ঘটনাটা ঘটে ১৯৬২ সালে তানজানিয়ায় । শুরুটা একেবারেই নির্দোষ এক কৌতুক দিয়ে । ছাত্রী হোষ্টেলে এক ছাত্রী তার রুমমেটকে এক কৌতুক শোনায় । Jokes এর শুরু, পাত্রপাত্রী, পরিবেশনা যাই হোক- punch লাইনে গিয়ে হাসির একটা ব্যাপার থাকবে সেটাই স্বাভাবিক । কিন্ত এ কৌতুক জন্ম দিল অন্য আরেক কৌতুকের । যে শ্রোতা সেতো হাসলোই, অদ্ভূত ভাবে লক্ষ্য করা গেল দূরের একজন যে কিছু শোনেনি সেও বেঘোরে হাসতে লাগলো । এ দেখে হাসি শুরু করলো পার্শ্ববর্তী আরেকজন । তারপর অন্য রুমে, তারপর অন্য তলায় শুরু হল হাহা...হিহি ।
পরদিন ক্লাশটাইমে দেখা গেল কিসের কি পড়াশুনা- ক্লাশে সবাই হাসছে আর হাসছে । ছাত্রছাত্রীদের হাসি দেখে শিক্ষকদেরও হাসির বাধ আর বাধা মানলো না । সারা স্কুল জুড়ে তখন হাসির মচ্ছব । Student হাসছে, Teacher হাসছে, কর্মচারী দারোয়ান হাসছে, পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া পথিকও হাসছে- এ এক নারকীয় হাসাহাসি । কিন্ত কেউ জানেনা কেন তারা হাসছে, তারা কিসের ভিকটিম । হতভম্ব কর্তৃপক্ষ উপায়ন্তর না দেখে স্কুল বন্ধ ঘোষনা করলো ।
তার পরদিন সে হাসির বিস্তার ঘটে পাশের লোকালয়ে । দুদিন পর শোনা গেলো বিশ মাইল দূরের এক গ্রামে সবাই কাজকর্ম ফেলে অঝোর ধারায় শুধু হাসছে । তারও একদিন পর ৫৫ মাইল দূরবর্তী গ্রাম থেকে খবর এল- ওখানে নাওয়া খাওয়া কাজকর্ম সব বন্ধ । গ্রামের সবাই হাসিতে লুটুপুটি ।
তারপর দেখা গেল যে বিদ্যালয়টি থেকে এ হাসাহাসির অন্কুরোধগম হয়েছিল- সেখানে 'হাসি' ব্যাপারটা অতীত হয়ে গেছে- সবাই দিয়েছে মন নিজ নিজ পাঠে । কিন্ত দূর থেকে দূরান্ত এলাকায় হাসাহাসির সংক্রমন চলতেই থাকলো । এ দলবেধে হাসাহাসি জনজীবনকে একরকম পর্যূদস্ত করে দিলো । কেউ কিন্ত অভিনয় করছেনা, ভানও করছেনা । তবু আহার নিদ্রা ভুলে সবাই বিরামহীন হেসেই যাচ্ছে । হাসির ফাঁকে কেউ কেউ আবার সামান্য কেঁদে নিচ্ছে । তারপর নতুন উদ্যমে শুরু করছে উম্মাতাল হাসি ।
এটি একটি মনো:সামাজিক ব্যাধি- যা পরিচিত Mass Psychogenic Illness বা Mass Hysteria নামে । মিডিয়া বা গুজব এখানে প্রভাবক (catalyst) এর ভূমিকা পালন করে । এমন উদাহরনও আছে যে বিরাট এলাকা জুড়ে একে অপরকে কামড়িয়ে চলেছে (Biting Mania), অথবা শহরের পর শহর রাস্তায় নেমে নারী-পুরুষ নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে (Dancing Mania) । এমন ব্যাপক মাত্রায় না ঘটলেও- আমাদের ধারনার অতীত মাত্রাতেই এটি ঘটে চলছে আমাদের সমাজে । ঢোল কলমীর কথা কারো মনে থাকলেও থাকতে পারে ।
একটু সচেতন না হলে অদ্ভূতুড়ে এ ব্যাধিটি আমাদের মন ও সমাজকে নিয়ন্ত্রন করে যেতে থাকবে । এ মূহুর্তে যেমন ভিটামিন-এ আমাদের খাবি খাওয়াচ্ছে ।
মন্তব্য
১৯৬২ সালের ঘটনাটা কি সত্যি নাকি ভাই?
জি সত্যি। এই যে দেখুন- http://en.wikipedia.org/wiki/Tanganyika_laughter_epidemic
ক্যাটেগরী চিকিৎসা বিজ্ঞান কেন?
..................................................................
#Banshibir.
ঘটনাটা মানসিক ব্যাধির অংশ, এবং শুধু তা দিয়েই এ ব্যাখ্যাতীত ব্যাপারটি ব্যাখ্য করা যায় । চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত Psychiatrist রা এ নিয়ে পড়াশুনা করেন ।
লেখাটা শুরু হল নারকীয় হাসাহাসির গপ্পো দিয়ে. তারপরে শুনাইলেন নারকীয় নাচানাচি আর কামড়াকামড়ির গল্প. সবশেষে এক লাইন যে সচেতন না হলে ভিটামিন এ নিয়ে আমাদের এরম সামাজিক মনোব্যাধি হতে পারে. কোথায় কিভাবে কেন কিছুই বুঝা গেলনা.
ক্যাটেগরী রম্য হওয়া দরকার ছিল.
..................................................................
#Banshibir.
আরো কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে পড়েন । বুঝতে পারবেন । আর এটি কিন্তু গপ্পো না । ইতিহাসের অংশ । উপরে একটি লিঙ্ক আছে এ নিয়ে ।
ব্লগও যদি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে তারপর বুঝতে হয় তাইলে কিন্তু সমস্যা। সহজবোধ্য টেক্সট না পেলে লোকে এই বিষয়ে ব্লগে পড়তে আসবে কেন, বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল খুলে বসলেই পারে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কতবার মন দিয়ে পড়লে ভিটামিন এ এর সাথে নারকীয় হাসাহাসির কানেকশন বুঝা যাবে?
ইতিহাস গপ্পের মতন আসতেই পারে তবে এর সাথে আচমকা ভিটামিন এ জুড়ে দিয়ে চম্পট দিলে মুশকিল।
..................................................................
#Banshibir.
লিখেছে কে? নাম কই?
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
লিখেছি আমি আমিনুল ইসলাম । অতিথি লেখক তাই নাম আসেনি ।
নাম লেখার নীচে লিখে দিলেই চলেই আসবে -
আপনার নামটা পরিচিত লাগছে - জামাত নিষিদ্ধের উপরে একটি লেখায় আপনার কাছাকাছি নামের বা আপনার নামের একজনের মন্তব্য বেশ আপত্তিজনক ছিল - এখন অবশ্য দেখতে পাচ্ছিনা!
না ভাই । আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে মনে হয় । আমি ঐ লেখাটি পড়িনি বা কমেন্ট করিনি । অভিযোগের তীর উঠানোর আগে আরেকটু যাচাইবাছাই, দায়িত্বশীলতা কাম্য নয় কি ?
----------------------------------
' আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি '
লেখাটা শুরু হয়ে ঘ্যাঁচ করে শেষ হয়ে গেল, শিরোনামের মূল প্রসঙ্গে প্রায় এলই না বলতে গেলে। লেখকের নামও নেই। এই লেখাটা ঠিক যুতমত হল না গো মডুরা।
আমিও তো তাই কই। লেখা তো সচলের মত হলো না মডুরা
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
'নিন্দুকেরে ভাসি আমি সবার চেয়ে ভালো ।'
এসো জানালার বাইরে চোখ রাখি- শুনি পাতা ঝরার আওয়াজ । অন্ধকে পথ চিনিয়ে দিন- লেখককে না ।
====================
' আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি '
বানান ভুলের জন্য দুঃখিত । 'ভাসি' র স্হলে 'বাসি' পড়তে হবে ।
অর্থ্যাৎ 'নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো ।'
হুম, ঢোল কলমীর কথা এখনও মনে আছে।
============================
কত আর রবে দেশ রাহু গ্রাস কবলে?
সমূলে উপড়ে ফেলি দূর্নীতি সবলে।
ঢোল কলমী - 'সে কি ভোলা যায় ?'
======================
' আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি '
অ্যানেকডোট হিসাবে ঠিক আছে। কিন্তু 'বিজ্ঞান' বিষয়ক যেকোন লেখায় কোন কিছু "কেন" ঘটে সেটা জানার আগ্রহ থাকে। মাস হিস্টিরিয়া কেন হয় এটা জানতে পারলে ভালো হত। এত ছোট কলেবরে লিখেছেন বলেই হয়ত অনেকেই একে চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্যাটাগরির লেখা মানতে পারছেন না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত । ঘটনাগুলির উৎস স্হল যে মানুষের মন এ নিয়ে বিজ্ঞান নিশ্চিত । তবে এ ধোঁয়াশার কার্যকারনিক বোঝাপড়ার এখনো অনেকটা বাকী । অন্তত: এ সবের পিছনে কোন ডাইনী-প্রেত পিশাচের হাত নেই- বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা তাতে নিশ্চিত ।
==================
' আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি '
মানুষের মনের mystery নিয়ে ছোট্ট আরেকটা ঘটনার কথা বলি ।
চিলের কান নেয়ার virtual গল্প নিয়ে আমরা কতইনা হাসি, প্রসঙ্গক্রমে উদাহরন টানি । অথচ এর চেয়ে চৌকষ বাস্তব গল্প নিকট অতীতেই আছে । ২০০২ সালে নাইজেরিয়ায় একদল পুরুষ তাদের স্ত্রীগন সমেত এক মহিলাকে এই বলে ধাওয়া করে যে ঐ ডাইনীটা পুরুষ-পুঙ্গবদের পুরুষাঙ্গ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে । অল্পের জন্য নিরীহ মহিলাটি জানে রক্ষা পায় ।
পরে উর্দির নীচে তদন্ত করে দেখা গেল- শিশ্ন যেখানে ছিল আগে, সেখানটাতেই আছে ।
আপনার বর্নিত গণ হিষ্টেরিয়ার গল্পের সাথে সাম্প্রতিক ভিটামিন কান্ডের একটা সম্পর্ক যে আছে তা যদিও সঠিক, কিন্তু কিভাবে সম্পর্ক আছে সে বিষয়টি তেমনভাবে উপস্থাপিত না হওয়ার কারনে এক ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভিটামিন-এ সংক্রান্ত প্রচারনা-গুজব, তার গণপ্রতিক্রিয়া, এসবই হওয়া উচিৎ ছিল লেখাটির প্রধান উপজীব্য, কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো সে বিষয়ে কিছুই নেই।
আব্দুল্লাহ এ.এম.
নতুন মন্তব্য করুন