মানজিরা- দ্য ল্যামেন্ট হোপ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/১১/২০১২ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মৈথুনরতা বীচটার অভিব্যক্তিহীন মুখটা ভুলতে পারছে না শিরিন।
ব্যলকনিতে ইজি চেয়ারে দুলতে দুলতে স্ট্রীট লাইটের হলদে আলোয় অপার্থিব লাগছিল দৃশ্যটা।একটুও অশ্লীল নয়, বরং সৃষ্টি-তত্ত্বের একটা অঙ্কের নির্ভুল মঞ্চায়ন- মনোযোগ দিয়ে দেখল কতক্ষণ।

কালো কুকুরটা চারপায়ে স্থির, অবিচল দাড়িয়ে ছিল একঠায়; মুখে ব্যথা-উত্তেজনা বা কোন একস্প্রেশান ছিল না।আবার, দায়সারা নয়- যেন কোন কর্তব্যে রত! তিন-তিনটে ষন্ডা পালা করে নিজেদের ভেতর ঝগড়া করছিল আর বিজয়ী জন দু-পা তুলে দিয়ে মিনিটখানেকের আন্দোলন, ব্যস! তবে? ভালবাসা-বাসিটা কি কেবল মানুষের বিলাসিতা? না বোধহয়। সব প্রানিদের ভেতর নারীসদস্যরা সন্তানের প্রতি যে ভালবাসা দেখায় তা তো আর ভাণ নয়, মানুষ ছাড়া আর কেউ কি ভাণ করে? তারমানে, ভালবাসার সাথে কামবোধের মিশেল, বোকা মানুষগুলোর ব্লান্ডার?

হাতের বইটা গুটিয়ে রেখে দিল।পরক্ষনেই কোচকানো হাতের চামড়া তার ঘেন্নার আয়না হয়ে ধরা দিল। ইস, কোন ফাকে যে বুড়ি হয়ে গেল!

দিদাই, এই দিদাই- কোথায় তুমি ডারলিং? দেখে যাও, তাড়াতাড়ি...
যাই, কেনরে?

ডাক শুনেই চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে মুখটা বিকৃত একটু, ইস এই কোমরের ব্যথাটা তাকে পেড়ে ফেলবে- এবার ঘুমানোর সময় হলো। নিয়ম করে একটা করে সোনারিল খেয়ে শুতে হয় তাকে, তবেই একটু তন্দ্রামতো আসে। মধ্য ষাটে এ অবশ্য স্বাভাবিক হবার কথা, কিন্তু শিরিন জানে যে এ শুধু বয়সের দোষ নয়- কিছুটা একাকীত্ব আর অনেকটা ক্ষোভের ফলাফল।২৪০০ স্কয়ার ফিটের এ বিশাল এপার্টমেন্টে কেবল বকুল ছাড়া আর কেউ নাই।

সে মেয়েটাও বিরাট হাঁদা, এ রকম যুবতী একটা মেয়ে কোথায় ইউনিভার্সিটির বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হইহল্লা করবে! তা না, ক্লাস সেরেই এক ছুট্টে বাড়ি, আচ্ছা, বুড়ি গ্রান্ডমার সেবা করার মতো এরম একটা পাগলি মেয়ে কার আছে, হুঁ! এজন্যই উপরের ঐ একজনের (আদৌ যদি কেউ থাকে!)উপর কোন নালিশ করার উপায় নাই। এই যে, চার চারটা ধাড়ি ধাড়ি ছেলেমেয়েদের ভরা সংসার থেকেও তার কাছে এই মা-মরা পাগলিটা ছাড়া আর কেউ থাকে না।

কি হইছে, চিল্লাস ক্যান? কত রাত হলো খেয়াল আছে, শুবি না?
উমম, বসসো- দেখো কি সুপার্ব নিউজ আসতেছে।

একমাথা এলোমেলো চুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, শুকনো মতো মুখটাতে চশমাটাই সবার আগে চোখে পরে। বকুল আজকালকার মেয়েদের মতো ফ্যাশানের পেছনে নষ্ট করার মতো সময় পায় না মোটেই। সস্নেহে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল শিরিন, রেইনবো স্কার্টের সাথে ওয়াইট স্ট্রেপি পরা মেয়েটা একদম সাজগোজে মন দেয় না, যখনই দেখো খালি ঢাউস একটা বইয়ে মুখ গুজে থাকে নাহয় টিভি তে চোখ আটকে রাখে। তাও যদি হিন্দি বা ইংলিশ কোন এনটারটেইনমেন্ট হতো। নাহ, কেবল নিউজ আর টক শো। গত পরশুই তুমুল ঝগড়া হইছে শিরিনের সাথে বকুলের।

আরে, রাশির ভেতরে মা দুর্গা উকি দিচ্ছে এমন সময় কি টিভি সেটের দখল ছাড়া যায়, শিরিন ভাবতেই পারে না। ওমমা, মেয়েটা নাকি তৃতীয় মাত্রা দেখবে। আরে বাবা একদিন না দেখলে কি হয়! সে কথা বলতেই মেয়ে গরুর মতো শিং বাঁকিয়ে বলে যে একদিন রাশি না দেখলে কি হয়! এটা একটা কথা। পরের দিন ছিল রোববার; এমনিতেই তো মা, রাশি, বিন্নি ধানের খই সব দেখা বন্ধ। এ কটা মোটে সিরিয়ালই তো শিরিন দেখে। আগে স্টার প্লাসের কিউ কি সাস ভি কাভি বহু থি জাতিয় অনুষ্ঠান দেখতো সে, কিন্তু এখন তো গুলশান এভিনিউই আছে- আর স্টার জলসার দুএকটা, ব্যস। তারপর টিভি তো তোরই। বকুলের এক কথা, জিল্লুর রহমানের চেয়ে বড় সাংবাদিক হবে। তা হবি যখন মু্ন্নী মেয়েটার মতো হ! না, বকুল বলে মুন্নীর নাকি হয় না, বড্ড ন্যাগিং করে। এ নিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করার কি আছে? এত জিদ্দী মেয়েটা।‘

দেখ, দিদাই- বলতেছে বাংলাদেশের কোন বিজ্ঞানী নাকি নোবেল পুরস্কার পাবে পদার্থবিদ্যাতে।
অ, এই জন্য? তা তে কি আছে!

কবছর আগেই তো ইউনুস ভাই পেল, তারপর কি ঘোড়ার ডিম হলো। সবার সাথেই আড়ি হয়ে গেল বেচারার। অপমানের কত চেষ্টাই না কতো মানুষ করলো।নিজের দেশ বাদ দিয়ে সারা পৃথিবীর সব্বাই তাকে খুব খাতির করতো। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে, আইসল্যান্ডে গিয়ে থাকা শুরু করলেন।মরার পর খুব আছারি-পিছারি কান্ড, ইস এত দরদি আগে কই ছিল? এর আগে হুমায়ুন স্যার মরার সময়ও এই একই কান্ড! সত্যিই বাঙালি জাতির জীবিত থাকতে হিংসে, আর মরলে দেবতা- এমন নীতি কি কোন কালেই শুধরাবে না?

ক-বছর! আটত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে। তুমি কিচ্ছু বোঝ না। তার উপর,ইনি পাবেন অরিজিনালি আলফ্রেড অনুসারিরা যেসব রয়াল সাবজেক্ট রেকমেন্ড করছিল সে জন্য, পিওর সাইন্স। আর সাবজেক্টটা কতো ইন্টারেস্টিং বলতো? মেটামরফোসিস অব হিউমান এজ সোশাল কমপোনেন্ট।

বাপরে, কি কঠিন।

কাফকা বোঝ? কাফকা বুঝে তারপর ওভিদের মেটামরফোসিস পড়তে হয়।
হানিফ আলী স্যারের হুঙ্কারে মিন মিন করে মাথা নীচু করে রাখতো একটা ছেলে।ফিলজফির সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসের সামনে দিয়ে যেতে যেতে শিরিনরা হাসিতে ফেটে পড়তো; রোজ একই প্রশ্ন- আর সেম সিনারিও।থামের মতো লম্বা ছেলেটা, পাচ এগারো বা দশ এর কম নয়; এক মাথা এলোমেলো চুল- মোটা একটা গুচ্চিতে ঢাকা চোখজোড়া মাটিতে মিশিয়ে সিটিয়ে থাকতো। তারপর, হানিফ স্যারের খেকুনি শোনার আগেই টুক করে দোতলায় চলে যেত ওরা; ইংলিশ ফার্সট ইয়ার, ড্যাম কেয়ার।

প্রতিদিন, ওরকম শুনতে শুনতে কৌতূহুলি শিরিন লাইব্রেরি থেকে কাফকা নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে, তদ্দিনেও ছেলেটার চোখ দেখা হয় নি।তবে, হলে ফিরলেও ফিসফাস শুনতো ফিলজফির নতুন আসা লিওনার্দোর কথা। ইংরেজির ছাত্রি বলে ভাষাগত প্রব্লেম হয়নি কিন্তু মাথামুন্ডু কিছু বোঝেওনি; থান ইটের মতো শক্ত, দাঁত বসানো অসম্ভব।সেই মেটামরফোসিস শব্দটার সাথে জড়াজড়ি করে থাকা অনেক হারিয়ে যাওয়া বসন্তস্মৃতির রঙে ঝিলমিল করা শিরিন, একটু আগে দেখা কুকুরগুলোর কথা ভুলেই গেল। সামনে বসা নাতনির কথা, বয়সের কথা- ডুব দিল গহনে।

পাথরে ঠকাস ঠকাস আওয়াজ হচ্ছে, কেউ মাথা ঠুকছে। ইস, একটু যেন রক্তের লাল আভা দেখা যায়!চারপাশে কান্নার মৃদু রোল, ফোপানি- উচ্চকন্ঠ বিলাপ সবই বাতাস ভারী করে রেখেছে।এখনও বোধহয় কিছু রুচিবান আতরশিল্পী দেশে অথবা বিদেশে বেঁচে আছে; কটু মাথাধরানো ঝিমঝিমে গন্ধের বদলে কর্পূরের মতো হালকা সুবাস। সব মিলিয়ে পবিত্র একটা বাতাবরণ পরিবেশকে ঘিরে আছে।
ড্যাম ইট, কেন যে এখানে আসলো? ডিসগাস্টিং, এর চেয়ে সকালে সবার সাথে জাফলং চলে গেলেই হতো- একটু আগে পর্যন্ত এরকম আফসোস হচ্ছিল নুহুর।

বহুদিন ধরেই রেইকজাভিক প্রবাসী বাংলাদেশের এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানি দশ বছর পরে দেশে ফিরেছে।বাবা কাজী হাশেম খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন তাই ছেলের নাম নুহু রেখেছিলেন, নবীর নামে নাম। ফরেনাররা অবশ্য নোয়াহ বলে; নোয়াহ- দি সেভিওর। মধ্য ষাটেও তরুণ- একমাথা চুল, এলোমেলো- ঘাড় ছেড়ে পিঠে লুটাচ্ছে। টুপি মাথায় থাকতে চায় না- আবার টুপি পরাটা অসংখ্য সুন্নতের একটা হিসাবেই দেখে সে; যেখানে রাসূলের হাজার সুন্নতের বেশিরভাগটাই মানা হয়ে ওঠে না, সেখানে- টুপী-দাড়ির হিপোক্রেসি তার আসে না। আর যাই হোক নুহু হিপোক্রেট না।

পরনের টি-শার্ট জিন্স তার অগোছালো দাড়ি-গোফের সাথে মিলিয়ে যতটা না সুফী ভাব তারচেয়ে হিপ্পী চরিত্র এস্টাবলিশ করছে রীতিমতো। দেখলে মনে হয় মূর্তিমান এক বিদ্রোহ যার চোখ আর ভাব পোষাক-আষাকের বিপরীত। একটু আগেও দেখেছে তার দিকে কেমন যেন সভয়ে তাকায় মানুষ। কেন? এটা আগেও দেখেছে, কিন্তু ব্যাপারটা এনজয় করে না মোটেও। সে যে বিশাল; কারো বন্ধু হবার যোগ্য নয়! যেন এভাবেই চোখ রাঙিয়ে দেখায় প্রকৃতি। সাফল্য কি তা আবার নতুন করে ভেবে নেয়া দরকার মনে করলো নুহু।

বেশ করে ভাবল। প্রচুর খ্যাতি, অঢেল টাকা আর একচ্ছত্র ক্ষমতা! মাই মাই! নাকি সবসময় সবার অ্যাটেনশানের সেন্টার!নাহ, এসবই পেয়ে দেখেছে;নেভার।

সে,ড.কাজী মাহফুজুল ইসলাম,প্রফেসর অ্যামিরেটাস অফ কোপেনহেগেন ইউনিভার্সিটি; বর্তমানে জীবিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেটামরফোসিস স্পেশালিস্ট, একটা লেকচারের জন্য প্রতিমাসে তারজন্য নিজস্ব বিমান পাঠায় ইইউ।যার একটা দুমিনিটের স্টেটমেন্ট আমেরিকা থেকে জাপান পর্যন্ত সারা পৃথিবীর যেকোন রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে পারে অনায়াসেই।
সাফল্য নয়, এগুলো অর্জন মাত্র।

তারচেয়ে, রং ছড়িয়ে যাওয়া অবিরত- বড় সাফল্য; স্বচ্ছ্ব বাতাসের মতো ক্রমশ প্রকৃতির থৈ থৈ ভীড়ে হারিয়ে শেকড় খোঁজা বা খুঁজতে মন করাই কি সাফল্য নয়? সে এভাবেই ভাবে, ভাবতে ভাবতে একসময় যা পাগলামি মনে হতো তাই হাজার হাজার স্কলার বুঝতে চায়, আমড়াগাছি করে।

এই যে, তার বাংলাদেশ ট্যুর, এটা নিয়েও কি মাতামাতি কম হলো! ইউরোপোলের পুরো একটা গ্রুপ আগেই সিলেটে রেড এলার্ট জারি করতে চেয়েছিল, তাকে সাহস করে কেউ বলেনি, তবে ওসমানি তে নেমেই টের পেয়ে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে তার গাইডকে একবার বলেছে মাত্র যে সে যতটা সম্ভব নরমাল ক্রাউড চায়, সবখানেই। ব্যস, ওইটুকুতেই কাজ হলো।

গাইড বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন লেকচারার শামস।
গনসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের; তার উপরই পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে দায় চাপানো হয়েছে পাগলাটে প্রফেসারকে দেখে রাখার। পই পই করে বলে দেয়া হয়েছে যাতে, তিনি যা চান তা যেন মুহুর্তের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়- কোন প্রশ্ন না করেই। শামস বোঝে, আবার নুহু স্যার তো এদেশে সুশীল সমাজের দেবতা বিশেষ। সে নিজেও চেষ্টা করেছে মেটামরফোসিসের নতুন থিওরীটা বুঝতে।

বাট, সে জার্নালিস্ট; আর কে না জানে, জার্নালিস্টরা বড়জোর ক্রিটিক হতে পারে, কখনোই সাইন্টিস্ট বা অথর নয় সে অর্থে। এ পর্যন্ত তিনবার তর্ক হয়েছে শামসের সাথে ড. মাহফুজের। শেষবার যখন, তিনি সবাইকে জাফলং এ পাঠিয়ে একা মাজারে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শামস না বলে পারেনি যে, তার উপর নির্দেশ আছে ড. কে রেখে কোথাও না যাওয়া এবং কমিটমেন্ট যারা রাখতে পছন্দ করে সে তাদের দলে। স্পষ্টতই বিরক্ত হলেও মেনে নিয়ে কাধ ঝাকিয়েছেন প্রফেসার।

তিনি অবশ্য কথা প্রায় একেবারেই বলেন না; যখন বলেন- থেমে থেমে, মৃদু স্বরে-স্পষ্ট উচ্চারন ছাপিয়ে তার কন্ঠে জড়ানো গভীর একটা মায়া শ্রোতাকে বিবশ করে দেয়; সেটা কপি করার কথা বেশ কয়েকবারই ভেবেছে শামস। কালকে আয়নার সামনে প্রাকটিসও করেছে কয়েকবার, বাট পার্সোনালিটির সাথে ম্যাচ করে না। পার্সোনালিটি মানে নির্দিষ্টভাবে নিজের পছন্দ-অপছন্দ চিনতে শেখা- এটা স্টুডেন্টদের সাথে প্রায়ই শেয়ার করে শামস।

তবে, একটা একরোখা মেয়ে প্রায়ই আর্গুমেন্টে যায় তার সাথে বিষয়টা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও। এ ধাক্কায় ১০ দিন স্যারের ছায়া হয়ে থাকা আর এর রিপোর্ট মিলিয়ে কমসে কম ৬ টা লেকচার মিস হবে। মানে, ৬ ইনটু ৫০ মানে ঘন্টাপাঁচেক ধরে তেজী মেয়েটাকে অবজার্ভ করা মিস হলো। সে কি শেষমেষ স্টুডেন্ট-এর সাথে‍! ড্যাম ইট শামস- ডোন্ট প্লে উইদ মরালিটি, কাম অন ইয়ার।

শাহ পরাণের মাজার। গরম মাজার। শুধু সিলেট নয়, সারা বাংলাদেশের; এমনকি বিভিন্ন দেশে-দেশে যারা আউলিয়াদের খোঁজে তাদের জানা- এটা ভাগ্নের মাজার। মামা অর্থাত শাহজালালের সিলেটের মাজার এখন রাজনৈতিক হিপোক্রেটদের পদভারে কলংকিত। তাই, ভাগ্নের মাজারে মানুষ আসে তার অপূর্ন সাধের সুপারিশ চাইতে। তবে, সাবধান। অনেকেই বলে, মনে অটুট বিশ্বাস না থাকলে এখানে আসা মোটেও ঠিক না। অনেক রোমহর্ষক পরিনতির কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে, যারা অবহেলা ভরে ভাগ্নের মাজারে আসে তারা অক্ষত ফিরতে পারে না। আবার, মামার সুপারিশ নিয়ে গভীর বিশ্বাসে এখানে মঞ্জুর করাতে পারলে কেল্লাফতে, অনেক অসম্ভব মনের আশা এখানকার সুপারিশে পূর্ণ হয় বলে জনশ্রুতি এখন কিংবদন্তীর কাছাকাছি চলে এসেছে।তাই ভয় হয় যদি ভাল করতে এসে উল্টো পেজগি লাগে।

রাত যত গভীর হচ্ছে মাজারের ভেতর পবিত্র একটা সুর যেন নেচে নেচে উঠছে। দুধের মতো সাদা জোছনা ফেনিয়ে ফেনিয়ে ভেন্টিলেটর চুইয়ে বিছিয়ে রাখা মাদুরে নকশামতো তৈরি করছে, অন্ধকার ঘরে জিকিররত কিছু মানুষের কাছে সে দৃশ্য অলৌকিক বিশ্বাসের বরফ হয়ে জমা হচ্ছে। আস্তে আস্তে, ‘হুশ করে এসে অভিযোগ করে, ভাইয়ের পেছনে বাশ দিতে ছোটা মানুষগুলো’ সন্ধ্যে গড়াতেই নিজ নিজ হোটেলের আরামে আত্মসমর্পন করেছে বোধহয়। এখন রয়ে গেছে- সত্যিকারের কিছু আশেক, বেভুল কিছু পাপীতাপী, নুহুর মতো দুএকজন কৌতূহলি দার্শনিক আর শামসের মতো বাটে পরা দু একজন।

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস পরে নুহুর, জীবনটা কি ভুল উদ্দেশ্যে খরচ হয়ে গেল? এমনিতে অন্তর্মুখি স্বভাবের জন্য কারো সাথেই খাতির হয় না, ওপর চালাকি পছন্দ হয় না বলে কেবল কাছের মানুষগুলো দূরেই সরে গেছে ক্রমশ, গত ৩৫ বছর ধরে। থাকে না কিছু মানুষ, যারা স্পেডকে স্পেড কল করে; সে রকম মানুষগুলোর কপালে খারাবি থাকে।মায়ার এই দুনিয়াতে প্রানি হিসাবে মানুষের বেসিক কাজগুলো খাওয়া,ঘুমানো, বাথরুমে যাওয়া আর রিপ্রোডাকশান, ব্যস। বাকি সব কাজ হচ্ছে একসটেনশান। এটা সবাই বোঝে, কিন্তু না বোঝার ভান করে- এই-সেই শতেক কাজের বাহানায় এলোমেলোভাবেই জীবন কাটায়।

পরিবার- যে কনসেপ্টটা আছে, সেইটার মূলে আছে মানুষের অহংকার বা আত্মপ্রেম। যা কিছুর সাথে আমি বা আমার কথাটা যুক্ত সেগুলোই কেবল মানুষ কেয়ার করে। অদ্ভুত এই স্বার্থপরতা। এরাবিয়ান কনসেপ্টে এডাম থেকে জন্ম নেয়া মানুষ সবাই একটা বড় পরিবারের সাথেই সংযুক্ত অথবা সাব-কন্টিনেন্টাল কালচারে মনুর পুত্র মানুষ। তাই, পরিবার-টরিবার এইসব ভুয়া কথা। বেসিক প্রয়োজনে মানুষ একে অন্যের সাথে কনটাক্ট রাখে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে হয়তো টুকটাক শুভেচ্ছা বিনিময়।
ভাবতে ভাবতে, টোকা দেয় শামসের কাঁধে- বেরিয়ে আশার ঈঙ্গিত দেয়।

বাইরে পুকুরটার পাশে বেঞ্চিটায় পাশাপাশি বসে থাকে দুজন অসম বয়সী মানুষ।কারো মুখেই কোন কথা নেই। এখানে, কেউ নিজেদের ভেতর কথা বলতে আসে না। খুঁজতে আসে নিজেকে, মিদ্রাশ করে।মিদ্রাশ মানে কোন কিছু অনুসন্ধান করা, মিকরা মানে ঐশিগ্রন্থ। আজন্ম জ্ঞানপাপী নুহুর মন পরে, ৮০ খ্রিস্টাব্দে রাবাই হিল্লেল এর কথা যে, তোরাহ পড়ার দরকার নাই! মনে রেখ যা তুমি ঘৃনা কর তাই অন্যের জন্য না করাটাই তোরাহ। কি সুন্দর কথা, আহা। অবশ্য, তোরাহ কেন, যে কোন গ্রন্থের পরতে পরতে প্রতি শব্দের হাজারটা অর্থ থাকলেই তা ঐশি; যেসব কথা সমসাময়িকে পুনরিজ্জীবিত করা যায় সেগুলোই এমন মর্যাদা পায়।

আপনি বলেছেন যে, মেটামরফোসিস- মানুষ হবে শুধু প্রতি পরিবারের একজন, বাকী সব প্রানি হবে।বর্তমান পৃথিবীতে, মানুষ কেমন করে বাঘ বা শিম্পাঞ্জীর আচরন করবে? বা আপনার ভাষায়- করে! প্রানিহত্যা নিষিদ্ধ করার পেছনে এই যে আপনার যুক্তি সবাই মেনে নিয়েছে, তা নিয়ে যে আমার সংশয় হয় স্যার।
শামস থেমে থেমে বলে- বলা শেষ হলে কিছুক্ষন কেটে যায়।

নুহু কিছু বলে না, ঠোটের কোণে মৃদু হাসি ভাসে শুধু। ছেলে-ছোকড়া নিয়ে এই বিপদ, কোন কিছুর ডেপথে না গিয়েই এড়ে তর্ক জোড়ে। এদের কিছু বোঝাতে যাওয়া আর বুনো মাসটাঙে লাগাম পরানো সমপর্যায়ের পরিশ্রমসাধ্য। সে ইচ্ছা নেই, তাই পাশ কাটানোর জন্য সচরাচর যে পদ্ধতি নেয় সেরকম উপেক্ষা না করে মৃদু স্বরে বলল, রুমির নাম শুনেছ? মাওলানা?

জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়ল শামস, অবশ্যই এমনকি মারেফায়ে মাছনবীর বাংলা অনুবাদ পর্যন্ত সময় নিয়ে পড়েছে, জানাতে ভোলে না।
অবশ্য রীতি আলাউদ্দিনের পাল্লায় পরে। নাহ, ডাক নামটাই মিষ্টি মেয়েটার, বকুল। তিন অক্ষরের মিষ্টিগন্ধা ফুল, আর কষটা স্বাদের ফল। পারফেক্ট নামকরণ। ইস, মেয়েটা ভালই মাথায় ঢুকেছে শামসের, এমনকি এই মাজারে রাতের রহস্যে ততোধিক রহস্যময় ব্যক্তিত্বের প্রখরতা ছাপিয়ে ডেকে ডেকে প্রেম উথলাচ্ছে, ইয়ার্কী নাকি।

রুমি কিন্তু কেবল শামসুদ্দীণ তাবরেজের শিষ্য ছিলেন না, তারা দুজনে মিশে গেছে একে অন্যের মাঝে। বাবা কামাল খজন্দের কথাগুলো শামসুদ্দীনের বুকে শুদ্ধ হয়ে রুমির কন্ঠে ধ্বণিত হয়েছে। বহুদিন ধরে চলে আসা ‘এক আল্লাহর’ প্রেমে উন্মত্ত একটা ধারা এভাবেই স্রোত বাড়িয়েছে। এখানে দেখ- কে কে নিজেকে খুজতে আসে? জীবন চলার পথে- যে কোন সমস্যাই হলো মায়া, কে সেগুলো কেটে খোলা চোখে তাঁকে দেখতে চায়?

এটা কি মানুষের সোশাল মেটামরফোসিসমের একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে তোমার মনে হয় না। এভাবেই, কোনও এক অদৃশ্য শক্তির ল্যাবরেটরিতে অ্যানিমেট আর সকল ইনঅ্যামিনেটের মেটামরফোসিসম মিশে তৈরি করা মাকড়সার জাল হচ্ছে আমার ভাবনা।

কথাগুলো যে পরিষ্কার বুঝলো শামস তা নয়।
তবে, স্কুল লেভেলের পড়া বিজ্ঞানের জোরে বুঝতে পারছে না, এর সাথে পদার্থবিদ্যার যোগ কোথায়? এ প্রশ্নটা করবে করবে ভাবতেই সামনের দিকে তাকিয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।

পানির উপর দিয়ে যেন হেঁটে চলে আসছে একটা অগোছালো দেহ, সাদা আলখাল্লা পর্যন্ত ময়লা দেখাচ্ছে এতটাই আলোর জেল্লা সৌম্য দাড়ি গোফে। মাথায় সাদা একটা টুপি। চাঁদের আলোয় অপার্থিব মূর্তিটা দেখে ভয়ে গ্যাঁজলা বেড়োতে লাগলো শামসের। জোরে জোরে আওড়াতে লাগল, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সোবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন। দোয়া ইউনুস। আর, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম। ছো্টবেলায় মুফতী হুজুরের কাছে শিখেছে শামস, বিপদে এ দুটি পড়লে কোন অবস্থায় অপশক্তির কবলে পরতে হয় না। কিন্তু, দেহটা যেন পানির উপর দিয়ে উড়ে চলে এল। আল্লাহ, বলতে বলতে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেল শামসের। তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই, কিছুক্ষনের জন্য ব্লাকআউট।

জাবির ৫ নাম্বার হলের ৩০৩ রুম; শিরিন, পলি, সুহানা তিন রুমমেট। তিনজন তর্কে লিপ্ত। লিওনার্দোর খেলা কালকে। রাজশাহীর সাথে, সেমিফাইনাল। টুয়েন্টি-টুয়েন্টি। আজকেও, বিকালে পার্থের কাছে শুনেছে- ওই একজনই নাকি ট্রাম্প কার্ড। গত পাচ বছরে এত ভাল ব্যাটসম্যান আসেনি, এবারই নাকি ইনটার ভার্সিটি চাম্পিয়ান হবার সুবর্ন সুযোগ!

পার্থ ফার্সট ইয়ারে থাকতেই বাহাতি পেসার হিসাবে টিমে চান্স পেয়েছে, বিকেএসপির প্লেয়ার; ছ ফুট লম্বা কালো ময়দানব একটা। তবে ইয়াস, ফ্যাশন জানে। পার্থের বাবা ঢাকার পুলিশ কমিশনার। তাই, দেদার খরুচে তায় আবার প্লেয়ার সো, ক্লাসে পার্থের কথার দাম আছে। পার্থ বলল, কালকের ম্যাচে শিরিনদের থাকতে। মেয়েরা আশেপাশে চ্যাচালে নাকি প্লেয়ারদের হরমোন সিক্রিয়েশান বেড়ে গিয়ে খেলতে সুবিধে হয়।

শিরিন, পলি আর সুহানার তর্কের মূল বিষয় হচ্ছে যে, কয়জন প্লেয়ার চেনে তারা- আর কোন ডিপার্টমেন্টের প্লেয়ার বেশি ইমপর্টান্ট।
সুহানা ফিলজফিতে পড়ে; সে বলল, অফকোর্স আমাদের লিওনার্দোর উপরই খেলা নির্ভর করতেছে।
তুই ক্যামনে জানলি ছেমড়ি, আমাগো মুশফিক ন্যাশনাল টীমের প্লেয়ার, হেই মেইন প্লেয়ার- হিস্ট্রির পলির গাইয়া লজিক মানতে পারে না অন্য দুজন।
শিরিন একটু আনমনা। এই যে বারে বারে খ্রীস্টান ছেলেটার কথা বলতেছে, সে কি তাকে চেনে?

হই হই করে সাপোর্ট দিচ্ছে সবাই জাবি কে। লোকাল টীমের প্রেসার নিয়ে উইকেটে মুশফিক আর লম্বা ছেলেটা। অনেক্ষণ ধরে চেচাতে ভুলে গেছে শিরিন। মাঠে আসতে আসতে দেখে ঢাকার ব্যাটিং শেষ, ১৯৭ টার্গেট।

দেখলো জাবির দুই ওপেনার নামছে। শিরিন-পলিদের দেখেই পার্থ এগিয়ে এলো। শর্টস পরা, কাধে তোয়ালে। ঘেমে চকচক করা কালো মুখে ঝকঝকে সাদা হাসি।

কিরে, তর চাইর ওভারে কত রান দিসস ছেড়া-
পলির কথায় একটু অহংকারের সাথে পার্থ বলল, তিরিশ দিছি কিন্তু তিনডা উইকেটও পাইছি নাফিস ভাইয়েরটা সহ। ইস, দেরি করলি সুহানা- আমার লাস্ট ওভারটা যদি দেখতি।

পার্থ প্রানপনে শিরিনের সামনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করতে চায়, কি করবে সে! টাকা উড়িয়ে, যখন তখন কাছাকাছি থেকেও অহংকারী জাপানী পুতুলটার মন পাচ্ছে না সে। খেলোয়ার সে, মেয়েদের মন জয় করার জন্য ফ্যাশন আর পারফরমেন্স তার সম্বল, শিরিনের কাছে কোনটাই তো কল্কে পাচ্ছে না।

হইছে রাখ তর বলিং, ঘোড়ার ডিম- এহন এত রান কেডা করব।

ওই লম্বা ব্যাটসম্যানটা কে? শিরিনের মন্তব্য ওদের তর্ক থামিয়ে দিল।

পার্থ দাত কেলিয়ে বলল, আরে ওইটাই তো সুহানার বড় ভাই, আমাদের হিরো।
একটা থাপ্পর দিবো পার্থ- সুহানা খেপে গেল; ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ার হলেই কি ভাই হয় নাকি?

কুলকুল হাসির বন্যা বয়ে যায় শিরিনের- সুহানাটার মতলব খারাপ।

এখন লাস্ট ওভারে ১৫টা রান করতে পারলেই হল। ৪ উইকেট পরে গেছে, কিন্তু লম্বা ওপেনারটা কিন্তু এখনও আছে, ৭৮*। এইমাত্র একটা চার হলো। পরের বলে দুইরান নিতে গিয়ে রান আউট। হেলমেটটা খুলে হাতে নিয়ে বিষন্ন মনে প্যাভিলিয়ানমুখী ছেলেটা।

হলো না, চোখের পানি নেমে আসছে গুচ্চির ফাক গলে।ঘেমে টসটস জামার হাতায় মুছে নিচ্ছে সে পানি কেউ বোঝার আগে, আর কারো নজর নেই তার উপর- আউট হয়ে গেলে ব্যাটসম্যানের দিক থেকে অডিয়েন্স নজর সরিয়ে নেয়। দেখল শুধু একজন, গভীর মমতার সাথে।

আরেহ, শিরিন অজান্তেই চেচিয়ে উঠলো- এইভাবে মাথা নীচু করেই তো হানিফ স্যারের ক্লাসে বকা শোনে। সেই কবি কবি চেহারার ছেলেটাই লিওনার্দো!

পরে, প্রেম হবার পরে ঠাট্টা করে বলেছে শিরিন, তোমাকে তো আমি খ্রীস্টানই ভেবেছিলাম প্রথমে, ভাগ্যিস!

কেন বলছ এ কথা? আমাদের প্রেমের সাথে ধর্মের কি সম্পর্ক! শিরিন তোমাকে না বলেছি, যদি তুমি আমায় আর আমি তোমাকে সত্যিকারের ভালবাসি, যদি আমাদের ফেরোমেন একে অপরকে ভুল সংকেত না দেয় তবে আমাদের একসাথে থাকাটা ধর্মে আটাকাবে না।

এত কঠিন কঠিন কথা হজম হতো না শিরিনের। তবে, ও একটু অমনই ছিল। কেমন যেন, তবে দর্শনের ছাত্র তো তাই তর্ক করতে সাহস হতো না।

এমনি করে পাখির কিচির-মিচিরে চারটি বছর উড়ে চলে গেল।নিজেদের সর্বো্চ্চ ঘনিষ্ঠতায় জানলো তারা। তারপর, এক দুপুরে সব শেষ।

শুনেছে শিরিন, রাজনৈতিক সমস্যার কারনে ও আর ভার্সিটি আসবে না, বাসা থেকেই মাস্টার্স দেবে। তবে, কেমন করে বাকী দিনগুলো কাটাবে শিরিন? ওর সাথে চলতে চলতে তো আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করা হয়ে ওঠেনি! সুহানার বিয়ে হয়ে গেছে, আর পলি ২ নাম্বার হলে উঠেছে, ছাত্রফ্রন্টের তেজী নেত্রী- সুযোগটা নিল পার্থ।

মাকড়শার মতো ঘিরে ধরলো তাকে, এক এক করে ভুল বোঝা- পার্থের বাবার প্রভাব; সব মিলিয়ে শিরিন নিজেকে আবিস্কার করলো গুলশানের এই ২৪০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাটে। মিসেস. পার্থ সরকার হিসাবে। ও চেষ্টা করেছিল, জাস্টিফাই করার; শিরিনের ইচ্ছা হয়নি- আর যোগাযোগও হয়নি। কেবল, মেটামরফোসিস শিরোনামে ফাইলবন্দী হয়ে মনের অতলে লুকিয়ে রেখেছে তার জীবনের একমাত্র প্রেমকে।

ও দিদাই, দেখো দেখো- তোমার ভার্সিটির ছাত্র ছিলেন।
কে? বকুলের কথায় অতীত সাতরে বর্তমানের তীরে এসে উঠলো শিরিন।

ওফফো, তুমি কি ঘুমাচ্ছ? সোনারিল খেয়ে ফেলেছিলে?
হুমম, কার কথা বলছিলি, তাই বল।
ওই যে, যিনি নোবেল পেতে পারেন বল্লাম। বলছে ৩০তম ব্যাচ, তুমি কত ব্যাচ ছিলে দিদাই?
আমরা ৩১ তম!
তবে তো তুমি চিনবে মনে হয়। ভালো করে দেখো-

টিভির স্ক্রীনে একপাশে একটা ছবি। ভাবুক একটা লোক গালে হাত দিয়ে আছে, চেহারাতে চুল আর গুচ্চির মোটা ফ্রেমটাই আগে চোখে পরে; আর পাশে লেখা ড়. মাহফুজ এখন নোবেল প্রাপ্তির আশায় দোয়া করতে শাহ পরাণ মাজারে।

শিরিনের মাথা টলছে, এত বছর পরে- আবার তার খবর!এখনও গুচ্চি পরে, এলোমেলো চুল রাখে। তার শরীরে জড়িয়ে থাকা ঐ দেহের ফেরোমেন আজও কি সুগন্ধ ছড়ায়! তার বৃদ্ধ শরীরেও কি নেশা ধরিয়ে দিল। স্তব্ধ হয়ে গেল শিরিন।

বকুলের অতশত খেয়াল নেই, সে লক্ষ করলো, তার হ্যাংলা স্যার শামসুর রাহিম ই মূল সংবাদদাতা হিসাবে ঐ স্কলারের সাথে আছে। এতটা বকুল আগে ভাবেনি শামস স্যারের এত গুন, এবার ফিরলে সিরিয়াসলি ভাববে বিষয়টা নিয়ে। মনের গহীনে গোপন একটা আশা নাচতে লাগল বকুলের, কেরিয়ারিস্ট সে- মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছে- শামস স্যারের মাধ্যমে ড. মাহফুজের সাথে সখ্য গড়ে তারপর ইওরোপ-এমেরিকা। চাইকি, দিদাইয়ের পরিচয়টা কাজে লাগানো যেতে পারে।

বিভোর বকুলের একহাত পেছনে তার দিদাই বুকে লালন করা গোপন নরম জমিনে আঘাত পেয়ে তলিয়ে যাচ্ছে।স্বার্থের দ’য়ে মজে থাকা ব্যক্তি মানুষের কাছে প্রিয়জনের হাহাকার ছন্দপতনমাত্র; এটাই নির্মম বাস্তবতা যা এখানে আবার সমূর্তি ধারন করলো।

কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল নুহু।
তবে, নিজের চোখের উপর আস্থা আছে তার, আর আছে যুক্তি আর বিশ্বাসের মিশেলে শক্তিসালী একটা চেতনা।চাদের আলোতে, পুকুর-ধার ঘেষে হেটে আসা মানুষটাকে সেও কি এক মুহুর্তের জন্য অশরীরী ভাবেনি? নাহ, তবে শামস ছেলেটা ভেবেছে; আর ভয়ে মূর্ছা গেছে। তা যাক, ব্যস্ত হবার কিছু নেই, মানসিক বা শারিরীক ভাবে অকস্যাত পরিশ্রমের লিমিট ক্রস করলেই মানুষ সংজ্ঞা হারায়। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

একটু এগিয়ে সাদা পোষাকধারীকে রিসিভ করল নুহু।

তাকে এগিয়ে আসতে দেখে সালাম দিয়ে লোকটি বলল, সাবাস দোস্ত; বহুদিন পরে একজনকে পেলাম যে আল্লাহর আশ্রয়ে নির্ভয়ে আছে, সুবহানাল্লাহ। উত্তরে মৃদু হেসে নুহু বলল, মানুষ হয়ে মানুষকে পরীক্ষা করার অধিকার কি কারও আছে, তা সে যতই নিজেকে আল্লাহর দোস্ত ভাবুক।

আপনে জ্ঞানী মানুষ, তবে কেন নির্জলা একটা মিথ্যা পুরস্কারের জন্য সুপারিশ নিতে ভাইগ্নার কাছে আসছেন? এবার নুহুর অবাক হবার পালা, তবে বুঝলো যে সে এদেশে সেলিব্রেটির মর্যাদা পাচ্ছে।
আপনার পরিচয়টা জানলে কথা বলতে সুবিধা হতো।
আমি নাদান মানুষ, নাম মো. তৈয়বউল্যা; দেবার মতো আর কোন পরিচয় এই জীবনে অর্জন করতে পারি নাই জনাব। আপনার তুলনায় তুচ্ছ মানুষ।

ব্যক্তিগত জীবনে বহু মানুষ দেখেছে নুহু, সবাই নিজের অর্জন নিয়ে গর্ব করতে ব্যস্ত। এমনকি এ নিয়ে মিথ্যা-অতীত রচনা করতে ভালবাসে এমন মানুষও কম নয়। এ নিশ্চয় ব্যতিক্রম। এর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে দেখা যাক-

আপনি আর আমি সমবয়সি হবো বোধহয়, আসুন তুমি করে কথা বলি। আপনি আমার আসতে চায়না। নুহুর প্রস্তাবে তৈয়বের চোখ ঝিকিয়ে উঠলো, তাই দোস্ত- ধল প্রহরের আগের এই সময়টাতে যারা ইবাদত করতে জাগে তারা সবাই আল্লাহর দোস্ত আর যারা আল্লার দোস্ত তারা নিজেরাও দোস্ত তাই না?

আমি ইবাদত করছি কে বলল তোমাকে? সকৌতুকে জিজ্ঞেস করলো নুহু।

তোমার চোখ সাক্ষী দেয় দোস্ত। সব অনুভূতি ঢাকা যায়, চোখ লুকানো মানুষ এখনও শিখে নাই। এ জন্যই পাপী মানুষ বেশি বেশি কালা চশমা কিনে।কইলা না, কেন পুরস্কারটা চাও? কি করবা সেইটা দিয়া?

ভেতরে ভেতরে হাসি পাচ্ছে নুহুর, এই সরল গ্রাম্য লোকটা সাধাসিধে সাংসারিক লোকের থট-রিডিং য়ে অভ্যস্ত; তাই বলে, তার মনও পড়তে চাইছে! সে নিজেই তো জানে না সে কি চায়!

নাহ, আমি পুরস্কার চাইতে আসি নি তো। শেকড় খুজতে এসেছি।
হাজার-হাজার বছরের সেই ইতিহাসের অন্ত:সলিলা ধারা, যা আমাকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। পাওয়া নিশ্চিত করতে মাজারে এসেও- অপূর্ন প্রেমের জন্য কাদাটাই গোপন আশা।

তোমার ছেলে-মেয়েরা কি খুব খুশি হবে এই পুরস্কার পেলে?
নেই তো! থাকলে হয়তো পেতো, কিন্তু তার সন্তান তো কেবল হাজার হাজার ছাত্র, তারা নিশ্চয় সুখী হবে। তাই উত্তর দিলো, হবে।

আর তুমি? আমিও, বোধহয়।

আর তোমার আল্লাহ?
কে জানে, সে কিসে খুশি হয়। আমায় তো সে বলেনি কখনও। কাউকে কি কখনও বলেছে- নাকি সবই কল্পনার স্তুপ?

বলে নুহু ভাবে, সারাটা জীবন তো এসব করেই কেটে গেল। সেই ইউনিভার্সিটি থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে মাস্টার্স, তারপর জিদের বশে, ইকনমিক্সে এম.এস করতে আইসল্যান্ড। সেখান থেকে কিভাবে যেন একদিন নিজেকে আবিস্কার করে কোয়ান্টাম ফিজিক্সর শীর্ষবিন্দুতে।
তার প্রফেসর বলতো, মানুষ আগে পড়ে ফিজিকস, তারপর ফিলজফি। তোমার ক্ষেত্রে উলটো নোয়াহ। তাই বোধহয় তুমি সকলের চেয়ে উল্টোটাই ভাবো। হতে পারে, তবে কেন সবাই তার কথাটাই শুনতে চায়?

তৈয়বের সরল প্রশ্নটাই পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন। নুহু জানে।
তাই তো এর উত্তর খোঁজে সে। পায় না তো। নাহ, আল্লাহর উপস্থিতি অসংখ্য ঘটনায় জীবনে অনুভব করেছে সে, কিন্তু এখনও জানে না- তাই তো সমস্ত মিকরা খুজে-পেতে পড়ে সে; একটার সাথে আরেকটা মেলায়; মিদ্রাশ করে।

নাই বা জানলে, ওই যে চাইছো তাকে পেতে- ওতেই হয়তো হবে। কে জানে? দোস্ত, তুমি জ্ঞানী মানুষ, তাই বলি। কি দরকার, তাকে জেনে? তার করা পরিবর্তনের কারন জেনে? তোমার মেটামরফোসিস তাই না জানাই ভাল মানুষের, কী বল?

আনমনা নুহুর কানে আবছা আবছা আসে কথাগুলো। তার মনে বাজে মানজিরা।
বহুদিন পরে, আবার সম্ভাবনা জাগছে, তাঁর সাথে কথা হবার।

চোখ পিটপিট করছে শামস। মনের পাপ ভাবনাটা কেটে গেছে নিজেই টের পায়। এজন্যই লোকে সাধুসঙ্গ করে, মনের ময়লা কেটে যায়। নিজের মেটামরফোসিসটা স্পষ্ট টের পায় শামস। তখনই তার মন একটা ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্লীপ করে ওঠে। সে বোঝে, এই মাত্র বকুলকে পেল সে। এটা অনুভূতি কেবল কিন্তু কঠিন বিশ্বাস। কিভাবে জানল তা সে জানে না, তিনিই কেবল জানেন।

তৈয়ব তার ভেতরের মজা পুকুরটায় ঘাটা দিয়ে গেল। তলের কাঁদা উঠে আসছে, বগ বগ করে ওঠে অতীত। সেই একবার, মাত্র আট রান বাকি থাকতে রান আউট হয়ে যাবার আক্ষেপের সাথে- প্রায় নিজের হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে কালো অজগরে গিলে ফেলতে দেখার আক্ষেপ মিশে তার শরীরে বার্তা বয়ে যায়, এবারের নোবেল পুরস্কার পাওয়া না পাওয়া তাঁর ইচ্ছায়, সে যেন একটা বর পেল। ভাগ্নের সুপারিশ নাকি বৃথা যায় না! এটাই তো সময়, অপূর্ন সাধগুলোকে সুতোয় বেধে এক পুটলি তুলে ধরা যা পূর্ন হলেই মার দিয়া কেল্লা।

কি চাইবে নুহু?
সেই শিরিনকে? নোবেল পুরস্কার? আয়ু বাড়িয়ে নেবে একশো বছর?

নাহ, খালি একবার দেখা দাও; চোখকে না দাও- এটলিস্ট মনকে: মানজিরা মজুক।

ওরে খুদা, এ তুনে ক্যায়া কিয়া- ঘম দে দিয়া...
বুকটা হালকা হয়ে গেল- পাখির মতো উড়ছে নুহু; জ্ঞান গোস্বামী হয়ে নিজেই নিজেকে ডাকছে, শূণ্য বুকে পাখি মোর, আয় ফিরে আয়।
তবে তার আশা মঞ্জুর।চারপাশে রংয়ের পিচকিরি যে বার্তা পাঠায় তাতে অমৃতসম হাসনাহেনা সুবাস মাখা।

সে কিছুটা বুঝতে পারছে, কিন্তু পৃথিবীর কাউকে বলে আসা হলো না যে!
থাক, খুঁজুক সবাই, একে একে- প্রথমে নিজেকে; অত:পর মনকে।সবশেষে তাঁকে!

ও দিদাই, শুনে যাও।
কি রে, আবার কি হলো।

কাল রাতে বকুলের সামনেই ঘুমিয়ে পরে লজ্জার একশেষ। চাচ্ছিল, যত তাড়াতাড়ি মেয়েটা ভার্সিটি যায় ততোই ভাল। তাইতো, সকাল থেকে রান্নাঘরে খুটুর-নাটুর করে নাস্তা বানাচ্ছে। এখন, এই সকালে আবার কি?

আমাদের আর নোবেল পাওয়া হলো না।বকুলের গলায় দৃশ্যমান বিষাদের আড়ালে প্রচ্ছন্ন আনন্দ লুকানো; বুড়ো মরেছে বলেই তো সকালেই শামস স্যারের সাথে কথা বলার একটা সুযোগ হল এন্ড দে কনফেসড ইচ-আদার।
দিদাইকে বলল, কি ভাবে পাব বল! মৃতদের তো নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় না।

শিরিনের হাত থেকে ঠকাস করে বাটিটা নীচে পড়ে আলু ভাজি ছিটকে গেল চারদিকে। সকাল থেকেই আশা হচ্ছিল, এবার দেখা না হয়ে যায়ই না। বেগম আখতার হোসেনের কিন্নরকন্ঠ তার মনে বাজছে, চুপি চুপি চলে না গিয়ে- হেসে সে কেন বিদায় নিল না!
হলো না, কারো কারো জন্য- কিছু আশা, আশাই থেকে যায়।

গতকাল রাত্রেই শাহপরান মাজারেই তিনি শেষ।ব্র্রেকিং নিউজটাই আজকে দেশ জুড়ে ফ্রন্ট পেজ। মনে হয় অবিশ্বাসী ছিলেন, তাই তো ভাগ্নের মাজারে এসে জীবিত ফিরতে পারলেন না, এমন কথায় চারদিকে ফিসফাস। শামসই তো এ ধরনের কথা বলেছে মিডিয়াতেই, তার মনে হয়েছে ড. মাহফুজ বেসিকালি এথেয়িস্ট ছিলেন, তার শাস্তিই পেয়েছেন।
মাজারের গরম; আবারও প্রমাণিত।
লাইন দিয়ে তাই, মানজিরা নিয়ে হাজির- হাজার হাজার অসুস্থ প্রতিযোগি।
স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট
২৩/১০/২০১২
(লেখায় একটু ফিকশান আছে, সেটার প্রয়োজন ছিল না। আর এখানে, প্রসঙ্গত মহান ব্যক্তির নাম ব্যবহৃত, যাদেরকে অসম্মানিত করে থাকলে দু:খিত)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

"দ্য ল্যামেন্ট হোপ" কথাটার কী অর্থ হয়, একটু জানাবেন প্লিজ। আমি ল্যামেন্টের অর্থ জানি, হোপের অর্থ জানি, দ্য-এর অর্থও জানি, কিন্তু দ্য ল্যামেন্ট হোপের মানে বুঝতে পারছি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু কষ্ট করে পুরো টেক্সটা পড়লে নিজেই আবিস্কার করতে পারতেন কিন্তু! যে আশা দু:খ বাড়ায় তাই ধরে নিন আপাতত। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

অতিথি লেখক এর ছবি

মানে ধরে নিন, যে আশা করতে কষ্ট হয়। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

হিমু এর ছবি

আচ্ছা। তাহলে ল্যামেন্ট বদলে অন্য কিছু লিখতে পারেন। ল্যামেন্ট হচ্ছে আর দশজনে বোঝে এভাবে শোক প্রকাশ করা। আর হোপের আগে একটা বিশেষণ বসবে, ক্রিয়া নয়। টরমেন্টিং হোপ, শ্যাগ্রিনিং হোপ চলে ... কিন্তু ল্যামেন্টিং হোপ হয় না।

বাংলা সিনেমার মতো ভুলভাল ইংরেজিতে শিরোনাম দেয়াই যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে ঠিকাছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওভাবে ভাবলে আপনার কথাই ঠিক, কিন্তু ভাষার ব্যবহার লেখকের ইচ্ছাধীন। তবে বাংলা সিনেমা আমাদের নিজেদের, তাই এটাকে কটাক্ষ করাটা কেমন যেন,তাই না? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

হিমু এর ছবি

মহাসড়কে যে ট্রাক চলে, সেগুলোও ট্রাক ড্রাইভারের ইচ্ছাধীন। কিন্তু তারপরও কিছু নিয়ম থাকে, যেগুলো ট্রাক ড্রাইভারকে অনুসরণ করতে হয়। ভাষাও অনেকটা এমনই।

বাংলা সিনেমা নিয়ে কটাক্ষ করা খুব খারাপ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা , এবার থেকে মানব। লেখাটা পড়ে কেমন লেগেছে অথবা শিরোনামটাই হোচট দিল তা জানালে ভাল লাগবে। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

কালো কাক  এর ছবি

বুঝতে পারিনি একদম মন খারাপ

ফারাসাত মাহমুদ এর ছবি

আমিও! মন খারাপ আমারই অক্ষমতা। থামবেন না প্লীজ। আরো লেখা আসুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও না। বিলিভ মি। তবে বুঝতে পারাটা কি জরুরী? (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

পুতুল এর ছবি

শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসেই মিলায় বস্তু?

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে কিন্তু এর উল্টোটাই! কে জানে?
আর তোমার আল্লাহ?
কে জানে, সে কিসে খুশি হয়। আমায় তো সে বলেনি কখনও। কাউকে কি কখনও বলেছে- নাকি সবই কল্পনার স্তুপ?
এখানেই তো পরিস্কার! (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু কঠিন লেখা। শেষের দিকে এসে আসলেই মাথার উপর দিয়ে গেছে আমার। আপনার লেখার হাত ভাল, চালিয়ে যাবেন আশা রাখি।
--বেচারাথেরিয়াম

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে লেখাটা আগে লেখা, ক্যারেকটারাইজেশন পরে হইছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

বন্দনা এর ছবি

শেষটা অত ভালো লাগলোনা, তবে আপনার লেখার হাত বেশ ভাল।

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন হতে পারতো শেষটা বললে ভাল লাগতো। আর জীবনের শেষটাও এমনি - মধুরেন সমাপয়েত হয় না। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

অতিথি লেখক এর ছবি

আগে ভাগে জানিয়ে রাখি পাঠক হিসাবে আমি খুব একটা ভালো না। এত অসংলগ্ন লেখা খুব কম পড়েছি। আমি বুঝি নাই, সেটাও একটা কারণ হতে পারে।

৩৫ বছর আগে কি টোয়েন্টি টোয়েন্টি ছিল?
-রু

অতিথি লেখক এর ছবি

তা ছিল না- তবে ৩৫ বছর পরের গল্প এটা," ক-বছর! আটত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে। তুমি কিচ্ছু বোঝ না।" আর অসংলগ্ন হয়ে গেল আর কি। গোছাতে পারি নাই। মনে হয় রাশি, বিন্নিধানের খই এসব নাম ইউজ করাটা ঠিক হয় নাই। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম অংশ পড়লাম।ভালই লাগল। চলুক

-শর্মালুনা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।