কাল রাত থেকে এখন দুপুর। কোনো দানাপানি পেটে পড়েনি। কোনোকিছু কিছু মুখে দিতে পারেনি। এ অভিজ্ঞতা একেবারে নুতন। আচম্বিত আকস্মিক। গত সন্ধ্যেয় যখন মাথাগরম হয়, একবার ভেবেছিল তমালের বাসায় যাবে। সেই একজন বন্ধু যার কাছে মন খুলে সব বলা যায়। বলার মধ্যে সে যত তিক্ততার কথা হোক। কিংবা দুঃখের। মনে এক আশ্চর্য হাল্কাবোধ এসে যায়। খানিকক্ষণ সে ভাবনা নাড়াচাড়া করে। তারপর বুকের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে আবার চুপসে গেল। না যাবে না। সে তো আসলে একদম একা। যতই ঘনিষ্ঠতা থাক প্রত্যেকের একটি নিজস্ব ভুবন আছে। সেখানে কাউকে প্রবেশধিকার দেয়া যায় না। কারও উপর জোরজবরদোস্তি চলে না। অবশেষে কিছু হলো না।
মাঠের এই বিবর্ণ ঘাসে শুয়ে থাকতে দেখে কেউ আবার কিছু ভেবে বসে কি না ভাবনা হয়। একবার তীব্র অস্বস্তি হয়েছিল। সে যেন একটা লাশ। কখনো বুকের তলায় গমকে হাসি উঠে। হাসেনি। তার সময় এখন সুসময় নয়। সকাল হতে কড়কড়ে রোদ। ঘন উত্তাপ। ঘাসের নিচ দিয়ে লাল পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। কিছু কামড় দিল। সে দংশনের যন্ত্রণাকে আর দৃষ্টি দিতে ইচ্ছে করে না। একবার ঠাণ্ডা পানির তীব্র পিপাসা জাগে। পানি জীবন...পানিই মরন। মুখস্ত পড়ার মতো জানা বাণী বারবার গুনগুন করছিল। আশ্চর্য সে কোনোদিন এমনভাবে ভাবেনি! জীবনকে দেখেনি। এখন ক্ষুধার্ত পেটে পানি ছাড়া আর কিছু জোটানো সম্ভব নয়। হয়তোবা। অথবা নয়। বাঁ হাতে গোল্ডক্রোমের দামি ডিজিটাল ঘড়ি। জানিয়ে দিচ্ছে সময়। সেটি একবার ঝেড়ে দিয়ে আসন্ন বিদ্রোহের রসদ জোগানোর কথা মনে এসেছিল। রুকুর কথা ভেবে হলো না। তার মুখ বারবার মনে পড়ছে। এটি তার শেষ চিহ্ন। নাকি? হয়তোবা!
সেদিন চমৎকার বিকেল ছিল। পশ্চিমে পেঁজা তুলোর মতো খণ্ডখণ্ড মেঘ। শরতের মেঘ। নীল আকাশের পটভূমিতে অদ্ভুত লাগে। তার ভেতর দিয়ে সূর্যরশ্মি কৌণিক হয়ে সার্চলাইটের মতো ছুটে এসেছে। দিগন্ত থেকে দেবদূতের মতো। দোতলার রেলিং ঘেরা ছাদ। সামনে সবুজ গাছপালা আর নানান বিল্ডিং’এর দৃশ্যাবলী। আকাশের দেয়ালে কয়েকটি বর্ণিল ঘুড়ি ভেসে বেড়ায়। তার মনে কেমন যেন হারিয়ে যাওয়া অনুভুতি জাগায়। রুকুর হাতে দু-তিনটি নীল দোপাটি ফুল। অতিসাধারণ এ ফুল তার খুব প্রিয়। রুকু ওগুলো তার হাতে দিয়ে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়।
‘হাসান বাবার বদলির অর্ডার হয়েছে। এবার আমরা রাজশাহী যাব।’
যত সহজে সে কথা উচ্চারিত হয় তত ভারী তার অর্থ ছিল না হয়তো। সে রুকুকে তেমন বুঝতে পারল না। সবকিছুতে চমৎকার নির্বিকার তাকতে পারে। বিষয়টি যেন কিছুই নয়। অথচ সে মুহূর্তে একটি সুন্দর বিকেলের আয়না সুউঁচু ছাদ থেকে নিঃশব্দে নিচে পড়ে গেল। তার মনে হয় সেও পড়ে যাচ্ছে...পড়ে যাচ্ছে কোথায় কোন্ অতলান্তে। আকাশ নিমিষে বির্বণ হয়ে যায়। কণ্ঠস্বর বিশুষ্ক। দুচোখ কি আদ্র?
‘দুঃখ পেলে? তুমি ভেব না। আমি তোমায় চিঠি লিখব । জানো, মাঝেমাঝে মনে হয় এই চাকুরি অনেকটা যাযাবরের মতো। বেদেদের মতো নৌকায় ভেসে চলা। আজ এই ঘাট তো কাল ওই ঘাট। আবার একটা এ্যডভেঞ্চার আছে। নতুন জায়গা ও পরিবেশ নতুন মানুষ আর সব কিছু...।’
‘তুমি লিখবে তো? বুকে কেমন শূন্যতার গহ্বর খোদিত হলো।’
‘আহ্ কি যে বলছ! জীবন চলার গতিময় ছন্দে কত বন্ধু আসে...পরে সবাই ভুলে যায়!’
‘তোমার ধারণা আমিও ভুলে যাব?’
‘ধারণা নয় বিশ্বাস। কে কার কথা মনে রাখে! জগৎ এমনিই...কা তব কান্তা।’
রুকু ওমনি। কখনো কখনো অত্যন্ত রূঢ়। যেনবা বেশ দূরের মানুষ। সে অপ্রস্তুত হয়নি। হৃদয়ের ভেতর যে কাঁচের ফুলের বাগান সেখানে ঝড় হয়েছে কি না এড়িয়ে গেছে। আসলে আজও সে ওকে বুঝতে পারে না। শুনেছে হয়তো বা গল্পের বইয়ে পড়েছে মেয়েরা কোমল-অনুভূতিশীল। কিন্তু রুকু বইয়ে পড়া মেয়ের চেয়ে অন্যরকম। একবারে আলাদা। তাকে এই ব্যতিক্রমই কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সে এমনিতে ভাবুক...কথা বলে কম। অথচ প্রথমেই দু’একটা সাজেশন দেয়র ছলে কেমন একাকার হয়ে গেছে দু’জন। মনেই হয় না, সে রুকুর চেয় তিন বছরের সিনিয়র ছাত্র। অনাসৃ সেকেন্ড উয়ারে পড়ে ইংরেজীতে। রুকু তখোন সবে কলেজে এসেছে। দিনাজপুর ছেড়ে রাজশী যতে চেয়েছিলো হাসান। কিন্তু হয়ে উঠেনি নানান টানাপোড়নে। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের চত্তর ডাকে, কিন্তু উপায় নোই। রুকুরা রাজশাহী চলে যাবে শুনে বুকের ভেতর রক্ত ছল্কে উঠে। সে যদি ওখানে থাকতো! তাহলে সময়গুলো রাঙা হতো, সুখ আর স্বপ্নের বর্ণিলতায়। রুকুর প্রতি হৃদয়ের গভীরে কেমন-কেমন অুভ’তি কেমন করে জমে গেছে বুকেতা’ বোঝা যায়রি। জানা যায় না। হয়তো বা সে এক তরফা রুকুকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। একাতরফা কথাট সেদিনই মনে হয়। তবু দুজনে দুজনকে না দেখে একটা বিকেলও কাটাতে পারেনি।অথচ সে কথাটা বলি বলি করে বলা হয়রি, তা’ ওপাশ হতেও আসেনি। সে রবাবরই ভাবতো, পৃথিবীতে এমন কিছু কাথা আছে যা শব্দোচ্চারণে প্রকাশ করতে হয় না। চোখের দৃষ্টিতে পড়ে নেয়া যায়। সে রকম কথা রুকুর চোখে ছিলো কি না, আজা মনে পড়ে না।
একদিন আলো ঝিলমিল করা উদাস সকাল। সেদিনই রুকুর প্রশস্ত কাঁধ ছাপানো এক রাশ চুলে বণ্য গন্ধ ছিলো। রুকু ফল্গুনী দুপুরের মতো মৃদু হাওয়ায় ্ড়চিলো তা’ সব। সে চুলে তেল দিতো না। ঠাট্টা ছলে হাসান জিজ্ঞেস করেছিলো ওকে, কেন সে ও রকম। বড়ো বড়ো চোখ দু’টো মেলে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় রুকু। তারপর হেসে বলে,-
‘তোমার বউ হলে সুগন্ধী তেলে মাথা ভিজিয়ে দেবো। বেঁধে দেবো বাটারফ্লাই বেণী, হবে তো!’
হাসান অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বিব্রত অনুভুতির মধ্যে চলে যেতে থাকে। কতো মধুময় সে মুহূর্ত। তার ইচ্ছে করে বলতে, ‘ রুকু তুমি আমার বউ হবে!’ কিন্তু সেই যে সুখের সময়গুলো বড়ো হুস্ব তার জীবনে। আনন্দ আবেগ বিহ্্বলতা না ইতস্ততভাব, কিছুই বলতে পারেনি সে। সেদিনও যখোন রুকুকে ঘিরে থাকা ফরাসী সৌরভ ভেসে ভেসে তার মনকে স্বপ্নাচ্ছন্ন করে চলে, সে কিছুই বলতে পারেনি। রুকু, রুকুরা চলে যাবে! সেই বর্ণনাতীতে বিদায় বেদনাটা বুকের মধ্যে উষর পাথুরে ধার হয়ে ঘষে যেতে থাকে হৃদয়। তবু সে যেন জোর করেই উদাসীন। নিস্পৃহতা ঘিরে ধরে চারপাশ।
‘কাল চলে যাবো, তোমার খারাব লাগছে হাসান?’
‘উ.. নাহ্ আবার দেখা হবে! নাকি?’
‘শুধু দেখা! আর কিছু না?... কি ব্যাপার আজ তুমি খুব অন্যমনস্ক!’
‘আসলে একটা বই পড়লাম; মনটা আচ্ছান্ন হয়ে আছে। ট্রাজেডী।’
‘তুমি ট্রাজেডী পড়ো, প্রেমের বই? ভালোবাসায় বিশ্বাস করো হাসান?’
‘কাউকে ভালোবেসেছো?’
‘হ্যাঁ ন্-না, কি যে বলো!’
সেদিনের দ্রিমী দ্রিমী শব্দ আজ বুকের উপর হাতুড়ি হয়ে আছড়ে পড়ে হাসানের। এ কি সৎ সাহসের নাকি আত্মবিশ্বাসের, ভেবে পায় না। তবে আশ্বর্যভাবে সেসময় ভাবতো, তার মনের কথা কি রুকু কি বোঝে না! নাকি.. সবকিছু তার সে মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে যায়। নিজেকে মনে হয়, আত্মবিশ্বাস ছাড়া এক অপদার্থ। সেদিন রুকু যেমন কোন ভুমিকা াড়া বলে বসে কোন কথা। হাসানের হাত ধরে টানে। মনে হয়, কোন কসমস ফুল অনুভুতিতে এসে আশ্চর্য কোমল ঝাঁঝালো সৌরভে ভরে তুলছে বুক।
‘তোমাকে একটা কিছু প্রেজেন্ট দেবো, চলো আমার সাথে।’
‘হঠাৎ কি উপলক্ষ্যে?’
‘থাকছি না তো তাই।’
সময়টা উদাস হয়ে যায়। উপহারটা নিয়েছিলো সে। ন’টা তেরো মিনিট তখন। ১৩ই এপ্রিল। সেই তারি আর সময় সে জীবনে ভুলবে না। ভুলবে না যােন ট্রেন চলে যায় আর বিদায়ের ঘন্টিতে রুকুর ধারালো চোখ দু’টো কেমন বেদনাময় হয়ে উঠে। শিরশিরে বাতাসে ধোঁয়ার মতো উড়ছিলো সেই প্রিয় রুক্ষ্ম চুল। প্লাটফরমের মদ্যে দাঁড়িয়ে হাসানের তখন মনে হয়, ট্রেন নয়, যেন যে নিজেই ক্রমশ দূরে পিছিয়ে যাচ্ছে। দুরে-বহুদূরে। আর সমান্তরাল রেল লাইন দুটো কাছাকছি থেকেও দুজন দুজনকে স্পর্শ করতে পারে না।
সেই দূরকে কাছে করতে রুকু আর চিঠি লেখেনি। হাসান তাকে প্রিয় কলমটা দিয়েছিল। বলেছিল,-
‘এ কলমটা আমার কবিতা লেখার। তুমি চিঠি লিখো, সেটা আমার কাছে কবিতা হয়ে থাকবে।’
‘আমি কবিকে পছন্দ করি না হাসান।’
‘সে আমি জানি, কবিরা অলস, কল্পনা বিলাসী তো! লিখলে কল্পনায় ধরে নেবো, তুমি আজকের মতো দোতালার ছাদে বসে কথা বলছো।’
‘মানে?’
‘মানেটা খঁজে নিয়ো কোন অভিধানে।’
রুকুর দৃষ্টি অদ্ভুত রহস্যময়। এমনভাবে তাকিয়েছিল, যার ব্যাখ্যা সত্যিই সেদিন অতল সাগরের গভীরতা। তবু সে সাহসী হতে পারেনি। পারেনি বলতে, ‘রুকু, আমি তোমাকে ভালবাসি রুকু।’
মাথার উপর সূর্যটা গণগণে হয়ে উঠেছে। পেটের ভেতরেও একটা জ্বালাময় উল্লম্ফন। ক্ষুধা! পৌণে এক দিনের ক্ষুধার্ত সে, যা সত্যিই ভাবা যায় না। আচ্ছা, এরমধ্যে কোথাও কি কোন ঝড় বয়ে যায়নি! মা-বাবা কি করছে? ভাবছে না তার কথা? হয়তো না। সকল মনোযোগের দুুয়ার সেই তো রুদ্ধ করে দিয়েছে। কে কোথায় কার জন্য চোখের দু’ফোঁটা জল ফেলবে! ক্ষুধায় মোচড় দিয়ে উঠে শরীর। কিন্তু সে চুপচাপ আকাশে দৃষ্টি রেখেই তলিয়ে যেতে চায়। মনে হয়, এমনভাবে মৃত্যু এসে গ্রাস করে নিক তাকে। আর ভাবতে ভাবতে তার দৃষ্টি নিজের প্রতি করুণায় চকচক করে উঠে।
পরীক্ষায় ফেল করল সে ওই বছর। শিক্ষা জীবনে সেই প্রথম অলসতা। কেমন তিক্ত অথবা বিষাদ অনুভূতি। যেন কয়েক বছর পেছনে পড়ে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইনাল ইয়ারে এড্মিশন নেয়ার সময় একদিন তমাল মর্ডাণ মোড়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলে।
তোর তো ভালো প্রিপারেশন ছিলো। ডাব্বা খেলি কিভাবে?’
‘কবিতা লিখছি বলে!’
‘যাই বল্্, ওই গাজা টানা মার্কা ফাল্তু জিনিসটা বাদ দে। কি যে লেখে কবিরা, সব দুর্বোধ্য। কোন মানে হয় না।’
‘কি যা তা বলছিস! আসলে আমার মন ভালো নেই। মনে হচ্ছে পড়ালেখা শিখে কি করবো? চাকুরি জোটানো তো সহজ নয়।’
‘পড়ালেখা কি শুধু চাকুরির জন্যে! তোরা সবকিছুকেই বৈষয়িক মনে করিস কেন?’
‘আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে পড়া লেখা বা ডিগ্রী সেই সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। তোর মতো ধনীর সন্তান হলে বিজনেস করতাম, য়ুনিভার্সিটির উত্তপ্ত আমতলায় কাঁদানে গ্যাসে মুখ কালো করে নাক আর চোখের জলে ভাসতাম না’
‘তোর আইয়োডলোজীর কথা রাখ। হ্যাঁরে, রুকুর খবর জানিস?’
‘কিছুই জানি না। রাজশাহী গিয়ে সব ভুলে গেছো!’
‘আহা, বেচারা ছ্যাকামাছিন হয়ে গেছিস তুই রে!’
‘শ্্শালা!’
রুকুর উপর প্রচন্ড রাগ হয় তার। কেমন করে ভুলে যেতে পারলো সে! অথচ তার ডায়েরীর পাতায় একেকটা দিনের ভাবনা তাকে দিয়েই শুরু। একেক বার তাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখেছে; আবার টুকরো-টুকরো করে বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছে। মনের ভেতর এক অজানা শূন্যতা, এক অস্থিরতা গুমরে মরছে শুধু।
বছর দুয়েক বাদে রাজশাহী এসে ওকে খুজে পায় নি সে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। পড়ছে কিনা তা কে জানে! হিসাব মেলায়নি। আর ঠিকানায়? কেন যে যায়নি, যেতে ইচ্ছে করেনি! হয়তো বা অভিমান, নাকি সেই ভীরু অস্থিরতা। তবে বিশ্বাস ছিল রুকু একদিন ঠিকই আসবে। দেখা হবে, হবে কথা। অনেক দিনের জমানো সেই কথা; কত অভিমান।
সেদিন বিকেলটা আশ্চর্য রকম হলুদ হয়ে ছিল। প্রশাসনিক ভবনের আমতলায় এসেছিল হাসান। নতুন মুকুলের গন্ধে মউ মউ করছে চারপাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো গতানুগতিক নিয়মে যখন পেট্রোল পোড়া নীলচে ধোঁয়া ছড়িয়ে এসে থামে, তখন অস্বাভাবিক কেঁপে উঠার মতো চমকে উঠেছিল সে। রুকু, রুকু নামছে। বেগুনি রঙ শাড়ির সাথে সেই শাদা চশমা চোখে। আরো সুন্দর। মাথায় সেই কাঁধ ছড়ানো চুল রাবার ব্যান্ডে হর্স টেইল করে বাঁধা। চিকন ঠোঁটে লিপিস্টিকের হালকা প্রলেপ। মোহনীয় ভাবাবেগ আর আকষর্ণে আচ্ছন্ন করে দেয় হাসানকে। ইচ্ছে হয়, ছুটে গিয়ে ওর হাত চেপে ধরে। এতোদিনে সে যে অভিধানে খঁজে পেয়েছে মানেটা। ভালোবাসা,আশ্চর্য কষ্টের মতো সুখময় কবিতা। সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব এক পাশে ফেলে বলতে পারে হাসান, সেই চির পুরাতনের নতুন কথা।
কিন্তু আশ্চর্য আলোকিত বিকেল তার পাণ্ডুর হয়ে যায়। রুকু তাকে দেখাও না দেখার ভাণ করে চলে যায়। চোখের সামনে দিয়ে। আর সেই ফরাসী সৌরভ মোহিত করে দেয় আমতলা চত্বর। খা-খা শূন্যতায় বুক ভরে উঠে তার।
হলে এসে রাগ ঝড়ে টোকাইয়ের উপর। বেচারা কাপড় ধোবার পয়সার জন্য দাঁড়িয়েছিল। ধমক খেয়ে সরে পড়ে ছেলেটি। তারপর সারা রাত নির্ঘুম যন্ত্রণা। রুকু কি তাকে চিনতে পারেনি? কিন্তু সেটা তো হবার কথা নয়! সে নিজেও এববার এগিয়ে যেতে পারতো! কেন তবে পারোল না? দ্বিধা, দ্বন্দ্ব নাকি ঘনীভূত আবেগ! অথবা সেই...। নিজের উপর দুর্দমনীয় রাগ হতে থাকে তার। অকারণেই টেবিলের উপর বাজতে থাকা এম ব্যান্ড রিসিভারটি ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। শানাই বাজছিল ভৈরবী রাগে।
মাঝ রাতে উঠে বসে কবিতা লেখা শুরু। কিন্তু কী লিখবে! স্থবির সত্ত্বায় সব শব্দ, ভাষা উধাও বাতাসের মতো হারিয়ে গেছে। খুব চেষ্টা করেও দুটো লাইন জন্ম নেয়না। আর ঠিক দুদিন পর দেখা হয় রুকুর সাথে। কথা হয় মুখোমুখি। কিন্তু না হলেই বুঝি ভালো হতো!
হাসান ভাবে এখন। আকাশের দুটো চিল একটি আর একটির ধরার জন্য যেন চক্রাকারে ঘুরছে। হাল্কা মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। রোদের উত্তাপ কোমল। চোখে বোজে সে। মন চলে যায় ডায়েরীর পেছন পাতায়।
সেদিন পান্ডুর সকাল কর্ম ব্যস্ততায় ঝম ঝম গাড়ীর মতো চলছিলো। আর অনেকক্ষণ থেকে বসেছিলো সে। বুকের ভেতর অস্থিরতা। চোখ মুখ শুকানো। পরিচিত সহপাঠিরা বলছিলো, খুব নাকি পড়ছে! কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর পর রুকুকে অপ্রতাশিত দেখে তার আচরণ, ভাবিয়ে তুলেছে প্রচন্ড তা’কে জানে! আর দেখাটাও কি অপ্রতাশিত? পুরোনো সেই দিনগুলো বারবার মনে নাড়া দিয়ে যায়। ভেঙ্গ যাওয়া, বিধ্বস্ত মনটায় কোথে কে জানেনা দোলা দেয় নীল দোপাটি ফুল। অথচ রুকু তাকে দেখেও দেখলো না! শুধু দু’চোখের পাতা ক্ষণেক থেমে ক্ষণেক কেঁপে মিলিয়ে দিলো স্মৃতিু। সেদিন যেন হাসান পণ করে বসেছিলো, রুকুকে প্রয়োজন পথের মাঝে দাঁড় করাবে। জিজ্ঞেস করবে, এর অর্থ? কিংবা বলবে সেই না বলা কথা। অথচ সব গুলিয়ে যায়। দশটা দশের বাসে যথারীতি রুকু সেদিন নেমে যখোন মেয়েদের দলের সাথে হেঁটে যায় কলাভবনের দিকে আর সে কাছে গিয়ে মৃদু ডেকে উঠে।
‘রুকু!’
রুকু চমকায় না। রুক্ষ্ম স্বভাবের, কাটা কাটা কথায় সেই মেয়েটি একটুও স্তম্ভিত হয় না। বরং খুব স্বাভাবিক ভাবে থেমে মেয়েদের দল থেকে বেরিয়ে কাছে আসে। একেবারে চোখে চোখে তাকায়। বলে, -
‘কিছু বলবে হাসান?’
‘কবে এসেছো এখানে?’
‘এই তো কিছুদিন। কোনো আলাপ আছে?’
একটি কাক সেসময় মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় দক্ষিণে। হাসানের মনে হয়, বুঝি কর্কশ পাখিটি উড়ে যাবে অচিনপুরে। যেখানে সুখ আছে, স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন আছে তা সব ছিঁড়ে খুড়ে শেষ করে দেবে। হাসানের দৃষ্টি আরও গভীর হয়। রুকু এত ঠাণ্ডা গলায় কথা বলা শিখল কোথায়! জেদি একরোখা স্বরে আপোষ আর পরাজয়ের সুর। অবাক হাসান বিস্ময়ের খেই খুঁজে পায় না। কিংবা আদৌ খুঁজে নেবার ভাবনা হয় কি!
‘তুমি আমাকে না চেনার ভাণ করে সরে গেলে কাল?’
‘সত্যি, চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু চার পাঁচ বছর, অনেকটা সময়, কত বদলেছে সবকিছু। ভাবলাম, তুমিই তো..তুমি যদি না হও।’
‘বাঁচলাম। চলো, কিছুক্ষণ বসি। কোথায়...ক্যাফেটারিয়ায়? অনেক কথা আছে।’
হাসান সাহসী হয়ে উঠে। সেই প্রত্যাশিত চোখ কি চাইত?। হলুদ বিকেল কিভাবে হয়ে যেত আলোময়। ভেবেছিল, সব বলবে, কিন্তু ...।
‘এখন তো সময় নেই হাসান। এই ক্লাস করেই ফিরতে হবে। ওদিকে ও ফিরে বসে থাকবে। ম্যাটিনিতে সিনেমা যাব। তুমিও এসো না, আলাপ করিয়ে দেব।’
রুকু এত কথা বলে না। তবে যতটুকু বোঝার সবটুকু আঘাত করে হাসানের বুকে। একটি মিনি মিছিল ধুপ্্ধাপ্্ করে সেসময় শেষ সকালের শরীর বিদীর্ণ করে চলে যায়। কত দাবি তাদের। হাসান নিজের কথা, একটি স্বপ্নের... একটি চাওয়ার কথা, পুনজাগরিত ভাবনার টুটি চেপে ধরে। তার মনে শুধু বোবার মতো সেই দিনগুলোর ছবি ভোসে উঠে। রুকু ভালোই করেছে। তাই বুঝি চিঠিগুলোর জবাব সে পায়নি।
এরপর রুকুকে আর দেখেনি হাসান। নাকি বোঝেনি! তখন শিমুল-পলাশ ফোটার সময়। তাকাবার মতো আগ্রহী মন মরে গেছে হায়। সব সময় মনে হয়, কি যেন ছিল, এখন নেই। সেটি কেন নেই, কিংবা আদৌ কিছু ভাবনার অবসরও নেই। নীল রেক্সিনে বাঁধানো কবিতার খাতা একটিদন টুকরো-টুকরো করে অক্ষমতার ঝালে আরও দগ্ধিভূত হয়। ফিরে আসে নিজ বাসভূম দিনাজপুর শহরে। কিন্তু শান্তি তবু নেই। বিবাগী মন পথে পথে ঘোরে। হাসপাতালের মোড়ে প্রচণ্ড দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকে দুদিন। যদি কোন বাস পিষে দিয়ে যায়!
কবিতার মতো সুন্দর একটি স্বপ্ন তার ঝরে গেছে। যা তাকে আকুল বিকেলের ডাক দিত। সে বিকেলে শূন্যতা ছিল। শূন্যতার মাঝে একদা পূর্ণতা ছিল। হায়, তেমন কিছু নেই আর! কখনো মনে হয়েছে, রুকুর সাথে একাবার দেখা হলে ভালো হতো। কেমন আছে সে, সুখী হয়েছে তো! আর এমনি ভাবনার সময়ে একটি এলোমেলো হাতের লেখা চিঠি এসে তাকে আরও ওলোট-পালোট করে দেয়।
দেখা হয়েছিল। সে কথা মুখ ফুটে উচ্চারণ করতে পারেনি, সেটি যে রুকু পড়ে নিয়েছিল আর কোনো দ্বিধা ছিল না। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সময়ে যা ধরা দেয় তা সরে গেলে আর ফেরে না-এই চূড়ান্ত সত্য। আর বিকেল যে এত বিষণ্ন হতে পারে কখনো ভাবেনি হাসান। দূর হতে দূরত্ব দেখা নয়, এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দূরত্বকে প্রচণ্ড উপলব্ধি করা শূন্যতার গান তুলেছিল বুকে। হাহাকারে ভরে যায় সময়। যাবার সময় রুকু কয়েক ফোঁটা অশ্রু ছড়িয়েছিল বিবর্ণ আকাশে। আশ্চর্য, পাথরের মতো উষর চোখ তার কাঁদতেও জানে!
‘হাসান, আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভুলে যেও।’
সূর্যাস্তের দিকে কিংবা তার ভেতরে দৃষ্টি ডুবে যেতে যেতে সে শুধু দেখে, রুকু ... রুকু চলে যাচ্ছে। দূরে-বহুদূরে। নিভে যাচ্ছে তার এমন একটি কিছু যা আর তার নয়। হৃদয় যদি জলের আয়না হয় তাহলে যে ছায়া সেখানে উঠেছে ভেসে তা যেন সত্য নয়। তাকে ভুলে যেতে হবে।
ভুলে যাবার চেষ্টা করেনি সে। তেমন হয় না। হয়তো ভুলে যাবে একদিন; সময়ই তো ক্ষত সারিয়ে তোলে ভেবেছিল। এ ছাড়া কী করারই আছে তার! নিজের ভেতর গুটিয়ে যাওয়া। এই ফুল পাখি আর মানুষের পৃথিবী অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। বুকের ভেতর জন্ম নেয় এক অবিশ্বাসের তমসুক বীজ। ধীরে ধীরে বড় হয় সেটি। সে বদলায়। বদলে গেছে। আঘাতে মানুষ বদলায়। সে আঘাত কি শুধু রুকু, এটিতে যেন প্রত্যয় হয় না তার। একদিন বিকেলে মা বলে, -
‘কী হয়েছে হাসান? বাবা সব সময় অমন মুখ গোমড়া করে থাকিস্ কেন?’
‘আমার আর পড়ালেখা করতে ইচ্ছে করছে না!’
‘সেকি কথা! আমরা কত আশা করে বসে আছি, আর তুই কি না ...।’
‘কী হবে পড়ে বলো? চাকুরি খুঁজি, অনার্স ডিগ্রীতে জুটে যাবে কোথাও একটা কোনোমতো।’
বাবা বসে সান্ধ্য দৈনিকে চোখ বুলোচ্ছিলেন। রাশভারী লোক। বাবার সাথে তেমন কথাও বলে না হাসান। আচমকা গর্জন করে উঠেন, তাদের কথা কানে গেছে।
‘পড়ালেখা বাদ দিয়ে কি করবে তুমি? কবিতা লেখার নামে সময় অপচয়? ওরে গর্দভ কাব্য ভাত দেবে না, বুঝেছ?’
‘তুমি কেন এর মধ্যে ওসব আনছো! ব্যাপারটা শুনিই না আমি।’
‘ওই করো! আমি বুঝি না, কিভাবে মাথাটা বিগড়েছে। স্কাউন্ড্রেল, পাঠালাম পড়াশুনার জন্য, আর সে কি না...অসভ্য ইতর। এমন ছেলের চেয়ে শূন্য ঘরই ভালো।’
‘আবার তুমি ছেলেটাকে...মেয়েটা তো ভালোই ছিল। খামোখা তুমি ওর বাবাকে যাতা বলতে গেলে।’
হাসান আর দাঁড়ায়নি। নিজের ধরে গিয়ে গুম মেরে বসে থাকে। ওদিকে বাবাও যেনবা মাথার গরম ঠাণ্ডা করতে বারান্দারয় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখা শুরু করে। হাসানের নিরিবিলি চিলেকোঠা টাইপের ঘরে শেষ সূর্যের আলো তেকোনা পথ বেয় নতুনের হাতছানি দেয়। সেটি অন্ধকারের, না আলোর আজ এই পিঙল বিকেলের ক্ষুধার্ত পেটে মূল্যায়ন করতে মন চায় না। শুধু মনে হয়, বাড়ি ছেড়ে ভালোই করেছে। প্রতিশোধ। নিজের অক্ষমতা আর সময়ের প্রতিকূলতায় নিদারুণ প্রতিশোধ। আবার কখনো, কি সব ছেলেমানুষি মনে হতে থাকে। তার সেই বিকেল মনে মড়ে। যেদিন রুকু চলে যায়। সেই বিষণ্ন চোখ। ফরাসী সৌরভ আচ্ছন্ন স্টেশন চত্বর। হয়তো জীবনের এটিই বড় পাওয়া। কোনো-কোনোদিন এক অর্থহীন প্রতীক্ষায় স্টেশনের কুরচি গাছের নিচে বসে থাকা। ট্রেন আসে ট্রেন চলে যায়। যে আসার সে হায় আর আসে না। এও নিশ্চিত জেনে সে তবু বসে থাকে। আর দূরে তাকিয়ে দেখে রেললাইনের লোহার পাতদুটো অনেক অনেকদূর গিয়ে একসময় এক হয়ে মিশে গেছে। সত্যি কি তাই, নাকি হয়তো!
দুটো বেজে ঊণপঞ্চাশ মিনিট। সে হাত থেকে ঘড়িটি খুলে ফেলে। আরপর ছুঁড়ে দেয় দূর অলক্ষ্যে। মাঠের কোন্ ঘাসের তলায় পড়ল কে জানে! মন পূর্ণতায় ভরে উঠছে। সে তাহলে রুকুকে ভুলতে পারছে! তা নয়। জনারণ্যের এই একলা পৃথিবীতে হারিয়ে যাওয় কোনো বিকেল একদিন ঠিক তা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরবে, এই বিশ্বাস হয়। হাসান বুঝতে পারে তার ভেতর আবার এক মন জেগে উঠছে যে কবিতা লিখত। উদাস সময়ের নিঃসঙ্গ ঘুঘুর একটানা ডাকে যে কাতর হয়। যে ফুলের বনে হলুদ পাখি কিংবা বর্ণিল প্রজাপতি দেখে উন্মনা হতো।
এই-ই জীবন। শূন্যতার দীর্ঘশ্বাস চেপে আবার বেঁচে থাকা। হাহাকারের টুঁটি চেপে স্বপ্ন দেখা। অশ্রুর দাগ মুছে হেসে ওঠা। তখন রুকুকে বড় আপন মনে হয়। আর ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসা পিঙল বিকেল সেই ফরাসী সৌরভে পূর্ণতায় ভরে উঠতে থাকে। *
ছোটগল্প: পিঙল বিকেলের আয়নায়। লেখক: মাহবুব আলী। অপ্রকাশিত।
মন্তব্য
অনেক ভাবালু,, আজকাল জীবনটা যখন অনেকখানি দেখা হয়ে গেছ এত রোমান্টিসিজম আসে না আর, নকল মনে হয়। তবে আর কেউ সেটায় বিশ্বাস রাখছে দেখলে ভালই লাগে।
চমৎকার বাস্তব মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হাসান তো মুসলমান? রোযা রাখে নাই কখনো? এরম হাই ভোল্টেজ ছ্যাঁকা খাইলে আবার খিদা-মিদা থাকে! পণিটেইল (আপনার লেখায় হর্সটেইল) এর সাথে তেল মাখা চুলে বাটারফ্লাই বেণী কনট্রাস্টের এঙ্গেল নতুন না হলেও দারুন। সব মিলাইয়া মনে হয় কেমন যেন একটু বেশি বেশি! ভাল একটা নাটক হতে পারতো।
খুব মনোযোগ দিয়া পড়ছি, তার মানে জোশ হইছে।
(স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিস্ট)
লেখাটি আরও সম্পাদনা করা দরকার বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ।
#ভাল লেগেছে পড়তে, শুভেচ্ছা আপনাকে
আশরাফুল কবীর
উৎসাহ পেলাম। শুভেচ্ছা আপনাকে।
"যত সহজে সে কথা উচ্চারিত হয় তত ভারী তার অর্থ ছিল না হয়তো বিষয়টি যেন কিছুই নয়। অথচ সে মুহূর্তে একটি সুন্দর বিকেলের আয়না সুউঁচু ছাদ থেকে নিঃশব্দে নিচে পড়ে গেল। তার মনে হয় সেও পড়ে যাচ্ছে...পড়ে যাচ্ছে কোথায় কোন্ অতলান্তে। আকাশ নিমিষে বির্বণ হয়ে যায়।" - এই কথাগুলো টাচ করলো খুব।
ব্যাপারটা এরকমই হয়। কতো সহজে বলে ফেলা কথা, কোন ভেতরে, কোথায় গিয়ে যে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়, কখনো কেউ আমাকে, কখনো আমি কাউকে...
গল্প ভালো লেগেছে।
কিন্তু আরেকটু ছোট হলে বেশি ভালো হতো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপনি ঠিক বলেছেন, আকার একটু ছোট করলে ভালো হয়। আগামীতে পর্ব করে লেখা দেয়ার ইচ্ছে রইল। শুভেচ্ছা।
নতুন মন্তব্য করুন