(দৃশ্য ১) ১৯৭১ সালের নভেম্বরেরে প্রথম সপ্তাহ, অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে লুঙ্গি পরিহিত এক মৌলভি রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আনমনে। হালকা হিমেল হাওয়ায় উড়ছে তাঁর এক মুঠো কাঁচাপাকা দাঁড়ি। ন্যাড়া মাথায় তাঁর ধবধবে সাদা মৌলভি টুপি। দুদিন পরেই হাওয়ায় যেন মিলিয়ে যান সুঠাম দেহের সেই মৌলভি সাহেব।
(দৃশ্য ২) ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তড়িঘড়ি করে আয়োজন করা হচ্ছে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। হাতে বেশী সময় নেই, সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। একটি মিলিটারি জীপ এসে থামল অনুষ্ঠানস্থলে, কিংবদন্তির ক্র্যাক প্লাটুন কমান্ডার মেজর হায়দার জীপ থেকে নেমে বুক ফুলিয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করলেন আত্মসমর্পণের টেবিলের দিকে। জীপে পাশে বসে থাকা পুরোদুস্তর সামরিক ইউনিফর্ম পরা ভারতীয় অফিসারকে নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মাঝে শুরু হল ফিসফাস, কে উনি? নভেম্বরের সেই মৌলভি সাহেবের ন্যাড়া মাথায় নেই আজ সাদা টুপি, একটু পরেই আসল পরিচয়টা প্রকাশ পেয়ে গেল সবার মাঝে। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শাহ্বেগ সিং, মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের ডেল্টা সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয় মাস যুদ্ধকালীন গেরিলা যুদ্ধের মস্তিষ্ক।
১৯৭১ সালের ১৫ই মে ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনীর সহায়তাকল্পে বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত অঞ্চল ঘিরে ৬টি লজিস্টিকাল সেক্টর প্রতিষ্ঠা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬জন দক্ষ বিগ্রেডিয়ার জেনারেলকে দেয়া হয় একটি করে সেক্টরের কমান্ড। আগরতলায় অবস্থিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেল্টা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে বিগ্রেডিয়ার শাহ্বেগ সিংকে বেছে নেন স্বয়ং জেনারেল স্যাম মানেকশ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সমগ্র বাংলাদেশকে যে ১১টি অপারেশনাল সেক্টরে ভাগ করা হয়, আগরতলার ডেল্টা লজিস্টিকাল সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয় তাঁর প্রথম তিনটি। মেজর জিয়াউর রহমানের ১নং সেক্টর, মেজর খালেদ মোশারফের ২নং সেক্টর আর মেজর কে এম সফিউল্লার ৩নং সেক্টরকে যুদ্ধপরিকল্পনা, প্রশিক্ষন আর সম্মুখ সমরে “লজিস্টিক সাপোর্ট” দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় শাহ্বেগ সিংকে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, ফরিদপুর আর সিলেটের কিয়দংশ নিয়ে গড়ে ওঠে ডেল্টা সেক্টরের কার্যক্রম।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণকারী শাহ্বেগ সিং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৪০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় জাপানীদের বিরুদ্ধে প্রথম অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ভারতের পক্ষে প্রতিটি যুদ্ধে অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন। একজন প্যারাট্রুপার হিসেবে প্যারাসুট বিগ্রেডে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত থাকার পর মেধার বিচারে বনে যান দেরাদুনে অবস্থিত মিলিটারি একাডেমীর প্রশিক্ষক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ডেল্টা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে শাহ্বেগ সিং হয়ে উঠেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী। গেরিলা যুদ্ধকৌশল প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আগত বেসামরিক বাঙালি তরুণদের নিয়ে গড়ে তুলেন অপরাজেয় মুক্তিবাহিনী। গেরিলা অপারেশনের পূর্বে ছদ্দবেশে সরেজমিনে ঢাকা ‘রেকি’ করে বেরিয়েছেন। ঢাকার রাস্তায় ৭১ এর নভেম্বরের ভরদুপুরে রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এক ভারতীয় বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ভাবতেই শরীর শিহরিত হয়ে যায় (আত্মসমর্পণের পর নিয়াজি এটা জানতে পারেন স্বয়ং শাহ্বেগ সিং এর মুখে) ! মেজর রফিকের বক্তব্বে জানা যায় তিনি এবং শাহ্বেগ সিং ১৯৭১ সালে ১৫ আগস্টে নৌ-কমান্ডোদের দ্বারা পরিচালিত অপারেশন জ্যাকপটের পরিকল্পনাকারী ছিলেন।
জেড-ফোর্স, কে-ফোর্স এবং এস-ফোর্স গঠনের পর নতুন তিন সেক্টর কমান্ডার যথাক্রমে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, মেজর এ টি এম হায়দার এবং ক্যাপ্টেন নুরুজ্জমান আগরতলার ডেল্টা সেক্টরের অধিনায়ক বিগ্রেডিয়ার শাহ্বেগ সিং এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলেন দূর্বার আক্রমণ। হাতের কাছে এই মুহূর্তে থাকা কিছু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক বইতেও খুঁজে পাই শাহ্বেগ সিং এর নাম। সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম বীর বিক্রম, মুজিবনগর সরকারের মুখ্য সচিব তৌফিক ইমাম থেকে শুরু করে পরাজিত সেনাপতি নিয়াজিও “বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান” বইতে বলে গেছেন শাহ্বেগ সিং এর বীরত্বের কথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী শাহ্বেগ সিংকে Param Vishisht Seva Medal (PVSM) পদকে ভূষিত করে এবং মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়।
বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কয়েক দফায় অনেক বিদেশী ব্যক্তি ও সংগঠনকে দেওয়া হল ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। প্রতিবারেই নামগুলি আগ্রহের সাথে পড়ি অনলাইন পত্রিকায়। কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা, সাবেক রাষ্ট্রনায়কসহ অনেক ভিনদেশী গুণীজনেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেয়ার এই চর্চা এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ, সন্দেহ নেই। অনেক যুদ্ধবন্ধুকে দেয়া হচ্ছে মরণোত্তর সম্মামনা। বারবার একটি নাম শুধু অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে, মেজর জেনারেল শাহ্বেগ সিং! যেহেতু এই বীরের নাম কিছু বইতে সুবেক সিং হিসেবে এসেছে তাই অনলাইনের ইংরেজি পত্রিকাতেও প্রকাশিত যুদ্ধবন্ধু তালিকায় খুঁজেছি তাঁর নাম। কোথাও নেই SHABEG SINGH এর উল্লেখ! অথচ গুগল, ইয়াহু বা উইকিপিডিয়াতে Shabeg Singh লিখে সার্চ দিলে প্রথম লাইনেই এসে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কথা “he was an Indian Army officer noted for his service in training of Mukti Bahini volunteers during the Bangladesh Liberation War”।
বাংলাদেশ সরকারের এই একটি নামের প্রতি বারবার উপেক্ষার কারণ অবশ্য অনুমান করা যায়। বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের কালো তালিকাভুক্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা শাহ্বেগ সিংকে সম্মানিত করে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়না কেউ। ১৯৭৬ সালের ১লা মে মেজর জেনারেল শাহ্বেগ সিং বহিষ্কৃত হন ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে। জরুরি অবস্থা চলাকালীন সময়ে সরকারের বিরাগভাগন হয়ে উঠেন স্পষ্টভাষী নির্ভীক এই উচ্চপদস্ত জেনারেল। স্বাভাবিক অবসরে যাবার একদিন বাকি থাকতেই সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয় শাহ্বেগ সিংকে! বঞ্চিত হন পেনসন সুবিধা থেকে। সিভিল কোর্টে অবশ্য সেই দুর্নীতির অভিযোগ ধোপে টেকেনি, কিন্তু পেনশন আর সম্মানজনক বিদায় কোনটিই আর কপালে জোটেনি।
৩৬ বছরের পেশাদারী সামরিক জীবন থেকে এই অসম্মানজনক অপসারণ বিক্ষুব্ধ করে তোলে শাহ্বেগ সিংকে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিখ চরমপন্থি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন পাঞ্জাবের জনপ্রিয় এই সাবেক জেনারেল। সময়ের আবর্তে হয়ে উঠেন বিচ্ছিন্নতাবাদি ধর্মগুরু ভিন্দ্রানওয়ালের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা। স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেন শাহ্বেগ সিং। খালিস্তানপন্থি সশস্র শিখ চরম্পন্থিদের উৎখাতে পবিত্র স্বর্ণমন্দিরে ১৯৮৪ সালের জুন মাসের ৩ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিচালিত অপারেশন ব্লুস্টার অভিযানে সম্মুখযুদ্ধে প্রাণ হারান শাহ্বেগ সিং। ব্লুস্টার কমান্ডার মেজর জেনারেল কুলদীপ সিং ব্রার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। জামালপুর যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য ভারত সরকার তাকে ভিরচক্র পদকে ভূষিত করে। শাহ্বেগ সিং ছিলেন তাঁর শিক্ষক দেরাদুনের মিলিটারি একাডেমীতে। বিবিসি টিভির এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল ব্রার স্মরণ করেছেন যে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর উনি আর বিগ্রেডিয়ার শাহ্বেগ সিং একসাথে প্রবেশ করেন অবরুদ্ধ ঢাকায়। নিয়তির নির্মম পরিহাসে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে একে অন্যের বিরুদ্ধে তুলে নেন হাতিয়ার। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার কতৃক “গাদ্দার” হিসেবে অভিযুক্ত শাহ্বেগ সিং এর নিস্তর মৃতদেহ পরে থাকে স্বর্ণমন্দিরের ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে!
জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক কোনও কিছুই লিখে যাননি শাহ্বেগ সিং। ‘মিলিটারি সিক্রেসি’র অজুহাত তুলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত গোপন গেরিলা অপারেশনের বিস্তারিত বর্ণনায়, হাসিমুখে বলেছেন তাঁর বস জগজিৎ সিং অরোরাকে জিজ্ঞেস করতে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ভারত সফরকালে সস্ত্রিক দেখা করেন শাহ্বেগ সিং এর সাথে। মৃত্যুর চার সপ্তাহ পূর্বে ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত সাক্ষাতকারে বলেছেন বাংলদেশের রাষ্ট্রপতির সেই সৌজন্য সাক্ষাতের কথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল তাঁর সামরিক জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সাক্ষাতকারের শেষ লাইনটি মনে দাগ কেটে যায়, “I became a Bengali for the sake of my country. I cut my hair and then I took amrit again”।
স্যালুট জেনারেল শাহ্বেগ সিং।
……জিপসি
মন্তব্য
ভাল লাগলো আর কষ্ট হল লেখাটা পড়ে।
কোন রেফারেন্স দিতে পারেন এই তথ্যগুলোর সমর্থনে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
মুক্তিযুদ্ধে শাহ্বেগ সিংএর ভূমিকা নিয়ে স্মৃতিচারণ আমি অনেক বইতে পেয়েছি, প্রবাস জীবনে সব বই এখন হাতের কাছে নেই। যখন এই পোস্ট লিখার সিদ্ধান্ত নেই বুক শেলফে পাই এইচ টি ইমামের “বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১”, জেনারেল মইনুলের “এক জেনারেলের নিরব সাক্ষ্য”, নিয়াজির “দ্য বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান” এবং এম জে আকবরের “ভারত, অন্দরের অবরোধ”। সবগুলি বইতেই শাহ্বেগ সিং এর উল্লেখ আছে। উইকিপিডিয়া আর অন্য কিছু ওয়েবপেজ ঘেঁটেও কিছু তথ্য পাই।
অপারেশন ব্লুস্টার নিয়ে জেনারেল কুলদীপ সিং ব্রার ইন্টারভিউ ইউটুবেই মিলবে। আমার কিছু শিখ ধর্মাবলম্বী বন্ধুও পোস্ট লেখায় সাহায্য করেছে। ভিন্দ্রাওয়ালা আর শাহ্বেগ সিংকে “শহীদ” বীর হিসেবে গণ্য করে ওরা।
……জিপসি
দারুণ, খুবই ইন্টারেস্টিং তথ্য।
শিখ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম স্থান অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে ভারতীয় সেনাবাহিনী সাঁজোয়া অভিযান চালাতে সাহস পাবে একথা শাহবেগ সিং বিশ্বাস করতেন না। ব্লুস্টার অপারেশনের কিছুদিন আগে এর কমান্ডার মেজর জেনারেল কুলদীপ সিং সাদা পোশাকে মন্দিরের অভ্যন্তরে রেকি করতে যান। সশস্র চরমপন্থিদের দ্বারা অবরুদ্ধ অকলতক্তের জানালা দিয়ে তাকিয়ে শাহবেগ সিং ঠিক চিনে ফেলেন তাঁর দেরাদুনের সাবেক ক্যাডেটকে। সঙ্গীদের বলে দেন “ও হচ্ছে আমার সেরা ছাত্রদের একজন, জাঠ শিখ কুলদিপ সিং ব্রার। ছাড় দেয়ার সেনা অধিনায়ক নয় ও। তোমারা তৈরি হও, আমাদের সামনে কঠিন যুদ্ধ অপেক্ষা করছে”।
মাত্র দুইশ খালিস্তানপন্থি যোদ্ধা নিয়ে ১০,০০০ ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে শাহবেগ সিং পিছপা হননি।
……জিপসি
চমত্কার
টাইটেলে সম্মাননা বানান ভুল!
ব্লগ পোস্টের বানান বিভ্রাটের জন্য তো আর ছাপাখানার ভূতকে দোষ দেয়া যাবেনা, তাই আমি নিজেই ক্ষমাপ্রার্থী।
ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
……জিপসি
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মেজর জেনারেল শাহ্বেগ সিং-এর অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্মৃতিচারণে এই ভারতীয় অফিসারের কথা বার বার উল্লেখ করেছেন। আপনার লেখাটি ভাল লাগলো।
১৯৭১-এর নভেম্বর মাসে ঢাকার রাস্তায় রেকি করার জন্য শাহ্বেগ সিং-এর রিকশায় ঘুরে বেড়ানো এবং পরে নিয়াজীকে নিজ মুখে এই কথা জানানোর তথ্যগুলো কোন্ বইতে আছে তা জানালে উপকৃত হবো। এই তথ্যগুলো খুব ইন্টারেস্টিং। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের শাহ্বেগ সিং-কে নিয়ে আলোচনায় কখনো এই তথ্যগুলো পাইনি। তাই কোন্ বইতে এই তথ্যগুলো আছে তা জানার আগ্রহ বোধ করছি।
পরাজিত পাকিস্থানি সেনাপতি নিয়াজির “দ্য বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান” (দি স্কাই পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮) বইতে শাহ্বেগ সিং এর রিক্সায় করে ঢাকা রেকি করার তথ্য খুঁজে পাবেন।
পাকিস্তানি এয়ার মার্শাল ইনাম উল হক খানের লেখায় শাহ্বেগ সিং এর একাধিক বার আগরতলা থেকে ছদ্মবেশে ঢাকা আসার তথ্য পাওয়া যায়। http://imranhkhan.com/2009/11/17/saga-of-paf-in-east-pakistan-1971/
……জিপসি
অনেক ধন্যবাদ জানানোর জন্য। নিয়াজী'র এই বইটি পড়া হয়নি এখনো। তাই এই তথ্যটি জানা হয়নি। এয়ার মার্শাল খান-এর এই লিঙ্কটির জন্যও ধন্যবাদ। এমন একটি তথ্য কেন কেবল পাকিস্তানি অফিসারদের লেখায় পাওয়া যাচ্ছে, অথচ আমাদের মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা সাবেগ সিং-কে নিয়ে তাদের স্মৃতিচারণে কখনো উল্লেখ করেননি, সেটা অবশ্য ভাবছি। কারণ ১৯৭১-এর নভেম্বরে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় উচ্চপদস্থ অফিসার-এর ঢাকা শহরে এসে (ছদ্মবেশে হলেও) প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারটি খু্বই উল্লেখ করার মতো একটি ব্যাপার।
অবশ্য এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, কোন একটি লেখায় পড়েছিলাম (সূত্রটি মনে করতে পারছি না এখন। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত লেখা) যে সাবেগ সিং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাঝে মাঝে র্যাঙ্কবিহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতেন। এবং এই কারণে একবার ভারতীয় সামরিক বাহিনীরই এক সেন্ট্রি তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল। তখন সাবেগ সিং সেন্ট্রিকে শান্তভাবে জানান যে তিনি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার। সেই সেন্ট্রি তখন লজ্জিত হয়ে পড়ে। খুবই পছন্দ করার মতো একটি চরিত্র ছিলেন এই সামরিক অফিসার, সেই ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনা অফিসারদের লেখনিতেও র্যাঙ্কবিহীন শাহ্বেগ সিং-এর গোপন তৎপরতার উল্লেখ পাওয়া যায়। যুদ্ধকালীন একটা পর্যায়ে উনি নিজ পরিবার থেকেও স্বেচ্ছায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গোপন গেরিলা মিশনের প্রয়োজনে। চিন্তাউদিগ্ন স্ত্রীকে অনেকদিন পরে ছদ্মনামে চিঠি লিখেন আগরতলার এক মুদি দোকানের ঠিকানা থেকে।
সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের কিছু বইতে বিগ্রেডিয়ার শাহ্বেগ সিং নিয়ে অনেক তথ্য পড়েছি, দুঃখের বিষয় বইগুলি এখন হাতের কাছে নেই।
……জিপসি
ধন্যবাদ।
শাহবেগ সিং এর অবদান বিষয়ে জানতাম না, আপনার সৌজন্যে জানলাম।
শিখরা তাঁদের ধর্মযুদ্ধে “শহীদ” শাহ্বেগ সিংকে আজো সম্মান দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। তাঁর এই বিতর্কিত চরমপন্থি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি শাহ্বেগ সিং-এর প্রাপ্য।
পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত।
……জিপসি
নতুন মন্তব্য করুন