আগস্ট ১২, ১৯৭৫। ঢাকা গলফ ক্লাবের একটা সন্ধ্যা। দোতালা আজকে কেমন যেন একটু বেশী উজ্জ্বল মনে হচ্ছে। দু’একটা তারাবাতি দরজার চারপাশে ছড়ানো। ত্রস্তপায়ে বাটলাররা দৌড়দৌড়ি করছেন। ক্যান্টনমেন্টের মূল রাস্তা থেকে একটু দূরে। মেইন রোড ধরে কিছু দূর আগালে চোখে পড়ে গলফ ক্লাবের দিকে যাবার সংকেত। সবুজে উপর হলুদ অক্ষরে লেখা “ঢাকা গলফ ক্লা-”। ব টি কেমন যেন একটু ঝাপসা হয়ে গেছে।বাঁ দিকে ঘুড়ে কিছু দূর আগালেই বাঁধাই রাস্তাটি শেষ হয়ে যায়। ক্লাবের মূল ভবনটিতে যেতে সবুজ ঘাসের মধ্য দিয়ে নুড়ি বাঁধানো পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে যেতে হয়। ঘাস বিছানো মাঠটি একটু উঁচুতে হওয়ায় কেমন যেন একটু মনে হয় ছোটখাট টিলার উপর বাড়ি। প্রায় পাঁচ কাঠার উপরে ভবনটির মধ্যে কলোনিয়াল বিল্ডিং গুলোর একটা ধাঁচ রয়ে গেছে।
একটু কাছে গেলেই শোনা যাচ্ছে ভেতর থেকে আসা প্লেট, গ্লাসের টুং টাং শব্দ। মাঝে মধ্যে কিছু হাসি আর টুকরো কথা-বার্তা ভেসে আসছে । ল্যাম্ব বিরিয়ানীর ভেসে আসা জিভে জল আনা সুঘ্রাণ।
ভেতরের ঢোকার সাথে সাথে চোখ ক্ষনিকের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে ফটফটে উজ্জ্বল ফ্লুরোসেন্ট বাতির সাথে মানিয়ে নিতে। বিশাল হলরূমটি আজকে অন্য রকম মনে হচ্ছে। সাধারণত এখান ছোট ছোট অনেকগুলো টেবিল থাকে। ক্লাবের মেম্বাররা বসে গুলতানি মারেন অথবা ঘন্টার পর ঘন্টা ব্রিজ খেলেন। একেকটা টেবিলে সাধারণত চার-পাঁচটার বেশী চেয়ার থাকে না।
আজকে কিভাবে যেন ভোজবাজির মত টেবিলগুলো উধাও। চেয়ারগুলো আছে কিন্তু সারিবদ্ধভাবে সাজানো একটা স্টেজ এর সামনে। স্টেজটা মনে হচ্ছে একটা বড়সড় খাটিয়া টেনে এনে বসানো হয়েছে। পেছনের দেয়ালে বড় বড় করে জরি আর রংগীন কাগজে লেখাঃ Welcome to Marriage Anniversary of Faruk and Farida.
এর মধ্যে জনা পঞ্চাশেক অতিথি চলে এসেছেন। কেউ স্টেজের সামনে চেয়ারগুলোতে বসে গল্পগুজব করছে, কেউ বা দাঁড়িয়েই কথা বলছেন। আবার কেউ কেউ চলে গেছেন লাগোয়া বাড়ান্দাটিতে। কিছু অল্প বয়সী ছেলেমেয়েকেই ওখানে ভীড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর একটা হাসির হুল্লোড় উঠছে সেখান থেকে আর তখন ভেতর থেকে কেউ কেউ চমকে তাকাচ্ছে সেদিকে।
এর মধ্যে লাল শিফন পড়া একজন মহিলাকে বেশ ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। এমনিতে ছোটখাট গড়নের, দারুন সুন্দরী কিছু বলা যাবে না, কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়া। হাতে তিনটা প্লেট নিয়ে স্টেজের পাশে লম্বা টেবিলটাতে রাখলেন। এখানে সারি সারি করে সাজানো অনেকগুলো এলুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢাকা অনেকগুলো ডিশ। জায়গাটা পাচঁ মিশেলী গন্ধে মৌ মৌ করছে। অতিথিদের কেউ কেউ আড় চোখে তাকাচ্ছেন এদিকে ক্ষিদে একটু চাগিয়ে উঠলেই।
“লোকজন তো বেশ চলে এসেছে। খাবার কি এখনই দিবে না আর কিছুক্ষন দেখবে?” ফারুক ফরিদার পাশে এসে দাঁড়ায়। লাল শিফনে ফরিদাকে চমৎকার মানিয়েছে স্বীকার করতেই হয়। ফারুকের পরনে নীল টুইডের শার্ট মার্ক স্পেন্সারের, গত ঈদে বড় দুলাভাই এর উপহার। ঘিয়া রঙ এর স্ল্যাক্স এর সাথে শার্টটিতে ফারুককে কারো যদি সুদর্শন না মনে হয় তাহলে সেটা তাঁর বিবেচনা বোধের ঘাটতি হতে পারে।
“দেখি আরেকটু দেখি”। ফরিদা প্লেট আর চামচ গোছাতে গোছাতে বলে। তারপর হলরুমের ডানদিকের একটা কোণার দিকে ইঙ্গিত করল। “তুমি একটু দেখো না, ব্রিগেডিয়ার মতিন যে টেবিলটাতে বসে আছেন সেখানে আর দু’একটা চেয়ার দেয়া যায় কিনা। বেচারা একা একা বসে আছেন।“
ফারুক আর ফরিদা তাঁদের মহলে বেশ জনপ্রিয় দম্পতি।বাংলাদেশ আর্মির বেংগল ল্যান্সারের আক্টিং কমান্ড্যান্ট ফারুক বেশ রসিক আর আড্ডাবাজ বলে বন্ধু মহলে পরিচিত। আর অতিথি আপ্যায়নে ফরিদারও তেমন কোন ক্লান্তি নেই। মাত্র মাস ছয়েক হলো বদলি হয়ে ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে ঢাকার আর্মি মহলে তাঁরা বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।এছাড়াও পারিবারিকভাবে ফরিদার পরিবারের বেশ একটি পরিচিতি আছে সমাজের উপরের মহলে। ফরিদার বাবার সরকারী চাকুরীর সুবাদে আকবর আলী খানের মত বাঘা বাঘা সরকারী আমলারা আমন্ত্রিত। আর্মির বিভিন্ন র্যাংকের অফিসাররা তো আছেনই। আছেন ফারুকের বড় ভাই সোহেলের ব্যবসায়ী বন্ধুরা। তবে আজকের সন্ধ্যার মূল আকর্ষন নিঃসন্দেহে মেহের মমতাজ।
মেহের মমতাজকে আনতে ফারুককে বেশ একটু বেগই পেতে হয়েছে। তাঁর ডেট পেতে গেলে প্রায় একমাস আগে থেকে জানাতে হয়। কিন্তু ফারুকের হাতে এক সপ্তাহের বেশী সময় ছিলনা। পুরোটাই নাদিম ভাইয়ের কৃতিত্ব। নাদিম ভাইয়ের সাথে মেহের মমতাজের ছোট ভাইয়ের বুটিকের একটা ব্যবসা আছে। তারপরেও মেহেরকে অনেক সাধাসাধি করতে হয়েছে, কারণ আজকেই তার ঢাকা ক্লাবেও একটা শো আছে যেটার বুকিং দু’মাস আগে দেয়া। তবে ভাগ্য ভালো সেটি সন্ধ্যার মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। সেখান থেকে এসে সে বলেছে দশ বারোটি গান হয়তো গাইতে পারবে কিন্তু রাত একটু বেশী হয়ে যেতে পারে। ফারুক খুশীতে খুশীতে গদগদ হয়ে গেলেও বাইরে একটু দুঃখ দুঃখ ভাব দেখালো মেহেরকে। আরে দেরী হলে অসুবিধা কি? মেহের মমতাজ আসছে শুনলে পাবলিক সারা রাত ধরে অপেক্ষা করতে রাজী!
ফারুক সমবেত হাসির হুল্লোড়ে আরেকবার বারান্দার দিকে তাকালো। পোলাপান দেখি বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। বেশীরভাগই আর্মির বিভিন্ন অফিসারের ছেলেমেয়েরা। এরা অনেকেই ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে। তাই একসাথে হলে বেশ একটা জমজমাট অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাইরের খোলা হাওয়ায় বসে তাঁদের আনন্দ আরেকটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভাগ্য ভালো! ফারুক ভাবলো, আজকে গত তিন চার দিনের মতন বৃষ্টি নেই। ফারুকের কেন যেন এটিকে নিয়তির আরেকটি সঙ্কেত মনে হল। হয়ত অদৃশ্য শক্তি এটাই চায় যে তাঁর আজকের পার্টিতে যেন কোন খামতি না থাকে।
ঐ দূর, দূর দূরান্তে, মন মনান্তে...খুরশীদ আলমের মন কাড়া কন্ঠ ভেসে আসলো মিউজিক সিস্টেমে। ফারুক তাঁর সম্বিত ফিরে পেল। ছেলে ছোকড়াদের কেউ মনে হয় একটা ক্যাসেট চালিয়ে দিয়েছে। ভালই হয়েছে। গান শুনে অনেকেই কেমন যেন চনমনে হয়ে উঠলো। বারান্দায় মনে হল ছোট খাট একটা ড্যান্স পার্টি শুরু হয়ে গেল।
“এই, আমার মনে হয় আর দেরী করাটা ঠিক হবে না।“ ফরিদা ত্রস্ত পায়ে হেঁটে এসে বললো ফারুকের কাছে। “আপুনি দুলাভাইরা এসে গেছেন। তুমি সবাইকে খাবার শুরু করতে বল। “
ফারুক চোখ তুলেই রশিদকে দেখতে পেল। রশিদের মুখে একটা স্মিত হাসি ফুটে উঠলো ফারুককে দেখে। ফারুক একটু এগিয়ে গেল। “আরে দুলামিয়া, একদম নিঁখুত টাইমিং যাকে বলে, এক্কেবারে সোবার্সের ব্যাটিং এর মত। এক্ষুনি খাবার সার্ভ হবে।“ রশিদ এর মুখের হাসিটা আরও উজ্জ্বল হলো। “কেমন আছেন ফারুক মিয়া? আপনে তো ভাই আর্মিতে না গেলে এক্কেবারে রাজ্জাক, ওয়াসিম এদের ভাত মেরে দিতেন। হলিউডের হিরো ও তো পাত্তা পাবে না তোমার কাছে, দারূন লাগছে বস।“ ফারুক হেসে বলে, “সেটাই সেটাই, আসলে ভুল ক্যারিয়ার...এক্কেবার ভুল ক্যারিয়ার বেছে নিলাম।“ সম্পর্কে ভায়রা ভাই হলেও দু’জন কিন্তু একেবারে বন্ধুর মতন। বহু পুরনো বন্ধুতে দেখা হলে যেমন আড্ডা জমতে মুহূর্ত লাগে না, তেমনি আলাপ চারিতায় জমে গেলেন দু’জন। এভাবে চলে গেল আরও বিশ পঁচিশটি মিনিট।
“কি ব্যাপার ফারুক? তোমাকে না বললাম দেরী হয়ে গেছে? এখন প্রায় দশটা বেজে যাচ্ছে। মিসেস কবীর একবার এসে বলে গেলেন ছোট বাচ্চার কথা...চলে যেতে হবে...” ফরিদা চেষ্টা করেও গলায় বিরক্তির ভাবটা গোপন রাখতে পারলো। কোন কাজ দিয়ে ফারুকের উপর ভরসা করা যায় না। এই পুরো অনুষ্ঠানের যাবতীয় খুঁটিনাঁটি তাঁকেই দেখতে হয়েছে। তিনি শুধু পাঁচ হাজার টাকা হাতে তুলে দিয়েই খালাস। অনুষ্ঠানের বুকিং দেয়া থেকে শুরু করে মেন্যু তৈরী সব কিছুই তাঁকে এক হাতে সামলাতে হয়েছে।
এদিকে রশিদের সাথে আড্ডায় জমে যেয়ে ফারুকের দশ সেকেন্ড দেরী করে ফেললো বুঝতে ফরিদার উষ্মার কারণ। এর খেসারত দিতে হলো তাঁকে দ্বিতীয় ধমকটি খেয়ে। “কি আশ্চর্য...এখনো হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছ? খাবার না খেয়েই সবাই চলে যাবে নাকি?”
ফারুক একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে তাড়াতাড়ি মাইক্রোফোনের কাছে চলে গেল। আর মুহুর্তের মধ্যে দেখা গেল খাবার টেবিলের সামনে মোটামুটি একটি লম্বা চওড়া লাইন দাঁড়িয়ে গেল।
“দেখেন তো দুলাভাই, কি অবস্থা? এমনিতে কেমন যেন এখন ভয় ভয় লাগছে...খাবার আবার শর্ট পড়ে না যায়...তারপর দেরী হয়ে গেলে অনেক খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয় সবার...আধাঘন্টা আগে এসে গেলে বলে গেলাম...কি আশ্চর্য মানুষ! কোন সেন্স...”
রশিদ তাঁর শ্যালিকার এই ধরনের হাইপার টেনশন জনিত সমস্যার সাথে অনেকদিন ধরেই পরিচিত। তাই মুখটা হাসি হাসি রেখেই আশ্বস্ত করে বললো “ফরিদা তুই থামতো...এতো টেনশনের কিছু নাই...এভরিথিং উইল বি জাস্ট ফাইন।“
“ঘোড়ার ডিমের ফাইন...আপনিও যেমন আমার জামাই ও তেমন...” গজগজ করতে করতে ফরিদা ছুটে যায় অতিথিদের দিকে।
হঠাৎ সিগন্যালসের হামিদকে দেখতে পেয়ে রশিদ এগিয়ে যায়। হামিদ কি এখন ঢাকায় নাকি? বগুড়া থেকে ঢাকায় আসলো কবে?
এদিকে খাবার দাবারের বিপুল অবস্থা। ল্যাম্ব বিরিয়ানী তো আছেই, সেই সাথে কাবাব, চিকেন টিক্কা, ফ্রুট সালাদ কি নেই। ডেজার্ট পর্যন্ত রয়েছে তিন চার পদের। মনে হয় পুরো বাংলাদেশ আর্মিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা সেখানে।
ফারুক তদারকীতে বের হলো অতিথিদের দেখতে। কাছের টেবিলেই দেখা গেল তখনকার চীফ অফ জেনারেল স্টাফ, খালেদ মুশাররফ খাবার নিয়ে বসেছেন। সম্পর্কে ফারুখের মামা হোন তিনি। একই টেবিলে আছেন ব্রিগেডিয়ার আলতাফ হোসেন, ফিফথ বেংগলের কমান্ডার।
“খাবার ঠিক আছে স্যার? কিছু লাগবে...এনে দেব?” ফারুক একটু এগিয়ে গিয়ে বললো।
“আরে ফারুক, খাবে না তুমি? এতো দেখি এলাহী কারবার। কোনটা ছেড়ে কোনটা খাব...মাথাটা আউলায়া গেছে।” খালেদ খুশি খুশি খাবার জড়ানো গলায় বললেন।
“খান খান স্যার, ভাল করে খান। কিছু লাগলে বলবেন।“ বলে ফারুক এগিয়ে যেতে লাগলো। সেই সাথে একটা ভাবনা তাঁর মাথায় চলে এল। আজ থেকে তিন
দিন পরে খালেদ মুশাররফ কি করবে সেটা একটা বেশ বড় চিন্তার বিষয়।পরক্ষণেই এই মুহুর্তে এটা ভেবে লাভ নেই বিবেচনা করে চিন্তাটাকে আপাতত সরিয়ে রাখলো।
হলরুমের দরজার পাশেই আরেকটি টেবিলে এর মধ্যে উপহারের স্তুপ জমে উঠেছে। এক বিশাল ইরানীয়ান কার্পেট, নিয়ে এসেছে ফারুখের বেংগল ল্যান্সার লোকজন। ফারুক তাঁদেরকে মানা করেছিল কোন উপহার টুপহার যেন না আনে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বেংগল ল্যান্সার হলো ফারুকের নিজের হাতে গড়া বাহিনী। দেবতা বললেও কম বলা হবে এরকম অবস্থা ফারুকের তাঁর সৈনিকদের কাছে। আর তাঁর কোন অনুষ্ঠানে খালি হাতে আসা আর আর্মস ট্রেনিং এর সময় অস্ত্র ব্যারাকে রেখে আসা তাঁদের কাছে সমান অসন্মানের কাজ।
উপহারের মধ্যে যথারীতি টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানী তো আছেই। সেদিকে তাকিয়ে ফারুক আরেকবার ভাবলো, আজ থেকে তিন দিন পরে কি রকম মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে তাঁর কাছে এই সব অতি আকর্ষণীয় উপহারগুলো।
“ওয়াও...আরে কি আশ্চর্য...” “একি?” “Oh my God!”
ফারুক উপহারগুলো একটু গুছিয়ে রাখছিল। রাখতে রাখতে এই সমবেত আশ্চর্য ধ্বনি শুনে ঝট করে তাকিয়ে দেখলো সবার দৃষ্টি সামনের দরজায় নিবদ্ধ। তাঁদের দৃষ্টি অনুসরন করে যা দেখলো তাতে ওর নিজেরই ভিমড়ি খাবার যোগাড় হল।
একটা হিমালয় পর্বত সমান ফুলের তোড়া দরজা দিয়ে ঢুকছে। লম্বায় কমপক্ষে চার ফিট লম্বা, আর চওড়ায় তিন ফিটের কম হবে না। দরজাটা সেই তুলনায় একটু ছোট হওয়ায় তোড়াটা একটু কাত করে ঢুকাতে হচ্ছে। পেছনে দু’তিনজন ক্লাবের কর্মচারী সেটাকে ঠেলাঠুলা দিয়ে নিয়ে আসছে। এদের পেছনে ব্রিগেডিয়ার মাশরুখুল হক, প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের মিলিটারী সেক্রেটারী। ফুলের তোড়াটি ঠিক ঠাক মত হোস্টদের কাছে পৌছানোর ব্যাপারে তিনি একটু টেনশনের মধ্যে আছেন মনে হল। তাই পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো অপারেশনটি তিনি দক্ষ সেনাপতির মত পরিচালনা করতে লাগলেন।
“একি কি করছো, কি করছো? আরে আরেকটু কাত করো না... রজনীগন্ধার স্টিকটা বেড়িয়ে আছে তো, লেগে যাবে তো...” উদ্বিগ্ন কন্ঠে তাঁকে বলতে শোনা যায়।
অবশেষে সমস্ত জটিলতা এবং আশংকার অবসান ঘটিয়ে কিভাবে যেন তোড়াটি হলরুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বারান্দা থেকে এক রাউন্ড হাত তালির আওয়াজ ভেসে আসে।
ফরিদা ছুটে গেল সামনে। “ আপনি এটা কি করেছেন? ” ফরিদার গলায় অনুযোগের স্বর থাকলেও খুশীর ভাবটা গোপন থাকলো না।
সেক্রেটারী সাহেব গর্ব মেশানো একটা প্রসন্ন হাসি দিলেন। আড় চোখে অন্যান্য অতিথিদের বিস্ময় দৃষ্টি কিছু ক্ষন উপভোগ করলেন। তারপর একটু উদাস হয়ে বললেন, “ আর বলবেন না ভাবী, পাক্কা দুইদিন লাগলো এইটা বানাইতে।“
“দুই দিন? মাশরুখ ভাই, আপনি পারেন বটে...” ফরিদা চোখ কপালে তুলে বললো। “কেন এত ঝামেলা করতে গেলেন?”
সেক্রেটারী কিছু না বলে উপহারে সবাইকে টেক্কা দেয়ার আনন্দটা একটু সময় নিয়ে উপভোগ করতে লাগলেন। চারিদিকে আবার একটু চোখ বুলিয়ে নিলেন। গণভবনের আর কাউকে না দেখে একটু নিশ্চিন্ত হলেন। যাক গণভবনের বাগান সাফা করে যে তিনি এটি বানিয়েছেন সেটা আপাতত কেউ জানছেনা। কাশেম, ফজলু মানে গণভবনের মালীদের উপর বেশ চাপ গেল গত কয়েকদিন। একটু বকশিশ দিয়ে দেয়া দরকার তাঁদেরকে। তবে সবচেয়ে ভাল হল, এ পর্যন্ত একটি পয়সাও খরচ হয় নি তাঁর।
“ফারুককে দেখছিনা?” সেক্রেটারী সাহেব এই পর্যায়ে একটু শংকিত ভাবেই বললেন। তিনিই যে উপহারটা দিলেন ও আবার সেটা মিস না করে যায়। “আছে কোথাও ধারে কাছেই, গুলতানি মারছে আর কি।“ ফরিদার রাগটা তখনও পড়ে যায় নি পুরোপুরি।
এই পার্টির তিন দিন পরে সবাই বার বার এই সন্ধ্যার খুঁটি নাটি ঘটনার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিল। কখন কি হয়েছিল, কে কি ভাবে কথা বলছিল। তবে মিলিটারী সেক্রেটারী ভাবছিলেন নিশ্চয়ই এই বিশাল ফুলের তোড়া তাঁর জীবন বাচিয়ে দিয়েছে। কারণ এর তিন দিন পরেই ৩২ নাম্বার রোডের মাথায় তাঁকে যখন আটকানো হলো ১৫ই আগস্ট দুপুর বেলা তখন কিন্তু সেপাইরা তাঁকে মেরে ফেলার জন্য একদম তৈরী ছিল। শুধু ফারুক সেই মুহুর্তে এসে পড়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেন।
একটি ব্যাপারে কিন্তু সবাই একমত। ফারুককে দেখে তাঁদের কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি যে কি ভয়ংকর পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। বরঞ্চ মনে হয়েছে পূরো উলটো। এমনিতেই সে বেশ খানিকটা হাসিখুশী দিল-দরিয়া মানুষ। সে দিন তাঁকে আরও বেশী প্রাণচঞ্চল মনে হচ্ছিল।
কেউ জানেনা ফারুক পাঁচ দিন আগে তাঁর অনেক শখের অটোমেটিক স্লাইড প্রজেক্টর মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল পার্টির খরচ তোলার জন্য। গত বছর আবুধাবীতে একটি স্পেশাল ট্রেনিং এ থাকার সময় ফারুক এটা ষোলশ দিরহাম দিয়ে কিনেছিল। বাংলাদেশী টাকায় যার দাম পড়েছিল প্রায় পনের হাজার টাকা। ফারুক জানতো এটাই তাঁর জীবনের শেষ পার্টি হতে পারে। তাই খরচে কোন কার্পণ্য রাখেনি। ফরিদা এখনও জানে না যে ফারুক স্লাইড প্রোজেক্টর বিক্রি করে দিয়েছে। জানলে কি হবে এটা চিন্তা করে ফারুক একটু শংকা অনুভব করে। কিন্তু পরক্ষনেই তাঁর হাসি পেয়ে যায়। আর কিছুদিন পরে যার জীবনেরই ঠিক থাকবেনা তাঁর আবার স্লাইড প্রজেক্টর নিয়ে চিন্তা!
ঘন্টা তিনেক পরের কথা। পার্টি শেষ। বেয়ারা এবং ক্লাবের কর্মচারীরা গোছ গাছ করছে। কিছু আত্মীয় স্বজন রয়ে গেছে। ফারুকের বাবা-মা, ফরিদার মা চিটাগাং থেকে এসেছেন, ফরিদার বড় বোন জুবাইদা এবং তাঁর স্বামী মেজর খন্দকার আব্দুর রশীদ। তিনি ২ নং ফিল্ড আর্টিলারীর কমান্ডার।
ফারুক এসে রশীদকে ডাকলো। রশীদ ভাই এদিকে আসেন তো।
লনের অন্ধকার দিকে এগিয়ে গেল দুজন।
আমি ভাবতেছি ১৫ তারিখের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবো। শুক্রবার সকালে মুজিবকে আমি শেষ করবো।
রশীদ চমকে উঠলো। তোমার কি মাথা খারাপ ফারুক? হঠাৎ করে? এতদিন ধরে প্ল্যান প্রোগ্রাম, আরেকটু সময় নিয়ে করতে হবে না, কি আশ্চর্য।
এটাই ঠিক সময়। বেশী অপেক্ষা করলে উলটো ফল হতে পারে। ইস্পাত কঠিন কন্ঠে ফারুক বললো।
রশীদ ভয়ংকর চিন্তায় পড়লো। ফারুককে সে অনেক দিন ধরেই চেনে। বুঝলো ফারুককে টলানো যাবে না। তারপরও চেষ্টা করলো।
আমাদের তেমন কোন অফিসার সাথে এখনও নেই। ইকুইপমেন্ট কোথায়? এটা কিভাবে সম্ভব?
এগুলো কোন সমস্যা না। আমি একটা ট্যাক্টিক্যাল প্ল্যান রেডি করে ফেলছি। আমি এটা করবোই। আমাকে যদি একা করতে হয় তাহলেও করবো। আর মনে রেখ আমি যদি ধরা পড়ি, তোমাকে আমার সাথেই ফাঁসীতে ঝুলতে হবে।
রশীদ অনেক ক্ষণ মাথা নীচু করে চুপ করে রইলো। তারপর একসময় মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো।
বেশ তাহলে তাই। কাজে নেমে যাওয়া যাক। প্রথমেই আমাদের কিছু অফিসার দরকার।
ফারুকের মুখে চাপা হাসি আড়াল থাকলো না।
শহরের আরেক প্রান্ত। ধানমন্ডি ৩২ নং, প্রেসিডেন্টের বাংলো।
শেখ মুজিব তাঁর আত্মীয় স্বজন নিয়ে বসে আছেন। তাঁর ভাগ্নীর বিয়ে উপলক্ষে দু’দিন আগেই লোকজনে বাসা ভরে উঠেছে। মুজিবের সবচেয়ে ছোট বোনের মেয়ের বিয়ে। তাঁর ছোট বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সাথে কথা বলছিলেন । সেরনিয়াবাত একজন মন্ত্রী। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি উন্নয়ন, পাওয়ার, ফরেস্ট, মৎস এবং পশু সম্পদ। সেরনিয়াবাতের ছেলেও সেখানে ছিল, আবু হাসনাত। তিন দিন পরে এই আবু হাসনাত অবিশ্বাস্য ভাবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন।
মুজিব পারিবারিক আড্ডাতে বসলেও অবশ্যম্ভাবী ভাবে রাজনীতি, দেশের অবস্থা চলে আসতো। এটা তাঁর স্বভাব জাত। তিনি দেশ আর রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে তাঁর আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদেরই বেশী পছন্দ করতেন। মুজিব বন্যা নিয়ন্ত্রন নিয়ে কথা বলছিলেন।
“তোরা তো জানসনা। ছোড বেলায় ফুটবলে খেলতাম নদীর ধারে ব্রিটিশগো লগে। ঐ ড্রেজার কোম্পানীর ব্রিটিশ। তারঁপর যুদ্ধ আইলো, আর ড্রেজার লইয়া গেল বার্মাতে বার্জ বানাইতে। হেই যে গেল আর তো আইলো না। অহন কোন নদী নাই যেই খানে আমি খেলতাম। আছে খালি পলি, পলি আর পলি। সব কিছু ওই ড্রেজিং এর অভাবে। ওহন তো প্রতি বছর বন্যা হয় এই জন্য।
মুখ থেকে পাইপটা নামিয়ে একটা ছোট্ট কাশি দিয়ে মুজিব আবার শুরু করলেন।
“সেরনিয়াবাত, ইন্ডিয়া থন একটা ড্রেজার কিনতে হইবো। আমার টাকা নাই এক পয়সা নাই। কিন্তু ওই ড্রেজার আমার লাগবো। যেই ভাবে হউক ওই ড্রেজার আমার চাই। আমি সব পলি চিরুণী দিয়া উঠাইয়া নিয়া আসমু।“ একটা ড্রেজার দিয়ে সব নদী নাব্য করে ফেলার স্বপ্নে মুজিবের গলাটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলেন। যখন আবার কথা শুরু করলেন গলাটা আশ্চর্যজনক রকম ভাবে নিস্তেজ শোনালো।
“কেউ বুঝলোনা আমি দ্যাশের লাইগা কি করতে পারি।“
ঘরের মধ্যে কেমন যেন একটা নীরবতা নেমে এল। সেরনিয়াবাত মাথা নীচু করে মেঝের দিকে তাঁকিয়ে থাকলেন। অন্যান্যরাও কেমন যেন থমকে গেল।
“আমার শক্তি কি জানো? আমি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি। আর আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি জানো? আমি দেশের মানুষদের খুব বেশী ভালবাসি।“
দেশের মানুষের জন্য মুজিবের এই ভালবাসা ছিল অকৃত্রিম। গত চার বছরের শাসনে যত দুর্বলতাই থাকুক, মুজিব ছিল এমন একটি শক্তি, অনেকের কাছে এমন একটি ভালবাসার জায়গা, কেউ কখনো চিন্তা করে নাই যে মুজিবকে সরিয়ে ফেলা যাবে।
কিন্তু অগাস্টের সেই রাত্রে এরকম অচিন্তনীয় ব্যাপারটি ঘটা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ঘাতক মেজররা তখন ধেয়ে আসছে!
(রসিক সুজন)
(এন্থনি মাসকেরেনহাসের লীগেসী অব ব্লাডের একটি অধ্যায়ের (দুর্বল!) ভাবানুবাদ। অনেক কিছুই আমার কষ্ট কল্পিত, বইয়ের মূল ঘটনা অবশ্য ঠিক ঠাক রাখার চেষ্টা করেছি।)
মন্তব্য
আমি তো পড়তে গিয়ে দেখি পুরোই মাসকারেনহাস সাহেব !! অবশ্য শেষে এসে দেখি আপনি ওটাই ভাবানুবাদ করেছেন।
তবে আমার কাছে ঠিক ভাবানুবাদ মনে হয়নি। অনেকটাই মূলানুগ। কেবল অনুবাদে একটু আমাদের সত্যপীর ফ্লেভার দেখতে পেয়েছি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। স্বীকার করে নিচ্ছি কোনটা ভাবানুবাদ, কোনটা অনুবাদ আর কোনটা মূলানুগ এই বিষয়ে আমার জ্ঞানের কমতি আছে!
আগে পড়া থাকা সত্ত্বেও অনুবাদের চমৎকার ভাষার কারণে নতুনের মতো স্বাদ পেয়েছি।
তবে একটা জায়গায় খানিক অসংগতি আছে।
মিলিটারী সেক্রেটারী কি তখন জানতেন ফারুকের পরিকল্পনার কথা?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ। মিলিটারী সেক্রেটারীর ভাবনাটা মাথায় এসেছে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পরে।
-ইনি কে?
-পিলু মোমতাজ?
-একটু খুঁতখুঁত থেকে গেল। ১৯৭৫ সালে খুব স্বল্পমাত্রায় ক্যাসেট পাওয়া যেত সত্য তবে তাতে খুরশীদ আলমের গান পাওয়া যাবার কথা না। খুরশিদ আলমদের গানের জন্য তখনও ৭৮ আরপিএম-ই ভরসা হবার কথা। আর ঐসময় পার্টিতে বাজানো যায় এমন মিউজিক সিস্টেমে ঐ রুটিই বাজতো, ক্যাসেট নয়।
১৯৭৫ সালের অগাস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যা কিছু কলঙ্কজনক, নির্মম ও পাশবিক ঘটনা ঘটেছে এগুলো স্রেফ ফারুক-রশীদের পরিকল্পনায় হয়েছে এমনটা বিশ্বাস করিনা। ফারুক-রশিদ-ডালিম গং বুলেট বা ট্রিগার মাত্র। তারা পুরোপুরি অস্ত্র নয়, অস্ত্রচালক নয়, মূল পরিকল্পক নয়। ১৯৭৫ থেকে আজ পর্যন্ত ঐসব ঘটনাবলীর বেনেফিশিয়ারীদের লক্ষ করলে এর সত্যতা বোঝা যায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যতীত কোন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটে না।
পাঁচটা খুনীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকিগুলোরও ফাঁসি কার্যকর হবে আশা করি; কিন্তু এর পেছনের রাজনীতিক দাবাড়ুদের কোন বিচার হবে অমন আশা এখনো করতে পারছি না। জানি না আদৌ কখনো বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারবর্গ, চার জাতীয় নেতা ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার হবে কিনা। এর আগে পর্যন্ত আমাদেরকে মনে হয় নানা ভাবে কেবল ফারুক-রশীদদের বাহাদুরীর গল্প শুনতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাপার কী, আপনি চান্স পেলেই আমার মন্তব্যে দুইটা বুইড়া আঙুল উঁচায়া যান।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
facebook
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ব্রিগেডিয়ার মতিন মনে হয় একটা কল্পিত চরিত্র। বেশ কিছুদিন আগে লিখেছি। তাই ঠিক মনে পড়ছেনা। আর মেহের মমতাজ প্রথমে পিলু মমতাজই রেখেছিলাম। কিন্তু পরে মনে হল, একেবারে বানোয়াট ভাবে সত্যিকার চরিত্র ঢুকিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। ক্যাসেটের ব্যাপারটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
রাজনীতিকবিদদের কোন বিচার না হওয়ার ব্যাপারে আপনার সাথে আমি একমত। কিন্তু আমি নিশ্চিত না যে আপনি লিগেসী অব ব্লাড বা সেটার অবলম্বনে এই লেখাটাকে ফারুক রশীদের বাহাদুরীর গল্প বলছেন কিনা। লিগেসী অব ব্লাড পড়ে আমার কখনও তাঁদের কে বাহবা দিতে ইচ্ছে হয়নি, দিনের শেষে তাঁরা পৈশাচিক এক হত্যাকান্ডের নায়ক বলেই মনে হয়েছে। তবে কি কারণে তাঁদের এই অসন্তোষ, তখনকার সময়কার আর্থসামাজিক অবস্থা, সশস্ত্র বাহিনীতে চরম বিশৃংখলা এবং ক্ষোভ এসবকেও তো উপেক্ষা করার কোন জো নেই।
ইনি কি সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান?
হুমম। তখন তো তার সরকারী আমলা থাকারই কথা। এখন অবশ্য মনে হচ্ছে তাকে এখানে ঢুকানোটা মনে হয়ে সমীচিন হয় নাই।
রসিক সুজন
ভাল।
টুইড এর শার্ট বিষয়টা কি বাস্তবে সম্ভব? টুইডের বর্ণনায় বলা যায় এটা উলের তৈরী খুব নিখুত বুননের চট বিশেষ - যার মূল ব্য়াবহার ছিল সামরিক উর্দিতে অথবা পশ্চিমা সুটে। টুইড যদিবা শার্ট পাওয়া যেত, সেটা বাংলাদেশের অগাস্টের গরমে কেউ উতসবে গায়ে দেবে কিনা সেটা ভাবা যেতে পারে। জিনিসটা টুইডের জ্য়াকেট হতে পারে কি?
"মার্ক স্পেন্সার" = ইংল্য়ান্ডের "মার্কস এন্ড স্পেন্সার" ?
"ল্যাম্ব বিরিয়ানী" = ঢাকার ক্য়ান্টমেন্টে "ল্য়াম্ব" কোথা থেকে আসবে? নাকি ৭৫ সালে মিলিটারির নিজস্ব ভ্যাড়ার পাল ছিল?
নতুন মন্তব্য করুন