মা,খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।ভিজব?
এত ইচ্ছে হলো কেন তোর?
দেখছ না,কী গরমটাই না লেগেছে এই কয়েকদিন।
আচ্ছা,যা।তবে বেশিক্ষণ ভিজিস না।
আজকের বৃষ্টিটা অনেক আকাঙ্ক্ষিত।প্রশান্তির হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া নিয়ে এসেছে এই বৃষ্টিটা।সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠলাম ছোট্ট চিলেকোঠায়।বৃষ্টিতে ভেজার আগে বৃষ্টি দেখব,সেই জন্য চিলেকোঠার ঘরটি খুব উপযুক্ত।এখান থেকে বৃষ্টি ঝরার দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়-একে বৃষ্টিবিলাস বললে অত্যুক্তি হবে না।এমন দিনে মা খিচুড়ি রাঁধবেন,সাথে থাকবে গরম গরম ডিম মামলেট।বাবা দুপুরে অফিস থেকে খেতে এলেই একসঙ্গে বসে যাব গরম খাবার নিয়ে।মা পরিবেশন করবেন আর কার কোনটা প্রয়োজন অনিমেষ চোখে পরখ করবেন।আমাদের খাওয়ার দৃশ্য দেখে মায়ের চোখে-মুখে হৃষ্টভাব ফুটে উঠবে।আমাদের সবার খাওয়া শেষে মা খেতে বসবেন,তখন আমরা কেউ মা কী খাচ্ছেন দেখব না;হয়তোবা খাবারটা ঠান্ডা হয়ে যাবে নতুবা মা’র খাওয়ার রুচি তেমন থাকবে না।আজ ভাবছি,মা একসঙ্গে না খেলে খেতেই বসব না।
আজ বৃষ্টির সাথে বেগমান বাতাস গাছপালাকে খুব দোলাচ্ছে।চিলেকোঠার ঘরে আমার সাথে একটি দোয়েল পাখি ঠাঁই নিয়েছে।ভিজে চুপসে আছে,মাঝে মাঝে গা ঝাড়া দিচ্ছে।আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে কিন্তু উড়ে যাচ্ছে না।ছাদে বৃষ্টিতে ভিজব বলে এসে দোয়েলের পাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।পাখিটার বয়স কত হতে পারে-ভাবছি,বেশি হবে না,তবু কী সুন্দর করে মা-বাবা ছাড়া ঘুরে বেরাচ্ছে।অথচ,আমার স্কুলের প্রথম দিন খুব ভয়ানক ছিল।মা আমাকে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে যেই বাইরে গিয়েছিলেন,আমি ভয়ে কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।মা ছুটে এসে আমাকে সাহস দিলেন আর সারাক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন যাতে মাকে দেখা যায়।পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে গেছে।কড়া শাসক হিসেবেও মা নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।তখন খুব রাগ হতো।খেলার প্রতি আমার দারুণ ঝোঁক ছিল।কিন্তু মা আমাকে বিকেল পাঁচ’টার আগে খেলার মাঠে যেতেই দিতেন না।একবার খেলতে গিয়ে মাথা ফাটালাম।দৌড় দিতে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়েছিলাম শক্ত কিছুর ওপর।কোত্থেকে শুনে মা ছুটে এলেন।আমাকে কোলে নিয়ে বিদ্যুৎবেগে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে।আমার জন্য রাত জেগে বসে থাকতেন।মা পাশে থাকলে মনের ভিতর কী যে শক্তি চলে আসত তখন বুঝতাম।বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ঘরে-বাইরের অনেক কাজ মাকেই করতে হয়।ভার্সিটির বন্ধে বাসায় চলে এলে মায়ের দায়িত্ব যেন আরও বেড়ে যায়।সন্তানকে খুশি রাখতে পারলেই মায়ের বড্ড আনন্দ।একটা ছোট্ট মিথ্যে,মা সবসময় বলেন-মা’র নাকি অসুখ হয় না,এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে মানা করেন,এই কথাটি বেশি বলেন মা’র কাছ থেকে দূরে থাকলে।কিন্তু মা-ও যে অসুস্থ হন-এই সত্যিটা সহজভাবে বুঝতেই দেন না।
ইতিমধ্যে,দোয়েল পাখিটা উড়ে গেছে বৃষ্টির মধ্যে।আমিও বের হলাম খোলা আকাশের নিচে।ধূসর মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে।আমার সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টির আনন্দে।চিলেকোঠার ঘর থেকে মা ডাকছেন আমাকে,আর বেশিক্ষণ ভেজা যাবে না।বৃষ্টির সাগরে ডুবে মাকে দেখছি,অপরূপ সুন্দর লাগছে মাকে।মা হাত নেড়ে ডাকছেন,আমি ইচ্ছে করে একটু দেরি করছি।এমন দৃশ্য শুধু দেখতেই ইচ্ছে করছে।
বাসায় আসার পথে বাবাকে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে।ছোট ভাইকে খেলার মাঠে বৃষ্টির মুখোমুখি হতে হয়েছিল।বাকি ছিল মা।প্রকৃতি তাও পূর্ণ করেছে।আমাকে বৃষ্টির সাগর থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে মাকে শেষ পর্যন্ত চিলেকোঠার ঘর থেকে বেরুতে হয়েছিল।আকাশের মেঘ তার প্রিয় বৃষ্টিকণা দিয়ে মা’র মাথা ছুঁয়ে দিল-চরণ ধুয়ে দিল।এখন-আমি,বাবা আর আমার ছোট ভাই মাকে ঘিরে বসেছি।মাকে আমাদের সাথে খেতেই হবে বলে গোঁ ধরেছি।মা অবশেষে রাজি হলেন।আমরা মাকে খাবার পরিবেশন করছি,মা লাজুক ভঙ্গিতে খা্চ্ছেন।আর সেই সাথে বৃষ্টির সাগরে ডুবে সারা প্রকৃতি যেন নব আনন্দে জেগে উঠছে।
তুষার কুমার
ফরেস্ট্রি,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য
সাদামাটা কথাগুলি ভালো লাগল পড়ে
০২
'ডিম মামলেট' - শব্দটা পড়ে মজা পেলাম। ইচ্ছে করে লিখছেন? নাকি ভুলে ? যাই হোক এটা বুঝলাম অমলেট শব্দটির এই বর্ণ বিপর্যয় শুধু আমাদের অঞ্চলেই নয় আপনাদের অঞ্চলেও প্রচলিত
ডাকঘর | ছবিঘর
এইটাতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই প্রচলিত, নাকি ।
লেখা
==বেচারাথেরিয়াম
চমৎকার।
ইশশ আপনার বৃষ্টির গল্প পড়ে তো আমারই এখন ভিজতে ইচ্ছে করছে!
ছবিটা দারুণ!
আপনার ছবিটা বৃষ্টি ভেজা অনেক পায়ে হাটার কথা মনে করিয়ে দেয়।
লেখায় ।
অমি_বন্যা
অস্ট্রেলিয়া আসার পর কখনো বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি, মনে হয়না আর কখনো সুযোগ হবে বন্ধুর সাথে সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে ধুলোমাখা রাজপথে পায়ে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজা ।
প্যারাগুলোর মাঝে গ্যাপ দিয়েন, তাহলে পড়তে সুবিধে হয়।
facebook
এহহে বৃষ্টির লেখা পড়বোনা ঠিক করছি, খালি মন খারাপ লাগে। লেখা বেশ হয়েছে তুষার।
ধন্যবাদ সবাইকে.............
ধন্যবাদ সবাইকে
তুষার কুমার
নতুন মন্তব্য করুন