‘হেফাজতি’ হরতালের কয়েকটা খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গেল! শুধু মন খারাপ না সাথে অসহায় ক্ষোভ ও জন্ম নিল মনে! একটা খবর চিটাগাঙ এর আরেকটা সিলেটের।
“চিটাগাঙ এ এক হিন্দু দম্পতীকে রিক্সা থেকে নামিয়ে তাদের বিয়ের সনদ দেখতে চাওয়া!!!”
“সিলেটে রিক্সা থামিয়ে জনে জনে ধর্ম জিজ্ঞেস করা,কালেমা জিজ্ঞেস করা!!!”
এই ঘৃণ্য কাজের জন্য কি বলা যায় তার ভাষা খুজে পাচ্ছি না বলেই এই অসহায় বোধ!! ঠিক যা করা দরকার তা করতে পারছি না বলেই এই অসহায় ক্ষোভ!!!
আমি গীটারিস্ট মানুষ। রাস্তায় চলার সময় অধিকাংশ সময় আমার কাছে গীটার থাকে। রাস্তায় আমার রিক্সা থামিয়ে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে সাথে এই ‘বিধর্মীদের’ যন্ত্র কেন?? কি উত্তর হবে আমার?? তার আগে একটা ঘটনা বলি-
গত ফেব্রুয়ারী মাসে,গণজাগরণ মঞ্চ তখন তুঙ্গে। আমি প্রত্যেকদিন ই নিজের অন্যান্ন সব কাজ বাদ দিয়ে শাহবাগ যাই। সেদিন খুব সম্ভবত শিবিরের বিক্ষোভ সমাবেশ বা কিছু একটা ছিল। আবার আমাদের প্রোগ্রাম ও ছিল রাজু ভাস্কর্জে। বাসা থেকে গীটার নিয়ে বেড় হওয়ার সময় আমার এক ছোট ভাই আমাকে বলল-“দেইখেন,যাওয়ার পথে আপনার গীটার যেন আবার ‘শিবির’ রা ভাঙ্গে না!” আমি খুব নির্লীপ্ত ভাবে জবাব দিলাম-“আমার সামনে ‘শিবির’ আসলে গীটার ওদের ‘যায়গা’ দিয়া ভড়ে দিব!!” আসলেই ভড়ে দেয়া হবে কি না জানি না। হয়ত ভড়ে দেয়ার আগেই ওদের চাপাতির কোপে আমার ই হাত নেমে যাবে আমার শরীর থেকে! হতে পারে রক্তাক্ত আমি অসহায় ভাবে একদল বুনো হায়নার হিংস্রতার বলি হতে দেখব আমার গীটারকেউ!
নাহ! যুক্তি,তর্কে তারা আমার সাথে পারবে না। “আমার কাছে গীটার কেন”,জিজ্ঞেস করলে আমি উল্টা জিজ্ঞেস করতে পারি, “হরতাল,অবরোধ তো ইসলামে জায়েজ নাই,আপনারা ইসলামের কথা বলে হরতাল ডাকেন কেন?” জানি এই সব যুক্তির কথা ধর্মের কথা তাদের শুনিয়ে লাভ নেই! চোরে মানে না ধর্মের বাণী! চোর বড়জোড় বাঁচার জন্য ধর্ম কে ব্যাবহার করে।
একটা গল্প বলি-
এক গ্রামে এক চোর ছিল,নুরু চোরা! শেষ রাতে চুরি করে ফেরার সময় অন্ধকারে সে কাঁদা পানির গভীর ডোবা তে পড়ল! ওঠার চেষ্টা করে না পেরে সে চিৎকার করতে থাকল “ইসলাম বাঁচান,ইসলাম ডুবে গেল” বলে। ফজরের নামাজ পড়তে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসল তার কথায়। কাঁদা পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষ দেখে টেনে তুলল তাকে। চোর কে দেখে জিজ্ঞেস করল-“তুই তো নুরু চোরা!! ইসলাম গেল বলে চিৎকার করলি কেন??!” উত্তরে চোর বলল-“ আমার নাম নুরুল ইসলাম,আমি যদি কইতাম নুরু চোরা ডুইবা গেল,আপনারা কি এমনে ছুইটা আসতেন? তাই কইছি ‘ইসলাম গেল’!”
এই সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলোকে ইসলামের কথা বলে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করা খুব ই সহজ। সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ের পর দিন চা এর দোকানে চা খাচ্ছিলাম আমি এবং আমার ব্যান্ড মেম্বাররা। কথা হচ্ছিল সাঈদী বিষয়েই। হুট করে চা এর দোকানী বলে বসল-“এই তো আপনে নাস্তিকের মত কথা বললেন!!”
আমি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-“কেন?”
-“একজন মানুষ(সাঈদী) কোরান,হাদীসের কথা বইলা বেড়ায় আপনে তার বিরোধীতা করতাছেন,ফাঁসি চাইতাছেন,তাইলে আপনে ‘নাস্তিক’ না তো কি??”
-“কিন্তু সে তো অপরাধী,খুন করেছে এতগুলা,ধর্মের কথা বললেই সে ভাল মানুষ হয়ে যাবে?” আমার এক ব্যান্ড মেম্বার প্রতিবাদ জানাল।
উত্তরে সে যা বলল তার সারমর্ম হচ্ছে- “একজন অপরাধ করছে,খুন করছে কিন্তু তার এলাকার লোকজন তো তারে ধইরা চড়,থাপ্পড় দিয়া দিছে ওই সময় ই,তাইলে তার বিচার আবার এহন ক্যান??”
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বললাম-“আমি তাহলে এখন আপনার ভাই কে,বাবা কে মেরে ফেলি,আমার এলাকার লোক আমাকে দুইটা চড়,থাপ্পড় মারুক,শোধ হয়ে যাবে?? মানুষ মারা আর দুইটা চড়,থাপ্পড় এক কথা? আর আপনি জানেন যার তার ইসলামে কোরান তাফসীর করার অনুমতি নাই! কোরান তাহসীর করতে হলে তাকে অবশ্যই মুফাসসির হতে হয়। সাঈদী তো মুফাসসির না! তাহলে তাকে তাফসীর করার অনুমতি কে দিছে?? একজন সুন্দর করে ওয়াজ করতে পারলেই সে ভাল মানুষ?”
আমার কথা শুনে দোকানী ‘হোপ’ মেরে বসে রইল,কথা বলল না আর। কাজের কাজ কিছু হল বলে মনে হয় না! তার কাছে আমাকে ইসলামের শত্রু(!) ছাড়া আর কিছুই মনে হল না।
শুধুমাত্র ইসলাম শব্দটির কারণে অন্ধ ভাবে এইসব ধর্ম ব্যাবসায়ীদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া লোক ও কিন্তু কম না। এরা হয়ত ধর্মের ব্যাসিক ও জানে না ঠিক মত,কিন্তু এই ধর্মের নামে অধর্ম করে বেড়ানো লোকগুলোর কথায় চোখ বুজে পেছন পেছন দৌড়ায়।
খুব ইচ্ছা করে তাদেরকে সাঈদীর অডিও শুনাতে!! বলতে ইচ্ছা করে এতদিন তো এর(সাঈদী) অনেক ওয়াজের অডিও শুনেছেন,এবার একটু অন্য কিছু শুনেন। দেখেন,আপনার কোরান,হাদীস বয়ান করে বেড়ানো হুজুর নিজে কোরান,হাদীস মানে কিনা!! দেখেন,সে কিভাবে তার বুকের খাঁচায় ময়না পাখি,টিয়া পাখি পুষে রেখেছে!! কিভাবে সে পান চিবায় আর মেশিন চালায়!! কিভাবে সে ‘লইট্যা ফিশ’ খায়!!
কি জানি,হয়ত সে শুনে টুনে বলে বসবে-“সব ফটোশপ!!” বলতেই পারে! বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার ‘যোগ্য’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যদি সব কিছুতেই ফটোশপের কারসাজি খুঁজে পান তাহলে এই অশিক্ষিত,সল্প শিক্ষিত লোকগুলোকে দোষ দিয়ে কি হবে?!!
সুবোধ অবোধ
মন্তব্য
ভাল লাগলো।।।।।।।।
ধন্যবাদ!!
সিলেটের বিষয়টা সম্ভবত ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয়া হয়েছে নানাভাবে। সত্যতা পাওয়া যায়নি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হতে পারে গুজব!!
তবে আমরা সবাই হাত গুটিয়ে থাকলে মনে হয় না খুব বেশি দিন এই অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে হবে!!
দুঃখজনক!!!
সব লেভেলের মানুষের সাথে কথা বলা খুব জরুরি। রেগে গিয়ে নয়, ঠান্ডা মাথায়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হুম।
সেটা ঠিক।
আমি বলার চেষ্টা করি।
সেই আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে রিক্সা ওয়ালাদের বুঝাই রিক্সাতে উঠলেই।
কেউ কেউ বুঝে আবার কেউ কেউ....
সুবোধ অবোধ
নতুন মন্তব্য করুন