‘মাগো, দশ হাজারের মতন মানুষ চিৎকার দিতে দিতে দা-খোন্তা, লাডি-সডা, চাপাতি লই...ধানক্ষেতের চাইর পাশদি ধাই আইয়ের...তখন জানের মায়ায় ঘরবাড়ি সব রাখি পলাই গেই গই অ্যাঁরা...!!!’ – এমনটিই বলছিলেন পরিবারের বয়স্কা মহিলাটি। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা তরুণী বউটি চোখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা বোবাকান্না ঢেকে ফেলতে তাড়াতাড়ি আঁচল চাপা দেয়। পরে জানতে পারি, এর বাবা শ্বশুরবাড়িতে মেয়েকে দেখতে এসে সেদিন বেঘোরে প্রাণটা হারিয়েছিলেন। এমনকি, পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েও তাঁর শেষ রক্ষা হয়নি, পুকুর থেকে টেনে তুলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আঘাতে শরীরটা তাঁর এ-ফোঁড়, ও–ফোঁড় করা হয়েছে! মাতৃসম বৃদ্ধাকে বলি, ‘মা ওরা কারা? কাউকে চিনতে পারেন নি?’ বৃদ্ধা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে ওঠে, ‘কিভাবে জান্যিয়ুম, অ্যাঁরা তো বেগগুনে পলাই গিইলাম, তয় পরে হুনন্যি মাদ্রাসাত তন শিবিরর পোয়া-হক্কল আরো কারা কারা আইসস্যিলো...’
আমি যখন এই অশীতিপর বৃদ্ধার সাথে কথা বলছিলাম, তখন আমাদের এ যাত্রার আরেক সঙ্গী ডাঃ মেহেদি হাসান খান আগুনে পুড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর, ভিটে বাড়ির দৃশ্য ক্যামেরায় তুলে নিচ্ছিলো। একটুদূরেই, বিশ্বজিৎ সামনের ভিটায় পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যসংখ্যা, নাম-পেশা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এসব খাতায় লিখে নিচ্ছিলো। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা, ভীতভাব লক্ষ্য করলাম। চারদিকে পোড়া হাঁড়িপাতিল, তৈজসপত্র, বইখাতা, বিভিন্ন আসবাবের ধ্বংসাবশেষের প্রকট চিহ্ন ফুটে উঠেছে! জায়গায় জায়গায় ছাইয়ের উঁচু স্তুপ, ঘরের বেড়া, টিন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে! ...ক্যামেরা সামনে আসতেই মহিলারা একটা অজানা আশংকায় তাড়াতাড়ি মুখ ঢেকে ফেলে...এদের চোখমুখ অমন মলিন, চিন্তাগ্রস্থ হবেইবা না কেন? এদেশে সামান্য রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলেই সবার চোখমুখ শুকিয়ে যায়। আর এর করালগ্রাসে পড়ে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে তো সব সময়ই নিজের অস্তিত্ব, পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলে যেন!! কথায় আছে না, ঘরপোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়!!...
পরপর লাগোয়া ৩/৪টা বাড়ি। একটাতে আগুন দিলে অন্যগুলো পুড়বেই, এটাই স্বাভাবিক। সামনে ফেলে আসা বাড়িগুলোও একই প্যাটার্নের, একইভাবে লাগোয়া ছিল বলে এগুলোও আগুনের তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি। একপাশে বেড়ার ছাউনির নিচে আর ধ্বংসাবশেষের ঠিক পাশেই শিব ঠাকুরসহ আরও কয়েকটি প্রতিমা বিগ্রহ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে যে বিষয়টি আমাকে খুব বেশি মর্মাহত করেছে তাহলো, মাটির উপর দুমড়ে-মুচড়ে অসহায়ভাবে পরে থাকা পুড়ে যাওয়া একটা মৃত গরু। কতদিন ধরে মৃত গরুটা এভাবে পড়ে আছে জানি না, তবে ভিটার অন্যপাশেই আরেকটা গরু, শরীরময় বেশ বড় বড় চাকা-চাকা পোড়া ক্ষতস্থান নিয়েই এই তাণ্ডবের ভয়াবহতা আর বীভৎসতার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আহা রে, অবলা জীব, অবলা জীবন!! মানুষগুলো নাহয় প্রাণের মায়ায় এ-বাড়ি, ও-বাড়ি পালাতে পেরেছে, কিন্তু গরুগুলো? রশি দিয়ে বাঁধা থাকায় একযোগে ছটফট করেছে মৃত্যুযন্ত্রণায়!! শুনলাম, জামাত-শিবিরের এই তাণ্ডব চলাকালেই জ্যান্ত পুড়ে গেছে আরো ২টা গরু।
গ্রামেরই একজন পাশ থেকে চাপাস্বরে জানতে চাইলেন, ‘দিদি আপনারা কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছেন?’ আমি তাকে সবিনয়ে আশ্বস্ত করলাম, ‘ভাই, কোন সংগঠন না! আমরা কজন বন্ধুবান্ধব মিলে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যেগে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি...’ এরপর আমিও তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের গ্রামে এ পর্যন্ত কিরকম সাহায্য পেয়েছেন?’ তিনি বিষণ্ণকণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘না, দিদি সহযোগিতা তো দূরে থাক, সরকার বলেন, বিরোধীদল বলেন - এরা যে কিরকম মানবেতর জীবনযাপন করছে সেটা দেখতে পর্যন্ত আসেন নি!’ এ শুনে কথা আমি প্রায় মুখ ফসকে বলে ফেললাম, ‘বলেন কি! প্রায় ১ সপ্তাহ হতে চললো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার – এরা আসেই নাই?’ তিনি জানালেন, ‘হ্যাঁ এসেছিলেন, তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি নিজের উদ্যোগে কিছু দিয়ে গেছেন। – এই ছিল গত ৮ মার্চ ২০১৩, শুক্রবারের চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলার জলদি গ্রামের ধোপাপাড়ার চিত্র।
নিতান্ত গরীব বললেও ভুল বলা হবে। সংসারের আয়-উন্নতি বাড়াতে জীবিকার তাগিদে এখানে বাড়ির নারী-পুরুষ সবাইকেই সমানভাবে পরিস্রম করে যেতে হয়। এ গ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ছয়টা। কিন্তু গ্রামের আনাচে কানাচে আরও ৪/৫টা পরিবার, ৫/৬টা দোকানঘর এমনকি উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনের অংশজুড়ে হামলার শিকার হয়ে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বিভিন্ন মূল্যবান দাপ্তরিক কাগজপত্র, আসবাব, এমনকি অফিসের জন্য ব্যবহৃত গাড়িটি পর্যন্ত। উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ কিভাবে জামাত-শিবিরের তোপের মুখে পড়লো বুঝে উঠতে পারলাম না! তবে ভাইস চেয়ারম্যান বললেন অন্য কথা। তার কাছেই জানতে পারলাম, তিনি আওয়ামী লীগ করেন বলেই জামাত-শিবিরের দল তার অফিসঘরটি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত করে দিয়ে গেছে। আর অন্যদিকে বিএনপি করে বলে বেঁচে গেছে উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান! তার অফিসে নাকি অগ্নিসংযোগ ঘটে নি!...এই যদি হয় অবস্থা তাহলে তো সরকার এসব উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দলের কাছে রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে!! আর সরকারের সাথে সাথে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়লো দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও! আর কত লাঞ্ছনা আছে তাদের কপালে কে জানে?? আর কতজন হারাবেন প্রিয় স্বজনটিকে?
মনে আছে, সেই ১৪ বছরের পূর্ণিমার কথা? সিরাজগঞ্জের উল্ল্যা পাড়ায় ২০০১ সালে সরকারে এসেই শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে ভোট দেবার অপরাধে বিএনপি’র ২০/২৫ জন ক্যাডার পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করতে গেলে পূর্ণিমার মা সবার হাতে-পায়ে ধরে অনুনয়-বিনয় করেছিলো, ঘরে এই কিশোরী মেয়েটির কাছে যেন একজন একজন করে যায়!! এর ঠিক পরপরই, ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এই ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছিলো ভিটেবাড়ি দখল এবং সেইসাথে সবকিছু লিখে দেবার হুমকিতেও কর্ণপাত না করায় আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল শীল পরিবারের ১১ জন সদস্যকে। এমনকি এর কিছুদিন আগে চরিত্রহীনতার কলঙ্ক লেপন করে শুধুমাত্র ভূমি দখলের উদ্দ্যেশে, ভিটে বাড়ি আত্মসাতের জন্যে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল মা, বোনসহ একই পরিবারের ৩ সদস্যকে। আর চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির কথা তো কমবেশি সবাই-ই জানেন। জামাত-শিবিরের পাশবিকতা কত নির্মম হতে পারে, তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি! নিজ বাসভবনে সোফাতে বসে থাকা অবস্থাতেই শিবিরের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি! গুলির আঘাতে তাঁর মাথা থেকে ঘিলু বেরিয়ে যাবার বীভৎস ছবির দৃশ্য পরের দিনের অনেক পত্রিকাওয়ালারাও ছাপতে চান নি! বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাঁশখালি, সাতকানিয়া, হাটহাজারির সাথে সাথে এখন নতুনভাবে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে রামু, উখিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ জনপদগুলোও। আর পাহাড়ে তো হরহামেশাই সামান্য ঘটনায় সংখ্যালঘু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর নেমে আসে সেনাবাহিনী আর স্থানীয় সেটেলার বাঙালিদের অকস্মাৎ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা! এ তো গেল শুধু চট্টগ্রামের ঘটনা। সারাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা এরচেয়েও করুণ, এর চেয়েও ভয়াবহ!! সরকার যায়, সরকার আসে। কিন্তু ফান্দে পড়িয়া সেই অসহায় বগার মতই হাঁসফাঁস করে করে মানসম্ভ্রম, ভিটেমাটি, লাজলজ্জা সব, সবকিছু হারাতেই যেন প্রস্তুত হয়েই থাকে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নতুন সরকার, পুরনো সরকার, মধ্য মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সবাই যেন সেই লঙ্কার আসুরিক শক্তির রাবণ!! ক্ষমতায় এসেই যে লিপ্ত হবে, হবেই সারাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অবর্ণনীয়, অকথ্য অত্যাচারে। সংখ্যালঘুরা কি তাই এদের পাশবিকতা মেনেই নিয়েছে? কারণ তাদেরকে হত্যার পর তো কোন ফাঁসি নেই, যাবৎজীবন কারাদণ্ড ভোগের সুযোগ নেই, অগ্নিকাণ্ডে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেললে এদেশে বলার কেউ নেই, জনসমক্ষে চাপাতির আঘাতে জর্জরিত করলেও এগিয়ে আসার কেউ নেই, সম্পত্তি গ্রহণে বাঁধা নেই, কোন ন্যায়বিচার নেই, ধর্ষণ কিংবা গণ ধর্ষণে কোন বাঁধা তো দূরের কথা! মুহূর্তেই এ ধরনের ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে ঘটনার মোড়ও সহজেই ফেরানো যায় অন্যদিকে!
তবে এ পর্যন্ত যাদের কথা এখানে না বললেই নয়, ডাঃ নাজমুন, সুজয়, সুমন ভাই, উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব, তমাল ভাই ও তার অফিসের কলিগরা এবং জলদী গ্রামবাসী আমাদেরকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার সহযোগিতা করেছেন কিম্বা এরচেয়েও বেশি করেছেন।
সাধ্যমত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার গ্রামবাসীদের মধ্যে জনপ্রতি শাড়ি-লুঙ্গি–টিশার্ট আর সামান্য কিছু হাতখরচের টাকা তুলে দিয়ে আমরা আমাদের যৎকিঞ্চিত ত্রাণসামগ্রী নিয়েই আবারো যাত্রা শুরু করলাম নোয়াখালীর রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলামপুর ও আলাদিনগর গ্রামের উদ্যেশ্যে...
যাবার সময় উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব এরপর বাঁশখালিতে গেলে অবারিত সমুদ্র, গেস্ট হাউজ আর বাঁশখালির সবচেয়ে অনিন্দ্য নিদর্শন প্রাণীদের অভয়ারণ্য দেখাতে নিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। এ কথা শুনেই যেন মাথাটা ধরে গেল। হায়, বন্য প্রাণীদের জন্যেও দেশে নিরাপদ অভয়ারণ্য আছে, আর মানুষ সেখানে সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র সংখ্যালঘু বলে কতটা অনিরাপদ, কতটা বিপন্ন! সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!!...
মন্তব্য
আমি আজকাল অনেক 'নিরপেক্ষ'(!) মানুষ দেখি চারপাশে। এরা যুক্তির পসরা সাজান। এরা সত্য আর মিথ্যার মাঝেও নিরপেক্ষ অবস্থান খোঁজেন। আমি এই ইস্যুতে সেরকম একজন 'নিরপেক্ষ' লোকের বক্তব্য শুনতে চাই। আপনার বাবাকে ওই পুকুরে ঝাঁপ দেয়া বৃদ্ধের জায়গায় বসান, যিনি আপনার বোনকে তার শ্বশুরবাড়িতে দেখতে গিয়েছিলেন।
যারা ওইসব নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে আমার কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু যারা নিরপেক্ষতার নামে ওই জানোয়ারদের কর্মসূচীতে হাততালি সহকারে সমর্থন দেন তাদেরকে বলি, আপনাদেরকে কুত্তার বাচ্চা বললে কুত্তাও অপমানবোধ করবে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিপন্ন মানবতা, বিপন্ন জনগোষ্ঠী, বিপন্ন আমরা সবাইঃ
চারিদিকে অন্ধকার গভীর অন্ধকার।শুধু মাত্র একটি মোম বাতির আলো।"শাহাবাগের আলো", মিট মিট করে জ্বলছে অনেক দূরে। পারবে কি বাংলাদেশ ঘুরে দাড়াতে ? পারতেই যে হবে !
লেখকের নাম কোথায়?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
লেখিকার নাম সেঁজুতি বড়ুয়া।
Extremism একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা । এই ভারতীয় উপমহাদেশে বর্তমানে এর একমাত্র উৎস হল পাক আফগানেরা ।
বাংলা অঞ্চলটা এদের কারনে এই সমস্যার আরও অতলে চলে যাচ্ছে ।
লজ্জা লাগে। অসহায় লাগে। কি যে করি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। এক বিপন্ন সময়ের বেড়াজালে আটকে আছে দেশটা। ভবিষ্যৎ যাকে বলে কালিগোলা অন্ধকারে ঢাকা। কিছুই বলার নেই।
সামি
আপনাদের হাতে ধরি, পায়ে পড়ি। সংখ্যালঘু শব্দটি শুনতে ঘেন্না লাগে। যেমন শুনতে ঘৃণা লাগে মালাউন, ড্যাঁডা, ডান্ডি, মঘা, চাম্মোয়া, কাউলা ইত্যাদি শব্দগুলো। তারচেয়ে ভাল হয় যদি বলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ, চাকমা বা মারমা। বোধ হওয়ার পর থেকেই শুনছি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সংখ্যালঘু, নিপীড়িত। এই দেশে আমার বিশ পুরুষের জন্ম-মৃত্যু। শালার অমানুষের দল, বেজন্মার দল আমাকে বলে কিনা আমি এখানের কেউ না।
অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।
'সংখ্যালঘু' শব্দটা একটা সুশীল শব্দ। এটা বলে ঢেকে রাখা যায় সম্প্রদায়টির আসল পরিচয়। তারা যে গোটা জনগোষ্ঠীর অচ্ছেদ্য অংশ সেটা কায়দা করে অস্বীকার করা যায়। তাদের ধর্মীয় পরিচয়টি উল্লেখ না করে কিছুটা ধোঁয়াশাও তৈরি করা যায়। 'মাইনরিটি রাইট' নিয়ে এটা সেটা আয়োজন করে পকেট ভারি করা যায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধর্মের নামে ব্যবসার অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে এতিম খানা নামক স্থান, যেখানে আপনার আমার বিশ্বাসের টাকায় আপনাকে এবং আমাকে মারার জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হয়। তারা একটু ও চিন্তা করে না তাদের মানুষের মত মানুষ হওয়ার জন্য সহায়তা করে, কিন্তু এতিম খানা পরিচালনাকারীদের চিন্তা চেতনা হচ্ছে বিনা পয়সায় ব্যবসা ও ভন্ডামি। এরা এতিমদের শিক্ষা দেয় মানুষকে হত্যা করার জন্য । এরা ভাল কিছু শিখায় না। আমি এরকম কয়েকজন ছাত্রের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছে হুজুর আমাকে যা আদেশ করে আমি তাই করি এ ক্ষেত্রে ভাংচুর,লুটপাট ও হত্যা করার মতো জঘন্য কাজ করতে ও দ্বিধা করি না।
নতুন মন্তব্য করুন