১.
একজন রানি এত সাধারণ হতে পারেন! কি সাদামাটা বেশভূষা! গায়ে দামী কোন অলংকার পর্যন্ত নেই! গরীব দেশের রানি হলেও না হয় একটা কথা ছিল। শম্পা তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে টিভির ক্ষুদে পর্দাটির দিকে। তার দুচোখ থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে বিস্ময় রশ্মি! ঝরে পড়ছে মুগ্ধতা!
রানি ইসাবেলা এসেছেন বাংলাদেশের গ্রাম দর্শনে। আসলে গ্রাম নয়, গ্রামের উন্নয়নে তার লগ্নিকৃত কিছু প্রজেক্ট পরিদর্শনে এসেছেন তিনি। রানির দয়ার শরীর। চোখ ধাঁধানো প্রাচুর্যে বাস করেও তার মন পড়ে থাকে এই অঞ্চলের ভুখা-নাঙ্গা মানুষগুলোর মাঝে। তাই রাজকোষ থেকে অকাতরে অর্থ ঢেলেই দায়িত্ব সারেন না ইসাবেলা, সময় পেলেই ছুটে আসেন এই ধূলি-কাদা মাখা মানুষগুলোর কাছে।
রানিকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে শম্পা। তার প্রজেক্টের মেয়েদের হস্তচালিত তাতে তৈরি একটা সুতি শার্ট পড়েছে সে। গলায় ঐ মেয়েদেরই বানানো একটা অতি সাধারণ মালা। এ ছাড়া প্রায় সারা দেহই নিরাভরণ। তামাম দুনিয়ার একজন প্রভাবশালী রানি কি করে এতটা নিরহঙ্কারী হতে পারেন!
খানিক বাদে ইসাবেলাকে একটি ২৪ বছরের মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা গেল। মেয়েটি রোবটের মত কি যেন গড়গড় করে বলে যাচ্ছে। আর রানিও সমঝদারের মত মাথা নাড়ছেন। মেয়েটিকে দেখে শম্পার মিনা কার্টুনের কথা মনে পড়ে যায়। আচ্ছা, রানি কি আমাদের দেশের প্রেমে পড়ে আমাদের ভাষাটাও রপ্ত করে ফেলেছে? অসম্ভব কিছু না। তাছাড়া, এই অসহায় মানুষগুলোর সাথে রানির আত্মিক যোগাযোগ। রানি এদের ভাষা বুঝবে না তো কে বুঝবে?
এক পর্যায়ে রানির কোলে একটা শিশুও দেখা গেল। শরীরে অপুষ্টির চিহ্ন খুব স্পষ্ট। ময়লা জামা পরিহিত শিশুটাকে হঠাৎ চুমু খেলেন ইসাবেলা। ভাবা যায়! ঐ শিশুটির গায়ে নিশ্চয়ই সের খানেক ধুলো লাগানো ছিল। আর দুর্গন্ধের কথা তো বলাই বাহুল্য। দুঃস্থ মানুষগুলোর মায়ায় পড়ে রানি মনে হয় ঘ্রাণশক্তি পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন!
রানির প্রজেক্টগুলো দেখে হঠাৎ বড় চাচার খামারের কথা মনে পড়ে যায় শম্পার। তার বড়লোক বড় চাচাকে প্রায়ই দেখেছে খামারের মল-মূত্র-কাদা অবলীলায় পেরিয়ে পূঁতিগন্ধযুক্ত পশুগুলোর পাশে দাঁড়াতে, পরম মমতায় গায়ে হাত বুলাতে।
‘এই দেখ, দেখ, মজার কান্ড। ইসাবেলাকে শাড়ি পরানো হচ্ছে। মানিয়েছেও সেরকম!’ – পাশে বসা জাফরের দৃষ্টি আকর্ষণ করল শম্পা। জাফর এতক্ষণ ল্যাপটপে এক মনে কাজ করছিল। শম্পার ডাকে টিভির পর্দায় বার কয়েক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ছাই মানিয়েছে! আমার কাছে তো ভুতের মতন লাগছে। আর এগুলো সব লোক দেখানো। কোন ভেল্যু নাই। সব সাজানো।‘
জাফরের চাঁচাছোলা কথা মোটেই পছন্দ হয় না শম্পার। মানুষের সমালোচনা করতে না পারলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না লোকটার। দুনিয়াজোড়া আরও অসংখ্য রানি তো আছে। কই, তারা তো ইসাবেলার মত নয়!
২.
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে সম্বিত ফিরে শম্পার। দরজা খুলতেই ফারুকের বসন্তে খাওয়া মুখ দৃশ্যমান হয়। এগারো-বারো বছরের একটা মেয়ে শক্ত করে ফারুকের হাত ধরে আছে। বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে আনন্দে শম্পার চোখ-মুখ চিকমিক করতে লাগল। ফারুককে সে একটি মেয়ের কথা বলে দিয়েছিল বটে, তবে এতটা মিলিয়ে আনতে পারবে চিন্তাই করেনি। মেয়েটার বয়স অল্প, আর কি গাঁট্টাগোট্টা। সব ধরনের কাজ করানো যাবে।
মেয়েটি ঘরে ঢোকার পরও ফারুকের গায়ের সঙ্গে লেপ্টে ছিল। যেন হাতছাড়া হলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে তার জন্য। শম্পা মেয়েটির আড়ষ্ঠতা কাটানোর চেষ্টা করে।
‘এই এদিক আয়। তোর নাম কি?’
‘সালেহা’ - ভীত হরিণ শাবকের কণ্ঠে উত্তর দেয় মেয়েটি।
‘ভয় পাচ্ছিস কেন? আমার কাছে ভয়ের কিছু নেই। তুই কিন্তু নিজেকে কাজের লোক মনে করিস না। গ্রামে নিজের বাড়িতে যেভাবে কাজকর্ম করতি, এখানেও ঠিক সেভাবেই করবি, বুঝলি। আমাকে খালাম্মা ডাকবি, আর এই যে আমার পাশে বসে আছে, উনি হলেন তোর খালুজান, ঠিক আছে?‘
পাশে বসা জাফর প্রতিবাদ করে উঠে, ‘তুমি খালা হতে চাইলে হও, তবে আমি কারো খালুটালু হতে পারব না, আগেই বলে রাখছি‘। জাফর কণ্ঠে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শম্পার ভেতর থেকে। এই দুর্মূল্যের বাজারে এত সহজে যে একটা মেয়ে পেয়েছে, তাতে কোথায় খুশী হবে, তা না, বরং সাহেবের উল্টো রাগ ধরেছে। একটা লোক এতটা রিজার্ভ হয় কি করে, ভেবে পায় না শম্পা। এই ধরনের মানুষের সাথে সংসার করা যে কি কষ্টকর, তা শুধু শম্পার মত ভুক্তভোগীই জানে!
যাহোক শম্পা আবার মেয়েটির দিকে মনোযোগ দেয়। ‘নিজের মনে করে থাকবি, বুঝলি। কাজ করবি, ঘুমাবি, ইচ্ছা হলে টিভি দেখবি। কেউ কিছু বলবে না।‘
মেয়েটি গোল গোল চোখে শম্পার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিঃশব্দ আর নিস্তেজ দৃষ্টি। শম্পার কথাবার্তা আদৌ তার মাথায় ঢুকেছে কিনা, এমনকি তাও বোঝা যায় না। তবে শম্পা ঘাবড়ায় না। অভিজ্ঞতা থেকে জানে, দুদিনেই সব আড়ষ্ঠতা কেটে যাবে। ভাল করে পোষ মানাতে পারলে ভালমতোই বাঁধা পড়বে সে।
৩.
হঠাৎ শম্পার চোখ ধাবিত হয় ফারুকের দিকে। তার গ্রাম সম্পর্কের জ্ঞাতি ভাই। আহা, কত কষ্ট করেই না নিয়ে এসেছে মেয়েটিকে! ফারুকের এতক্ষণে নিশ্চয়ই ক্ষুধা পেয়েছে। ফ্রিজে রাখা মাংস বের করে শম্পা। ফারুক গরুর মাংস খেতে ভালবাসে। সামান্য পোলাও চড়িয়ে দেয়। ডাইনিং টেবিলে পোলাও-মাংস দেখলে নিশ্চয়ই খুব খুশী হবে বেচারা।
এদিকে খাবার টেবিলে বাড়তি আয়োজন দেখে জাফর ভীষণ বিরক্ত হয়, তবে বিরক্তি মাত্রা ছাড়ায় যখন আবিষ্কার করে ভোজন পর্বটা ফারুকের সাথেই সারতে হবে। ফারুককে মোটেই সহ্য করতে পারে না জাফর। গা থেকে সব সময় ভুস ভুস করে সস্তা সেন্টের গন্ধ বেরোয়। সবচেয়ে বিরক্তিকর ঠেকে ফারুকের লম্বা-চওড়া কথা, যা একবার শুরু হলে আর শেষই হতে চায় না।
‘বুঝলেন, ভাইজান, আইজকাল কি আর মাইয়া পাওন যায়? তয় আফা কউনের পর থেকে আমি সবসোময় তালাসে থাকতাম। কয়দিন আগে সালেহারে চোখে পড়ল। ও যে এতখানি ডাঙ্গর হইয়া গ্যাছে জানতাম না। আমাগো পাশের গ্রামের নুরুদ্দিনের মাইয়া। নুরুদ্দিন প্রথমে রাজি আছিল না। হে মাইয়ার বিয়া দিতে চায়। পরে আমি বুঝাইয়া কইলাম, ‘তোমার যেই অভাব, তাতে কোন ব্যাডা সাইধ্যা তোমার মাইয়ারে নিতে আইব? জামাইয়ের লাইগা খরচাপাতি আছে না? আমি কই কি, এক কাম কর। শহরে আমার এক বইন আছে। তার বাড়িতে বছর দুয়েক থাইকা আসুক। মাসে মাসে যে বেতন পাইব, তা আসনের সময় এক লগে নিয়া আইবো নে। হেই টাকা দিয়া হাতে পাইলে সালেহার বিয়া দিতে আর সমস্যা হইব না কোনো।‘
ফারুকের গল গল কথার তোড়ে জাফরের দম বন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়। হঠাৎ মেয়েটির দিকে চোখ যায় তার। পেছনের দেয়াল ঘেঁষে কান খাড়া করে শুনছিল তাদের কথা। মেয়েটিকে দেখে কেন জানি খুব মায়া হয় জাফরের। সালেহাকে কাছে ডাকে সে, ‘তোমার ক্ষুধা পেয়েছে, তাই না? আচ্ছা, তুমি আমাদের সাথে বসে পড়।‘
শঙ্কিত হরিণ শাবক প্রথমে সামান্য দ্বিধা করে, পরে জাফরের আজ্ঞা মেনে বসে পড়ে তার পাশের চেয়ারটিতে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা শম্পার ঝাঁঝাল কণ্ঠস্বর, ‘না না, তুই এখন বসিস না। পরে আমার সাথে খাবি’। জাফরের আজ্ঞা মানতে দ্বিধা করলেও শম্পার আজ্ঞা নির্দ্বিধায় মেনে নেয় সালেহা, কাল বিলম্ব না করেই ছেড়ে দেয় চেয়ারখানা।
ওদিকে শম্পার ভ্রু কুচকে থাকে ভয়ানক বিরক্তিতে। নাহ্, জাফর মনে হয় তাকে মুহূর্তের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেবে না। ক্ষণিকের জন্য রান্নাঘরে গিয়েছিল। আর এর মধ্যেই মেয়েটিকে সম্রাজ্ঞীর মত নিজের পাশের চেয়ারটিতে বসিয়েছে! এ মেয়েকে দিয়ে কি পরে আর কোন কাজ করাতে পারবে সে? এতো এরপর থেকে খালি পাশে বসে খাওয়ার আবদার করবে!
৪.
বাসার সবার খাওয়ার পাঠ চুকলে, শম্পা আবার টিভি অন করে। মেয়েটি এসে পড়ায় রানি ইসাবেলাকে তখন ভাল করে দেখতে পারেনি। লেট নাইট নিউজে আবার দেখানো কথা।
দু’চারটা অন্য সংবাদের পর সত্যি ভেসে উঠে ইসাবেলার মুখ। নানা খানা-খন্দ পেরিয়ে গনগনে সূর্য মাথার উপরে রেখে ইসাবেলা হেঁটে চলেছেন প্রত্যন্ত গ্রামের পথে পথে। কি এক মহীয়সী নারী! রাজপ্রাসাদ, হীরা-জহরত, নোকর সব রেখে চলে এসেছেন আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে সাহস দিতে! হঠাৎই রানিকে দেখা গেল, এক দরিদ্র মহিলার গাল ছুঁয়ে দিতে। কপাল নিয়ে জন্মেছে বটে মহিলা! নইলে, ওর সাত জন্মেও কি সম্ভব হত রানির হাতের একটুখানি পরশ পাওয়া?
‘কি তোমার রানী-দর্শন শেষ হল? ঘুমোবে না?’-জাফরের কণ্ঠে সম্বিত ফিরল শম্পার।
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, সালেহার বিছানাটা বের করে দিয়েই শোব।‘
‘ওর বিছানা বের করা প্রয়োজন কি? পাশের রুমের খাটটা তো তো খালিই পড়ে আছে। ওখানেই শুতে পারবে।‘
‘তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? দেখেছ, ওর গায়ে কি পরিমাণ ধুলো-কাদা?’
‘মাথা খারাপ আমার হয়নি, তোমার হয়েছে। ফারুকের গায়ে তো এই মেয়ের চেয়ে বেশি ধুলা মনে হল আমার। কই তার জন্য তো নিচে বিছানা পাতোনি।‘
‘ফারুক একটা বয়স্ক মানুষ। তার উপর আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। ওর সাথে ঐ পুচকে মেয়েটার কোন তুলনা হয়? আগেও লক্ষ্য করেছি, ফারুককে তুমি মোটেও সহ্য করতে পার না। আচ্ছা, তোমার ভিতর কি কৃতজ্ঞতা-বোধ বলে কিছু নেই? ’
‘তাহলে এই প্রচন্ড শীতে তুমি মেয়েটিকে ফ্লোরে শোওয়াবেই?’
‘শীতে ওর কোন সমস্যা হবে না। ও তোমার মত নন্দ দুলাল নয় যে, সামান্য শীতেই কাবু হয়ে পড়বে। প্রচণ্ড শীতেও ওরা খালি গায়ে থাকতে অভ্যস্ত।‘
‘শম্পা, প্লিজ আমার এই রিকোয়েস্টটা রাখ, যেহেতু একটা খাট খালি পড়ে আছে, মেয়েটাকে শুধু শুধু নীচে শোওয়াবে কেন?‘ জাফরের কণ্ঠে কাতরতা ঝরে পড়ে।
‘দেখ, যা বুঝ না, তাতে অহেতুক নাক গলাতে এসো না। তুমি দেখছি মেয়েটার সর্বনাশ করে ছাড়বে! দুদিন পর যখন বিয়ে হবে, কোন রাজপুত্তুরের ঘরে যাবে সে শুনি? সেখানে সে কোথায় পাবে খাট-ডাইনিং টেবিল-আলমারি? দেখ, তুমি চাইলেও মেয়েটাকে চিরকাল আগলে রাখতে পারবে না। সে নিজেই একসময় উড়াল দেবে। তখন মেয়েটার নিম্নবিত্ত স্বামীর কিন্তু ভীষণ সমস্যা হবে তোমার মেম কন্যাকে পালতে। হয়ত দুদিনেই ঘর থেকে বের করে দেবে। তোমার কথা মত মেম বানালে মেয়েটার বিয়ে-ঘর-সংসার সব চুলোয় উঠবে, বুঝলে। এর চেয়ে আমার উপর ছেড়ে দাও। ও যেরকম পরিবেশে বড় হয়েছে, সেরকম করেই ওকে গড়ে তুলব। দেখবে, মেয়েটি একসময় বিয়েথা করে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারবে।‘
হঠাৎ শম্পার চোখ যায় টিভির পর্দায়। রানির নিউজ তখনো শেষ হয়নি। ইসাবেলাকে দেখা যাচ্ছিল কিছু অসহায় ভাগ্য বিড়ম্বিত গ্রামীণ মহিলার সাথে ছবির জন্য পোজ দিতে। ছবি তোলার ফাঁকে এক মহিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দেখা গেল মহান রানিকে। রিপোর্টার জানাল, রানি ইসাবেলার বদান্যতায় মেয়েটির বিয়ে হয়েছে, এখন স্বামী-ছেলে-পুলে নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করছে।
শম্পা এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে টিভি মনিটরের দিকে। মাঝে মাঝে তার রিয়েলিটি শো বলে ভ্রম হতে থাকে। রানির প্রোগ্রামগুলো এত সুবিন্যস্ত আর গোছানো! বিশেষ করে প্রজেক্টের মেয়েগুলোর সাথে রানির কথোপকথন এত সাবলীল যে, মন কেড়ে নেয়! কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই। নেই কোন গোলযোগ। মেয়েগুলো খুব অনুগত আর বাধ্য। রানিকে এক নজর দেখতে ও বর পেতে তারা সারিবদ্ধভাবে খোয়ার ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আবার রানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফের খোয়ারে ঢুকে যায় নীরবে, নিভৃতে ।
রানি এখন নতুন একটি বাড়িতে ঢুকছেন। খামারের মল-কাদা দলে আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন দেবী ইসাবেলা। সামনে গাদা গাদা উৎসুক মুখ, রানির ছোয়া পেতে উদগ্রীব!
শম্পার চোখ জোড়া তখনো নিবিষ্ট টিভি পর্দায়। সেখানে থোকা থোকা মুগ্ধতা আর বিস্ময়!
কাজি মামুন
২৮।১০।২০১২
মন্তব্য
খুব ভালো লেগেছে। তবে রিয়্যালিটি শো-এর সাথে তুলনাটা কি আরেকটু প্রাঞ্জল করে লেখা যেত?
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ঈপ্সিত/চম্পাকলি।
আমাদের দেশের অনেক উন্নয়ন প্রজেক্ট অন্তঃসারশূন্য ও খুব বেশী প্রচার-ধর্মী মনে হয় আমার কাছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়, প্রজেক্টের প্রভাবশালী স্পন্সর ও টার্গেট গ্রুপের মধ্যে অনুষ্ঠিত রিয়েলিটি শো'র রূপ ধারণ করে। রিয়েলিটি শো যদিও বলা হয় কোন রিহার্সাল করে হয় না, অনেকটা লাইভ ধারণের মত করে নির্মাণ করা হয়, বাস্তব হল, এসব অনুষ্ঠানও অনেক ক্ষেত্রেই থাকে সাজানো। রিয়েলিটির আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেকিটুকু চাইলে সহজেই ধরে ফেলা যায়, খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়।
রানির প্রজেক্ট পরিদর্শনের অনুষ্ঠানগুলো আমার কাছে এক একটা রিয়েলিটি শো মনে হয়েছে। আর প্রজেক্টগুলোকে মনে হয়েছে খামার। যেখানে হত দরিদ্র মানুষগুলোকে গিনিপিগ বানিয়ে রিসার্চ হয়, কিন্তু দারিদ্র্য দূর হয় না।
আর তাই এখনো শম্পাদের ঘর-বাড়িতে ছোট্র সালেহাদের সামান্য আশ্রয় খুঁজতে হয়। রানির গুণমুগ্ধ শম্পা নিজেও একটা খামার দিয়ে বসেছে যেন। রানির ঔপনেবিশিক চিন্তা-ধারা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বাস করে শম্পার মধ্যেও। সালেহার ঘর-সংসার-বিয়ে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। কিন্তু আসলেই কি সালেহার হিতকাংখি শম্পা? সবটাই তো স্বার্থে মোড়া। রানির প্রজেক্টও যেমন পাবলিসিটির জটিল আবর্তে ঘুরপাক খায়।
তবু রানির প্রজেক্ট নিয়ে শম্পাদের ফ্যান্টাসি চলতেই থাকে। আর এটাই লেখাটির মূল কথা। যা গল্পের মধ্যে পরিষ্কার করা উচিত ছিল, অথচ এখানে করতে হল। আমার ব্যর্থতা। তবু আপনার পাঠ-প্রয়াসের জন্য কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকবেন।
বেশ গোছানো উপস্থাপনা। চালিয়ে যান ।
অমি_বন্যা
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা, অমি_বন্যা। লেখাটির কোন দিকগুলো দুর্বল হয়েছে বা আরও ঘষামাজা দাবী করে, সেগুলো দেখিয়ে দিলে উপকৃত হতাম। যাহোক, আবারো ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ, সজল ভাই।
লেখার আঙিনায় চিরকালীন পুরুষ যখন নারী হয় তখন বোধহয় এভাবেই দেখে, মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে- সময় হয়েছে তাদেরকে কল্পনা চাওলার ইমেজে লেখার খাতায় প্রতিষ্ঠা করা। তবে, ডিটেইলস খুব ভাল- এগিয়ে যান, খুব লিখুন। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট )
আপনার কেন মনে হচ্ছে যে, একজন শম্পা সমগ্র নারী জাতির প্রতিনিধিত্ব করছে? শম্পাকে রানির রিয়েলিটি শো (বা খামার পরিদর্শন) -এর একজন দর্শক হিসেবে দেখানো হয়েছে মাত্র, মূল গল্পটি রানিকে ঘিরে, তার শো'কে নিয়ে। সব মেয়েই শম্পা নয়, কিছু শম্পা তো রয়েছেই, যারা না থাকলে এই রিয়েলিটি শো চলতে পারত না অব্যাহত আর ক্রমশ।
এই উৎসাহটুকু আমাকে নিশ্চয়ই ভাল লিখতে সাহায্য করবে। তবে 'ডিটেইলস' নিয়ে যদি আরেকটু 'ইন ডিটেইল' বলতেন, তাহলে ভাল হত আমার জন্য, বুঝতে পারতাম, ঠিক কোন দিকটি আপনার কাছে ডিটেইলড মনে হল।
নতুন মন্তব্য করুন