শুনেছি ৭১’ এর যুদ্ধের সময় এদেশে ঈদ পালন করেনি অনেক পরিবার, যুদ্ধের কারনে অনেক নির্ধারিত বিয়ের অনুষ্ঠানও স্থগিত ছিল। দেশের ক্রান্তি লগ্নে এধরনের উৎসব বর্জন করার মাধ্যমে নিরব প্রতিবাদ করাটাও মূল প্রতিবাদ বা সংগ্রামের একটি অংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে সময় এসেছে আমাদেরও একই ভাবে চিন্তা করার, উদ্যোগী হবার।
পহেলা ফাল্গুনের অনুষ্ঠান আমার জানা মতে পুরোপুরিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ( টি এস সি, চারুকলা) কেন্দ্রিক। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের খুব প্রিয় অনুষ্ঠান এটি। গত মাসেও হিসেব করছিলাম কিভাবে অফিস ফাঁকি দিয়ে একটু ঢুঁ মেরে আসা যায় পহেলা ফাল্গুনের দিনে, কিন্তু আজ মনে হল এই মুহূর্তে এভাবে আনন্দ উদযাপন করলে প্রকৃতপক্ষে শাহবাগ এর আন্দোলনকে হেয় করাই হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার আর সেজেগুজে, পাঞ্জাবী পরে বকুলতলায় গান শুনতে যাবনা। অফিস করে ক্যাম্পাসে যাব আন্দোলনের স্লোগান শুনতে, স্লোগান দিতে।
( ভাবুন একবারঃ একদিকে আমরা বকুল তলায় মিষ্টি মিষ্টি গান শুনব, নাচ দেখব; অন্যদিকে শাহবাগে আমাদের ভাইবোনেরা চিৎকার করছে ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই... ভাবতেই কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠছে)।
তবে আয়োজকরা যদি শাহবাগ এর আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে পুরো অনুষ্ঠানটাই বিদ্রোহী সাজে সাজায়, তবে সেটি এই আন্দোলনকে একটি নতুন মাত্রা দিবে বলে আমার মনে হয়। এতো গেল আয়োজকদের দায়িত্ব। আমি – আপনি, আমাদের সবারও তো দায়িত্ব কম না। আসুন আমরা সবাই পহেলা ফাল্গুনের দিনে রঙ – বেরঙের পোশাক না পরে এই আন্দোলনের সাথে একাত্ম হই। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সাদা – কালো পোশাক পরাটা ভালো হবে। প্রকৃতির রঙ না হয় এবার মনে না-ই লাগলো, এটাও কি প্রতিবাদ হবে না?
ভ্যালেন্টাইন ডে এর উদযাপন তো আরও বড় আকারে হয় সারা দেশে, পুরো ঢাকা শহরে। অনেক যুগল, সারা বছর প্ল্যান করে রাখে এই দিনটির জন্য। চলে আসুননা শাহবাগ, তবে ডেট করতে নয় - অংশগ্রহন করুন আন্দোলনে। আর ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে সারা দেশের/ টিভির অনুস্থিতব্য আয়জনগুলোকে কি আমরা নতুন মাত্রা দিতে পারিনা? অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কোন ফালতু প্যানপ্যানানি প্রেমের গানের অনুষ্ঠান এবার না হয়, আয়োজকদের কাছে এটাই আশা রাখি। অনুষ্ঠান হলে সেগুলোতে যেন থাকে বিদ্রোহের সুর, থাকবে আন্দোলনের গান।
(ভাবুন আরেকবারঃ লক্ষ মানুষ স্লোগান দিচ্ছে রাজাকার দের ফাঁসির দাবিতে, আর আপনি আপনার প্রেমিক/ প্রেমিকার হাত ধরে ছ্যাবলামি করছেন। গত কয়েকদিনে এই আন্দোলনের মাঝে/ আশেপাশে থেকে কিছু নগন্য সংখ্যক মানুষকে এভাবে প্রেম পিরীতি করতে দেখে আমার ঘেন্নাই লাগছিল)।
আশা করছি আমি আপনি অন্তত এই দলে নই।
অঃ টঃ ও বলছিল ঢাকা আসলে আমার সাথে শাহবাগ যাবে, আমি বলেছি নিয়ে যেতে পারি এক শর্তেঃ সর্ব শক্তি দিয়ে স্লোগান দিতে হবে।
রাহী
মন্তব্য
প্রেমের সাথে বা ফাল্গুণের সাথে বিপ্লবের কোন শত্রুতা নেই।
বরঞ্চ আমি বলবো দেশের যত প্রেমিক প্রেমিকা আছে, সবাই শাহবাগে এসে দিন পালন করুন। তবে দিনশেষে সবাই নিজেই বুঝে নিবেন কে কীভাবে পালন করতে চান। আমি এ ধরনের কোন রেস্ট্রিকশনের বিপক্ষে।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ঠিক এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম।
প্রেমের গানের অনুষ্ঠানরে ফালতু প্যানপ্যানানি কৈলেন ক্যান বুঝলাম না!
এইটা অবশ্য ভালো প্রস্তাব যে প্রেমটা শাহবাগ কেন্দ্রিক হৈলে ভালো হয়! অবশ্য এমনিতেই টিএসসি কেন্দ্রিক হয়!
_____________________
Give Her Freedom!
অন্য সময় এটা শুনতে ভালই লাগে, কিন্তু এই সময়, এই স্লোগানের সময় "প্যানপ্যানানি" মনে হইতেছে
আমার কোনো প্রেমিকা নাই। তবে প্রেমে পরেছি বাংলাদেশের।ভ্যালেনটাইন ডেতে শাহবাগে আসব লাল গোলাপ নিয়ে আর দেশকে বলব will you be my valentine??
রাহি ভাই আপনার প্রস্তাবটা সত্তই গ্রহন যোগ্য।
ঠিক বর্জন নয়, শাহবাগে এসে উদাপন করলেই তো হয়। আর প্রেম মানেই তো আর লুকিয়ে লুকিয়ে সেক্স নয়, পাশাপাশি বসে কথা বলা, কিংবা শুধু চুপচাপ বসে থাকাটাও তো প্রেম। প্রেমটা নাহয় এবার শাহবাগের মোড়ে গলাফাটিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে হবে।
আমিও কিন্তু বলছি, পরিমার্জনও ভাল পথ। এটাই করা উচিত আমাদের।
আমি কিন্তু এক্স্যাক্ট এই কথাটাই বলতে চাইছি
নতুন মন্তব্য করুন