হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে কয়েকজন বক্তার বক্তৃতা'র কয়েকটি চুম্বক অংশ

হেফাজতে'র ১৩ দাবী পড়ে চরম বিনোদিত হয়েছিলাম এবং তাদের বক্তৃতা শুনে সেই বিনোদনের ষোলকলা পূর্ণ হল।

একজন বক্তা বললেন - আল্লাহ'র হুকুম ছাড়া কোন কিছুই চলবে না, ঠিক এর পরের বাক্যে বললেন আমাদের হুজুর যে আদেশ দিবেন সে হুকুম আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। দেখুন কথাটা কতটুকু স্ববিরোধী।

একজন বক্তা বললেন - আমাদের এই আন্দোলনের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নাই - পরে আরেকজন বক্তা বললেন আমাদের এই আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের সব ইসলামিক রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত হয়েছে। এখন বলেন আমরা কার কথা সত্য বলে ধরে নিব?

একজন বক্তা বললেন - আগামী ইলেকশনে তৌহিদী জনতা এর সঠিক জবাব দিবে ইনশাআল্লাহ। এখন প্রশ্ন হল এই আন্দোলনের সাথে আগামী ইলেকশনে সম্পর্ক কি এবং কোথায়?

একজন বক্তা বললেন - উলামা কেরাম যেদিকে যাবে সেদিকে সরকার গঠিত হবে। এখন প্রশ্ন হল এই আন্দোলনের সাথে সরকার গঠনের সম্পর্ক কি এবং কোথায়? এই আন্দোলন ছিল নাস্তিক বিরুধী আন্দোলন! তাহলে ধর্ম পরিক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঢুকলো কেমনে?

একজন বক্তা বললেন - এই দেশে ইনশাআল্লাহ ইসলামী হুকুমত কায়েম হবেই হবে। এখন প্রশ্ন হল এই আন্দোলনের সাথে ইসলামী হুকুমত কায়েম করার কি সম্পর্ক এবং কোথায়? তাহলে কি ইসলামী হুকুমত কায়েম করার জন্য এই আন্দোলন?

একজন বক্তা বললেন - শাহবাগ মঞ্চ থেকে নাস্তিক মুরতাদ কাদিয়ানীরা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষেদগার করেছে। এখন প্রশ্ন হল শাহবাগ মঞ্চ থেকে কবে কে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষেদগার করেছে? তার পরে সেই বক্তা বললেন প্রধান মন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবেন যে আজকে সন্ধ্যার পূর্বে গন জাগরন মঞ্চ কে ভেঙে দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হল শাহবাগ মঞ্চ ভাঙ্গার সাথে এই আন্দোলনের সম্পর্ক কি? তাহলে কি শাহবাগ মঞ্চ ভাঙ্গার জন্য এই আন্দোলন?

একজন বক্তা বললেন - আন্দোলন ততদিন চলবে যতদিন না কোরআনের রাজ কায়েম না হবে, উলামাদের রাজ কায়েম না হবে। এখন প্রশ্ন হল কোরআনের রাজ কায়েম আর উলামাদের রাজ কায়েমের এই আন্দোলনের সম্পর্ক কি? তাহলে কি কোরআনের রাজ কায়েম আর উলামাদের রাজ কায়েমের জন্য এই আন্দোলন?

একজন বক্তা বললেন - এইটা নাস্তিক সরকার। নাস্তিক সরকার নাকি শাহবাগে ব্লগাদের দারা ইসলাম এবং নবীর বিরুদ্ধে কুটিক্তি করাচ্ছে। এই বক্তব্য শুনে হাসুম না কানমু সেটা বুঝতেছি না !

একজন বক্তা বললেন - শাহবাগের মাধ্যমে নাকি বাংলাদেশে বাতিল আসছে এবং সে বাতিল নিশ্চিহৃ করার জন্য নাকি আল্লাহ তায়ালা আল্লামা শফিকে পাঠাইয়াছেন। এসব বক্তব্য শুনার পর কি উত্তর দিতে হয় সেটা জানা নাই, কবি এখানে নীরব থাকা ছাড়া উপায় নাই!

একজন বক্তা উর্দুতে বক্তব্য দিতে শুনলাম। আরেকজন বক্তা বললেন উনাদের শরীরে মাদানির রক্ত বইছে। এসব বক্তব্য শুনে মনে হল সমাবেশ বাংলাদেশে হচ্ছেনা - আফগানিস্হান বা পাকিস্হান হচ্ছে।

নোট - শুনছিলাম এই আন্দোলন নাকি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, যারা ইসলাম এবং আমাদের নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কুটুক্তি করেছে তাদের শাস্তির দাবিতে। কিন্তু বক্তাদের বক্তব্যে সেরকম কিছুই খুঁজে পাইলাম না এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল যে এই আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেটা উনাদের বক্তব্যে খুব ক্লিয়ারলি ফুটে উঠল। সবশেষে তাদের বক্তব্য থেকে বোঝলাম - হুজুর বলেছেন তোমরা আন্দোলন কর, তাই তারা এই আন্দোলন করছে এবং কেন এই আন্দোলন সে ব্যাপারে তারা সবাই কনফিউসড। বক্তব্য শুনতে চাইলে নিচে লিংক দেয়া আছে!

https://www.facebook.com/photo.php?v=10152709437555099

---------------------------
মাসুম আহমদ