মার্চ ১৯৭১; আব্বা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ছাত্র। থাকতেন শহীদুল্লাহ হলে। জায়গাটা আমাদের মেডিকেল এলাকার প্রতিবেশী। কার্জনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলে বা রিকশায় আসা যাওয়ার পথে শহীদুল্লাহ হলটি দেখে কেমন যেন আপন মনে হতো। কারন একাত্তুরে এই হলটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার গল্প আমি শুনে এসেছি সেই ছোট বেলা থেকে।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। লাঠিসোটা আর বিএনসিসি’র কয়েকটি গাদা বন্দুক নিয়ে কার্জন হল এলাকায় তারা নিয়মিত নানা ধরনের কসরত করেন। স্বাধীনতাকামী ছাত্রনেতাদের যাবতীয় সংগ্রামী পরিকল্পনার কেন্দ্রস্থল ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল); হলটির নামই হয়ে গিয়েছে ছাত্রদের ক্যান্টনমেন্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ তারিখ বলে দিয়েছেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।" রেসকোর্স ময়দানে সেদিন লাখো লাখো মানুষের সেই ঐতিহাসিক সমাবেশে আব্বাও ছিলেন। শেখ মুজিবের বক্তৃতা শুনে হলে ফিরেছেন তুমুল উদ্দীপনা নিয়ে। ভার্সিটির হলগুলোর রুমে রুমে, ক্যান্টিনে, চায়ের দোকানে, রাস্তায় একই আলোচনা। শুধু ছাত্র নয়, খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ, ছেলে বুড়ো সবার তখন একই প্রতিজ্ঞা। এই বার দেশ স্বাধীন করে ফেলতেই হবে। গল্পের ঠিক এই জায়গাটায় আমাদের মধ্যবয়সী পিতার কণ্ঠের উচ্ছ্বাস সংক্রমিত হতো আমার আর আমার ভাইয়ের শরীরে। আশা ও আনন্দে আমাদের শিশু চোখ চক চক করে উঠত প্রতিটিবার।
আববা বলতেন, সবাই স্বাধীনতার পক্ষে ছিল একথা বলা যাবে না। জামাত-ই-ইসলামী, নেজামে ইসলামী, মুসলিমলীগ, এই দলগুলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যদিও ঊনসত্তুরের গনআন্দোলনে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতনের পর থেকে, এনএসএফ নামে পরিচিত পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের পোষা গুন্ডাবাহিনী, আর জামাত-ই-ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ছেলেদের উপস্থিতি ভার্সিটি এলাকায় কমই দেখা যেত। ইসলামী দলগুলোর তখনকার জনসমর্থনের কথা জানতে চাইলে আব্বা গড় গড় করে সত্তুরের ইলেকশানের রেজাল্ট বলে দিতেনঃ “এদের জনসমর্থন ছিল নগণ্য। পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসন জিতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচন হয় ১৬২ টি আসনে, শুধু দুটি ছাড়া সব জেতে আওয়ামী লীগ। জামাত-ই-ইসলামী পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসনই জেতে না। পশ্চিম পাকিস্তানের আসনগুলো মিলিয়ে জাতীয় সংসদে তারা লাভ করে মাত্র চারটি আসন। প্রাদেশিক নির্বাচনেও একই রকম ফল। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জেতে ২৮৮ টি আসন, আর জামাত মাত্র একটি।” স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় দুই দশক পর তখনো সত্তুরের ইলেকশানের রেজাল্ট আব্বার ছিল মুখস্ত। আমরা অবাক হতাম। তিনি বলতেন, “এ এমন কিছু নয়। আমার বয়সী বাংলাদেশের সব মানুষেরই এই রেজাল্ট মুখস্ত।” বইয়ে পড়েছি, পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণসহ সকল বৈষম্যের অবসান, ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ‘ছয়-দফা’ নামে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার নেতৃত্বে একাত্তুর নাগাদ তাই রুপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে। আর এতে সর্বাত্মক সমর্থন জানায় এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। স্বাধীনতার পক্ষে এমন ব্যাপক জনসমর্থনের সাথে তর্ক করা কঠিন। আমরা অবাক হয়ে ভাবতাম, জামাতিদের সমস্যাটা কি?
যাই হোক, মার্চের ঘটনায় ফিরে যাই। ঢাকার রাজনৈতিক অবস্থা তখন উত্তপ্ত। আটাশে মার্চ আব্বার প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা। ঠিক করে রেখেছেন পরীক্ষা শেষে বড় বোনের বাসায় যাবেন। আমার ফুপুর বাসা কমলাপুর। তার এক ছেলের মুসলমানির দিন ধার্য হয়েছে ঐ সপ্তাহে। গ্রাম থেকে এই উপলক্ষে আমার দাদীও এসেছেন। কিন্তু পচিশে মার্চ বিকেলে হল থেকে বেরিয়ে দেখলেন শহরের অবস্থা থমথমে। রাস্তা ঘাটে লোকজন কম। রিকশায় গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকা ঘুরে কি মনে করে বোনের বাসায় চলে গেলেন। ফুপুর বাসা মেহমানে গিজ গিজ করছে। সবাই মিলে আড্ডা দিলেন অনেক রাত পর্যন্ত। মধ্য রাতে আচমকা গুলির শব্দে সচকিত হয়ে উঠলেন সবাই। দূর থেকে ভেসে আসা স্বয়ংক্রিয় বন্দুকে গোলাগুলির শব্দ। ঘটনা কি জানতে অনেকেই বেরিয়ে আসেন রাস্তায়। সবার মুখে স্পষ্ট আশংকার ছায়া; চাপা গুঞ্জন, “আর্মি মানুষ মারা শুরু করেছে”।
একটি সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণের উপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়েছে, এই ব্যাপারটি খুব অস্বাভাবিক হলেও এরকম কিছু ঘটতে পারে এর মানসিক প্রস্তুতি লোকজনের ছিল। আব্বা বলতেন, ততদিনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝে গিয়েছিলেন সত্তুরের নির্বাচনে জিতলেও বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পশ্চিম পাকিস্তানীরা কখনোই রাজী হবে না। শেখ মুজিব তাই সাতই মার্চ ভাষণে বলে দিয়েছিলেন যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে। আশেপাশের পাড়া মহল্লা থেকে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান শোনা যেতে থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যে যুবক, বৃদ্ধ, কিশোর, মহিলাসহ অনেকেই জমায়েত হন কমলাপুর মেইন রোডে। কমলাপুরের তৎকালীন এক আওয়ামীলীগ নেতা রাজ্জাক সরদারের (তার ভাতিজা মোহাম্মদ হানিফ পরবর্তীতে ঢাকার মেয়র হয়েছিলেন) একটি রাইফেল ছিল। আর্মিকে রুখে দিতে তার নেতৃত্বে আব্বাসহ প্রায় হাজার চারেক লোক লাঠিসোটা হাতে এগিয়ে গিয়ে অবস্থান নেন সদ্য নির্মিত কমলাপুর রেল ষ্টেশনের প্লাটফর্মে। দূর থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসতেই থাকে। একটু পর পর ‘ট্রেসার বুলেটে’ দিনের আলোর মতো আলোকিত হয়ে উঠতে থাকে ঢাকার আকাশ। কয়েক ঘণ্টা পর তারা সবাই বাড়ি ফিরে যান। পরে খবর পান, পাকিস্তানী আর্মির সশস্ত্র সৈনিক আর সাঁজোয়া যান কমলাপুর রেল ষ্টেশনটি ঘিরে ফেলে ভোর পাঁচটার দিকে। এসময় আশেপাশের কিছু সাধারন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে তারা।
‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামক পাকিস্তানী আর্মির পঁচিশে মার্চ রাতে শুরু করা জঘন্য হত্যাযজ্ঞের পরিধি বুঝতে পারেন পরদিন সকালে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রাতে আর্মি ঢাকা ভার্সিটির হলে হলে হানা দিয়ে শত শত ছাত্রছাত্রীকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। জহুরুল হক হল থেকে শুরু করে, হিন্দু ছাত্রাবাস জগন্নাথ হল, এমনকি ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হল, কিছুই বাদ দেয়নি তারা। সৈন্যরা ট্যাঙ্ক, মেশিনগান ও অন্যান্য ভারি অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে সাধারন ছাত্রদের উপর। হত্যা করেছে বহু শিক্ষককেও। হত্যা করেছে মুসলমান হিন্দু নির্বিশেষে। হলগুলোর রুমে রুমে, করিডোরে, সামনের ঘাসে রক্ত, শুধু রক্ত। শহীদুল্লাহ হলে আব্বার পাশের রুমে থাকতেন গনিতের এক অধ্যাপক। আর্মির নিক্ষেপ করা মর্টারে নিহত হয়েছেন তিনি। শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হলের মাঝামাঝি অবস্থিত পুকুরটির পাড়ে ও পানিতে ডুবে লুকিয়ে থেকে কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে পেরেছেন। নিরস্ত্র মানুষ মারার পাশাপাশি পাক-আর্মি বেসামরিক স্থাপনার উপরও হামলা চালিয়েছে। ট্যাঙ্ক দিয়ে তারা গুড়িয়ে দিয়েছে শহীদ মিনার। তছনছ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক অফিস। রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে রমনা কালী মন্দিরে। শুধু তাই নয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী আর্মি শত শত বাঙালি পুলিশকে মেরে ফেলেছে। পিলখানায় মেরেছে আমাদের তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইপিআর-এর বাঙালি জওয়ানদের। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বীরের মতো লড়েছেন বাঙালি পুলিশ আর ইপিআর জওয়ানরা। আমি ও আমার ভাই স্তব্ধ হয়ে শুনতাম। সে রাতে আব্বা হলে ফিরে গেলে অথবা আর্মি একটু আগে কমলাপুর এসে পৌঁছালে কি সর্বনাশটাই না হতে পারত। আজ আমাদের জন্মই হয়ত হতো না।
ছাব্বিশে মার্চ সকালে ঢাকাসহ সারাদেশে আর সবার মতো আমার আব্বাও একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন। তা হল, পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে বাঙালি জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেবার প্রক্রিয়া। ইংরেজিতে যাকে বলে, ‘Genocide’= The systematic and widespread extermination or attempted extermination of an entire national, racial, religious, or ethnic group. আমার Independence Day ছবিটির কথা মনে পড়ে। পৃথিবী দখল করে মানব জাতিকে নির্মূল করতে আসা ভিনগ্রহী ‘এইলিয়েন’দের সাথে আমার প্রিয় নায়ক উইল স্মিথের যুদ্ধ নিয়ে রোমাঞ্চকর এক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। পার্থক্য শুধু এই যে একাত্তুরের ঘটনাগুলো কোন কল্পকাহিনী নয়, এদেশের মাটিতে ঘটে যাওয়া নির্মম সত্য ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে লাঠিসোটা নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা ছাত্রেরা সেদিন সহসাই বুঝে গেলেন, তারা আজ মুখোমুখি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক শাসক গোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া, অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত, মানুষ মারার ট্রেনিং করা, পৃথিবীর অন্যতম সেরা পেশাদার একটি খুনি বাহিনী। সেদিন আমার আব্বা ও তার বন্ধুরা নিজেদের কতটা অসহায় বোধ করেছিলেন ভেবে এক ধরনের বোবা আতঙ্ক অনুভব করি। তাদের অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তা শুধু নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে নয়, এক হয়ে গিয়েছিল সমগ্র বাঙালি জাতির ভবিষ্যত ও অস্তিত্বের সাথে। খবর পেলেন, শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরে জারি করা হয়েছে অবিরাম কারফিও। আমাদের তখন বড়ই দুর্দিন।
সকাল হতেই পাকিস্তানী আর্মি রেল স্টেশন থেকে কমলাপুরের বাড়িঘরের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। ফুপুর বাসার টিনের চালের উপর দিয়ে শোঁশোঁ শব্দে উড়ে যেতে থাকে বন্দুকের গুলি। প্রাণ বাঁচাতে সবাই ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়েন। চারিদিকে আতঙ্ক। আরো অনেকের মতো ফুপুর বাসার সবাই সেদিনই ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আব্বা তার বোন, বোনের ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জমির আইল দিয়ে হেঁটে পৌঁছালেন কমলাপুরের পেছনে মান্ডার বিল নামে একটি জায়গায়। সেখান থেকে নৌকায়, পায়ে হেঁটে, বাসে, এমনি করে পৌঁছালেন নরসিংদী। পথে দেখলেন ঘরছাড়া হাজার হাজার আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ। যে যেভাবে পেরেছেন ঢাকা থেকে বের হয়ে এসেছেন। নিজ বাসভূমে সেদিন তারা সবাই উদ্বাস্তু। আব্বার মনে আছে, পথের পাশের গ্রামগুলোর মানুষদের উদারতার কথা। যারা রাস্তার পাশে বসে ছিলেন পানি, চিড়া, মুড়ি, ইত্যাদি খাবার নিয়ে। নরসিংদী থেকে বাকি পথ যাবার কথা লঞ্চে। কিন্তু ঘাটে এসে দেখলেন সেখানে বহু হাজার মানুষের ভিড়। সে তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা কম। মত পাল্টে তারা ট্রেনে করে গেলেন ভৈরব। সেখান থেকে লঞ্চে বাড়ি পৌঁছালেন। ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ি যাওয়া এখন মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার; গুগল ম্যাপ বলছে রাস্তার দূরত্ব ৭১ মাইল। তখনকার দিনে লাগত একদিন। কিন্তু একাত্তুরের মার্চে, এই পুরো ‘জার্নিটা’ করতে তাদের লেগেছিল মোট পাঁচদিন। কারন সেটা কোন সাধারন সময় ছিল না।
ছাব্বিশে মার্চ রাতে রেডিওতে ভেসে আসে চমৎকার একটি ঘোষণা। পাকিস্তান আর্মির বিদ্রোহী এক বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুর ঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে “on behalf of our great national leader Seikh Mujibur Rahman” বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। আব্বা সেই ঘোষণাটি শোনেন পর দিন, সঙ্গে আনা তিন ব্যান্ডের কালো ছোট্ট একটি রেডিওতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বারে বারে প্রচারিত হতে থাকা সেই ঘোষণাটি, আচমকা বর্বর সেনা আক্রমনে ঘরছাড়া মুক্তিকামী বাঙালিদের মনে কতটা সাহস জুগিয়েছিল, ভেবে শিহরিত হই। একাত্তুরের মার্চের উত্তাল দিনগুলির কথা যতবার ভাবি, ততবার আমার আব্বা, আম্মা, আপনজনের সেসময়ের সব অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তা আমি অনুভব করি আমার বুকে। ধমনীতে অনুভব করি দেশকে শত্রু মুক্ত করার তাদের সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। মনে হয়, সাতই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লাখো লাখো মানুষের সমাবেশে আমিও শামিল। বুকের সমস্ত শক্তি এক করে সবার সাথে চিৎকার করে আমিও বলছিঃ
এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম
জয় বাংলা।
চলবে...
পাদটীকাঃ স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে বহু পানি ঘোলা করা হয়েছে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক জাতীয় ঘটনা থাকা উচিত দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গত চল্লিশ বছরের রাজনীতির ধরন দেখে George Orwell এর উপন্যাস Nineteen Eighty-Four এর একটি কথা মনে পড়ে, ‘he who controls the present controls the past, he who controls the past controls the future’. Orwellian একটি রাষ্ট্র আমাদের কখনোই কাম্য নয়।
গোলাম খন্দকার
৭ মার্চ ২০১৩
আগের পর্বঃ তিন পুরুষের স্মৃতি চারণঃ প্রথম পর্ব http://www.sachalayatan.com/guest_writer/48238
মন্তব্য
আমিত এইটা ডিসিলাম , বুড়া আঙ্গুল উপরে গেল কিভাবে?
জি্য়া ঘোষনা করেন ২৭ মারচ সনধা ৭ টায়।উনার ভিডিও ফুটেজ থেকে শোনা।।।।।।।"জাতির জনক বঙ্গবন্ধু"বা "বঙ্গবন্ধু" শবদ আপনার লেখায় অবহেলিত কেন?
আপনার বাবা অনেক কিছু মনে রাখতে পারতেন জেনে খুশি হইলাম, কিন্তু একটা ব্যাপারে উনি নিশ্চিত আপনাদের সাথে প্রতারণা করে গিয়েছেন অথবা আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তথ্য বিকৃতি করেছেন।
ঐতিহাসিক কোন ব্যাপারে লিখতে গেলে শোনা কথায় কান দিতে নেই।
জনাব গোলাম খন্দকার, এরপর থেকে আপনার আর কোন লেখা পড়ার আমার কোন আগ্রহ থাকলো না।
যারা ইতিহাস বিকৃতি ঘটায় আমি তাদের ঘৃণা করি।
মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
...........................
Every Picture Tells a Story
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নিয়ে খুব কমন একটা মীথ বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। সেটা হচ্ছে, অনেকেই দাবী করেন তিনি নিজ কানে রেডিওতে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত মেজর জিয়ার কণ্ঠ শুনেছেন। ঐ বেতার কেন্দ্রটির প্রচার ক্ষমতা এতই কম ছিল যে (প্রথমে ১০ কিলোওয়াট, তারপর ১ কিলোওয়াট, শেষে ৪০০ ওয়াট), খুব বেশি দূর পর্যন্ত তার সম্প্রচার শুনতে পাওয়া যাবার কথা না। চট্টগ্রামের বাইরে বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গা থেকে ঐ বেতারের সম্প্রচার শুনতে হলে যে উচ্চ ক্ষমতার রেডিও দরকার সেটা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কয়জন মানুষের ছিল? আর যাদের ছিল তাদের কয়জনের পক্ষে ২৫-২৬-২৭ মার্চে খুঁজে খুঁজে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র ধরার সুযোগ বা মানসিকতা ছিল?
এই ২০১৩ সালে যখন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের প্রচার ক্ষমতা ১৯৭১ সালের তুলনায় অনেক অনেক গুণ (১০০ কিলোওয়াট) বেশি তখন ঢাকা বা নরসিংদীতে বসে কেউ একটা সাধারণ মানের রেডিও দিয়ে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র ধরার চেষ্টা করতে পারেন। অথবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সমান ক্ষমতাসম্পন্ন, অর্থাৎ ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রাঙ্গামাটি বা বান্দরবান বেতার কেন্দ্র ধরে দেখার চেষ্টা করতে পারেন। তাহলে উপরোক্ত মীথটার অসত্যতাটা বুঝতে পারবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ক্লোন৯৯, Thumbs up এর জন্য ধন্যবাদ।
shishircma
শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মহানায়ক এই ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। এই নিয়ে করোরই কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আর এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করার লক্ষেই আমি তার ১৯৬৬–র ছয় দফা আন্দোলন, সত্তুরের নির্বাচন, একাত্তুরে ৭-ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ডাক ও সবাইকে শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকার আহবান, এবং তার নামে স্বাধীনতার ঘোষণা, এ ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছি। শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু উপাধিটি আমার লেখায় এসেছে; এটি আরও ব্যাবহার করা যেত, মানছি। জাতির জনক উপাধিটি ব্যাবহার করিনি, কারন ১৯৭১-এ এটা প্রচলিত ছিল না। তবে তিনিই যে আমাদের জাতির জনক তা উপরোক্ত ঘটনাবলীতেই দিবালোকের মতো স্পষ্ট হবার কথা। সবে তো মার্চ পর্যন্ত এসেছি। সামনে যুদ্ধের গল্প, ডিসেম্বরে বিজয়, (বাহাত্তুরের) জানুয়ারীতে স্বাধীন বাংলাদশের জনক শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, সবই আসছে। সাথে থাকার অনুরধ করছি।
স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়ে ব্যাক্তি ও দিন, উভয় নিয়েই অনেক confusion আছে ও সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক culture- এর সাথে Orwell-এর লেখার তুলনা করেছি সেই হতাশা থেকেই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে দেয়া জিয়ার ঘোষণাটি আমার আব্বা শোনেন ২৭ তারিখ দিনের বেলা, তখন তারা সপরিবারের বাড়ি যাবার রাস্তায়। এ ঘোষণাটির কথা মুখে মুখে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। এটি বারবার প্রচারিত হতে থাকে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সিগনাল ছিল দুর্বল, তবে রেডিও টিউন করে একটু পর পর এই চ্যানেলটি ধরা যেত।
মুস্তাফিজ, ইতিহাস বিকৃতিকারীদের প্রতি আপনার ঘৃণা আমিও share করি। লেখার শেষে পাদটীকাটি এজন্যই যোগ করেছি।
ষষ্ঠ পাণ্ডব, লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। স্বাধীনতা ঘোষণার কথাটি লোক মুখে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। যত দূর শুনেছি, তাই ২৭ তারিখ বাংলাদেশের অনেকেই বহু বেতার কেন্দ্রের ভিড়ে নির্দিষ্ট করে একটি কেন্দ্র খুজছিলেন, তা হল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ঘোষণাটি রেডিও অস্ট্রেলিয়া, ও পরবর্তীতে বিবিসি সহ অন্যান্য বিদেশি প্রচার মাধ্যমেও প্রচারিত হয়। তাই, বাংলাদেশের অনেকেই জিয়ার গলায় ঘোষণাটি শুনেছেন একথা ঠিক। কিন্তু, আপনার সাথে আমি একমত যে প্রথম প্রচারটি শুনেছিলেন অল্প কিছু লোক।
জিয়া'র ঘোষণা ছিলো সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে, মার্চের ২৭ তারিখ। আপনি লিখলেন ২৬ তারিখে জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন স্বাধীনতার!
“on behalf of our great national leader Seikh Mujibur Rahman” - এখানে জিয়া 'শেখ মুজিবর রেহমান' বলার আগে স্পষ্ট করেই 'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি উল্লেখ করেছিলেন, আপনি কি সেটি এড়িয়ে গেলেন কোনো কারণে?
'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি বেশ কিছু মানুষের কাছে বেশ এলার্জেটিক, কারণটা বোধগম্য অবশ্যই। আর ২৭ তারিখের ঘোষণাকে টেনে এনে ২৬ তারিখে দেখাতে পারলে ইতিহাসের অনেক কিছুই অন্যভাবে দেখানো সম্ভব হয়। এই কাজটা যদি আপনি জেনে করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য করুণা থাকলো। আর যদি না জেনে করে থাকেন, তাহলে একটু জানাশোনা করে নিয়েন ইটিহাস নিয়ে লেখার আগে।
ধন্যবাদ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুসর গোধূলি, লেখাটি পড়া ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বঙ্গবন্ধু শব্দটির প্রতি কোন অ্যালার্জি আমার নেই। থাকলে ছাত্র জীবন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে কাটাতাম না। আর সেই শ্লোগানের প্রতি শ্রদ্ধা এখনো কমেনি, এইটুকু বলতে পারি। তারিখ বিষয়ে ব্যাখা আমার উপরের মন্তব্যে দেখুন।
কী ব্যাখ্যা দিলেন, সেটা তো দেখেছিই! ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় দেয়া জিয়ার ভাষণ আপনার আব্বা ২৭ তারিখেই দিনের বেলা কেমনে শোনেন, এইটার ব্যাখ্যা দিয়েন পারলে।
ছাত্রজীবনে আপনি কী করেছেন, কী শ্লোগান দিয়েছেন সেইসব তুলার কোলবালিশ দেখানোটা অবান্তর।
আর, স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়ে ব্যাক্তি ও দিন, উভয় নিয়েই অনেক confusion আছে সেটা আপনাকে কে বলেছে? অজ্ঞানতাকে confusion ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগে কেবল কিছু কাঠবলদ এবং স্বার্থান্বেষী মহল।
একটা লিংক দিলাম, দেখেন আপনার confusion দূর হয় কীনা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাল লেখেছেন।
তবে আমার মনে হয়,
ঘোষণার প্রথম অংশটা যদি হুবহু দিতে পারতেন তাহলে লিখা আরো প্রাণবন্ত হতে পারত।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ শুনতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু সেই স্মৃতিচারণে স্বাধীনতার ঘোষণার মতো বিষয়ে ভুল থাকাটা অস্বস্তিকর। এটা নিয়ে এত বেশীবার আলোচনা হয়েছে, এত বেশী তথ্যের সমাহার যে এটায় কোনরকম ভুল করাটা সন্দেহজনক বলে মনে করা হয়। ২৬শে মার্চ এম এ হান্নান যখন ঘোষণা দিচ্ছিলেন জিয়া তখন বোয়ালখালীতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ব্যস্ত। জিয়া যে বউ বাচ্চা ফেলে চট্টগ্রাম শহর ত্যাগ করেছেন ২৫ তারিখ শেষ রাতেই এটা আপনি চাইলে খালেদা জিয়ার কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন।
২৬শে মার্চ এম এ হান্নানের ঘোষণার পর বেলাল মোহাম্মদ এবং আরো কজন বেতারকর্মী কালুরঘাট ট্রান্সমিটারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন, এটা পাকি হামলার মুখে পড়তে পারে। ফলে আর্মির কাউকে এনে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় বেতারকর্মীদের পক্ষ থেকে। যদ্দুর জানি এটা কোন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা বেলাল মোহাম্মদদের স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হয়। ২৭ তারিখ দুপুরের দিকে জিয়াকে খুঁজে পেয়ে কালুরঘাটের নিরাপত্তার জন্য অনুরোধ করলে জিয়া রাজী হন এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে এসে বেলাল মোহাম্মদের ঠাট্টাপ্রসূত অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। জিয়ার প্রথম ঘোষণার পর আবারো সংশোধনী ঘোষণা করা হয়। রেকর্ডকৃত ওই ঘোষণাটিই দুদিন ধরে বারবার বাজানো হয়। এখানে আপনার বাবা যদি ঘোষণা শুনে থাকেন তাহলে ২৭ তারিখ সন্ধ্যায় শুনতে পারে। তবে চট্টগ্রামের বাইরে অবস্থানকারী কারো পক্ষে এই ঘোষণা শোনা সম্ভব কিনা জানি না। সুতরাং এই গুরুত্বপূর্ন ইস্যুতে স্মৃতিচারণ সংশোধন করে নেবার জন্য আহবান জানাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নীড় সন্ধানী, লেখাটি পড়া ও স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়ে তথ্য সংশোধন করার আহবানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। একই সাথে আমার লেখার উদ্দেশ্যটিও জানাচ্ছি।
‘তিন পুরুষের স্মৃতি চারণ’ শীর্ষক আমার লেখাগুলোর উদ্দেশ্য একটি পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার স্মৃতি চারণ; তথ্য বিকৃতি, বিভ্রান্তি বা বিতর্ক সৃষ্টি নয়। আর দ্বিতীয় পর্বটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল, একাত্তুরের সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে এদেশের আপামর জনগনের মাঝে দেশকে স্বাধীন করার যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিলো, সেটি তুলে ধরা। এই পর্বটি লেখার উদ্দেশ্য যা ছিলনা তা হল, (১) জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বা আনুষ্ঠানিক ঘোষক হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করা, (২) স্বাধীনতা ঘোষনার তারিখ বা ঘোষণাকারীর পরিচয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা। কিন্তু, সচলে প্রকাশিত হবার পর উপলব্ধি করলাম আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই পর্বটি লিখেছিলাম, তা স্পষ্টতর করার অবকাশ রয়ে গেছে। আপনার সাথে আমি একমত, স্মৃতিচারণে স্বাধীনতার ঘোষণার মতো বিষয়ে তথ্যগত ভুল অস্বস্তিকর; এটিকে অনেকের কাছে দুরভিসন্ধি মুলক বলেও মনে হতে পারে। লেখক হিসেবে এই ব্যাপারটি আমার জন্য বিব্রতকর।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত জিয়ার ঘোষণাটির কথা মুখে মুখে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। বাড়ি যাবার পথে সঙ্গে আনা রেডিওতে এই ঘোষণাটি আমার আব্বাও শুনেছেন। তবে তিনি প্রথম সম্প্রচারটি শোনেননি। ব্যাক্তিগত স্মৃতিচারণ ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ- এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্মৃতিচারণ লিপিবদ্ধকারী হিসেবে আমার। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরও সতর্ক হবার ইচ্ছা প্রকাশ করছি। তারিখ নিয়ে এ দুইয়ের অসঙ্গতির প্রেক্ষিতে জিয়ার ঘোষণার কথা স্মৃতিচারণ মুলক এই লেখাটিতে যেভাবে আসা উচিত ছিল তা হলঃ
“পথেই তারা শুনলেন চমৎকার একটি খবর। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে - বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে - পাকিস্তান আর্মির বিদ্রোহী এক বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, এ কথাটি লোক মুখে রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে দেয়া এই ঘোষণাটি আচমকা বর্বর সেনা আক্রমনে ঘরছাড়া মুক্তিকামী বাঙালিদের মনে সাহসের সঞ্চার করে”।
পরিশেষে বলতে চাই, এই বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মহান রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধুর ডাকেই এই দেশের মানুষ যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। আমার মূল উদ্দেশ্য হল একাত্তুরে একটি জাতির সমষ্টিগত ত্যাগ ও অর্জনকে ফুটিয়ে তোলা সেই সময়ে ঘটে যাওয়া ব্যাক্তি ও পরিবার পর্যায়ের ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে; ভবিষ্যতে এই দিকে মনোযোগী হবার আশা রাখছি। সামনে আসছে যুদ্ধের গল্প, চরম আত্মত্যাগ ও সাহসের গল্প; সবাইকে সাথে থাকার অনুরোধ করছি।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন