বোলোনিয়ার সব্জি বাজার, ২০১১।
১) আমার ক্যামেরা বাজি
কর্মসূত্রে ২০০৫ সালে আলিপুর নামের একটি ছবির মত গ্রামে অবস্থান করছিলাম। সদ্যই কন্যা সন্তানের জনক হয়েছি। ঝামেলাবিহীন কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি রাতগুলি। আলিপুর গ্রামটি রাজবাড়ী জেলায়। গ্রামে থাকার সৌরভ, গ্রামে থাকার আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করা শুরু করেছি। এসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রিয় আনন্দ আপা একটি ক্যামেরা পাঠালেন। মিনলটা এস আর টি ২০১, সাথে ৩৫ ২.৮ সেলটিক রক্কোর লেন্স। ক্যামেরা নয়, যেন স্বর্গ হাতে পেলাম। কোনদিন ক্যামেরা ব্যাবহার করিনি এর পূর্বে। এক অজানা শিহরণ বইতে লাগল মনজুড়ে। ক্যামেরা তো হাতে এল, এখন ফিল্ম না ভরলে চলবে কিভাবে? ছুটলাম ফিল্ম প্রিন্টের দোকানে। রাজবাড়ী ছোট্ট জেলা শহর, প্রিন্টের দোকান হাতেগোনা দুটি মাত্র। তারই একটিতে গিয়ে ফিল্ম কিনলাম, কিন্তু ভরতে গিয়ে দফারফা। মাথার ঘাম ছুটে যাবার মতন অবস্থা, বেগতিক দেখে দোকানি সাগ্রহে ফিল্ম দিলেন ভরে, তারপর ফিরে এসে ছবি তোলার কাজ শুরু করলা।, কিন্তু ছবি তুলবো কিভাবে? আমি তো এক্সপোজারের কিচ্ছু জানিনা, একদম ক অক্ষর গোমাংস। যাই তুলি, প্রিন্ট করার পর দেখি সব অন্ধকার, কাজেই আবার ছুটতে হল ওই দোকানেই এবং জিজ্ঞেস করতে হল যে এই শহরে এমন কেউ আছেন কিনা যিনি আমাকে ছবি তোলার কৌশলগুলি একটু দেখাতে পারেন হাতেনাতে। দোকানি নিজেই কোনও এক সন্ধ্যায় উনার বাসায় যেতে বললেন, আশ্বাস দিলেন দেখিয়ে দেবেন। তারপর উনার কাছে এক্সপোজার, শাটার স্পিড, এ্যাপারচার, আসা এইসব ব্যাপারে অল্প কিছু শিখে নিয়ে আবার মাঠে নেমে পড়লাম। কিন্তু অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী হেতু দ্বিতীয়বার ছবি প্রিন্ট করার সময় দেখি সবই হালকার ওপর ঝাপসা হয়ে আছে। ব্যাপার না মনে করে দ্বিগুণ উৎসাহে আবার ফিল্ম ভরে মাঠে নামা গেল এবং এইবার অন্তত এক্সপোজারটা একটু হলেও ধরতে পারলাম। তৃতীয় দফা ছবি দেখে দোকানি বললেন, লেগে থাকুন, আপনার হাত খারাপ না। আমি ভাবতে লাগলাম হাত আবার কি, উনি বুঝিয়ে দিলেন হাত মানে হল কম্পোজিশন। হাত মানে কি আসলেই কম্পোজিশন? কি জানি?
ক) আমার দ্বিতীয় ফিল্মে তোলা একটি ছবি। ছবিটি সাদা কালো। রাজবাড়ি, ২০০৫।
খ) চতুর্থ ফিল্ম । রাজশাহী, ২০০৫।
কিন্তু আমি তো কম্পোজিশন বুঝিনা, এইটা কি আবার ভিন্ন কোনও বিদ্যা নাকিরে বাবা! আমি তো ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে যে ফ্রেমটা পাই তার মাঝখানে সাবজেক্টকে রেখে ছবি তুলতে থাকি। তাহলে বুঝব কিভাবে আমার কম্পোজিশন ভাল হচ্ছে না খারাপ? কম্পোজিশনের অকূল দরিয়ায় ভাসার পাশাপাশি নিয়মিত ছবি তোলায় যতি টানলাম না। ২০০৫ এবং ২০০৬, এই দুই বছর নিয়মিত বিরতিতে ছবি তোলা হল, রাজশাহীতে ঈদ, চট্টগ্রামে কবিতা আবৃত্তি উৎসব, জয়পুরহাটে রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজন কোনটাই মিস করলাম না, কিন্তু ২০০৭ এবং ২০০৮-এই দুই বছর ক্যামেরার গায়ে কেবল ধুলোই জমতে শুরু করল। কাজ এবং সংসারের চাপে কিচ্ছু তোলা হলনা। তাছাড়া মনে হচ্ছিল, কিছুই তো হচ্ছেনা আসলে, এসব ছবি টবি তুলে লাভ কি? তার ওপর খরচও তো কম নয়, ফিল্ম কেনা, ডেভেলপ করা, প্রিন্ট করা- চাকরি করে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতন অবস্থা, ক্যামেরা বাবাজি তাই পড়ে রইল ঘরের এক কোণায়।
গ) চট্টগ্রাম কবিতা আবৃত্তি উৎসব, ২০০৬।
ইতালিতে এসে একটু টাকা পয়সা হাতে এলো যখন, ডিএসএলআর কিনতে দেরি হলনা। চার মাসের মাথাতেই নিকন ডি ৪০ বাগিয়ে বসলাম। কিন্তু ছবি তুলবো কিসের? বিষয় পাই কই? কুচ পরোয়া নেহি মনে করে প্রবল উৎসাহের সাথে ছবি তুলতে লাগলাম বোলোনিয়া নগরীর প্রাচীন ভবনের, রাস্তা ঘাট, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের, আর সমানে পড়তে লাগলাম কেন রকওয়েলের ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট। কেন মামার কথামতন স্বল্প আলোয় ছবি তোলার জন্য ৩৫ ১.৮ কিনে আবার শাটাতে শুরু করলাম, কিছুদিন পর দাম কম দেখে ৫০ ১.৮ কিনলাম, তার অল্প কিছুদিন পর টেলি লেন্স হিসেবে ৫৫ ২০০ ভি আর কেনা হল, পোকামাকড়ের ছবি তোলার জন্য কিনলাম ৫৫ ৩.৫, এর মাঝে অফিস থেকে পোর্ট্রেট লেন্স ৮৫ ২ দিলাম মেরে। তারপর কঠিন তাকে অপারেশন শুরু হয়ে গেল। শনি রবিবার মানেই ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়া এবং রাজ্যের হিজিবিজি, আজেবাজে, অকিঞ্চিৎকর ছবি তুলে বেড়ানো। কেন মামা পড়া জারি রইল, এর সাথে যুক্ত হল থম হোগান মামার প্যাঁচাল। দুজনের লেখার তুমুল ভক্ত হয়ে গেলাম তাঁদের লেখার প্রসাদগুণে। কেন মামার কাছেই কম্পোজিশনের খুঁটিনাটি জানা শুরু হল আর হোগান মামার কাছে জানতে থাকলাম নিকন জগতের হাল হকিকত। কিন্তু যেহেতু ফিল্ম এর প্রতি একটা আগ্রহ সবসময় ছিল কাজেই ইতালিতে আসার পর কেনা হল মিনলটার আরেকটি ফিল্ম ক্যামেরা এক্স ৭০০, আর সাথে দুটো লেন্স, ২৪ ২.৮ এবং ৫০ ১.৪, সস্তা পেলাম বলে কিনতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি।
ঙ) বোলোনিয়ার রাজবাড়ী। পালাজ্জো রেঞ্জো, ২০০৯।
চ) ১৫৬৮ সালের দরজার হাতল, বোলোনিয়া, ২০১০।
ছ) শেষ বিকেলের আলোয় আমার হারিয়ে যাওয়া ঘড়ি, বোলোনিয়া ২০১০।
এরপরে সচলাতনে মুস্তাফিজ ভাই, উজান গাঁ আর ফাহিম ভাইয়ের ছবিব্লগগুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে হাঁ করে বসে থাকি আর হা হুতাশ করি, এত ভাল ছবি উনারা তোলেন কিভাবে? তখন হঠাৎ কেন মামার অনেকগুলি আর্টিকেল দেখি কম্পোজিশন, সময়, আলো এবং পর্যবেক্ষণের ওপর। "পর্যবেক্ষন"- হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা, আমি যে এত এত ছবি তুলে কাঁপিয়ে দিচ্ছি নিজেকে, পর্যবেক্ষণ করে তো ছবি তোলা হয়নি। যা দেখেছি উজবুকের মতন তুলে গেছি তাৎক্ষনিকভাবে, একটু যে মনোনিবেশ করা, দেখা, পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা, কই তেমন তো আজ পর্যন্ত করা হলনা। সাত আট বছর তো কেবল এক্সপোজার, শাটার, এ্যাপারচার, আইএসও, এসব করেই খাওয়া হল, এই গুরুপাক থেকে মুক্তির জন্য তাই ঠিক করলাম মনে মনে, এখন থেকে শুধু দেখব। শুন্যতা, স্পেস, এ্যাঙ্গেল, পারস্পেক্টিভ এগুলো নিয়েই ভাববো আর পর্যবেক্ষণে মনোযোগ আরও বাড়িয়ে দেব। আর এর ফলও যেন পেলাম হাতেনাতে। ছবি তোলার সংখ্যা কমে গেল ঠিকই কিন্তু ছবির মান বাড়তে থাকল। এখন কার্যকারণ ছাড়া অযথা শাটার প্রেস করা হয়না, আর নিকন ছাড়াও মিনলটা ম্যানুয়াল ক্যামেরা ব্যাবহার করা আবার শুরু করা হতে লাগলো। এসএলআর ব্যাবহার করার একটা সুবিধা যেটা খুব বেশী মাত্রায় অনুভব করি আজকাল তা হল যেহেতু ফিল্ম এখন বেশ ব্যায়বহুল কাজেই ছবি তোলার সময় আমার নিজেকে খুব মিতব্যায়ি, পরিশীলিত এবং যত্নবান হতে হয়। কেননা একটা খারাপ ছবি মানে তো শেষ বিচারে আমারই আর্থিক ক্ষতি। কাজেই খুব যত্ন এবং সময় নিয়ে ম্যানুয়ালি ছবি তুলি এখনও।
ঞ) বোলোনিয়ায় শেষ বিকেলের আলো ঢুকছে প্রাচীন ভবনের আরকেডে, ২০১১।
২) এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ
আমাদের দেশে ডিএসএলআর ফটোগ্রাফি এখন বেজায় জনপ্রিয়। মধ্যবিত্তদের পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকা দিয়ে ক্যামেরা কেনা এখন আর তেমন ব্যাপার নয়। কিংবা মানুষ হয়ত আগের তুলনায় আরও শৌখিন হয়েছে। আর ক্যামেরা এখন আগের চাইতে অনেক বেশী সুলভও বটে। সত্তর ও আশির দশকে এমনকি নব্বইয়ের দশকেও এসএলআর ক্যামেরার যুগ এত সুলভ ছিলনা। তখন শুধু পেশাজীবীদেরই দেখা যেত ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ছবি তুলে বেড়াতে। মধ্যবিত্তদের ভরসা ছিল ইয়াশিকা। নিকন, ক্যানন তখন আকাশের চাঁদ। কিন্তু একবিংশ শতকে এসে আমাদের দেশে ডি এসএলএর ব্যাবহারকারিদের সংখ্যা দারুণভাবে বেড়েছে। এর মাঝে আমাদের অনেকেই বিদেশে এসে ক্যামেরা কিনে মাঠ ঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। ক্যামেরা এখন আর ডিএসএলআর কিংবা এসএলআর এর মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই, পয়েন্ট এন্ড শুট, ফোন ক্যামেরা, হালের মিররলেস ক্যামেরা এমন কেউ নেই যিনি ব্যাবহার করেন না।
ক্যামেরা ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি ক্যামেরা সংক্রান্ত আলোচনাও বেড়েছে। এই সচলায়তনের ছবিব্লগই দারুন একটা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মনে করি। এইসব আলোচনা বেশিরভাগই ক্যামেরা গিয়ার এবং টেকনিক সংক্রান্ত। ছবি তোলার প্রধান যে দুইটি অনুষঙ্গ, পর্যবেক্ষণ এবং কম্পোজিশন এগুলি নিয়ে তেমন আলোচনা চোখে পড়েনা কিংবা এমনও হতে পারে যে আলোচনা আছে কিন্তু আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে আসলেও ঠিক এমন ধারণাই মেলে, অর্থাৎ সবখানেই গিয়ার নিয়ে যত মাতামাতি ফটোগ্রাফির বেসিক সম্পর্কে তেমন কোনও আগ্রহ জাগানিয়া ধারাবাহিক আর্টিকেল দেখিনা কোথাও। ব্যাপারটা যেন এমন, কোনমতে একটা ক্যামেরা কিনলেই হল, পটাপট বের হতে থাকবে অসাধারণ সব ছবি!
কম্পোজিশনের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় মতামত হল যে ক্যামেরার এক্সপোজার জানার পাশাপাশি কম্পোজিশন নিয়ে ভাবনাটাকে বিকশিত করা দরকার। কেননা এক্সপোজারের মতন কম্পোজিশনও শেখার বিষয়। এইটা আপনা থেকেই হবার নয়। পর্যবেক্ষণ শক্তিও সবসময় প্রকৃতিদত্ত হবে এমন কোনও কথা নেই, শ্রম বিনিয়োগে এই শক্তিকে উত্তম রূপ দেয়া সম্ভব। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে একটা কিছু দেখা এবং তাকে মনের ভেতরে লালন করে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করা ছবির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা এনে দেয়। কাজেই "দেখা" একটা নিয়মিত চর্চার ব্যাপার। দেখে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করা প্রকৃতিদত্ত নয়, এইটাও নিরন্তর চর্চার মাধ্যমেই আয়ত্ব করতে হয়।
হেনরি কার্তিয়ের ব্রেশোঁ বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে স্বীকৃত। ফরাসি এই চিত্রগ্রাহক পেইন্টার হতে চেয়েছিলেন, গিয়েছিলেন পেইন্টিং এর স্কুলে, কম্পোজিশনের হাতেখড়িও সেখানেই, পেইন্টিঙে শেখা সকল কিছু তিনি সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করেছেন তাঁর ফটোগ্রাফিতে। ইউটিউব এ সেদিন ব্রেশোঁর সতের মিনিটের একটি ভাষ্য শুনলাম। সেখানে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, দেখলাম ক্যামেরার গিয়ার নিয়ে উনি একটি শব্দও উচ্চারন করলেন না। বলছিলেন একটি ডিসাইসিভ মুহূর্তের (এই নামে উনার একটি বইও আছে) কথা। বলছিলেন কম্পোজিশন এবং জ্যামিতিক মাত্রার কথা। আর একটি মুল্যবান কথা উনি বলেছেন, "একটি ভাল ফটোগ্রাফ এবং একটি মহান ফটোগ্রাফের মধ্যে পার্থক্য হল মাত্র এক মিলিমিটারের।" উনি সারাজীবন একটি মাত্র লাইকা ক্যামেরা আর সাথে একটি ৫০ মিমি লেন্স ব্যাবহার করে গেছেন, কদাচিৎ কিছু ওয়াইড এ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যাবহার করেছেন। চার্লি রোজের সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উনি বারবার বলছিলেন মুহূর্ত এবং তাৎক্ষণিকতার কথা, ফটোগ্রাফারের ইন্টুইশন এবং দূরদৃষ্টির কথা। বলছিলেন এ্যাঙ্গেলের কথা, শেপের কথা যেগুলোর বেশিরভাগই কম্পোজিশনের সাথে সম্পর্কিত।
ব্রেশোঁর দুটি ছবিঃ
এন্সেল এ্যাডামস ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ ছিলেন। উনার লার্জ ফরম্যাটে তোলা ইয়োসেমাইটের ছবি এক কথায় অবিশ্বাস্য। তিনি তাঁর ছবিগুলিকে বলেছেন ভালবাসার ফসল। কাজেই পর্যবেক্ষণ কিংবা কম্পোজিশনে দক্ষতাও শেষ কথা নয়, বিষয়কে আমাদের ভালবাসতে হবে, আমাদের অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে, তবেই না আমরা এই কলাকে আয়ত্ব করতে পারবো। এন্সেল পেশাদার পিয়ানো বাদক হবার পথেই ছিলেন। সেখান থেকে সরে এসে ফটোগ্রাফির জগতে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন আর আমরা পেয়েছি এক অনন্য, অবিস্মরণীয় ইয়োসেমাইটকে যে ছবিগুলি যেন পিয়ানোর এক একটি পিস, মাস্টারপিস।
এন্সেলের দুটি ছবিঃ
অনেক সময় ছবি তোলার বিষয় নিয়েও আমরা খেই হারিয়ে ফেলি, মনের মতন বিষয় পাইনা। স্যালি মান যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ফটোগ্রাফারদের একজন। তিনি নব্বই এর দশকে শুধু তাঁর নিজের ছেলেমেয়েদের ছবি তুলেছিলেন লার্জ ফরম্যাটে। এবং তারপর যখন তাঁর প্রথম প্রদর্শনী হল, দর্শক অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন তাঁর অভূতপূর্ব সৃষ্টির দিকে। নিজের ছেলেমেয়েদের উপজীব্য করেও যে মহান ফটোগ্রাফি সম্ভব তাও তো আমাদের অজানা ছিল, কিন্তু তা যে অসম্ভব নয় তা উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের হাতের চারপাশেই রয়েছে ছবি তোলার নানান বিষয়, এগুলিকে আমরা কিভাবে ফুটিয়ে তুলব আমাদের মতো করে, কিভাবে তুলে ধরব, তার ওপরই আমাদের শিল্পকলার ব্যাখ্যা এবং সাফল্য নির্ধারিত হবে।
স্যালি মান এর দুটি ছবিঃ
স্টিভ ম্যাককারির ছবির জগতের দিকে যখন আমরা তাকাই তখন মাধ্যম ছাপিয়ে তাঁর সৃষ্টি আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। শ্রীলঙ্কায় মাঝিদের সেই অসাধারণ মাছ ধরার দৃশ্যটি দেখি। এর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য এমন যে বিস্ময়ে আমরা হতবাক হয়ে পড়ি মাঝিদের প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধ করতে দেখে, তখন স্টিভ কোন ক্যামেরা ব্যাবহার করেছেন সেইটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়।আবার একই ব্যাক্তি যখন কাশির সরু গলিতে একটি বালকের একাকী দৌড়ে যাওয়াকে ক্যামেরা বন্দী করেন তখন এটাকে স্রেফ কবিতা বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। ডিজিটাল এবং ফিল্মে সমান দক্ষ এই চিত্রগ্রাহক তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি ফিল্মে তুলেছেন।
স্টিভের দুটি ছবিঃ
গ্যালেন রাওয়েল ছিলেন মুলত একজন পর্বতারোহী। দশ বছর বয়েস থেকে উনি পর্বত আরোহণ শুরু করেন, পাহাড় পর্বত এবং এর বিচিত্র বন্য রূপ তাঁকে বিস্মিত করে, মুগ্ধ করে। ছবি তোলা ছিল তার শখ, মূলত পরিবার এবং বন্ধুদের পর্বত আরোহণের ছবি দেখানো থেকে তাঁর ফটোগ্রাফির যাত্রা শুরু। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে চার বছর পড়ার পর হঠাৎই পড়াশুনা ছেড়ে দিলেন শুধু পর্বত আরোহণে যথেষ্ট সময় পাচ্ছিলেন না এই জন্যে। শখের ছবি তুলতে তুলতে তিনি এমন সব দুর্লভ পাহাড়ের মুহূর্ত তুলতে সক্ষম হলেন যা অভূতপূর্ব, অনাস্বাদিত। উনার ছবি দেখলে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়, গিয়ারের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকেনা। ফটোগ্রাফির কোনও কোর্স কিংবা ট্রেনিং যার নেই, কালক্রমে তিনিই হয়ে উঠলেন বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফারদের একজন, শুধুমাত্র পর্বতের প্রতি ভালোবাসা ও মুগ্ধতা থেকে যার জন্ম।
গ্যালেন এর দুটি ছবিঃ
ফটোগ্রাফিতে বাস্তবতাকে অনুকরণ নয় বরং তাকে ইন্টারপ্রেট করা হয়। এই ইন্টারপ্রেট করার জন্য আমরা ক্যামেরাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করি। একেকজন ফটোগ্রাফার এই ইন্টারপ্রিটেশনের জন্য একেক রকম মাধ্যম বেছে নেন। কেউ লার্জ ফরম্যাট, কেউবা ফিল্ম কেউ ডিজিটাল আবার কেউবা মিডিয়াম ফরম্যাট ব্যাবহার করেন। তাই মাধ্যম হিসেবে কোন ক্যামেরাটি সেরা, এর কোন সহজ সরল উত্তর নেই। হাঁ আছে বটে এক খানা উত্তর। "সেই ক্যামেরাটিই সেরা যা এখন আপনার হাতে রয়েছে।" ক্যামেরার গিয়ার নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনার চাইতে মাঠ ঘাট কাঁপিয়ে বেড়ানো অনেক উপকারী। মনে রাখা দরকার কলাজগতে কোনও মাধ্যমই একদম পারফেক্ট হতে পারেনা,মহান শিল্পীরা স্বীয় মাধ্যমের দুর্বলতাকে অতিক্রম করেন তাঁদের অসাধারণ সৃষ্টিশীলতা দিয়ে। দীর্ঘদিনের তপস্যা, অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রমের ফসল ঘরে আনেন তাঁরা। ফটোগ্রাফিও এর ব্যাতিক্রম নয়। যাঁরা মনে করেন যে ক্যামেরা কেনা মাত্রই তাঁরা কার্ল গ্রবল কিংবা ডবলু উইজেন স্মিথ কিংবা ডায়ান অরবুস কিংবা এডওয়ার্ড উইনস্টন কিংবা ডেভিড কাপায় পরিণত হবেন- এইটা একটা ভ্রান্ত ধারনা। ক্যামেরা এবং ক্যামেরা সেটিং আমার শিল্পীমনের মাধ্যম, আমার পথের দিশারী নয়। কাজেই কে নিকন কিনবে, কে ক্যানন কিংবা ফুজি কিংবা অলিম্পাস কিংবা লাইকা কিনল, কে কোন সেটিং এ ছবি তুলবে এগুলো সবই অর্থহীন হয়ে যাবে যদি না আমি এমন একটি ছবি তুলতে সক্ষম হচ্ছি যা কিনা দর্শকের মনোযোগ হরণ করতে বাধ্য করবে। ডিএসএলআর কিনে সমানে যেনতেনভাবে পোর্ট্রেট, ম্যাক্রো আর প্রকৃতির ছবি তোলা শুরু করলাম কিংবা পোস্ট প্রসেসিং এ লম্বা শ্রমসময় বিনিয়োগ করলাম আর ফেসবুকে দেয়ামাত্র লাইকের বান আসতে শুরু করল- এইটা আমার মতে ফটোগ্রাফির সঠিক পথ নয়।
ফটোগ্রাফির আসল স্থান আমার মননে, আমার পর্যবেক্ষণ শক্তিতে, আমার নিরন্তর ছবি তুলে যাওয়ার কাংখিত যাত্রায়, আর এই যাত্রাটি পেশাজীবীদের তুলনায় আমাদের মতন এ্যামেচারদের আরও কঠিণ, আরও বন্ধুর। সৃষ্টিশীলতার অভাব নেই আমাদের, শিল্পিসত্তা বইছে আমাদের মনে কুলকুল করে, যেটুকু অভাব তা হচ্ছে সময়ের। কাজেই সীমিত সময়ের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করে আমরা কাংখিত অর্জনের পথে যেতে পারি। সেক্ষেত্রে গিয়ার নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি এবং সেটিং নিয়ে কালক্ষেপণ শিল্প সৃষ্টির পথে অন্তরায় হতে পারে। এখান থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের ফটোগ্রাফি বই বেশী বেশী করে পড়া দরকার, মহান শিল্পীদের সাক্ষাৎকার এবং তাঁদের তোলা ছবিগুলি গভীর মনোযোগের সাথে দেখা দরকার এবং নিয়মিত ছবি তোলার আগে বিষয়কে পর্যবেক্ষণ করে ছবি তোলার পর তা বিশ্লেষণ করা দরকার। একই সাথে আলোর গতি প্রকৃতি খেয়াল রাখা দরকার কেননা ছবি তোলার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মাধ্যম হল আলো আর এই আলোর ওপরই নির্ভর করে রঙ এবং আলো-ছায়ার খেলা আবার একই সাথে নিজের অনুসন্ধিৎসু মনটাকেও নিয়মিত ঘষামাজা করা চাই। শেষ বিচারে আমার ছবিটাই আমার শিল্পীমনের পরিচায়ক, অন্তিম সৃষ্টি। গিয়ার এখানে তাঁকে বিশিষ্ট করার বাহন মাত্র, বেশী কিছু নয়।
(আমি ক্যামেরার জগতে একজন অনুপ্রবেশকারী , নেহাত শখের বশে এ জগতে বিচরণ করি। বিশেষজ্ঞ নই, আমার আলোচনা একান্তই আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার ফসল, আমার আলোচনার সাথে সবাই একমত হবেন এমন আশা করিনা। এই লেখাটি উৎসর্গ করছি আলোক এবং সজল সহ আরও হাজারো নতুন ডিএসএলআর ব্যাবহারকারিদের যারা ফটোগ্রাফির জগতে নিজেদের খুঁজে ফিরছেন এবং নতুন পথের সন্ধান করছেন। আমার উপরোক্ত সবগুলি ছবি তোলা হয়েছে মিনলটা এসএলআর ক্যামেরায়)
-মনি শামিম
আমার আগের লেখাগুলিঃ
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47369
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47352
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47352
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47085
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/47071
মন্তব্য
অন্য ফটোগ্রাফারদের যে ছবিগুলি দিয়েছেন আপনার পোস্টে সেগুলি কি কপিরাইট মুক্ত? না হলে তাঁরা কি আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন?
কারণ সচল নীতিমালায় :
সচলায়তনে পোস্টানোর আগে নীতিমালাটা সম্পূর্ণ পড়ে নেবেন দয়া করে।
অজ্ঞাতবাস
অন্য ফোটোগ্রাফারদের এই ছবিগুলো যেহেতু পাবলিক ডোমেনে প্রকাশিত, উনি দুয়েকটি ছবি চিত্রগ্রাহকের নাম উল্লেখপূর্বক এই পোস্টে দেখালে সেটা ফেয়ার ইউজের মধ্যেই পড়বে। আমি ভিনসেন্ট লাফোরেতের উপরে যখন পোস্টটা দিয়েছিলাম তখন যেমন করেছিলাম। তবে শামিম ভাইয়ের উচিত হত নিজের অ্যাকাউন্টে আপলোড করার বদলে - যেটাতে মনে হতে পারে এগুলো নিজের প্রপার্টি হিসেবে দাবি করছেন - সরাসরি যে সোর্স থেকে পেয়েছেন সেখান থেকেই এমবেড করা।
ঠিক। এবং সেই সোর্সটা আলাদা করে উল্লেখও করা।
অজ্ঞাতবাস
যদি সোর্স থেকে সরাসরি এমবেড করে দেওয়া হয়, সেটাই তো সোর্স উল্লেখ করা হয়ে যায়। কিন্তু মনি ভাই তো পোস্ট এডিট করে সেগুলো ঠিক করতে পারবেন না।
সেক্ষেত্রে তিনি মডুদের মেইল করতে পারেন।
অজ্ঞাতবাস
সুমন, আমি গুগল ইমেজ থেকে আমার ফ্লিকারে ছবিগুলো নিয়ে এসে অ্যাড করেছি, তাহলে যখন তথ্য সূত্র উল্লেখ করব তখন কি গুগল ইমেজের কথা উল্লেখ করবো? ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুনরায় ধন্যবাদ।
-মনি শামিম
হ্যা। তাতে উৎসটা পরিস্কার হয়।
আপনাকেও ধন্যবাদ বিষয়টা বুঝবার জন্য।
অজ্ঞাতবাস
কৌস্তুভ, ভুল যা হবার তাতো হয়েছেই। সচলের উচিৎ এধরণের লেখা প্রকাশ না করার, কেননা এতো নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমার উচিৎ ছিল পাব্লিক ডোমেইন থেকে ছবিগুলি এম্বেড করে দেয়া, অযথা আমি তাঁদের ছবি আমার ফ্লিকার এ্যাকাউন্টে এনে অ্যাড করতে গেলাম! তবে আপনারা ভুলটা ধরিয়ে না দিলেতো খেয়ালই করা হতোনা কখনও। ধন্যবাদ কৌস্তুভ।
-মনি শামিম
সুমন, দারুণ একটি ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, সত্যি এদিকটা একেবারেই ভাবিনি। আমার অবশ্যই উচিত ছিল ছবি দেয়ার পূর্বে এনিয়ে সচলায়তনের নীতিমালাটি পড়ে নেয়া। তাইতো, আমি যখন তাঁদের ছবি দিচ্ছি কাজেই আমার কি অধিকার রয়েছে তাঁদের অনুমতি ব্যেতিরেকে তাঁদের ছবি প্রকাশের। আমি গুগল ইমেজ থেকে তাঁদের ছবি আমার ফ্লিকার এ্যাকাউন্টে এনে এ্যাড করে দিয়েছি। ভুল তো হয়ে গেল। সচলায়তনের উচিৎ ছিল লেখাটি প্রকাশ না করার। যাই হোক, নীতিমালাটি ভালোভাবে পড়া দরকার আসলে। ধন্যবাদ সুমন।
-মনি শামিম
আপনি বিষয়টাকে স্পোর্টিংলি নিলেন দেখে ভালো লাগল।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য: আপনার ছবি দেখে আপনাকে ঈর্ষা করতাম, এখন আপনার লেন্সের লিস্টি দেখে বুঝলুম তা করা বৃথা। তায় থাকেন তো ইটালিতে, রোদহীন লন্ডনে না, আর কে না জানে একফোঁটা রোদই ছবির চেহারা কত ঝকমকে করে দিতে পারে।
কোথায় কৌস্তুভ, নিকনের যে লেন্সগুলির তালিকা দিয়েছি সেগুলি সবই বেসিক লেন্স। এমন আহামরি কিছু নয়। শুধু ৫৫ ৩।৫ মিক্রো লেন্সটা দারুণ, কালার ডেপ্থ খুব ভালো। ৮৫ ২ টা আমি নিজে তেমন ব্যাবহার করতে পারিনা ভালো। তবে হ্যাঁ, আমার মিনলটার সেট নিয়ে আমি খুব খুশী। মিনলটার ২৪ ২।৮ আসলেই একটা টপ লেন্স। আমি শুধু এই লেন্সের কারণেই ফিল্ম ছেড়ে দেইনি। মিনলটার কালারটাও একটু হালকা, নিকনের মতন কড়া নয়। আমার ভাল লাগে। এইসব লেন্স টেন্স নিয়ে অবশ্য আর মাথা ঘামাইনা, এখন কম্পোজিশনে ধার দিচ্ছি, এছাড়া তো উপায় নেই কোনও ভায়া!
-মনি শামিম
মিনলটা কোপা জিনিষ, হাতে পাই নাই কখনো। আপনার সাথে দেখা হলে একদিন মিনলটা দিয়ে একটা ছবি তুলব, কিছু কইতে পারবেন না।॥
অ্যান্সেল অ্যাডামস আমার সব থেকে প্রিয় ফটোগ্রাফার, ওনার ছবি দেখার আগে ভাবতাম ল্যান্ডস্কেপ সাদাকালোতে ঠিক যায় না। ওনার ছবি প্রথমবার দেখার পর মনে হয়েছিল ল্যান্ডস্কের রঙ্গিনে সাদাকালোর মত ফোটে না!!!
আপনার পুরোনো ছবিগুলা দেখে ভাল লাগল, আমার পুরোনো সব ছবি হারিয়ে ফেলেছি হার্ডডিস্ক ক্রাশে।
আরো তুলে যান ছবি, আপনার ছবি আমার ভাল্লাগে।
মিনলটা ব্যাবহার করছি আজ সাত বছর হল। মাঝখানের দুই বছর বাদে নিয়মিত বিরতিতে ছবি তুলে গিয়েছি এর ক্যামেরা দিয়ে। শুরু হয়েছিল এসআরটি ২০১ দিয়ে, এখন এক্স ৭০০ চালাই। মিনলটার সবচাইতে যে বিষয়টা পছন্দ তা হল এর রঙ। আপনি নিজে যখন ছবিগুলি প্রিন্ট করবেন তখন রঙ দেখবেন অনেক অন্যরকম, আমি তো এখানে ছবি স্ক্যান করে দিয়েছি। অরিজিনাল প্রিন্ট আরও সুন্দর। আপনি নিশ্চয়ই আমার মিনলটা নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন, ছবিও তুলবেন, আমি বারণ করবনা, এবার হল?
আমি কিন্তু খুব নিয়ম করে ছবি তুলি। এর কোন বাত্যয় গত চার বছরে হয়নি। আরও তুলবো নিশ্চয়ই তবে সব তো বিনিময় করা যাবেনা, তারপরেও চেষ্টা করে যাবো।
-মনি শামিম
শখের ফটোগ্রাফাররা কম্পোজিশন-এক্সপোজার নিয়ে আলোচনা করে না আবার প্রো রা খুবই উঁচু মনের অধিকারী (এত উঁচু যে কেউ কেউ এক্সিফ ড্যাটাও লুকিয়ে রাখে)।
তাই? প্রো বিষয়ে এইটা জানা ছিলনা তো? আলো, কম্পোজিশন, পর্যবেক্ষণ নিয়ে আরও মুক্ত আলোচনা হওয়া দরকার, তাহলে আমরা সবাই মিলে একসাথে তা শিখতে পারি। মুশকিল হল আমাদের দেশে সবাই ফটোগ্রাফার, এর মাঝে ফটোপ্রেমিক হাতে গোনা! কোথাও একটা বড় ধরনের গলদ আছে বলে মনে হয়!
-মনি শামিম
অতি সত্য কথা, আমি ২০০৯ এ ছবি তোলা শুরু করি যখন বাংলাদেশে ডিএসএলআর ভরে যেতে শুরু করেছে। ২০১১ পর্যন্ত নিয়মিত ছবি তুলে গেছি(এখন জীবনের চাপে নিয়মিত হয় না), এইটুকু সময়ে বাংলাদেশে আমার বয়সী প্রচুর নতুন ফটোগ্রাফার দেখেছি, জেনেছি। তবে এটুকু বলতে পারি, সবার মাঝেই ছবি নিয়ে প্রেম ছিল না। তবে ছবি প্রেমিক যে কম তাও কিন্তু না, তবে সংখ্যালঘু। উপযুক্ত পরিশ্রম আর শিক্ষার অভাব আসলে। দামী ক্যামেরা থাকলেই ছবি হয় না এটা সবাই বোঝে না। আর কাউকে বুঝাতে গেলে প্রতিক্রিয়া ভাল হয়না এটা পার্সোনাল অভিজ্ঞতা।
একটা কথা চালু হয়ে গেছিল আমাদের বন্ধুমহলে, "ঢাকা শহরে কাকের সংখ্যা যত, কবির সংখ্যাও তত; ফটোগ্রাফার একটু বেশি"
ফটোগ্রাফারের সংখ্যা বাড়ুক সেটা বোধ হয় সকলেরই কাম্য। ছবি তোলার সাথে সাথে আমাদের শিল্পী মনেরও বিকাশ ঘটুক সেটিও আমরা আশা করতে পারি। আলোকচিত্রের প্রতি সবার আগ্রহ এবং উদ্দীপনা বাড়ছে এটা বেশ আশাব্যাঞ্জক। এখনই সময় আমাদের আলোকচিত্রের সাধারন বিষয় আশয় নিয়ে আলোচনা করার। কিন্তু এই আলোচনা যেন শুধু এক্সপোজারের কানাগলির মাঝে ঘুরঘুর না করে সেটি কাম্য। এক্সপোজারের বাইরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা নিয়ে ভাবা দরকার, পরস্পর আলোচনা দরকার। নইলে শুধু এক্সপোজারের টেকনিক শিখলাম, আলোকচিত্রের প্রতি কোন ভাব জমলোনা, প্রীতি জন্মালোনা, তাহলে কিছু হল?
-মনি শামিম
আমার অভিজ্ঞতার কথা বলেছি। এর সাথে আপনার না মিল হওয়াই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশে নাম ধাম করেছে বা সেরকম লাইনে আছে তাদের কোন ছবির এক্সপোজার কত বা কিভাবে তুলেছেন -- জিজ্ঞেস করে দেখেন। সবচেয়ে ভালো হয় তাদের সাথে সরেজমিনে কোন ট্যুরে যেতে পারলে। তাহলে বুঝবেন। আমি যাইনি, তবে কাছে লোকজন গিয়েছে। তাদের কাছে শুনেছি।
সবাই এরকম না, তবে কম্পিটিশনের কারণে তারা অনেক সময় অনেক কিছু করে যা সাধারণের চোখে অন্যরকম।
প্রতিযোগীতার কারণে সাধারণ বিনয় কেন ভুলতে বসবেন জাত শিল্পীরা? আপনি যা বললেন তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে খুবই দুঃখজনক। আলোকচিত্রকে ভালবাসলে সামান্য এক্সিফ ডেটা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এত কুণ্ঠা কেন? এক্সপোজার তো শেষ বিচারে আমার প্রকাশের মাধ্যম, অভীষ্ট লক্ষ্য নয়।এরপরেও জানাতে এত অনীহা? বাপরে বাপ! সাংঘাতিক!
-মনি শামিম
মনি ভাই, দারুন সব ছবি, দারুন লেখা। আপনার ফটুরে হবার গল্প শুনে আমারও ফটুরে হইতে মন চাই।
আপনার ছবিগুলো ভীষণ ভালো লাগে। আরও ছবি আসুক।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ আরজু। আরও ছবি আসবে। শুভস্য শিঘ্রম।
-মনি শামিম
ফটোগ্রাফির কিছুই জানি না আমি । তবুও ভাল লাগল এই লেখাটি । সাদা কালো ছবির প্রতি আমার বরাবরের পক্ষপাত । ভাল লাগল এন্সেলের ছবিগুলো ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
সাদা কালো ছবির পক্ষে আমারও পক্ষপাত জানিয়ে রাখলাম। তবে সাদা কালো ফিল্ম প্রিন্ট করবার দিন বুঝি ফুরিয়ে এল। ইতালিতেই প্রতিটি ছবি প্রিন্ট করতে নেয় ৫০ টাকা। দেশে মাষ্টার কালার ল্যাব তো সাদা কালো ফিল্ম প্রিন্ট করা বন্ধ করে দিয়েছে। একমাত্র দৃক ছাড়া আর কোথাও প্রিন্ট করা হয়না বলেই তো শুনলাম!
-মনি শামিম
চালিয়ে যান। কম্পোজিশন নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার কথা জানান দিন। একেবারে বেসিক কম্পোজিশন নিয়ে অনেক আগে একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম। এই যে লিংক : http://www.sachalayatan.com/shohailmc/24799
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
চমৎকার এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। এধরণের লেখার একটা সংকলন থাকলে আমরা নবীনরা ধারাবাহিকভাবে অনেক শিখতে পারতাম। আপনি এত সুন্দর করে এত গুছিয়ে কম্পোজিশন ব্যাপারটাকে বুঝিয়েছেন যে মনে হচ্ছে এর পরে আর কথা চলেনা। আমাদের অবশ্যই এই লেখাগুলি বারবার পড়া দরকার এবং নিজেদের তোলা ছবির সাথে এই আলোচনাগুলিকে মিলিয়ে দেখা দরকার। আপনার কম্পোজিশন এবং পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত আরও লেখা থাকলে এখানে মন্তব্যতে লিঙ্ক দিলে খুব উপকার হত সোহেল ভাই। দেবেন একটু কষ্ট করে? কিংবা দেখিয়ে দিন কোথায় আছে, খুঁজে নেবো।
-মনি শামিম
খুব ভাল লেগেছে লেখাটা। ডিটেইলস মন্তব্য আসছে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক। ওপরে সোহেল ভাইয়ের দেয়া লিঙ্ক থেকে অনেক কিছু শেখা গেল। মাঝে মাঝে এই লেখাগুলি নিয়ে আলোচনা পুনরুদ্ধার করলে মন্দ হয়না, অন্তত আমাদের মতন খেটে খাওয়া কিন্তু আলোকচিত্র প্রেমিকদের জন্য এগুলো খুবই উপকারী। আপনার যদি কম্পোজিশন, আলো কিংবা পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কোনও লেখা পূর্বে থেকে থাকে, এখানে লিঙ্ক দেবেন? আলোকচিত্র নিয়ে যে কোন সাধারণ এবং মুক্ত আলোচনার খুব অভাব বোধ করি আজকাল।
-মনি শামিম
দারুণ।
ধন্যবাদ কুমার। ভালো থাকুন।
-মনি শামিম
অনেক ভালো লাগল লেখাটি।বিখ্যাত ফটোগ্রাফারদের ছবি আর প্রাক-কথন সব মিলে আসাধারণ।
ধন্যবাদ যুমার। ভালো থাকুন।
-মনি শামিম
"ফটোগ্রাফিতে বাস্তবতাকে অনুকরণ নয় বরং তাকে ইন্টারপ্রেট করা হয়। "
এই কথাটা ভীষণ ভাল লাগল।
আপনার তোলা পুরানো ছবিগুলি খুব মায়াময়। ফিল্মের ক্যামেরার প্রতি আমারো একটা দুর্বলাতা আছে।
লেখা সব মিলিয়ে বেশ ভাল লাগল। ফটোগ্রাফির উপর এমন লেখা আরো আসুক।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শাব্দিক, শুধু ফটোগ্রাফিই নয়, শিল্পকলার সবগুলি শাখাতেই শিল্পীরা কিন্তু বাস্তবতাকে অনুকরণ না করে অনুসরণ করেন এবং নিজের মত করে ব্যাখ্যা করেন, সাজিয়ে তোলেন। এবং এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। শুধু বাস্তবতাই কেন, শিল্পীর শিল্পকে পর্যন্ত অনুকরণ করে কিসসু হয়না, এন্সেলের ইয়োসেমাইটকে হুবুহু অনুকরণ করবার জন্য একদল গবেষক ঠিক একই লার্জ ফরম্যাট ক্যামেরা এবং একই সাঁজ সরঞ্জাম নিয়ে ইয়োসেমাইটের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। রবীন্দ্রনাথকে অনুকরণ করে আরেকটি রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করা কি সম্ভব?
আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। পুরনো ছবিগুলি খুব মায়াময়। আমারও একদম একইরকম ধারনা। "মায়াময়।" ফিলম যখন প্রিন্ট করা হয় তখন ঠিক এই শব্দটাই কেন যেন ঘুরেফিরে আসে। ফিলমের সাথে আমাদের মনে হয় কোনও প্রাকৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে মায়ার সম্পর্ক যেটি ব্যাখ্যার অতীত। আমি ফিলম নিয়ে আগামী আগামী সপ্তাহে আরেকটি পোস্ট দেবো। আশা করি পড়বেন।
-মনি শামিম
ফিল্মের ক্যামেরায় ফটোগ্রাফি শুরু করেছিলাম হয়ত আপনার মত, তাই। মনে আছে প্রথমবার একটা ফিল্ম যখন শেষ করলাম, খুলে দেখি রিলই ঘুরেনি। মেলায় এবং আরো নানা জায়গায় ঘুরেফিরে ছবিগুলো তুলেছিলাম। অবশ্যি পড়ব, ফটোগ্রাফির উপর যে কোন লেখার মহা মনোযোগী পাঠক আমি।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
শাব্দিক, শুধু লেখা পড়লেই চলবে? ফটোগ্রাফি নিয়ে আপনার ভাবনাগুলি আমাদের সাথে বিনিময় করবেন না?
-মনি শামিম
ছবি অথবা কবিতা দু'টার কিছুই বুঝিনা।
কিন্তু আপনার এবং এন্সেল আর স্টিভের কিছু ছবি দেখে মনে হচ্ছে 'ছবির কবিতা' পড়ছি!
এ আপনি কি বললেন বাপ্পি! আমার ছবি আপনার কাছে কবিতা মনে হয়েছে? খাইসে!
ছবির কবিতা আমার মতন লেম্যানদের দিয়ে হবার নয় রে ভাই। এর জন্য মহান সব ওস্তাদরা রয়েছেন। আমার বরং শেখাতেই আনন্দ!
-মনি শামিম
লেখাটা দারুণ লাগলো মনিদা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল ভাই। আপনার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আছে এই অধমের। আপনি অনেকদিন প্রায় কিছুই লেখেননি সচলায়তনে। নজরুল ভাই, আপনি না লিখলে পাঠক হিসেবে আমাদের যে ক্ষতিটুকু হয়, তার কোনও হিসেব আছে আপনার? আপনাদের লেখার ধারাবাহিকতা থেকেই কিন্তু সচলায়তনে লেখার আগ্রহ জন্মেছে। আপনার এই অনুপস্থিতি ভারি অন্যায় আমাদের ওপর। কি চমৎকার একটা প্রবন্ধ লিখেছেন বিডিনিউজে, শিরোনামটাই এত অদ্ভুত,শক্তির "যাবনা কেন যাব।" লেখাটি প্রান ছুঁয়ে গেছে, সত্যি।
-মনি শামিম
সময়ের টানাটানি তো আছেই, সঙ্গে আলসেমি। প্রতিদিন ভাবি লিখবো, লেখা হয় না।
ধন্যবাদ মনিদা
ভালো থাকবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিকাছে নজরুল ভাই, অপেক্ষায় থাকলাম।
-মনি শামিম
শামিম ভাই, আপনার লেখার পাংখা হয়ে যাচ্ছি!
সত্যি?
-মনি শামিম
মনি ভাই, আপনার ছবিগুলো ভালো লেগেছে - কিন্তু পোস্টটা একটু অগোছালো মনে হয়েছে। কিন্তু আসল কথা হল আপনার ছবি তোলার প্যাশান দেখে আমি মুগ্ধ। আশা করি লেখার এই জোয়ারটুকু থাকবে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফাহিম, ঠিক বলেছেন, ভাবনাগুলোয় কিংবা লেখার গঠনে আরও ধারাবাহিকতা আনা দরকার। সুতোটাকে আরও টেনে রাখা দরকার, কেমন আলগা হয়ে গেছে এইবার। ফাহিম, আলোকচিত্রকে ভালবাসি বলে এনিয়ে যাই লিখতে বসি, কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি গতকালই ফিলম ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি লেখার খসড়া শেষ করলাম। সেখানেও দেখছি একই অবস্থা। আরও ঘষামাজা করতে হবে। ফিলম ক্যামেরায় ছবি তোলায় আবার নিয়মিত হয়েছি বছরখানেক হল। অনেক যত্ন আর সময় নিয়ে এই মাধ্যমে কাজ করতে হয় বলে একটু অসুবিধে, তবে আমার অস্থির মনকে ফিলম সামান্য হলেও স্থির করে, শান্তি এনে দেয়। আর পরিবারকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। ওরা অনেক ধৈর্যের সাথে আমার এই প্যাশনটাকে সহ্য করে। ফিলম মাধ্যমটা চলুক, কি বলেন?
-মনি শামিম
ভাইরে, এই আসরে আমি বাইরের লোক। মানে, ফটুকবাজীর আমি কিছুই জানিনে। এত্ত সব লেন্সের নামও শুনিনি। আজকাল সব গেরস্থ বাড়িতে যেমন একটা ক্যামেরা থাকতে হয়, তেমন আমারও একটা পুরনো ডিজিটাল ক্যামেরা আছে। আর অবজেক্টের দিকে তাক করে শাটার টিপলেই ছবি ওঠে। এইটুকুই জানি।
আপনার লেখার বিষয়বস্তু একটু নতুন ঠেকলো। নতুন কিছু জানা হলো, কিছু শেখাও হলো। আর ছবি সম্পর্কে কিছু নাই বলি।
ধন্যবাদ, আপনাকে।
আপনাকেও ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা। ভালো থাকুন। ছবি তুলুন, ছবি দেখুন, আমাদের সাথে বিনিময় করুন আপনার ছবি দেখাশোনার অভিজ্ঞতা।
-মনি শামিম
নতুন মন্তব্য করুন