সমসাময়িক কয়েকটি পর্যবেক্ষণ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/০৪/২০১৩ - ৫:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্যবেক্ষণ ১ - আমার সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ভাইটি ইন্টার পর্যন্ত মাদ্রাসায় (আলিয়া) পড়েছে। তারপর শা'বি থেকে গ্র্যাজুয়েট করে ইংল্যান্ডের গ্রিনিচ ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে এখন পিএইচডি করার চিন্তা-ভাবনা করছে। আমরা বাকি স্কুল পড়ুয়া ভাইরা কিন্তু তার মত করে পারিনি!

নোট - মাদ্রাসা শিক্ষা'র দিকে নাক উঁচু না করে আমাদের উচিত হবে সরকারের কাছে দাবি জানানো যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্হাকে কিভাবে আরও মানসম্মত, আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত করে তোলা যায় সরকার যাতে সেই দিকে চোখ দেয়। যাতে মাদ্রাসায় পড়ে যে কেউ শুধু হুজুর হবে আর সুর করে মিলাদ পড়াবে এরকম না হয়। তারাও যেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এর মত সমাজের উঁচু পেশাগুলাতে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

পর্যবেক্ষণ ২ - হেফাজত ইসলাম নাস্তিকদের বিচার চেয়ে লংমার্চ করেছেন, খুব ভাল কথা তারা সেটা করতেই পারেন কারণ তাদের ধর্মানুভুতি আর যৌনাভূতি প্যারালাল। কিন্তু আর যারা মন্দিরে আগুন দিচ্ছে, হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ট্রেনের স্লিপার উপড়ে ফেলছে, ধর্মীয় উসকানি দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে আর ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের বিচারে ব্যাপারে লংমার্চ তো দুরের কথা তাদের শর্টমার্চও করতে দেখলাম না। ১৩ দফার একটিতেও দেখলাম না যে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারে কোন একটা পয়েন্ট তূলে ধরতে।

নোট - এর মানে তারা তাদের সীমানা এই নাস্তিদের মাঝে-ই সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। তাদের ধর্মানুভুতির কাছে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া কোন ব্যাপার না!

পর্যবেক্ষণ ৩ - রিসেন্টলি ফেইসবুকে আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন - ইসলামী শাসন কায়েম হলে সমস্যা কি? আমি তাদের প্রোফাইলে ঘুরে আসলাম। একজনের প্রোফাইলে দেখলাম "কুপা-কুপি ১৮+ পেইজের লিংকে ভর্তি। একজন দেখলাম মার্ডার ছবির গান শেয়ার দিছেন। একজন দেখলাম একজন মেয়ে মডেলের অর্ধ-নগ্ন ছবি শেয়ার করে ক্যাপশন দিছেন - ওয়াও শি ইজ হট! এর মানে কি দাঁড়ালো যারাই ইসলামী শাসন কায়েম করতে চান তারা ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী নিয়ম কানুন মেনে চলেন না। সবচেয়ে অবাক হয়েছি এমন একজন ইসলামী আইন চান বলে ফেইসবুক ফাটাই ফেলতাছে, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি - যার পিসির খুঁজ নিলে দেখা যাবে হার্ডডিস্কের অর্ধেরও বেশি পর্ণতে ভরা এবং ব্যক্তিজীবনে পতিতালয়ে তার নিয়মিত যাতায়াত। আমি জাস্ট উনাকে একটা ছোট হিন্টস দিলাম - ভাইয়া ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আপনার পিসি'র পাসওয়ার্ড দেয়া ফাইলগুলার কি হবে! এরপর উনার চিল্লাচিল্লি একটু কমেছে!

নোট - এটা একটা ভণ্ডামির উৎকৃষ্ট উদহারণ হতে পারে।

পর্যবেক্ষণ ৪ - উগ্র নাস্তিকরা ইসলাম এবং আমাদের নবীকে নিয়ে জঘন্য ভাষায় বিষেদগার অনেক আগ থেকেই ছড়িয়ে আসছে। তবে এদের কেউ কিন্তু জাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম বা আমাদের নবীকে নিয়ে কুটুক্তি করেনি বা করছে না। এখন প্রশ্ন হল যখন তারা এসব বিষেদগার ছড়িয়েছিল তখন উনারা কই আছিলেন? এখন বা এই ইস্যুটা আসলো কেন? উত্তরগুলা খুব সোজা -তারা এখন সবার সাথে মিছিল করছে - যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই বলে। তাই তাদের উছিলায় সবার কণ্ঠ রোধ করতে হবে। তাদের কণ্ঠ রোধ করতে না পারলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাই তারা তাদের শেষ অস্র্র টা ব্যবহার করলো। ব্লগার সবাইরে নাস্তিক বানাইয়া হেফাজতরে রাস্তায় নামাইলো।

নোট - এই জন্যই তো কই হেফাজত নাস্তিকদের বিচার চেয়ে লংমার্চ কারলে বাশেরকেল্লা'র ঘরে ঘরে আজ ঈদ আনন্দ লাগে কেন (ডাল মে কুচ লাল হে)। ১৯৭১ এ তাদের সবচেয়ে বড় অস্র্র যা ছিল ২০১৩এ এসেও তাদের সবচেয়ে বড় অস্র্র একি রয়েছে।

পর্যবেক্ষণ ৫ - আওয়ামীলীগ যখন দেখল গন জাগরণ মঞ্চ থেকে আর ভোট কালেক্ট করা যাবেনা তখনি তারা ভোট কালেক্ট করতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করল। সে পথ অবলম্বন করতে গিয়ে নোংরা রাজনীতির প্যাঁচে রাসেল আর সুব্রতের মত নিরীহ ব্লগারদের ব্লেন্ড করলো। নোংরা রাজনীতির প্যাঁচে পড়ে কয়েকটা সাইকোর বিষাক্ত কর্মকাণ্ডের সাজা নিরীহ ছেলেগুলো ভোগ করছে।

নোট - ইহাকেই ডার্টি পলিটিক্স বলে......

পর্যবেক্ষণ ৬- একদল মানুষ আছে যারা তারা কিছুই বুঝেনা। পৃথিবীর কারোর-ই কোন ক্ষমতা নাই , কোন ভাষা নেই তাদের বুঝানোর, একমাত্র হুজুর ছাড়া। একমাত্র হুজুররাই তাদের বুঝাতে পারেন। এই দল মানুষ না বুঝে ধর্ম, না বুঝে যুক্তি, না বুঝে ইতিহাস, না বুঝে মানুষ, না পারে নিজের মাথাটা একটু খাটাতে (খাটাবে কেমনে সেটা তো হুজুরের কাছে বর্গা দিয়ে রাখা।) তারা শুধু বুঝে হুজুরের কথায় কেমনে লাফালাফি করতে আর চিলে কান নিয়ে যাচ্ছে বলে ম্যারাথন দৌড় দিতে। ওদের ফাল আর দৌড় কিন্তু আন-লিমিটেড। এই পৃথিবীর কোন শক্তিই ওদের ফাল আর দৌড় বন্ধ করতে পারবেনা। একমাত্র হুজুররা পারবে তাদের এই ওদের ফাল আর দৌড় বন্ধ করতে। কিন্তু হুজুর'রা সেটা করবেন না কারণ এটা করলে আমাদের প্রাণ প্রিয় হুজুরদের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাবার চান্স আছে।

নোট - খারাপ এবং অবাক লাগে যখন দেখি এই ম্যারাথন দৌড়ে ভাল ভাল কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষিত পোলা - মাইয়্যা যোগ দেয় আর অনলাইনে নাচনকুদন করে!

উপসংহার - ছোটবেলা টিভিতে একটা এড দেখতাম - মানিক, কি বাত্তি জ্বালাইলি সব কিছু ফকফকা - আজকাল সেই এডের কথা খুব মনে পড়ছে।

http://www.youtube.com/watch?v=Izc2cgGuS-E

---------------------------------------------------------
মাসুম আহমদ


মন্তব্য

পৃথ্বীরাজ সৌরভ এর ছবি

দিনে দিনে অবুঝ লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
আফসোস,এদের সংখ্যা অনেক বেশী মন খারাপ

মাসুম আহমদ এর ছবি

আফসোস,এদের সংখ্যা অনেক বেশী -

মারুফ  এর ছবি

জৈনিক হুজুরদের কান দৈনিক চিলে নিয়ে যায়

মাসুম আহমদ এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

"একমাত্র হুজুররাই তাদের বুঝাতে পারেন। এই দল মানুষ না বুঝে ধর্ম, না বুঝে যুক্তি, না বুঝে ইতিহাস, না বুঝে মানুষ, না পারে নিজের মাথাটা একটু খাটাতে"

আসলেই অবুঝদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে অথচ হওয়ার কথা ছিল বিপরীত।

পোকিয়াস_পোকা

মাসুম আহমদ এর ছবি

অবুঝদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে অথচ হওয়ার কথা ছিল বিপরীত

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা, পড়ে ভালো লাগলো হাততালি
পর্যবেক্ষণ - ৩ এর সাথে সম্পূর্ণ একমত। চারিদিকে ভন্ডামি দেখতে দেখতে বিরক্ত।

স্বপ্নহারা মানব

মাসুম আহমদ এর ছবি

চারিদিকে ভন্ডামি দেখতে দেখতে বিরক্ত

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মাদ্রাসা শিক্ষা'র দিকে নাক উঁচু না করে আমাদের উচিত হবে সরকারের কাছে দাবি জানানো যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্হাকে কিভাবে আরও মানসম্মত, আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত করে তোলা যায়

মাদ্রাসা শিক্ষাকে তথাকথিত 'বিজ্ঞানসম্মত' করে তোলা সম্ভব না। মাদ্রাসা শিক্ষার গোঁড়ায়ই গলদ আছে। ইসলামের ভিত্তি কুরআনের চেয়ে সেখানে তথাকথিত স্কলারদের হাবিজাবি বই বেশি পড়ানো হয়। এতে করে ইসলাম সম্পর্কেই কুশিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

আমার জানা তথ্যমতে, মাদ্রাসা বাণিজ্য বিরাট লাভজনক। লোকজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা কালেকশনের বাইরে বিদেশ থেকে একটা বিরাট অঙ্কের টাকা আসে যাকাত, সন্ত্রাস ও অন্যান্য খাতে। মাদ্রাসাওয়ালারা হাদিস দেখাইয়া এই টাকার তিন ভাগের একভাগ 'বৈধ'ভাবেই নিজেদের পকেটে ঢুকায়।

ধর্ম শিক্ষার জন্য ব্যাঙের ছাতার মতো মাদ্রাসার দরকার নাই। ধর্ম স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড জিনিস।

অধিকাংশ মাদ্রাসাই বন্ধ করে দেয়া উচিত। একদিনে হবে না, ধীরে ধীরে কাজটা করতে হবে।

হেফাজত ইসলাম নাস্তিকদের বিচার চেয়ে লংমার্চ করেছেন, খুব ভাল কথা তারা সেটা করতেই পারেন

না, করতে পারে না। কেউ নাস্তিক হলে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাংলাদেশের আইনেও নাস্তিক হওয়া 'অপরাধ' না; সুতরাং নাস্তিকতার জন্য কারো মৃত্যুদণ্ড চেয়ে লংমার্চ করা সমর্থনযোগ্য না। এর বিপরীতে আগুন দেয়া, ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলাসহ যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন, সেগুলো স্পষ্টত অপরাধ।

এখন প্রশ্ন হল যখন তারা এসব বিষেদগার ছড়িয়েছিল তখন উনারা কই আছিলেন? এখন বা এই ইস্যুটা আসলো কেন? উত্তরগুলা খুব সোজা -তারা এখন সবার সাথে মিছিল করছে - যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই বলে। তাই তাদের উছিলায় সবার কণ্ঠ রোধ করতে হবে। তাদের কণ্ঠ রোধ করতে না পারলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাই তারা তাদের শেষ অস্র্র টা ব্যবহার করলো। ব্লগার সবাইরে নাস্তিক বানাইয়া হেফাজতরে রাস্তায় নামাইলো।

ঠিক। তারা ব্লগ পড়ে না। পুরোটাই রাজনৈতিক চাল।

আওয়ামীলীগ যখন দেখল গন জাগরণ মঞ্চ থেকে আর ভোট কালেক্ট করা যাবেনা তখনি তারা ভোট কালেক্ট করতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করল। সে পথ অবলম্বন করতে গিয়ে নোংরা রাজনীতির প্যাঁচে রাসেল আর সুব্রতের মত নিরীহ ব্লগারদের ব্লেন্ড করলো।

আমার ধারণা, এখানে ভোটের হিসাবের চেয়েও টাকার খেলা বেশি প্রভাবশালী। হুজুরদের ভোট আওয়ামী লীগ পাবে না, আবার জামায়াত/হেফাজতকে সমর্থন দিয়ে প্রো-৭১ লোকজনের ভোট হারাবে, এটা আওয়ামী লীগ জানে।

একদল মানুষ আছে যারা তারা কিছুই বুঝেনা।

বুঝার চেষ্টা করে না। স্ট্রেইটকাট 'লাভ' না থাকলে মাথা খাটানো অনেক পরিশ্রমের বিষয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাসুম আহমদ এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।