উনি হাসতে হাসতে আমার নাকটা টিপে জবাব দিতেন- দিনের পরে দিন চিড়া, মুড়ি খেয়েছিস? অথবা খুদের জাউ? রেশনের চালের ভাত খেয়েছিস যা খেতে ঠিক রবারের মতন? চিবানো যায়না, গেলা যায়না, কষ্ট করে পেটে পাঠালে পেট নেমে যায়...
”যাহ! এমন চালের ভাত কেউ খেতে পারে?” জন্ম থেকেই চিকন চালের ভাত খেতে পাওয়া আমার বিস্মিত প্রশ্ন।
”খেতে হয়রে মানিক, তোর বড় খালাও খেতে পারত না, শুধু কাঁদত কুন কুন করে। আমি তখন ওকে বুঝাতাম, এবাড়ি ওবাড়ি থেকে ভাতের মাড় এনে দিতাম।” হাসতে হাসতেই বলতেন আমার মা।
”মুক্তিযুদ্ধের সময় কত কি খেয়েছি, আহ কি কষ্ট, আমি তখন অনেক ছোট তবুও কষ্টগুলো মনে আছে। যুদ্ধের পরেও আমাদের কষ্টের দিন শেষ হতে বহুদিন লেগেছিল।” বলতে বলতেই আম্মা কেমন উদাস হয়ে যেতেন।
খাবার নিয়ে আমি নাক সিটকালেই আম্মা বলতেন- ”খেয়ে নে মা, খাবার মানেই স্বাদ! ”
আম্মা মাঝে মাঝে উনাদের কষ্টের দিনগুলোর গল্পও করতেন কিন্তু খুব হাসতে হাসতে, যেন এটা কোন ব্যাপার না।
যখন স্কুলে, নিচু ক্লাসে পড়তাম পুরো ডিসেম্বর জুড়ে ছুটি। সারাদিন টইটই করে, দুপুর হলে বেগুন বড়ির তরকারি আর ফুলকপির ঝোল দিয়ে ভাত খেতে বসতাম। রেলিঙ বিহীন একতলা এক বাসার ছাদে রোদে পিঠ পেতে খেতে বসতাম মাদুরের উপর। খাওয়া শেষে মাদুরের উপর আম্মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে গল্প শুনতাম। এই গল্প সেই গল্প,তার মাঝে আম্মা মাঝে মাঝেই এক কাটা পচা গলা হাতের গল্প বলতেন, যে হাতের কবজিতে একটি ঘড়ি আটকে ছিল। আমার হাসি খুশি মা কিন্তু কাটা হাতের গল্প বলতে গিয়ে কখনও হাসতে পারতেন না, তার চোখে জল খেলা করত, মুখের পেশীগুলো দুঃখ মেশান গর্বে ভরা থাকত। আনমনে এমনভাবে বলতেন যেন হাতটা এখনও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন!
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগ দিয়ে আমার নানা মারা যান। আমার নানীর তখন বেহাল অবস্থা। ঘরে সাতজন নাবালক সন্তান আর একজন সাবালক, আমার বড়মামা। পরিবেশ পরিস্থিতি তখন উত্তাল কিন্তু তখনও যুদ্ধ বাধেনি, আমার মামা মুর্শিদাবাদ যান কাজের সন্ধানে।আমার মায়ের নানা বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদে। ৪৭ এর দেশ ভাগের সময় নানা নানী বাংলাদেশে(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) চলে আসেন। তখন কেবল বড়মামার জন্ম হয়েছে।
পোস্টমাস্টার নানার বদলির চাকরির সুবাদে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে হত। ৭০ সালের মাঝামাঝি রাজশাহী এসে থিতু হন। দেশের অবস্থা তখন ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে, এমন সময় নানা মারা গেলেন হঠাৎ করে, মামা গেলেন চাকরির খোঁজে। যুদ্ধ বেঁধে গেল। সাতজন ছোট ছোট সন্তান নিয়ে নানী কোথায় যাবেন? হাতে তেমন টাকা পয়সা নাই। কে দিবে আশ্রয়? রাজশাহীতে কেবল এসেছেন, কাউকে তেমন ভালভাবে চিনেননা? দলে দলে মানুষ তখন ইন্ডিয়া ছুটছে আশ্রয়ের জন্য। ইন্ডিয়াতে নানীর নিরাপদ আশ্রয় আছে, মুর্শিদাবাদে। কিভাবে যাবেন সেই পর্যন্ত?
বিপদেই নাকি বন্ধুর পরিচয়। পাড়ার এক সল্প পরিচিত প্রতিবেশী ব্যাবস্থা করে দিল ইন্ডিয়া যাবার। তারাও ইন্ডিয়া চলে যাবেন, যাত্রা পথে মেহেরচন্ডিতে কিছুদিন লুকিয়ে থাকবেন। এই গল্পের সবটুকুই শোনা আম্মার কাছে, আম্মার স্মৃতি থেকে নেওয়া। আম্মা তখন অনেক ছোট, অনেক কিছুই ভুলে গেছেন। উনার শুধু মনে পড়ে তীব্র খাবারের কষ্ট , যখন তখন কারফিউ ঘোষণা, রাতের অন্ধকারে ঘুম ঘুম চোখে পথ হাঁটা। মাঝে বেশ কিছুদিন মেহেরচন্ডিতে এক ছোট ঘরে খড়ের গাদার নিচে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, যে পরিবারের সাথে আম্মারা যাত্রা শুরু করেছিলেন তাদের এক আত্মীয়র বাড়ি। সেখান থেকে পরে গরুর গাড়ি, পায়ে হাঁটা পথ, নৌকা করে মহানন্দা নদী পার হয়ে সোনামসজিদ বর্ডার। নবাবগঞ্জ পৌঁছানর পরে ইন্ডিয়া যেতে তাদের আর তেমন কষ্ট হয়নি। সোনা মসজিদ বর্ডারের পরেই আম্মার এক মামা আর আমার বড় মামা এসেছিলেন উনাদের নিতে।
যুদ্ধ থেমে গেলে, দেশ স্বাধীন হল। স্বাধীনতার মাত্র দুই দিন পরে ১৮ ডিসেম্বর , নতুন দেশে, স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন আমার নানী স্বপরিবারে। শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ। রাজশাহী ফিরে দেখেন বারিটায় শুধু মাত্র অক্ষত রয়েছে, আর সব কিছুই লন্ডভন্ড, হাতে টাকা নাই, খাবারের তীব্র সংকট, রেশনের দোকানে লাইন দিয়েও মোটা মোটা চাল ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়না। বড় মামা চাকরির খোঁজে হন্য হয়ে ঘুরছেন, ঘরে অসুস্থ খালা। আম্মা আর বড় খালা মিলে বনে বাদাড়ে গোরস্থানে ঘুরে বেড়ান কল্মি শাক, হেলেঞ্চা শাকের আশায়। সেখানেও তীব্র প্রতিযোগিতা। যুদ্ধে প্রায় সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবার ঘরে ক্ষুধা, তীব্র অভাব। এখানে ওখানে নাকি মানুষের মৃত, গলিত শরীর দেখতে পাওয়া যায়, কখনওবা মাথার খুলি দেখা যায়, কিছু ভিক্ষুক চোখে পড়ে হাতে, পায়ে বড় বড় ক্ষতস্থান নিয়ে ভিক্ষায় বেরিয়েছে।
একদিন আম্মা বের হয়েছিলেন রামচন্দ্রপুরে যাবার জন্য, ঐ এলাকাটা নাকি তখন ঘন জঙ্গলে ছাওয়া, ভেবেছিলেন বেশ অনেকটা শাক পাওয়া যাবে। কিছুদুর যাবার পরে দেখতে পান এক কুকুর মুখে এক মানুষের কাটা হাত নিয়ে যাচ্ছে। হাতটা বেশ খানিকটা পচে গেছে, গন্ধ ছড়াচ্ছে তীব্র, হাতের কবজিতে তখনও একটা ঘড়ি বাঁধা। আম্মাকে দেখে কুকুরটি মাটিতে হাতটা নামিয়ে রাখে, মাথা ঝাড়া দিয়ে হাতে এক কামড় দেয়... হঠাৎ এই বীভৎস দৃশ্য দেখে আম্মা কেমন জানি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যুদ্ধের এই কয়মাসের ভয়াবহতা, নৃশংসতা, প্রতি মুহূর্তের অনিশ্চয়তা, দৈনন্দিন জীবনের অভাব বোধ যেন তীব্র ভাবে সেই কাটা হাতের মধ্যে দিয়ে আম্মার মনে এক ভয়ংকর আঁচড় দিয়ে যায়। হাতটা বাঁচানোর জন্য আম্মা কুকুরের দিকে তেড়ে যান। কুকুরটাও ভয় পায়না, একবার রুখে দাঁড়ায়, তারপর কাটা হাতটা মুখে নিয়ে পালিয়ে যায়।
আম্মা নাকি যখন ঘরে ফিরে আসেন, উনার তীব্র জ্বর গায়ে, চোখ টকটকে লাল। বেশ অনেকদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই ঘটনার পরে। ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নাই, তীব্র জ্বরে মাঝে মাঝেই অচেতন, উনি নাকি জ্বরের ঘোরে শুধু একটা আধ পচা হাত দেখতে পেতেন সেইসময়।
আম্মা প্রায় বলতেন যুদ্ধের কথা বলতে গেলে উনার তেমন কিছু মনে পড়েনা। শুধু যুদ্ধের কিছুদিন আর যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে আরও বেশ কিছুদিন তীব্র খাবারের কষ্ট, ছুটাছুটি, খড় দিয়ে ছাউনি দেওয়া মেহেরচন্ডির মাটির ঘরে লুকিয়ে থাকা আর সেই এক কাটা হাত... আম্মার স্মৃতিতে আম্মার কাছ থেকে গল্প শুনতে শুনতেই ডিসেম্বর মাস এলেই আমার মায়ের মত আমিও যেন কনুই থেকে কাটা আধ পচা এক হাত দেখতে পাই কুকুরের মুখে, কবজিতে বাধা রয়েছে একটি ঘড়ি!
ছোট থেকেই আমার বাবা মায়ের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনতাম। শুনতে শুনতেই মুক্তিযুদ্ধ আর এই দেশটা হৃদয়ে ধারন করতে শিখেছি তীব্রভাবে। যতবার আম্মা উনার মেহেরচন্ডির মাটির ঘরে খড়ের গাদার নিচে লুকিয়ে থাকার গল্প বলেছেন, ততবার মনে হয়েছে আমিও যেন সেখানে হাজির ছিলাম। দম বন্ধ করে আগস্ট মাসের তীব্র গরমে খড়ের তলায় সিদ্ধ হতে হতে বাইরের আজরাইলের ফিরে যাবার প্রার্থনায় ছিলাম।
যতবার আব্বার কাছে হরিনগরে কিভাবে উনি পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন সেই বর্ণনাটুকু শুনেছি, উনার চোখ দিয়ে খুব সামান্য যুদ্ধ দেখেছি ততবার মনে হয়েছে, এই বাংলা নামের দেশটা কি ভীষণ রকম আমার। এখানকার ভাষা, মাটি, মানুষ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস সব কিছুই কি আশ্চর্য রকম আমার, আমার নিজের। এই দেশটা আমরা অর্জন করে নিয়েছি ত্যাগে, তিতিক্ষায়, গর্বে,ভালবাসায়।
যতবার আমি মুক্তিযুদ্ধের কোন গল্প, গান, কবিতা, ইতিহাস , উপন্যাস পড়েছি ততবার অদ্ভুত এক আনন্দ আর ভাললাগার সাথে সাথে তীব্র ভয়ংকর এক ঘৃণা অনুভব করেছি পাকিস্তানের প্রতি, রাজাকার, আলবদর, বঙ্গবন্ধুর খুনি থেকে শুরু করে সকল দেশদ্রোহীদের প্রতি।
আজ যখন দেশের বাইরে এসে কোন বাঙ্গালীকে উর্দুতে কোন পাকিস্তানীর সাথে কথা বলতে শুনি, আমি অবাক হইনা, শুধু তীব্র ঘৃণায় গলার কাছে তিতো হয়ে যায়। আজ যখন খেলার মাঠে যদু, মদুর মত কোন এক নব্য রাজাকার বাঙ্গালি, পাকিস্তানের সাপোর্টার হয়, পাকিস্তানের পতাকা গালে এঁকে বসে থাকে,আজ যখন বাঙ্গালীরা মনে প্রানে পাকিদের ভাই হতে চায়, ভাই হয়ে যায় ধর্মের দোহায় দিয়ে, আজ যখন এক হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে যেতে বলে, তখন তীব্র আক্ষেপে চুপচাপ সব মেনে নেই, অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর চলবেনা, বর্তমানে আসতে হবে, এক ওয়াসিম আকরাম দুঃখিত বলেছে, আন্তর্জাতিক আদালতে নাই বা বিচার পেলাম ৭১ সালের গণহত্যার। ৩০লক্ষ মানুষ, শেষ পর্যন্ত তো আসলে সামান্য একটা সংখ্যাই তাইনা? আমিও যেন তাই অতীত ভুলে যেতে থাকি, অতীত ভুলতে ভুলতে কোথা থেকে হঠাৎ করে কাটা হাতটা আমার সামনে চলে আসে।
আচ্ছা সেই হাতটার পুরো মানুষটা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, নাকি উনি খুব নিরীহ সাধারন কোন মানুষ ছিলেন? কারো সন্তান, কারো বাবা, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বন্ধু- মারা যাবার আগে উনার কার কথা মনে হয়েছিল, মায়ের কথা, দেশের কথা?? কিভাবে মারা গিয়েছিলেন উনি? কত বেশী কষ্ট হয়েছিল উনার? মারা যাবার আগে উনি কি জানতেন উনার এত সাধের বাংলাদেশটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ রুপেই জন্ম নিবে। উনি কি ভেবেছিলেন কখনও এই স্বাধীন দেশে বসে, আমরা পাকিদের ভাই ভাই করে বেড়াব? গলার রগ ফুলিয়ে বলে বেড়াব খেলা আর রাজনীতি এক নয়, পাকিস্তানের পতাকা হাতে খেলার মাঠে যাব, জামাত শিবির নামে রাজাকারের নতুন ভার্সন তলে তলে ঘুন ধরানোর চেষ্টা করবে? এই কাটা হাতটা নিশ্চয় সেই ৩০ লক্ষ মানুষের একজনের হাত। এমন কতজনের হাত সেই সময়ে শেয়াল কুকুর আর শকুনের খাবার হয়েছিল ?
সারা বছর ধরে এইসব আগাছা আর নির্ণয় না করতে জানা বেজন্মাদের বিভিন্ন ঘটনা আর কাজ দেখেও চুপ করে থাকি, কষ্ট আর প্রচণ্ড রাগগুলো কিভাবে যেন সামলে সুমলে আশায় দিন গুনতে থাকি, সঠিক বিচারের আশায়, ন্যায় বিচারের আশায়, রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের আশায়, আন্তর্জাতিক আদালতে সেই ভয়ংকর গণহত্যার বিচারের আশায় । তবুও এই ডিসেম্বর মাস এলে আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে, বিক্ষোভে ফেটে পড়তে মন চায়, তীব্র ক্ষোভে সবকিছু তছনছ করতে ইচ্ছে করে। বিজয় দিবস যত এগিয়ে আসতে থাকে কাটা হাতটা পেন্ডুলামের মত চোখের সামনে ততই দুলতে থাকে, নাকে যেন পচা মাংসের গন্ধ পাই,স্বাধীনতার ৪১ বছর পার হতে চলল ,এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলনা। সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবস কবে দেখতে পাবো আমরা ???
সাফিনাজ আরজু
মন্তব্য
আপনি কোন ইমেইল এড্রেস দিয়ে সচলায়তনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন?
অনেক ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
(safinaj_arju09@yahoo.com)এই ইমেইল এড্রেস দিয়ে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম।
অসাধারণ! আপনার মা'কে শ্রদ্ধা।
মুর্শেদ ভাইয়ের মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে সুখবর পেতে আর বেশী দেরী নেই। তাই আগাম অভিনন্দন জানিয়ে গেলাম।
ফারাসাত
অনেক ধন্যবাদ ফারাসাত।
আমার আম্মার কাছ থেকে একটা জিনিষ শেখার চেষ্টা করি, কিভাবে হাসি মুখে সব দুঃখ, কষ্ট, বাধা অতিক্রম করতে হয়। উনাকে আমি কখনই ভেঙে পড়তে দেখিনি।
সত্যি সত্যি সুখবর পাবো???
জানিনা কবে পাবো, তবে সচলের নেশা মারাত্মক নেশারে ভাই, একবার ধরলে মনে হয় সারাজীবন ধরে সঙ্গী হয়ে যায়।
ভালো থাকবেন।
সচলের নেশার কথা আর বলবেননা। গতবছর পড়া শুরু করেছিলাম আর ছাড়া গেলোনা। নতুন পোস্ট পড়া শেষ হয়ে গেলে এখন যেকোন একজনের ব্লগে গিয়ে উনার সব গুলো পোস্ট এক এক করে পড়া শুরু করি।
আপনার লেখার গুণের কারণেই খুব তাড়াতাড়িই সুখবর পেয়ে যাওয়ার কথা। আপনিও ভালো থাকবেন আর ক্রমাগত লেখা দিতে থাকবেন।
ফারাসাত
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বিদেশে কিছু বাঙ্গালী খুব আয়েস করে হিন্দিতে ইন্ডিয়ান দের সাথে এবং উর্দুতে পাকি দের সাথে কথা বলে অথচ ভেবে দেখে না ওরা কখনো বাংলায় আমাদের সাথে কথা বলবে না। ভারতীয় এবং পাকি সহকর্মী দের তাই প্রথমেই বলে দেই বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়া আমি অন্য ভাষা বুজি না।
আপনার মাকে শ্রদ্ধা।
লেখায়
যে সমস্ত বাঙ্গালীরা এমন কাজ করে তাদের আমার বলার কিছু নাই। আমি নিজেও অনেক কে দেখেছি পাকিদের সাথে উর্দু বলতে পেরে যেন গলে যায়। প্রচণ্ড ধিক্কার জানাই এই সমস্ত মানুষদের। তাদের শুভ বোধ জাগ্রত হোক। ৭১ সালে এই ধরনের মানুষেরাই সম্ভবত রাজাকার রুপে মাথা চাড়া দিয়েছিল।
নীল আকাশ, আপনার বোধের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
- আপনার মা-বাবা দুজন কে শ্রদ্ধা
প্রথম অংশটুকুর মধ্যে উপন্যাসের আবহ আছে - একটা চেস্টা করবেন নাকি?
আইসিটির সকল কাজে চলুন আমাদের যার যার অবস্থান থেকে যতটুকু পারি সহযোগিতা, সমর্থন করি - ইম্পিউনিটির অভিশাপমুক্ত হোক বাংলাদেশ।
অনেক স্যামদা।
আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় কিভাবে নানা-নানী এদেশে চলে আসলেন, বাংলাদেশে উনাদের মুক্তিযুদ্ধের আগের সময়কাল, দেশ স্বাধীন হবার পরের সময়কাল নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে কিছু লেখার। দেখি কখনও লিখব হয়ত। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ উৎসাহিত করার জন্য।
নানা নানী বাংলাদেশে চলে আসলেও আমার বড়মামার শৈশবের বেশ অনেকটা সময় কেটেছে মুর্শিদাবাদে।
মুর্শিদাবাদের গল্প করতে গিয়ে উনি মাঝে মাঝেই বেশ নস্টালজিক হয়ে পড়েন। শৈশব স্মৃতি মানুষ মনে হয় আজীবন ধারন করে চলে। গত ত্রিশ বছরে মামা একবারও মুর্শিদাবাদে যাননি। কিন্তু কেউ ভারতে যাচ্ছে জানতে পারলেই উনি তাদের বলেন একবার মুর্শিদাবাদে ঘুরে আসতে। শৈশব স্থান নিয়ে উনার এই অনুভূতিগুলো আমাকে খুব আলোড়িত করে।
আপনার বাবা-মায়ের জন্য শ্রদ্ধা এবং খুব ভালো লাগলো আপনার বোধ।
তানিম ভাই।
অনেক জলছবি।
সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবসের আশায় আমরা সবাই!
অসাধারন লেখা। সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবস দেখার এক তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে বসে আছি । আসবে সেই দিন, আসবেই আসবে ।
অবশ্যই আসবে। আমরা সবাই সচেতন হলেই আসবে। সেই দিন আর খুব বেশী দূরে নয়।
ধন্যবাদ অমি ভাই, লেখা পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য।
অনেক কষ্টে করেও কান্না আটকে রাখতে পারলাম না।
আমারও খুব কষ্ট হয়।
পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রংতুলি।
সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবসের আশায় আমরা সবাই!
লেখা পড়ে নির্বাক হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আর কিছু বলতে চাই না।
স্বয়ম
পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবসের আশায় আমরা সবাই!
আপনি অনেক ভাল লেখেন। আমি আপনার সব লেখাই পড়েছি।
আপনার মার মত আমারও ৭১ এর অনেক ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে আছে। পাকিদের প্রতি আমার মনোভাব আমার মেয়েদের মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়েছি। ওদেরও কোন পাকি বন্ধু নেই। যদিও জানি আমরা সবাই মানুষ। কিন্তু ওইগুলোকে মানুষ হিসাবে ভাবতে ইচ্ছে করে না।
সৈন্য গুলোর যে কোন বিচার হল না এটা ভাবলে এখনও অনেক কষ্ট পাই।
অনেক ধন্যবাদ নীলকমলিনীদি, আমার সব লেখা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।
আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো।
আমিও পাকি, সমস্ত রাজাকার আর দেশদ্রোহীদের মানুষ ভাবতে পারিনা।
বিচার একদিন হবেই, হতেই হবে।
ভালো থাকবেন।
আমিও অনেক ছোট ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময়,আপনার মা'র কথাগুলো পড়ে আমার নিজেরও কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল
পাকিদের এবং দেশীয় রাজাকারদের ক্ষমা আমি কখনই করতে পারব না, সম্ভব নয় । দেশীয় রাজাকারদের যথাযথ শাস্তি দেখার আশায় আছি,এখনো বুঝতেছি না আসলেই কি হতে যাচ্ছে
আসলেই সম্ভব নয়। সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবসের আশায় আমরা সবাই!
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
দ্রুত সচলত্ব পাবেন আশা করছি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আরে, তিথীডোর আপু নাকি আমার লেখায়
অনেক
আসলেই খুব খুশি হয়েছি।
ভালো থাকবেন সবসময়।
অনেক দাম দিয়ে কেনা এই বাংলা...
অনেক দাম দিয়ে কেনা এই বাংলা...
পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক
আপনার মা-বাবার জন্যে শ্রদ্ধা রইলো। দারুন লেখেন আপনি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আশালতাদি
শ্রদ্ধা এবং শুভকামনা।
আপনার লেখার হাত অসাধারণ, আবারও বললাম।
প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল আপনার লেখা কিন্তু মেহেরচন্ডি পর্যন্ত পড়ে তবে নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম।
লেখা চলুক-
facebook
অনুদা, আপনার মন্তব্য বরাবরই আমাকে খুব উৎসাহিত করে। উৎসাহিত করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। :)
ভালো থাকবেন।
এই কথাটা আমারও মাঝে মাঝে খুব মনে হয়। আমি আপনার আম্মার মত কাটা হাত দেখিনি বা ৭১-এর স্মৃতি নেই। কিন্তু ৮০-র দশকে একটা ৭১-এর বন্দীদের রক্তমাখা লাশঘর দেখেছি। এই ঘটনাটা আগেও মনে হয় একাধিকবার সচলে লিখেছি। আমার সেসময়ের স্কুলটা ৭১-এ পাকি আর্মির ঘাঁটি ছিল। এই স্কুলের একটা ঘরে আশেপাশের এলাকা থেকে ধরে আনা অসংখ্য নারীর ধর্ষিত ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ স্তূপীকৃত করে রাখা হয়েছিল, যা বিজয়ের পরে ফিরে আসা বাঙালি কর্মচারীরা খুঁজে পায়। লাশগুলি কবর দিয়ে দেয়া হলেও ঐ ঘরে আর চুনকাম করা হয়নি, বরং ওভাবেই তালাবন্ধ করে রেখে দেয়া হয়েছিল স্মৃতিচিহ্ণ হিসেবে। ৮০র দশকে এটা আমাদের ক্লাসের জন্য খুলে দেয়া হয়। তখনই দেখি প্রায় ছাদ পর্যন্ত দেয়ালে রক্তের খয়েরি ছোপ ছোপ দাগ। পুরোনো কর্মচারিদের কাছ থেকে এই ঘরের এই নৃশংস অতীত জানার পর বহুদিন ঘুমাতে পারিনি ঠিকমত - দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঐ মানুষগুলি ফিরে ফিরে এসেছে বারবার।
আমারও তখন আপনার মত প্রশ্ন জাগত মনে - এই বীভৎস ভাবে নিহত মানুষগুলি এখন কোথায়? এরা কি কারো সন্তান, কারো বোন, কারো স্ত্রী, কারো মা, বা কারো বন্ধু ছিলেন?- মারা যাবার আগে উনাদের কার কথা মনে হয়েছিল, মায়ের কথা, বাবার কথা, দেশের কথা?? কত বেশী কষ্ট হয়েছিল উনার? মারা যাবার আগে উনি কি জানতেন যে দেশে তিনি মারা যাচ্ছেন, সেটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ রুপেই জন্ম নিবে। উনি কি ভেবেছিলেন কখনও এই স্বাধীন দেশে বসে, আমরা তাঁর হত্যাকারী ও হত্যাকারীর দোসরদের ভাই ভাই করে বেড়াব? গলার রগ ফুলিয়ে বলে বেড়াব খেলা আর রাজনীতি এক নয়, পাকিস্তানের পতাকা হাতে খেলার মাঠে যাব, জামাত শিবির নামে রাজাকারের নতুন ভার্সন তলে তলে ঘুন ধরানোর চেষ্টা করবে? 'ম্যারি মি আফ্রিদি' লিখে প্ল্যাকার্ড উঁচাবো? এই লাশগুলি নিশ্চয় সেই ৩০ লক্ষ মানুষদের অন্যতম। এমন কতজন সেই সময়ে মনুষ্য দেহধারী শেয়াল কুকুর আর শকুনের খাবার হয়েছিল ? এদের প্রতি কিভাবে আমাদের এই ক্ষমাহীণ বেইমানির পাপ স্খালন হবে? কবে তারা বিচার পাবেন?
****************************************
আমি আমার ক্লাসমেট অনেক পাকিস্তানীকে দেখছি যাদের ধারনা আমাদের উর্দূ জানা থাকা উচিৎ, কি বলব তাদের এই ধারনা কেন হয়েছে সেটা কয়েকদিন পরে টের পেলামঃ আমার সিনিয়র কয়েকজন বাঙ্গালীকে দেখলাম বেশ চটপট উর্দু-হিন্দি মিশিয়ে ফটফট করতেছে। রাগে শোকে গা জ্বলে যায় জানেন। আমরা ভুলে যাই আমাদের দেশটা কতটা সাধনার পরে আদায় করেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা, কাদের জন্য? শুধুমাত্র আমাদের জন্যই তো নাকি>? মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেছেন তাদের থেকে যারা চির বিদায়ের দেশে চলে গিয়েছিন তাঁরাই হয়ত ভাল আছেন, তাদের দেখে যেতে হয়নি তাদের উত্তরাধিকারীরা তাদের স্বপ্নকে কিভাবে জলাঞ্জলী দিচ্ছে দেশে-বিদেশে
বেচারাথেরিয়াম
আমি জানিনা কিভাবে আমরা এমনটি করতে পারি। আপনার মত অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। প্রচণ্ড রাগে শরীর জ্বলে যায়। কবে যে এইসব কুলাঙ্গারদের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব???
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ভালো থাকবেন।
অসাধারণ একটা লিখা,অনেক হ্রদয় স্পরশী।আগামী পোস্টের অপেক্ষাই থাক্লাম।ভাল থাকুন।
---------------------------------------------------
রিক্তের
কবিকে ভালবাসা মরন,
কবিকে বিদ্রুপ করা মরন,
কবি হওয়া মরন।
আরজু আপু তোমার মায়ের ঘটনা আর আমার মায়ের ঘটনার কিছু মিল পেলাম। ইচ্ছা আছে যুদ্ধের ঘটনা লিখব যা আমার নানী আর মার কাছ থেকে শুনেছি। যুদ্ধ আমার আম্মুর পরিবারের জন্য অপরিসীম কষ্ট নিয়ে এসেছিল। যুদ্ধ শুরুর একবছর আগে আমার নানা আর যুদ্ধে আমার তিনজন মামা-খালা মারা যায়। এখনো সে কথাগুলো শুনলে আম্মুর কান্না থামতে চায় না!
লেখা খুব চমৎকার হয়েছে আপু। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে হাচল হিসাবে দেখব।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
অনেক ধন্যবাদ মেঘা আপু। তোমার গল্প শুনতে চাই।
আসলে মুক্তিযুদ্ধে কম বেশী প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন , জানিনা তারপরেও কিভাবে আমরা এত নির্লজ্জ হতে পারি, কিভাবে এখনও রাজাকারেরা সদর্পে ঘুরে বেড়াতে পারে মাথা উচু করে
সকল রাজাকার আর ঘৃণ্য দেশদ্রোহী মুক্ত একটা বিজয় দিবসের আশায় আমরা সবাই!
মুক্তিযুদ্ধের গল্প, শৈশবের গল্পসহ আরও অন্য সব গল্প শুনার অপেক্ষায়
শুভকামনা রইল।
পুরোটা পড়তেই হলো। চমৎকার।
---- ঈয়াসীন
অনেক ঈয়াসীন
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
নতুন মন্তব্য করুন