বৃষ্টি পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে বিলের পানি বাড়ির পেছনের টিন ছুঁয়েছে। বৃষ্টির অবিরত ফোঁটায় বাঁকা টিনের গায়ে নাচছে পানি। আমার পাঁচ বছর বয়সী বুবু খুব হিসাবনিকাশ করে অ্যালুমিনিয়ামের খেলনা হাড়িপাতিলগুলো ছুঁড়ে মারছে পানিতে। দুলতে দুলতে হাড়িগুলো সারি বেঁধে চলে যাচ্ছে অজানার দিকে। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে একবার বুবুকে দেখছি একবার খেলনা গুলোকে।
আজকের খেলা শেষ করতে করতে একটু বেশি দেরি হয়ে গেলো। দুরুদুরু বুকে অন্ধকার পারি দিয়ে ঘরে ফিরে এসে দেখি আম্মু ঘুমাচ্ছে। চারিদিকে নতুন বর্ষণের মাটি মাটি গন্ধ। আলতো করে মশারীর কোনা তুলে আম্মুর গলা জড়িয়ে চোখ বন্ধ করতেই বৃষ্টির ঝমঝমে শব্দ কানে আসলো। চোখ খুলে আম্মুর মুখটা খুব ভালো করে দেখে আম্মুর আরও কাছে গিয়েই ঘুম।
আজ কাগজের নৌকা বানানো প্রশিক্ষণ দিবস। আব্বুর কোলে বসে হোমওয়ার্কের পুরানো পাতা সাবধানে ছিঁড়ে ভাঁজ করতে লাগলাম।বারান্দার বৃষ্টির পানিতে নৌকা ছেড়ে দিতেই হয়ে গেল সত্যিকারের পালতোলা নৌকা।
কালবৈশাখীর পর শুরু হয়েছে ঝমঝমে বৃষ্টি। আমি আর আমার ছোটভাই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বারান্দায়। একের পর এক রিকশা না থেমেই চলে যাচ্ছে। আম্মু আজকে একটু বেশি দেরি করছে। একটা রিকশা থামলো। নীল প্লাস্টিকের ফাঁকে আম্মুর লালশাড়ি দেখা গেলো। আমরা নিমিষেই উড়ে গিয়ে নিচের গেটের কাছে...
বর্ষার দিনে কলেজ থেকে ফেরা এক বিরাট ঝামেলা। কোন রিকশা থাকে না। আর থাকলেও এতো দূরে পথ ফিরতে চায় না। এর মধ্যে আজকে ছাতাও নেই সাথে। রাস্তায় হাঁটুপানি। যা আছে কপালে ভেবে জুতো খুলে ব্যগে ভরলাম। এরপর এক দৌড়ে ময়লাপানি পেরিয়ে আইল্যান্ডের উপরে। চুল,ইউনিফর্ম গড়িয়ে পানি পড়ছে। এক একবার পা ফেলায় পর ছপছপ শব্দ হচ্ছে।আমার এই অভিনব কান্ডে বখাটের দলও মিনিটখানেক ধরে চুপ। একটা গাড়ি একপশলা ময়লা পানি ছিটিয়ে দিতেই তাদের সম্বিত ফিরলো। শুরু হল...”ওই মাইয়া...” আমি রাজহংসীর মত পালক থেকে সেইসব ঝেড়ে হাঁটতে লাগলাম।
বন্যার কারনে বুয়েটের পরীক্ষা আবার পিছিয়েছে। পিসিতে লেকচারের পাওয়ার পয়েন্টের পাশে তাই মাইন সুইপারও খোলা। একটু আগেই ইলিশমাছ দিয়ে ঠেসে পানি খিচুড়ি খাওয়ার কারনে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। জংলাপ্রিন্টের শাড়ি দিয়ে তৈরী করা কাঁথাটা গায়ে দিয়ে শুতেই দূরে কোথাও বৃষ্টি শুরু হলো। মন কেমন করা ভাব নিয়ে অদ্ভুত একটা বৃষ্টিময় স্বপ্নে ডুবে গেলাম।
খুবই অল্পসময়ের নোটিশে বিয়ে। বিয়ে আগে আরেকটু আলাপ পরিচয়ের জন্য লাঞ্চ আওয়ারে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বের হয়েছি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। হুডতুলে দেওয়ার তার কনুই আমার হাঁটু ছুচ্ছে। সেই অস্বস্তিতেই মনে হয় সে ভদ্রলোক আর এইদিকে ফিরছেই না! আমি সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করে হাসি হাসি মনে আড়চোখে বার বার তাকাচ্ছি।
ছুটির সকালে ঘুমঘুম চোখে স্কাইপে অন করতেই দেখি ওর অফলাইন মেসেজ। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লিঙ্কে ক্লিক করলাম। আর্টসেল গাইতে শুরু করলো হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে পাঠানো গান “এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে তাই সময় আমার কাটে না...”
দেশান্তের ঝক্কি অনেক। কাল ফ্লাইট। কিন্তু আজকেও কিছু শেষমুহুর্তের বাজার করে বাসায় ফিরছি। শুরু হল ধুম ধারাক্কা বৃষ্টি। পর্দা চাইতে রিকশাওয়ালা বলল নাই। এর কোন মানে হয়? দর্জির কাছ থেকে নিয়ে আসা নতুন জামাটাও ভিজছে। মাড় দিয়ে আয়রন করার লোক পাবো কই আমি সেই দূরদেশে? সত্যি সত্যি দেশ ছাড়ছি আমি। যদি আর এই বৃষ্টি না দেখতে পাই? তড়িঘড়ি করে হুড খুলে দিলাম রিকশার। “আফা পর্দা নাই দেখে রাগ করছেন নাকি?” শুনেই হেসে ফেললাম।
মেশিনের গতিতে কোড করছি। আমার ডেস্কের পাশের বিরাট জানালায় একটা সবুজ পাতা উড়ে এলো বাতাসের ধাওয়া খেয়ে, সাথে তুমুল বৃষ্টি। আক্ষরিক অর্থে বৃষ্টির একটা পর্দা বাতাসের দিকে নড়ছে। সাথে আমার হৃদপিন্ডটাও। বাংলাদেশেও কি আজ বৃষ্টি হচ্ছে?
বছর তিন পর দেশে এসেছি। সময়স্বল্পতার জন্য যে যার নিজের বাসায়। এলাহী নাস্তা শেষে আয়েশ করে চা খাচ্ছি। ফোন বাজলোঃ “বুয়েট যাবা?” ট্রান্সলেশন হল ভদ্রলোক বউকে মিস করছেন। রামপুরা থেকে এখন আর রিকশায় যাওয়ার পথ নাই। সবুজরঙ্গা একটা সিএঞ্জিতে উঠলাম। একটু যেতেই সেতার বাজতে লাগলো। সেতার? ওহ বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির ছাঁটে সিএঞ্জির মেঝে থেকে ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। আসপাশের মানুষের কঠিণ আবরন গলে অদ্ভুত মায়াময় হয়ে উঠতে লাগলো। গ্যাস স্টেশনের ছেলেটার পায়ের স্যান্ডেল ছুঁইয়ে পানির স্রোত ছুটছে। আর আনন্দধবনির মত সেতার বাজছেই। রাস্তার জ্যা্ম ঠেলে এগিয়ে চললাম গন্তব্যে।
রিক্তা
-------------
মন্তব্য
ভাল লাগল। আপনার বর্ণনাভঙ্গি সুন্দর। আশা করছি, সামনে আরও লেখা পড়ার সুযোগ পাব।
অনেক ধন্যবাদ কাজি মামুন।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
এতো দেখি সারাজীবনের বৃষ্টি-ডায়েরী একসাথে
চমৎকার লাগলো। এরকম ফ্লাশব্যাক সবারই আসে মনে হয় মাঝে মাঝে।
টপ ইলেভেন বলতে পারেন আর কি ।
বৃষ্টির দিনেই বেশি মনে আসে বোধহয়।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সহজ, সোজাসাপটা কথোপকথন। বেশ লাইভ - লেখাটা। ভালো লাগল পড়ে
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ তাপস শর্মা।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সিটের তলায় পর্দা রাখার ব্যাপারটা জোস লাগত আমার। মাঝপথে নামতে হইত যেন রিক্সাওলা সিটের তল থেকে পর্দা বাইর করতে পারে। সেই পর্দা আবার ৯০% সময় হইত নীল কালার।
বিষ্টিবাদলার গপ্পো ভালু পাইলাম হে প্রোগ্রামার।
..................................................................
#Banshibir.
আর বৃষ্টিবাদলার গল্প। পরশু দুপুরে হাল্কার উপর দিয়ে ঝাপ্সা স্নো পড়লো দেখলাম।
হেহে। আমি চির জনমের অগোছালো। প্লাস্টকের পর্দা, রেইনকোট, ছাতা কোন কিছুই আমাকে চুপচুপে ভিজা থেকে বাঁচাতে পারে নাই কোন দিন। রিকশার পর্দা পায়ের নিচে ঠিকমত প্লেস করাটা আমার খুব কঠিণ মনে হয়। তবে চোখের নিচের পাপড়ি পর্যন্ত পর্দা টেনে পিট পিট করে বৃষ্টি দেখার মজার কোন তুলনাই নাই।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হে পীর মিসিসাগী।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
"পীর মিসিসাগী"
..................................................................
#Banshibir.
দেওয়ানবাগী হতে পারলে মিসিসাগী কি দোষ করল?
বিজ্ঞানী সফদর আলির মহা মহা আবিস্কার এর কুতুবপুরীর কথা মনে আছে? আহা কি একটা বই!
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ধন্যবাদ স্যাম! আপনার করা ব্যানার গুলো অদ্ভুত সুন্দর লাগে।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
স্মৃতিচারন সবসময় ভালো লাগে। চলুক।
ধন্যবাদ সাফিনাজ আরজু।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আমি বৃষ্টিপাগল মানুষ, বৃষ্টি দেখলেই অফিসের কাজে মন দিতে পারিনা। আপনার লিখা খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ বন্দনা। আমার অবশ্য অফিসের কাজে মন না দিতে বৃষ্টি দরকার হয় না ।
দেশের বৃষ্টি অনেক মিস করি।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
অনবদ্য! 'বৃষ্টির পর্দা ' কী?
বৃষ্টি নিয়ে আমাদের আবেগ নিছক রোম্যান্টিসিজম নয়। খরতপ্ত দেশে বৃষ্টি আসলে জীবনের অন্য নাম। যাদের ঘরে এ,সি বা ফ্যান কিসসু নেই- তাদের কাছে বৃষ্টি আরো প্রিয়। যদিও চিরকেলে গ্রাম-বাংলায় বৃষ্টি-বাদলার দিনে কাজকর্ম করা অসম্ভব। পাশ্চাত্যের লোকেরা রৌদ্রোন্মত্ত, আমরা বৃষ্টির নেশায় মাতাল। তাই আমাদের গানের জগতে মল্লারের রিমঝিম, মেঘের ঘন-নির্ঘোষ, গানের বাণীতে বৃষ্টির আবাহন পাই তানসেন থেকে রবীন্দ্রনাথে, ফৈয়াজ খাঁ থেকে নজরুলে, মান্না দে থেকে আর্টসেলে।
লেখা চলুক।
নির্ঝর অলয়
সেইদিন এতোঘন হয়ে বৃষ্টি পড়ছিলো যে মনে হচ্ছিল জানালায় বৃষ্টির একটা পর্দা তৈরী হয়েছে। বিশ্লেষনধর্মী মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নির্ঝর অলয়। আপনার নিক টা সুন্দর। নির্ঝর অলয় এর অর্থ কি?
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আপু এটা নিক নয়, আমার নাম- অবশ্য বদনামও বলতে পারেন!
বৃষ্টি কথন ভাল লেগেছে... কালকেই পড়েছিলাম। মন্তব্য করতে এসে আবার পড়ে গেলাম যখন বাইরে আবার বৃষ্টি নেমেছে- রিমঝিম সুরেরও লহরী। আহা!!!
ধন্যবাদ কড়িকাঠুরে। আপনাকে হিংসা হচ্ছে।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
ভালো লাগলো এই ব্লগরব্লগর 'বৃষ্টিব্লগর'
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই বৃষ্টি না থাকলে, হোক না সেইটা যতোই অসময়ের, এই শহরটা কি এতো ভাল লাগতো?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আসলেই। আমার এইবার দেশ সফরের আল্টিমেট সাফল্য হল বৃষ্টি দেখা। বাই প্রোডাক্ট খানাদান আর ঘুম
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
উপমাটা ভীষন ভালো লাগলো। সেইসাথে বৃষ্টিব্লগর। নেন একটা গান শোনেন।
ফারাসাত
গানের জন্য ধন্যবাদ ফারাসাত।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
আহা বৃষ্টি! উহু বৃষ্টি!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আর বৃষ্টি! ১ ডিগ্রীতে বৃষ্টিকে খুব ভয় পাই।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
নতুন মন্তব্য করুন