পটভূমি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৮/০১/২০১৩ - ৭:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এমিরেটস এয়ারওয়েজের দুবাই-লন্ডন ফ্লাইটের বিজনেস শ্রেণী। দিলদার হাসান জাঈদী বসে আছেন, পাশেই বসে এ.বজরুল।

বজরুল দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তবে তার বিজনেস ক্লাসে চড়ার মুরোদ ছাত্র ঠেঙিয়ে হয়নি; হযেছে কথা সওদা করে। তর্ক কথায় বজরুলের কোনো জুড়ি নেই। ছোটবেলায় দাউদ খুজলির মলম বিক্রির ক্যানভাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতেন তিনি। ক্লাস ফাইভে থাকতে সহপাঠী শিউলিকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিলেন যে শিউলি একটানা সাত দিন 'হাম্বা' করে ডাকলেই তার স্তন ছাঁপিয়ে দুধ আসবে। তার স্কুল এর কলা শিক্ষক নন্দবাবু বজরুলের ভবিষ্যত দেখেছিলেন নাট্যকলায়। পড়ালেখায় মাথা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু নন্দবাবুর কথাও বৃথা যায়নি পুরোপুরি। বজরুল এখন নানান টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয় আলোচক।এখনো সেই ছোটবেলার মতই যেকোনো বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে পারেন। শিউলির মতই দেশের মানুষ তাঁর কথা বিশ্বাস করে।

কিন্তু ইদানিং যেন একটু বেশীই ডাক পড়ছে তার। কথা বলতে বলতে বজরুল একদমই হাঁপিয়ে উঠেছেন।তাই লন্ডন যাচ্ছেন একটু হাওয়া পরিবর্তনের জন্য। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে লন্ডন এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশে সফল হতে চাইলে সেখানে মাঝেমধ্যে মুখ দেখিয়ে আসাটাও দরকারী। উপরে ওঠার কায়দা-আমপারা বজরুলের ভালই জানা আছে। উপরন্তু, একটু ঘোরাঘুরি করে নিজেকে একটা রিস্টার্ট দেয়ার জন্যই লন্ডন যাওয়া। বিজনেস শ্রেণীর আরাম আসনে গা এলিয়ে দিয়ে ঠান্ডা বিয়ারে চুমুক দিচ্ছিলেন এ.বজরুল। তখনই জাঈদীর সাথে দেখা। জাঈদীরও যে লন্ডন যাবার কথা এটা তিনি জানতেন, কিন্তু সেটা যে একই ফ্লাইটে হবে এটা তার জানা ছিলনা।

জাঈদীও ঠিক বজরুল এর মত কথা বেচেই খান , তবে জাঈদীর বিষয় পার্থিব নয়, জাঈদী মানুষ কে পরকালের কথা শোনান, খোদার ফরমান জানান। ইহকাল সুখ ভুলে পরকাল কে গুরুত্ব দিতে বলেন। যদিও তিনি নিজে ইহকাল এবং পরকাল দুইই বাঁচিয়ে চলছেন। তার অগনিত ভক্তকুল তার ইহকালের কোনো চাওয়াই অপূর্ণ রাখেনি। আর রাজনীতির ময়দানে তিনি আজ একজন খেলোয়াড়। দুজনই একই কলায় পটু হলেও, স্পষ্টতই জাঈদীর কাছে বজরুলের অনেক কিছুই শেখার আছে।

জাঈদীকে দেখে বজরুল একটু লজ্জাই পেলেন। বিয়ার এর বোতলটা লুকাতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না । তবে জাঈদী ব্যাপারটা না দেখার ভান করলেন । বজরুল বুঝে গেলেন জাঈদীর কিছু বলার আছে। একটু পরে জাঈদী তার কাফেলার এক ভক্ত কে দিয়ে বজরুলকে নিজের পাশের আসনে ডেকে নিলেন। আজকাল টিভি চ্যানেলে আনাগোনার কারণে এমন মানুষদের সাথে বজরুলের ওঠাবসা আছে। কাজে বিকাজে ওনাদের সেলাম পান মাঝে মাঝেই। লন্ডনে যেয়েও জাঈদীর সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল। প্লেনে দেখা হওয়াতে কথাগুলো এখনি সেরে ফেলতে চাইলেন জাঈদী।

জাঈদী: "আপনি অনেক তারাক্বি করছেন। মা শা আল্লাহ। টিভি ছাড়লেই দেখি আপনি। আরশাদ সাহেবের আমলে এমন ছিলো। টিভি খুললেই আরশাদ সাহেব।"

বজরুল : "তবে একটু পার্থক্য আছে জাঈদী সাহেব। আরশাদ সাহেবকে শুধু এক চ্যানেলে দেখা যেত। আমাকে সব চ্যানেলে দেখা যায়। আরশাদ সাহেবের আমল ভালো ছিল। হা হা হা!"

জাঈদীও মৃদু হাসলেন তারপর একটু গলা নামিয়ে বললেন: "আপনি তো জানেন। সরকার নানা রকম সমস্যা করছে। আমি যা করিনি তার জন্য আমাকে দোষারোপ করছে। এমনকি আমাকে এরেস্ট করা হতে পারে এমন কথাও বাজারে আছে।"

বজরুল চুপ।

জাঈদী বলে চললেন: "দালালির সরকার বেশি দিন থাকবেনা। আমার কিছু করতেও পারবেনা। রাখে আল্লাহ মারে কে! তবে তাই বলে আমি বসে থাকছিনা। সবদিকে কথা হচ্ছে। আমার ভক্ত রা সব দেখছে, দল ও দেখছে। বন্ধু দেশগুলো আমার পেছনে আছে। সমস্যা হলো কিছু মিডিয়ার লোক অন্য দিক দিয়ে টাকা খেয়ে বসে আছে।"

এ পর্যন্ত বলে জাঈদী চুপ করলেন। বজরুল খেয়াল করলেন জাঈদী তার দিকে তাকিয়ে নেই। জাঈদীর দৃষ্টি অন্য কোথাও।

জাঈদী আবার শুরু করলেন : "আপনাকে সবাই পছন্দ করে। আপনার কথা বিশ্বাস ও করে। আপনি দেখবেন আমার দিকটা একটু।"

বজরুল এবার বুঝতে পারলেন জাঈদীর চোখ সামনের বিমানবালার উপরে।

জাঈদী : "আপনার দিকটাও আমি দেখব। আপনার মত লোকের আমাদের দরকার আছে। আগামী সরকার আমাদের। আপনি কি চান সেটা আপনি মুখ ফুটে বলবেন। আমাদের দলে আপনার মত বুদ্ধিজীবির দরকার আছে। আমার লোক চিনতে ভুল হয়না।"

বজরুল জাঈদীকে খেয়াল করছেন। জাঈদী সীটের উপর পা তুলে বসে, গায়ে একটা কাশ্মীরি শাল, দুটিহাত শালের ভেতরে। দৃষ্টি বিমানবালার উপর সেই তখন থেকেই নিবদ্ধ। শালের নিচে হাতদুটো একটু একটু নড়ছে। বোধহয় তসবীহ করছেন; ভাবলেন বজরুল। পরক্ষনেই বজরুল এর চোখ পড়ল জাঈদীর সামনের আসনের ঝুলিতে রাখা তার তসবীহ। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিতে বজরুলের সময় লাগলোনা।

বজরুল এর দৃষ্টি জাঈদী-র উপর, আর জাঈদীর দৃষ্টি উর্বশী বিমানবালার আবৃত কিন্তু দৃশ্যমান দেহবল্লরীর বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাত জাঈদী বজরুলের দিকে তাকালেন। তার হাতের নড়াচড়া থেমে গেল। বজরুল অপ্রস্তুত। জাঈদী হাসলেন। হেসে মুখ ঘুরিয়ে আবার তাকালেন বিমানবালার দিকে। অবিকল সেই মুখ! গন্ডগোলের সময় মালউন-এর ঘরে অমন পরীর মত মেয়ে খুঁজে পাওয়ার লটারী কয়জনের ভাগ্যে মেলে ? জাঈদী আবার বজরুলের দিকে তাকালেন। বললেন, 'আপনি তাহলে আসেন। আমার কথা মনে রাখবেন। আমি খোদার মোমিন গোলাম, তার ফজলে আপনাকে নিরাশ করবনা। আমি দেখি এদের এখানে নামাজের কি ব্যবস্থা।'

বজরুল উঠে আসলেন। মাথায় ঘুরতে থাকলো জাঈদী। লোকটা এতবড় ভন্ড এটা তার জানা ছিলনা ! দেশে ফিরে পর পর কয়েকটা টক-শো। সেখানে জাঈদী প্রসঙ্গ আসবেই। কি বলবেন? কিছু একটা উত্তর ঠিক করে রাখতে হবে, সুযোগ বার বার আসেনা বজরুল তা জানেন। বজরুল স্বপ্ন দেখতে থাকলেন। উপাচার্য .. রাষ্ট্রদূত .. টেকনোক্র্যাট , স্বপ্ন হবে সত্যি! নাহ বিয়ার এ হচ্ছেনা। বিমানবালাকে হুইস্কি দিতে বললেন বজরুল।

প্লেন লন্ডন এ ল্যান্ড করলো। জাঈদী কে নিতে এসেছেন তার বড় ভক্ত শামসুল হোসেন। লন্ডনে শামসুল এর তিনটা রেস্টুরেন্ট। জাঈদী বের হতেই সালাম দিলেন। জাঈদীর জন্য আলাদা গাড়ী, মোবাইল আর থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি, লিমুজিন গাড়ী, হুজুরের প্রথম লন্ডন আসা বলে কথা। গাড়িতে উঠলেন জাঈদী। মাথার মধ্যে বিমানবালার মুখ। চল্লিশ বছর আগে নিজের লোভ সামলে, নিজের মুখের গ্রাস তুলে দিয়েছিলেন পাক আর্মির হাতে। আজও সেই মুখ তিনি ভুলতে পারেননি। জাঈদীর শরীর গরম হয়ে উঠছে। হাত এখনো চাদরের নিচেই। মোবাইলটা বের করলেন। মন ঠান্ডা করার এখন একটাই উপায়। নম্বর টিপলেন, রিং হলো, ওপ্রান্তে একটা কচি মেয়েলি আওয়াজ।

-"হ্যালো"
-'স্লামালাইকুম'
-"ওয়ালায়কুমাস্সালাম, খাওয়া দাওয়া হইসে?"
-'না খাইনাই!'
- "এখনো খাওনাই?"
...........................................................................................

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলেন জাঈদী।

নাদানপোলা

দ্রষ্টব্য : এই গল্পের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোনো মিল পাওয়া গেলে আমার কোনো দোষ নাই। উই আর স্টিল কুল, ব্রো - ও কে ?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি ভিডিও।

http://www.youtube.com/watch?v=D65vKJeNHsg

না পো

dhiman এর ছবি

ভাল লেখা । চরিত্র কাল্পনিক হলেও ঘটনা সত্যি হবার সম্ভাবনা ও বেশী।

তোফায়েল এর ছবি

খাইব !!! লৈট্টা ফিস

দ্রোহী এর ছবি

☆☆☆☆☆

নীলম এর ছবি

হাততালি

স্পর্শ এর ছবি

হা হা হা! গুল্লি হইসে!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

আলী হায়দার এর ছবি

আধুনিক ঢঙে লেখা। অসাধারণ ভাল লেগেছে। এরকম আরও লেখা চাই।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বজরুল কা সাথ।
জাইদী সাবের বাত।।
বালায় দৃষ্টিপাত।
শালের তলায় হাত।।
হটাত বর্জ্য(?)পাত।
বজুর আর্তনাদ।।

লেখায় গুল্লি

আব্দুল্লাহ এ.এম.

কুমার এর ছবি

চরম !!! আরও চাই।
কে কইছে আপনি নাদানপোলা, আপ্নে তো পাকনাপোলা। চোখ টিপি

অপ্রস্তুত লেনিন এর ছবি

ভালো লাগছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালই লিখেছেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।