প্রাচীন দরোজায় দেবতার ছবি সম্বলিত কড়া, বোলোনিয়া, ইতালি।
শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবন পেরিয়ে গেলেও ক্যামেরা ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি কখনও। বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে যে ফটোগ্রাফার ছবি তুলতেন তার কাঁধে ক্যামেরা দেখে ইচ্ছে জাগতো কাছে গিয়ে দেখার, কিন্তু সে সুযোগ মেলেনি। এনিয়ে আক্ষেপ করার জন্য যে পরিমান আগ্রহ থাকার দরকার তার ঘাটতি ছিল বেদম পরিমান। বইয়ের জগতে ডুবে থাকতাম,আলোকচিত্রের প্রতি আলাদা কোনও টান অনুভব করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে আলোকচিত্রের প্রতি যৎকিঞ্চিত আগ্রহ জন্মাল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে "রোববার" পত্রিকায় নাসির আল মামুনের তোলা এস এম সুলতানের কিছু সাদা কালো ছবিতে আলো-ছায়ার অনুপম চিত্রায়ন দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে গেলাম। একটি আধো অন্ধকার ঘরে সামান্য আলো এসে ঢুকেছে, সুলতান সেই আলোয় কখনো বেড়ালের গায়ে হাত বুলাচ্ছেন,কখনো আনমনে কি যেন ভাবছেন- এধরণেরই কিছু অবিশ্বাস্য,অসাধারণ ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। তারপর থেকেই আলোকচিত্রের প্রতি মুগ্ধতার শুরু। মামুন ভাইয়ের ছবি দেখার পর শুরু হল দৈনিক পত্রিকার আলোকচিত্রের প্রতি চোখ বুলানো। এইটা প্রায় নিয়মিত চর্চায় পরিণত হল।
ঠিক এরকম কোনও এক সময় বন্ধু শাকির ঢাকা থেকে এক ক্যামেরা নিয়ে এসে রাজশাহীতে আমাদেরই বন্ধুদের ছবি তোলা শুরু করে দিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ। ছবিগুলো যখন প্রিন্ট হল তখন তার রঙ, আলো সবকিছু এত সুন্দর হয়েছিল যা বলার নয়। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, যে একটি ক্যামেরা কোনও একদিন আমি কিনবোই, সেটা যেভাবেই হোক। এরপরে ২০০৫ সালে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন আনন্দ আপা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠালেন মিনলটা এসআরটি ২০১ এবং ৩৫ ২.৮ সেলতিক রক্কোর লেন্স। মাত্র ৬৮ ডলার লেগেছিল কিনতে,যদিও আনন্দ আপা কোনদিন টাকাটা নেননি আর, উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন। এসআরটি ব্যাবহার শিখে গিয়েছিলাম খুব তাড়াতাড়ি। অসাধারণ ছবি ওঠে, চমৎকার রঙ,তীক্ষ্ণতা আর কন্ট্রাস্ট। ছবি তুলেও ভারী আরাম, মোলায়েম শাটার লিফ, ফিলম ভরে শাটার, এ্যাপারচার আর ফোকাস এ্যাডজাস্ট করে ক্লিক করে যাওয়া। কিন্তু সমস্যা হল ওজনে ক্যামেরাটি খুব ভারী, পুরোটাই মেটাল, ছোটখাটো এক ডিনামাইট যেন, শুধু ক্যামেরাই নয় মারণাস্ত্রও বটে। লেন্সটাও বেঢপ সাইজের। একে বহন করে নিয়ে যাওয়াটা ছিল বিড়ম্বনার। তবে ছবি ওঠে একদম বস টাইপের, আর যুগ যুগ টিকে থাকার গ্যারান্টি ষোল আনা।
কি অদ্ভুত এক উত্তেজনার সময় ছিল তখন। একটি করে ফিলম কিনি, ৩৬ টা ছবি তোলা শেষ হলেই দৌড় লাগাই প্রিন্টের দোকানে। কখনও রাজবাড়ির প্রিন্টের দোকানে,কখনও কর্মসূত্রে রাজবাড়ি থেকে ঢাকা যাবার প্রোগ্রাম থাকলে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাটার মোড়ে মাস্টার কালার ল্যাবে। ঢাকায় ছবি প্রিন্ট করতে বেশি সময় লাগতোনা। ফিলম দিলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ডেভেলপ সহ প্রিন্ট বের করা সারা। সেগুলি নিয়ে রাজবাড়ি ফিরে আসা হত। পথিমধ্যে ছবি দেখতে দেখতে আসা, উত্তেজনায় থরথর করে কেঁপেছি, এমনও হয়েছে। যখন রাজশাহী যেতাম, ফিলম শেষ হলে সাহেব বাজারের মোড়ে কনিকা কালার ল্যাবে প্রিন্ট করা হত। কর্মসূত্রে রাজবাড়ি আর জন্মসূত্রে রাজশাহী এ দুটো জায়গাতেই ছবি তোলার কাজ চলত। তারপর ঢাকায় বদলী হয়ে আসার পর মিরপুরে আমাদের ছোট্ট বাসায় তুলেছি কিছু ছবি। প্রিন্ট করবার পর ছবি খারাপ হলে মন খারাপ হত আর ভাল হলে মনে হত ডেকে ডেকে সবাইকে দেখাই। ভালো ছবি দেখে চোখের কোণায় জল জমে গেছে এমনও হয়েছে, আবার ছবি খারাপ হলে নিজেকে যে কতবার অভিসম্পাত দিয়েছি, বলার নয়। ছবি প্রিন্ট হলে একটা এ্যালবামে তা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতাম। আজও দেখা হয় পুরণো ছবিগুলি।
ফিলমে হাতেখড়ি হয়েছিলো যখন ২০০৫ সালে, তখন ডিজিটাল ফটোগ্রাফি হাঁটি হাঁটি পা করে এগিয়ে চলেছে বিশ্বজয়ের দিকে। চিত্রগ্রাহকরা মনে হয় মুখিয়ে ছিলেন এর জন্য, পাওয়ামাত্র লুফে নিলেন। অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে প্রিন্ট মিডিয়া দখল করে নিল ডিজিটাল ফটোগ্রাফি। পেশাজীবীরা সাদরে বরণ করে নিলেন ডিজিটালকে, এ্যামেচাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিবর্তনের পালাবদলে নিজেদের শামিল করে নিলেন। ডিজিটাল এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে ফিলম ক্যামেরা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল ধীরে ধীরে,অনেক বড় বড় কোম্পানি ডিজিটাল প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে না পেরে ব্যবসার পাততাড়ি গুটিয়ে নিল। মিনলটার মতন ডাকাবুকো কোম্পানি হারিয়ে গেল কালের অতলে, বন্ধ হয়ে গেল কনট্যাক্স, মুহূর্তের ভেতর জাইস হয়ে গেলো অতীত। পরিবর্তনের এই ডামাডোলের মাঝে গোমূর্খ আমি তখন কেবল শুরু করেছি ফিলমে হাত পাকানো!
পরবর্তীতে বিগিনার হিসেবে ডিজিটালে প্রবেশ করলাম নিকন ডি ৪০-র হাত ধরে। শুরুতেই সেটিং নিয়ে পড়লাম মহা গ্যাঁড়াকলে, সময়ও লাগত অনেক তা ঠিকঠাক করতে,আবার একটা ঠিক করি তো আরেকটা ভুলে যাই হরহামেশা। এক্সপোজার ঠিক থাকে তো হোয়াইট ব্যাল্যান্সে ঘাপলা হয়, আইএসও অটো করার কথা ভুলে যাই ক্ষণে ক্ষণে,আবার ম্যানুয়াল লেন্স লাগালে আইএসও ঠিক করতে হিমশিম খেতে হয়, ছবি অকারণে ওভারএক্সপোজ হয়ে বসে থাকে, সেন্সরে ময়লা জমে যায় লেন্স বদলাতে গেলেই, পরিষ্কার করার জন্য আবার ছোটা সারাইয়ের দোকানে,অটো ফোকাস নিয়ে বিস্তর ভোগান্তি সহ্য করা- এই করে করে মেলা সময় নষ্ট করলাম। যাই হোক শেষমেশ অল্পবিস্তর ডিজিটাল বিদ্যা আয়ত্ত হবার পর পোকামাকড়ের ছবি তোলার জন্য ম্যাক্রো লেন্স কেনার খাতিরে এক দোকানে গিয়ে হানা দিলাম। সেই দোকানেই প্রথমবারের মতন দেখলাম একটা ঝকঝকে অপরূপা মিনলটা এক্স ৭০০, কালো চামড়ার কভার লাগানো এবং সাথে ছোট্ট ও কমপ্যাক্ট ৫০ ১.৭ রক্কোর লেন্স, রূপসী মিনলটার পাশে আমার পেটমোটা ডি ৪০ তখন রীতিমত লজ্জা দিচ্ছিল আমাকে। মাত্র ১০০ ইউরোতে দিয়ে দেয়ার জন্য দোকানি খুব সাধছিল। হুজুগে আমি ক্যামেরা দেখে এত সুন্দর লাগল যে কিনে ফেলতে দুইবার ভাবলাম না।
এর মাঝে বিগিনার ডিএসএলআরের যে দুটো সীমাবদ্ধতা, ছোট ভিউফাইন্ডার এবং ক্রপ জনিত সমস্যা-সে দুটোই ফিলম ক্যামেরা সমাধান করে দিল যেন মুহূর্তের ভেতর।এর মাঝে বাগিয়ে নিলাম ২৪ ২.৮ রক্কোর লেন্স। ২৪ দিয়ে ছবি তোলার পর কি হল, এক অদ্ভুত পরিবর্তন এল আমার ছবি তোলার গতি প্রকৃতিতে। ওয়াইড দিয়ে তুলছি বলে ফ্রেমটাকে ঠিক রাখাটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হতে শুরু করল। আবার একই সাথে কম্পোজিশনকে ঠিকঠাক রাখতে বাড়তি মনোযোগ দেয়া আর চরম হিসেবি হবার বিদ্যা আয়ত্ত করা শুরু হয়ে গেল। এবং ঠিক এই জায়গাতে এসে উপলব্ধি করা শুরু করলাম যে ফটোগ্রাফি আসলেই কঠিন জিনিষ। এর বিপরীতে ডিএসএলআরে দেখা যেত ছবি তুলে যাচ্ছি একের পর এক, কোনও হিসেব নেই, কোনও লক্ষ্য কিংবা উদ্দেশ্য নেই। হাজারখানেক ছবির মধ্যে শখানেক ভাল উঠেছে বলে মনে হয়, আর এর শতভাগই মোটামুটি ঝড়েবক। সহজেরে ভালবাসতে গিয়ে আমার ফটোগ্রাফির তাল-লয়-ছন্দ সব পরপারে চলে যাবার মতন অবস্থা হয়েছিল! সম্বিৎ ফিরে পেয়েছি পুনরায় ফিলমের হাত ধরেই। আবার এরপরেও দেখেছি যে যতবার ডিজিটালে তোলার পর কম্পোজিশনে এলোমেলো অবস্থা দেখা দিয়েছে, আবার কিছুদিন ফিলম ব্যাবহার করে হাল ঠিক করতে হয়েছে। যেহেতু ডিজিটাল এবং ফিলম কোনটাই ছেড়ে দেইনি, এভাবে ঠিকঠাক করে নিয়েছি সীমাবদ্ধতাকে।
দেশে ফিলম ফটোগ্রাফি মৃতপ্রায়। আমার পরিচিত কাউকেই আর ফিলমে ছবি তুলতে দেখিনা। সবাই এখন ডিজিটাল ধরেছেন। তবে পেশাদার কেউ কেউ হয়ত ফিলমে তোলেন এখনও। মাস্টার কালার ল্যাবে গিয়েছিলাম গত বছরের আগস্টে সাদা কালো ফিলম প্রিন্ট করার জন্য, উনারা বললেন বন্ধ করে দিয়েছেন সাদা কালো প্রিন্ট। বলছিলেন যে সাদা-কালো আর্থিক দিক দিয়ে এখন লস প্রজেক্ট তবে কালার ফিলম এখনো ডেভেলপ করেন তারা। সাদা কালো ফিলম প্রিন্ট করতে যে খরচ হয় তাঁদের তাতে আখেরে লাভ হয়না ছাই, তাই এই ব্যাবস্থা। প্রিন্ট করার জন্য দৃকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলেন। মনে আছে,আমি রাজবাড়িতে ২০০৫ সালে পর্যন্ত সাদা কালো ফিলম প্রিন্ট করেছি আর আজ সাত বছরের ব্যাবধানে ঢাকা থেকে পর্যন্ত এই সুবিধে একেবারে উধাও হয়ে গেল! আগে মাস্টার কালার ল্যাবে গেলে ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফিলম প্রিন্ট হয়ে যেত, এখন পুরো দুইদিন নেন তাঁরা। একসাথে কয়েকটি ফিলম প্রিন্টের অর্ডার না থাকলে প্রিন্ট এখন আর লাভজনক নয়, বললেন মাস্টার কালার ল্যাবের স্বত্বাধিকারী। সেদিন অনেকক্ষণ কথা হল উনার সাথে। উনি বললেন কিভাবে ধীরে ধীরে ফিলমের ব্যাবসা শেষ হয়ে গেল। উনি আশংকা প্রকাশ করে বললেন, এখন তো তাও তাঁরা কালার ফিলম প্রিন্ট করেন,আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে সেটাও বন্ধ করে দেবেন, কারণ চাহিদা কমে যাচ্ছে দিনকে দিন!
গত দুই বছর টানা ফিলমের সাথে ওঠাবসা করতে করতে কেমন এক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি এর সাথে। ফিলমে ছবি তুলি বলে অনেকে নাক সিঁটকান,অনেকে দূর থেকে টিটকিরি করেন,ভাবেন মৃত মাধ্যমে আবার কিসের ছবি, আর এ মাধ্যমের উৎকর্ষতার কথা বললে ভাবেন, পুরাণ পাগল ভাত পায়না, নতুন পাগলের আমদানি! কিন্তু তাঁদের বোঝাতে পারিনা ফিলমের প্রতি টানের রহস্য। এ এক ব্যাখ্যাহীন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ফিলম আমাকে মিতব্যায়ি হতে শেখায়, ফিলম আমাকে যত্নবান হতে বলে, ফিলম আমাকে দেয় এক অব্যাক্ত ভালো লাগার ঠিকানা, ফিলম আমাকে পরিয়ে দেয় ভালবাসার লাগাম। ফিলম আমাকে দেয় অজানা শিহরণ,অনিশ্চয়তার দোলাচল। ফিলম আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে শেখায়, আমাকে আমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করে। ফিলম আমাকে উপহার দেয় নির্ঘুম রাত্রি, তৃপ্তির কান্না। ফিলমের রঙ,কনট্রাস্ট এবং ডাইনামিক রেঞ্জ যেন এক অচেনা অদেখা পৃথিবী, ফিলমে আলো ছায়ার খেলা যেন এক অনাস্বাদিত অনুভূতি। ফিলম ম্যানুয়াল ক্যামেরা ব্যাবহারেও কত শান্তি, হোয়াইট ব্যাল্যান্সের দুশ্চিন্তা নেই, অটো আইএসও নিয়ে দুর্ভাবনা নেই, কী উজ্জ্বল আর বিশাল ভিউফাইন্ডার, শাটার ক্লিক করলে কি সুন্দর একটা মোলায়েম আওয়াজ হয়, আহা! কোনও মেনু টিপাটিপির ঝামেলা নেই, ছবি তুলে বারবার দেখে নেয়ার যন্ত্রণা নেই, একবার ছবি তুললাম, প্রিন্ট না হওয়া পর্যন্ত নো চিন্তা ডু ফুর্তি, আর প্রিন্ট করার পর ব্যাস,বন্দী হয়ে রইল মুহূর্তটি সারা জীবনের জন্য।
ফিলম কিংবা ম্যানুয়াল ক্যামেরার সাথে কি আমাদের কোনও প্রাকৃতিক সম্পর্ক আছে? এইযে একটা ফিলম কিনে ক্যামেরার বাক্সে লোড করা, তারপর ছবি তোলা শেষ হলে তা প্রিন্ট করার জন্য দোকানে দোকানে দৌড়ে বেড়ানো,ছবি ভাল আসল না খারাপ তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা, এই যে কালক্ষেপণ, এই যে প্রতীক্ষা, এইযে এ্যালবামে স্থান পাওয়া ছবিগুলি সুযোগ পেলেই উল্টেপাল্টে দেখা, এইযে মোহ, এইযে মায়ার খেলা- এই গোটা প্রক্রিয়ার ভেতর কি কোনও মানবিক আবেগের আবেদন নেই? এমনকি ফিলম প্রিন্ট করার প্রক্রিয়াটাও খুবই প্রাকৃতিক মনে হয় মাঝে মাঝে। এই যে প্রিন্ট করার জন্য জল ঢালতে হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমান কেমিক্যাল ভরতে হচ্ছে, ঠিকমতন মিশ্রণ ঘটাতে হচ্ছে, একটু এদিক ওদিক হলে তার প্রভাব পড়ছে অন্তিম সৃষ্টিতে- এই পুরো প্রক্রিয়ায় একটি অতীন্দ্রিয় প্রাকৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ডিজিটাল বড় বেশি মেশিন নির্ভর। ছবি তোলা এবং তারপর তাকে একটা অন্তিম রূপ দেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটাই যান্ত্রিক। এখানে শেখার প্রক্রিয়া, ছবি তোলার আনন্দ কিংবা বিষাদ জনিত অনুভূতি, ছবি তোলার পর কম্প্যুটারের পর্দায় তাকে কাটাছেঁড়া করা আর অন্যকে দেখানোর তাগিদ থেকে দ্রুত তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া -এই প্রক্রিয়াটি তাৎক্ষনিক আবেদনে ভরপুর,তাই দীর্ঘমেয়াদে এই মাধ্যমকে প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে নেয়াটা কঠিন। কিন্তু ফিলমের প্রক্রিয়াটি মানবিক এবং প্রাকৃতিক হওয়াতে ক্যামেরাই বলি কিংবা আলোকচিত্র-এর সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ি এক অদ্ভুত মায়ার বন্ধনে। আমরা ধীরে ধীরে মাধ্যমটিকে ভালবাসতে শুরু করি। আলোকচিত্রকে যদি ভালই না বাসলাম তাহলে কিছু হল?
লেখা শেষ করার আগে কিছু ছবি যুক্ত না করলেও কিভাবে কি? তাই স্মৃতির পাতা থেকে কিছু ছবি তুলে দিলাম।
ক) অথৈ যখন এল আমাদের জীবনে, চুটিয়ে ছবি তুলেছি ওর, রাজবাড়ি।
খ) সেদিন ওকে বসিয়ে ছবি তুলতেই পারিনি, বসতে বললেই উঠে দাঁড়ানো সারা। রাজবাড়ি।
গ) উপশহর রাজশাহীতে অথৈ ওর নানিবাড়ীতে, বেশ শান্ত ও স্নিগ্ধ ভাব।
ঘ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাদিবাড়ীতে অথৈ ওর একমাত্র চাচাতো ভাইয়ের সাথে।রাজশাহী
ঙ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুব্রত দাদুর কোলে অথৈ।
চ) ঢাকায় আইসল্যান্ড থেকে আগত এক আন্টির কোলে অথৈ।
ছ) অথৈ মুখ টিপে দুষ্টুমি ভরা হাসি তখন শিখে গেছে। ঢাকা।
জ) নগর কেন্দ্রের গির্জা, বোলোনিয়া, ইতালি।
ঝ) নগর কেন্দ্রের আরেকটি প্রাসাদ, বোলোনিয়া, ইতালি।
ঞ) বোলোনিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা, দুয়ে তোররি।
ট) নগর কেন্দ্রে জনসমাগম। বোলোনিয়া, ইতালি।
ঠ) বোলোনিয়ায় সাইকেল, আমার প্রিয় ছবি তোলার সাবজেক্ট।
ড) বানিজ্য বসতে লক্ষ্মী। বোলোনিয়া।
ঢ) ভেরোনায় রেল ষ্টেশনের সামনে তুলেছিলাম এই ছবি।
ণ) মিলানের কেন্দ্রে মেলার দিনে সং সাজা।
ত) জয়লাক হোল, আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হোক। মিলান।
থ) পম্পেই রুইন্স। পম্পেই, নাপোলি, ইতালি।
দ) রাস্তার ধারের আসনে বোকেহ এর খেলা। বোলোনিয়া।
ধ) বোলোনিয়ার নগর কেন্দ্রে রেস্টুরেন্টের সাজিয়ে রাখা টেবিল চেয়ার।
ন) পোরতা পালাতিনে, তুরিন, ইতালি।
-মনি শামিম
মন্তব্য
মুগ্ধ করে ফেলতেছেনতো শামিম ভাই। ঘুনে ধরা শখটাকে আবার জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছা হচ্ছে আপনার ছবি দেখে।
নাসীর আলী মামুন এর সাদাকালো পোট্রেট গুলোর তুলনা হয় না। বিশেষ করে এস এম সুলতানের যেসব ছবি তুলেছিলেন উনি। আমার সব থেকে প্রিয় সুলতানের বাঁশি বাজানোর ছবিটা। এতই ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে নিত্য উপহারে ওই ছবিটা প্রিন্ট করা টিশার্ট পেয়ে কিনে ফেলেছিলাম। রঙ জ্বলে গিয়েছিল তবু পড়েছি ৫বছর, পরে আর খুঁজে পাইনি ওটা কোন দোকানে।
ধন্যবাদ বেচারাথেরিয়াম। ঘুনে ধরা শখটাকে জাগিয়ে তুলুন, জাগিয়ে রাখুন, এইজন্যেই তো পোস্ট খানা দেয়া।
-মনি শামিম
ছবি তোলার পরে সেটার সাথে আত্মিক টান অনুভব করাটা খুব আনন্দের বিষয় মনে হত আমার কাছে। এটা আমার কাছে মনে হত একটা ছবি দিয়ে একটা গল্পের বই পড়ে ফেলা। আমার নিজের ভালো ক্যামেরা না থাকায় মোবাইলের ক্যামেরা দিয়েই অনেক ছবি তুলতাম এবং পরে সেগুলি দেখতাম ছবি তোলার সময় চোখ এড়িয়ে যাওয়া নতুন কিছু আবিস্কার করার জন্যে। অনেক কিছুই খুঁজে পেতাম এবং ভালোই লাগতো ব্যাপারট।
একদিন একটা ছবিতে খুব দুঃখজনক একটা ঘটনা দেখতে পাই যেটা মূলত একটা ল্যাম্পপোস্টের ছবি তুলেছিলাম জন্যে খেয়াল করিনি। এরপরে আর কোনদিন নিজের তোলা ছবি গল্পের বইয়ের মত পড়া হয়না বা সাহসও হয়না।
আপনি খুব সুন্দর ছবি তোলেন। হিংসা ও ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম
ছবি তুলুন, দেখুন। দুই একটি ঘটনায় দীর্ঘনিঃশ্বাস না ফেলে বরং শখটাকে জাগিয়ে রাখুন। এত চমৎকার একটা শখ কেন হাতছাড়া করবেন বলুন, ছবি তোলা সে মোবাইল হোক কিংবা অন্য কোনও মাধ্যম, ছাড়বেনা না প্লীজ। ধন্যবাদ উৎসাহটুকু দেয়ার জন্য।
-মনি শামিম
রাজবাড়ি কোন জায়গা?
অনেক ফিল্মপ্রেমী বড় ফটোগ্রাফার আছেন বটে, কিন্তু ব্যাপারটা মূলত নস্টালজিয়া ছাড়া আর কিছু না। আপনি হোয়াইট ব্যালেন্স সেট করা নিয়ে অভিযোগ করছেন, র-তে তুললে ব্যালেন্স পরে ইচ্ছামত সেট করা যায়। এক রিল ফিল্ম যেমন নির্দিষ্ট এক আইএসও-রই হয়, আপনিও চাইলে ক্যামেরায় আইএসও বেঁধে দিতে পারেন আগামী সব ছবির জন্য।
আপনার অভিযোগটা অনেকটা এরকম - আগে কি সুন্দর লম্বা লাইন দিয়ে টিকিট কাউন্টারের সামনে শয়ে শয়ে মানুষের সাথে ঠেলাঠেলি করে টিকিট কাটতে হত, মানুষের সঙ্গে মানুষের মেশার, এতটা সময় কাটানোর সময় পাওয়া যেত, শেষে মিলত সদ্য ছাপা টিকিটের ঘ্রাণ, এতগুলো ধাপ আর এতটা সময় পেরিয়ে টিকিটটা হাতে নিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এসে যেন বিশ্বজয়ের আনন্দ পেতাম। আর আজকাল? আজকাল একা একা অনলাইনে বসে ডিজিটালি খুচুক করে দুই ক্লিকে কেটে ফেল টিকিট, এতে না আছে জান, না আছে প্রাণ, না আছে উত্তেজনা... এমনকি টিকিটটা হাতে ধরবার আনন্দটাও পাওয়া যায় না।
একটাই জিনিস সত্যি, তা এই যে আগে অনেক ভেবেচিন্তে হিসেব করে একটা রিল খরচা করতে হত, এখন মানুষ শয়ে শয়ে ক্লিকিয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি ছবি নিয়ে আসলেই আপনার মত উৎসাহী হয়, তাকে ভেবেচিন্তে হিসেব করে ডিজিটাল ছবি তুলতেই বা বাধা দিচ্ছে কে?
আর ইয়ে, এবারের ছবিগুলো অন অ্যাভারেজ আপনার বাকি সিরিজগুলোর মত ভালো হয়নি।
ছবিগুলো ৮০০র বদলে ৭০০ বা ৭৩০ উইডথ করে দেওয়া নিয়ে তো আপনার সঙ্গে কথা হয়েছেই।
ধন্যবাদ কৌস্তুভ, দারুণ লিখেছেন। আমি আসলে ক্যামেরার খুঁটিনাটি এড়িয়েই যেতে চেয়েছিলাম, কারণ ডিজিটাল এমন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে যা হয়ত ম্যানুয়াল ক্যামেরায় অসম্ভব ছিল। আমি আসলে এখানে ফিলম নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি সকলের সাথে বিনিময় করতে চেয়েছি। যত সহজে ম্যানুয়াল আয়ত্ত করতে পেরেছিলাম, ডিজিটাল তা বেশ কঠিন করে দিয়েছে, তবে এটা নেহাত আমার অভিজ্ঞতা। ভাল ফটোগ্রাফাররা সবসময় সচেষ্ট থাকেন তাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করবার। আমি তো তাদের দলে নই। ফিলমের চাইতে ডিজিটালে আমি অনেক বেশি ছবি তুলেছি, অনেক ভাল তুলেছি বলে মনে করি, কিন্তু এই পোস্টে কিছু অনুভুতি এবং আবেগের জায়গাতে ভিন্নতা দেখিয়েছি। এখানে আমার পক্ষপাত ফিলমের দিকেই, তবে এনিয়ে তর্ক চালিয়ে যাবার মতন দক্ষতা এবং কৌশল কোনটাই এখনো রপ্ত করতে পারিনি। চেষ্টাটা অবশ্য চালিয়ে যাচ্ছি। কোনও এক সময় এনিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে আছে, আগে ফিলমে আরও ছবি তুলে নেই।
আপনার টিকেট সংক্রান্ত উদাহরণটা ভারী মজার এবং অর্থবহ। ফিলমের গন্তব্য হয়তো শেষ বিচারে আমাদের স্মৃতিচারণেই। কিন্তু যাঁদের বাসায় তা ধুলো মাখছে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে তার মাধ্যমে ছবি তোলার বেসিক নিয়ম কানুন শেখা তো যেতেই পারে,নয়কি?
-মনি শামিম
এইটা কিছু হইল? একবার বলেন তুমি আর একবার আপনি?
আমিও ছোটবেলায় ছবি তোলা শিখেছি বাবার zenith ফিল্ম ক্যামেরাটা দিয়েই। সেটা আমার ছোট্ট হাতের পক্ষে খুব ভারী ছিল, যদিও এখনকার ডিএসএলআরটার তুলনায় ওটা অনেক হালকাই।
অবশ্যই, কিন্তু ফিল্ম কেনার/ডেভেলপ করার এত সমস্যা হলে আর কতদিন তেমনটা পারবেন কে জানে।
তুমি, তুমি। এইবার হল?
ফিলম বিলুপ্ত হয়নি তো একেবারে। এবং আমার মনে হয়না আমার জীবনে একে বিলুপ্ত দেখে যাবো। কাজেই যতদিন আছে, চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কোডাক, ফুজি সম্ভবত ফিলম উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, ইলফোর্ড তো করেনি। কে জানে নতুন কোনও কোম্পানি জুটেও যেতে পারে ফিলমের যাত্রায়! ফিলম থাকলেই হয়, ডেভেলপ আর প্রিন্ট তো বাড়িতে বসেও করা যাবে!
-মনি শামিম
কথাটার সাথে একমত না কৌস্তুভ। কিছুটা নস্টালজিয়া তো কাজ করবেই, স্বাভাবিক। কিন্তু পুরাটা মোটেই নস্টালজিয়া না। আমার মতটুকু বলি-
ফিল্মে ছবি তোলার বিশেষত্ব: মাধ্যমের ভিন্নতা
যারা ফিল্মে ছবি তুলেন/তুলেছেন তারা শুধু সুযোগের অভাবে ফিল্মে ছবি তুলতেন এমনটা না। ফিল্মে ছবি তোলার একটা উপযোগিতা আছে। উপরে মনি ভাইয়ের তোলা ছবিগুলো শৌখিন ফিল্ম ফটোগ্রাফারের মত মনে হল, অনেকটা যেমন এখন মানুষ তুলে পয়েন্ট অ্যাণ্ড শুট ক্যামেরাতে। এই ছবিগুলোর কোন টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা পোস্টে আসে নাই, কিন্তু যারা ফিল্মে ফটোগ্রাফি করেছেন তারা ফিল্মে ছবি তোলার টেকনিকাল বিশেষত্বগুলো খুব উপভোগ করেন:
ফিল্ম বলতে আমরা সাধারণভাবে ৩৫ মিমি ( 24×36 mm) ফিল্ম বুঝি। এইটা সেমন হলুদ কোডাক বা সবুজ ফুজির ছোট ছোট বাক্স যেগুলো আগে দোকানে সাজিয়ে রাখা হত। কিন্তু ৩৫ মিমি নেগেটিভ ছাড়াও ১২০ মিমি (6×6 cm) ফিল্ম আছে, ২২০ মিমি ফিল্ম আছে। এছাড়া নেগেটিভ ফিল্ম ছাড়াও স্লাইড আছে - এগুলো একেকটা মাধ্যম।
আর এই একেকটা মাধ্যমে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা কিন্তু একেকরকম। কোডাক্রমে মানুষ যেভাবে ছবি এক্সপোজ করে, চিন্তা করে একটা ফ্রেম নিয়ে, মনোক্রোম ১২০মিমি ইলফোর্ড ১০০ এ ছবি তোলার সময় সেভাবে চিন্তা করে না। অভিজ্ঞতা ও শিল্পের মাধ্যম হিসেবে এগুলো এতটাই আলাদা যে সৃষ্টিশীলতায় এর একটা বড় ইম্প্যাক্ট আছে।
--------
সমস্যাটা হল জানার। প্রো লেভেল ক্যামেরা বললে যদি মানুষ বুঝে ডিএসএলআর - সেই দোষটা কি ফিল্ম ফটোগ্রাফারদের? মিডিয়াম ফরম্যাট রোলেই বা রেঞ্জফাইন্ডার লেইকা এগুলোর আবেদনটা অন্যরকম। মানুষ যখন লেইকা দিয়ে ছবি তুলে তখন ইচ্ছা করেই ম্যানুয়াল ফোকাস লেন্সে ফিরে যায়।
অ্যানালজির ভুল:
তোমার ট্রেনে টিকেট কাটার অ্যানালজিটা চিন্তা করে দেখ:
অনলাইনে টিকেট কাটা এবং লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটা > শেষ পর্যন্ত কিন্তু একই ট্রেনে যাচ্ছ
কিন্তু ৩৫ মিমি ফিল্মের রেজাল্ট, ডি এস এল আরের রেজাল্ট এক না।
এমনকি ফুজি ভেলভিয়া, নিওপ্যান ৪০০ এর রেজাল্টও এক না।
আবার,
ফিল্ম এসএলআর আর ফিল্ম রেইঞ্জফাইন্ডার পুরাই আলাদা দুইটা মাধ্যম। তোমার ছবি দেখার চোখই আলাদা হয়ে যাবে। হত বাধ্য। কারণ রেঞ্জফাইন্দারে তুমি ছবি কম্পোজ করবাই ভিন্নভাবে। কার্টিয়ের ব্রেসোর বাপও ডিসাইসিভ মোমেন্টের ঐ ছবিগুলো ফিল্ম এসএলআরে তুলতে পারত না - কারণ এস এল আরের মিররের জন্য তুমি ঠিক যেই মুহূর্তের ছবি তুলবে সেটা কখনোই দেখতে পারবা না। ওদিকে রেঞ্জফাইন্ডারের কোন মিররই নাই!
(উপরের কথাগুলো মাধ্যমের ভিন্নতার জন্য বলছি। গত কয়েক বছর হল ডিজিটাল রেইঞ্জফাইন্ডার বের হয়েছে। হয়ত সময়ের সাথে এর উন্নতিও হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে তুমি ডি এস এল আর আর ডিজিটাল রেইঞ্জফাইন্ডারে একই রেজাল্ট পাবে)
এইটা গেল মাধ্যমের ভিন্নতার কথা। এইটা ছাড়াও আছে অভিজ্ঞতা। তোমার অ্যানালজির উপর ভর করেই বলি - সবসময় দূরত্ব পাড়ি দেওয়াটাই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য না। গাড়িতে করে স্বল্প সময়ে দূরত্ব পাড়ি দেওয়া যায়। তাহলে মানুষ সাইকেল চালায় কেন? কারণ প্যাডেল মেরে সাইকেল চালিয়ে যে আনন্দ সেটা গাড়িতে পাবে না। আবার গাড়িরও নিজস্ব মজা আছে (যেমন আছে ডিজিটালের)।
---
ফটোগ্রাফার আছে হাজার জাতের, একেকজনের কাজ একেকরকম। ওয়াইল্ড লাইফ, ফটোজার্নালিজম বা ফ্যাশান শুটে ডিজিটাল খুব ইউজার ফ্রেন্ডলি কিন্তু এর বাইরেও স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, অনেক ধরনের ডকুমেন্ট্রি কাজ আছে। সেখানে ফিল্মে যে বাড়তি একটুকু পাওয়া যায় ঐটা ডিজিটালে আসবে না। ফটোশপে না হয় টোনাল কোয়ালিটি কাছাকাছি আনা যায় কিন্তু কম্পোজিশান বা ছবি তোলার যে অভিজ্ঞতা ঐটা তো আর আনা যাবে না।
খালি নিখুঁত ফোকাস, চরম শার্পনেস আর কারেক্ট এক্সপোজারে হাজারে-হাজারে ছবি তোলা তো আর ফটোগ্রাফির একমাত্র উদ্দেশ্য না। ডিজিটাল খালি ঐটুকুই করে, এর বেশি কিছু না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনি না লিখলেও মাঝে মাঝে মন্তব্য কইরেন - জানা যায় অনেক কিছু - দেখার চোখ আরেকটু হলেও পালটায় ----
অসাধারণ লিখেছেন ফাহিম। আসলে ফিলমের টেকনিক্যাল দিক নয় বরং এর সাথে আমাদের যে আবেগ জনিত সম্পর্ক তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, প্রসঙ্গক্রমে কিছু খুঁটিনাটি চলে এসেছে। ফিলম এবং ডিজিটাল সবারই কাজ ছবি তোলা, মাধ্যম হিসেবে যতই তাঁদের ভিন্নতা থাকুক না কেন। শিল্পে অন্তিম সৃষ্টিই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, মাধ্যম নয়। আমি ফিলম ভালোবাসি বিধায় এত কথার অবতারণা, আরেকজন ভালবাসবেন ডিজিটাল, ক্ষতি নেইতো কোনও, তবে হ্যাঁ, আলোকচিত্রকে ভালবাসতে হবে, সেখানে কোনও ছাড় নেই!
-মনি শামিম
ফিল্মে ছবি তোলার বিশেষত্ব: মাধ্যমের ভিন্নতা
মাধ্যমের ভিন্নতা কি ডিজিটালে নেই? লোকে ক্যান্ডিবার (পেন্টাক্স w50)-এ ছবি তোলার সময় যেভাবে চিন্তা করে, ডিএসএলআর(ক্যানন 7D)-এ তোলার সময় একই ভাবে চিন্তা করে নাকি?
অ্যানালজির ভুল:
অ্যানালজি খুব অল্প সময়েই পারফেক্ট হয়। সে তো তুমি এমনও বলতে পারতে, ডিজিটালের বদলে ফিল্মে ছবি তোলার সময় তো কই বাড়তি হিসেবে আমায় ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ঠেলাঠেলি করতে হয় না, ওটাও একা-একাই তুলি! অ্যানালজি কতটা নিখুঁত সেটা ব্যাপার না, ওটার মধ্যে দিয়ে পুরাতন-পন্থা-প্রেমী মানুষের অনাবশ্যক নস্টালজিয়াটাকেই দেখাতে চেয়েছি কেবল।
* ফিল্ম নিয়ে যারা হুতাশ করে তাদের কত % ব্রেসোঁর মত রেঞ্জফাইন্ডার দিয়ে তুলত, হিসেব করে দেখো তো!
রেঞ্জফাইন্ডারটা মূল পয়েন্ট না, মূল পয়েন্ট হল, ফিল্ম ক্যামেরা থেকে ডিএসএলআরে যাওয়ায় কোনো বড় ফীচার কি ওনাকে আবশ্যিকভাবে হারাতেই হবে?
-------------
"সেখানে ফিল্মে যে বাড়তি একটুকু পাওয়া যায় ঐটা ডিজিটালে আসবে না। ফটোশপে না হয় টোনাল কোয়ালিটি কাছাকাছি আনা যায় কিন্তু কম্পোজিশান বা ছবি তোলার যে অভিজ্ঞতা ঐটা তো আর আনা যাবে না।"
"ছবি তোলার যে অভিজ্ঞতা" ব্যাপারটা vague, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট প্রপার্টির লেন্স দিয়ে যে ছবিটা ফিল্মে তোলা যাচ্ছে সেটাই (ফুল-বডিই ধর) ওই প্রপার্টির লেন্স দিয়ে ডিজিটালে তোলার সময় কম্পোজিশন এমন কী তফাত হবে, যে তফাতটা দুটো ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার মাঝে হয় না?
"বাড়তি একটুকু" ব্যাপারটা যারা ফিল্মে সিনেমা তোলেন তারা কেউ কেউ বলেন যে ফিল্মে ডায়নামিক রেঞ্জ বেশি থাকে। তবে সেটার পক্ষে কোয়ান্টিটেটিভ প্রমাণ দেখিনি। বুঝিয়ে বল দেখি।
"খালি নিখুঁত ফোকাস, চরম শার্পনেস আর কারেক্ট এক্সপোজারে হাজারে-হাজারে ছবি তোলা তো আর ফটোগ্রাফির একমাত্র উদ্দেশ্য না। ডিজিটাল খালি ঐটুকুই করে, এর বেশি কিছু না।"
আমারো তো সেটাই বক্তব্য। ডিজিটাল ছবি সংরক্ষণ ও প্রসেস করার কাজটাকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে, এর বেশি কিছু খামতি নেই তেমন একটা। হ্যাঁ, তুমি যদি এখন নয়েজপ্রিন্ট খুঁটিয়ে দেখতে যাও তাহলে অন্য ব্যাপার, কিন্তু কম্পোজিশন ইত্যাদিতে এমন না।
আলোচনা দেখেশুনে মনে হচ্ছে আমি একটু অনুপ্রবেশ করে দুচারটে হুদাই মন্তব্য করতেই পারি!
১।
ফাহিম মাধ্যম নিয়ে লিখেছে, কৌস্তুভ, তুমিও লিখলে। মাধ্যমটা কি আসলে? ফিলম তো একটাই মাধ্যম, তা সেটা কেউ ৩৫ কেউ ১২০ কেউ ২২০ আবার কেউ লারজ ফরম্যাটে ব্যবহার করছেন, কিন্তু ডেটা প্রসেস এর কাজটিতে তো আর ভিন্নতা নেই, নাকি? স্লাইডের ব্যাপারটা খুব নিশ্চিত নই, সেখানে কি ডেভেলপ করতে হয়না?
কৌস্তুভ, পেন্ট্যাক্স ডবলু ৫০ কিংবা ক্যানন ৭ডি দুটোই তো ডিজিটাল, ডেটা প্রসেসের কাজ এক, তাহলে একে মাধ্যমের ভিন্নতা বলা হবে কেন? সেটা কি শুধু সাইজের পার্থক্যের কারণে? আজ ফুল ফ্রেম রেঞ্জফাইন্ডার ডিজিটাল ক্যামেরা এসেছে বাজারে,সেটাও তো ভিন্ন কোনও মাধ্যম নয়, নাকি?
২।
আমার মতামত হল দুটো জরুরী ফিচার হারাতে হয়। প্রথমটি হল ম্যানুয়ালের অসাধারন ভিউ ফাইন্দার, ছবি তোলার আরাম এবং স্বাচ্ছন্দের গ্যারান্টি দেয় ম্যানুয়াল যা ডিএসএলআর দিতে পারেনা। ম্যানুয়ালের ভিউ ফাইন্দার অনেক অনেক বড় এবং দারুণ উজ্জ্বল, ৫০ ১।৪ যুক্ত করলে অন্ধকারেও অনেক উজ্জ্বল দেখায় সাবজেক্টকে। দ্বিতীয় সুবিধে হল ক্রপ। ফুল ফ্রেম হওয়ায় ম্যানুয়াল ক্যামেরায় ক্রপজনিত ভোগান্তি নেই। এখানে আমার ২৪ মিমি ২৪ই, ৩৬ নয়, ৫০ ৫০ই, ৭৫ নয়। এবং কম্পোজিশনে অবশ্যই এর প্রভাব আছে। যেখানে আমার ৮৫ পোর্ট্রেটের এর জন্য আদর্শ, ডিজিটালে তা দাঁড়াচ্ছে ১৩০, এটা কি খুব সুবিধাজনক হচ্ছে?
-মনি শামিম
চিন্তা বিষয়টাকে কি একটু সরলীকরণ করা হলনা ফাহিম এখানে? মাধ্যমের ভিন্নতা সব মানুষের চিন্তায় প্রভাব ফেলবে, এমনটা তো নাও হতে পারে! ধরা যাক পয়েন্ট এন্ড শুট দিয়ে আমি একটা সাবজেক্টকে তুলবো, এখন ডিএসএলআর দিয়ে একই বিষয়কে ধারণ করার সময় আমার চিন্তার পার্থক্য তো নাও হতে পারে। মাধ্যম তো আমার চিন্তার ধারক কিংবা বাহন। মাধ্যম পরিবর্তন করলে কি চিন্তাও অটো বদলে যায়? সবার সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রেও কি এমন রাতারাতি পরিবর্তন হয়?
-মনি শামিম
সহমত।
ফাহিম ভাই, অনেকগুলি ব্যাপার মনে করিয়ে দিলেন এবং কিছু নতুন জিনিসও জানলাম। ধন্যবাদ। অনেকদিন লেখেন না ফটোগ্রাফি নিয়ে।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
মনি ভাই, ছবিগুলো সুন্দর এসেছে কিন্তু এত টাইট ফ্রেইম নিয়েন না। কিছু ছবিতে পা কেটে গিয়েছে অথবা দালানের মাথা, মন্দিরের চূড়া, স্তম্ভের কোণা এগুলো কেটে গিয়েছে। ফ্রেমে নেগেটিভ স্পেস বা ফাঁকা জায়গারও দরকার আছে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মনে থাকবে ফাহিম। এখন থেকে নেগেটিভ স্পেসের কথা মনে থাকবে। কাটাকুটির ব্যাপারে আমি খুব মনোযোগ দেই। ছবিগুলি বিভিন্ন সময়ে তোলা, পোস্ট করবার সময় ধারাবাহিকতা সব সময় বজায় থাকেনি। এই ভুলগুলি এখন কম হয়। ফাহিম, আশার কথা হল যে লেগে আছি এই মাধ্যমে, সহজে হার মানা যাবেনা, এখান থেকে লার্জ ফরম্যাটে ঢুকব আরও কিছুদিন পর, এখুনি নয়!
-মনি শামিম
অসাধারন সব ছবি। লেখায়
-মনি শামিম
শামিম সাহেবের এর আগের লেখাটি পড়েই শঙ্কিত হয়েছিলাম, ফিলমের প্রতি তাঁর অনুরাগ সমালোচনার ঝড় তুলতে পারে ভেবে। আমি তাঁর দলে তবে ভিন্ন কারণে। কারণটা ফিলম নয়, ক্যামেরা।
আজ থেকে কমবেশি ত্রিশ বছর আগে আউটডোরে ছবি তুলতে গেলে সঙ্গে থাকতো কালার ট্র্যানস্পারেন্সির জন্য SLR, এবং শাদাকালোর জন্য Leica M3 । ঘটনাস্থলে পৌঁছে কি ঘটতে পারে অনুমান করে আগেই ক্যামেরা রেডি করে নিতাম। বিশেষত, তখনকার দিনে যাকে বলা হতো grab shot তার জন্য। grab shot-এ action record করতে পারাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য। ধরুন, একটি মিছিল পুলিস ব্যারিকেডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, খবর আছে তার সহিংস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল, সুতরাং কাঁদানেগ্যাস, লাঠিচার্জ ইত্যাদি। ঘটনার সময় ছবি তুলতে যেন তিলমাত্র সময় নষ্ট না হয়। যেখানে দাঁড়িয়ে তুলবো, সেখান থেকে ঘটনা ঘটতে পারে ১৫ থেকে ৪০/৫০ ফুট দূরত্বের মধ্যে। এটিই প্রধান বিবেচ্য, সুতরাং লেন্সের depth of field scale দেখে ফোকাস ১৫ থেকে ৪০ ফুটের মধ্যে নিয়ে এলাম, অ্যাপারচার এলো ৮, শাটার দাঁড়ালো ১২৫। এবার নিশ্চিন্ত, ঘটনা ঘটার মূহুর্তে ফ্রেমে আসছে কিনা দেখেই শাটার টিপবো, ছবি ঠিক ফোকাসে আসবে। দূরত্ব আরো কম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ৫০মিমি খুলে ৩৫মিমি পরিয়ে রাখবো।
আজকের Pro-series-এর prime লেনসগুলির depth of field scale একবার internet-এ দয়া করে তখনকার prime লেনসগুলির depth of field scale-এর সঙ্গে তুলনা করে দেখবেন কী?
দ্বিতীয় বক্তব্য, তখনকার দিনে অপেক্ষাকৃত স্থির subject যথা, স্থাপত্য, কারখানার অভ্যন্তর বা স্টুডিওতে বিজ্ঞাপনের ছবি তোলা হতো hand and stand ক্যামেরা, যেমন linof, speed graphic ইত্যাদি। এগুলি কোয়ার্টার প্লেট ক্যামেরা, অ্যাডাপটার দিয়ে roll film-ও ব্যবহার করা যেতো। এইসব ক্যামেরায় triple extension, lens tilting ও rising, dropping bed এমন কি plate ও lens board movement-এর ব্যবস্থা থাকতো। এসব দিয়ে যে কী তিলিসমাত্ করা যায়, লিখতে গেলে একটি বই হয়। উত্সাহীরা সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের জন্য Time-Life প্রকাশনার The Library of Photography-The Camera নামের বইটি দেখতে পারেন। এই সব সুবিধাযুক্ত বিশাল ফরম্যাটের ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে এলে তার কত মিলিয়ন ডলার দাম হবে?
ডিজিটালের সপক্ষেও একটু বলার আছে। এতে তোলার পর সঙ্গেসঙ্গে দেখা যায় কি দাঁড়ালো। আমাদের দুরুদুরু বক্ষে অপেক্ষা করতে হতো। সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে অনেকে Polaroid জাতীয় instamatic ব্যবহার করতেন। এখন এই অপেক্ষা থেকে মুক্তি ঘটেছে।
ধন্যবাদ বুড়া। আপনি নিজেই তো দেখছি খনি বিশেষ, তা এত মাল মশলা একটু আমাদের সাথে বিনিময় করলে আমাদের সকলেরই তো ব্যাপক উপকার হয়, নয়কি? মাধ্যম বাদ দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে আলোচনা করলে কিন্তু অনেক কথা আসবে। এবং এনিয়ে আলাদা পোস্ট দেয়া লাগবে। আমার তা উদ্দেশ্য ছিলনা। আমি ডিজিটাল বনাম ফিলম এই তর্ককেও উসকে দিতে চাইনি। এই লেখাটা মুলত ফিলম নিয়ে আমার স্মৃতি, আমার অভিজ্ঞতা, আমার আনন্দেরই বয়ান। এর বেশি কিছু নয়।
আপনি বলছেন,
এখন ঠিক কোন কারণে সমালোচনার ঝড় উঠবে, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। ফিলমের প্রতি ব্যাক্তিগত অনুরাগ কিংবা পক্ষপাতিত্ব কি অন্য কারোর গাত্রদাহের কারণ হতে পারে? কদাচিৎ নয় বলেই আমার ধারণা। ফিলম এবং ডিজিটাল দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাধ্যম, উদ্দেশ্য যতই এক হোক না কেন। ফিলম ক্রমহ্রাসমান মাধ্যম কিন্তু বিলুপ্ত তো নয়। জগতের অনেক আলোকচিত্র শিল্পী এবং পেশাজীবী এখনও এই মাধ্যমে কাজ করেন। শত শত এ্যামেচার এখনও হাল ধরে রেখেছেন এই মাধ্যমকে শক্ত হাতে। কিছু কোম্পানি এখনো ফিলম উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ করছে। আমার আশঙ্কা বাংলাদেশে। সেখানে ডিজিটাল বানের জলের মত সবকিছু ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি তো বলেইছি, ফিলম ক্যামেরা দেখলে মানুষ হাসাহাসি করে এখন এবং কোনও বিগিনার এখন এই মাধ্যমে ছবি তুলতে নারাজ আর এইটাই বাস্তবতা। এইজন্যই ফিলমের ভালো দিকগুলিকে উন্মোচন করার এটাই উপযুক্ত সময়। কেননা ছবি তোলার প্রতি মানুষের আগ্রহ, উদ্দীপনা এখনই সবচাইতে বেশী। এনিয়ে যেকোনো আলোচনা অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এখন অনেক জনপ্রিয়। কাজেই প্রতিটি মাধ্যম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা অনেকের উপকারে আসবে বলে মনে করি। অনেকের বাসায় বাবা মার পূর্ব ব্যাবহৃত যে ম্যানুয়াল ক্যামেরা ধুলো মাখছে গায়ে, সেগুলি নিয়ে মাঠে নেমে পরার এখুনি সময়!
-মনি শামিম
@ বুড়া
আপনার মন্তব্যে জোন ফোকাসিং এর ব্যাপারটা উঠে এসেছে দেখে ভালো লাগল।
কিন্তু আপনার এই কথাটার মানে বুঝলাম না -
সমালোচনার ঝড় কই দেখলেন ভাই? কৌস্তুভের একটা নিজস্ব মত আছে, এবং সেটা বেশ ভ্যালিড একটা পয়েন্ট। এর বাইরে তো কিছু চোখে পড়ল না। আপনার শংকাটা খুব আজিব মনে হল।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ফিলমি দুনিয়া শিরোনাম পড়ে ভেগে গিয়েছিলাম--ভেবেছিলাম মুভি টুভি নিয়ে হবে হয়তো। এখন ঢুকে বুঝলাম... তবে আলোচনার সময় নাই। শুধু মনে পড়ল আমরা এক্সপোজার বলতাম ৮/১২৫। আর এখন এটাকে টেনে লম্বা করেছে।
সময় পেলে আলচনায় ঢুকে পরুন, প্রকৃতি প্রেমিক। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আমরাও তো শিখতে পারব। কিংবা ফিলম নিয়ে করতে পারেন কিছু অম্ল মধুর স্মৃতিচারণ।
-মনি শামিম
চমৎকার আর্টিকেল সেই সাথে মন্তব্য প্রতি মন্তব্যেও অনেক কিছু শেখার আছে।
ধন্যবাদ কুহক। মন্তব্য আর প্রতি মন্তব্য থেকে আমরা শিখতেও পারছি অবেক কিছু। আপনার কিছু বলার থাকলে আপনিও অংশ নিতে পারেন এই আলোচনায়।
-মনি শামিম
মনি ভাই, আপনার ছবির কথা নতুন করে তো বলার কিছু নাই, অসাধারণ ছবি তুলেন আপনি।
লেখার আবেগটুকু মন ছুঁয়ে গেল। ক্যামেরার প্রতি আপনার প্যাশন দেখে খুব ভাল লাগল।
ছোটতে আমার খুব ক্যামেরার শখ ছিল, কিন্তু আসলে ক্যামেরা হাতে এসেছে এইত মাত্র কদিন হল। ছবি তেমন তুলতে পারিনা তবে ইদানিং আপনাদের ছবি তুলা দেখে আমারও তুলতে মন চাইছে। দেখি সিরিয়াসলি অং বং চং যা পারি তোলা শুরু করতে হবে।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
তুলতে থাকুন আরজু, আপনার লেখার মতই তা হয়ত আমাদের উপহার দেবে নতুন কিছু।
-মনি শামিম
অনেক দারুন সব স্মৃতির পাতায় ঘুরিয়ে আনলেন, নস্টালজিক হয়ে গেলাম। ৩৬টি স্ন্যাপের ফিল্ম, সাদাকালো ফিল্ম, এলিফ্যান্ট রোডের মাস্টার কালার ল্যাব, আর যেতাম ধান্মন্ডিতে ফটোহাট এ ছবি প্রিন্ট করতে। ২০০২-২০০৩ এর দিকে ভার্সিটির ফটোগ্রাফি ক্লাবের হাত ধরে ছবি তোলার নেশায় পেয়ে বসে। আমাদের ক্লাবে ২টা ফিল্মের ক্যামেরা ছিল আমাদের সম্বল, একটা নাইকোন অন্যটা ক্যানন। প্রতিসপ্তাহে দুজন মেম্বার নিতে পারবে ক্যামেরা। একমাস আগে থেকে বুকিং দেতা হত। প্রথম ছবিমেলার বদৌলতে কিছু বিদেশি ফটোগ্রাফের লেকচার শুনার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেই প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা, টেলেলেন্স, ওয়াইড এঙ্গেল, ম্যাক্র লেন্স দেখার সুযোগ হয়। আমরা ডার্ক রুমে ফিল্ম ডেভেলাপ করা শিখেছিলাম। কিযে আনন্দের দিন ছিল সেটা। ফিল্মের যত্ন করা, প্রিন্ট করা ছবি ফাঙ্গাস থেকে বাঁচানো, ছবির প্রতি ভালবাসা, এ যেন অন্য এক পৃথিবী। ম্যাট আর গ্লসি দুধরনের পেপারে ছবি প্রিন্ট করতাম। ছবির কম্পজিশান এবং ধরনের উপর ভিত্তি করে সিনিয়াররা উপদেশ দিত কোন পেপারে ভাল আসবে ছবি। রাত জেগে এক্সিবিশানের জন্য ছবি বাছাই করা। প্রিন্ট করা, মোটা কাগজে ফ্রেম করা, কারণ ক্রপ করার কোন অপশান ছিল না। আমার মনে আছে আমার একটা আকাশের ছবি বাদ হয়ে গেল সিলেকশানে, কারন এক কোনে বিল্ডিং চলে আসছিল বলে, আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। টিউশানির পয়সা জমিয়ে ১২০টাকার ফিল্ম কিনে ছবি তোলার আনন্দ ডিজিটাল ক্যামেরা কখনই দিতে পারবে না।
আপনার সবগুলি ছবি দেখে আমারো ইচ্ছা করছে পুরানো ছবি গুলি স্ক্যান করতে। দারুন সব ছবি, (ঠ ) (দ) এবং (ধ) ছবিগুলি সবচেয়ে ভাল লাগল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ফিলমের সাথে আমাদের এমনই কোনও না কোনও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আছে, আছে অসাধারণ সব স্মৃতি যা দিন দিন যেন আরও মূর্ত হয়ে উঠছে।
আপনার স্মৃতিচারণটুকু মন ছুঁয়ে গেল। এই মাধ্যমটা হারিয়ে গেলে আমাদের স্মৃতিটুকুরও আর কোনও অস্তিত্ব থাকবেনা। এনিয়ে আফসোস হয় তবে আমার জীবনে হয়ত তা বিলুপ্তির পথে যাবেনা। এটুকুই যা আশার ব্যাপার!
-মনি শামিম
দারুণ
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ তাপস।
-মনি শামিম
অনেক কিছু শিখছি। চলুক
ধন্যবাদ ইয়াসির আরাফাত। আপনার লেখাও হঠাৎ থামলে কিন্তু খবর আছে।
-মনি শামিম
এত কিছু বুঝিনা। ছবি ও লেখা ভাল লেগেছে।
সবকিছু বুঝতে হবে, এমন দিব্যি কে দিয়েছে? লেখা ও ছবি ভাল লাগলেই হল, অতো বুঝে কাম কি?
-মনি শামিম
আমার আলস্য এতোই লিজেন্ডারি পর্যায়ে পৌছেছে যে এবার সমেত মোট চারবার আপনার লেখার কমেন্ট বক্স খুলেও আলস্যে এবং "হুদাই" অন্যকিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আর মন্তব্য করা হয়নি। এতো ভুলে যাওয়ার পরও এই লেখাতে ফিরে আসা আপনার লেখার গুণেই।
এর আগের লেখাটাতেও আলস্যে মন্তব্য করিনি, কিন্তু সেটাও মন দিয়ে পড়েছি। পাঠক হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে ছবি তোলার প্রতি আপনার ভালোবাসা। ছবি যারা তোলেন, তারা সবাইই নিশ্চয়ই ছবি তুলতে ভালোবাসেন (প্রফেশনালদের কথা জানি না, আমি অ্যামেচারদের কথাই ভেবে বললাম)- কিন্তু সবার লেখা কিংবা বর্ণনাতে তাদের ভালোবাসার ব্যাপারটা উঠে আসে না। প্রায় সবাই-ই তার পরিণত কাজগুলিকে মানুষের সাথে শেয়ার করে। সেগুলি দেখে মুগ্ধ হই, কিন্তু একজন ফটোগ্রাফারের শিল্পী হয়ে উঠার পথটুকু অনুভব করতে পারিনা। আপনার ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত লেখা ভালো লাগে এই কারণেই। আপনি কাঁচা হাতে তোলা ছবি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক দুর্দান্ত ছবিগুলি-সবই কালানুক্রমিকভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। আপনার এই পথচলাটা অনুভব করতে পারছি এবং আপনার আনন্দটুকু আমাকেও স্পর্শ করছে।
ছবি তোলার ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুব সামান্য বিশেষ করে গ্রামার, টেকনোলজির ব্যাপারে তা নগন্য পর্যায়ে। ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং কিংবা মিউজিক- এইসব কিছুকেই আমি আসলে নিজের নন্দনতাত্ত্বিক অনুভূতি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, নিজের মতো করে। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করে কেউ, কেন এই ছবিটাকে ভালো বললাম আর ওইটাকে না- আমি আসলেই তেমন যুক্তি কিংবা গ্রামার দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। আমি আমার নিজের সৌন্দর্যবোধ দিয়েই ছবিকে বোঝার চেষ্টা করি। অবশ্য নিজস্ব এই বোধটুকু গড়ে তোলার পিছনে বহু চমৎকার শিল্পীর অবদান আছে- ফ্লিকার, ফটো ডট নেট কিংবা 500px ডট কমে ছবি দেখেই বোঝার চেষ্টা করি। সে যাই হোক, আপনার ছবিগুলি আমার এই অপরিপক্ক চোখে চমৎকার লাগে, তাই মন্তব্য করতে আসা।
আপনার ছবি তোলা জারি থাকুক, আরো লিখুন ছবি নিয়ে। শুভকামনা।
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনি খুব চমৎকার মন্তব্য করেন, ভক্ত হয়ে যাচ্ছি যে! আপনার লেখা তেমন দেখিনা কেন সবজান্তা? খুব ব্যাস্ত থাকেন বুঝি? আপনিও আমাদের সাথে বিনিময় করুন না চিত্রকলা, সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার ভাবনাগুলি? আমরা শিক্ষার্থীর চোখ দিয়ে শিল্পের এই শাখাগুলি নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেই পারি আর এতে শেখার বিষয়টাও নিরানন্দ না হয়ে বরং প্রান পায়। আমাদের আলোচনা বিশেষজ্ঞের মতামত নয় বরং প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর খোঁজার চেষ্টা আর নিজের যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা আর ব্যাক্তিগত অনুভূতির মিশেল। আর এই কৌশলটা বোধহয় শেখার জন্য বেশী উপযোগী!
জানেন, আপনার এই কথাগুলি মনে হচ্ছে যেন আমারই কথা। আমিও আলোকচিত্রের খুঁটিনাটি কৌশলের চাইতে বোধহয় আলোকচিত্র দেখে বিস্মিত, আনন্দিত হতেই ভালবাসি বেশী। সর্বোপরি এই মাধ্যমকে আমি আপন করে নিতে পেরেছি আর সেটাতেই আমি খুশী। ডিজিটাল না ফিলম এই আলাপ বিশেষজ্ঞরা করুক, "আমি বরং আমার নিজের সৌন্দর্যবোধ দিয়েই ছবিকে বোঝার চেষ্টা" করতে থাকি।
অপ্রাসঙ্গিক হবে কি না জানি না। পুরাতন ক্যামেরার পরিবর্তণযোগ্য জুম লেন্স বিষয়ে আমার একটি জিজ্ঞাসা ছিল। আমি আমার নাইকনের ফিল্ম ক্যামেরাতে যে জুম লেন্সগুলি ব্যবহার করতাম সেগুলি কি আধুনিক ডিএসএলআর ক্যামেরাতে ব্যবহার করা যাবে কি না? ব্যবহার করা গেলে আমি একটি ক্যামেরা বডি হয়ত কেনার চেষ্টা করতে পারি। কারো জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন অথবা কোথায় এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে তা জানালেও অশেষ কৃতজ্ঞ থাকব।
নতুন মন্তব্য করুন