তথাকথিত মধ্যযূগীয় বর্বরতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০২/২০১৩ - ১২:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তৃতীয় বিশ্বের একটি মুসলিম দেশে কি হচ্ছে তা নিয়ে অনেক বিদেশীদের তেমন একটা আগ্রহী না হলেও এত বড় আন্দোলন দেখে পুরোপুরি উপেক্ষাও করতে পারেনা। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংহতি প্রকাশ, বিভিন্ন দুতাবাসের সামনে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের একতা এবং সংহতি দেখে অনেকেই প্রশ্ন করে কি হচ্ছে তোমাদের দেশে? আমার বিদেশী বন্ধুরাও এ প্রশ্ন করল। ঘটনা ব্যাখ্যা করার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারা। আমার আবেগের প্রতি সাথে সাথে অসম্মান তো আর দেখাতে পারেনা, তাই শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে, যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে, সেটাই কি যথেষ্ট না? তোমার কি মনে হয়না, মৃত্যদন্ড ব্যাপারটা একটু মধ্যযুগীয়?

অনেক প্রবাসী ভাই/বোনেরা হয়ত এই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে হয়ত দারুন উত্তরও দিয়েছেন। খুশী হব সেই উত্তর গুলো জানালে। তারপরও জানাচ্ছি আমরা কি উত্তর দিচ্ছিঃ
প্রথমত, আমাদের এই আন্দোলন আইন পরিবর্তনের জন্য নয়। বিশ্বের ৬৩ টি (যতদূর সম্ভব) দেশে এখনও সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রচলিত আছে। আমাদের দাবি মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আর আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড।

পাল্টা প্রশ্ন আসে, ধর কাউকে খুনের শাস্তি যদি কোনো দেশের আইনে মৃত্যুদন্ড থাকে, তাহলেও কিন্তু সব খুনীই সেই শাস্তি পায়না। কারণ খুনীরও আইনের আওতায় অধিকার থাকে। সেও একজন আইনজীবী পায়। এবং ট্রায়ালে খুনের পিছের কারণ বের করা হয় এবং সেই অনুসারে শাস্তি প্রদান করা হয়।

যাদের আসলেও জানার ইচ্ছা আছে অথবা এ ব্যাপারে আরও কথা বলার ইচ্ছা আছে, তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলি তা হলঃ
হ্যাঁ, আইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ন্যায়বিচার করার জন্য। কিন্তু তারপরও কিন্তু আইন সবসময় তা দিতে পারেনা। আইনের চোখে বাদী-বিবাদী দু’পক্ষই দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সমান। যেমনঃ ধর্ষক এবং ধর্ষিতা আইনের আওতায় একই সুযোগ পাবে ধর্ষন প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত। এই ধারণাটাই ধর্ষিতার জন্যে এক ধরণের পক্ষপাতিত্ব। কিন্তু তারপরও এটাই প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। কারণ আইন সবসময় ন্যায়বিচার বয়ে না আনলেও, আইন সমতা নিশ্চিত করে। সমতাই আইনের চোখে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। কাজেই কোনো খুনীর শাস্তি যদি ১৫ বছরের জেল হয় কোনো খুন করার জন্য এবং পরবর্তীতে একই পটভুমিতে অন্য একজন খুনী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাহলে দ্বিতীয় জনেরও ১৫ বছরের জেল-ই হওয়া উচিৎ - আইন তাই বলে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে খুন + ধর্ষন + লুটের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রচলিত। আর যারা এই কাজগুলো করেছে এবং প্রমাণিত হয়েছে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড-ই হয়েছিল। তাহলে এদের কেন হবেনা? এদের বিরূদ্ধে এসব শাস্তি প্রমাণিত হয়েছে। তারা যাদের কে খুন করেছিল তাদের সন্তান বা আত্নীয় স্বজনরা এখনও বেঁচে আছেন। অনেকেই নিজ চোখে দেখেছেন সেই বর্বরতা। ধর্ষিতা বীরঙ্গনাদের অনেকেই এখনও জীবিত। তারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন। প্রত্যেকের ৩০০/৪০০ খুনের আর অগণিত ধর্ষনের অভিযোগ প্রমাণিত। তাই আমরা সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

পরিশেষে যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির বিশদ ইতিহাস না বলে সংক্ষেপে অবশ্যই যোগ করা উচিত যে, এরা ইউ, এন, পাকিস্তান, নানা দেশের এবং আমাদের দেশের আর্মি শাসনামলে নানা ধরণের মদদ পেয়ে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা আমাদের প্রধান বিরোধী দলের সাথে সম্পৃক্ত। পরবর্তীতে তারা ক্ষমতায় আসতে পারে,। যদিও বা তারা মুক্তি না-ও পায়, তারপরও রাজার হালে থাকবে জেলখানায়। আমাদের এই আন্দোলনের দুটো দাবি মাত্র। প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি এবং সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। ধর্মের নামে তারা এতদিন অনেক অনাচার করা ছাড়াও এই ধর্মকে পুঁজি করেই এতদিন টিকে ছিল। এবং প্রচুর ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিপথে পরিচালিত করেছে। অন্য ধর্মের মানুষকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছে ধর্মকে বিকৃত করে। কোনো সভ্য দেশে এমন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকা উচিৎ নয়।

[সিডনী আন্দোলনের কিছু ছবি যোগ করে দিলাম, যার পরে এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হয়েছি]

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হায় মানবতা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শামীম এর ছবি

৪৯ নং অনুচ্ছেদের ক্ষমতা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে কোন আসামীকে ক্ষমা করতে পারেন। আওয়ামী লীগের সময়েই মৃত্যূদন্ডের আসামী বিপ্লবকে ক্ষমা করার ব্যাপারটা ভুলিনি। এই ভয়ংকর খুনী, ধর্ষক রাজাকার যেন সেই সুযোগ না পায় সেজন্য মৃত্যূদন্ড চাই। আর আমাদের ট্যাক্সের পয়সার তারে জেলে বসিয়ে খাওয়ানোটাও সাপোর্টেড না।

অবশ্য বিদেশীদের এই লাইন দুইটা যদি বুঝানো যাইতো --
রাজাকার ইস্যূতে
মানবতা ধুয়ে ফেল টয়লেট টিস্যূতে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রু এর ছবি

আরেকটা পয়েন্ট হচ্ছে রাজাকারের দল তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত না। ওরা ৭১-এ যা ছিল এখনো একই আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক বলেছেন ভাই। পয়েন্ট নোটেড

রাজীব মাহমুদ এর ছবি

এই রাজাকারগুলা ’৭১ এ যা করেছে সেটা মধ্যযুগীয় বর্বতা না? ভাই রাজাকারের বিচার করতে গিয়ে মানবতাবাদের স্বরবর্ণ-ব্যাঞ্জণ বর্ণ শিখতে আমার রুচি হয়না।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সম্ভাব্য আরও দুটি উত্তর-
১.
ভাই, যে অর্থে মৃত্যুদন্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতা, সেই অর্থে প্রানী হত্যা করে তার মাংশ ভক্ষন প্রস্তরযুগীয় বর্বরতা, তুমি কি প্রানীজাত মাংশ খাও?
কি কইলা খাও না?
বেশ! বেশ! ভাল। তয় তোমার দেশে যে প্রতিদিন লক্ষ কোটি প্রানী হত্যা করা হয় তাদের মাংশ ভক্ষন করার জন্য, তার বিরুদ্ধে তুমি কি টুঁ শব্দটি কখনো করছো?
কি কইলা হেরা তো মানুষ না?
তোমারে কেডা কইল যে কাদের, দেলু, সাকা, গোআ, এরা মানুষ?

২.
ভাই, মোটের উপর মৃত্যুদন্ড দিয়া আমরা তাদের একরকম উপকারই করতেছি।
কি রকম? তয় শুন-
তারা বলে এবং বিশ্বাস করে(বিশ্বাস করারই কথা) মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী আমরা সবাই মরতে রাজী।
মরতে রাজী ক্যান? সে এক বিরাট হিষ্টোরী-
এই ধর- মরার সাথে সাথে তাগো কব্বরের সাথে বেহেস্তের(অনেকটা তোমাগো হেভেনের মতো একটা চিজ) একটা ডাইরেক্ট কানেকশন ইষ্টাবলিশ হইয়া যায়, সেই খান থাইকা সুশীতল এসির বাতাস, গুলাবি আতরের খোশবু, সোনা দানা হীরা জহরতের দালানের রোশনাই, আতকা সব আসতে থাকে। আরও আরও যে সব জিনিস আসতে থাকে সেইটা তোমারে কওন যাইব না, তুমি ফিট খাইতে পার।
এখন তুমিই কও, বাইচা থাইকা গাজীর সার্টিফিকেট দিয়া জেলখানার গান্দা চিপায় বইসা হ্যাতে কি বাল করবো, তাই তারে উপরে পাঠাইয়া আমরা তার পরকালের পথ পরিস্কার কইরা দিতাছি, কও ইন্নালিল্লাহ।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহ হা। আসুক এবার কোনো হালার পুত মানবতা শিখাতে। লেকচার দিয়ে দিব একটা

শামীম এর ছবি

এঁদের কথা বাদ্দেন ভাই ... ... তোমাদের এখানে কি মশা মারার ঔষধ তৈরী হয় না --- মশার জ্বালায় খুব কষ্ট পাইতেছি।
এর উত্তরে হয়তো বলবে: হ্যাঁ আমাদের এখানে স্প্রে আছে, লোশন আছে, কেক সিস্টেম, লিকুইড কয়েল কিংবা হয়তো বলবে মশা মারতে কামানও পাওয়া যায়।

ওমা, এগুলোকি এদেশেই তৈরী হয় নাকি আমদানী করা?

একটু বিরতি দিয়ে ... ... ...
আচ্ছা মশা মার কেন, এটা একটা নিষ্ঠুর, বর্বর প্রক্রিয়া। এরা তো আমাদের খাদ্যও নয়। ওদেরকে আলাদা জায়গায় সরিয়ে দিলেই তো পার, এছাড়া এই পৃথিবীতে ওদেরও খেয়ে বাঁচার অধিকার আছে ... ... ... ... ... অথচ ওদের মারার জন্য আমরা বিষ তৈরীর কারখানা বানাচ্ছি ... ... ...
---- বুঝতেই পারছেন ত্যানাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি।

তবে রাজাকারগুলোর সাথে তুলনা করায় মশারা মাইন্ড করতে পারে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আসলেও বুঝিনা, যে ভয়াবহ দোষ করল তার শাস্তিও হবে কোঠর-এখানে মানবতার কথা কেন আসবে। যেই লোক অন্যকে খুন করল তখন মানবতা ছিল কই!

শুভায়ন এর ছবি

"তবে রাজাকারগুলোর সাথে তুলনা করায় মশারা মাইন্ড করতে পারে।"

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি

aporajita এর ছবি

tell those ignorant foreigners that they have no idea behind the nasty politics of this verdict..................life time imprisonment might turn into 5 minutes imprisonment......................হায় মানবতা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! only the dirty politics.....................dirty politics..................এইবার ফাসি (bhai chandrabindu dite parina) না হলে আমরা morbo..........e ki sada chamrar khuni??????????

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।