কসাই পাখির ভোজন পর্ব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৬/০৩/২০১৩ - ১:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বাংলাদেশে থাকে অথচ কসাই পাখি দেখে নি এমন লোকের সংখ্যা হাতে গোনা হবে। সমস্যা একটাই পাখিটা খুবই সহজলভ্য কিন্তু নামটা একটু অপরিচিত। তাছারা ‘কসাই পাখি’ নামটা প্রমিত বাংলা, একেক এলাকাতে একেক নামে ডাকে, কেউ বলে ল্যাঞ্জা লাটোরা, কেউ লাটোরা আবার কেউ বা বলে বাঘটিকি। দেখতে খুব কিউট হলেও নামটাই বলে দেয় এরা দেখতে সুন্দর কিন্তু স্বভাবে বান্দরটাইপ একটা পাখি।

কসাই পাখি ছোট্ট একটা শিকারী পাখি। ছোট পোকা মাকড়, গিরগিটি, টিকটিকি এগুলো ঝোপঝার থেকে ধরে কপাত করে খেয়ে ফেলে। একটা ওয়েবসাইটে দেখেছিলাম এরা নাকি নদী থেকে মাছ পর্যন্ত ধরে খায়। দক্ষিন ভারতে কোন এক ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার একটা কসাই পাখির ছবি তুলেছিল জ্যান্ত সাপ খুচিয়ে মেরে খেয়ে ফেলছে। তাই এর আচার ব্যাবহারের বিস্তর বর্ণনা শুনে বোঝাই যায় যে কসাই পাখি দেখতে যতোই সুন্দর হোক না কেন স্বভাব চরিত্র ভয়াবহ নিষ্ঠুর। একবার পদ্মা রিসোর্টে একটা কসাই পাখিকে দেখেছিলাম একটা টিকটিকিকে ধারালো ঠোট দিয়ে আক্ষরিক অর্থে জ্যান্ত ছিড়ে খেয়ে ফেলছে। জিনিসটা দেখে পর পর দুদিন ভাত খেতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। এদের ইংরেজী নাম লং টেইলড শ্রাইক। দক্ষিন এশিয়ার প্রায় সবখানেই এরা দেখা যায়। এমনকি খোদ ঢাকা শহরেও বিস্তর কসাই পাখি মেলে একটু চোখ কান খোলা রাখলেই।

গত মাসে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি গিয়েছিলাম ক্যামেরা নিয়ে। বিস্তর বেলে হাঁস (লেসার হুইসেল ডাক) এসেছে। গিয়ে দেখি শুধু বেলে হাঁসই নয়, শয়ে শয়ে শামুক খোল (এশিয়ান ওপেন বিল) পাখি। সন্ধ্যার সময় গাছগুলোতে এতগুলো শামুকখোল ভীর করছে যে বসার জায়গা নিয়েই মারামারি লেগে যায়। দুপুরে পিছের পুকুর ধারে একটা ভয়াবহ লাজুক শুভ্র ডাহুককে লেন্সের দুরুত্বে আনার যখন ব্যর্থ চেষ্টা করছি, তখন দেখলাম মাথার উপরে ইলেক্ট্রিকের খাম্বার উপরে আমাদের ছেলেমানুষি কার্যকলাপ বিরক্তির সাথে দেখছে একটা কসাই। ভালো করে দেখে টের পেলাম তার ঠোটে জীবন্ত কিছু একটা ছটফট করছে। ক্যামেরা তাক করতেই ফুরুত। না পালিয়ে গেল না। অন্য পাখিদের মতো এরা মোটেই লাজুক না, মানুষের প্রতি ভাবভঙ্গিও ড্যামকেয়ার টাইপ। উড়ে এসে বরঞ্চ আরো কাছের একটা ঝোপের উপরে এসে বসলো। ভালোভাবেই দেখছি মুখের মধ্যে ধরা একটা ডাশা মাকড়শা। ঠোট আর দুপায়ের সাহায্যে ছিড়ে খুড়ে রাক্ষুসে ভোজন পর্ব শেষে কসাই পাখিটি সামনের একটা ডালে গিয়ে বসলো রোদ পোহাতে।


খাবারে ব্যাস্ত কসাই।




মাংস ছেড়া সহজ নয়


আর সামান্যই বাকি।

খাওয়া শেষ, এক সময় সূর্যস্নানের।

সদস্যনাম: সৌম্য
ইমেইল-


মন্তব্য

অগ্নির এর ছবি

অভিনন্দন । ছবি খুব ভালো হয়েছে । লেখা আরও একটু বেশী থাকলে ভাল হত হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কস্কি মমিন!

স্যাম এর ছবি

সহমত। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলবে হাসি

রংতুলি এর ছবি

আহ! আমার বাসায় এখন রোজ ঝাঁকে ঝাঁকে নাম-না-জানা পাখি আসে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পাখির ছবি আমার খুব প্রিয়, আরো প্রিয় ছবি দেখে নাম খুঁজে বার করার অভিজ্ঞতা। ছবি শেয়ার দিলে খুশি হবো। হাসি
সৌম্য

মেঘা এর ছবি

হাততালি চমৎকার পোষ্ট। খুব ভাল লেগেছে। আরো লিখুন।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ হাসি
সৌম্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সচলে স্বাগতম!

পরের পোস্ট থেকেঃ

১। ট্যাগের সংখ্যা কমাবেন।
২। সব ছবির ক্যাপশান তো দেবেনই সাথে নাম্বারিংও করবেন।
৩। যদি একটা পাখির ওপর পোস্ট দিতে চান তাহলে তার জীবন-স্বভাব-বাস ইত্যাদি সব কিছুই অল্প করে (অথবা বিস্তারিত ভাবে) বলুন। আর যদি একটা পাখির একটা বিশেষ গল্প বলতে চান তাহলে ঐ গল্পটাই বিস্তারিত ভাবে বলুন। এই পোস্টটা এই দুইটা ব্যাপারের মিশ্রণ হয়ে গেছে।

জাহাঙ্গীরনগরে শামুকখোল এসেছিল শুনে আফসোস হচ্ছে। অবিলম্বে শামুকখোলের ওপর ছবিব্লগের জোর দাবি জানিয়ে গেলাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাপস শর্মা এর ছবি
তাপস শর্মা এর ছবি

দুর্দান্তিস...

সচলে স্বাগতম। ক্যাম্রাবাজী জারি থাকুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ তাপস শর্মা! হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ষষ্ঠ পাণ্ডব,
ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্যে। তবে কি না, পাখি কিংবা ফটোগ্রাফি দুটোই আমার পুরোপুরি শখের বিষয়। জ্ঞান যতোটুকু পুরোটাই উইকিপিডিয়া কিংবা অল্প দু চারটে অর্নিথোলজির বইপত্র। এত অল্প নিয়ে লম্বা পোস্ট করা কঠিন। ভুল তথ্যের চেয়ে কম তথ্যই ভালো বলে বোধ করি।
জাহাঙ্গীর নগরে এবছর প্রচুর শামুকখোল এসছিলো। আমি সারাজীবনে যতো শামুকখোল দেখেছি, সেখানে একদিনেই তার চেয়ে বেশী দেখলাম। সময় সুযোগ মতো পোস্ট দেব। সঙ্গে এক আঁতেল মার্কা ছোট ভাই ছিল। সে বিভিন্ন আর্ট ফ্লিম আর গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি করে। শামুকখোলের প্রাচুর্য ছেড়ে ঘোষনা দিয়েছে, সব ছেড়ে বার্ডিং করে বেড়াবে। সে একটা ভিডিও করেছিলো আমার ক্যামেরায় একটা গাছে এত বেশী শামুকখোল এসে বসলো যে গাছের ডাল পালা দেখা যায় না। সামনে সুযোগ পেলে সেটা আপ দেবার ইচ্ছে রইলো।
সৌম্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ক্যাম্রাবাজির ডিটেইলস ঝানতে চাই।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্যামেরার ডিটেইলস। ক্যামেরা গিয়ার ছিলো ক্যানোন ৫৫০ডি, লেন্স ক্যানোন ৭০-৩০০ ইউএসএম। ছবি তোলাটা পুরোপুরি শখের, ঝাকানাকা টাইপ গিয়ার কেনা তাই সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আর ডিটেইলস বলতে যদি এক্সিফ ইনফো মিন করেন, তাইলে সমস্যায় পড়বো জানুয়ারী মাসের ১৮ তারিখে তোলা। মুলত ঢাকায় বার্ডিং করলে এপারেচার প্রায়োরিটিতে তুলি, কাজ করা সহজ হয়। আর বন জঙ্গলে গেলে অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা।

এটার শাটার ১/৩২০, এফ নাম্বার ১৪, আর আইএসও ৪০০ ছিলো।
সৌম্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ। না না এক্সিফ জানতে চাই নাই, ঠিকাছে হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

 সাম্পানওয়ালা এর ছবি

সেইরকম ফটোগ্রাফি ! চালিয়ে যান সাথে পান্ডব সাহেবের নির্দেশনা গুলো অনুসরন করুন তাতে লেখা আরো আকর্ষণীয় আর প্রাঞ্জল হবে। ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সাম্পানওয়ালা। নির্দেশনা গুলো মনে রাখার চেষ্টা করবো। তবে সমস্যা হলো লেখতে একদম ভাল্লাগেনা। আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে সচলে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। লিখতে ভাল্লাগেনা দেখে লেখা হয় না। মন খারাপ
সৌম্য

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক হাততালি
দারুন। আরও ছবি এবং লেখা আসুক।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে সাফিনা আরজু। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মনে হয় চোখে দেখি না ঠিকমতন। কসাই পাখি দেখিই নাই কখনো। মন খারাপ বেশ সুন্দর কিন্তু দেখতে। চোখ রাখা লাগবে আশে পাশে। গ্রামে থাইকাও যদি এই পাখি না দেখি তাইলে তো লজ্জার ব্যাপার। চলুক দা পোস্ট।

সামি

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে পাখি দেখার জন্যে হয়তো আমরা পাখি দেখিনা, পাখি হঠাত চোখে পড়ে, না চিনলে আমরা গুরুত্ব দেইনা। আজ সকালে অফিস যাবার সময় ভুতের গলির কসাইএর দোকানের উপরে দেখি একটা বসন্তবৌরি বসে আছে। রমনা পার্ক হলেও মানাতো, ভুতের গলিতে চিপা রাস্তায় মানুষের হাটারই জায়গা নেই সেখানে দিব্যি একটা লাল গলা বসন্ত বৌরি নাচানাচি করছে। আমি রিক্সা থামিয়ে দেখছিলাম, খেয়াল করলাম কেউ লক্ষ্যই করলো না এখানে একটা ছোট পাখি বসে আছে।
গ্রামে থাকেন আপনি অনেক লাকি। এবার থেকে নজর রাইখেন। পাখি পেলে কিছুক্ষন সেটাকে অবজার্ভ করলে অনেক মজার মজার আচরন চোখে পড়বে।

সৌম্য

কৌস্তুভ এর ছবি

ভালো। আরেকটু বড় লেখা হলে, ধরেন পাখিটার বৈজ্ঞানিক নামটাম যদি দিতেন, তাহলে ভাল হত। আর ছবিগুলোও আরেকটু বড় দিলে মন্দ হত না।

অতিথি লেখক এর ছবি

পাখি সম্পর্কে আমার জ্ঞান অল্প কিছু বই পড়া পর্যন্তই। তাই বেশী লিখতে গেলে ভুল হবার চান্স বেশী থাকে। সে যাই হোক। এটার বৈজ্ঞানিক নাম Lanius schach, ইংলিশ নাম -Long-tailed Shrike অথবা Rufous-backed Shrike। সারাবছরই দেশে থাকে।
এদের অন্যান্য খালাতো মামাতো ভাই বোনেরা যেমন গ্রে ব্যাক শ্রাইক, ব্রাউন শ্রাইক শীতের দিনে নেপাল ভুটান থেকে এদেশে আসে, ব্ল্যাক হেডেড কাক্কু শ্রাইক (বাংলা নাম বড় কাবাশি) আবার শীতে নয় গরমের দিনে বাংলাদেশে আসে। কমন উড শ্রাইক (ছোট দুক্কা) আর বার উইং ফ্লাইক্যাচার শ্রাইক (বাংলা নাম জানি না) সারাবছরই দেশে থাকে। কিন্তু সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা সিলেটের বন গুলোতে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকে। আমি মাস খানেক আগে একটা ফ্লাইক্যাচার শ্রাইক পেয়েছিলাম সাতছড়িতে। কিন্তু ছবিটা অতি জঘন্য আসছিলো ফোকাস হয় নাই। দ্বিতীয়বার শাটার চাপার আগেই সে ফুরুত।

বাদামী পিঠ কসাই, গত নভেম্বরে ঢাকার মীরপুর থেকে তোলা।

এটাও আগের ছবির মতো গত নভেম্বরে তোলা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর থেকে।

Bar-winged Flycatcher-shrike (বাংলা নাম জানি না।) গত মাসে সাতছড়ি রিজার্ভ ফরেস্টে।

সৌম্য

তারেক অণু এর ছবি

এই পাখির গিরগিটি শিকারের পর কাঁটায় সেই দেহ বিধিয়ে ঠুকরে ঠুকরে খাবার দৃশ্য জটিল, শুনেছিলাম সেখান থেকে কসাই পাখি নাম এসেছে, তেমন ছবি পেয়ে যাবেন আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

কসাই পাখির টিকটিকি শিকারের দৃশ্য দেখেছিলাম বার কয়েক। মাস খানেক আগে ভারতের উত্তর দিনাজপুরে একদিন সকাল বেলা দেখি একটা ব্রাউন শ্রাইক (এরা মাইগ্রেটরি) একটা টিকটিকিকে ধরে সাইজ করতেছে। সঙ্গে ক্যামেরা ছিলো না, দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরা এনে দেখি শুধু লেজটা অবশিষ্ট, তিরিং বিরিং করে লাফাচ্ছে। এই কসাই অর্থাৎ লং টেইল শ্রাইকের একবার টিকটিকি ভক্ষন দেখেছিলাম আমাদের ভ্রমণ বাংলাদেশের একটা ইভেন্টে পদ্মা রিসোর্টের পিছের জঙ্গলে। ভয়াবহ জিনিস।
সৌম্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।