সার্জ হারশে এবং ডেভিড জে ওয়াইনল্যান্ড দুজনেই পৃথক পৃথক পদ্ধতিতে আবিষ্কার করলেন কীভাবে একটি স্বতন্ত্র কোয়ান্টাম কণাকে তার কোয়ান্টাম-মেকানিক্যাল ধর্ম সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ রেখে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। যেটা আগে বিজ্ঞানীদের কাছে পুরোপুরি কাল্পনিক আর অসম্ভব মনে হতো। কারণ এসব কোয়ান্টাম কণা মানে পদার্থের কণা কিংবা আলোর কণা (ফোটন) বহিঃজগতের সংস্পর্শে আসা মাত্র মিথস্ক্রিয়ার ফলে তাদের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। তাদের এই ধর্ম আর পরিমাপ করা সম্ভব হয় না। এই কারণে পূর্বে কোয়ান্টাম মেকানিকসের অনেক অদ্ভুত ঘটনাগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যেত না। শুধু মাত্র 'থট-এক্সপেরিমেন্ট' দ্বারা এগুল ব্যাখ্যা করা হতো। সার্জ হারশে এবং ডেভিড জে ওয়াইনল্যান্ড তা মিথ্যা প্রমান করে দিয়ে Quantum Mechanics এর নতুন যুগ আরম্ভ করলেন। তারা এসব কোয়ান্টাম কণাকে পৃথকভাবে বন্দি করে তার ধর্ম পরিমাপ করতে সমর্থ হন।
বিশেষ-অজ্ঞরা বলছেন, তাদের এই ফাটাফাটি আবিষ্কার অভাবনীয় দ্রুত গতির সুপার কম্পিউটার উদ্ভাবনের পথে দরজা খুলে দিয়েছে। এছাড়াও এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা যাবে কোয়ান্টাম-ঘড়ি যা বর্তমান সিজিয়াম ঘড়ি থেকে প্রায় ১০০ গুন সূক্ষ্ম সময় দিতে পারবে!
মজার ব্যাপার হল, তাদের আবিস্কারের পদ্ধতি এক হলেও Devid Wineland ফোটন দ্বারা তড়িৎ আধানযুক্ত পরমাণু মানে আয়ন বন্দি করেন আর Sarge Haroche করেন তার ঠিক উল্টো- তিনি তড়িৎ আধানযুক্ত পরমাণু মানে আয়ন দ্বারা বন্দি করেন ফোটন।
এখন আসেন দেখি তারা কীভাবে এই অকাজ (অদ্ভুত কাজ) করে এত বিখ্যাত হলেন....................................
পৃথক আয়নকে বন্দিকরণ ও নিয়ন্ত্রণ
David Wineland প্রথমে আয়ন গুলোকে তড়িৎক্ষেত্র দ্বারা আটকিয়ে বায়ুশূন্য পরিবেশে মারাত্মক শীতল তাপমাত্রায় জব্দ করেন। তারপর তিনি এগুলোতে লেজার বীম প্রয়োগ করেন। এই লেজার বীম আয়ন গুলোকে একদম নিম্ন শক্তিস্তরে নিয়ে যায়। ফলে তাদের গায়ে আর কোন জোর থাকে না এবং তারা বন্দি হয়ে পড়ে। এই বন্দি আয়ন গুলোকে David ভাইয়া ভাল মত পর্যবেক্ষণ করেন!
এবার দেখা যাক লেজার কীভাবে আসামিদের বন্দি করলো!
সূক্ষ্ম পরিমাত্রার একটি লেজার পাল্স আয়নটিকে 'কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা'য় নিয়ে যায়। 'কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা' কি? 'কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা' হল, একটি কণার দুইটি ভিন্ন অবস্থা একই সময়ে একত্রে (simultaneously) বর্তমান থাকা। কি অদ্ভুত, তাই না?! আরেকটু সহজ করে বোঝার জন্য উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আয়নটি একই সময়ে একত্রে (simultaneously) দুটি ভিন্ন শক্তিস্তরে বর্তমান থাকে। সেটা কীভাবে করে? লেজার পাল্সটি আয়নটিকে নিম্ন শক্তিস্তর থেকে কনুই দিয়ে হাল্কা একটু গুঁতো মেরে উচ্চ শক্তিস্তরের দিকে ঠিক অর্ধেক পথ নিয়ে ফেলে দেয়। ফলে এটা দুই শক্তিস্তরের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থান। তখন কিন্তু একটা অসম্ভব মজার ঘটনা ঘটে- তখন আয়নটির দুই পাশের দুই শক্তিস্তরে পৌঁছানোর probability সমান হয়ে যায়!!! ফলে ইট গট ট্রাপ্ড!
পৃথক ফোটনকে বন্দিকরণ ও নিয়ন্ত্রণ
এখন আমরা Serge Horche-এর কাণ্ড দেখব! তিনি এমন system তৈরি করেন যাতে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটনগুলোকে পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় একটা ছোট্ট গর্তাকার শূন্যস্থানের (cavity) ভেতর প্রায় তিন সেন্টিমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি আয়নাতে প্রতিফলিত হয়ে সামনে পিছনে লাফালাফি করতে পারে। এই আয়না কিন্তু আমাদের সাধারন আয়নার মত না; বলা হয় এটা পৃথিবীর সবচে প্রতিফলনক্ষম আয়না। বলবে না কেন বলুন- এটা এত বেশি প্রতিফলনক্ষম যে একটা ফোটন শোষিত হবার আগে প্রায় ০.১ সেকেন্ড ধরে দুই দেয়ালে প্রতিফলিত হতে থাকে। হয়তো এভাবে বলাতে ০.১ সেকেন্ড কেউ গায়ে লাগাচ্ছেন না। ০.১ সেকেন্ডে একটা ফোটন পুরো পৃথিবী একবার পাক দিয়ে আস্তে পারে!!! এতো বড় জীবদ্দশায় আমরা এই ট্র্যাপড ফোটনের উপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারি।
বিষয়টা কিন্তু মোটেই এতো সহজ না। হারশে ছোট্ট গর্তাকার শূন্যস্থানের (cavity) ভেতর ফোটনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত 'রিডবার্গ পরমাণু' নামক এক ধরণের পরমাণু ব্যবহার করেন। যেটা কিনা সাধারন পরমানুর থেকে আকারে ১০০০ গুন বড়!! 'রিডবার্গ পরমাণু' গুলোকে cavityর এক পাশ দিয়ে অনুপ্রস্থভাবে নিয়ন্ত্রিত গতিতে পাঠানো হয় যাতে এরা ফোটনের সাথে আকাঙ্ক্ষিত মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এই মিথস্ক্রিয়া রিডবার্গ পরমাণুর কোয়ান্টাম দশার পরিবর্তন ঘটায়। যদি আমরা রিডবার্গ পরমাণুর কোয়ান্টাম দশাকে একটা তরঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে বলা যায় এই মিথস্ক্রিয়ার ফলে তার তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদের অদল-বদল (shift) ঘটে। এই shifting আবার গোনা যায়। যতগুলো ফোটন ততগুলো মিথস্ক্রিয়া, আর যতগুলো মিথস্ক্রিয়া ততগুলো shifting! নো ফোটন, নো shifting!! রিডবার্গ পরমাণু যখন অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন তার shifting গুণে cavity তে ফোটনের উপস্থিতি অনুপস্থিতি কিংবা ফোটনের সংখ্যা পর্যন্ত গণনা করা যায়!! এভাবেই হারশে ফোটনের গুনাগুন অক্ষুণ্ণ রেখে তা পরিমাপ করতে সমর্থ হন। হারশে-এর এই মারাত্মক আবিষ্কার দ্বারা কোন স্বতন্ত্র কণিকার কোয়ান্টাম অবস্থার বিবর্তন স্টেপ বাই স্টেপ পর্যবেক্ষণ করা যাবে বলে তাদের আশাবাদ।
মন্তব্য
"মাথা নষ্ট ম্যান"
এইটা আপনার নিক?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হুম, ত্রিমাত্রিক কবি।
প্রথম লিখলাম তো তাই কিঞ্চিৎ ভুল হয়ে গেসে!!
আমার এইটা ভাল লেগেছে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ইউটিউব-এ কানেক্ট হচ্ছেনা বলে দেখতে পারলাম না!
এটা কি?
এটাতে আরও সহজে বোঝানো আছে বলে আমার ধারণা।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
Link টার জন্য ধন্যবাদ ।
ভালো লাগলো ।
_________
(সচল ফারহান)
আপনাকে অনেক ধইন্যা পাতা সচল ফারহান।
লেখা ভালো লাগলো, মন্তব্যে পাওয়া লিঙ্কটাও ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর পোস্ট।পড়ে ভাল লাগল।
বিজ্ঞান নিউজ ও সাম্প্রতিক আবিষ্কার নিয়ে করা আমার সাইটটি ভিজিট করতে পারেন।
ধন্যবাদ ভাই
সুন্দর পোস্ট, এ ধরণের লিখা আর আসা উচিত। প্রায় ৮ বছর আগে নটরডেম কলেজের এক বিজ্ঞান মেলায় লেজার এবং ফোটন সম্পর্কে একটি সেমিনার এ গিয়েছিলাম। তখন উৎসাহ ছিল অনেক। সময়ের সাথে উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। পোস্টটি পড়ে আবারো জ্ঞান পিপাসা জেগে উঠল। ধন্যবাদ।
অবুঝ শিশু
নতুন মন্তব্য করুন