শাহবাগঃ জ্বলে থাক বহ্নি শিখার মত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২২/০২/২০১৩ - ১২:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত কয়েকদিন থেকেই ফেইসবুক সহ বিভিন্ন ব্লগে শাহবাগ আন্দোলনের অর্জন, উদ্দেশ্য, প্রতিপ্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, আলোচনা, মতামত, বিশ্লেষন , মন্তব্যের ঝড় বয়ে যাচ্ছে । এইসব প্রশ্ন, আলোচনা, মন্তব্য এবং প্রতি মন্তব্য দেখে একটা কথাই পরিষ্কার হচ্ছে অনেকই বেশ দ্বিধাদন্ধে ভুগছেন এবং একটি গোষ্ঠি এই দ্বিধাদন্ধের সুবিধা নিচ্ছে আরো উদ্দেশ্যহীন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে, মানুষকে করছে আরো বিভ্রান্ত [ রাজনীতির ভাষায় যাকে বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মত ] । এই আলোচনা ( ত্যানালোচনা ) আর প্রশ্ন গুলোর একটা গোছানো উত্তর দেয়াই এই পোস্টের উদ্দেশ্য । লেখালেখি খুব একটা আসে না , গুছিয়ে লেখা তো আরো দুরের ব্যপার। ভুলভ্রান্তি নিজ গুনে ক্ষমা করে বাধিত করবেন।

শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রপাগান্ডা, ঘোলাটে যুক্তি চারদিকে ছড়ানো হচ্ছে এবং অনেক মানুষ তা বেশ ভাল করে গিলেও ফেলছেন । এর জন্য কয়েকটি বিষয়ে আমাদের জাতিগত ত্যানালো ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দায়ী । আসুন এই পুরানো ত্যানাগুলো নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখি । প্যাচানো ত্যানা ছাড়ানোটা খুব একটা সহজ না, অন্তত যেখানে অনেক ধরনের ত্যানা প্যাচানো হয় । কারন সেই ক্ষেত্রে নামে ত্যানা হইলেও ব্যাপারটা প্যাচানো তারের মতই। তবে এই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করে [ চরম উদাসের ঃ কি করে ত্যানা প্যাচাবেন [১] ] এই পোস্টে হাত দেয়া। শাহবাগ নিয়ে প্যাচানো ত্যানা গুলাকে একটু যত্ন সহকারে ছাড়ানো শুরু করলে কয়েকটা অতি পুরানো ত্যানা চোখে পড়ে।

ত্যানা নাম্বার ১ ঃ ধর্মানুভুতি
=================

জি .। ঠিক আন্দাজ করেছিলেন। সেই পুরান পাপি ত্যানা ধর্মানুভুতি । আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলার দল সমর্থন, লেখক কোপানো, বৌদ্ধ মন্দির লুটপাট থেকে শুরু করে হালাল সাবান বেচা, কোথায় নেই ধর্মানুভুতি !! বাংলাতেই ১০০ বছর ধরে রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ বিবিধ বিষয়ে প্যাচায়ে ভাংচুর, হত্যা, লুট , ধর্ষনে কালজয়ী ভুমিকা রাখার পর কি ভাবে একটা ত্যানা এতদিন টিকে থাকে এবং সাফল্যের সাথে এখনো প্যাচায়, তা নিয়ে গবেষনা করে বছরের পর পার করে দেয়া যেতে পারে। শাহবাগ আন্দোলনেও প্যাচালো। প্রথম থেকেই জামাতী গোষ্ঠীর "এটা নাস্তিকদের আন্দোলন, এখানে শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড হচ্ছে" প্রপাগান্ডা । তার উপর আবার শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবীটা তো রীতিমত সংবেদনশীলদের ধর্মানুভুতিতে বিশাল আঘাত। এই ধাক্কা সামলে নিয়েও যদি বা কিছু সংবেদনশীল মুমিন ভাই ইমানদন্ডটা দেশপ্রেম দিয়ে কষ্টে সৃষ্টে ঢেকে নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করলেন, নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দারের পরিচয় প্রকাশের সাথে সাথেই দেশপ্রেমের কাপড়টা খসে পড়ে সমুন্নত হয়ে পড়ল ইমানদন্ড । প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেল । শুরু হয় মুমিন ভাইদের কিছু প্রশ্ন ।

১.১। আমরা কি আদৌ নাস্তিকদের সাথে এক আন্দোলনে দাড়াবো ??
এ দেশ যেমন মুসলিমের, তেমনি হিন্দুর, খৃষ্টানের, বৌদ্ধের, চাকমার, মারমার এবং নাস্তিকেরও । আপনি যেমন ভাবছেন নাস্তিক আপনার ধর্মের বিপক্ষে বলে আপনার ধর্মানুভুতিতে আঘাত দিচ্ছে, তেমনি আপনি যখন দাবী করছেন আপনার ধর্ম সবচেয়ে ভাল, তখন আপনি অন্যের ধর্মানুভুতিকে আঘাত করছেন । আঘাত করছেন নাস্তিকের বিজ্ঞানমনষ্ক সত্বাকেও । নাস্তিক কিন্তু আপনাকে দা, বটি , তলোয়ার নিয়ে মারতে আসে না, যুক্তি তর্কে মনের অজ্ঞানতার অন্ধকার দুর করার চেষ্টা করে মাত্র । তবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হল, শাহবাগ আন্দোলনে কোন নাস্তিক নাস্তিকতা প্রচার করতে আসেনি । এসেছে দেশের দাবী নিয়ে, জনগনের দাবী নিয়ে, এসেছে ৩০ লক্ষ শহীদের লাশের বোঝা কাধে নিয়ে বিচারের দাবীতে । এখানে কোন ধর্মের ভেদাভেদ নাই, বর্নবাদীতা নেই। ১৯৭১ সালেও জামাতে ইসলামী এবং তার পাকিস্তানী দোসররা হিন্দু মুসলিমের মাঝে বিবেধ তৈরি করে , গনহত্যা শুরু হয় হিন্দু ধর্মালম্বী এবং বাংগালী জাতিতত্বে বিশ্বাসীদের দিয়ে, কিন্তু সেই গনহত্যা আর ধর্ষনের দাবানল থেকে নিস্তার পায়নি কেউই । ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনেও একই চেষ্টা করে নাস্তিকতা এবং ধর্মানুভুতির দোহাই তুলে । তোলা হল নাস্তিকতার অজুহাত , হত্যা করার হল ব্লগার রাজীব হায়দার কে । এত শিক্ষার পরেও যদি এই চিরচেনা জামাতি ছকটা আপনার কাছে পরিষ্কার না হয় তবে আপনার আর হবেও না । আর সময় নষ্ট না করে সোনারবাংলা ব্লগ বা আমার দেশ পড়ুন, ইমানদন্ড মজবুত করুন।

১.২। যুদ্ধপরাধের ফাসির সাথে জামাত নিষিদ্ধের কি সম্পর্ক ??"
জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্টাতা আলা মৌদুদির জিহাদী ইসলামের বর্ননা পড়ে আসুন। [ ২ ] " যে দেশে যে শাসন ব্যবস্থাই থাকুক না কেন, তা ধ্বংস করে ইসলামী রাস্ট্র কায়েম করতে হবে । " এই আদর্শে বলীয়ান হয়েই জামাত ৭১ এ পাকিস্তানিদের সাথে একজোট হয়ে ঘটাও বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ঘৃন্যতম গনহত্যা, ধর্ষন । ৭১ পরবর্তী ৪২ বছরেও জামাতে ইসলাম জাতির কাছে ক্ষমা তো চায়নি, বরং দম্ভ সহকারে প্রচার করে গেছে তাদের পাকিস্তান সমর্থনের কথা। এর পরেও যদি আপনি মনে করেন জামাত এদেশে রাজনীতি করতে পারে তাহলে এক্ষনি এই পোস্ট পড়া বন্ধ করেন। চলে যান কাসিমপুর কারাগার । কয়েদীদের কাছে কাদের মোল্লার হয়ে পুটু প্রক্সি দিন।

১.৩। জামাত শীবির নিষিদ্ধ করার সাথে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সম্পর্ক কি ?? "
এই ১০ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পর কি জামাত থেমে যাবে ?? না যাবে না। জামাতের রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা চালানোর জন্য রয়েছে অর্থের অফুরন্ত যোগান । আজকে জামাতকে নিষিদ্ধ করলেও দশ বছর মধ্যেই তারা হয়ত আবার ফিরে আসবে ভিন্ন কোন নামে । আপনি হয়ত ভাবছেন বাংলাদেশে জামাত কি করে আবার ক্ষমতায় আসবে ?? একটু পিছনে ফিরে তাকান। ১৯৭৫ পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকা জামাতে ইসলাম ৮০ দশকের শুরুর দিকে কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করেও, ৯১ এর নির্বাচনে ১৮ টি আসন নিয়ে বীরদর্পে ফিরে আসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে । জাহানারা ইমামের মত শহীদ জননীর আবির্ভাব না হলে হয়তো, আমাদের দেশের মুলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবং ধর্মানুভুতির ইমানদন্ডের উপর ভর করে একক ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো । তাই যতদিন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ থাকবে , ততদিন জামাতের মত বিষাক্ত কীট সাধারন মানুষের ধর্মানুভুতিকে পুজি করে আলা মৌদুদির স্বপ্ন পুরনের চেষ্টা করেই যাবে । ধর্ম আপনার পবিত্র বিশ্বাস , সেটা আপনার মনের পবিত্রতার মাঝেই রাখুন । জামাতের মত কোন ধর্ম ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেবেন না। ধর্মীয় গোড়ামিতে জর্জরিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সোমালিয়ার মত দেশগুলোর অবস্থা তো প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় দেখছেন ।

১.৪ । শাহবাগে কি ছাগু পোন্দাইতে আসছি নাকি ??
না, তা আমরা কেউই আসি নাই । চরম ছাগু বিদ্বেষী ব্লগারও আসেন নাই । কিন্তু এই আজকের এই ছোট ছোট ছাগুরা জামাতি অর্থে পুষ্ট হয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে প্রতিনিয়ত করছে বিভ্রান্ত, ছড়িয়ে দিচ্ছে ধর্মান্ধতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষ। জামাতে ইসলামি বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হলেও এদের এই প্রচেষ্টায় এবং সেই ধর্মানুভুতির পুরানো ত্যানার আবেগে অনেকেই আবার এদের সমর্থন দিবেন। তাই শাহবাগের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে, বিশেষত আগামী প্রজন্মকে সতর্ক করতে তুলতে হবে ছাগুদের সম্পর্কে। ইতিহাসের শিক্ষা এবং যুক্তির সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে শেখাতে হবে ধর্মান্ধতার কুফল।

ত্যানা নাম্বার ২ ঃ রাজনৈতিক স্পর্ষকাতরতা
=======================

এই ত্যানা আমাদের দেশের আবাল , বৃদ্ধ বনিতা সকলের জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িত যে এই ত্যানায় প্যাচায় নাই এমন মানুষ খুজে পাওয়াই দুষ্কর । বেশিরভাগ মানুষই এই ত্যানায় সরাসরি জড়িত, অর্থাত সরাসরি কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সুবিধাভোগী । দেশপ্রেমের চেয়ে দলপ্রেম এদের ভয়ানক প্রকট । দলের ভোট ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমন বিষয়ে এরা জাতীয় স্বার্থকেও অনায়াসে অবজ্ঞা করতে পারে " সাজানো, বানোয়াট, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট " তকমা লাগিয়ে দিয়ে। আর যদিও বা মৌন সমর্থন থাকে, তাও দেশ প্রেম হারিয়ে যায় বিশাল রাজদন্ডের ( ইমানদন্ডের মতই ) আড়ালে। রাজনতিক মন্ত্রনার বা স্বার্থের বাইরেও কেবল দেশ ও জাতির স্বার্থে কিছু করা সম্ভব হতে পারে এটা এদের মাথার অনেক উপর দিয়ে যায়।

কিছু লোক এই গোত্র থেকে বেরিয়ে বিপরীত মেরুগামী হতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আবার সেই ত্যানাতেই জড়িয়েছেন। এরা রাজনীতির কোন কিছুই ভাল ভাবে দেখেন না। রাজনীতি বিন্দুমাত্র ছোয়াতেও এদের অজুর পানি অপবিত্র হয়। এরা কোন আন্দোলনের সাথে পারতপক্ষে থাকেন না পাছে , আর যদিও বা যান সেখানে শুধু রাজনীতির চিহ্নই খুজে বেড়াতে থাকেন বেরিয়ে আসার আকুল স্পৃহায় । এদের মাথায় কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে ঃ এই আন্দোলন রাজনৈতিক নাতো ?? এই আন্দোলন কি রাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে যাচ্ছে?? 

নিজের কাছেই কিছু প্রশ্ন করুন । " এই আন্দোলনের শুরু কি রাজনৈতিক নেতারা শুরু করেছিলন ?? এই আন্দোলনের দাবী দাওয়া কি রাজনৈতিক ?? ৩০ লক্ষ বাংলাদেশী হত্যাকারীদের ফাসির দাবী কি রাজনৈতিক ?? যে দল এই ঘৃন্য কাজে লিপ্ত ছিল তাদের বিচারের দাবী কি রাজনৈতিক ?? " নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন । অন্য দিকে ভেবে দেখুন তো , কোন রাজনৈতিক দল যখন কেবলমাত্র ভোটের স্বার্থে এই পশুদের কোলে নিয়ে দেশ ও জাতির বিপক্ষে যায়, সেটা রাজনৈতিক নোংরামী মনে হয় কিনা ?? শাহবাগ আন্দোলন দেশের সমস্ত মানুষের দাবীর একটি প্রতিচ্ছবি । এক্কদিকে সমস্ত জাতি বিপক্ষ একদল নরপশু এবং তাদের পৃষ্টপোষকতাকারীরা । আপনি ভেবে দেখুন আপনি কোন দলে ???

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই ত্যানা নাম্বার ১ এবং ত্যানা নাম্বার ২ এ একই সাথে বা এক্সক্লুসিভলি আসক্ত। বাকিদের একটা একটা বড় অংশ ধরা খায় ত্যানা নাম্বার ৩ এ

ত্যানা নাম্বার ৩ ঃ সুশীলতা
=================

সুশীলতা বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মধ্যে মহামারী আকার ধারন করা একটি রোগ। এরা আন্দোলনের সুফল দেখতে চান কিন্তু তার জন্য কোন ত্যাগ বা কষ্ট সহ্য করতে এদের ব্যাপক আপত্তি। তাই শাহবাগ আন্দোলন দ্বিতীয় সপ্তাহে পা দেবার আগেই সুশীলদের দেশাত্ববোধের সাথে জড়িয়ে যায় বিভিন্ন ত্যানালো প্রশ্ন। নিজের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর চাকরি, ব্যবসা, দামী রেস্টুরান্টে খাওয়া , বন্ধুবান্ধব পরিবার থাইল্যান্ড, সিংগাপুর ঘুরতে যাওয়া এর বাইরে তেমন কিছুই এদের মনযোগ কাড়ে না। একজন রিকশাওয়ালা তার উদওয়াস্ত পরিশ্রমের পর যদিও বা শাহবাগে আসেন, এই মর্ডান সুশীলরা কখনোই না। এরা তাই এই আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঃ

৩.১ ফাসি কবে হবে ?
৩.২ আর কয়দিন চলবে এই আন্দোলন ? অফিস যেতে সমস্যা হচ্ছে তো ।
৩.২ এই আন্দোলন করে কি লাভ হল ?

কাদের মোল্লা, সাঈদী, গোলাম আজম, নিজামীর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘৃন্য ভুমিকা নিয়ে কারোই সন্দেহের অবকাশ নেই। আমাদের সকলের দাবী এদের শাস্তি হতে হবে সর্বোচ্চ । কিন্তু একটা গুরুত্বপুর্ন কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সেটা হতে হবে আইনী ভাবে। আমরা কখনোই দাবী করছি না যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনালের উপর আমাদের আস্থা নেই। ট্রাইবুনালের রায়টিতে আমরা খুশি নই এবং আমাদের দাবী ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসামি পক্ষের মত আমাদেরও রায়ে অসন্তুষ্ট হলে আপীলের সুযোগ থাকতে হবে, প্রসিকিউশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং কোন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী যেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারনে ক্ষমা পেতে না পারে। এই দাবীগুলোর প্রেক্ষিতে আইন পরিবর্তনের মত সময়সাপেক্ষ কাজ বেশ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়েছে, প্রসিকিউশনে যোগ হয়েছে আইনজীবী এবং প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী নিয়ে আপীলের প্রস্তুতি । আপনি যদি ভাবেন, এই দাবী আদায়ের জন্য এভাবে ১৪ দিন রাজপথ আকড়ে না পড়ে থাকার দরকার ছিল না, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন । জামাত শীবিরের রক্তচক্ষু, বহির্বিশ্বের চাপ এবং রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অভিসন্ধিতে ভেস্তে যেত আমাদের এই প্রানের দাবী । এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ, জাতি, রাজনৈতিক দল, সারা বিশ্বকে জোর গলায় জানিয়ে দেয়ার দরকার ছিল এটা সমগ্র জাতির দাবী এবং এই ব্যাপারে কোন আপোষ আমরা মেনে নেব না। আইন পদ্ধতিতেই আমরা এই নরপশুদের ফাসি চাই এবং দিব। ধৈর্যহারা হয়ে অযৌক্তিক ভাবে "দ্রুত ফাসি চাই, এক্ষনি ফাসি চাই " বললে আমাদের নায্য দাবীও সবার কাছে মনে হবে বেআইনী, ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের আইন ব্যবস্থার সুনাম এবং সর্বোপরি আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে বলেই, উত্তাল শাহবাগের দোড়গোড়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকেও গোলাম আজমের গায়ে একটা ফুলও ( পড়ুন জুতা ) কেউ মারে না। আইনী প্রক্রিয়াতেই আমরা এই ঘাতক দালালদের বিচার করে ঝামা ঘষে দিব ডেভিড বার্গম্যানের মত সুযোগ সন্ধানীদের মুখে যারা " মব জাস্টিস " বলে উড়িয়ে দিতে চায় জনতার এই দাবীকে । তাই বলে কি রাজপথ ছেড়ে দিব ? কখনোই না। প্রশ্নই আসে না। আবার আসুন পেছনে ফিরে তাকাই । ৫২ তে ভাষা, ৭১ এ স্বাধীনতা , ৯০ এ গনতন্ত্র কিছুই কি এত দ্রুত পেয়েছি ? খুব কি সুখকর ছিল সেই দিন গুলো। ? তাহলে এত অল্পতেই কেন আমাদের এই হতাশা ? এত অল্পতেই কেন আমরা ক্লান্ত ?? আরো যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বিজয় আসবেই ।

আপনার আমার স্লোগানেই স্তম্ভিত হয়ে গেছে সারা বিশ্ব, ভয়ে গর্তে পালিয়েছে জামাতে ইসলামীর পশুরা, মানুষ এদের চিনতে শিখেছে, শিখেছে জামাতে ইসলামীর আদর্ষকে ঘৃনা করতে, আমরা চিনেছি জামাতের মদদদাতাদের, চিনেছি জামাতের মদদদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো । নতুন প্রজন্মের মাঝে এক অভুতপুর্ব আমেজে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের স্বাধিনতার ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস। আসুন নতুন উদ্দ্যমে স্লোগান দেই । আপনার আমার স্লোগান প্রবাহিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে , শক্তি সঞ্চয় করুক তারা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্বল ইতিহাস থেকে , আন্দোলনের স্পৃহা পাক দেশের যে কোন সংকটে, ঘৃনা করতে শিখুক বিশ্বাসঘাতকদের আর মায়ের মত ভালবাসতে শিখুক দেশকে ।

এই লেখা পড়ে যদি আপনি চিহ্নত করতে পারেন আপনি কোন ত্যানায় আবদ্ধ এবং আসক্ত তাহলে আমার এই প্রচেষ্টা স্বার্থক। সময় হয়েছে আত্ম উপলদ্ধির । আপনার সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করছে কত দ্রুত দেশ জন্মঋন শোধ করে একটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত দেশের দিকে আগাবে। ভুলেও ভাববেন না আপনার ছাগলামীর কারনে দেশ এই উদ্দেশ্যে সফল হবে না। সফল আমরা হবই। বিজয় আমাদের আসবেই । আপনি যদি আপনার ত্যানাগুলো পেছনে ফেলে আমাদের পাশে দাড়াতে পারেন তবে দ্রূত আসবে, নইলে আপনাকে ছাড়াই এগোবে । আপনি ভেসে যাবেন কালের মহাগর্ভে আপনার বস্তা পচা সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক ত্যানার জঞ্জাল সহ।

শাহবাগ জ্বলে থাক বহ্নি শিখার মত। জয় বাংলা।

১। http://www.sachalayatan.com/udash/47904
২ । http://en.wikipedia.org/wiki/Abul_Ala_Maududi#Jihad
3 । http://www.huffingtonpost.co.uk/katherine-baldwin/g20-women-survey_b_1592519.html


মন্তব্য

Morshed Uddin Ahmed এর ছবি

২ নম্বর ত্যানায় একটু পেচিয়ে গিয়েছি, কিন্তু ভুলে যাইনি যে তেনাটা খুলার জন্যই আজ এতোদিন লেগে থাকা

অতিথি লেখক এর ছবি

@Morshed Uddin Ahmed

এত ত্যানা ছাড়াতে গিয়ে নিজেই প্যাচায়ে যাচ্ছিলাম। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আজকের ঘোষনা তো আবার ত্যানা নাম্বার ১ আর ২ প্যাচায়ে দিল।

তবে ছাড়াবো একদিন। আলো দেখতে পাচ্ছি । বেশি দুরে নেই সেদিন।

স্বপ্নবিভা।

সাইদ এর ছবি

বিজয় আমাদের হবেই।
লেখকের নাম কই??

অতিথি লেখক এর ছবি

পোস্টের শেষে দিয়েছিলাম । কি হল বুঝলাম না।

ধন্যবাদ ।

স্বপ্নবিভা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৭১ পরবর্তী ৪২ বছরেও জামাতে ইসলাম জাতির কাছে ক্ষমা তো চায়নি

ক্ষমার প্রশ্ন আসছে কেন?

জামাত শিবির অন্য নামে আবার রাজনীতিতে আসবে- এই আশঙ্কা থেকে না, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবীর দায় ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করাতেই। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই।

শাহবাগ জ্বলে থাক বহ্নি শিখার মত। জয় বাংলা।

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

@নজরুল ভাই ঃ ক্ষমা করার কোন প্রশ্নই আসে না । তবে যারা জামাতের হয়ে ওকালতি করেন, " সেই আগের জামাতে ইসলামি আর নেই, এখনকার জামাতে ইসলামির সদস্যরা দেশ প্রেমিক " তাদের এই বোধদয়ের জন্য কথাটা বলা।

ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরো একটা- শাহবাগ আন্দোলন ১৪ দিন না, ১৭ দিন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখালেখি কখনোই করি না। শুধু পড়েই যাই । ৩ দিন আগে লেখা শুরু করে আজকে পোস্ট করলাম। তাই এই ভুল। তবে এডিট করার কোন উপায় পাচ্ছি না।

ভাল থাকবেন ।

স্বপ্নবিভা

নীল আকাশ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।