বাচঁতে হলে জানতে হবে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৭/১০/২০১২ - ৮:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাচঁতে হলে জানতে হবে এই কথাটি শুধুমাত্র AIDS এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় বেশিরভাগ অসুখ ই সামান্য চেষ্টার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।এমনকি ক্যান্সারের মত রোগ ও।কর্কট রোগ বা ক্যান্সার দুইটি শব্দই এত খটমট ধরনের যে শুনলেই ভয় লাগে।অবশ্য ক্যান্সার তো ভয়ঙ্কর এক অসুখের ই নাম।৪ বছর আগের কোন এক সন্ধ্যায় যখন শুনেছিলাম আব্বার কোলন ক্যান্সার হয়েছে মাথার উপর বাস্তবিক অর্থেই যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল।এত শেষ পর্যায়ে ধরা পড়েছিল তখন আর কিছুই করার ছিল না মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা ছাড়া।হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঠিক ১১ দিনের মাথায় আব্বা মারা যাওয়ার পর ই প্রথম বুঝতে পারলাম মৃত্যু কত ভয়ঙ্কর আর তার চেয়েও বুঝি বেশি ভয়ঙ্কর এরকম শেষ পর্যায়ে এসে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা।অথচ আরেকটু সচেতন হলেই হয়তোবা এই পরিস্থিতিতে পড়তে হত না।একদিন সবাইকেই মারা যেতে হবে, তাই বলে এভাবে মারা যাওয়া! আমরা চেস্টা করলে হয়তোবা সেটা আরেকটু ভালভাবে হতে পারে।আসলে এরকম হঠাৎ করে ডায়াগনোসিস হওয়ার পরে হাতে যখন কিছুই করার মত সময় থাকে না সেই না পারার কষ্টটা যে কিরকম বোঝানো যাবে না।
হুমায়ুন আহমেদ এর কল্যাণে কোলন ক্যান্সার এখন বেশ পরিচিত একটি শব্দ।মোটামুটি সবাই এখন এই শব্দটার সাথে পরিচিত।হুমায়ুন আহমেদ নিজেও জানতেন না তার কোলন ক্যান্সার হয়েছে।শ্বাশুড়ীর চিকিৎসা করাতে যেয়ে কোন এক কারনে উনার কো্লনস্কো্পি করানো্র পরেই ধরা পরে যে উনি বেশ এডভানসড স্টেজের কোলন ক্যান্সার এ আক্রান্ত।প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে হয়ত আমরা আগামী বইমেলাতেও উনার লেখা গল্প পড়তে পারতাম। কোলন ক্যান্সার কোথায় কিভাবে হয়,কি করলেই বা এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই টুকিটাকি জিনিসগুলো জানা থাকলে হয়তো প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগটি আমরা নিজেরাই সনাক্ত করতে পারব।খাবার খাওয়ার পর পাকস্থলি হতে যে পথে খাবার পরিবাহিত হয় তাকেই কোলন বা অন্ত্র নামে ডাকা হয়।এই কোলনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করে ছোট কোলন বা ক্ষুদ্রান্ত এবং বড় কোলন বা বৃহদান্ত্র নামে ডাকা হয়।ছোট কোলন বেশ শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের।।সে খুব কম সময় ই ক্যান্সার এর জন্ম দান করে।কিন্তু বড় কোলন মোটেও এত শান্ত নয়।তার অস্থিরতার কারনে সেখানে প্রায়ই ক্যানসার জন্ম গ্রহন করে যাকে আমরা কোলন ক্যান্সার হিসেবে চিনি।এই রোগটিকে আমরা যদি তার শৈশবকালেই ধরতে পারি তাহলে এই দুষ্ট বাচ্চা থেকে খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।কিন্তু রোগটি যদি শেষের পর্যায়ে ধরা পড়ে তাহলে আসলে ডাক্তারদের তেমন কিছুই করার থাকে না, তা সে আমেরিকার যত নামকরা ডাক্তার ই হোক না কেন।তাই এই খারাপ বাচ্চাটার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের মত সাধারন মানুষের যেই কাজটি করা লাগবে সেটি হল শৈশবকালেই যাতে আমরা এই দুষ্ট বাচ্চাটিকে ধরতে পারি তার ব্যবস্থা করা।
কো্লন ক্যান্সার এর সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন একটা লক্ষণ প্রকাশ পায় না,যার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াগনোসিস হতে হতে ক্যান্সার বেশ এডভানসড স্টেজে চলে যায়।লক্ষণবিহীন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটিকে ধরার জন্য তাই বেশ কিছু Screening test চালু আছে।।উন্নত বিশ্বে সরকারি উদ্যোগেই সবার এসব পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে।আমাদের দেশে এখন ও এসব নিয়ে প্রচার-পরিবেশনা কম তাই নিজ দায়িত্ব্যে এই পরীক্ষা গুলো করে রাখলে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে এই রোগ এর হাত থেকে।
Screening এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা।কারন প্রথম দিকে ধরতে পারলে অপারেশান এর মাধ্যমে এটিকে নি্র্মূ্ল করা সম্ভব।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেমোথেরাপী তো আছেই।খুব সুন্দর একটা Screening Protocol আছে রোগটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরার জন্য।দুই গ্রুপ এ ভাগ করে Screening করা হয়।গ্রুপ দুটি হল- ১।কম ঝূকিপুর্ন ও ২। বেশি ঝূকিপুর্ন

কম ঝূকিপুর্নদের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়স থেকে Screening করা লাগবে। এই ক্ষেত্রে নিচের Screening test গুলো করা হয়ঃ
১।Fecal occult blood tests (FOBT) ঃ বছরে ১বার।এটি খুবই সাধারন একটি পরীক্ষা যেখানে পায়খানায় কোন লুকানো রক্ত আছে কিনা তা পরিক্ষা করা হয়.
২।Sigmiodoscopy ঃ প্রতি ৫ বছরে একবার।Sigmoidoscope নামক যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়।
৩।Colonoscopy ঃ প্রতি ১০ বছরে একবার।Colonoscope নামক যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়।

বেশি ঝূকিপুর্নদের ক্ষেত্রে Screening test হিসেবে উপরের ৩ টি পরীক্ষাই করা হয় তবে Colonoscopy প্রতি ৫ বছরে একবার করা লাগে।এই ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়স থেকে Screening test গুলো করা লাগবে।তবে তার জন্য কারা বেশি ঝূকিপুর্ন এটা জানা দরকার।
১।বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তানদের মধ্যে যদি কোন ১ জনের কোলন ক্যান্সার/adenomatous polyp (কোলনে এক ধরনের আচিল এর মত গ্রোথ ) হয়ে থাকে এবং ডায়াগনোসিস এর সময় বয়স ৬০ এর নিচে হলে।(*বয়স ৬০ এর বেশি হলে কম ঝূকিপুর্ন দের মত করেই Screening করা লাগবে কিন্তু ৪০ বছর এর পর থেকেই Screening শুরু করতে হবে )
২।প্রথম পুরুষ আত্বীয়-স্বজ্ন এর মধ্যে যদি ২ জনের কোলন ক্যান্সার হয়।(* দ্বিতীয় পুরুষ আত্বীয়-স্বজ্ন এর মধ্যে ২ জনের কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকলে কম ঝূকিপু্র্ন দের মত করেই Screening করা লাগবে কিন্তু ৪০ বছর এর পর থেকেই Screening শুরু করতে হবে )

৭৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত যদি আমরা এই Screening test গুলো চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আশা করা যায় যে কোলন ক্যানসার যদি হয়েও থাকে তাহলে আমরা তার শৈশবকালেই তাকে ধরতে পারব।প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অপারেশান এর মাধ্যমে এই রোগ পুরোপুরিই ভাল করে ফেলা যায়।কিন্তু তা না হলে যত দিন যায় ক্যানসার কোষ গুলো ততই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কোলন থেকে যখন আস্তে আস্তে পেটের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখন আর ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না, মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া।মৃত্যুর অপেক্ষা করার মত ভয়ঙ্কর কোন অপেক্ষা আর হয় না. . .


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কাক_তাড়ুয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

টেস্ট করার মাধ্যমে আমি জানছি যে এই রোগ আমার হয়েছে কি না। কিন্তু এমন কোন উপদেশ আছে কি যা করলে আমরা এর থেকে রক্ষা পেতে পারি।

লেখাটির জন্যে ধন্যবাদ। আপনার নাম দিতে ভুলে গেছেন মনে হয় শেষে।
প্রতিটি লাইনের শেষে দাড়ির পর একটা স্পেস সবজায়গায় পড়েনি তাই পড়তে একটু অসুবিধা হয়েছে।
লেখার জন্যে চলুক

অমি_বন্যা

দীপু এর ছবি

ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। এটা আসলে আমার প্রথম লেখা তাই এরকম হয়েছে। ২বারের চেষ্টায় পোস্ট করার পর দেখলাম নামটাই দিতে ভুলে গেছি লইজ্জা লাগে
রক্ষা পাওয়ার বেশ কিছু উপায় আছে। খাদ্যাভাস তার মধ্যে একটি। বেশি করে শাক-সবজি খাওয়া লাগবে আর যতদুর সম্ভব লাল মাংস পরিহার করা লাগবে। এটা নিয়ে পরে একটা লেখা দেওয়ার ইচ্ছা আছে।

কাক_তাড়ুয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ দীপু হাসি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভাল পোস্ট।
মানুষের সচেতনতা বাড়ুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কাক_তাড়ুয়া

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, এমন একটি পোস্টের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

পরমার্থ এর ছবি

ভালো লাগলো, ভালবাসা আর দ্বায়িত্ববোধ থেকে আপনি লিখেছেন ..

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।