পুঠিয়া।
বাংলাদেশ একটি একক এলাকায় অবস্থিত সবচাইতে অধিক সংখ্যক মন্দিরের স্থাপনা কোথায়?এর উত্তর আপনি পাবেন পুঠিয়ায়।রাজশাহী জেলার অন্যতম বৃহৎ উপজেলা পুঠিয়া এক অনবদ্য ও অনন্য জায়গা।গোটা বাংলাদেশে এত মনোরম প্রাচীন শহর পানাম ছাড়া আর কোথাও চোখে পড়েনা।পানাম নগরী তাও ক্লান্ত;অবসন্ন,সময়ের দাগ তার সারা শরীরজুড়ে।পানাম অত্যাধিক বসতির চাপে ক্লিষ্ট,বাণিজ্যের হাতে পড়ে তাঁর অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।পুঠিয়া ছিমছাম,শান্তশিষ্ট,সুন্দর।বাণিজ্য গ্রাস করতে পারেনি এখনও পুঠিয়াকে।পুঠিয়া যেন নাটোরের বনলতা সেন,সময় থমকে গেছে তাঁর ঘন কালো চুলের আড়ালে।
পুঠিয়ার জমিদারগণ ব্রিটিশ ভারতের সবচাইতে ধনী বংশের একটি,বৃহত্তর রাজশাহী এলাকায় তাঁদের অর্থ সম্পদ ও জমিজমার পরিমান ছিল অগুনতি।প্রশাসক হিসেবে তাঁদের অনেক সুনাম ছিল।এই জমিদাররা কিন্তু শুধু প্রজাশাসন করে উদ্বৃত্ত আয় দিয়ে বিলাস ব্যাসনে মত্ত ছিলেননা বরং রাজশাহী নগরে তাঁরা ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন।স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল নির্মাণ থেকে শুরু করে রাজশাহী শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ পর্যন্ত সবখানে তাদের আর্থিক অবদান রয়েছে।এই জমিদার বংশের গোড়াপত্তন হয় মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে এবং ১৯৫১সালে পাকিস্তান শাসনামলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হবার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এর বংশপুরাণ।পুঠিয়ার মহারানী শরত সুন্দরী দেবী এবং মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী অত্র এলাকার জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে খ্যাত।শিক্ষা দিক্ষার প্রসারে, চিকিৎসা সেবার বিস্তারে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহন এবং অর্থ প্রদান মানুষের মাঝে তাঁদের সম্পর্কে বিপুল কৌতূহল এবং শ্রদ্ধা জাগিয়ে রেখেছে অদ্যাবধি।
এহেন বংশ তাঁদের নিজ ঘরবাড়ি যেনতেন করে গড়ে তুলবেন,তাই কি হয়?তাঁরা তাঁদের বাসস্থানের আশেপাশে এত মনোরম একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছেন যা রীতিমতো বিস্ময়কর।বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দিত সেরা কয়েকটি মন্দির এখানে রয়েছে।শিব মন্দির;দোলমঞ্চ;আহ্নিক মন্দির;জগন্নাথ মন্দির;গোবিন্দ মন্দির এবং দুটি রাজবাড়ি যেন আলো হয়ে ফুটে রয়েছে পুঠিয়ায়।হঠাৎ করে পুঠিয়ায় প্রবেশ করলে মনে হয় এ বুঝি অন্য কোন জায়গা,বাংলাদেশের ভেতরেই শান্ত;ধীরস্থির ভিন্ন কোন রাজ্য।এক গোবিন্দ মন্দিরের সৌন্দর্য দেখেই তো মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয়।এ মন্দিরের পুরোটা জুড়ে টেরাকোটার অনুপম কাজ।এমন নান্দনিক কর্ম শুধুমাত্র কান্তজীর মন্দিরের সাথে সমতুল্য।এ তো গেলো একটি মাত্র মন্দির যা রাজবাড়ীর ভেতরের আঙ্গিনায় উজ্বল হয়ে রয়েছে।রাজবাড়ীর সম্মুখপানেই ধবধবে সাদা রোমাঞ্চকর দোল মঞ্চ।পাশে পঞ্চরত্ন শিবমন্দির এবং এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিবমন্দির,এর গায়ে ছেলেবেলায় আমি মূর্তি খোদাই দেখেছি।পরে শুনেছি দুষ্কৃতিকারীরা তা ভেঙ্গে দিয়েছে।পুরো মন্দিরটি অপূর্ব সুন্দর।মন্দিরের একমাত্র ঘরে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গটি যত্ন সহকারে রক্ষিত আছে।রাজবাড়ীর চারপাশে দীর্ঘ এক দিঘী একে ঘিরে রেখেছে,লোকমুখে শুনেছি,এই দীঘির নীচে নাকি সুড়ঙ্গ রয়েছে,সত্য মিথ্যে জানা নেই।দীঘির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আর একটি ভগ্ন রাজবাড়ী এবং একাধিক অসাধারণ মন্দিরের সন্ধান মেলে।বড়ো আহ্নিক মন্দির,ছোট গোবিন্দ মন্দির ইত্যাদি।মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর লুটতরাজের শিকার হয়েছিল এ রাজবাড়ী ও তৎসংলগ্ন এলাকা।তাঁদের মৌলবাদী কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই মেলেনি এই দুটি মন্দিরের।অনেক টেরাকোটা মুর্তির চোখ কাটা,নাক কাটা- ক্ষত সবখানে।
রাজশাহী থেকে মাত্র ৩১ কিমি পূর্বে অবস্থিত পুঠিয়ার যোগাযোগ বাবস্থা খুবই ভালো ও সাশ্রয়ী।আবার পুঠিয়া থেকে রাজশাহীর অন্যান্য দর্শনীয় এলাকা যেমন তাহেরপুর জমিদারবাড়ী, দূর্গাপুরের কিসমত মারিয়া মসজিদ,বাঘায় অবস্থিত বাঘা মসজিদও খুবই কাছে।আমরা যাঁরা রাজশাহীতে জন্মেছি,আমাদের যাঁদের শৈশব;কৈশোর;যৌবন কেটেছে পদ্মা পাড়ে,পুঠিয়া আমাদের কাছে এক পরম বিস্ময় হয়ে রইলেও বাস্তবতা হল যে,কোন একটি অজ্ঞাত কারণে পুঠিয়াকে আমরা আমাদের মনের মণিকোঠায় স্থাপন করতে পারিনি,আমরা দাবি করতে পারিনি যে পুঠিয়াকে ভিত্তি করে রাজশাহীর পর্যটন কেন্দ্র বিকশিত করা হোক।এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যএবং ঐতিহাসিক স্থাপনা সমৃদ্ধ একটি এলাকার যোগ্য মর্যাদা আমরা পুঠিয়াকে দিতে পারিনি,পুঠিয়া যুগের পর যুগ অবহেলিতই থেকে গেছে।
পুঠিয়া আমার ফুপুর বাড়ী।প্রত্যেক বছর পুঠিয়া যাওয়াটা আমার একটা নিয়মিত কাজ বলা যায়।তবে শুধু ফুপুর বাড়ী বলে নয়,যতবার রাজশাহী যাই,পুঠিয়া আমার সর্বস্ব ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়।পুঠিয়ায় গেলে আমি যেন এক মায়াবী ও রহস্যময় অতীতের মাঝে হারিয়ে যাই। ওখানে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কোনও কাজ না করেও দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারি,একা একা।জানিনা কেন!ফুপুর বাড়ি এড়িয়ে গিয়ে আমি একাকী হেঁটে চলি পুঠিয়ার রাস্তায়,দেখি ভোরের সূর্য উঁকি দেয় আহ্নিক মন্দিরের বারান্দায়,সাঁঝবেলার পড়ন্ত রোদ্দুর হানা দেয় শিব মন্দিরের চুড়ায়।আমি একা একা উপভোগ করি তার সৌন্দর্য সুধা।কানের মাঝে স্তব্ধতার গান শুনতে পাই যেন,সময়ের কোন ভেদাভেদ থাকেনা আর।তবে সবসময় যে একা যাওয়া,তাও নয়।এইবার প্রিয় আলোক ছিল আমার সাথে সঙ্গী হয়ে।পুঠিয়ার এইসব সম্পদকে পরিচিত করবার জন্য এক ভদ্রলোক সদা উপস্থিত থাকেন ওখানে, অনেক দোকানির কাছেই উনার ফোন নাম্বার আছে, ফোন করলেই হাজির হয়ে যান তৎক্ষনাৎ।উনি যেন পুঠিয়ার এক বিশাল ভক্তজন,পুঠিয়ার আস্ত অভিধান,পুঠিয়াপ্রিয়তা দর্শনার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে তার বিস্ময়কর রকমের আগ্রহ টের পাই।
আর কথা না বাড়িয়ে এবার কিছু ছবি বিনিময় করা যাক।
ক) গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্চরত্ন শিবমন্দির।
খ) বড়ো আহ্নিক মন্দির ও ছোট গোবিন্দ মন্দির।
গ) পুঠিয়ার পাঁচআনি রাজপ্রাসাদ (১৮৯৫),সাথে অপরূপা পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির।
ঘ) পঞ্চরত্ন শিবমন্দিরের সম্মুখভাগ।নির্মানকাল ১৮২৩-১৮৩০।
ঙ) শিবলিঙ্গটি শুনেছি উপমহাদেশের ভেতর সর্ববৃহৎ।
চ) কাছে থেকে গোবিন্দ মন্দির,এই মন্দিরের পুরোটা টেরাকোটার নানান অপূর্ব শিল্পকর্ম দ্বারা আবৃত।
ছ) ছোট আহ্নিক মন্দিরে খোদাইকৃত অনুপম টেরাকোটার শিল্পকর্ম।
জ) গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত মহাশয়।
ঞ) রোমাঞ্চকর দোলমঞ্চ।নির্মানকাল ১৭৭৮
ঠ) ভাব নিয়ে তোলা ছোট গোবিন্দ মন্দির।
ড) জং ধরা রাজবাড়ী নাম্বার টু অথবা চার আনি রাজপ্রাসাদ।
ঢ) পুঠিয়া-কিশোরীর চোখে দেখেছি ভূবনডাঙার মেঘ!
ণ) গো টাইগারস গো। ভগ্ন রাজবাড়ীতে সচল উদীয়মান!
ত) প্রিয় আলোক মজুমদার,ছবি তোলায় সদাব্যাস্ত।
থ) আরেক প্রস্থ পাঁচ আনি রাজপ্রাসাদ।
থ) কুলাঙ্গার পাক হানাদার বাহিনীর বাংলার ঐতিহ্য ধর্ষণ। শুধু এই কারণে হলেও তাঁদের ফাঁসিকাষ্ঠে দেখতে চাই।
-মনি শামিম
মন্তব্য
দারুণ লেখা, সেইসাথে ছবিও। সচলায়তন আরেকজন মেধাবী ফটুরে পেলো।
ফারাসাত
-মনি শামিম
দারুণ! ছবি এবং লেখা দুই-ই।
-মনি শামিম
দারুন দারুন সব ছবিগুলো!
খুব ভালো লাগলো।
দারুণ
লীলেনদা,অনুর সাথে জমে ওঠা অনেক মধুর ও মজার গল্প শুনলাম আপনাকে নিয়ে।ভালো থাকুন।
-মনি শামিম
মাথা খারাপ করে দিলেন তো ভাই আবার! কাধে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে উত্তরে রওনা দেওয়ার আগে আর শান্তি মিলছে না।
ছবি ও লেখা দুটোই চালিয়ে যান। দারুন হয়েছে!
, লাগান দৌড় পুঠিয়ার পানে।পুঠিয়ার খাবার দাবারও বেশ মজার কিন্তু
-মনি শামিম
চমৎকার লাগলো।
”কুলাঙ্গার পাক হানাদার বাহিনীর বাংলার ঐতিহ্য ধর্ষণ। শুধু এই কারণে হলেও তাঁদের ফাঁসিকাষ্ঠে দেখতে চাই।“
ঐতিহ্য ধ্বংস করা পাকিস্তানি ও তার ভাবাদর্শিদের বিচার চাই।
স্বয়ম
হক কথা।
-মনি শামিম
আমাদের সব নৈরাজ্য দেখে মনে হয়; একদিন আপনাদের ছবিতেই কেবল এই সব স্থাপনাগুলোর অসস্তি থাকবে। ভাল লাগে যে; আপনি বা আপনার মতো কেউ এই সব অমল্য রত্ন ডিজিটাল করে রাখেন। বাঙ্গালী দাঁত থাকতে দাঁতের মর্জাদা বোঝেনা। অযত্নে অবহেলায় এই সব স্থাপনা নষ্ট হয়ে গেলে হায় হায় করবে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমার কিন্তু এমন মনে হয়না।আমি বরং বেশ আশাবাদি সুরে বলতে পারি যে আমাদের দেশে এই পুরাকীর্তিগুলি টিকে থাকবে এবং বাংলার গণমানুষ তা টিকিয়ে রাখবে।আমরা অসচেতন হতে পারি,এগুলো সংরক্ষণে আমাদের যথেষ্ট গাফিলতি কিংবা অসাবধানতা থাকতে পারে কিন্তু এগুলোর প্রতি ভালোবাসা;মায়া কিংবা অধিকারবোধে আমাদের কোথাও ঘাটতি নেই,নইলে দুইশো তিনশো বছর ধরে এ স্থাপনাগুলি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতোনা।বাংলার ঐতিহ্য বরং যুগে যুগে বিনষ্ট করেছে বিদেশীরা কিংবা চেষ্টা করেছে,বাঙালী রুখে দাঁড়িয়েছে এসবের বিরুদ্ধে এবং সফলও হয়েছে।শুধু আমাদের একটু পরিকল্পনা দরকার,একটু যত্ন আর ধৈর্য দরকার আর এসবে গণমানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার।দেখবেন অদূর ভবিষ্যতে এনিয়ে আমাদের আফসোস আর থাকবেনা।
ধন্যবাদ।
-মনি শামিম
দারুণ...
লিয়ে লিলছে, মামুর বুটা পুরাই ঘিরে লিয়েছে!
facebook
লিলাম?বুলছিস?মামুর বুঠা,লিতেই তো এ্যালাম বে!
-মনি শামিম
লিয়ে লিয়েছে মানে কি, একেবারে, পুরাই...
-মনি শামিম
আমার এক বন্ধু আপনার মত কথা বলে শুনতে মজাই লাগে
অসাধারণ লেখা ও ছবি দুটোই!!
চমৎকার বর্ণনামুলক ছবি ব্লগের জন্য ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।
তুহিন সরকার
বাসার খুব কাছে বলেই হয়তো সেভাবে ঘন ঘন কখনও যাওয়া হয় না। তবে পুঠিয়া জায়গাটা আর এর মন্দিরগুলো আসলেই অনেক মনোমুগ্ধকর। যখন দেখি, পুরো তাজ্জব হয়ে যাই, এত সুন্দর শিল্পগুলো কীভাবে বানিয়েছে? এখানে মন্দির ছাড়াও একটি খুব সুন্দর দীঘি আছে, নামটা সঠিক মনে পড়ছে না। সম্ভবত "ছোট বিবির দীঘি" না কী যেনো। যাইহোক ওইটার পাড়ে বসে থাকতেও খুব ভালো লাগে।
শিবলিঙ্গের ছবি এখন তুলতে দেয় নাকি? আমি শেষবার যখন গিয়েছিলাম তখনও শিবলিঙ্গের ছবি না তুলতে অনুরোধ করেছিলেন সেখানকার পুরোহিত। এইটা এত মূল্যবান যে চুরি হওয়ার সমূহ ভয় রয়েছে বলে জানান তিনি। আর এমনিতেই মন্দিরগুলো এখন যারা দেখাশোনা করছেন, খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। আসলেই এই ঐতিহ্যময় সম্পদ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারোরই সেদিকে নজর নেই। বিশেষত আমার দেখে খুব খারাপ লেগেছে যে এই মন্দিরগুলোর বেশ কিছু ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের দাপ্তরিক ভবন হিসেবে!!! দেখাশোনার বালাই তো নেইই, উল্টো যথেচ্ছা ব্যবহারে আরও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এগুলো।
মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণে বেশ কিছু মানুষ আছেন অবশ্য। বেশিরভাগই বৃদ্ধগোছের, জীবনের শেষ পর্যায়ে। উনাদেরই একজন অনেকটা আশা নিয়ে আমাদের বলেছিলেন, আপনারা ঢাকা হতে আসছেন, না? আপনাদের এটা ভালো লেগেছে খুব, তাইনা? তাহলে দয়া করে ঢাকা গিয়ে সম্ভব হলে সরকারকে জানিয়েন, এটা রক্ষা করা দরকার, খুব দ্রুত। শুধু আমরা আর বেশিদিন ধরে রাখতে পারবো বলে মনে হয় না। উনার কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।
আপনার লেখা, ছবি দুটোই খুব দারুণ হয়েছে। পড়তে গিয়ে পুঠিয়া ভ্রমণের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো। তার চাইতেও বেশি কষ্ট বা আক্ষেপ, এগুলো যথাযথ সংরক্ষণ কি আসলেই হবে না ???
-অতীত
দীঘিটির নাম শ্যাম সরোবর,ক্ষেত্রবিশেষে শ্যামসাগর হিসেবেও কথিত।শিবলিঙ্গের ছবি তুলেছি নিঃশঙ্কোচে,কোথায় বাধা পাইনি কখনো।বিশেষ করে সঙ্গী হিসেবে যদি এখানকার স্থানীয় রক্ষণাবেক্ষণকারীকে পেয়ে যান যাঁর কথা আমি আমার লেখায় বলেছি,তাহলে আয়েশ করে ছবি তোলা যায়।ভদ্রলোক পুঠিয়া অন্তপ্রান মানুষ,সদা আমুদে।পুরাকীর্তি সংরক্ষণে আপনাদের আশংকা যথাযথ কিন্তু একটি বিষয় বলা যায় যে বাংলাদেশে পুরাকীর্তি ধ্বংস হবার নয়।কেন নয় তার কারণগুলি আগের একটি মন্তব্যে আমি উল্লেখ করেছি।সীমিত সম্পদের কারণে কিংবা অতি উৎসাহের কারণে বাংলাদেশের অনেক জেলার জমিদার বাড়ীগুলিকে কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে।এর পক্ষে বিপক্ষে নানান মত রয়েছে।সেসবের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় যে নাগরিক হিসেবে আমাদের জানা দরকার যে পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সরকারের পলিসি কি,পদক্ষেপ কি এবং কি তাঁদের পরিকল্পনা।এসব কাজ তাঁরা কি দিনের পর দিন আমলাদের নিয়েই করে যাবেন নাকি এতে গণমানুষের সম্পৃক্ততা আনবেন?আমি নিশ্চিত যে গণমানুষ যদি এসব কাজের পলিসি বাস্তবায়নে অংশ নেয়,বাংলার বুকে এই সম্পদগুলি আরও অনেক যুগ অনেক কাল টিকে থাকবে।এবং আমি এটাও বলতে পারি যে তা আজ না হোক কাল হবেই।এবার কিন্তু আমি দেখে এলাম পাঁচ আনি জমিদারবাড়ী; দোলমঞ্চ এবং আহ্নিক মন্দিরের যথাযথ সংস্কার কর্ম হয়েছে,রঙ করা হয়েছে এবং একদম ঝকঝক তকতক করছে। তাই আশাবাদি না হয়ে উপায় নেই এবং স্থানীয় প্রশাসনের ধন্যবাদটা তাঁদের পাওনা।
-মনি শামিম
বাহ!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
চমৎকার সব ছবি, বর্ণনও দারূণ।
-মনি শামিম
ভারতীয় উপমহাদেশতো বটেই গোটা দুনিয়ার সবচে বড় (৩৫ ফুট লম্বা) শিবলিঙ্গটি আছে ভারতের কর্ণাটকের কোলার জেলার কোটিলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না। পুঠিয়ার পঞ্চরত্ম শিবমন্দিরের শিবলিঙ্গটির ছবি দেখে এটা একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলে মনে হলো। সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারেন। আরও বলতে পারেন ঢাকা বা রাজশাহী থেকে পুঠিয়া যাবার উপায়, সেখানে থাকা-খাওয়া, কোন কোন জায়গা দেখতে হবে তার লোকেশনসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, সেখানকার স্থাপত্য ছাড়া আর কী কী দেখার আছে, সেখানকার চারু ও কারু কর্ম, হস্তশিল্প নিয়ে, সেখানকার খাবার নিয়ে। লিস্ট আর বড় করতে চাইনা। আপনার ফুফু'র (পিসী) আদরে তো আর আমরা ভাগ বসাতে পারবো না, তবে আপনার জানা আর অভিজ্ঞতার ভাগ চাইতেই পারি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এত বড় লিঙ্গের ওদের কি দরকার? খামাখা!
আব্দুল্লাহ এ.এম.
-মনি শামিম
,দেবো,ভাগ দেবো।আপনার শিবলিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্যটি অনেক কাজে লাগলো।অশেষ ধন্যবাদ।ভ্রমনের খুঁটিনাটি বিবরণ যা খুবই কার্যকরী।সামনেরবার লেখার সময় আপনার দেয়া পরামর্শ অবশ্যই মাথায় থাকবে
-মনি শামিম
১০৫ ফিট না?
১০৫ ফিটের শিবলিঙ্গ কোথায় আপু?সবচাইতে বড়ো শিবলিঙ্গের উচ্চতা যদি ৩৫ ফিট হয় তাহলে পুঠিয়ার শিবলিঙ্গের উচ্চতা তো আর ১০৫ ফিট হতে পারেনা!তাইনা?আসলে পুঠিয়া শিবলিঙ্গের উচ্চতা কত,নেটঘেঁটে কোথাও তা খুঁজে পেলামনা এখন পর্যন্ত।
-মনি শামিম
দারুন! চলুক লেখা জোরেশোরে
খুব সুন্দর লেখা ও ছবি,চালিয়ে যান।তবে আমার মনে হয় শুধু আবেগ দিয়ে এ স্থাপনাগুলি রক্ষা করা যাবে না কারণ এখন আমরা ঘরের শত্রু বিভীষণ দ্বারাই ভীষণ ভাবে আক্রান্ত।লালবাগ কেল্লা,পানাম নগর,মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি বা অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী স্হাপনাগুলো কিন্তু আমরা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি।
,আবেগ;সতর্কতা;ধৈর্য;যত্ন;সচেতনতা;অংশগ্রহন-সবই লাগবে।এবং আমাদের সকলের উদ্বেগ; উৎকণ্ঠা ও পরামর্শ স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসন বরাবর পৌঁছে দিতে হবে।সচল থাকতে হবে,সচচল রাখতে হবে।
-মনি শামিম
লেখা ছবি দুটোই খুব ভালো লাগলো।
আটানব্বই এ গেছিলাম- সেতো অনেকদিন হয়ে গেলো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরেকবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
,এবার গিয়ে অনেক আনন্দ করুন,সজোড়ে ছবি তুলুন,তারপর আমাদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করুন।আমরা আপনার চোখ দিয়ে নতুন এক পুঠিয়ে দেখি!শুভস্য শীঘ্রম!
-মনি শামিম
কত সহজে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের অমূল্য সম্পদ।
লেখার বিষয়বস্তু, লেখা এবং ছবি সবই এক কথায় চমৎকার।
,আপনার পরিচয় কিন্তু অজ্ঞাতই রয়ে গেল
-মনি শামিম
আমাদের দেশে এতো সুন্দর রত্ন রয়েছে, দেখিনি কখনো চক্ষু মেলিয়া। অসাধরন হয়েছে ছবিগুলো সাথে লেখাটাও। তবে মনি শামীম ভাইয়ের সাথে আজ সারাদিন আড্ডাটা অনেক ভাল লেগেছে। এতোগুলো বছর একই শহরে আছি আমরা অথচ পরিচয় হলো আজ, সেজন্য আক্ষেপটা রয়ে গেল। জানুয়ারিতে দেশে যাচ্ছি, আপনার এ লেখা ও ছবিগুলো মনের ভেতর পুঠিয়া দেখার স্বপ্ন বুনে দিল।
,আড্ডাটা চলুক।দেশে গেলে পুঠিয়া যেতে ভুলবেননা যেন
-মনি শামিম
স্বপ্রণোদিত হয়ে আমরা আমাদের দর্শনীয় স্থান গুলির পরিবেশ-পরিচিতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করি তাহলে তা কাল-উত্তীর্ণ, কালজয়ী মাথা উঁচু করে টিকে থাকবেই।ইতিপূর্বে 'বোলোনিয়া' এখন 'পুঠিয়া'কে নিয়া ছবি সমেত পোস্ট পাঠক-হৃদকমলে ভাল লাগার অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে এবং স্থান দু'টির দর্শনপ্রার্থী ও ভ্রমনপিয়াসী হওয়ার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।
সদাচঞ্চলমতি গতিশীল অস্থিরপ্রকৃতির মানবমনকে শান্ত-ধীর-স্থির ধ্যাননিবিড় করে তুলতে ঐ-রাজ্যে যাওয়ার বিকল্প যে নাই।
ধন্যবাদ শামিম ভাই, আপনার শুভকামনা ও আর লেখার প্রত্যাশায় রইলাম------
,অশেষ প্রীতি রইলো আপনাদের জন্য।আড্ডাটা চলুক মিঠু ভাই।
-মনি শামিম
দারুণ লেগেছে মনি শামিম আপনার লেখা। ধন্যবাদ ।
রাজশাহী তে অনেকদিন ছিলাম তবু দেখা হয়নি বলে এখন আফসোস হচ্ছে।
ছবি দেখে মন ভরে গেল সেই সাথে দানবের হিংস্র থাবার চিহ্নে রক্তক্ষরণ হল নিরবে।
,এতদিন না হোক,দেখে আসুন জলদি।বেটার লেট দ্যান নেভার
-মনি শামিম
এত সুন্দর জায়গা আছে জানতামই না। খ ছবিটা একটু বেশি সুন্দর লাগলো।
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
,ঘুরে আসুন আপু।
-মনি শামিম
পুরোহিতের আরো কিছু পোর্ট্রেট করতে পারতেন
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফাহিম,এই পোর্ট্রেট জিনিষটা আমাকে দিয়ে ভালো হয় বলে মনে হয়না।অচেনা,অপরিচিত মানুষকে এখানে দাঁড়ান,ওভাবে তাকান-এসব বলতে গিয়ে কোত্থেকে রাজ্যের দ্বিধা আর সঙ্কোচ এসে ডানা ঝাপটায় মনে। একমাত্র আমার কন্যা ছাড়া আমি আর কারও ভালো পোর্ট্রেট তুলতে পারিনি।আমার বরং স্থির বস্তুই সই!
-মনি শামিম
বড়ো আহ্নিক মন্দির ও ছোট গোবিন্দ মন্দিরের ছবিটা কিন্তু ফাটাফাটি এসেছে
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
লেখা ও ছবি পড়ে আর দেখে নস্টালজিক করে দিলেন মনি ভাই। আপনে আসলে লোক ভাল না
রাসেল,আমরা সবাই কবে একসাথে পুঠিয়ার পথে পথে হাঁটবো?এমন দিন কি আমাদের জীবনে আসবেনা?
-মনি শামিম
নস্টালজিক হয়ে গেলাম কিচু সময়ের জন্য। বেশ কিছু স্থাপনার ছবি (যেমন ছোট আহ্নিক মন্দির)বাদ পড়ে গেল।আমার থিসিসের স্টাডি এরিয়া ছিল পুঠিয়া রাজবাড়ি কমপ্লেক্স।
লেখা ছবি দুটোই খুব ভালো লাগলো।
ঠিক ধরেছেন,ছোট আহ্নিক মন্দির বাদ পড়েছে।তবে তার একটি টেরাকোটা শিল্পকর্ম আছে কিন্তু এর ভেতর
-মনি শামিম
মারাত্মক, আসুক আরো এরকম লেখা আর ছবি।
শুধু পুঠিয়া নিয়েই আরও ছবি দেয়ার ইচ্ছে আছে,যে ছবিগুলি দেখছেন সেগুলি একটু তাড়াহুড়ো করে তোলা।ইচ্ছে হয়,ওখানে অবস্থান করে দুইতিন যাবৎ অনেক যত্ন নিয়ে ছবি তুলবো।তবে তাঁর জন্য আরও যে দশ মাস প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হবে,সে কথা ভাবলেই মনমরা অবস্থা হচ্ছে।
-মনি শামিম
ছবিগুলো খুবই সুন্দর। এতবার রাজশাহী গেছি, পুঠিয়া কেন যাইনি আপসোস হচ্ছে ঃ(
এতদিন যাননি,এইবার যাবেন।এমনটাই কাম্য।
-মনি শামিম
অসাধারণ!
-মনি শামিম
দারুণ লাগল! মাস দেড়েক আগেই রাজশাহী ঘুরে এলাম। অল্প সময়ের জন্য অবশ্য। পুঠিয়া যাওয়ার ইচ্ছা ছিল/আছে। এখন ছবিগুলো দেখে ইচ্ছাটা বাড়ল আরও। এরপর সময়সুযোগ করে পুঠিয়া ঘুরে আসতে হবে।
এবার হলনা,সামনেরবার হোক।আগাম শুভকামনা রইলো।
-মনি শামিম
জটিল লিখেন আপনি , সেই সাথে ছবি । আমার পড়া বেস্ট লেখা গুলুর মধ্যে এইটি একটি :)
ধন্যবাদ পাপ্পু, ভাল থাকুন।
-মনি শামিম
ভয় নেই এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের চিন্তা আর খুব বেশিদিন করতে হবে বলে মনে হয় না। পাকিস্তানের দোসর জামাত-শিবিরই এগুলোর দায়িত্ব নিয়ে নেবে। কতদিন আর? ১৫ বছর? ২০ বছর? তারপর? দেশ যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে "বাংলা হবে আফগান, আমরা হব তালেবান" এটা সত্যি হতে আর কত বাকি? তারপর একে একে ধ্বংস করা হবে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য আর শিল্প। বিধর্মী আখ্যা দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হবে এসব মন্দির। এগুলো হবে আমাদেরই চোখের সামনে, আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব।
পুঠিয়া এলাকার গুগল স্যাটেলাইট ইমেজ কোয়ালিটি খুবই পুওর ছিল। আবেদন করার ফলে সম্প্রতি ইমেজ আপডেট করা হয়েছে। আপনার ছবিব্লগের সবগুলো ঐতিহাসিক স্থান এড করা হয়েছে। দেখুন-
নতুন মন্তব্য করুন