আমার বাবার নাম মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। প্রজন্ম চত্বরে ঘটে যাওয়া গণজাগরণের আগেই স্থীর হয়েছিল, বাবা ১২ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পাবনা যাবেন সেখানে বই মেলা উদ্বোধন করতে। কিন্তু এরই মধ্যে শাহবাগ চত্বরে আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের "দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ"। আপনারা হয়ত জানেন আমার বাবার তীব্র মৌলবাদ ও শিবির-বিরোধী অবস্থানের কথা। বাবার এই অবস্থান বহু বছরের পুরনো। গণজাগরণ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকেই বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পাবনার সরকারী এডওয়ার্ড কলেজে যাবেন এবং কলেজটিকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করবেন। এডওয়ার্ড কলেজ শিবিরের একটি শক্ত ঘাঁটি। আপনারা নিশ্চই জানেন পাবনা যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী এলাকা যেখানে সে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা সোবহানেরও বাড়ি এই এলাকাতেই। নির্বাচনে পরাজিত হলেও শিবিরের আধিপত্য পাবনায় কমেনি। এডওয়ার্ড কলেজকে 'শিবিরমুক্ত' ঘোষণা করলে পাবনার মানুষের মাঝে আরো সাহস সঞ্চারিত হবে, এমনটাই বাবা ভেবেছিলেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন,বাবা তাই করতে পেরেছিলেন এডওয়ার্ড কলেজে ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখ দুপুরে। সেদিন আমিও বাবার সাথে ছিলাম। সন্ধ্যায় পাবনার গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবা পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী-বিরোধী অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার পরপরই আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হই। তখনই ফোনে খবর আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের ছাত্র আব্দুল মালেকের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যুর দুঃসংবাদ।
আমরা জানতে পারি যে ছাত্রদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্স পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণেই মালেক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার সাথে সাথে আমরা আরো জানতে পারি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের কথা। তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের কথা। সেটাই স্বাভাবিক ছিল। বাবা পুলিশকে ফোন করেন এবং ফোর্স সহ তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক বাইরে অবস্থান নিতে অনুরোধ করেন। বাবার সামনে আরেকটি পথ খোলা ছিল। তিনি পুলিশকে পরামর্শ দিতে পারতেন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিক্ষোভরত ছাত্রদের মোকাবেলা করার জন্য। বাবা সেই সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন এই বিবেচনায় যে ছাত্র-পুলিশকে মুখোমুখি অবস্থানে ফেলে দিলে আরো বড় সহিংসতা তৈরী হতে পারে। বাবা তখন হয়ত ভাবছিলেন ২০১২ সালের আগস্টে জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের কথা।
জাহাঙ্গীরনগরের পথে গাড়ি দ্রুত চলতে থাকে। এর মধ্যে বাবার সাথে মা'র বেশ কয়েকবারই ফোনে কথা হয়। এক পর্যায়ে মা ফোন করে বাবাকে আমাদের বাসভবন হামলার কথা জানান। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছ থেকেও বাবা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কথা জেনে গেছেন। বাবা প্রথম থেকেই এই হামলার জন্য শিবিরকে দায়ী করেছেন। আমি এবং আরো অনেকেই বাবার সাথে একমত।কেন আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি সে কথা তুলে ধরাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ঘটনার পর আমি আমার মা আয়েশা আখতার, এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর কাজী সাইফুল এবং উপাচার্য ভবনের গার্ড নুরুল হকের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করি। নিম্নলিখিত সকল তথ্য তাদের দেয়া সাক্ষাত্কার থেকে প্রাপ্ত।
১) উপাচার্য বাসভবনে আক্রমণ হয় মোট দুবার। প্রথম দফায় রাত ৯টায় ৩০-৪০ জন যুবক আক্রমণ চালায়। আক্রমণের স্থায়িত্ব ছিল ৪-৫ মিনিট। তারা দেয়াল টপকিয়ে বাসভবনের কম্পাউন্ডে ঢুকে পরে এবং প্রথম সুযোগেই প্রায় সব ল্যাম্পপোস্টের বাতি ভেঙ্গে ফেলে। সাথেসাথেই বাসভবনের চারপাশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া গাড়িটিকেও ওরা সেই সুযোগে ধ্বংস করে ফেলে। এই আক্রমণ চলাকালীন সময়েই আমার মা "ডাইরেক্ট একশান ডাইরেক্ট একশান” “তালেবান তালেবান" শব্দগুলো শোনেন। প্রাথমিকভাবে গার্ড নুরুল হক এই পুরো ঘটনা বাসভবনের সামনের মাঠে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করেন। এই সময় নুরুল হকের কানে "নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর” স্লোগানটি রেজিস্ট্রার বাসভবনের সংলগ্ন সড়কে অবস্থান করা আরেক দল আক্রমণকারীদের কাছ থেকে ভেসে আসে। এক পর্যায়ে সাহস করে তিনি বাসভবনে প্রবেশ করেন এবং আক্রমণকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। শেষপর্যন্ত আক্রমণকারীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য নুরুল হক এবং বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর দুজন সদস্য আমাদের নিচের তলায় রান্না ঘরের সাথে লাগোয়া কর্মচারীদের ঘরে ঢুকে পড়েন।
২) আমাদের বাসভবনে দ্বিতীয় আক্রমণ সংঘটিত হয় রাত ৯.৩০ টায়। আক্রমণকারীরা এবার আরো অনেক বেশি সংগঠিত। উপাচার্য বাসভবনের প্রধান ফটকের সাথে লাগোয়া গার্ডদের ভাষায় ‘কেচি গেট'-এর তালা ভেঙ্গে ২০০-২৫০ জন ব্যক্তি এবার ঢুকে পরে। অনেকের মুখ কাপড় দিয়ে পেঁচানো। তাদের হাতে লাঠি ও লোহার রড। নুরুল হক এবং অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীরা তখন জীবন বাচাতে গার্ডদের বাথরুমে লুকিয়ে। নুরুল হকের কাছ থেকে জানতে পারি যে একজন আক্রমণকারী বলে ওঠে, "বাড়িতে আগুন লাগায়া দে"। যেই কথা সেই কাজ। কর্মচারীদের ঘরে রাখা একটি সোফাতে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। দোতলায় অবস্থান নেয়া আমার মা এবং বাড়ির অন্যান্য কর্মচারীদের সৌভাগ্য সেদিন আগুন ছড়িয়ে পরার আগেই নুরুল হক বাসভবনের গাড়ির চালকের সাহায্যে তা নেভানোর ব্যবস্থা করেন। উপাচার্য বাসভবনের বাইরেও পার্ক করা গাড়ি, একটি এম্বুল্যান্স পুড়িয়ে দেয়া হয়। লক্ষণীয় যে এই এম্বুলেন্স কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যৎসামান্য চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে তার অংশ। তবে তাদের আক্রমণের সবচেয়ে ভয়ংকর অংশ তখনও বাকি ছিল। কাঠের তক্তা দিয়ে নীচতলার রান্নাঘরের এক্সহস্ট ফ্যান বাইরের থেকে পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলে তারা। দেয়ালে এক্সহস্ট ফ্যানের স্থলে অন্তত ১.৫ ফিট চত্তড়া ছিদ্র দিয়ে একজন আক্রমণকারী রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। সে ভেতর থেকে রান্না ঘরের দরজা খুলে দেয়। ফলে ভবনের বাইরে ভাংচুর করতে থাকা ব্যক্তিরা সুযোগ পেয়ে যায় আমাদের বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ার। শুরু হয় তাদের তান্ডব। পাঠক, আপনারা সেই তান্ডবলীলার ছবি দেখুন এবং নিজেই বিবেচনা করুন। ১০ মিনিট স্থায়ী এই আক্রমণকে মা'র হচ্ছিল যেন তা অনন্তকাল ধরে চলছে। দোতলায় আক্রমণকারীদের উঠতে পারেনি। নিচতলা ও দোতলার মাঝে একটি লোহার কলাপসিবল ছিল বলে আমার মা এবং অন্যান্যরা সেই যাত্রায় রক্ষা পান।
৩) আক্রমণকারীদের আরো কিছু লক্ষ্যবস্তু ছিল। সেগুলোর প্রতিও আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করব। আক্রমণকারীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত অটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য স্কুল, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবি ও শাহবাগ ও সর্বপরি সারা বাংলাদেশে চলতে থাকা গণজাগরণের সমর্থনে তৈরী 'গণজাগরণ মঞ্চ', ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাঙ্ক ভাংচুর করে। তা ছাড়া বাবার নির্দেশে তৈরী অতিথি পাখির সুরক্ষার লক্ষ্যে সচেতনামূলক পোস্টার, র্যাগিং বিরোধী পোস্টার সব ছিড়ে ফেলা হয়। আপনারা জানেন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যান্ক বয়কট দাবী করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিত থেকে দেখলে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে বিক্ষোভরত ছাত্ররা কোন আক্রোশ থেকে অগ্রণী ব্যাঙ্কের বুথকে ভাংচুর করবে, 'গণজাগরণ মঞ্চ'কেই বা কেন ধ্বংস করে ফেলবে।
৪) এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর কাজী সাইফুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আক্রমণ সম্পর্কে বলেন যে ক্যাম্পাসের পাশেই সেদিন একটি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেন প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গিয়েছে যে অনেক আক্রমণকারী সেই ওয়াজ মাহফিল থেকে ক্যাম্পাসের ভেতর অনুপ্রবেশ করেছিল। সাইফুল স্বচক্ষে মুখোশধারী প্রায় ২০ জনের আলাদা আলাদা গ্রুপকে ক্যাম্পাসের রাস্তায় নিঃশব্দে অগ্রসর হতে দেখেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। প্রাচীর না থাকার কারণে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রাম থেকে যেকেউই যেকোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারে। এই বিষয়টি ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হওয়ার কারণে বাবা উপাচার্য হওয়ার পর থেকেই পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সীমানা প্রাচীর নির্মানের জন্য সরকারের কাছ থেকে টাকা বরাদ্দ চাচ্ছিলেন। এটাকেই হয়ত বলা হয় 'আইরনি'। কারণ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখে সরকার এই জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য সভা ডেকেছিল। সাইফুলও নুরুল হকের মত "নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর" স্লোগানটি শোনেন। তিনি ভাংচুরকারীদের মুখে উপাচার্যের উদ্দেশে আরেকটি কথা শোনেন যা ছিল, "শাহবাগে গিয়া বক্তৃতা দিসস, তাই না?"।
৫) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই কথাটি রটিয়ে দেয়া হয় যে এম্বুল্যান্স সময় মত পাওয়া যায়নি কারণ আমার স্ত্রীকে ঢাকা থেকে আনার জন্য তা তখন ব্যবহৃত হচ্ছিল। কথাটি ছিল সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। আমার শশুর, শাশুড়ি এবং স্ত্রী আমার মা'র সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য ঐদিন রাতে নিজেদের গাড়িতে রওনা হন। শেষমেষ প্রায় রাত ২টার দিকে তারা মা'র কাছে পৌঁছান।
আমার কাছে আক্রমণকারীদের আক্রমণ করার ধরণ ও আক্রমণের লক্ষবস্তু দেখে মনে হয়েছে যে তা কোনো সাধারণ ছাত্র দ্বারা সম্ভব নয়। বরং আমাদের মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী এবং একই সাথে বিকৃত মানসিকতার শিবির কর্মীরাই এমন ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ও ধ্বংসাত্বক কাজ করে থাকতে পারে। ছাত্ররা অবশ্যই বিক্ষুব্ধ ছিল কিন্তু তার সুযোগ নেয় ছাত্রদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এবং বাইরে থেকে আসা শিবিরের সন্ত্রাসীরা। আমার বাবার জামায়াত-শিবিরের তীব্র শিবির-বিরোধী অবস্থানের কারণেই আমাদের বাসায় এত তীব্র আঘাত হানা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির আছে। অনেক বন্ধুই দিবালোকের মতো স্পষ্ট এই সত্য দেখতে অপারগ। তারা আমাদের ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের আশেপাশে শিবিরের অনুপ্রবেশের বাস্তবতা স্বীকার করতে চান না। তারা বলেন জাহাঙ্গীরনগরে নাকি ১৯৮৪ সাল থেকে শিবির নেই। কিন্তু একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিজস্ব প্যাটার্ন রয়েছে। এটিকে চিনতে পারাও আমাদের চলমান গণজাগরণের একটি অত্যন্ত প্রাথমিক প্রয়োজন। সাধারণ ছাত্রদের ক্ষোভ কেমন হয়, তার গতিপ্রকৃতি কেমন, তার সঙ্গে শিবিরীয় তাণ্ডবের কী পার্থক্য সেটি বুঝতেই না পারলে, সামনের দিনের যুদ্ধগুলোর সাফল্য নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়। শিবির চিনুন। এটাই শিবির মোকাবেলার প্রথম ধাপ। আমরা আশা করি জাহাঙ্গীরনগরের বিভ্রান্ত বন্ধুরা এই প্রথম ধাপটি দ্রুত উত্তীর্ণ করবেন। কারণ এই যুদ্ধে আমাদের আরো বহু ধাপ পেরোতে হবে।
* পুনশ্চ: এই মাত্র খবর পেলাম ব্লগার 'থাবা বাবা' (আহমেদ রাজীব হায়দার)কে জামায়াত-শিবির জবাই করে হত্যা করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের প্রতি বলি, উপাচার্য ভবনের দোতলায় কলাপ্সিবল গেট না থাকলে আমার মা কেও তারা হয় আগুনে পুড়িয়ে না হয় জবাই করেই হত্যা করতো।
- এম সানজীব হোসেন
মন্তব্য
খুবই দু:খজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। ঐ সময় পুলিশ আর ছাত্রলীগের ভূমিকা কী ছিল? পত্রিকায় আসছে কিনা জানিনা, হয়তো নজর এড়িয়ে গেছে।
সচলায়তনে স্বাগতম।
ঘটনা এত দ্রুততার সাথে শুরু ও শেষ হয়ে যায় যে ছাত্রলিগ তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেই আমি জানি।
জানি না কী বলার আছে... যথাসম্ভব সুস্থ, স্বাভাবিক, ও নিরাপদ থাকুন।
আপনার লেখাটি ঘটনাটি সর্ম্পকে একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা দিলো। এ বিষয়ে সচলায়তনে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই বিষয় ছাড়াও ভবিষ্যতে অন্যান্য বিষয়ে আপনার কাছ থেকে লেখা। আপনার এবং পরিবারের নিরাপত্তা কামনা করছি।
আমি চেষ্টা করব লেখা চালিয়ে যেতে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। এই ঘটনাকে পুঁজি করে একদল শিক্ষক উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে কর্মবিরতি পালন করছে, এরা কারা? উপাচার্যের শিবির বিরোধী শক্ত অবস্হানই কি এদের আঁতে লাগার কারন?
আশা করি শিক্ষক সমিতি তাদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করবেন।
কী ভয়ংকর! অবশ্য শিবিরের জন্য এ আর নতুন কী!
আপনারা সবাই নিরাপদ থাকুন এই কামনা করি।
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
আমি নিশ্চিত আমরা এই ক্রাইসিস থেকে বের হয়ে আসতে পারব।
লেখকের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
আক্রমন যেই করে থাকুক উদ্দেশ্য যে ভয়্ঙ্কর ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এরকম অগ্রহনযোগ্য আক্রমনের পরে যেখানে শিক্ষক নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে উপাচার্যকে সহযোগিতা করার কথা সেখানে তারা ঘোলা রাজনীতি শুরু করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক মাত্রাতিরিক্ত সংকীর্ণ রাজনীতির চর্চ্চা করছেন। এই সংস্কতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সকল উপাচার্যের জন্যই দায়িত্ব পালন দুরূহ হয়ে পরবে। প্রতিনিয়ত শিক্ষা কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত হতে থাকবে। এটা কারোই কাম্য না।
ভাইয়া, আপনার লেখাটা এইমাত্র পড়লাম।। কী ভয়াবহ!
পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকুন। আপনার বাবা মায়ের সাহসিকতাকে আবার শ্রদ্ধা জানিয়ে যাই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আপু, আপনাকেও ধন্যবাদ।
রান্নাঘরের এক্সস্ট ফ্যান ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার কথা তো সাধারণ ছাত্রদের মনে আসার কথা নয়।
আপনার পরিবারের জন্য শুভ কামনা। সাবধানে থাকবেন।
আমরাও তাই মনে করি
কিছু ভিন্নমত পোষন করতে হচ্ছে।
১। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে ১ আগষ্ট ২০১২ তে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষের জের ধরে এরকম ম্যাসিভ ভাংচুর হয়েছিল। সেই ঘটনাকে লেখকের বাবা/ ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন শিবিরের কাজ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সকলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তিনি যেন সেই ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন ফুটেজ দেখে (উল্লেখ্য যে, সেই ফুটেজ গুলো এখনও আছে অনেকে কাছে, কারণ ভাংচুর গুলো দিনের বেলা হয়েছিল) ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি শুধু বিভিন্ন সভা ও সংবাদ সম্মেলনে বরা ছাড়া কোন ব্যাবস্থা নিতে ব্যর্থ হলেন।
২। যদি তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনাটি শিবির ক্যাডাররা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে তা আগের ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার ফল বলে আমি মনে করি।
৩। যারা ভিসির এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে একে ভিসির ব্যর্থতা বলছেন তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের শিক্ষক। এবং তারা প্রত্যেকে আওয়ামী লীগের গোড়া সমর্থক। নাম বলছি। অধ্যাপক অজিত কুমার সাহা, আমীর হোসেন। এমন আরও অনেকের নাম বলা যাবে। প্রশ্ন হলো ওই শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, নাকি তারা ভিসির বক্তব্যকে অসার মনে করেছেন?
৪। আমি নিজেও লেখকের এই বর্ণনায় এটা মনে করতে চাই যে, ঘটনাটি শিবির করেছে। কিন্তু আমি এটাও মনে করি, মাননীয় ভিসি এই বিষয়টি ট্যাকেল দিতে গিয়ে গুবলেট পাকিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবং প্রক্টরিয়াল বডি ও ডিসিপ্লনারী কমিটির সঙ্গে আলাপ করে এর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের আগেই গণমাধ্যমকে সুম্পষ্ট ভাবে নিজের বরাতে খবর সরবরাহ করেছেন। যার ফলে অনেক দিন ধরে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তারা এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার বলার সুযোগ পেয়েছেন। পরের দিন তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি কি রিপোর্ট দেবে? ভিসি তো রিপোর্ট প্রকাশের আগেই বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন। এ্ভাবে বক্তব্য দেয়া রাজনীতিকের কাজ হতে পারে। প্রশাসকের কাজ হতে পারে না। মনে রাখতে হবে ভিসির দায়িত্ব কখনো রাজনৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত নয়। একজন গণতান্ত্রিক প্রশাসকের কাজ হওয়া উচিত।
৫। এটাও মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি/ জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেন, তারা সবাই ঐক্য বদ্ধ নন। ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একজন বহিরাগত ব্যাক্তি হিসাবেই এসে দায়িত্ব নিয়েছেন। যা কেউ মেনে নিতে পারেন নি। সম আদর্শিক ব্যাক্তিদের অভ্যন্তরীন দন্দ্ব এই অবস্থাকে আরও তীব্র করেছে কি না তাও দেখা প্রয়োজন।
৬। এবার আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ভিসিকে আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপে বসা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়। তার মানে এই নয়, তিনি নিজে যা মনে করেন, তার পক্ষে তাদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে নেয়া, বরং তাদের পরামর্শ ও বুদ্ধি নিয়ে একটি সিদ্ধন্ত নেয়া। আমার অভিজ্ঞতা বলে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সবসময় নিজে যা মনে করেন তা অন্যদের উপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাপিয়ে দিতে চান। যেমন ভিসি নির্বাচ, যেমন সাংবাদিকদের গলফ ক্লাবে খাওয়ানো--- আরও অনেক।
৭। যদি তিনি না পারেন, তাহলে জাহাঙ্গীনগর ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ এটা তার জন্য নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। সেখানকার শিক্ষকরা চাচ্ছেন না তিনি কি করবেন?
হুম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসাবে আমি বলছি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়
এ শিবির আছে তবে ওরা সাধারন ছাত্রদের মধ্যে ঘাপটি মেরে আছে ওদের কে খুজে বের করতে
হবে
দুঃখজনক
সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করছি
সাবধানে থাকবেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভয়ংকর!
----- নীরা
নতুন মন্তব্য করুন