১। পিটারের রুচি গেল চলে!
খাবারে রুচি, তুমি সবসময়ই পাবে
যদি রাখো মনটাকে হাসিখুশিভাবে
-পিটার র্যাবিট
সাংঘাতিক এক কান্ড ঘটে গেছে! খাবারে রুচি চলে গেছে পিটার র্যাবিটের। আর পিটার র্যাবিটের রুচি চলে যাওয়া মানে হচ্ছে কোথাও না কোথাও বিরাট গন্ডগোল হয়ে গেছে কিছু। পিটার সবসময় বড়াই করে বেড়ায় যে সে যে কোন সময় এবং এমনকি সবসময়ই খাওয়ার ওপর থাকতে পারবে। আর সত্যি কথা বলতে কী, এ জীবনে যে দুই জিনিসের প্রতি পিটারের সবচেয়ে আগ্রহ সেগুলোর একটা হচ্ছে তার উদরপূর্তি এবং আরেকটা হচ্ছে তার কৌতুহল-পূর্তি! আজ পর্যন্ত পিটার যেসমস্ত ঝামেলায় পড়েছে সবকিছুর কারণ হচ্ছে এই দুই পূর্তি। আর এই পিটারেরই যখন কোন খাবারে রুচি থাকেনা অথবা কোনকিছুতে কৌতুহল থাকেনা তখন একটা কোন ভয়াবহ কিছু ঘটে গেছে ভেবে নেয়াটা মোটেও অযৌক্তিক না।
যেদিন থেকে বুড়ো নেকড়ে মামা ওদের সবুজ ঘাসপুরে থাকতে এসেছে, সেদিন থেকেই পিটার তার অতিপরিচিত কাঁটাঝোপের জঙ্গল থেকে খুব বেশি দূরে বের হতে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। কাঁটাঝোপের জঙ্গলের ভেতরেই তার বাসা আর এখানেই সে নিজেকে বেশ নিরাপদ মনে করে। তবে এমন নয় যে এই জঙ্গল থেকে তেমন একটা দূরে যাবার তার তেমন প্রয়োজন আছে। এই জায়গাটার ভেতরে আর আশেপাশে খাবারের কোন অভাব নেই। জঙ্গলের একেবারে ধার ঘেঁষেই ছোট ছোট মিষ্টি গুল্মে ছাওয়া এক পশলা জমি। আর তোমরা তো জানোই, এই মিষ্টি গুল্মগুলো পিটারের কত্তো প্রিয়! কোনরকম ঝামেলায় জড়ানো ছাড়াই পিটার তার খাবারের কাজটা বেশ ভালোভাবেই সারতে পারতো। আরামে খাওয়া ও ঘুমানো ছাড়া আর কোন কাজ না থাকায় দিন দিন পিটারের স্বাস্থ্য ও মন দুটোই পরিতৃপ্তিতে ভরে উঠবার কথা। কিন্তু তেমন কিছুই হচ্ছিল না!
তবে এমনটা কিন্তু হয় অনেকের সংগেই। যে যতো বেশি সুখে থাকে আর যার যতো কম চিন্তা থাকে ততোই তারা আরো বেশি অতৃপ্তিতে ভোগে। আর শেষ পর্যন্ত চরমতম অসুখী হয়ে যায় তাদের মন। কিন্তু ড্যানি ইঁদুরের কথা ভাবো! সবুজ ঘাসপুরের খোলা হাওয়ায় তার বাস। কাঁটাঝোপের জঙ্গলের মতো কোন নিরাপত্তার ঘের নেই তাকে ঘিরে, অথচ সারাটা দিন সে অসম্ভব হাসিখুশী থাকে! প্রতিটা দিনের প্রতিটা মুহূর্তে ড্যানিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হয়, কারণ যখন তখন যেকোন দিক দিয়ে তার ওপরে হামলে পড়তে পারে বিপদ। বুড়ো নেকড়ে মামা, লালটু শেয়াল, বুড়ি শেয়াল, গর্ত ছুঁচো কিংবা জনাব কালসাপ – এদের যে কেউই যে কোন সময় ঘাসের আড়াল থেকে তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। মোটাসোটা একটা ইঁদুরে উদরপূর্তি করতে এদের কে না চাইবে! তবে বিপদ শুধু যে ঘাসের ভেতরে লুকিয়ে তা-ও না, ড্যানিকে আকাশের দিকেও একটা চোখ রাখতে হতো। কারণ কখন আবার সাদা-লেজ বাজ অথবা তার খালাতো ভাই লালচে-লেজ বাজ কিংবা কাল্লু কাক হুস করে এসে তাকে খামচে ধরে ভোজ সারতে লেগে যাবে কোন ঠিক নেই। এতো কিছুর পরেও, ড্যানি সবসময়ই হাসিখুশী থাকতো। তার রুচিও কখনো হারাতো না।
কিন্তু পিটার র্যাবিট, কাঁটাঝোপের জঙ্গলের নিরাপত্তায় কোনরকম চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থেকেও সে কিছুই খাওয়ার রুচি পাচ্ছিল না। দিন দিন বরং তার দু:খী ভাবটা বাড়তেই লাগলো।
একদিন মিষ্টি গুল্মে ছাওয়া জমিটার দিকে তাকিয়ে নাকটা নাড়তে নাড়তে পিটার বলে উঠলো, “আমার যে কী হয়েছে কিছু বুঝি না। একদম বুঝতেই পারছি না আমার সমস্যাটা কোথায়! ধুত্তোরি! তার চেয়ে বরং গিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নতুন কিছু রাস্তা বানিয়ে ফেলি।”
পিটার যদিও জানতো না কিন্তু এটাই ছিলো আসলে সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি। মন এবং মাথাটাকে ব্যস্ত রাখার শ্রেষ্ঠ কায়দা। পরবর্তী দুই-তিনদিন নতুন রাস্তা বানানো নিয়ে সে খুবই ব্যস্ততায় কাটালো এবং তার রুচিটাও ফিরে এলো। কিন্তু যখন সমস্ত রাস্তা বানানো হয়ে গেল আর কোথাও কিছু করার রইলো না তখুনি পিটারের রুচিটাও আবার গেল হারিয়ে! আবারো তার সারাটা দিন কাটতে লাগলো স্রেফ বসে বসে। মুখটা ভার করে সে শুধু বসে থাকতো আর ভাবতো, ভাবতো আর ভাবতো। পিটারের ভাবনাগুলোর সমস্যা ছিলো একটাই – সে সারাক্ষণ শুধু নিজের কথাই ভাবতো। শুধু নিজের দু:খগুলো নিয়েই ভাবতো। আর সে এসব নিয়ে যতোবেশি ভাবতো ততোই আরো দু:খী হতে লাগলো পিটার।
একদিন এভাবে ভাবতে ভাবতেই তার মনে হলো কথা বলার মতো কাউকে যদি সে পেতো তাহলে হয়তো এতো মন খারাপ লাগতো না তার। পুরানো বন্ধু জনি চাকের কথা মনে পড়লো। জনি আগে সবুজ ঘাসপুরেই থাকতো। আর ওরা দুইজনে মিলে যে কতো মজা করতো! তারপর জনি তার ছোট্ট পরিবারটা নিয়ে পুরান বাগানে চলে গেল। সেখানেও জনি খুব আনন্দেই থাকে। পরিবারের শত ঝামেলা সত্ত্বেও জনিকে সবসময় হাসিখুশিই থাকতে দেখেছে সে। আর ঠিক তক্ষুণি পিটার বুঝে ফেললো তার সমস্যাটা কোথায়!
“আমার মনে হয় আমার সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে একা থাকা! আসলে একা একা লাগে বলেই আমার এতো মন খারাপ থাকে।”
“হুমম, গন্ডগোলটা কোথায় সে তো ধরেই ফেললাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এবার আমি করবো কী?”
মূল: থর্নটন ডাব্লিউ বার্জেস
চলবে ,,
- নৃ
[oparthib@gmail.com]
মন্তব্য
চলুক
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
থ্যাংকু
[আমি অবশ্য ভুল করে লেখাটাকে ইংরেজি সেকশনে পাঠিয়ে দিসি ]
পিটার র্যাবিটের তো তাহলে এবার সংসারী হওয়া জরুরী
অনুবাদ আসুক আরো
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শিগগিরই হয়তো সংসারী হবার তোড়জোড় শুরু হতেও পারে। নামটাই যখন মিসেসকে দিয়ে!
অনেক ধন্যবাদ নীড়দা।
নতুন মন্তব্য করুন