চারদিকে উঁচু পাহাড়। মাঝে উপত্যকা। একটু উচুতে একটা হেলিপ্যাড। এখানে ওখানে মিলিটারির টলদারি। জলপাইরঙা সেনা ট্রাক। অনেকটা কম্পিউটার গেমস আই জি আই এর মত মনে হচ্ছে না সেটিংটা? হ্যা, ‘অনেকটা’ই লিখলাম। সেনা আছে, টহলদারিও আছে। কিন্তু সাইরেন নেই। লুকোনো শত্রুপক্ষ নেই। রক্ত নেই। ঠাঁ ঠাঁ বন্দুকবাজি নেই। তাহলে? হাড়ে কাঁপন ধরানো ঠাণ্ডা আছে। জলরঙে পাহাড়ের ছবি আঁকলে যেরকম শেড পরে; পাহাড়, তার পেছনে আরো একটা, আরো একটা, ধীরে ধীরে আবছা হচ্ছে, রঙে রঙ একাকার হয়ে যাচ্ছে, সেরকম কিছু দৃষ্যপট আছে, যেগুলো চিরোকাল মনের পেনড্রাইভে ষ্টোর করে রাখা যায়। এখন অবধি দ্যাখা সেরা সূর্যাস্তগুলির একটি আছে অবধারিতভাবেই। আর? সব নাই বা বললাম।
কোথাকার কথা বলছি জানেন? জুজুক। সাগর পিঠ থেকে প্রায় ন’হাজার ফুট উঁচুতে। সিকিমের বিখ্যাত ‘সিল্ক রুট’ বা রেশম পথের ধারে পূর্ব সিকিমের এক ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম।
শিলিগুড়ী থেকে সোজা জুলুক কিন্তু আমরা ছুটি নি। ভেবেছিলাম, শীতের দিন, সকাল সকাল রাত নামে, তারচে বরঙ মাঝামাঝি কোথাও একটা থেকে গেলেই হয়। কোথায় থাকা যায় ভাবতে ভাবতে এক বন্ধু সাজেষ্ট করল সিলারি গাঁও। কালিংপং থেকে পেডং যাওয়ার পথে ভেঙে গেছে এই সিলারিগাঁওএর রাস্তা। ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম। পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে তৈরী নিলিবিলি ছিমছাম গৃহ। ওয়াল পেপারের মত দৃষ্টিনন্দন। সেখানেই রাত যাপন। তারকাখচিত(বা বিহীন) হোটেলের আভিজাত্য ও আরাম নেই, তবে ‘হোম ষ্টে’র আন্তরিক আতিথেয়তা ভোলার নয়। সমতলেই তখন জানুয়ারীর প্রবল শৈত্যপ্রবাহ, আর ওখানে গণ্ডা খানেক গায়ে চাপিয়েও ‘ওফ্ কি ঠান্ডা’ মন্ত্র জপা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প হাতের সামনে নেই।
পাঁচটায় অ্যালার্ম দেওয়া ছিলো। এই উঠছি, আরো পাঁচ মিনিট করতে করতে প্রায় ছ-টা। বাইরে এসে ঊরিব্বাস, কাঞ্চনজঙ্ঘা। আগের দিন মেঘ বাবাজির কারসাজিতে দিব্বি লুকিয়ে ছিলো। এবারে? ছবি টবি তোলা মাথায় রইলো। আগে তো একটু প্রাণ ভরে দেখে নি। সকাল বেলার মিঠে রোদ্দুর গায়ে মেখে সে মাথা উঁচু করে মডেলের ভঙ্গীতে পোজ দিয়ে আছে। সময় গড়াচ্ছে। বদলে যাচ্ছে রোদ্দুরের রঙ। পোষাক বদলে সেও হাজির নতুন নতুন চেহারায়, ভঙ্গীতে।
ব্রেকফাস্টে লুচি-আলুর দম সাঁটিয়ে যাত্রা শুরু জুলুকের উদ্দেশ্যে। প্রায় ঘণ্টা ছয়েকের পথ। পেডং থেকে এঁকে বেঁকে সিকিমের রঙলী। সেখান থেকে পারমিট করিয়ে পাহাড়-শরীরের নানান বিপদশঙ্কুল বাঁক ছুঁয়ে, ডিসকভারি কিংবা ন্যাট-জিওর কপিরাইট নেওয়া পথের সওয়ারী হওয়ার মজা চাটতে চাটতে অবশেষে যে পাহাড়ী গঞ্জে এসে গাড়ী থামল, দোকানের সাইনবোর্ডে দেখলাম লেখা আছে জুলুক। অবশেষে।
সিলারির কাজি সাহেব (মালিক কাম রিসেপসনষ্ট কাম কুক) আগেভাগেই সাবধান ক্রে দিয়েছিলো, জুলুক যাচ্ছেন তো, ঠান্ডা হাড়ে হাড়ে ... তো জুলুকে গাড়ী থেকে নামার আগে যতখানি হাড় হিম হয়েছিল ঠান্ডাতঙ্কে, নামার পর দেখলাম, ধ্যাৎ, এ আর এমনকি। সাগরপিঠ থেকে প্রায় ন-হাজার ফিট উচুতে কি গরমে উদোম হয়ে নৃত্য করার কথা! যাজ্ঞে, এবার আসি জুলুকের কথায়। কি আছে? না সে অর্থে কিচ্ছু না, নাথিং। মূলত ভারতীয় সেনা ছাউনি। জল্পাইরঙা গুটি কয়েক জওয়ানের টহল। গুটি কয়েক হোম ষ্টে। আর? প্রথমেই একপ্রস্থ হয়ে গ্যাছে, আরেকবার বলার লোভ সামলাতে পারছি না। চারদিকে পাহাড়। পাহাড়ের গা বেয়ে জিকজ্যাক রাস্তা, হিমেল হাওয়া, হেলিপ্যাড থেকে দ্যাখা সারি সারি পাহাড়, ঠিক ছোটবেলার ড্রয়িং বুক থেকে ঊঠে আসা একখানা লাল টুকটুকে অস্তমিত সূর্য, চুঁইয়ে পরা রঙে একাকার মেঘ-কুয়াশা আর...
৭) আবছায়া জানলার কাঁচঃ(জুলুক):
************************************************
# দীপালোক
মন্তব্য
বাহ চমৎকার ছবি তোলেন তো আপনি। আরও ছবি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
দীপালোক, ছবিগুলি একাধারে চমৎকার আর মনকাড়া। শুভ্র পাহাড়, ছায়াময় পাহাড়, কুপুপ লেক, মেঘের পরে মেঘ দেখে খানিক দীর্ঘনিঃশ্বাস এলো। আপনার ছবি দেখে মনে হল, এই প্রকৃতি এবং এই সুন্দর পৃথিবী দেখে আমরা বুঝি "এই আকালেও স্বপ্ন দেখি।"
নামকরা ও পর্যটক ঠাসা হিল স্টেশনের তারকাখচিত হোটেল, বাতানুকুল রেস্তোরাঁয় ইন্ডিয়ান/কন্টিনেন্টালের স্বাদ কিংবা শপিং করার মত দোকানপাট - কিছুই নেই এই জুলুক কিংবা সিলারিতে। আর এটাই স্বস্তির। বিশেষত আমার বা আমাদের মত সমতলবাসীদের।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য।
মাথা নষ্ট হবার মত ছবি। বিশেষ করে ৬ আর ১২ ।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
হে হে হে শাব্দিক আপু, আকাশ তোমারে পাইছে। এইবেলা সাবধান।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
১২ নাম্বার ছবিটা আসলেই সাংঘাতিক।
বাকিগুলোও দারুন।
আরও আসুক।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
পরের বছর তেরাই থেকে টেরাই নেব - জুলুক যাবার। ছবি সুন্দর হয়েছে।
ওয়েল্কাম, ওয়েলকাম।
অসাধারণ। সিমপ্লি অসাধারণ। আরেকটু ঘনঘন পোস্ট করা যায় না ?
০২
আপনার আগের পোস্টগুলি একদফা সেটিয়ে দিন এখানে। মডুমামারা না দেখলে হাচলত্ব অর্জন হবে না তো
ডাকঘর | ছবিঘর
উৎসাহিত হলাম, দাদা। তবে, প্রকৃতিগতভাবেই ভীষোওন আইলসা।
আর, হাচলত্বের দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। ওটা বোধহয় আমার দ্বারা হবে না। কম্পুর আউলা ঝাউলা ড্রাইভ ঘেটে পেলাম ক'খানা, যদি পরের পোষ্ট দেবার মুরোদ হ্য় কখোনো, কোনদিন, তখন না হয় আমার ফালতু পুরোনো কাসুন্দি ঘাটা যাবে
বাহ, দারুণ লাগল। খুব সুন্দর জায়গা। ওখানে বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে আপনার পোস্ট পড়ে।
চলে আসুন, ওয়েলকাম।
ছবিতে পট্টি না লাগিয়ে, এমনি পোস্ট করলেই বোধহয় ভাল লাগত আরো বেশে। যাই হোক,
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
ধন্যবাদ।
প্রথমে ভেবেছিলাম, একটু গয়নাগাটি পরিয়ে দেখি, ক্যামন লাগে। না! মানালো না
দারুণ সব ছবি!
এখনো অনেক রাত ছবিটা বিশেষ ভালো লাগলো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভালোর বাড়াবাড়ি লেগেছে।
থ্যাংকু,
facebook
নতুন মন্তব্য করুন