একজন বিশ্বজিৎ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/১২/২০১২ - ১০:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমে খবরটা শুধু শুনেছিলাম, দেখা হয় নাই তখনো। শোনা আর দেখার মধ্যে যে একটা বিশাল পার্থক্য আছে সেটা বুঝলাম দেখার পর। সামনা সামনি দেখলে কেমন লাগতো সেটা ভেবে রীতিমতো ভয় পাচ্ছি। হ্যাঁ, আমি বিশ্বজিতের কথা বলছি। যখন এ লেখা লিখছি তখন থেকে ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেও সে বেচে ছিলো। তার চোখে স্বপ্ন ছিলো, তার জীবনকে নিয়ে পরিকল্পনা ছিলো। হোকনা সে একজন দর্জির দোকানী, তাই বলে আপনার আমার চেয়ে কোনো অংশেই এগুলো কম ছিলোনা। আর এর সবগুলোই বাইশটি বছরে তিল তিল করে গড়ে তোলা।

যারা তাকে কোপালো, কতক্ষন লেগেছিলো কোপাতে? ৫ মিনিট, ১০ মিনিট ? ছবিটা দেখে চমকে উঠেছিলাম। বাচার আকুতি বুঝি এমনই হয়। ভিডিওটা হয়তো দেখা হতোনা, ফেছবুকে এক বন্ধু ট্যাগ করায় দেখতে হোলো। অনেকক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম, এমন ভয়াবহতা আর কখনো দেখেছি বলে মনে পড়লো না। রাতের ঘুমটাও ঠিক মতো হলোনা। বার বার দৃশ্যটা চোখের সামনে চলে আসছিলো। এ দৃশ্য কি ভোলার?

বিশ্বজিতের অবস্থানে আমিও থাকতে পারতাম, সেটা খুব অস্বাভাবিক হতোনা মোটেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়ার সুবাদে ওই এলাকাটা মোটেই অপরিচিত না আমার। এমনকি দোতলায় যে ডেন্টাল চেম্বারে আশ্রয় নিয়েছিলো বিশ্বজিৎ সেটির কোনো একটিতে বছর কুড়ি আগে দাঁতও দেখিয়ে ছিলাম এক ডাক্তারকে। জায়গাটা আমার চেনা, তাই ভাবছিলাম বিশ্বজিতের অবস্থানে আমিও থাকতে পারতাম।

বিশ্বজিতের একটাই ভুল, খুব ছোট্ট ভুল, ভুল জায়গায় ভুল সময়ে অবস্থান। শুধুমাত্র অজানা এই ভুলেই কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তাক্ত হোলো সে। কাল বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে টিভিতে বলতে শুনলাম, তিনি যারা আজকের অবরোধে দাঙ্গা হাঙ্গামার কারনে মারা গেছেন তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভুতি কামনা করছেন ( যদিও তার বলার ভঙ্গিমায় বা মুখশ্রীতে তার লেশমাত্র দেখলাম না ), তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন। ভাবছিলাম, এই মুখস্থ করা বুলি আউরানো সান্ত্বনার বানী সদ্য ছেলেহারা এক মায়ের জন্য কতখানি সান্ত্বনার। কল্পনায় মায়ের সামনে ভারপ্রাপ্তকে দাড় করিয়ে দিলাম। জানিনা ভারপ্রাপ্তের জন্য সেটা কতখানি সুখকর হবে, তবে সত্যি সত্যি এমনটা করতে পারলে একটু ভালো লাগতো। তাতে হয়তো ভারপ্রাপ্তরা কিছুটা বুঝতে পারতো এই ধরনের ভাঁড়ামোর মানে।

যারা এই জঘন্য কাজটা করলো, তাদেরও নিশ্চয়ই বাবা মা ভাই বোন আছে, আত্মীয় স্বজন আছে। পত্রিকায় প্রথম পাতায় ছবিতো বেরোলো আজ। তাদের কেমন লাগবে? সেই মা'দের কেমন লাগবে? সেই মা'রা কি পারেনা তাদের এই কুলাঙ্গার ছেলেগুলোকে ধরিয়ে দিতে ? নাইলে এই কুলাঙ্গার গুলোকে জন্ম দেয়ার অপরাধবোধতো তাকেও কুরে কুরে খাবার কথা। আমাদের জননেত্রী কি পারেনা এই ছেলেগুলোকে আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দিতে, যেহেতু অভিযোগ এসেছে যে ছেলেগুলো তার দলেরই লোক। আমাদের বিরোধীদলের নেত্রী কি পারেননা বিশ্বজিতের মায়ের কাছে গিয়ে একটু ক্ষমা চাইতে, যেহেতু তাদের দেয়া অবরোধের কারনেই এই মায়ের বুকটি খালি হোলো। ছাত্রলীগ কি পারেনা এই কুলাঙ্গারকে খুজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে?

এগুলোই সভ্য মানুষের লক্ষন, সভ্য মানুষের অনুভূতি। যতক্ষণনা আমরা এরকম কিছু দেখছি বা অনুভব করছি ততক্ষন আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করতে পারিনা। ততক্ষন পর্যন্ত জননেত্রি পারেননা নিজেকে সভ্য দাবী করতে। বিরোধীদলীয় নেত্রী পারেননা নিজেকে সভ্য দাবী করতে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি পারবেনা নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবী করতে। একই কারনে আমরা, এই জনগণও পারবোনা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করতে। বিশ্বজিতের মায়ের কাছে অসভ্য হয়েই থাকবো আমরা সারাজীবন।

ম্যাক্স ইথার


মন্তব্য

শাওন এর ছবি

আসলেই . আমিও তো থাকতে পারতাম ওই যায়গায় .

তানজিম এর ছবি

ওরা বলে ছাত্রলীগ একাই নাকি শিবির খেদাতে যথেষ্ট, আমি দেখলাম শিবির পেটানোর চেয়ে নিজেরা কিলাকিলি করে আর আমজনতা পেটাতেই এরা বেশি ওস্তাদ !

অতিথি লেখক এর ছবি

হয়ত আমিও লাশ হয়ে হয়ে যাবো।

অপ্রস্তুত লেনিন

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সাবেকা  এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

সৃষ্টিছাড়া এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

যে দেশে শত শত মানুষের সম্মুখে মাত্র কয়েকজন, একজন মানুষকে (হোক না সে যে কোন দলের/মতের) কুপিয়ে মারতে পারে; সে দেশে মানবতা কোথায় থাকে? সেখানে সাধারণ জনতা, পুলিশ, সাংবাদিক ছিলো ও নিশ্চয়ই ছিলো। যে আমরা আজ সবাই মিলেও একজন বিশ্বজিৎকে বাঁচাতে পারিনি, হয়তো কাল আমরা ও কোথাও আক্রান্ত হবো কোন ক্ষমতাসীন কসাই এর নাঙ্গা চাপাতির মুখে। আমরা ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত ও কি পারি না এসব ক্ষমতাসীনদের হাত ভেঙ্গে দিতে ? আমি তার বাবা মাকে বলবো যে ছেলে আপনার জীবন্ত মানুষ কুপিয়ে হত্যা করতে পারে তাকে ত্যায্য পুত্র করুন। আমি অবাক হবোনা হয়তো একদিন ওই চাপাতি হাতের ছেলেটি আমাদের সংসদে বসবে এমপি মন্ত্রী হয়ে। হয়তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ই পাবে সে। আর আমরা সুবিচারের জন্য তার দফতরের বাইরে দিনের পর দিন বসে থাকবো। হায়রে বাঙ্গালী, হায়রে বাংলাদেশী, হায়রে ৭১, হায়রে স্বাধীনতা !--------হেডস অফ আমাদের গণতন্ত্র !

Damama এর ছবি

বেদনায় আমাদেরও শরীর হয়েছে রঙিন ।
Damama

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।