এক।।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্র থেকে জানা যায়, বহু বছর আগে পৃথিবীর মানব সভ্যতা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই পৃথিবীতে এক সময় মানুষ শিল্প ও বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। এর পর বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে যুদ্ধের কারণে সেই সভ্যতা বিলুপ্ত হয়- প্রাচীন পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা (যাকে তারা ঈশ্বর-আল্লাহ-ভগবান-গড ইত্যাদি নামে ডাকতো) নিহত হন।
তার বহু বছর পর পরম করুণাময়ী সর্বশক্তিময়ী ঈশ্বরী ঠিক করেন আবার মানবী সভ্যতার জন্ম দেবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রথম নারী এডা-কে তৈরি করেন এবং তাকে স্বর্গে বড় করে তুলতে থাকেন। এডা বড় হওয়ার পর তার খুব একা একা লাগতে থাকায় এডার ডান পাঁজরের হাড় থেকে ঈশ্বরী তৈরি করেন নতুন পৃথিবীর প্রথম পুরুষ ইভোকে। নতুন পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে জানা যায়, ইভো ঈশ্বরীর বিরুদ্ধাচারণকারী "শয়তানী"র প্ররোচণায় এডাকে জ্ঞান বৃক্ষের ফল খেতে উৎসাহ দেন। এতে ঈশ্বরী তাদের শাস্তি দিতে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করেন এবং তা থেকেই পৃথিবীতে নতুন মানবীসভ্যতা গড়ে ওঠে।
দুই।।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীণকালে পৃথিবী ছিল পিতৃপ্রধান (ঠিক যেন আগের পৃথিবীর ইতিহাসের বিপরীতে কিন্তু ধ্বংসের আগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে)- কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে নারীরা ঈশ্বরীর ইচ্ছায় ও সহযোগিতায় এগিয়ে যায়। মহাশক্তিময়ী-পরম করুণাময়ী ঈশ্বরী একে একে নানা নারী অবতারী পাঠান। এই অবতারীরা সবাই নারী হলেও তারা নিপীড়িত পুরুষ জাতিকে যথাযথ সম্মান-সুরক্ষা প্রদান করেন। পুরুষেরা যেন ঘরের কাজ ঠিকভাবে করেন-নারীর সেবা ঠিক ভাবে করতে পারেন, এবং নারীর কামনার আগুণ থেকে বাঁচতে পারেন সেজন্য উনারা নানা ধর্মের মাধ্যমে শান্তির বাণী ও ঈশ্বরীর মহিমা প্রচার করে পুরুষের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করেন।
ঈশ্বরী সমাজের ভারসাম্য ও নারীদের সুবিধার জন্য একাধিক পুরুষকে একসাথে বিয়ে ও সংসার করার অধিকার প্রদান করেন। পুরুষ দেখলেই নারীর কামনা জাগ্রত হয় বলে ঈশ্বরী সর্বশেষ ধর্মের মাধ্যমে পুরুষদের সঠিকভাবে পোশাক পরিধান ও পর্দা করার নির্দেশ দেন-পুরুষদের বাইরে বের হওয়া ও বাইরের কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যেসব নারী-পুরুষ ঈশ্বরীর বিধান মেনে চলবে তাদের জন্য বরাদ্দ করেন স্বর্গপ্রাপ্তিঃ নারীরা স্বর্গে গেলে পাবেন অসীম সময় ধরে সুখ-আনন্দ ও অগুণতি অপূর্ব সুন্দর পুরুষ ভোগের সুযোগ। অন্যদিকে পুরুষেরাও পাবেন সুখ-আনন্দ এবং তার বিবাহিত নারীকে অসীম সময়কাল ধরে সেবা করার সুযোগ। এভাবেই মানবীসভ্যতা এগিয়ে যায় ঈশ্বরী ও তার প্রেরিত নারীদের নির্দেশনায়।
তিন।।
২০১৩ সালের একদিনঃ রহিমা ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই নামাজটা পড়ে নিলেন। তার স্বামী করিম অবশ্য তার আগে উঠেই সবকিছু গুছিয়ে রাখে। করিম এরপর রহিমার জন্য চা'য়ের ব্যবস্থা করে। মাঝে মাঝে অবশ্য রহিমার শারীরিক চাহিদারও ব্যবস্থা করতে হয়। এরপর করিম ব্যস্ত হয়ে পড়ে নাশতা আর রহিমার জন্য অফিসের দুপুরের খাবারের রান্না চড়াতে। আজ করিমের শরীরটা ভাল না। তাই কাজের ছেলে কুদ্দুসকে বলে রহিমার নাশতা তৈরি করতে। রহিমা বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে পেপার পড়া শেষ হলেই তার নাশতা চাই। কুদ্দুসের বয়স মাত্র চৌদ্দ হলে কি হবে, সে বেশ সুঠামদেহী আর চালাক চতুর। কুদ্দুস নাশতা তৈরিতে লেগে যায়। করিম বিছানায় শুয়ে পড়ে।
রহিমা বারান্দায় চা খেতে খেতে দৈনিক সুবেহ সাদিক পড়তে থাকেন। সুবেহ সাদিক তার প্রিয় পত্রিকাঃ এই যে জামাত নেতা রাজাকার সাঈদী বেগমের ফোনসেক্স বা কারও সাথে কথার কোন খবরই নাই! অন্য কারও হইলে হেডলাইন নিউজ হতো!
পেপার পড়তে গিয়ে প্রথম খবরেই মেজাজটা খিঁচড়ে যায়। জামায়াতের মিছিলে পুলিশী হামলা! দেশটাতে হচ্ছে কী! অধর্মে-দুর্নীতিতে ছেয়ে যাচ্ছে দেশ, এর মধ্যে একমাত্র আশার আলো জামায়াত-শিবির। শিবিরের মেয়েরা কত কষ্ট করছে দেশের মানবীদের ঈমান-আকিদা ঠিক রাখতে। নাহ, ধর্মহীন সরকার বেশি ইতরামি শুরু করেছে। আরেকটা খবর দেখলেনঃ দিল্লিতে একটা ছেলেকে কয়েকটা মেয়ে মিলে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছে আর সেখানে চলছে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। এখন দেশের নানা জায়গা থেকে খবর আসছে পুরুষ নির্যাতনের- অনেক পুরুষকেই মেয়েরা ধর্ষণ করেছে নাকি। তো পুরুষ যদি বেলেল্লাপনা করে, বোরখা না পরে বাইরে যায়, নারীর কি দোষ! নারী তো উত্তেজিত হতেই পারে! ফুল দেখলে কার না পেতে ইচ্ছা হয়? কিংবা ছোলা কাঁঠাল দেখলে কার না খেতে মন চায়? পুরুষকে যদি প্যাকেটে না রাখা হয় মাছি তো বসবেই? কি দরকার ছিল এত রাতে বাইরে গিয়ে বাসে চড়ার!
মাথা ঠান্ডা করতে তিনি বিনোদন পাতায় নজর দেন। বাহ, ইন্ডিয়ান পুরুষ পর্নস্টার সান লিওন নাকি আরেকটা মুভিতে নগ্ন হয়েছে- একটা অর্ধনগ্ন ছবিও ছাপা হয়েছে। তার পাশেই হলিউডের নায়ক লিন্ডস লোহান-এর নতুন সেক্সটেপ বের হওয়ার খবর! আহ, মনটাই ভাল হয়ে গেল। তিনি মনোযোগ দিয়ে সান লিওন আর লিন্ডস-এর ছবি দেখতে থাকেন। শরীরটা একটু গরম হয়ে যায়। এজন্যেই তিনি সুবেহ সাদেক পড়েন- তারা রহিমার মত মানুষের মনোমত খবর ছাপায়। তখন কুদ্দুস নাশতা নিয়ে বারান্দায় ঢুকে। কুদ্দুসের সুঠাম দেহ তার ভাল লাগে- তিনি কুদ্দুসকে কাছে ডাকেন। এই বাড়ির নিয়ম অনুসারে কুদ্দুসও পর্দা করে। তিনি সরাসরি কুদ্দুসকে বলেন তার মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতে। কুদ্দুস জানে গরীব হয়ে জন্ম নেয়া কত বড় পাপ- সেজন্য তাকে মাঝে মাঝেই সওয়ার হতে হয় এই কদাকার দেড়শ কেজি ওজনের কুৎসিত বস্তার ওপর। কুদ্দুস নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়...
কাজ শেষ হলে রহিমা তৈরি হতে থাকেন অফিসের জন্য। আজ বিকালে তার একটা সেমিনারে ভাষণ দিতে হবে, "নারীর ঈমান-আকিদা রক্ষায় পুরুষের পর্দার ভূমিকা" তিনি মনে মনে একটা তৃপ্তি বোধ করেন, দেশের অধিকাংশ পুরুষ এখন বোরখা করে। নিজের ছেলেদেরও তিনি পর্দা করতে বাধ্য করেন- তার ছেলেরাও বড় হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে তাদের দেখে তিনি শরীরে গরম বোধ করেন। ওহহো, সেমিনারে এই পয়েন্টটা যোগ করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বে ইনসেস্ট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তার মনে অবশ্য আক্ষেপ একটা মেয়ের জন্য। কিছুদিন আগে নাফিসা নামের এক মেয়ে আমেরিকার ষড়যন্ত্রে বোমা মারার সময় ধরা পড়েছে- তিনি চেয়েছিলেন, নাফিসার মত একটি জেহাদী মেয়ে যে তাকে এইরকম গর্বিত করবে। কিন্তু করিম তাকে দিয়েছে তিনটি ছেলে। আফসোস।
তার হঠাৎ মনে পড়লো, অফিসে মোখলেস নামে একটা ছেলে জয়েন করেছে, তিনি নিজে ছেলেদের অফিসে কাজ করার বিরোধী- ছেলেদের কাজ হলো ঘরে। কিন্তু মোখলেসকে তার ভাল লাগে। মাঝে মাঝে পর্দার ভেতর দিয়ে মোখলেসের পায়ের গোড়ালি-বাহুর সুঠাম গড়ন দেখে পুলকিত হন। পর্দার আড়ালে থাকলেও তিনি মোখলেসের দেহ নিয়ে কল্পনা করেন, তার বংশদন্ডের পরিমাপ করেন আর মনে মনে উত্তেজিত হন। একদিন মোখলেসকে একলা পেতে হবে, মাত্রই জয়েন করেছে। দেখা যাক... রহিমা প্যান্টের জিপার লাগাতে লাগাতে একটা ছুতো তৈরি করতে থাকেন!
- নির্বোধ
মন্তব্য
এই ভাবে, এই ভাবে করে বলে না নির্বোধ অতি বিশ্বাসীরা ব্যথা পায়
ঈশ্বরী কথাটা পছন্দ হয়েছে। একটা ঈশ্বর নিয়ে বেশ ঝামেলা বেঁধে গেছে সবার। একটা ঈশ্বরী থাকলে ভাল হতো
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
থ্যাংকু- ঈশ্বর থাকলে ঈশ্বরীও থাকা উচিত বলে মনে হয়
ট্যাগের সংখ্যা কমান। এতগুলো ট্যাগের প্রয়োজন দেখছিনা।
বিকল্প ভবিষ্যতে শ্রীমান ঈশ্বর বা শ্রীমতি ঈশ্বরীকে বাদ দেন, দেখবেন অনেক কিছু সহজ হয়ে গেছে।
আজ থেকে ১০৭ বছর আগে পুরুষতান্ত্রিক পৃথিবীর বিকল্প নারীতান্ত্রিক পৃথিবীর কথা রোকেয়া (বেগম রোকেয়া বললাম না, ওটা তাঁর নাম নয়) তাঁর 'সুলতানার স্বপ্ন'-এ বলে গেছেন। গত একশ' বছরে দুনিয়াটা বা আমাদের দেশ আমূল না পাল্টালেও কিছু কিছু তো পাল্টেছে। তাই আমাদের চিন্তার ধারাতেও কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। পুরুষতান্ত্রিকতার বোগাস বেলুনটাকে ফাটানোর জন্য তাই একশ' বছরের পুরনো আইডিয়ার বদলে আরও নতুন আইডিয়া চাই।
লেখা অব্যাহত থাকুক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অনেক ধন্যবাদ গঠনমূলক সমালোচনার জন্য। সুলতানার স্বপ্ন পড়েছিলাম প্রায় ২০ বছর আগে। তাই ভুলে গিয়েছিলাম। এই লেখাটার মূল উদ্দেশ্য আসলে পুরুষতান্ত্রিকতার চেয়ে শোষণে-শাসনে ধর্মের ব্যবহার নারীরাও করতে পারে সেটা মনে করিয়ে দেয়া।
থ্যাংকু!
লাভটা কি হল রে ভাই, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে যদি ছেলেদের জায়গাই মেয়েরা ছেলেদের উপর অন্যায় অত্যাচার করতে থাকে তাহলে তো যেই লাউ, সেই কদু। আসলে পুরুষতান্ত্রিক বা মহিলাতান্ত্রিক কোন একক তান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা দ্বারা আমাদের সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হলে অবস্থার পরিবর্তন কোনদিন আসবেনা। মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে তার কর্ম এবং চিন্তার দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে।
এমনিতে লেখা ভাল হয়েছে। আরও লিখুন।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অনেক
উপরে ক্লারিফিকেশন দিয়েছি, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ধর্মটাকে রিভার্স ভাবেও ব্যবহার করা যায় পুরুষের উপর, তাই সাবধান। ভবিষ্যতের চেয়ে মনে হয় প্যারালাল ইউনিভার্স হলে ভাল হতো!
"লাভটা কি হল রে ভাই, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে যদি ছেলেদের জায়গাই মেয়েরা ছেলেদের উপর অন্যায় অত্যাচার করতে থাকে তাহলে তো যেই লাউ, সেই কদু।"
ঈশ্বরের মৃত্যুবরনের ব্যাপারটা বেশ নতুন, কেমন একটা গ্রীক মিথোলজি গন্ধ আসা শুরু করেছিল।
তবে আপনার গল্পের আইডিয়া নতুন না, বাংলা সাহিত্যেই বেগম রোকেয়া বলেছিলেন "সুলতানার স্বপ্নে", পরবর্তীতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল "টুকি ও ঝায়ের প্রায় দুঃসাহসিক অভিযান" সায়েন্স ফিকশনে দেখিয়েছিলেন একটা গ্রহ যেটা পুরোটাই নারীতান্ত্রিক।
তবে আপনার লেখা একধাক্কায় পড়ে ফেলেছি, লিখেছেন খুবই চমৎকার করে। এভাবে বইলেন না, কিছু মোমিন হট হইয়া যাইতে পারে কিন্তু
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ!
দুটোই পড়া ছিল, কিন্তু একদম ভুলে গেছিলাম
আমার ফোকাস কিন্তু ধর্মের মাধ্যমে শাসন-শোষণই, ঈশ্বরীও নারীর পৃথিবীর শোষণের হাতিয়ার!
ভালো লাগলো
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঈশ্বর যে ঈশ্বরী নয় কে বা তা জানে !!!!
ফারাসাত
সরকার কি করে ? এই পোস্টদাতাকে এখন জেলের বাইরে রাখছে কেন?
নতুন মন্তব্য করুন