মানুষদের জন্য আজ কি অবস্থা।
মাঝে মাঝে এত রাগ হয়, ইচ্ছে করে সব কিছু ----
আমাদের প্রত্যেকের যার যার অবস্থান হতে এ ব্যাপারে কাজ করা উচিত।
খুবই দুশ্চিন্তার কথা আসলেই ।এ যে এক বিরাট অস্তিত্বের টানাপোড়েন ।এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে না পেলে বিলীন হওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না আমাদের ।
আফরিন আহমেদ
অস্তিত্তের টানাপড়েন
পরিত্রাণের পথ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। একত্রে আমরা সব করতে পারব, শুধু সবাইকে একভাবে ভাবতে হবে।
। খবরটা শুনার পর থেকে রাগে অসহ্য লাগছিল। আমাদের শিল্প মন্ত্রী আর তার মন্ত্রণালয় বসে বসে ঘাস কাটে আর আমরা একে একে নিজেদের ঐতিহ্য গুলো হারাতে বসেছি। জামদানী শাড়ি আমার খুব প্রিয় জিনিসগুলোর মধ্যে একটা। এমনিতেই মার্কেট ভর্তি ভারতীয় শাড়ি দিয়ে আর এখন আমাদের টাও ওদের হয়ে যাচ্ছে।
ভয় হয় খুব, একদিন না সব কিছু আমরা এভাবে হারিয়ে ফেলি।
কেন যে আমরা একটু দেশপ্রেমিক হতে পারলাম না!!!
ওইদিন পেপারে এটা পড়ে আমিও বিস্মিত হয়েছিলাম।এই বিষয়টির সঠিক কোন সুরহা জানা আছে কি?এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন কি বলে?আমার দেশে উৎপাদিত কোন ফসল বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্য একটা দেশকে রয়্যালিটি দিতে হবে কেন এই বিষয়টি আমার কাছে এখনও পরিষ্কার না।আচ্ছা,আমরা ওষুধ বা সিমেন্ট যখন রপ্তানি করি তখন এই বিষয়টি নিয়ে কিভাবে ডিল করা হয় তাহলে??
ধন্যবাদ আলোকিতা, আপনার মন্তব্যর জন্য।
আমি নিজে যতটুকু জানি, তার আলোকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করছি-
প্রথম কথা, পুরো বিষয়টা আসলে কারো কাছেই পরিস্কার নয়, কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে-
এই বিষয়টা ঠিক ওষুধ বা সিমেন্ট রপ্তানি করার মতন নয়।
আমি নিজে একটি খুব নামী ফার্মা কোম্পানির প্রডাকশান এ বছর দুয়েক কর্মরত ছিলাম।
ওষুধ এর ক্ষেত্রে যেটা হয়, ওষুধ কিন্তু বানান হয় কোন না কোন Pharmacopoeiaফলো করে। আমাদের নিজস্ব কোন Pharmacopoeia নাই, তাই আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় British Pharmacopoeia ফলো করা হয়। আপনি যদি ওষুধ ফয়েল এর উল্টা পিঠে লক্ষ্য করেন দেখবেন লেখা আছে BP বা বিপি মানে হল British Pharmacopoeia । অনেক ক্ষেত্রে USP বা ইউ এস পি মানে United states Pharmacopoeia লেখা থাকে। এটা বাধ্যতামূলক আপনি কোন Pharmacopoeia অনুযায়ী ড্রাগ তৈরি করছেন সেটি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা। আপনি যদি অন্য দেশে রপ্তানি করতে যান তখনও এটি লিখা বাধ্যতামূলক, কিন্তু তারপরেও লেখা থাকবে Made in Bangladesh।
মনে হয় বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি। আর সিমেন্টের ব্যাপারটা আমার জানা নেই।
আর এই লেখাটি যেসকল সম্পদ নিয়ে লেখা, সেটা নিয়ে আমার ভিতরে খটকা আছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত দরকার। যেমন ধরেন কমলা অনেক দেশেই উৎপাদিত হয়, সেক্ষেত্রে সব দেশ কি এটার পেটেন্ট পায়, নাকি প্রথম যে দেশ দাবি করেছিলো, অথবা যে দেশ অরিজিন ছিল, সে দেশ পায়, বিষয়টা আমি জানিনা, যদি কারো জানা থাকে জানাতে পারেন।
এখন যদি মালদহের আম ভারত পেটেন্ট নেয় মালদহের ফজলি আম নিয়ে, আমরা নিব রাজশাহীর ফজলি আম, অন্য কোন দেশ নিবে সেই দেশের নাম অনুসারে ফজলি আম, এমন কি হতে পারে?
আমার মনে হয় না। তাহলে বিষয়গুলো অনেক জটিল হয়ে যায়।
রপ্তানির সময় কি কি সমস্যায় পড়তে পারি এখনও ঠিক বুঝা যাচ্ছে না, কিন্তু আমার বক্তব্য হল- কেন আমাদের দেশীয় সম্পদ এবং ঐতিহ্যগুলো আমরা সঠিক এবং সম্পূর্ণ তালিকাভুক্ত করে নিজেদের নামে নিয়ে নিচ্ছিনা?
সাফিনাজ আরজু
সব আমলেই আমাদের সরকার মন্ত্রী কারো কোনো দায় ছিলো বলে মনে হয় না। তারা যেন ক্ষমতায় আসার জন্য এবং কে কোন আসনটা আয়ত্ব করবেন সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন- এ ছাড়া যেন তাদের আর কোনো লক্ষ্য নেই।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
সহমত। আমাদের সরকারী দল এর একটাই চেহারা এবং উদ্দেশ্য, নিজেদের আখের গোছান। তা সে যে দল ক্ষমতায় আসুক না কেন। দেশের যা মন চায় হোক, তাদের কিছু যাই আসেনা।
সাফিনাজ আরজু
খবরটা শুনে বিস্মিত হওয়ার চেয়ে রাগ লেগেছিল বেশি। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন যে এর জন্য চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে অতএব এখনো সব শেষ হয় নি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ কতৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। তাদের শুভ বুদ্ধি হোক।
তাদের শুভ বুদ্ধি হোক!!!
আর আমাদের ও তৎপর থাকতে হবে।
সত্যিকার অর্থে আজ যদি তেমন কোন ক্ষতি নাও হয়ে থাকে, কাল যে হবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
সাফিনাজ আরজু
সত্যি অবাক হলাম! নিউজটি চোখে পড়েনি। আপনার লেখার মাধ্যমে জানলাম।
অমি_বন্যা
জেনেছেন এটাই হল বড় কথা ।
প্রথম আলোর সংবাদটা দেখলাম, কিন্তু তাদের খবরের উৎস আমি জানতে আগ্রহী, একইসাথে আপনার কাছে কি এই বিষয়ে প্রথম আলো ছাড়া আর কোন তথ্য আছে? কারণ আমি যখন ভারতের জি-আই তালিকা দেখলাম, তাতে জামদানি শাড়ি উল্লেখ করা হয়নি। হয়েছে Uppada Jamdani Sarees, Handicraft, Andhra Pradesh, একইসাথে আছে Baluchari Saree, Dhaniakhali Saree, Handicraft West Bengal। আর আমের ক্ষেত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে Fazli Mango grown in the district of Malda, Agricultural, West Bengal। এই তথ্যগুলোর সাথে খবরে বর্ণিত তথ্যের পার্থক্য বিদ্যমান।
চাইলে পুরো লিস্ট দেখার জন্য এই লিঙ্কে চলে যান আগ্রহীরা- http://ipindia.nic.in/girindia/treasures_protected/registered_GI_29March2012.pdf।
শুধুমাত্র নকশিকাঁথার ক্ষেত্রে উল্লেখ আছে Nakshi Kantha, Handicraft, West Bengal।
এধরনের খবরে ভুলটা কি ইচ্ছাকৃত?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দুপুরে আমার ফেবু স্ট্যাটাসে দিগন্ত দা'র মন্তব্যে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
হুমম সেটা আমিও দেখেছি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বস, মন্তব্যটা এখানে পোষ্ট করেন, আমরাও পড়ে দেখি যদি আপত্তি না থাকে!
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
ফেবু এর মন্তব্য এখানে পোস্ট করতে হবে কেন? আমি তো উপরে লিঙ্কটা দিয়েছি, ইচ্ছা হলে ওখানে গিয়েই তো আগ্রহীরা দেখে আসতে পারেন তথ্য সত্য কিনা? এখানে একজনের ব্যক্তিগত বন্ধুতালিকায় থাকা আরেকটি মানুষের মন্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে কেন?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমিও জানতে আগ্রহী।
সাফিনাজ আরজু
ওহ! আমি ভেবেছিলাম ২টা আলাদা বিষয়,ওকিডকি... লিঙ্ক থেকে দেখে নেব
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
ধন্যবাদ অরফিয়াস ভাই, আপনার মতামতের জন্য।
আমার কাছে আপাতত অন্য কোন Source বা উৎস নাই।
আপনি যে লিংক দিয়েছেন, সেটি আমিও দেখেছি... আসলে পুরো বিষয়টার মধ্যে বেশ কিছু জিনিষ পরিস্কার বুঝা যাচ্ছেনা। আমার নিজের অনেক প্রশ্ন আছে রয়্যালটি বা রপ্তানি নিয়ে।
যেমন একটা প্রশ্ন হল ধরেন কমলা বা আপেল অনেক দেশেই উৎপাদিত হয়, এই ফল কি বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত? সুইডেনের আপেল, নরওয়ের আপেল এমন নামে কি তালিকাভুক্ত, আমি জানিনা। তবে যতদূর মনে হয় উত্তরটা হবে "না" ।
কারন তাতে বিষয়টা শুধু জটিল হয়। হয়ত ঐ সমস্ত দেশ যখন রপ্তানি করে তখন লিখে দেয় কোন দেশে উৎপন্ন কিন্তু তারপরে ও এর পেটেন্ট এর অরিজিন দেশের থাকা উচিত। আজ চা অনেক দেশে উৎপন্ন হয় তারপরেও কিন্তু আমরা জানি চীন চা এর অরিজিনাল উতপত্তিস্থল।
এখন ভারত পেটেন্ট দাবি করছে মালদহের ফজলি আম হিসেবে, এরপর আমরা দাবি করবো রাজশহির ফজলি আম, অন্য কোন দেশ হয়ত তার দেশের নাম অনুসারে পেটেন্ট দাবি করবে। কিন্তু ফজলি আম তো ফজলি আম যে দেশেই উৎপন্ন হোক না কেন। স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান তেমন তো হেরফের হচ্ছে না, কেন শুধু শুধু বিভিন্ন নামে পেটেন্ট নেওয়া?
একই কথা উপ্পাদা জামদানির খেত্রেও প্রযোজ্য।
আসলে অন্য কাউকে তো দোষ দিয়ে লাভ নাই। আমাদের সরকার আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কোন কিছু নিয়েই ভাবিত নয়, তারা আছে নিজেদের আখের গছানর স্বপ্নে।
লেখাটিতে আমার বক্তব্য ছিল আমাদের দেশজ সম্পদের একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত। আজকে এই তালিকাটি আমাদের হাতে থাকলে আমরা খুব সহজেই আশ্বস্ত থাকতে পারতাম।-
শুধু জামদানি, ঢাকাই জামদানি নাকি উপ্পাদা জামদানি এসব নিয়ে এত দ্বিধার মধ্যে পড়তাম না।
যদি এখনও সব কিছু ঠিক থেকেই থাকে তাহলে অতি সত্বর আইনের আওতায় এনে আমাদের নিজস্ব সম্পদের মালিকানা ধরে রাখতে হবে।
আর যদি অন্য কেউ পেটেন্ট করেও থাকে, সেটা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ যে আছে, সে সম্পর্কেও আমাদের অবহিত থাকা আবশ্যক।
সুতরাং, এই বিষয়ে অভিজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে সামনে এগুতে হবে, এখনি, এই মুহূর্তেই-
আজ যদি কোন ক্ষতি নাও হয়ে থাকে, কাল যে হবেনা তার নিশ্চয়তা কি?
সাফিনাজ আরজু
এখানে টেকনিক্যাল সমস্যা থেকে যাচ্ছে। জাতের পার্থক্য থাকতেই পারে। ফজলি আম এর গুনগত পার্থক্য বিদ্যমান থাকলে মালদা জেলার আম আর রাজশাহীর আম এক হবেনা। তাতে ভারত আলাদাভাবে দাবি করতেই পারে। যেমনটা বাংলাদেশের অনেক আগেই করা উচিত ছিলো নিজেদের জন্য। প্রজাতির ভেরিয়েন্ট যদি হয় তাহলে মনে হয় আমরা দাবি করতে পারিনা যে মালদার ফজলি আম এর অধিকার আমাদের। একই কথা উপ্পারা জামদানির ক্ষেত্রেও। শাড়ির কাজ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম। যদি বাংলাদেশ নিজেদের কাজের প্যাটেন্ট রাখতো তাহলে কথা ছিলো, কিন্তু যেহেতু তারা সুনির্দিষ্ট কোন প্যাটেন্ট রাখেনি তাই ভারত নিজেদের উপ্পারা শাড়ির আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে সেটার প্যাটেন্ট দাবি করতে পারে। তর্ক হতে পারে নকশিকাঁথার বিষয়টি নিয়ে, কিন্তু তার সাথে এইদুটো কেন জুড়ে দেয়া হলো সেটাই প্রশ্ন?
এটা কি আলু ডেক্সের আবিষ্কার? যে একটার অভিযোগ তুললে হয়তো জোর পাওয়া যাবেনা তাই তিনটা তুললে যদি একটু হইচই হয়?
যেমন কিছুদিন আগে নকল তাজমহল নিয়ে কিন্তু অনেক হইচই হয়েছে সে সময় কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ সেই নকল তাজমহলকে বেশ ভালোই সমর্থন দিয়েছিল। প্যাটেন্ট এর ব্যাপারটা কি সে ক্ষেত্রে খাটে? ভারত মনে হয় আপত্তি তুলেছিল, পরের ঘটনা ঠিক মনে নেই এখন। তবে নকল তাজমহল এখন বহাল তবিয়তেই আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ফজলি আম প্রথম উৎপাদিত হয় গৌড় জনপদে। গৌড় জনপদ রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, মালদহ এবং পশ্চিম দিনাজপুর নিয়ে গঠিত। দেশভাগের পর পশ্চিম দিনাজপুর ও মালদহ ভারতে পড়ে এবং বাকী অংশগুলো বাংলাদেশে পড়ে। ভারত দাবী করছে, ফজলি আম মালদহ জেলার এবং সেই সূত্রে তারা মেধাস্বত্ব নিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে এটা শুধু মালদহ জেলার নয়, সমগ্র গৌড় জনপদের।
(তথ্যসূত্রঃ হেরিটেজ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মাহবুব সিদ্দিকীর বই - "আম" )
যেহুতু গৌড় জনপদে ফজলি আমের উৎপাদন শুরু হয় এবং মালদহ ও বাংলাদেশ দুটোই গৌড় জনপদের মধ্যে পড়ে সুতরাং ফজলি আম এর গুনগত পার্থক্য থাকার কথা নয়।
সেক্ষেত্রে দুটি দেশ একসাথে পেটেন্টের অধিকারী হবে বা অধিকারী হউয়া উচিত হবে। ভারত কোন ভাবেই একক পেটেন্ট দাবি করতে পারেনা এই ক্ষেত্রে- মালদহের ফজলি আম নিয়ে।
আর যদি তারা হাইব্রিড করে থাকে সেক্ষেত্রে তার একটা নাম থাকবে, অন্য প্রজাতি হবে যার সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। যেমন ল্যাংড়া কিন্তু কোন নিজস্ব প্রজাতি নয়, এটি হাইব্রিড আম। সঠিক মনে নাই কোন দুটো প্রজাতির হাইব্রিড, হাইব্রিড করার পরে একটি নতুন জাত তৈরি হয়।
আর জামদানি শাড়ি ও প্রথম আমাদের দেশে আবিস্কার।
যেকোন জিনিষকে একই গোত্রভুক্ত করা যায় যদি তারা এক জিনিসে তৈরি হয়।
বিষয়টা পরিস্কার করি। সিল্ক শাড়ি তখনি বলব যদি সেটি সিল্কের তৈরি হয়। তার মানে সকল জায়গায় সিল্কের শাড়ি তৈরি হবে এক ফর্মুলাতে। এখন ডিজাইন বিভিন্ন হতে পারে, তাই বলে তো আর নাম বিভিন্ন দিবনা বা বিভিন্ন নামে নথিভুক্ত করবনা?
টাঙ্গায়িলের টাঙ্গাইল শাড়ি কিন্তু অন্য এলাকাতেও প্রস্তুত হয়, কিন্তু শাড়ির নাম তো শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইল শাড়ি থাকে।
উপ্পারা শাড়ির আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে সেটার প্যাটেন্ট দাবি করতে পারে- সেইক্ষেত্রে নকশাগত পার্থক্য দেখালে চলবে না, গঠনগত পার্থক্য দেখাতে হবে।
আর এই জন্যই ভবিষ্যতে এই সমস্ত জটিলতা এড়ানোর জন্য সমস্ত তালিকা আমাদের হাতে থাকলে, আমরা নিজেদের পেটেন্ট আগেই নিয়ে রাখতে পারি।
আর নকল তাজমহল এর বিষয় পুরাটা সঠিক আমার মনে নাই, তাই কোন মন্তব্য করতে পারলাম না।কিন্তু অনেক জাদুঘর বা এই ধরনের অনেক জাইগাতেই কিন্তু ছবি তোলা বা ছবি আঁকা বারন। নকল এড়াতে এবং নিজেদের পেটেন্ট ঠিক রাখতে।
সাফিনাজ আরজু
নকল তাজমহল বানানোর সময় কি প্যাটেন্ট মানা হয়েছিল বলে মনে হয় আপনার?
কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ অভিযোগ আনতে পারবেনা বলেই মনে হয় কারণ ঐ একটাই, আগে নির্দিষ্ট দুটো নাম উল্লেখ করে দেয়া।
গুনগত আর গঠনগত পার্থক্য ভারত দেখায় নি সেটা আপনি নিঃশ্চিত?
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
নকল তাজমহলের বিষয়টা আমার সঠিক জানা নেই, তাই কোন মন্তব্য করতে চাইনা।
হয়ত আপনি ঠিকই বলেছেন যে-
কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ অভিযোগ আনতে পারবেনা বলেই মনে হয় কারণ ঐ একটাই, আগে নির্দিষ্ট দুটো নাম উল্লেখ করে দেয়া।
যেহুতু সঠিক বুঝা যাচ্ছেনা কি হতে পারে, তাই আইনগত ব্যাবস্থা নিয়ে দেখতে পারি। কারন ভারত আর পাকিস্থান তো বাসমতি চালের পেটেন্ট ফেরত পেয়েছে আমেরিকা থেকে।
গুনগত আর গঠনগত পার্থক্য ভারত দেখায় নি সেটা আপনি নিঃশ্চিত?
না আমি নিঃশ্চিত নই। আর এই জন্যই ভবিষ্যতে এই সমস্ত জটিলতা এড়ানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি এত জোর দিচ্ছি। তালিকা আমাদের হাতে থাকলে, আমরা নিজেদের পেটেন্ট আগেই নিয়ে রাখতে পারি। আমি এই বিষয়টিকেই বারবার গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেক সম্পদ আছে, যা আমাদের স্বকীয়। আগে থেকে আমরা তার অধিকার নিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে আর এই বিষয়গুলো আসবে না।
আর একটি প্রশ্ন আসল মনে-
বাংলাদেশ এখন Strawberry চাষ করছে। মাটি, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর কারনে গুনগত আর গঠনগত পার্থক্য বিদ্যমান।
তবে কি আমরা এটির পেটেন্ট নিজেদের নামে দাবি করতে পারি। আমি শুধু জানার উদ্দেশেই প্রশ্ন করলাম, নিজে বিষয়টা নিয়ে সন্দিহান তাই আর কি।
সাফিনাজ আরজু
আপনি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের কোনটাতেই নিঃশ্চিত নন। কিন্তু তবুও বলে যাচ্ছেন যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা দাবিটা কি করবো? সেই তথ্যটা তো আগে জানুন।
আর এখানে অপরাধী সম্পর্কে আপনি নিঃশ্চিত নন, কিন্তু আগেই তাকে অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছেন!! ধরেন আপনার কথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিলাম এবং দাবি করলাম এটা আমাদের তখন যদি প্রমাণিত হয় এটা আমাদের নয় তাহলে অপমানটা কে হবে? কাউকে দোষী প্রমান করতে হলে তো তথ্যপ্রমান লাগে সেটা কই? আলু ডেস্ক বললো আর তাতেই প্রমান হয়ে গেল তা তো না!! এরা তো কতো কিছুই বলে!!
গুনগত আর গঠনগত পার্থক্য সম্পর্কেও আপনি নিঃশ্চিত নন!! তার মানে আপনি মালদার ফজলি আম খেয়েও দেখেননি কিন্তু আগেই বলে বসলেন এই ফজলি আমের বংশ এক!! গৌড় প্রদেশ সেই কবে ছিলো সেই আম যে এখনও তার একই বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে এটা আপনি নিঃশ্চিত?
বাংলাদেশ স্ট্রবেরি চাষ করছে, ভালো কথা। রাষ্ট্রীয়ভাবে ধুমধাম করে করলে এর সম্পর্কিত আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ হবে বলেই তো মনে করি। প্যাটেন্টকারীর থেকে অনুমোদন নিতে হয় আশা করি সরকার তা করেই চাষ করবে। যদি না করে তাহলে তো সমস্যা। তবে স্ট্রবেরি প্যাটেন্টকৃত ফল কিনা সেটা জানিনা। এটা সবার আগে জানা প্রয়োজন।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনার কথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিলাম এবং দাবি করলাম এটা আমাদের তখন যদি প্রমাণিত হয় এটা আমাদের নয় তাহলে অপমানটা কে হবে?
আইনগত ব্যবস্থা আমার কথায় নিতে কে বলেছে?
কেউ কিছু বলল আর হয়ে গেল সেটাত সম্ভব না।
আমি যেমন কিছু বিষয় নিয়ে পরিস্কার নয়, আপনি কি নিশ্চিত যে পুরো বিষয়টা নিয়ে চিন্তার কিছু নাই?
সরকারকে খোঁজ নিতে হবে এবং যদি বিষয়টা সত্য হয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি এইটুকু বুঝাতে চেয়েছিলাম। হয়ত ভাষাগত কিছুটা দুর্বলতার জন্য আমার বক্তব্য অন্যরকম শুনিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি দুঃখিত।
আর একটি কথা বলতে চাই, আমি আগেই বলেছি হাইব্রিড করলে নামের সাথে তা আসার কথা। সুতরাং মালদহের ফজলি আম যে হাইব্রিড করা কিনা বুঝা যাচ্ছেনা।
গৌড় প্রদেশ সেই কবে ছিলো সেই আম যে এখনও তার একই বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে এটা আপনি নিঃশ্চিত?
সেক্ষেত্রে তো আমাদের দেশেও দিনাজপুরে যে ফজলি আম হয় আর রাজশাহীতে
যে ফজলি আম হয় তা ভিন্ন হবে কারন দিনাজপুর ও গৌড় প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল । মাটি অনুযায়ী যদি আমের বৈশিষ্ট্য বদলায় তাহলে এই দুটো আমরা আলাদা পেটেন্ট নিতে পারি- রাজশাহীর ফজলি আম, দিনাজপুরের ফজলি আম।
ভালো থাকবেন।
এই কথাটাই বলা হচ্ছে, প্যাটেন্ট নিতে বাংলাদেশকে কেউ না করছেনা, কিন্তু তার জন্য কি কি তথ্য-প্রমান তারা উপস্থিত করছে সেটাই বক্তব্য। আপনার লেখা, এই খবরটির সত্যতা যাচাই করে শুধু নকশিকাঁথার বিষয়টিতে গিয়ে অভিযোগটি আনতে পারতো তা হয়নি, কারণ আপনিও আরো অনেকের মতোই আলুর খবরকেই ভিত্তি হিসেবে ধরেছেন। আপনি নিজেই বলুন দেশে কয়টি সংবাদপত্র আছে যারা বস্তুনিষ্ঠ খবর ছাপায়? বিশেষ করে আলু, যেখানে তাদের ডেস্কে আলু চাষের মতো খবর চাষ হয় !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
পোস্ট বা কমেন্টের লম্বা সিরিজ বিশদে পড়িনি, তাও এই অংশটার প্রতি একজন দৃষ্টি আকর্ষণ করল বলে উত্তর দিচ্ছি।
ভারত কেন পেটেন্ট করবে? কারণ এগুলোর জন্মস্থান ভারতীয় উপমহাদেশে। আমরা পেটেন্ট না করলে বিলিতি কোম্পানিরা পেটেন্ট করে লাভের গুড় নিজেদের ঝোলায় পুরবে। নিম, হলুদ ইত্যাদি বহুপ্রচলিত ভারতীয় ভেষজগুলো একসময় তারাই পেটেন্ট করে নিয়েছিল ওষধীগুণের আবিষ্কারক বলে দাবী করে। ভারতকে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সেগুলো খারিজ করাতে হয়। এইসব ঝামেলা এড়াতে এখন সরকার সতর্ক হয়ে প্রিএম্পটিভ অ্যাকশন নিলে তা নিন্দা করা যায় না। পড়ে দেখুন।
আবেগময় একটা লেখা দিয়েছেন বটে, সেটা যদি কিছুটা তথ্য-যুক্তি-সম্বলিত হত তাহলে পাঠকদের সুবিধা হত। প্রথমালুর রিপোর্ট পড়ে উত্তেজিত হয়েছেন, খতিয়ে দেখলেন না যে ভারত তার রাজ্যের উৎপাদনগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। খোঁজ নিলেন না, যে এই পেটেন্ট নিয়ে আগে কতটা ঝামেলা হয়েছে।
আপনাকে ধন্যবাদ কৌস্তুভ।
আমি নিমের কথা ও জানি। এবং কয়েকদিন আগে যে আমেরিকা বাসমতি চালের পেটেন্ট নিয়েছিল পরে ভারত, পাকিস্তান যৌথভাবে পেটেন্ট আইন করে ফেরত পায় তা ও জানি।
আমার মন্তব্যটুকু কোন কথার প্রেক্ষিতে এসেছে এবং কিভাবে এসেছে সেটুকু যাচায় করতে হলে আপনাকে আগে আমার লেখা পরে কমেন্ট গুলো পড়তে হবে, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কমেন্ট টা সেখানে ঐভাবেই প্রযোজ্য।
আশাকরি, লেখাটা এবং কমেন্ট গুলো পড়ে দেখবেন।
আর আমার লেখাতেও আমি এটাই দাবি করেছি, আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হোক এই বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব এবং একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করে যত দ্রুত পারা যায় আমাদের নিজেদের দেশীয় ঐতিহ্য নিজেদের অধিকারভুক্ত করা।
সাফিনাজ আরজু
নিমের এই দীর্ঘ কেচ্ছা যদি জানেনই তাহলে "এর আগে নিমগাছের স্বত্ব নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।" এইটুকু বলে ছেড়ে দেওয়ার বদলে পাঠককে পুরো ঘটনাবলী জানানো দরকার ছিল।
"আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হোক" বললে মনে হয় যেন কোনো অপরাধের প্রতিকার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা কায়েম করে শাসিত করার দাবী করা হচ্ছে। পোস্টে আপনার "ভারতের এই অন্যায় নিবন্ধনের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ যেহুতু আছে, তাই অবশ্যই এই পেটেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে পেটেন্ট আমাদের নিজেদের নামে করতে হবে।" কথাটাও তাইই দাঁড়ায়। কিন্তু আপডেটেড তথ্য অনুযায়ী তো 'আসামী' (এক্ষেত্রে ভারত) তেমন কোনো অপরাধ করে নি। সেক্ষেত্রে 'পদ্ধতিগত ব্যবস্থা' নেওয়া হোক বললে ঠিক দাঁড়াত, কারণ এখানে বাংলাদেশের প্রয়োজন গঠনমূলক প্রক্রিয়া, প্রতিশোধমূলক নয়। তার বদলে, আপনার সদ্য বলা কথাতেও 'আইনগত প্রতিরোধের ডাক' দেখে মনে হল আপনি এখনও প্রতিহিংসাই আঁকড়ে ধরে থাকতে চান। (আপনি যদি বিএসএফ ইস্যুতে ওই কথা বলতেন, তাহলে কিছু বলার ছিল না।)
যাহোক, আপনার কথায় যে কারো 'ভারতানুভূতি' আহত হচ্ছে এমন না, কেবল গুছিয়ে লেখার অনুরোধ করা হচ্ছে।
ব্যাবস্থা>ব্যবস্থা
ভাষাগত ভুলের জন্য এবং গুছিয়ে বক্তব্যটুকু বলতে না পারার জন্য দুঃখিত। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব। আমি কোন দেশের বিরুদ্ধচারণ করিনি বা করতে চাইনি।
মানেন কিনা জানিনা, বড় কোন দেশের খুব নিকটবর্তী ছোট দেশ থাকলে সেটি ভয়ংকর হলেও হতে পারে। আর বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের আচরন বন্ধুসুলভ হয়ত ছিলনা। যাই হোক,
মূল বিষয়টা এখানে কোনভাবেই ভারত ছিলনা। আমি শাড়ির একটা উদহারন কিন্তু দিয়েছিলাম যে শাড়ি আমরা আগে পেটেন্টের দাবি করলে পেলেও পেতে পারতাম।
আমার মূল বক্তব্য ছিল, ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু আর না ঘটে।
ভবিষ্যতে যে নেপাল বা পাকিস্তান এমন কোন কিছুর দাবি করবেনা কে বলে পারে, যেখানে অনেক কিছুই কমন।
গুছিয়ে লেখা বিষয়টির প্রতি জোর দিবো।
অনেক ধন্যবাদ।
বানান ভুলের জন্য দুঃখিত
লিঙ্ক তো কাজ করে না।
লিংক
লিংকটা দিলাম এখানে, পড়তে পারার কথা।
প্যাটেন্ট হল কোন কিছু উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও আমদানীকরণে অন্য কারো বাধা প্রদানের ব্যবস্থা করা। খবরটা পড়ে আঁতকে ওঠার আগে দুইটা জিনিস জানা জরুরীঃ
১। প্যাটেন্টকৃত বস্তুর নাম
২। প্যাটেন্টের এখতিয়ার (জুরিসডিকশন)
স্বাদ গুণ গন্ধ চেহারাছবি সব পরের ব্যাপার। মনে করেন ভারত সরকার নকশী কাঁথার প্যাটেন্ট নিল, তাহলে আমরা বুঝলাম ভারত সরকার (বা তার অনুমোদিত সংস্থা) ব্যতিত আর কেউ কোন কাঁথা "নকশী কাঁথা" নামে ঐ প্যাটেন্টের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় উৎপাদন বিপণন ইত্যাদি করতে পারবে না।
এখতিয়ার জাতীয় বা আন্তর্জাতিক দুই রকম হয়। দেখতে হবে ভারতের এই প্যাটেন্ট ঠিক কোন কোন দেশে খাটে। বাংলাদেশ সরকারের তখনই উদ্বিগ্ন হবার কারণ থাকবে যখন বাংলাদেশের বর্তমান অথবা ভবিষ্যত বাজারে বাংলাদেশের কেউ "নকশি কাঁথা" নামে কাঁথা বেচতে পারবে না। সেইটা কি এখানে হয়েছে? কেউ কি জানেন এই প্যাটেন্টের জুরিসডিকশন?
..................................................................
#Banshibir.
না জেনে আমাদের আলু যেমন বিপ্লব করছে অনেকেই তার সাথে যোগ দিবে আশা রাখি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমি হয়ত আমার লেখার উদ্দেশ্য বুঝাতে পারিনি ঠিকমতো। সেটি লেখক হিসাবে অবশ্যই আমার ব্যার্থতা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন দৈনিক বা অন্যান্য মাধ্যমেও অনেক খবর আসে। সব নিয়ে মানুষ বিপ্লব ও করেনা, আন্দোলন ও করেনা, অন্ততপক্ষে আমি করিনা। যদি আমি নিজে কোন বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়, তখনি কেবল মুখ খুলি।
মনে হয় অসংখ্যবার বলে ফেলেছি, আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে অনর্থক জটিলতা এড়ানো। মোটেও কোন মিটিং বা মিছিল করে কোন দেশের বিরুদ্ধচারন নয়। কেউ বলল - চিলে কান নিয়ে গেছে আর তাতে দৌড় দিবো, উঁহু সম্ভব নয়।
সতর্ক থাকাটা দোষের কিছু নয়, বরং না থাকাটাই বোকামি।
জানিনা বক্তব্য পরিস্কার করতে পারলাম কিনা!
সাফিনাজ আরজু
আলুর মতো পত্রিকা যখন ইচ্ছাকৃতভাবেই ভারত বিদ্বেষ আর পাকিপ্রেমের চাষ করে তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। ভারতের সব কাজই বন্ধুসুলভ নয় কিন্তু তার মানে এই না যাতে তারা দোষী নয় তাতে তাকে দোষী করে আমাদের বিরোধিতা করে দেখাতে হবে।
বিএসএফ এর নির্যাতন সংক্রান্ত খবরে বিরোধিতা/প্রতিবাদ এক জিনিস আর উৎসহীন, তথ্যবিহীন খবরে প্রতিবাদ এক জিনিস।
যাই হোক, অফ গেলাম।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভালো লাগলো সত্যপীর। আগেই বলেছি পুরো বিষয়টা আমার নিজের কাছেও পরিস্কার নয়। আমরা আসলেই এখনও জানিনা ভারত ফজলি আম, জামদানি শাড়ি আর নকশি কাঁথার পেটেন্ট পেলে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে কি নাই। কিন্তু যদি আসলেই উদ্বিগ্ন হবার কারণ ঘটে, সেক্ষেত্রে?
Prevention is always better than cure, নয় কি?
আমি বিশেষজ্ঞ নয়, কিন্তু এটুকু বলতে পারি জোর দিয়ে বারবার জটিলতায় পড়ার চাইতে আগে থেকেই সতর্ক থাকা ভালো। নিজেদের সব জাতীয় ঐতিহ্য এবং সম্পদ নিজেদের থাকায় বাঞ্ছনীয়।
এই সব ঐতিহ্যগুলো আমাদের গর্বের, অহংকারের, ভালবাসার !!!
প্যাটেন্ট আইনি লড়াই, গর্ব অহংকার সরিয়ে মাথা খাটানো বেশী প্রয়োজন। আমাকে জানতে হবে প্যাটেন্টের সম্পূর্ণ পরিধি (স্কোপ কথাটার বাংলা এই জায়গায় পরিধি ঠিক আছে কি?), তার আগে খামোকা উত্তেজিত হবার প্রয়োজন নেই। প্যাটেন্টের এখতিয়ার জানার পরে পরবর্তী ধাপ।
..................................................................
#Banshibir.
প্যাটেন্টের এখতিয়ার জানার পরে পরবর্তী ধাপ।
সহমত হলাম বক্তব্যর সাথে।
ধন্যবাদ।
পত্রিকা তো কত কিছুই প্রসব করে; আপনার এই পোষ্ট থাকায় এ ব্যাপারটা নিয়ে, অনন্ত আলোচনা খেকে অনেক কিছু জানা গেল, ক্লিয়ার হলো - সেটাই ভালো..
ভালো থাকবেন।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
প্রথম আলোর প্রতিবেদন পড়েছি, আগেও পড়েছি ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন। দুয়েই বোঝা গেছে যে প্রতিবেদকের বিষয় নিয়ে কোনও স্বচ্ছ ধারণা নেই। প্রথম কথা হল এই বিষয়টা পেটেন্ট না - এটা ভিন্ন ধরনের স্বত্ত্ব সংরক্ষণ। এর নাম জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন। অর্থাৎ কোনও পণ্য যদি কোনও বিশেষ স্থানে উৎপাদিত হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে, তবে অন্য স্থানে সেই একই পণ্য উৎপাদিত হলে তারা একই নাম ব্যবহার করতে পারবে না। এইটা অনেকটা বগুড়ার দই ঢাকার দোকানে তৈরী হবার মত ঘটনা। এখানে স্বত্ত্ব সংরক্ষণ করা জরুরী কারণ বগুড়ার দই-প্রস্তুতকারকদের কাছে "বগুড়ার দই" নামটা বাঁচিয়ে রাখা যতটা জরুরী, ঢাকায় যারা বগুড়ার দই বেচে, তাদের কাছে ততটা জরুরী না। ফলে কোয়ালিটি মার খায় আর কাস্টমার মার খায়। ব্যাপারটা অনেকটা ব্র্যান্ড-নেমের মত। এম-পি-থ্রি প্লেয়ার বেচলেই যেমন সেটা আই-পড না - অনেকটা সেরকম। এই কারণে এখানে রয়ালটির কোনও ব্যাপার নেই (প্রশ্ন - কাকে রয়ালটি দেবেন?)।
জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন বস্তুত যথেষ্টই বিতর্কিত। শ্যাম্পেন হল ফ্রান্সের একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রস্তুত মদ, আর পার্মেসান চিজ হল ইটালীর পার্মা অঞ্চলের তৈরী চিজ - কিন্তু এই দুইই আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াতে আলাদা-ভাবে বানিয়ে বিক্রি করা হয়। গত দশকের শুরুতে পার্মেসান চিজ নিয়ে ইউরোপের কোর্টে মার্কিন বহুজাতিক বনাম পার্মার চাষীদের কোর্ট কেসের পরে মার্কিন কোম্পানীরা এখন ইউরোপে পার্মেসান চিজ বিক্রি করতে অন্য নাম ব্যবহার করছে। কিন্তু আমেরিকাতেও ফ্লোরিডা কমলালেবু, ইডাহো আলু বা ওয়াশিংটন আপেল নামগুলোর স্বত্ত্ব সংরক্ষণের কথা এখন ভাবা হচ্ছে।
জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন সবসময় একই দেশের মধ্যে হতে হবে এরকম কোন ব্যাপার নেই। একাধিক দেশ একই ইন্ডিকেশন ব্যবহার করতে পারে। যেমন আফ্রিকান কিছু সারা আফ্রিকার সব যে কোনও দেশের জিনিস হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সব দেশগুলোকে সম্মত হতে হবে নির্দিষ্ট কোয়ালিটি ও জিওগ্রাফি ক্রাইটেরিয়ার ওপর। ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান-নেপালের মধ্যে অনেক কমন কালচারাল হেরিটেজ আছে। সুতরাং উপমহাদেশের অনেক কিছুই এইরকম একাধিক দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। কিন্তু যেসব পণ্যে জিওগ্রাফি এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাদের ক্ষেত্রে শুধু সেই জিওগ্রাফির জন্য জি-আই স্বত্ত্ব সংরক্ষণ করা যেতে পারে, অথবা সাধারণ নামে একাধিক দেশে করা যেতে পারে। তাঁতের শাড়ি ভারতে ও বাংলাদেশে দুই দেশেই জি-আই স্বত্ত্ব সংরক্ষিত হতে পারে, কিন্তু শান্তিপুরি তাঁত শুধু ভারতের শান্তিপুরে উৎপন্ন তাঁতকেই বোঝাবে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত তিনটি পণ্যের মধ্যে নকশি কাঁথা ছাড়া বাকি দুয়ের ক্ষেত্রে ভূগোল সীমাবদ্ধ করা আছে। এরপরে নকশি কাঁথা বাংলাদেশের জি-আই স্বত্ত্ব সংরক্ষণ পেলে আর তার ওপর অন্য কোনও দেশ আপত্তি না জানালে এই নাম দুই দেশের ক্ষেত্রেই সংরক্ষিত হবে। যেহেতু বিষয়টি পেটেন্ট না, তাই আগে-পরের কোনও ব্যাপার নেই। পেটেন্ট যেহেতু আবিষ্কারের সাথে জড়িত তাই পেটেন্টের ক্ষেত্রে যে আগে আবিষ্কার করেছে তার স্বত্ত্ব সংরক্ষণ হয়। এখানে তো ট্র্যাডিশনের ব্যাপার - তাই আগে পরে রেজিস্ট্রেশনের পার্থক্য নেই।
আরো লেখা পড়তে পারে - ইউরোপ বনাম আমেরিকা (পার্মেসান চিস থেকে শ্যাম্পেন)
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনাকে অসংখ্য আপনার এই তথ্যর জন্য।
পেটেন্ট আর জি-আই স্বত্ত্ব সংরক্ষণ সম্পর্কে সচ্ছ ধারনা দেবার জন্য!
যাহ্, ফিনল্যান্ডেই আছেন নাকি? কোন শহরে?
facebook
নতুন মন্তব্য করুন