আগেকার পর্বগুলি এইখানেঃ
পর্ব ১ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46479
পর্ব ২ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46554
পর্ব ৩ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46617
পর্ব ৪ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46698
~ ফিরে দেখা - পর্ব ৫: ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ ~
- “স্বাগতম! শাস্রিয়াকাল্! খুশ্আম্দিদ! ওয়েল্কাম! ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ শোয়ের সীজন টু-এর ফাইনাল রাউন্ডে আপনাদের সবাইকে সুস্বাগতম্! আমি আপনাদের বন্ধু রিমি এসে গেছি আপনাদের পছন্দের সেরা শো ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’র সীজন টু-এর ফাইনালে বাংলার সেরা দুই প্রতিযোগী নিয়ে। আমাদের সবাইকে যিনি পৌঁছে দিয়েছেন ছোটবেলার মা-ঠাকুমার হেঁসেলের সব প্রায়-বিস্মৃত রান্নায়। প্লীজ ওয়েল্কাম শ্রীমতী প্রতিমা পালিত! আর আমাদের তামাম বাংলার খাদ্যরসিকদের যিনি দেশ বিদেশের সব তাক লাগানো জিবে জল আনা রান্না বারবার প্রত্যেকটা রাউন্ডে পরিবেশন করার সাহস, মনন এবং নিষ্ঠা দেখিয়েছেন, প্লীজ ওয়েল্কাম আমাদের প্রিয় বন্ধু ঝিলম চন্দ্রাকে। আজকের গ্র্যান্ড ফিনালে দুজনের মধ্যে একজনকে জাজেরা বেছে নেবেন ‘ওস্তাদ’ হিসেবে। এখনও পর্যন্ত আমাদের প্রিয় প্রতিমা মাসিমা নম্বরের নিরিখে সামান্য এগিয়ে আছেন ঝিলমের থেকে। তবে কিছুই বলা যায় না, আজকে দুজনেই শুরু থেকে শুরু করছেন, কাজেই দুজনেরই সমান সুযোগ সেরার শিরোপা কেড়ে নেওয়ার। আমরা দর্শক বন্ধুদের আরেকবার মনে করিয়ে দি আমাদের অনুষ্ঠানের যোগদানের প্রাথমিক শর্তই হল এই যে কোন পেশাদার রাঁধুনি বা শেফ্ এই শো-এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আমাদের আজকের দুই সেরা প্রতিযোগীরই প্যশান রান্না, কিন্তু কারোরই রান্নাটা প্রোফেশান নয়। এই রাউন্ডের নিয়মগুলো আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক!”
প্রতিযোগিনীদের দিকে ফিরে রিমির মন্তব্য, “রাউন্ড ৫ – ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’তে আপনাদের অ্যাপেটাইজার থেকে ডেসার্ট পর্যন্ত বানাতে হবে মাশ্রুম দিয়ে। অর্থাৎ সমস্ত রান্নার প্রধান উপকরণ হতে হবে মাশ্রুম। আপনাদের সময়সীমা ৯০ মিনিট। এই সময়সীমার মধ্যে আপনাদের অবশ্যই তিন বা তিনের বেশী রান্না করে ফেলতে হবে। প্রথম পাত যাকে আমরা অ্যাপেটাইজার বলি, প্রধান পাত যাকে মেইন কোর্স বা অন্ত্রে আর শেষ পাত বা ডেসার্ট – মিনিমাম এই তিনটে ভিন্ন ভিন্ন পদ আজকে রান্না করতেই হবে মাশরুম দিয়ে। সময় থাকবে ঠিক নব্বই মিনিট। তিনটে পর্বে ভেঙ্গে দেওয়া হবে এই গ্র্যান্ড ফিনালের রাউন্ড ৫। অ্যাপেটাইজার বানানোর জন্য বরাদ্দ ৩০ মিনিট। বিচারকমন্ডলী চেখে নম্বর দেবেন তিরিশ মিনিট পর। এরপর রান্না করতে হবে মেইন কোর্স। তার জন্যেও বরাদ্দ তিরিশ মিনিট। একই ভাবে, তিরিশ মিনিট হয়ে গেলে রান্নাটা চেখে দেখবেন জাজেস প্যানেল আর নম্বর দেবেন। শেষ তিরিশ মিনিট বরাদ্দ ডেসার্টের জন্য। এরও আলাদা নম্বর দেবেন আমাদের জাজেরা। সবশেষে নম্বর যোগ করে যার নম্বর বেশী হবে তাকেই আজকে আমরা ভূষিত করব ওস্তাদের মার শেষ পাতের ফাইনালের মাস্টার-শেফ খেতাবে। একজন ইলিশ আর আরেকজন রুই মাছের কোন পদ বানালে প্রশ্ন উঠতে পারে যে ইলিশ মাছের স্বাদের জন্যি সেই রান্নাটা বেশী সুস্বাদু হয়েছে কিনা, একই কারণে বিভিন্ন মাশরুম ব্যাবহার করার ছাড়পত্র দিলে অভিযোগ উঠতে পারে যে বিশেষ সুস্বাদু মাশরুমের নিজস্ব স্বাদেই রান্নার স্বাদ বেড়ে গেছে। এই অভিযোগ যাতে এই প্রতিযোগীতায় না উঠতে পারে সেই জন্য আমরা দুই প্রতিযোগিনীকেই সাদা কমন বাটন মাশরুম দিয়ে তিনটে পদ রান্না করতে বলছি। আচ্ছা, এবার আসুন, আরেকবার আলাপ করিয়ে দিই, আমাদের মধ্যে বিচারক হিসেবে রয়েছেন জিবে জল আনা খাঁটি বাঙ্গালি ফাস্ট-ফুড চেইন রেস্টুরেন্ট ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’এর মালিক বান্টি ঘোষ! রয়েছেন বাজাজ ফাইভ-স্টার গ্রুপ অফ্ হোটেলসের সাথে যুক্ত একমাত্র বাঙ্গালী আমাদের সব্বার ফেভারিট মাস্টার শেফ্ কুনাল গোস্বামি। রয়েছেন ‘এই রাত তোমার আমার’ ছায়াছবির হিট্ এবং হট্ হার্টথ্রব রূপা রায়। আর আমাদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান মেঘনাদ গুপ্তা!”
সমস্ত হল হাততালিতে ভরে গেল। বিচারকেরা একে একে তাঁদের চেয়ারে এসে বসলেন।
এরপর রিমি বিচারকদের অনুরোধ করল অনুষ্ঠান সম্পর্কে দুএক কথা বলতে বলল। “রূপাদি আপনি শুরু করুন।”
রূপা তার স্বভাবসিদ্ধ প্লাস্টিক হাসি মুখে মেখে ন্যাকা ন্যাকা ভঙ্গিতে বললেন “রান্না করতে আমি খুব ভালবাসি। আজকে ‘আমার সকল রসের ধারা’ শুটিং এর ডেট ক্যান্সেল করে আমি এসেছি এই দারুণ শোয়ের গ্র্যান্ড ফিনালেতে জাজ হিসেবে অংশগ্রহণ করতে। খুব এক্সাইটেড লাগছে!”
-“অনেক ধন্যবাদ রূপাদি, মিস্টার ঘোষ আপনার কি অনুভুতি?”
বান্টি ঘোষ সহাস্যে বললেন “আমার দারুন লাগছে। দেখতে হবে আজকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কে জেতে? আজকে তো একটা নয়, তিন তিনটে পদই রান্না করতে হবে এই দুই ফাইনালিস্টকে। আমি তো কোমরের বেল্ট আগে থেকেই আলগা করে রেখেছি এতগুলো না-জানি-কি-দারুণ খাবার খেতে হবে বলে। এই আরেকটা অ্যাক্টিভিটি যেটা কোমেরের বেল্ট না খুললে করা যায়না। হ্যাঃহ্যাঃহ্যাঃ!” ক্যামেরার দিকে চোখ টিপে বান্টি ঘোষের মোটাদাগের রসিকতা।
দর্শকের অবশ্য এই আমিষ রসিকতাটা বেশ পছন্দ হয়েছে, দেখা গেল হাততালিতে ঘর ভরে গেল।
“হ্যাঁ, মিস্টার ঘোষ, আজকে সবাই দমবন্ধ করে বসে রেজাল্টের অপেক্ষায়। কুনালদা আপনি কি বলেন? আজকে বিচারকের ভূমিকায় কেমন লাগছে?”
কুনাল গোস্বামি তার গাড় নীল রঙের সুটের কাঁধের কাছ থেকে একটা কল্পিত ধূলোকণা ঝেড়ে নিয়ে খানিকটা উদাস স্বরে বলল, “আজকের দিনটা খুব অন্যরকম। রান্না হবে শুধু কাঁচা উপকরণ দিয়ে নয়, তার মধ্যে প্রধান মিশেল হবে অনুভূতির, ইমোশানের। বিশ্বে সুখাদ্যের রাজধানী প্যারিসে একটা কাহাবত প্রচলিত আছে, রান্নাটা প্রেম করার মতই করতে হবে, হয় পুরো হৃদয় দিয়ে করতে হবে, নয় তো না করাই বাঞ্ছনীয়। আমি আগেও বলেছি রান্নাটা কিন্তু কেমিস্ট্রি নয়, আর্ট। একটা উপকরণের সাথে আরেকটা উপকরণ মিললেই হবেনা, মিলতে হবে তার সাথে ধৈর্য, নিষ্ঠা, আদর, ভালোবাসা, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝতে হবে কি হতে চলেছে। ঈশ্বর যখন সুর বানিয়েছেন তখন সাত সুর বানিয়েছেন, সারেগামাপাধানি। আবার যখন রঙ বানিয়েছেন সাতটা রঙ বানিয়েছেন বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। আবার যখন স্বাদ বানিয়েছেন তখনও সাতটা। মিষ্টি, তিতো, নোনতা, টক, ঝাল, কষা, উমামি। আজকে আমি ঝিলম আর প্রতিমা মাসিমা দুজনকেই বলতে চাই রান্না শুরু করার আগে এই সাতসুর, সাত রঙ, সাত স্বাদ নিজের হৃদয় দিয়ে অনুভব করুন। ভুলে যান আপনারা একটা প্রতিযোগীতায় রান্না করছেন। ভুলে যান আরেকজন প্রতিদ্বন্দীর থেকে আপনাকে আরও ভালো কিছু রান্না করতে হবে। শুধু মনে রাখুন যে পদগুলি আপনারা রাঁধবেন তা নিয়ে যেন মনে মনে গর্ব করতে পারেন।”
কুনাল গোস্বামির চমৎকার বক্তৃতায় স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বাজ পড়ার মত হাততালিতে সেট ফেটে পড়ল।
রিনি এরপর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার কাছে মাইক ধরে বললেন “ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আপনি কিছু বলুন।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা তার পেটেন্ট নেওয়া হাসিটা সারা মুখে ছড়িয়ে বললেন “দেখুন আমি আগেও বলেছি এই অনুষ্ঠানে আমি জাজ হিসেবে আসিনি, এসেছি ভালোমন্দ খাবার লোভে। আমি একজন নির্ভেজাম খাদ্যরসিক। আমার ঈশ্বরের তৈরি একটা নিয়ম খুউউব ভালো লাগে। কি জানেন? এই যে দিনের মধ্যে মাঝে মাঝেই সব কাজ থামিয়ে আমাদেরকে খাবার খেতে বসতে হয়।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তের বক্তব্যের পর হাল্কা হাসির গুঞ্জন উঠল দর্শকমহলে।
এরপর রিমি প্রতিযোগীদের নিয়ে গেল বিশাল কিচেনে যেখানে আজকে আলাদা ভাবে সব কিছু সাজানো। একটা চার-বার্নারের ওভেন, একটা ছোট্ট ফ্রিজ, ফ্রিজের ওপরে একটা মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন এবং তিনটে করে কড়াই, সস্প্যান এবং বিভিন্ন রকম হাতা-খুন্তি-চামচ। বাইরে সেটের বিশাল মনিটরে দেখা যাচ্ছে কিচেনে কর্মরত দুই দ্রৌপদীকে। তাদের মুখের ওপর দুটো ক্যামেরা ফোকাস করে রয়েছে। অন্য কোণ থেকে অন্যান্য ক্যামেরা তাদের হস্তসঞ্চালন, কড়াইয়ে উপকরণ-ঢেলে ফেলে ভাজা, দ্রুত হাতে সবজি কাটা ইত্যাদি সমস্ত ক্রিয়াকলাপ ক্যামেরাবন্দী করে তুলছে। রাশ প্রিন্টে সব কিছু থাকাটাই এইসব রীয়ালিটি শোয়ের বৈশিষ্ট। পরে এডিটিং করার সময় হয়ত দেখা গেল কারও চোখে জল, বা কারোর হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছে, সেগুলো তৎক্ষনাত মনোনীত করে দেওয়া হয় যাতে রীয়্যালিটী শোয়ের রিয়্যালিটী বেশী ভালো করে তুলে ধরা যায়। ঝিলমের মসৃণ হাতের সুললিত ভঙ্গী, প্রতিমা পালিতের বারবার খোঁপাটাকে শক্ত করে বাঁধার মুদ্রাদোষ, দুজনেরই সামান্য উত্তেজিত আচরণ, সবই পাঁচ-ছটা ক্যামেরায় নিখুঁতভাবে বন্দী হয়ে রইল।
রিনি কিচেনে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা মন্তব্য করতে লাগল। প্রথম তিরিশ মিনিটের শুটিং এর এডিটিং করে পাঁচ মিনিটের ক্লিপিংস দেখানো হবে অনুষ্ঠানে। জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না। চা, কফি, কোল্ডড্রিংক্স খেতে খেতে হাল্কা গল্প গুজব করছেন। কুনাল গোস্বামি যথারীতিএকটা বই খুলে এক কাপ কফি নিয়ে বাইরে এসে বসলেন। রুপা শোয়ের ডিরেক্টারের সাথে কিছু কথা বলছিলেন। বান্টি ঘোষ রিনির সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলে। ম্যাজসিয়ান গুপ্তার সবদিকেই চোখ গেল। উনি কুণালের দিকে এগিয়ে এসে বলল, “কুণাল, তুমি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট বলে তুমি বলছি, কিছু মনে করোনা। যতবার তোমার বক্তব্য শুনেছি, ততবার তোমার জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছে। তোমার গ্রান্ড ফাইনালের বক্তব্যটাও খুব সুন্দর। এত সুন্দর করে বল কি করে? তৎক্ষনাত বল নাকি বাড়ি থেকে রিহার্সাল দিয়ে আস?”
- “কি যে বলেন মেঘনাদদা! যা মনে আসে তাই বলি। আমার দ্বারা বেশী ভেবে চিনতে তৈরি হয়ে কিছু বলা হয়না।”
- “তখন থেকে তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞাসা করব ভাবছি। তুমি যে সাতটা স্বাদের নাম করলে তার ছটা জানা। কিন্তু একটা আজানা। তুমি ‘উমামি’ বলে একটা স্বাদের কথা উল্লেখ করলে। আমি ভাই কোন্দিন ওই নামটাই শুনিনি। কি স্বাদ ওটা?”
- “ওটা হল মাংসের স্বাদ। চিংড়ি, গোস্ত, মাশরুম, পনীরের যে বিশেষ স্বাদ তাকেই রান্নার পরিভাষায় বলে উমামি। ভেবে দেখুন মাংসের স্বাদ কিন্তু একদম অন্যরকম। মিঠে বা টক বা ঝাল বা তিতকুটে নয়।”
- “তা ঠিক, যাক আমারও তোমার দৌলতে এই ব্যাপারে একটু জ্ঞান বাড়ল। অনেক ধন্যবাদ।”
- “মাই প্লেশ্যার মেঘনাদদা। এই স্বাদটা আমার খুব প্রিয় স্বাদ। হাঃহাঃ। আগের জন্মে বোধহয় ক্যানিবাল ছিলাম।”
- “মানুষের মাংস বেশী সুস্বাদু বলছ?”
- “হ্যাঁ, তাই তো শুনেছি। আমি তো আর জাতিস্মর নই তাই নিশ্চয় করে বলতে পারছিনা।”
এরপর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দেখলেন কুণালের চোখদুটো যেন হঠাৎ দূরে কিছুর ওপর পড়ল। পড়তেই একবার জ্বলে উঠল আর চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠল। কতক নিজের মনেই যেন বলে উঠল, “এজন্মেও একবার প্রথম ও শেষ বারের মত ক্যানিবাল হওয়ার স্বাদ মিটিয়ে নেওয়াই ভালো।”
মেঘনাদ গুপ্তা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন বান্টি ঘোষ রিমির কাঁধে হাত রেখে দিবি খোশমেজাজে গল্প করছে।
ঘাড় ফিরিয়ে কুণালকে হাসতে হাসতে বললেন, “কোন বিশেষ কাউকে নিশানা করেছেন কি?”
কুণালও যেন সম্বিত ফিরে পেয়ে হেসে মনোরম হাসি হেসে বলে উঠল, “হ্যাঁ, একবার পার্লামেন্টে গিয়ে পড়লেই হয়, চারদিকেই আমার খাবার ছড়িয়ে রয়েছে তো!”
ইতিমধ্যে আধ-ঘন্টা শেষ। ঝিলম চন্দ্রা আর প্রতিমা পালিতের রান্না প্রস্তুত বিচারের অপেক্ষায়। বিচারকদের মঞ্চে ডাক পড়ল। হাল্কা মেকআপ সেরে নিয়ে সবাই আবার মঞ্চে হাজির হলেন। রিমি জানালো বিচার হবে অ্যাপেটাইজারের।
রিমি তার স্বভাবত উচ্ছল ভঙ্গীতে বলে উঠল, “অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন, ভালো ভালো খাবারের পর আমি আমার আত্মীয়স্বজনদের পর্যন্ত ক্ষমা করে দিতে পারি।”
সেটে আবার হাসির ফোয়ারা উঠল।
- “এখন দেখা যাক, প্রতিমা মাসিমা কি রান্না করলেন অ্যাপেটাইজার হিসেবে? জাজেরা খেয়ে কি তাদের আত্মীয়স্বজনদের ক্ষমা করতে পারবেন?”
- “হ্যাঁ মা, এই যে, আমি আজকে রেঁধেছি মাশরুম মুইঠঠা।”
- “বাহ্, নামটা শুনেই তো ভালো লাগছে। এই রান্নাটা কখনও শুনিনি, একটু কিছু বলুন মাসিমা এই রান্না নিয়ে।”
- “শুনবে কি করে, এই রান্নার জন্ম আজকে এই ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ শোএ হ’ল। আমাদের গ্রামবাংলায় চিতলের মুইঠঠা রান্না করতেন আমাদের মা-ঠাকুমারা। আমি সেই রান্নাটাই করেছি শুধু চিতলের বদলে মুশরুম দিয়ে।”
- “ওয়াও! প্রতিমা মাসিমা একেবারে যাকে বলে ফিউশান কুইজিন বানিয়ে ফেললেন। এখন দেখা যাক জাজেদের এই অশ্রুতপূর্ব রান্না খেয়ে কেমন লাগে।”
প্রতিমা পালিত নিজে হাতে বড় কড়াই থেকে দুটো করে মুইঠঠা চারটে প্লেটে বেড়ে দিল, দিয়ে এগিয়ে দিল বিচারক-চতুষ্টয়ের দিকে।
রূপা প্রথম খেয়ে মন্তব্য করলেন, “বাঃ, খুব সুন্দর হয়েছে মাসিমা। সত্যিই এ জিনিস কোনদিন খাইনি। আমি একেবারে দশে দশ দিয়ে দিলাম মাসিমা।”
চারদিকে হাততালি।
এরপর কুণাল। কুণাল একটা মুইঠঠা মুখে দিয়ে খানিক্ষন একটু ভুরু কুঁচকে ভেবে বলল, “যেহেতু প্রতিমা পালিত এটাকে মুইঠঠা বলেছেন সেহেতু আমি ধরে নিচ্ছি চিতলের বদলে মাশুরম এইটুকু পরিবর্তন ছাড়া রান্নাটি সাবেকি মুইঠঠা রান্নার প্রতি অনুগত থাকবে। সেই হিসেবে বলছি রসুনের পরিমাণ মুইঠঠা অপেক্ষায় সামান্য বেশী হয়েছে। কোন রান্না মুখে দিয়েই যদি কোন একটা উপকরণের স্বাদ, যেটা কিনা প্রধান উপকরণ নয়, তার স্বাদ অন্য সবাইকে ছাপিয়ে যায়, তাহলে সেটাকে আমরা খুব ভালো রান্নার মর্যাদা দিইনা। বাকি সব কিছু খুবই ভালো। এই রান্নার সৃষ্টির জন্য অবশ্যই আমাদের প্রতিমা মাসিমাকে অনেক ধন্যবাদ দেওইয়া উচিত। সব মিলিয়ে আমি দশে আট দিলাম।”
বান্টি ঘোষ যেন অপেক্ষা করছিল কুণালের বক্তব্য শেষ হওয়ার জন্য। শেষ হতে না হতে বলতে শুরু করলেন, “আমার বিচারে রান্নার স্বাদে দশে দশ। এই অভিনব রান্নাটা কল্পনা করার জন্য দশে দশ। মাশরুম বাটা দিয়ে মুইঠঠা – এটা আমি বিনীতভাবে প্রতিমা পালিতকে অনুরোধ করছি আমার রেস্টুরেন্টে নতুন পদ হিসেবে চালু করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। এই প্রোগ্রাম যারা দেখছেন সবাইকে বলছি এই নতুন পদ আমার রেস্টুরেন্টে পরের মাস থেকে পাওয়া যাবে। আর প্রতিমাদি, আপনি যখন খুশী এসে খেয়ে যাবেন আমার রেস্টুইরেন্টে। আপনার জন্যে চিরকালের জন্য অবারিত দ্বার হয়ে রইল বেঙ্গল এক্সপ্রেস।”
প্রতিমা পালিত স্মিত হেসে বললেন, “হ্যাঁ, আমার আপত্তি নেই। এতো আমার সৌভাগ্য। যদি একটা নতুন মুখোরোচক খাবারের প্রচলন হয় বাংলায়, এর থেকে বড় প্রাপ্তি একজন রাঁধুনির আর কি হতে পারে? আমি একশো শতাংশ রাজি।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা রান্নাটা খেয়ে বললেন, “আমার বেশ ভালো লেগেছে। নতুনত্তের জন্যই একে আমি বেশী নম্বর দেব। মুইঠঠার দুটো বড়াই আমি শেষ করে ফেলেছি এক কামড়ে। আমি দশে নয় দিলাম।”
রিনি এরপর ঝিলমের দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিইয়ে বলল, “এবার তোমার পালা ঝিলম। তুমি বল কি রেঁধেছ?”
- “আমি রেঁধেছি মেক্সিকো দেশের প্রসিদ্ধ খাবার ‘মাশরুম কেসাদিয়া’”, ঝিলমের আত্মবিশ্বাসি কন্ঠস্বর।
- “বাহ্ বেশ সুন্দর নাম। একটু এই কেসাদিয়ার বিষয়ে কিছু বল যাতে সবাই উপভোগ করতে পারে এই নতুন রান্নার বংশপরিচয়।”
- এইটা একটা খুব হিট মেক্সিকান রেসিপি। পেঁয়াজ, রসুন, নুন, তেল, গোলমরিচ, ভিনিগার, মাশরুম একটা পাত্রে হাল্কা ভেজে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা নরম ময়দার রুটি তাওয়ায় গরম হতে দিয়ে তার অর্ধেকটার ওপরে এই মুশরুমের কাতটা ঢেলে দিতে হবে। তার সঙ্গে বেশ অকৃপণ হাতে মেশাতে হবে মোৎসারেলা চীজ। গরম করতে দিতে হবে যতক্ষন না মোৎসারেলা চীজটা গলতে শুরু করে। যেই গলতে শুরু করবে তখন রুটির বাকি অর্ধেকটা ওটার ওপর ভাঁজ করে দিয়ে মুখটা সীল করে দিতে হবে। ব্যাস্ গরমাগরম মাশরুম কেসাদিয়া তৈয়ার! সময় বেশী লাগেনা, কিন্তু খেতে খুব ভালো।“
- “হ্যাঁ, দেখেই তো জিবে জল চলে এসেছে আমার। দেখা যাক আমাদের জাজেরা কে কি বলেন খেয়ে।” ঝিলম তাওয়া থেকে একটা করে কেসাদিয়া নিয়ে চারজন জাজের একেকজনের প্লেটে পরিবেশন করে দিল।
যথারীতি রুপা খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে দশে দশ দিয়ে দিলেন।
কুণালও বললেন, “এই কেসাদিয়া সব দিক থেকেই খুব সুন্দর। প্রেসেন্টেশানও একেবারে মেক্সিকান ঘরানার, স্বাদও তাই। আমি একে দশে দশ দিচ্ছি।”
বান্টি ঘোষ অবশ্য সাথে সাথে বলে উঠলেন, “আমার খারাপ লেগেছে বলছি না। তবে গালভরা নাম দিলেই নম্বর বেশী পাওয়া যায়না। এটা আমাদের দেশের পাটিসাপ্টার থেকে এমন কিছু ভালো খেতে নোয়। রুটিটা আরও একটু নরম হলে বেশী ভালো লাগত। আমি একে আট দিলাম দশে।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তের অবশ্য এই পদটা খুব ভালো লাগল, তাই উনি মুক্তহস্তে দশে দশ দিয়ে দিলেন।
রিনি বলে উঠল, “দেখাই যাচ্ছে খেলা পুরো জমে উঠেছে। প্রতিমা পালিত পেলেন মোট ৩৭ পয়েন্ট, আর ঝিলম চন্দ্রা পেলেন ৩৮ পয়েন্ট।
এরপর মেইনকোর্সের তৈয়ারী। ঝিলাম চন্দ্রা আর প্রতিমা পালিত ক্ষিপ্র হাতে লেগে পড়েছেন তাদের পরের পদ রান্না করতে। রিনি কিচেনে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা মন্তব্য করতে লাগল। এই তিরিশ মিনিটের শুটিং এরও বরাদ্দ পাঁচ মিনিট। জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ধীরে সুস্থে রুপার কাছে পৌঁছলেন। হাল্কা করে বললেন, “কেমন চলছে রূপা? খুব ব্যাস্ত? তুমি কি এবার ছোটপর্দায় আসছ? আমাদের ডিরেক্টার সাহেবের সাথে কথা হচ্ছিল দেখলাম?”
- “আরে নানা মেঘনাদদা, বরং ঠিক উলটো। আপনাদের ডিরেক্টর সাহেবের ইচ্ছে এবার ছোটপর্দা ছেড়ে ফীচার ফিল্ম বানাবেন। তাই আমার সাথে কথা বলছিলেন। একটা স্ক্রিপ্টের খসড়া শোনালেন। এমনিতে ভালোই। আর আমার এখন যেরকম অবস্থা, বড় ব্যানার ছাড়া ছবি করছিই না। ছোটপর্দাতে আসার এখন প্রশ্নই নেই। এইতো সেদিন বম্বে থেকে ফোন এলো, কিন্তু স্ক্রিপ্টটা সাদামাটা বলে রিফিউজ করে দিলাম।”
- “বেশ। চালিয়ে যাও। তোমায় সেই ছোট্ট থেকে দেখছি হর্লিক্সের অ্যাড থেকে। খুব গর্ব হবে যদি তুমি আরও অনেক ভালো ভালো সিনেমা কর। হয়ত বিদেশ থেকেও ডাক আসবে।”
রূপার চোখদুটো যেন একটু ছলছল করে উঠল। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার হাত দুটো ধরে বলল, “মেঘনাদদা, আপনি আশীর্বাদ করলে নিশ্চয়ই অনেক অনেক দূর উঠব। আমাদের পেশাটা খুব ক্ষণস্থায়ী। আমার কেরীয়ার শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে অনেকে, কিন্তু আমি তা হতে দেব না। অ্যাট এনি কস্ট। অনেক কষ্ট করে কোন ব্যাকিং ছাড়া আমি এই জায়গাটা বানিয়েছি নিজের জন্য। এমনি এমনি ছেড়ে কথা বলব না। আমাকে শেষ করে দিতে চাইলে আমিও শেষ করে দেব সেই চক্রান্তকারীকে। এই আপনাকে বলে রাখলাম।”
আরও এদিক ওদিক কয়েকজন দর্শকের সাথে কথা বলে অটোগ্রাফ দিয়ে বেড়ালেন ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা।
ইতিমধ্যে তিরিশ মিনিট শেষ। ঝিলম চন্দ্রা আর প্রতিমা পালিতের রান্না প্রস্তুত বিচারের অপেক্ষায়। বিচারকদের আবার মঞ্চে ডাক পড়ল। হাল্কা মেকআপ সেরে নিয়ে সবাই আবার মঞ্চে হাজির হলেন। রিমি জানালো এবার বিচার হবে মেইনকোর্সের।
- “মেইন কোর্স। বুঝতেই পারছেন এটার গুরুত্ব খুব বেশী। দেখা যাক, কে কি রেঁধেছেন। প্রথমে যাই প্রতিমা মাসিমার কাছে। কি রেঁধেছেন মাসিমা?”
- “আমি রান্না করেছি মাশরুম হর-গৌরি।”
- “বাব্বা, আবার ফিউশান?”
- “কি করব বল? আমাদের তো ব্যাঙ্এর ছাতা দিয়ে সেরকম কোন সাবেকি রান্না হয়না, তাই আমাকে মাথা খাটিয়েই বার করতে হচ্ছে। কৈ মাছের হর-গৌরি খেয়েছ? এটাতে মাছের বদলে মাশরুম। হর-গৌরি যারা কোনদিন খাননি তাদের উদ্দেশ্যে বলি এই রান্নার বিশেষত্ত্ব হল এই যে একদিক হবে লাল, আর অন্যপিঠ হবে সবুজ। আমি এই রান্না আমার দিদিশাশুড়ির থেকে শিখেছিলাম। এখন বড় একটা কেউ করেনা। বড় হাঙ্গামা। তবে কিনা আজকের দিনটা আমার জীবনে একটা খুব স্পেশাল একটা দিন, তাই ভাবলাম এই রান্নাটা করেই ফেলি। অনেক মাশরুম বেটে কয়েকটা বড় প্যাটি বানিয়ে নিলাম, সেই প্যাটি ভেজে বেশ একটা বেগুনীর মত অবয়ব দিলাম। আর তাই দিয়েই বানালাম আমার হর-গৌরি।”
রুপা, বান্টি, কুণাল আর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা সবাই এই অসাধারণ পদটিকে দশে দশ দিতে বাধ্য হলেন। কুণাল বললেন, এই রঙের ব্যাবহার অসাধারণ। ভাবা যায়না, একদিকটা প্রত্যেকটা প্যাটির টকটকে লাল রেখেছেন, আর অন্যদিকটা সবুজ! এটা করতে অসামান্য দক্ষতা লাগে।”
প্রতিমা পালিত বললেন, “এমন কিছু নয় বাবা। দুটো আলাদা কাই দুটো আলাদা কড়াইয়ে বানিয়ে রেখেছিলাম। প্রত্যেকটা প্যাটি একদিকটা একটা কড়াইয়ে আর অন্যদিকটা অন্য কড়াইয়ে ডুবিয়ে তারপর প্লেটে তুলে পরিবেশন করলাম। আমার শেষ রান্নায় কড়াই লাগবেনা বলে প্রথম দুটো রান্নাতেই তিনটে কড়াই ব্যাবহার করে ফেলেছি।”
এরপরের রান্না ঝিলমের। সে রেঁধেছে ইতালি দেশের পছন্দের ‘মাশরুম রিসোটো’। ওয়াইন, চীজ, চাল, মাশরুমের মিশেল যে এত সুস্বাদু হয় তা না খেলে জানা যেত না। তবে ঝিলমের রান্নায় সামান্য একটু নুন বেশী পড়েছিল। একেবারে নুনে কাটা নয়। হাল্কা নুন বেশী।
কুণাল ওর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলল, “নুনকে কিন্তু কোন শেফ-ই অবহেলা করতে পারে না। নুনের পিতৃ-মাতৃ পরিচয় জানত ঝিলম? বাবা সূর্য আর মা সাগর। কাজেই এহেন সন্তান যে সমস্ত রান্নায় অপরিহার্য হয়ে উঠবে সে আর এমন কথা কি?”
সব্বাই হেসে উঠল।
রিমি কুণালের কাছে গিয়ে রিসোটো শুদ্ধ প্লেটটা তুলে নিয়ে সটান পাশে রাখা ট্র্যাশ-বিনে নাটকীয়ভাবে ফেলে দিয়ে ঘোষনা করল, “এহেন বংশগৌরবে গৌরবান্বিত লবণকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার ফলে এই রান্নার স্তাহ্ন হল এই ডাস্টবিনে।”
ডিরেক্টর খুশী হয়ে দেখলেন দর্শকরা এই রুক্ষ ভাষা এবং ব্যাবহারে হঠাৎ চমকে গিয়ে সমবেতভাবে জোরে নিঃশ্বাস টানল। ওদিকে ঝিলমের চোখে জল চিকচিক করে উঠল। ডিরেকটার খুব খুশী হল। গ্রান্ড ফিনালে এইরকম কিছু মুহূর্ত না হলে শো জমে নাকি? রিমিকে কাছে গিয়ে বলে আসতে পারলে ভালো হত এরকম চমক দিতে কিছু। রিয়্যালিটি শোয়ে এইসব অনুভূতিই আসল। ক্যামেরা ধরে রাখবে আর বারবার রিপ্লে করবে এডিটিং-এর পর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে।
দ্বিতীয় ধাপের শেষে দেখা গেল প্রতিমা পালিত ৭৭ পয়েন্ট পেয়ে সামান্য এগিয়ে রয়েছেন ঝিলমের থেকে। ঝিলম এই ধাপে ৩৭ পেয়ে সর্বমোট ৭৫ পয়েন্টে রয়েছে।
এরপর শেষ রাউন্ডের শেষ পর্ব। ডেসার্টের তৈয়ারী। ঝিলাম চন্দ্রা আর প্রতিমা পালিত লেগে পড়েছেন তাদের পরের পদ রান্না করতে। রিমি কিচেনে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা মন্তব্য করতে লাগল। এই তিরিশ মিনিটের শুটিং-এরও বরাদ্দ পাঁচ মিনিট। জাজেরা এই সময়টা ফ্রি। ক্যামেরা ওদের আর ফলো করছে না।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আবার এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছলেন খোদ ডিরেক্টারের পাশে। হাসিমুখে জানতে চাইলেন, “কি মনে হচ্ছে রাজা? এই শো পারবে অন্য সব শোয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দিতে?”
- “আরে আসুন, বসুন মেঘনাদদা। হ্যাঁ কি বলছিলেন? রেকর্ড ভাঙ্গার কথা? ও কি আর নিজে থেকে ভাঙ্গে? আপনি কি এতদিন তাই ভাবতেন? হাউ ইনোসেন্ট অফ ইউ! রেকর্ড সবসময় ভাঙ্গাতে হয়। হেডলাইন্স সবসময় বানাতে হয়। সেন্সেশান ক্রিয়েট করতে হয়। হ্যাঁ, আমার একটা প্ল্যান আছে বৈকি। আমার শো হেডলাইন্স হবে। দেখে নেবেন আপনি।”
- “প্ল্যানটা নিশ্চয়ই সিক্রেট? আপাতত?”
- “তা তো বটেই। তবে চিন্তা নেই, কোন চীপ পাব্লিসিটিতে রাজা মিত্র বিশ্বাস করেনা। কোন সাধারণ বস্তাপচা পাব্লিসিটি স্টান্ট দেখবেন না।”
ইতিমধ্যে আধ-ঘন্টা শেষ। ঝিলম চন্দ্রা আর প্রতিমা পালিতের রান্না প্রস্তুত বিচারের অপেক্ষায়। বিচারকদের মঞ্চে ডাক পড়ল। হাল্কা মেকআপ সেরে নিয়ে সবাই আবার মঞ্চে হাজির হলেন।
রিমি মাইক হাতে বলল, “এইবার শেষ পাত। আমাদের শোয়ের শেষ রাউন্ডের শেষ পাত। শেষ পাত বা ডেসার্টকে অনেক খাদ্যরসিক তুলনা করেন রক্ষিতার সাথে। খাওয়া খারাপ জেনেও লোকে লোভ সামলাতে পারে না। একটা খেয়ে আরেকটা খেতে চায়। আমাদের গ্রান্ড ফিনালের শেষ পাতে দেখা যাক আমাদের প্রবীণা আর নবীনা মধ্যে কার সৃষ্টি সবার মন কেড়ে নেয়। মাসিমা আপনি কি রেঁধেছেন ডেসার্ট হিসেবে?”
- “আমি, ইয়ে, আমি কম্বুচা মাশরুম চা বানিয়েছি। দেখো ভালো লাগে কিনা।”
- “বাহ্, চা তো আমাদের সবারই প্রিয়। এত গুরুপাকের পরেও কিন্তু চা খেতে পেলে সবাই খুশীই হয়। চা-টাই কি আপনার ডেসার্ট নাকি চা-এর সাথে ‘টা’ হিসেবে আপনি মাশরুমের কোন পদ রেঁধেছেন?”
- “না না, চা-টাই বানিয়েছি।”
একটু যেন সুর কাটল শুধু চা বানিয়ে ছেড়ে দেওয়াতে। তবু সব্বাই উন্মুখ হয়ে রইল এটা জানতে যে মাসিমার হাতের যাদুতে চা-ও না-জানি কি সুস্বাদু রূপ নেবে। তবে সেরকম কোন মির্যাক্ল হলনা। চা চায়ের মতই খেতে হয়েছে, বরং মাশরুমের একটা গন্ধ আর স্বাদ এসেছে যেটা কোন জাজেরই বিশেষ পছন্দ হয়নি।
প্রতিমা মাসিমা প্রত্যেকটা খাবারই খুব যত্ন করে পরিবেশন করেন। নিজের হাতে বেড়ে নিয়ে আসেন একটা করে প্লেটে একেকজন জাজের কাছে। জোর করেন ভালো লাগলে আরও খেতে। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার মায়ের কথা মনে পড়ে এই যত্নটুকু দেখে। এবারও গরম চা প্রত্যেকের জন্য কাপে ঢেলে মাশরুম ডুবিয়ে চিনি মিশিয়ে একজন একজন করে নিজে হাতে পরিবেশন করলেন।
রূপা বললেন, “শুটিং-এর ফাঁকে হাঁপিয়ে গেলেই আমি চা খাই। চা খেতে খুব রিল্যাক্সড লাগে। মাশরুম টি বড় একটা খাইনা। এটা খেতেও যে খুব আহা-মরি লাগছে তা নয়, তবে মাসিমার কিছু করার নেই। প্রতিযোগিতার শর্তই হল মাশরুম দিয়ে সবকিছু রান্না করতে হবে। কাজেই আমি দশে সাত দিলাম।”
কুণাল বলল, “এই ক্লিশে রান্না সিলেকশানের দরুণ দশে তিন। বৈচিত্রবিহীন এই চা দেখতেও ভালো হয়নি, খেতেও ভালো হয়নি। স্বাদেও দশে তিন। প্রেসেন্টেশানেও দশে তিন। ওভার অল দশে তিন।”
ডিরেক্টর খুশী হয়ে দেখলেন ঝিলমের মুখটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। উনি মনে মনে নোট করে রাখলেন এই অভিব্যাক্তিটা ক্লোজ-আপে দেখাবেন বলে।
বান্টি ঘোষ এই প্রথমবার কুণালের বিরোধিতা করতে পারলেন না। তিতো মুখে বললেন, “অনেক ভালো ভালো রান্না খেয়ে খায়ে আসলে আমার এক্সপেক্টেশান খুব বেড়ে গেছিল। তাই হয়ত আরও খারাপ লাগছে। আমি দশে পাঁচ দিচ্ছি এই পদটিকে।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাও পাঁচের বেশী দিলেন না।
রিমি বলল, “এই পর্বে দেখা যাচ্ছে এই মাশরুম টি একেবারেই ফ্লপ করে গেল। কোন জাজেরই গলা ভেজাতে পারল না।” বান্টি ঘোষের সামনে থেকে কাপটা নিয়ে সেটের পাশের বেসিনে হড়হড় করে ঢেলে দিয়ে রিমি বলল, “বেসিনের পাইপের গলা ভেজানোর উপযুক্ত এই চা তার সঠিক দায়িত্ত্ব পালন করুক।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দেখলেন প্রতিমা পালিতের বিশেষ কোন ভাবান্তর হলনা। ওনাকে এম্নিতেই বেশ ক্লান্ত লাগছিল। এই মোটা শ্লেষ ওনাকে সেরকম ভাবে আঘাত করেনি বলেই মনে হল।
রিমি এবার ঘুরে গেল ঝিলমের দিকে।
- “তুমি কি বানিয়েছ ঝিলম?”
- “আমি বানিয়েছি ইংল্যান্ডের খাবার মাশরুম টার্ট।”
- “বেশ বেশ। এস দেখি জাজেরা খেয়ে কি বলেন।”
রূপা একটু খেয়ে বলল, “বাঃ খুব ভালো হয়েছে। টার্ট খেতে আমি খুব ভালোবাসি। একদম ছোটবেলায় নার্সারি রাইম পড়েছিলাম
The Queen of Hearts, she made some tarts
All on a summer's day.
The Knave of Hearts, he stole the tarts
And took them clean away.
The King of Hearts, called for the tarts
And beat the Knave full sore.
The Knave of Hearts, brought back the tarts
And vowed he'd steal no more
তখন জানতামনা কিরকম খেতে, একটু বড় হয়ে তারপর খেয়েছি। আমি এই মাশরুম টার্টকে দশে নয় দেব, একটু মিষ্টি কম বলে দশ দিলাম না, কেমন ঝিলম?”
কুণাল খেয়ে বাহবা দিয়ে বলল, “রিমি শুরুতেই বলেছে ডেসার্টকে অনেকে রক্ষিতার সাথে তুলনা করে। আমি কিন্তু ডেসার্টকে একজন পার্ফেক্ট উওম্যানের সাথে তুলনা করি। সে হবে শান্ত, উচ্ছল নয়। তার আভরণ হবে রুচিসম্মত, একগাদা উগ্র প্রসাধান নয়। সবকিছু সহজে জানতে দেবে না, একটা মিস্ট্রি, একটা মোহ, একটা মায়া থাকবে তার চারপাশে। একেবারে পার্ফেক্ট না হলেও তোমার টার্ট প্রায় নীয়ার পার্ফেক্ট হয়েছে। আমি দিলাম দশে নয়। আর আমি জানি এই টার্ট করতে অনেক সময় লাগে। তুমি যে মাত্র তিরিশ মিনিটে এই টার্ট রান্না শেষ করেছ, এর থেকেই বোঝা যায় তুমি অনেকদূর উঠবে।”
আবারো হাততালি।
বান্টি ঘোষ আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঐ মাশরুম টিএর থেকে একে নিরেশ প্রতিপন্ন করতে না পেরে বিশেষ কিছু না বলে দশে আট দিয়ে ছেড়ে দিলেন।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দিলেন দশে নয়।
রিনি উচ্ছল ভঙ্গীতে বলে উঠল, “ওস্তাদের মার শেষ পাতে”র সীজন টুএর গ্র্যান্ড ফিনালের রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে। প্রতিমা পালিত তিনটে ধাপের শেষে ৯৭ পয়েন্ট পেলেন। একটু জোরে হাততালি হয়ে যাক আমাদের সকলের প্রিয় প্রতিমা মাসিমার জন্য। আর এবার দেখা যাক ঝিলমের স্কোর। সর্বমোট ১১০! আজকে রাতে বিজয়িনীর তাজ ঝিলমের মাথায় তুলে দেবেন আমাদের সার্প্রাইজ গেস্ট। সঙ্গে থাকুন দেখতে থাকুন। ফিরে আসব ছোট্ট বিরতির পর।
হাততালি। আলিঙ্গন। খুশীর উৎসব। ঝিলমের চোখে আনন্দাশ্রু। প্রতিমা পালিত চুপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার মনে হল ওনার দিকেই তাকিয়ে আছেন যেন। উনি হেসে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “প্রতিমাদি আপনি চুপ করে আছেন, বাড়ির কেউ আসেনি?”
- “না না, আমার বাড়ির কেউ কোলকাতায় থাকেনা। সবাই বাইরে বাইরে থাকে। টিভিতে দেখছে শো।”
- “মন খারাপ লাগছে এতদূর উঠে এসে শেষে একটা ছোট্ট ধাপে একটু পিছিয়ে পড়ে হেরে গেলেন বলে?”
- “হ্যাঁ তা একটু লাগছে। তবে খুব উপভোগ করেছি শো। কতদিনের পরিকল্পনা, অধ্যাবসায়, উত্তেজনার আজকে সমাপ্তি। আজকে পরিণতি পাবে।”
- “পাবে বলছেন কেন, পেল বলুন। পরিণতি তো পেয়েই গেল।”
- “হ্যাঁ, ঠিকই। আমি আসলে ওই প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশানের কথা বলছি। কে নাকি সার্প্রাইজ গেস্ট আসবেন?”
- “ও হ্যাঁ, আমরাও জানিনা। দেখি ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসা করে দেখি। এই প্ল্যানটা জাজেরাও জানেনা।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা গিয়ে বান্টি ঘোষের পাশে বসে জিজ্ঞাসা করলেন, “মিস্টার ঘোষ, আপনি জানেন কে এই সারপ্রাইজ গেস্ট যে ঝিলমকে পুরষ্কার দেবে?”
- “সঠিক জানিনা, তবে রাজার সাথে কথা হচ্ছিল, ও বলছিল যে ও কোন রিস্ক নেবে না। এই শো যাতে হেডলাইন্স পায়, তাই বম্বে থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসছে নাকি কোন বিরাট মাপের তারকাকে।”
- “ওঃহো। তা হবে। আমাকেও ভেঙ্গে বলেননি, কিন্তু এরকম একটা ইঙ্গিত করেছিলেন।”
- “হ্যাঁ যাই দেখি, একবার জিজ্ঞাসা করে আসি কে আসছে। আমাদের জাজেদের সাথে নিশ্চয়ই আলাদা করে মোলাকাত করিয়ে দেবে। আমার আবার একটু বুক জ্বালা জ্বালা করছে। এত গুরুপাক হয়েছে একদিনে।”
ইতিমধ্যে ঘন্টাখানেক হয়ে গেছে। বলিউডের মেগাস্টার ফারদিন খান মঞ্চে আসতে প্রবল হাততালিতে হল ফেটে পড়ল। এটা ডিরেক্টার সাহেব মোক্ষম চাল চেলেছে। মেগাস্টারের আসার ব্যাপারটা একেবারেই সারপ্রাইজ থাকাতে দর্শকের বিস্ময়ের অভিব্যাক্তিটা একেবারে নিখুঁত ভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ল। আর কোল্কাতার এই রিয়্যালিটি শো-এ বলিউডের পয়লা নম্বর স্টারের আসাতে পরেরদিনের কাগজে সত্যিই হেডলাইন্স হবে।
পাঁচমিনিট আগে রাজা বোস জাজেদের বলে গেছেন কি করতে হবে। ফারদিন মঞ্চে আসা মাত্র হাততালি দিতে দিতে উঠে দাঁড়াতে হবে।
কাজেই নির্দেশমত রূপা, বান্টি, কুণাল আর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা উঠে দাঁড়িয়ে সকলের সাথে তাল মিলিয়ে হাততালি দিতে থাকলেন।
ঝিলমের বিস্ফারিত চোখ, প্রতিমা পালিতের বিষন্ন, অবসন্ন চেহারা, দর্শকের আসনে ঝিলমের মায়ের আনন্দাশ্রু সব কিছুই ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ছে।
ফারদিন খান ঝিলমের হাতে তুলে দিল একটা একলক্ষ টাকার বিশাল নকল চেক। এটা শুধুই ফটো তোলার জন্য। চারিদিক স্বপ্ন স্বপ্ন। ঠিক যেমন টিভিতে দেখা যায়।
হাততালি যেন থামছেই না।
রিমি অনুরোধ করল ফারদিন খানকে কিছু বলার জন্য।
হঠাৎ একটা গোঙ্গানির আওয়াজ। সকলে চমকে তাকাল। দেখল বান্টি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছে। মুখ থেকে গোঙ্গানির মত আওয়াজ বেরোচ্ছে।
সবাই দৌড়ে পৌঁছল বান্টির কাছে। চোখ দুটো যেন মানুষের না। গাঢ় হলুদ। অনেকটা বমি করে দিল হড়্হড় করে।
সেটে তখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা।
তিষ্যা বলল, “হ্যাঁ, বান্টি ঘোষের মৃত্যুর লাইভ দৃশ্য দেখে দেখে পুরো মুখস্থ হয়ে গেছে। ওর আত্মীয় স্বজন কেউ আপত্তি করছে না?”
- “হ্যাঁ, আপত্তিও করেছে, আর শো-এর প্রোডিউসারের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলেছে যে কোন ফাউল প্লে আছে বলে।”
- “অটোপ্সি রিপোর্ট আসতে কতদিন লাগে? এক সপ্তাহ হয়ে গেল, এখনও আসেনি?”, তিষ্যার প্রশ্ন।
- “আগামীকালের মধ্যে এসে যাবে আশা করছি। তখন অনেককিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। রূপা, ঝিলম, কুণাল, রাজা ঘোষ, এমনকি নেপথ্যে থাকা প্রোডিউসার বাজাজ সবারই কিছু না কিছু কারণে বান্টির ওপর রাগ ছিল, কারোর কম, কারোর বেশী। মোটিভ হিসেবে সবথেকে জোরালো রূপার। ব্ল্যাকমেইলিং কিন্তু খুব বিপজ্জনক ব্যাবসা। বিশ্বের নাইন্টি পার্সেন্ট ব্ল্যাকমেইলারই একদিন না একদিন খুন হয়েছে। কাজেই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মেঘনাদবাবু যা বললেন তার ওপর নির্ভর করে বলা যায় যে রূপার দিকে পাল্লা ভারী।”
- “তবে, অরুণবাবু, একটা কথা আপনাকে বলি। রূপা ফাইনাল রাউন্ডে পুরো সময়টাই আমার পাশে বসে ছিল। আর ব্রেকের সময়ও একমাত্র রাজা ঘোষ ছাড়া আর কারও সাথে বিশেষ কথা বলেনি। বান্টিকে মেরে ফেলার সুযোগ ওর ছিলনা।”
- “হ্যাঁ, দেখি অটোপ্সিতে কি বলে। আমাদের তদন্তে বেরিয়েছে যে রূপার সাথে বান্টি আগের রাত্রে পনেরো মিনিট কথা বলেছে। কাজেই ওর সাথে এই রিয়্যালিটি শো-এর বাইরেও কোন সম্পর্ক ছিল বান্টির এটা নিশ্চিত। আমরা বান্টির একমাসের ফোন লগ চেক করেছি” অরুণ বাসুর মন্তব্য।
- “কুণালকে বাদ দেওয়া যায় নিশ্চয়ই। ওর মোটিভ বড্ড নিরামিষ” রনির মতামত।
- “এখনই বাদ দিচ্ছি না। তবে এটা ঠিক যে অন্য অনেকের থেকে ওর মোটিভটা অনেক কম জোরালো। তবে আমার আনিল বাজাজকে যথেষ্ট সন্দেহভাজন মনে হচ্ছে” অরুণ বাসু গম্ভীর হয়ে বললেন।
- “কেন কাকু? বাজাজ তো পুরোটাই নেপথ্যে ছিল। বান্টির সাথে কোন শত্রুতা তো ছিল না। শো সংক্রান্ত গন্ডগোল তো ডিরেক্টারের সাথে হয়েছিল।”
- “তা হয়েছিল, তবে মনে রাখা দরকার যে ডিরেক্টার যাই বলুক, টাকাটা যাচ্ছে প্রোডিউসারের পকট থেকে। কাজেই রাজার থেকে বাজাজের রেগে যাওয়াটা বেশী স্বাভাবিক। মুনাফা কমে যাওয়ার রাগটা কতটা বিষাক্ত সেটা আরও কিছুটা ইন্ভেস্টিগেশান করলে তবে জানা যাবে।”
- “আর ঝিলাম?”
- “ঝিলামের সঙ্গে বান্টির শো এর বাইরে আর কোন মেলামেশা ফোনালাপ ইত্যাদি ছিলনা। সেটা জানতে পেরেছি। আর আগেও বলেছি ঝিলামের বান্টিকে খুন করার পরিকল্পনা থাকলে সে আগেভাগে সবাইকে বলে বেড়াত না।”
- “কিন্তু ওটাই হয়ত ঝিলমের অ্যালিবাই। হয়ত ভেবে চিন্তেই ওটা তৈরি করেছে যাতে সবাই এটাই ভাবে যে যখন এত খোলাখুলি বলছে তখন নিশ্চয়ই মন থেকে বলেনি” মিসেস বাসু বললেন।
- “তুমি দিনরাত হলিউডের অবাস্তব ক্রাইম সিরিজ গেলো সেটা বোঝা যায়।”
- “আচ্ছা আজকে আমরা উঠি। অনেক রাত হল। আপনার তদন্তে কোন প্রগ্রেস হলে আমাদের জানাবেন কিন্তু। তিষ্যার নইলে ঘুম হবে না।”
- “হ্যাঁ কাকু, আমি কিন্তু ইগারলি ওয়েট করব। কালকে অটোপ্সি রিপোর্ট বেরোবে বললেন না? আমাকে কিন্তু প্লীজ ফোন করে বলবেন কি বেরোল রিপোর্টে।”
- “নিশ্চয়ই। তোমাকে ফোন করে দেব’খন কালকে রিপোর্ট এলে।”
- “ইয়ে, অরুণবাবু, আমাকে একবার এই রাশ প্রিন্টের ভিডিও সিডি-টা দিতে পারেন? আমি দুদিন বাদে নাহয় তিষ্যার হাতে ফেরত পাঠিয়ে দেব। আপনাদের তো বোধহয় আরও কপি রয়েছে, তাই না?”
- “আরে অত কিন্তু কিন্তু করার কিছু নেই মেঘনাদবাবু। আপনি স্বচ্ছন্দে নিয়ে যান। একশোবার দেখুন। কিছু চোখে পড়লে আমায় জানাবেন, খুব কৃতজ্ঞ থাকব। এই নিন। আচ্ছা, গুড নাইট।”
[আগামী পর্বে সমাপ্য]
- ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
মন্তব্য
এই পর্বটাও সেইরকম ! আমার তো মনে হচ্ছে প্রতিমা পালিতই খুনী । নিজে হাতে চায় চিনি মিশিয়ে দিল
শেষ পর্ব পড়ার আগে আমারও রাত্রে ঘুম হবেনা ।
গোয়েন্দা গল্পে তো এটাই মজা। অনেকের ওপরই সন্দেহ হয়। অনেক সাস্পেক্ট বর্তমান। অনেকের মোটিভ থাকে।
তবে স্পেশাল চিনি পাওয়া বেশ শক্ত।
গল্পের শেষটা আন্দাজ করা যাচ্ছে যে!!
আলোকিতা
ভালো কথা, আলোকিতা। কিন্তু বাকিদের আলোকিত করে দেবেন না প্লীজ!!
হমম চিন্তায় পড়ে গেলাম,
শেষ পর্বের আগ পর্যন্ত
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। শেষ পর্ব সামনের শুক্রবার রাত্রে আপ্লোড করব আমরা।
সুপারভাইজার এর তাড়া খেয়ে অফিসে এসেছি । এসে পেপারের কাজ খুলিনি। খুলেছি সচলায়তন!! আমি কাল রাতে বার বার খুলে দেখেছি এবারের পর্ব এলো কিনা!
আমার তো সবসময় ভালো লাগে আপনাদের লেখা । এবার ও
কিন্তু কুনাল আর রুপা যেভাবে মনের কথা মেঘনাদ কে বলে দিল এমন কেউ কি দেয় আসলে?
শেষ পর্বের অপেক্ষায়
আশা করি শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলাতে পারব। ভয়ে ভয়ে আছি, যদি শেষটা আবার কারো না ভালো লাগে?
শেষটা মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের মত হলে মন্দ হয়না । আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
অপেক্ষা করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের মত হলেও হতে পারত। লেখা অবশ্য শেষ হয়ে গেছে। পরে কখনও ওরকম কিছু লেখা যাবে, কি বলেন? তবে গোয়েন্দা গল্পে শেষটা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের মকত হবেই এটা জেনে শুরু করলে কতটা ভালো লাগবে কে জানে?
সচলায়তনে কি করে ছবি আপ্লোড করা যায় কে জানে? আমাদের ইচ্ছে ছিল প্রত্যেকটা রান্নার সঙ্গে ছবি দেওয়ার, সে আর সম্ভব হল না।
ফ্লিকারে ছবি আপলোড করুন। মাত্র কয়েকটি ক্লিকে জয়েন উইথ ফেসবুক ফিচারের মাধ্যমে ফ্লিকারে একাউন্ট খুলতে পারবেন। ছবি আপলোড হয়ে গেলে ছবির ওপরে "শেয়ার" বাটনে ক্লিক করুন। গ্র্যাব এইচটিএমএল/বিবিকোড লেখার নিচের পুরো কোডটুকু কপি করে লেখার যে জায়গায় ছবি চান সেখানে পেস্ট করুন। অবশ্যই কোড কপি করার আগে ছবির সাইজ চেক করে নিতে ভুলবেন না, বেশি বড় সাইজের ছবির কোড দিয়ে দিলে লেখার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক বাইরে চলে যাবে, আমারটা যেমন গিয়েছিল
অনেক ধন্যবাদ ইয়াসির ভাই।
তবে এবার তো হয়েই গেল। পরের পর্বে শুধু যবনিকা উত্তোলন, কোন খাবারের বর্ণনা নেই। তবে পরে অন্যান্য গল্পে নিশ্চয়ই কাজে লাগাব।
হমম।মাশরুম হতে সাবধান
হুম্মম্।
আপনারা খুব মেথডিক্যালি লেখেন ভাই! যেখানে যা থাকা দরকার ঠিক তাই। এ জন্য প্রেডিক্ট করা সহজ।
এটা কি প্রশংসা না নিন্দা ঠিক বোঝা গেল না।
প্রেডিক্টেব্ল গোয়েন্দা গল্প নিঃসন্দেহে নিন্দার।
বাফারের মত। লেখা পড়ে মনে হয় ফেলুদা পড়ছি, আবার গতানুগতিক গোয়েন্দা গল্পের মত ও মনে হচ্ছে। যেমন প্রতিমা পালিত কে খুনি বানানোর প্ল্যান থাকলে এ পর্বে উনাকে অস্বাভাবিক দেখানোয় পাঠকরা হিন্ট পেয়ে যাচ্ছে। আপনাদের লেখার সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হচ্ছে ধারাবর্ণনা। পাঠক রীতিমত চোখের সামনে দেখতে পাবে। কিন্তু গোয়েন্দা গল্পে যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাঠক কে অন্ধকারে রাখা - ওটা হচ্ছে না। হিরে চুরির (বরফে লুকিয়ে রাখা) গল্পটাতেও একই সমস্যা ছিল।
এ পর্যন্ত গল্পের বুননের দিক থেকে আমার চোখে আপনাদের বেস্ট গল্প গানের টা আর তারপর ট্যাক্স ফাঁকিরটা।
অনেক ধন্যবাদ। আমার পার্সোনালি ওই ডাইনোসরের হাড়ের গল্পটা খুব প্রিয়।
বাফারের মত মানে? ঠিক বুঝলাম না।
ধারাবর্ণনা ভালো লেগেছে? বাঃ, অনেক ধইন্যা। এটা আমাদেরও লিখে মনে হচ্ছিল কোন টি ভি সিরিয়ালের স্ক্রিপ্টের মত হয়ে গেছে।
হীরে চুরির গল্পটা একটু অ্যাক্সিডেন্টালি বেশী হিন্ট্স্ দেওয়া হয়ে গেছিল। এবারে হিন্ট্স্ গুলো সুচিন্তিত, ডেলিবারেট। আমরা সবসময় চাই পাঠককে বেশীরভাগ তাস দেখিয়ে দিতে। আমরা যখন গোয়েন্দা গল্প পড়ি তখন সেইসব বেটার লাগে যখন আমিও সুতোগুলো ধরতে পারি। একেবারে শেষে কোথা থেকে কি হইয়া গেল টাইপের এন্ডিং কেমন নিজের ইন্টেলিজেন্সকে ইন্সাল্ট করছে মনে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রম আছেই। শার্লকের হোম্সের সব গল্পই তার প্রমাণ।
আমার অ মনে হচ্ছে প্রতিমা পালিতই খুনী। দেখা জাক
দেখা যাক।
তিন নাম্বার রাউন্ডটা পরে বেশ অবাক হলাম। প্রতিমা মাসি সেকেন্ড রাউন্ডে এত ভাল রান্না করার পরে শুধু চা বানাবেন এটা মানাই যায়না। কোন রিয়েলিটি শো এর ফাইনালিস্ট এই রকম কাজ করবেনা। আশা করবো পরের পর্বে এর কোন যুক্তিসংগত কারন তুলে ধরবেন, সেটা হয়তো ওনার অসুস্থতা, বা ঝিলম ওনার আত্মীয়া বা এমন যেকোন কিছু। আর প্রতিমা মাসি কে খুনি বানাবেন না প্লিজ। এই পর্ব পড়ে আমারও সবার মত মনে হচ্ছে উনিই খুনি, না হলে চায়ে মাশরুম চুবাতে হবে কেন!!!
আপনাদের লিখার জন্য এক সপ্তাহ ওয়েট করা বেশ কষ্ট। কিছু এক পর্বের গল্প ঝেড়ে দিন না।
এটা তো তিন নাম্বার রাউন্ড না, এটা তো পঞ্চম রাউন্ড!
গল্প ভালো লাগছে বলে অনেক ধন্যবাদ। কম্বুচা মাশরুম টি-এর রেসিপি-টাই এইরকম। একটা ইমালসিফায়েড ব্রথ মত হয় গরম চা-এ মাশরুম ডোবালে। সেটাই রেসিপি।
আরে ভাই, এত লেখার সময় পাইনা সেই যে বিমল মিত্র বলেছিল না, লেখার শত্রু পড়া। বেশী পড়লে আবার লেখা হয়না। আবার না পড়ে বা পড়ে না মন্তব্য করলে আবার হাচল হওয়া যায়না। কবে থেকে আমরা লিখছি, কিন্তু এ-জম্মে আর বোধহয় হাচল হোয়া হল না।
আছি , পড়ছি।
তবে এই পর্বটা একটু গল্প বলা থেকে ধারাবর্ণনার মত হয়ে গেছে। যেমন প্রতিবারই জাজদের কিছু করার নেই, ক্যামেরা ফলো করছে না বলা ইত্যাদি।
ঠিক। আমার কপি-পেস্ট-এর স্বভাব। প্রথমে একেবারে ৯০ মিনিটের একটা ফাইনাল রাউন্ডে তিনটে পদ বানাতে হবে এরকম প্ল্যান ছিল, লেখাও হয়ে গেছিল। তারপর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে তিনটে সাব-রাউন্ডে, তাই অনেক কিছুই কপি-পেস্ট করেছি। সরি। যদি কোনদিন কোন প্রকাশক রাজি হয় ছাপাতে, তখন এইটা সংশোধন করে দেব।
শেষ পর্ব আসলে একসাথে পড়ব ভেবেছিলাম, এমন জমজমাট রহস্য অর্ধেক পড়ে মন ভরে না। কিন্তু পড়ে ফেললাম আজকে বাকি গুলি। বেশ জমে উঠছে, তবে
এই অংশগুলি রিপিটেশান আমারো ভাল লাগছে না। শেষ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শেষ পর্বের অপেক্ষায়!
কিছু মাশরুম ভীষন বিষাক্ত হয়। তার একটা কাউকে খাইয়ে দিতে পারলেই তো কেল্লা ফতে।
দেখা যাক কি হয়!!
নতুন মন্তব্য করুন