তাজউদ্দীন স্যারের ক্লাস মানেই হই হই দৌড়া দড়ি করে ক্লাসে ঢোকা। তাই আগের ক্লাস টা শেষ করেই একমিনিট দেরি না দোতলা থেকে নিচতলায় নেমে যাই। আজ কাল ক্যাম্পাসটায় ও মানুষ গিজ গিজ করে। লিফটের সামনে গিয়ে দেখবো ইয়া বড় লাইন। তার চেয়ে ভালো আগে যাওয়া।
নিচতলা থেকে সোজা নয়তলা উঠে এরপর গেলাম বাথরুমে। মেয়েদের লাল নীল বেগুনী লিপস্টিক দেখার আগেই ঢুকে গেলাম । বাথরুম আর বাথরুম নাই এক এক সাজঘর। এক মেয়ে তার বান্ধুবী কে বলছিলো “ একটু পর আমার দুইটা পরীক্ষা কি যে করি সময়ই নাই” আমি মনে মনে বললাম সময় নাই আবার এই দিকে কেজি দুই লিপস্টিক আর কাজল ঘসতেসো কেনো? পড়তে যাও” ভাগ্যিস মানুষের মনের কথা অন্য কেউ শুনতে পায় না যদি পেত তাহলে কি সর্বনাশটাই না হয়ে যেতো।
মনে মধ্যে চিন্তা আর উত্তেজনা নিয়ে ক্লাস করা শুরু করলাম। সব ক্লাসের একটা কমন ইস্যু- শাহবাগ! শাহবাগ! শাহবাগ! ক্লাস শেষ করে ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম । মনের মধ্যে চিন্তা ঠিক করে যেতে পারবো কিনা। বহু দিন বাসে করে শাহবাগ যাওয়া হয় না। বের হয়ে রিকশা ডাকলাম
এই মামা যাবে ?
যামু! কই?
গেইটে চলো মামা।
যামু কিন্তু ১৫ টাকা দেওন লাগবো!
কেন? ভাড়া ১০ টাকা।১০ টাকায় যাইলে যাও না যাইলে নাই বলে হাটা দিলাম আর মনে মনে গালি দিতে লাগলাম মধ্যবিত্ত হওয়াকে আর সাথে কটকটা রোদকে। এমনি কালো তার উপর রোদে পুড়ে আর ও কালো। শুনেছিলাম একদিনের রোদ নাকি দশ দিনের উজ্জলতা নষ্ট করে দেয় কি এক জ্বালা !
টিকেট কেটে দাড়িয়ে রইলাম টিকেট কাউন্টারে। প্রায় পনেরো মিনিট পরে বাস এসে থামলো। হুড়হুড়ই করে বাসে উঠে কানে হেডফোন গুজে দিয়ে পুরো পৃথিবী থেকে বিছিন্ন হতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।
জ্যাম ঠেলে বাস নামিয়ে দিয়ে গেলো শাহবাগে। হাটা ধরলাম বই মেলার উদ্দেশে। একা একা! অনেক দিন আশা হয় না, মনের মধ্যে কেনো জানি একটা ভয় কাজ করছিলো। হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম যতটা সহজে বলছি ঠিক তত সহজেও না । একা একা অনেক দূর হেঁটে আসা ঠিক কমও না।
বই মেলা ঢুকলেই কেন জানি মন ভালো হয়ে যায় আর মেলার সব মানুষকেই অন্যরকম লাগে। পেয়ারা ওয়ালা থেকে শুরু করে বই বিক্রেতা পর্যন্ত সবাইকে। ঝালমুড়িওয়ালা থেকে দশ টাকার ঝালমুড়ি নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। অধিকাংশ মানুষই বই না কিনে ঘুরে ফিরে চলে যাচ্ছে। কেউ আসে প্রেমিকাকে নিয়ে। প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা দেখলেই আজকাল আমার জ্বলে । ছেঁকা খাওয়ার একটি কুফল মনে হয় । তাদের ভালোবাসাকে আমি আমার চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করলাম উদ্দেশ্য হলো দুইটা কবিতার বই কিনা।
আমি নতুন নতুন কবিতার পাঠক হয়ে উঠেছি তাই নিরমালেন্দু গুনের আর হেলার হাফিজের কবিতার বই সংরক্ষণে রাখার চিন্তা । এমন নয় যে তাদের কবিতা আগে পড়া হয় নি। কম্পিউটারে পড়া আর কাগজের বইয়ে পড়ায় ঢের তফাৎ যা কিনা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনা। বইয়ে আজকাল সেই বইইয়ের গন্ধ নেই এখন সব নতুন বইয়ে কেনো জানি তেলাপোকার গন্ধ। বই মেলায় মানুষের চেয়ে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাই বেশি। শাহবাগের উত্তাপ লেগে এইবার বই মেলায় ভীড় নেই কিন্তু যারা সত্যি কারের বই প্রেমী তাদের আনাগোনা আছেই। ঘুরে ঘুরে বই কেনা শেষ করেই গেলাম শাহবাগে। বন্ধুদের সাথে স্লোগানে গলা মিলিয়ে ফিরলাম বাসায় এবং দেখা শেষ করে এলাম আর একটি প্রাণের মেলা। বই মেলা এভাবেই বার বার ফিরে আসুক আর আমাদের বই প্রেমী করে যাক।
( এইবার বই মেলা না যেতে পারার আক্ষেপ থেকে লিখা। জানিনা সচলায়তনে প্রকাশ করা হবে কিনা। তারপরেও দিলাম)
মন্তব্য
আরো একখানা নামবিহীন অতিথি লেখকের লেখা। এই লেখাটা তার মান বা সারবস্তু বিবেচনায় নীড়পাতায় প্রকাশের উপযুক্ত হয়েছে কি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন