গুলজার
সম্পুরন সিং কারলার জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের ঝিলম জেলার অন্তর্গত দিনা অঞ্চলে ১৯৩১ সালে। যখন স্কুলে পড়তেন তখন তাঁর বাবার একটি টুপি ও থলি বিক্রির দোকান ছিল। সেই দোকানে স্কুল থেকে ফিরে রোজ রাত্রে থাকতে হত তাকে। তিরিশের দশকের অখণ্ড ভারতবর্ষের কথা। দোকানের গলির মোড়ে একটা ছোট্ট বইয়ের দোকান ছিল। সেখানে চার আনা, পাঁচ আনার বিনিময়ে নানান রঙ বেরঙের বই এক সপ্তাহের জন্য ধার পাওয়া যেত, সম্পুরন স্কুল থেকে ফেরার পথে রোজ বইগুলোর দিকে তাকাতেন আর গোয়েন্দা গল্পগুলির বইয়ের মলাট দেখে খুব আকৃষ্ট হতেন। শেষমেশ ঠিক করলেন গোয়েন্দা গল্পগুলি না পড়লেই নয়। এদিকে রোজ স্কুল থেকে ফিরে দোকানে দীর্ঘ সময় একাকী কাটানো তাঁর পক্ষে ভীষণ একঘেঁয়ে হয়ে গিয়েছিল। এই বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির জন্য তিনি চার আনার বিনিময়ে রোজ সেই দোকান থেকে গোয়েন্দা গল্প নিয়ে হারিকেনের চিমনি থেকে নির্গত অল্প আলোয় রাত জেগে পড়তে শুরু করে দিলেন। প্রতিটি রাতে গোয়েন্দা গল্প শুরু করেন আর ক্লাইম্যাক্স না আসা পর্যন্ত তাঁর পড়ার আগ্রহ যেন শেষই হয়না! একটি বই শেষ হয় তো তার পরের দিনই চার আনার বিনিময়ে আরেক বইয়ের জন্য আবদার। দোকানি তিতিবিরক্ত হয়ে বইয়ের উঁচু তাক থেকে একটি বই যা কেউ পড়ে টড়েনা, তাঁর হাতে গছিয়ে দিলেন একদিন। সেই বই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "দি গার্ডেনার" এর উর্দু অনুবাদ। আর এই বইই তাঁর জীবনের মোড়, তাঁর চিন্তা ভাবনা, তাঁর পঠন পাঠন সবকিছু যেন বদলে দিল এক নিমিষে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কারলা পরিবার পাকিস্তান থেকে বোম্বের এক অনিশ্চিত জীবনের পথে যাত্রা শুরু করলেন। সম্পুরন তখন সুদর্শন, দীর্ঘদেহী ও ছিপছিপে তরুণ। সুললিত কণ্ঠের অধিকারী, অনুকরণীয় ভঙ্গীতে কথা বলেন, কাজ নিয়েছেন মোটর মেকানিকের, একটি গ্যারেজে। বই পড়ার নেশা তার শেষ হয়নি। ইদানিং একটু আধটু গল্প লিখতে শুরু করেছেন, সেই সাথে গীতিকবিতা। তাঁর লেখালেখি দেখে বাবা ঠাট্টা করে বলতেন এমন লেখক হবার বাসনা থাকলে সারাজীবন ভাইদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে! এই ঠাট্টা সম্পুরন গায়ে মাখতেন না। গ্যারেজের কাজে সম্পুরনের মন ছিলনা, লেখক হতে চেয়েছিলেন সবসময়। গ্যারেজে কাজ করতেন ঠিকই তবে বন্ধু বান্ধব বাগিয়েছিলেন মূলত যাঁদের লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল। তাঁদের সাথে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সংঘে ঘুরঘুর করতেন, প্রগতিশীল লেখক সংঘে যেতেন আর এই যাতায়াতের ফলে মহান গীতিকার শৈলেন্দ্রর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হল, বোম্বে ইয়ুথ কয়্যারেও যেতেন বলে ওখানে সলিল চৌধুরীর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠলো। এর মাঝে তিনি সঙ্গী হিসেবে পান বাংলার দেবু সেনকে যিনি বাংলায় গজল লিখতেন, তাঁর প্ররোচনায় কিছু বাংলা ফোক সঙ্গীত সম্পুরন উর্দুতে অনুবাদও শুরু করে দিলেন, এই দেবুই তাঁকে হাতে ধরে নিয়ে যান তখন ভারতের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নির্দেশক বিমল রায়ের কাছে। এর মাঝে সম্পুরন টুকটাক লেখা শুরু করেছেন, এখানে ওখানে ছাপা হচ্ছে তাঁর গল্প ও কবিতা, তবে লিখে আর কতটুকু কি পাওয়া যায়, শুধু লেখক সত্তাকে জাগিয়ে রাখার জন্য লেখালেখির চর্চাকে টিকিয়ে রাখা, নইলে কাজ তো সেই মোটর মেকানিকের! দেবু তাঁকে বিমলদার কাছে নিয়ে গেলেও চলচ্চিত্রে গান লেখার ব্যাপারে সম্পুরনের বিরূপ মনোভাব ছিল, তিনি লিখবেন কবিতা-গান-ছোটগল্প, সেগুলি ছাপা হবে নামকরা সব সাহিত্য পত্রিকায়, তাঁর ওঠাবসা হবে সাহিত্যের সব দিকপালদের সাথে, ফিল্মে গান লেখা তাঁর পোষাবে কেন!
হঠাৎ একদিন শৈলেন্দ্র তাঁকে ধরে পিড়াপিড়ি শুরু করলেন আর বললেন "বন্দিনী" চলচ্চিত্রের সুর ও গীত নিয়ে তাঁর সাথে শচীন দেব বর্মণের কি এক বিষয় নিয়ে গোল লেগে আছে, তাঁদের মান অভিমানের কোনও সুরাহা হচ্ছেনা, কাজেই সম্পুরন যেন বন্দিনীর পরিচালক বিমল রায়ের সাথে দেখা করে। এদিকে শৈলেন্দ্রর অনুরোধে বিমল রায় সম্পুরনকে কিছু গান লিখে দেয়ার জন্যে অনুরোধ করলে সম্পুরন তাৎক্ষনিকভাবে লিখে দেন, "মোরা গোরা আঙ্গ লাই লে" গানটি, কিন্তু এই গানে সুরারোপ হবার পর বাধ সাধলেন শচিন কত্তা, উনি কিছুতেই এই অর্বাচীন ছোকরার গানে সুর দেবেন না আর, শৈলেন্দ্রকে তাঁর চাইই চাই! অগত্যা শচিন কত্তার অনুরোধে রাজী হতে হল বিমলদাকে। তবে এই ঘটনা বিমলকে ভীষণ পীড়া দিল, ভাবলেন ছেলেটি এত চমৎকার গান লেখার পরেও কত্তা জেদ ধরে বসে আছেন! এরপর উনি নিজেই সম্পুরন কে প্রস্তাব দিলেন যে, "দেখো, ফিল্ম হল নির্দেশকের মাধ্যম, তুমি আমার প্রোডাকশনে সহকারী হিসেবে কাজ কর, আমি কাবুলিওয়ালা নামে নতুন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছি, তোমার ভালো লাগবে, তবে শর্ত একটাই, কথা দাও, আর কখনই ওই মোটর গ্যারেজে ফিরে যাবেনা, আর কখনই ওখানে নিজের সময় অপচয় করবেনা!" এই ঘটনার কথা স্মরণ করলে আজ অব্ধি সম্পুরনের গলা শুকিয়ে আসে। এমন মমতা মাখানো কথা আজ পর্যন্ত উনি উনার পরিবারের কারো কাছ থেকেও শোনেননি! উনি কথাটি শোনামাত্র কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, সেই থেকে বিমলদা তাঁর গুরু, শুধু গুরুই নন বিমল রায় সম্পুরনের পিতাসমান ভূমিকা পালন করেন তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। সম্পুরন কাবুলিওয়ালা চলচ্চিত্রের সংলাপ এবং গীত রচনা করেন যা পরবর্তীতে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। গল্প, সংলাপ ও গীত রচনার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্দেশনার খুঁটিনাটি, সংলাপ রচনা, এডিটিং এর কলা-কৌশল শেখা, এইসব কিছুই বিমল হাতে ধরে শিখিয়েছেন সম্পুরনকে যা সেই জামানায় অসম্ভব ছিল। আর সম্পুরন গভীর মনোনিবেশ আর আত্মনিবেদনের সাথে শিখেছেন সবকিছু একে একে।
বিমল রায়ের মৃত্যুর পর অসিত সেনের "খামোশি" চলচ্চিত্রের জন্য রচিত গান তাঁকে ব্যাপক প্রশংশিত করে। এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত কুমারের সাথে তার অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে এই সিনেমার সুবাদে। তখন হেমন্ত কুমার ভারতবর্ষের শীর্ষস্থানীয় কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক, সম্পুরন বাংলা সাহিত্যের মনোযোগী পাঠক এবং বাংলা অনুরাগী মানুষ। হেমন্ত বোম্বে থেকে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে গান গাইবার নিমিত্তে গেলে সম্পুরন হতেন নিত্য সঙ্গী। রাতভোর গান বাজনা তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, অনর্গল বাংলায় বলতেও পারতেন আর একই সাথে রপ্ত করে নিয়েছেন বাংলার খাবার-দাবার, পোষাক আশাক সব কিছু! এর পরে বাঙালি অভিনেত্রী রাখির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাংলার সাথে যোগটা আর দৃঢ় হয়েছিলো তাঁর।
সম্পুরন সিং কারাল, হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে গুলজার হিসেবে সুপরিচিত। হিন্দি সিনেমা জগতে ব্যাপক সাফল্য ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তাঁর। বিমল রায়ের মৃত্যুর পর হৃষীকেশ মুখার্জি এবং রাহুল দেব বর্মণের সাথে তাঁর গড়ে ওঠে এক দীর্ঘমেয়াদী যুগলবন্দী। হৃষীকেশের যুগান্তকারী চারটি চলচ্চিত্র "আনন্দ", "গুড্ডি", "চুপকে চুপকে" এবং "নেমক হারাম" সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ তাঁর রচিত। আর রাহুলের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব এখন প্রায় মিথে পরিণত, এনিয়ে রাহুল ভক্তদের জানার আগ্রহের শেষ নেই! রাহুল-গুলজার জুটি হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এমন কিছু গান শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন যা কালজয়ী হিসেবে বিবেচিত। উদাহারন হিসেবে শুধু একটি চলচ্চিত্রের নাম ধরা যাক, "ইজাজাত।" ইজাজাত চলচ্চিত্রের চারটি অনন্য,অপূর্ব গান রয়েছে যা আশার কণ্ঠে স্মরনীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। এই জুটি হিন্দি সিনেমাকে দিয়েছেন আন্ধি চলচ্চিত্রের "তেরে বিনা জিন্দেগি সে", পরিচয় চলচ্চিত্রের "মুসাফির হুঁ ইয়ারো", কিনারার "নাম গুম জায়েগা", খুশবুর "ও মাঝিরে", লিবাস এর "সিলি হাওয়া ছুঁ গ্যায়ি", গোলমাল এর "আনেওয়ালা পাল", মাসুম এর চারটি অবিস্মরণীয় গান, নারাম গারামের "মেরে আঙ্গানা আয়ে রে", ঘার এর "তেরে বিনা জিয়া যায়েনা","আজকাল পাঁও নেহি পাড়তে মেরে", "আপকি আঁখো মে কুচ্", বাসেরার "আউঙ্গি এক দিন", চুপকে চুপকের "আভ কে সাজান সাওয়ান মে", জিভার "রোজ রোজ আঁখো তালে", সিতারার "ইয়ে সায়ে হ্যায়", খুবসুরাতের " পিয়া বাঁওয়ারি", কিতাব এর "মাস্টার জি কি আ গ্যায়ি" ইত্যাদি। এছাড়াও শুধু আশার কণ্ঠে তাঁরা একটি অসাধারণ নন ফিল্ম এ্যালবাম নির্মাণ করেন, "দিল পারোসি হ্যায়।" রাহুলের মৃত্যুর পর তিনি "পঞ্চম" নামের একটি দুর্দান্ত এ্যালবাম বের করেন যেখানে তাঁর অনুপম বাচনভঙ্গিতে কিছু দারুন স্মৃতিচারণ রয়েছে। রাহুল ছাড়াও তাঁর উত্তম সঙ্গত ছিল সলিল চৌধুরী, হেমন্ত কুমার, রাজেশ রশন, লক্ষিকান্ত প্যারেলাল, মদনমোহন এবং হালের এ আর রাহমান ও বিশাল ভারাদ্বাজদের সাথে। এর মাঝে তিনি বিশালকেই রাহুলের পর তাঁর সবচাইতে উত্তম জুটি হিসেবে মনে করেন।
চলচ্চিত্রের গল্প রচনাতেও গুলজার অসাধারণ নৈপুন্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ষাটটি চলচ্চিত্রের গল্প লিখেছেন। বিশেষ করে কিছু চলচ্চিত্রের কথা এখানে না বললেই নয়। যেমন রমেশ সিপ্পির "আন্দাজ", রমেশ শরমার "নিউ দিল্লি টাইমস", কল্পনা লাজমির "এক পাল", শেখর কাপুরের "মাসুম", ভিমসেনের "ঘারোন্দা" এবং প্রকাশ ঝার "হিপ হিপ হুররে।" মজার ব্যাপার হল এই মাইলস্টোন হিন্দি সিনেমাগুলির প্রতিটি আনকোরা নতুন নির্দেশকদের চলচ্চিত্র।
গুলজার আজ পর্যন্ত ১৭ টি চলচ্চিত্রে নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন। এবং তাঁর চলচ্চিত্র বরাবরই ব্যাপক প্রশংশিত হয়েছে। তাঁর গল্প বলার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তিনি রাজনীতি, সমাজ ও বিপন্ন সময়ের অস্থির তারুণ্য নির্ভর চলচ্চিত্র যেমন "মেরে আপনে", "মাচিস" ও "হু তু তু" নির্মাণ করেছেন তেমনি মানুষের জীবনের জটিল সম্পর্কের সূক্ষ্ম পর্দাগুলো উন্মোচনের চেষ্টাও করেছেন "ইজাজাত", "লিবাস", "আন্ধি", "কোশিশ", "নামকিন", "লেকিন", "মওসাম", "কিনারা" এবং "আচানক" সিনেমায়। একদিকে যেমন তিনি দম ফাটানো হাসির চলচ্চিত্র "আঙ্গুর" নির্মাণ করেছেন আবার আরেকদিকে ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনেছেন মিরা বাঈকে। একদিকে যেমন তিনি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন "কিতাব" আবার অপরদিকে সাহিত্যের পাতা থেকে তুলে এনেছেন "পরিচয়" ও "খুশবু" কে। এই ১৭ টি চলচ্চিত্রের নির্মাণ শৈলী এবং তাঁর রচিত লিরিক তাঁকে বলা যায় অমরত্ব এনে দিয়েছে। একসময় ছিল যখন মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পীরা তাঁর চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ খুঁজতেন, যেমন ধরা যাক সঞ্জীব কুমার তাঁর নির্দেশনাতেই পাঁচটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী সিনেমায় অভিনয় করেছেন ("কোশিশ", "আন্ধি", "নামকিন", "মওসাম" এবং "আঙ্গুর"), জিতেন্দ্র "পরিচয়", "খুশবু" এবং "কিনারা" চলচ্চিত্রে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন, হেমা মালিনী "খুশবু", "মিরা" ও "কিনারা" সিনেমায় নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছেন, আবার বিনোদ খান্নাকে দেখি "মেরে আপনে", "আচানক" ও "লেকিন" চলচ্চিত্রে নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবতার হিসেবে পরিচয় দিতে। গুলজারকে একবার জিজ্ঞেশ করা হয়েছিল নির্দেশক হিসেবে তাঁর সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পার্থক্য কতটুকু, উনি বিনয়ের সাথে জবাব দিয়েছিলেন, সত্যজিৎ যে স্কুলের ক্লাস রুমে ছাত্রদের পড়াচ্ছেন, উনি তা বাইরে থেকে শুনে চলেছেন, এখনও ভেতরে ঢোকার অনুমোদন মেলেনি!
গুলজারের কলম ক্লান্তিহীন ভাবে লিখে চলেছে এখনও, উনি দুই হাতে গীতিকবিতার পাশাপাশি কবিতা, শের-শায়েরি, নাজম লিখেছেন। সুফি ঘরানার গান লিখেছেন যাতে কণ্ঠ দিয়েছেন আবিদা পারভিন এবং রেখা ভারাদ্বাজ, জাগজিতের সাথে উনি "মারাসিম" নামের একটি উচ্চ প্রশংশিত গজলের এ্যালবাম বের করেছেন। গজলের প্রতি অনুরাগ এবং মির্জা গালিবের প্রতি ভালোবাসা থেকে উনি আশির দশকে নির্মাণ করেন সাড়ে ছয় ঘণ্টার অনবদ্য টেলি সিরিয়াল "মীর্জা গালিব", যেখানে গালিবের চরিত্রে জীবনের সেরা অভিনয় করেন নাসিরুদ্দিন শাহ এবং যাতে অসাধারণ সুরারোপ করেন জাগজিত সিং। এই কাজটি গুলজার এখন পর্যন্ত তার জীবনের সেরা কাজ হিসেবে গণ্য করেন। গুলজার ভারতের সাহিত্য জগতের সবচাইতে বড় পুরষ্কার সাহিত্য একাডেমী পুরষ্কার পেয়েছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে। তিনি এখন অব্ধি ১৯ টি ফিল্ম ফেয়ার পুরষ্কার, পাঁচটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং ২০০২ সালে ফিল্ম ফেয়ার লাইফটাইম এচিভমেন্ট পুরষ্কার পেয়েছেন। এইতো কিছুদিন আগেই "স্লামডগ মিলিওনেয়ার" চলচ্চিত্রে "জায় হো" গানটির লিরিক লিখে পেয়েছেন অস্কার এবং গ্র্যামি দুটোই।
শুধু পুরষ্কারের সংখ্যা দিয়ে গুলজারের কীর্তিকে বোঝা সম্ভব নয়। গুলজারের বর্ণাঢ্য কীর্তির পেছনে রয়েছে সাহিত্যের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, গীতিকবিতার ওপর তাঁর সহজাত দখল, চিত্রকল্প নির্মানে অসাধারন দক্ষতা, সিনেমা শিল্পকে গভীরভাবে অধ্যয়ন এবং তাঁর আগেপরের সকল কবি সাহিত্যিকদের প্রতি তাঁর বিনয়চিত কৃতজ্ঞতা- এসবকিছুই গুলজারের চরিত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। গুলজার শতায়ু হন, তাঁর হাত দিয়ে রচিত হোক আরও শত শত হীরক খণ্ড, এই কামনা করি।
রাহুল দেব বর্মণের সাথে গুলজার
লেখার টেবিলে গুলজার
(ছবিগুলি নেট থেকে সংগৃহীত এবং কতিপয় তথ্য দূরদর্শনে প্রচারিত গুলজারের একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া হয়েছে)
আমার আগের লেখাগুলিঃ
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47352
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47352
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47085
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47071
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47126
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47038
- মনি শামিম
মন্তব্য
শামিম ভাই, আপনার গতানুগতিক লেখা অর্থাৎ ছবিব্লগ থেকে বের হয়ে ইতিহাসের চিপায় পরে থাকা হীরক খন্ডকে বের করে তার জীবনিটা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা এক কথায় অসাধারন। যে সিনেমা ও গানগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো এমন কোন হিন্দি সিনেমা প্রেমী নাই যে দেখে বা শোনে নাই। যে কারিগ এগুলো পর্দার আড়াল থেকে তৈরি করেছে তার পরিচয় আপনার লেখা পড়ার আগ পর্যন্ত পাইনি বা খোঁজার চেষ্টা করিনি। তবে তার জীবনের যে উত্থান, সেটা আসলেই সিনেমাকেও হার মানবে। এ ধরনের আত্মজীবনী পজেটিভ মানুষ গড়ার প্রভাবক হিসাবে কাজ করবে। নন স্টপ লেখা চালিয়ে যান।
ধন্যবাদ। জিল্লুর ভাই, গুলজার কিন্তু হিন্দি সিনেমা জগতে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একজন গীতিকার, গল্পকার, সংলাপ রচয়িতা এবং গুণী চলচ্চিত্র পরিচালক। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা যারা হিন্দি গান শুনছি ছোটবেলা থেকে, গীতিকাররা বরাবরই আমাদের আমাদের অন্তরালে রয়ে গেছেন। আমরা সঙ্গীত পরিচালক আর কণ্ঠশিল্পীকে বাহবা দিতে যত না অকুণ্ঠ, গীতিকারকে খুঁজে নিতে ততটাই অনীহ। শুধু হিন্দি গানই নয়, বাংলা আধুনিক গান এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ভারতে অবস্থাটা ভিন্ন। সেখানে গীতিকারদের অতি উচ্চ মর্যাদায় আসন দেয়া হয়। এইজন্য গুলজারদের মত জাত লিরিক রচয়িতা থাকেন পাদপ্রদীপের আলোতেই। ভাবছি এমন যুগান্তকারী শিল্পীদের নিয়ে আরও কিছু লেখা যায় কিনা! তথ্য সংগ্রহ করাটা সময়সাপেক্ষ তবে অসম্ভব তো নয়। দেখা যাক।
-মনি শামিম
বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
ধন্যবাদ মনিকা আপা, আপনি অনেকদিন লিখছেন না কিন্তু!
-মনি শামিম
জবের হয়েছে, ব্যপক তথ্যপূর্ণ লেখা।
facebook
বলছিস?
-মনি শামিম
সাগর সিঞ্চন করে মনি মানিক্য উপহার দিয়েছেন! ধন্যবাদ!!
আব্দুল্লাহ এ.এম.
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
-মনি শামিম
সুন্দর হয়েছে লেখাটা ! অভিনন্দন শামিম !
এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বিমল রায়-ই তো আমাদের প্রখ্যাত লেখক বিমল মিত্র, তাই নয় কি ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণদা। বিমল রায় আর বিমল মিত্র এক নন। বিমল মিত্র পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সাহিত্যিক, সেতো আপনার জানা। বিমল রায় ভারতের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং নির্দেশকদের মধ্যে একজন। উনার নির্দেশিত "দো বিঘা জমিন", "মধুমতি", "সুজাতা" এবং "বন্দিনী" ভারতের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। উনার নির্দেশিত মধুমতি চলচ্চিত্রটি নয়টি ফিল্ম ফেয়ার পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল যার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ঋত্বিক ঘটক এবং সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন সলিল চৌধুরী।
-মনি শামিম
জী, আমরা যাঁরা এখন প্রৌঢ়, মানে এ উপমহাদেশের, তাঁরা প্রায় সকলেই 'গুলজার' নামের সাথে কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু তাঁর পরিচয়টা আপনার লেখা থেকেই জানলাম।
ধন্যবাদ, এমন একটি তথ্যবহুল লেখার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকেও, ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য।
-মনি শামিম
চমৎকার লেগেছে আপনার লেখাটি। তার অনেক গানই মানুষের কাছে প্রিয় কিন্তু তার জীবনালেখ্য সম্পর্কে অনেকেই বিশেষ কিছু জানে না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
গুলজার সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই আগ্রহটাকে জাগিয়ে রেখেছি। উনি আমার খুবই প্রিয় গীতিকার এবং চলচ্চিত্র নির্দেশক। উনার ইজাজাত চলচ্চিত্রের ভক্ত অনেকদিন থেকে। লেখাটি উনার প্রতি এক ক্ষুদ্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর রাতঃদা, উনার বাচনভঙ্গি এবং কণ্ঠ এত চমৎকার, মনে হয় সারাদিন উনার কথা শুনলেও শোনার আগ্রহ শেষ হবেনা!
-মনি শামিম
আমি সমগ্র জীবনে হিন্দি সিনেমা দেখেছি হাতে গোনা অল্প কয়েকটি । তারমধ্যে মনে দাগ কেটে আছে “অভিমান” ছবির গান ভীষনভাবে । আঁধি ছবিটি দেখা হয়নি কখনো । এই ছবির এই গানটি আমাকে ভীষন বিষন্ন করে দেয় ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধন্যবাদ। "অভিমান" চলচ্চিত্রের গান কিন্তু গুলজার লেখেননি, লিখেছেন শ্রদ্ধেয় মজ্রুহ সুলতানপুরি। আমার মতে "অভিমান" চলচ্চিত্রের সাতটি গান শচিন কত্তার অন্যতম সেরা কম্পোজিশন। "আন্ধি" চলচ্চিত্রের দুটি গতি, এবং সুচিত্রা সেন এবং সঞ্জিব কুমারের অভিনয় কালজয়ী।
মনি ভাই, লেখা যথারীতি চমৎকার। আপনার লেখা পড়ছি, যদিও মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনি।
অঃটঃ আপনার কথা শুঞ্ছি।
ধন্যবাদ কুমার। আমার কথা শুনছেন কিভাবে, জানতে আগ্রহী।
-মনি শামিম
দারুণ! নতুন করে জানলাম একজন মহীরুহকে। ধন্যবাদ।
ফারাসাত
ধন্যবাদ আপনাকেও ফারাসাত।
-মনি শামিম
নতুন মন্তব্য করুন