এত বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০১৩ - ১১:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে,
আমি যাই তারি দিন-পঞ্জিকা লিখে,
এত বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ,
দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ
স্বপ্ন-চূড়ার থেকে নেমে এসো সব-
শুনেছ ? শুনছ উদ্দাম কলরব ?
...” সুকান্ত ভট্টাচার্য্য

কেন কেঁদে উঠে হৃদয় ৪২ বছর পরে ? কেন রক্তে জাগে উন্মাদনা এতদিন পরে ? তাসের ঘরের রাজা-রানীরা কেউ ভাবেই নি এমন হতে পারে । বেশ তো মনে হয়েছিল- অনেকতো দিন গেছে, মুছে গেছে রক্তের দাগ স্মৃতির দেয়াল থেকে । তরুণ তুর্কী যারা সব সময় অন্যায়ের নিগড় ভাঙ্গে তারা সব ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ব্যস্ত ব্যক্তিগত স্বপ্নের কথা লিখতে । ম্যারী-মি-আফ্রিদি কিংবা হাজার- টাকার-টিকেটে-শাহরুখ-খান, এতেই বুঝি বুঁদ হয়ে আছে এই প্রজন্ম । কেউ ভাবেনি তরুণ তুর্কীরা এমন জেগে উঠবে এক লহমায় । কেউ জানেনি, রক্তে যাদের নুরুলদীন, তারা ঠিক সময়েই হেঁকে উঠবে, “জাগো বাহে কোন্‌ঠে সবায়...” । তারা কেউ নৌকা, ধানের শীষ, লাঙলের “কানামাছি ভোঁ ভোঁ / যারে পাবি তারে ছোঁ”র রাজনীতির ধার ধারে না । যে প্রজন্ম একাত্তর দেখেনি, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলন দেখেনি, জাহানারা ইমামের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির আন্দোলন দেখেনি, তারাই যে ভেতরে ভেতরে এতো ফুঁসে উঠবে কে জানতো ? এমন মুষ্টিবদ্ধ হাতে তুলে নেবে শহীদ জননীর রেখে যাওয়া চেতনার মশাল, কে ভেবেছিল ? এ কোন লাকী আক্তার, যে অবিনাশী শ্লোগানে শ্লোগানে বিদীর্ন করে দিচ্ছে আজ শাহবাগের আকাশ ?

শাহবাগ থেকে যে ডাক পাঠিয়েছে এই প্রজন্মের তরুন, তার ধ্বনি এসে জোয়ারের মত পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে । জীবনের তাগিদে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ ভূ-খন্ডটি থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষ । প্রাণের টানে তারাই আজ জড়ো হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের এক জায়গায় । শীতের ঠান্ডা, অভিবাসী জীবনের কর্মব্যস্ততা কিছুই আটকে রাখতে পারছে না তাদের । শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের লাকি আক্তারের চেতনার আগুণ ছড়িয়ে পড়েছে আজ নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, সিডনী, হেলসিঙ্কি, ভ্যাঙ্কুভার, অস্টিন, অটোয়ার মত পৃথিবীর নানা প্রান্তের শহরগুলোতে । দিকে দিকে প্রতিধ্বনি তুলছে, “ভুলি নাই, ভুলব না কোনদিন”, “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “একাত্তরের রাজাকার বাংলা ছাড়” । সকল রাজনৈতিক দল ও মতের উর্ধ্বে ওঠা এ এক নতুন প্রজন্ম । যাদেরকে রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে নিরাসক্ত করা গিয়েছে বলে মনে হয়েছিল, তারাই আজ বিদ্রোহের এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে । গত ৪২ বছরের না হওয়া বিচারের দাবী তারা আজ আদায় করেই ছাড়বে । কারন, ন্যায় বিচারের দাবী কখনও তামাদি হয় না ।

ফেব্রুয়ারীর ৯ তারিখে কানাডার অটোয়ায় কার্লটন ও অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শাহবাগের চলমান গণজাগরনের সাথে একাত্মতায় একটি সমাবেশ আয়োজন করে । অটোয়ার বাংলাদেশী অভিবাসী শিশু ও নারী, পুরুষ অংশগ্রহন করে এই আয়োজনে । প্ল্যাকার্ডে, ব্যানারে, লাল সবুজ পতাকায় আর সমবেত দেশের গানের মধ্য দিয়ে অটোয়ার বাংলাদেশী অভিবাসীরা সংহতি জানায় শাহবাগের গণ আন্দোলনের প্রতি ।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের লাকী আক্তারের প্রতি অটোয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী সানামের একাত্মতা । শাহবাগের অসংখ্য নারী ও পুরুষের প্রতি অটোয়ায় প্রবাসী সকল শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের সংহতি –

অর্ধেক পৃথিবী দূরে আছি, বন্ধু
তবু একবার বুকে হাত দিয়ে দেখো,
তোমার হৃদয়ের স্পন্দনে পাবে আমারও হৃদয়ের স্পন্দন -
স্পন্দিত হৃদয়ে আজ আমিও আছি শাহবাগ ।

কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের ইউ টিউব ভিডিও: https://www.youtube.com/watch?v=gQVRXIrdrps

নিবন্ধন নামঃ জাগরনের গান

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এই লেখাটি প্রস্তুতির পুরোটা সময় জুড়ে লাকী আক্তার ছিল হৃদয় জুড়ে । কেবলই মনে হচ্ছিল জাহানারা ইমামের যোগ্য উত্তরসুরী এই লাকী আক্তার । তখনো জানিনি, রাজীব হায়দারকে এভাবে যেতে হবে ।

বেদনায় মুহ্যমান হয়ে আছি...

..................
জাগরনের গান

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এ আগুন ছড়িয়ে গেছে সবখানে।
--- ঈয়াসীন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।