কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ও সমন্বয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০৪/২০১৩ - ১১:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রাথমিক পর্যায়ে কওমী মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তির হার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ২য়-৩য় শ্রেণিতে এবং ষষ্ঠ শ্রেনিতে। এসএসসি পাশ করে কেউ কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে এমন নজির খুব একটা পাওয়া যায়না। কওমী মাদ্রাসাকে মূল শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে এক করার মতো বিতর্কে যাবার মতো পরিপক্কতা আমার এখনও আসেনি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু সমন্বয় নিয়ে লিখতে আগ্রহী।

কওমী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা অনুদানমূলক। তুলনামূলক গরীব ছাত্রদের জায়গা হয় কওমী মাদ্রাসায়। কওমী মদ্রাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত) এবং কওমী মাদ্রাসা ও এর শিক্ষার দর্শন হচ্ছে আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে রেজিষ্টার্ড কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৫০০০ যেখানে প্রায় দুই লাখ শিক্ষক ও প্রায় চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন, রেজিষ্টার্ড বাদে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশী। দেশের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ একটি সতন্ত্র, নিয়ন্ত্রনহীন শিক্ষা ব্যাবস্থা গ্রহন করছেন। এই শিক্ষা ব্যাবস্থার গুরুত্ব ও ব্যাপ্তি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এই শিক্ষা ব্যাবস্থার অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়।

আধুনিকায়ন এবং ত্রুটিমুক্ত করার যে প্রয়াস আমাদের থাকবে সেটা শুরু হতে হবে প্রাথমিক পর্যায় থেকে। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের প্রয়োজন রয়েছে সচেতন শিক্ষার, এবং ট্রেনিং এর। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক তৈরির পক্রিয়া শুরু হয় পিটিআই ট্রেনিং সেন্টার থেকে, যে ধরনের ব্যবস্থা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকেরা পাচ্ছেন না।
যদি কেউ মনে করেন, উন্নত ভবন-শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি, আবাসিক ব্যবস্থার উন্নতি, আধুনিক কম্পুটার ল্যাব স্থাপন করলেই কওমী শিক্ষা আধুনিক হয়ে যাবে সেটি হবে সম্পূর্ন ভুল একটি ধারণা। সমন্বয় প্রয়জন প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে। লক্ষ্য করলে দেখবেন সিলেবাসে প্রাথমিক স্তরেই গনিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য পড়বার সুযোগ রয়েছে ( লেখার শেষে সিলেবাস) তাই মননের প্রজনন শুরু করবার প্রয়োজন প্রাথমিক স্তর থেকেই।

আমার মা একজন শিক্ষিকা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ট্রেনার। আমার জন্মের আগে থেকে আমার মা শিক্ষকতা করেন। পটুয়াখালী পিটিআই( প্রাইমারী টিচার্স ইনসটিটিউশন) এর কার্যক্রম দেখার সুযোগ হয়েছে খুব কাছ থেকে পুরো এক বছর। মায়ের সাথে হোস্টেলে থাকতাম, এবং মা সহ সহকর্মীদের দেখতাম কিভাবে তারা ট্রেনিং নিচ্ছেন। উপকরণ ভিত্তিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা দান, কালচারাল ও শারীরিক চর্চার গুরুত্ব নিয়ে পর্যাপ্ত ক্লাস, গ্রুপ ভিত্তিক ক্লাস পরিচালনার দক্ষতা, প্রতিযোগিতা এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বর গুনাবলী ও প্রয়জনিয়তা অনুভব করানো আমার বিশেষ ভাবে চোখে পরেছে। পিটিআই এর শিক্ষা নীতি এবং ব্যবস্থাপনা উঁচু মানের। এখান থেকে ট্রেন্ড শিক্ষক এবং শিক্ষিকারা যোগ্য, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকের যদি এই ধারার সাথে সংযুক্ত করা হয় তবে অনেকাংশেই ছাত্ররা উপকৃত হবে। শিক্ষক যখন ট্রেনিং করবেন তিনিও ভিন্ন মানুষ এবং শিক্ষদের সাথে মিশবেন, তার চিন্তাধারণা এবং শিক্ষানীতি সম্পর্কে ধারণাও বৃদ্ধি পাবে। নিগৃহীত হবার ধারণা আস্তে আস্তে তার মন থেকে সরে যেতে থাকবে। এবং তার এই উন্মুক্ত চেতনা ছাত্রদের প্রভাবিত করবে বলে আশা করা যায়।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বলা যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অধীনে পরিচালিত কাস্টার এবং সাব- কাস্টার ট্রেনিং গুলোর কথা। এইক্ষেত্রে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার এর ভূমিকা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরীকালীন প্রশিক্ষনের জন্য দুই দশকের বেশী সময় ধরে প্রথমে কাস্টার এবং পরে সাব- কাস্টার পার্যায়ে চালু রয়েছে বহুল আলোচিত সাব- কাস্টার প্রশিক্ষন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সদস্যসহ ৫/৬ টি বিদ্যালযের শিক্ষকদের একটি নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে একত্রিত করে প্রতি দুই মাস পর একদিনের জন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এই প্রশিক্ষনের প্রধান সংগঠক ও প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট কাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। শিখন-শেখানোর ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এবং প্রতিকারের পথ খুঁজে বের করা সাব-কাস্টার প্রশিক্ষণের অন্যতম কাজ। এছাড়া বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সকলের অংশগ্রহণের নানান দিকও প্রশিণের আলোচ্য বিষয়। এতে শিক্ষকগণ খুবই তাৎপর্য পূর্ণ বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রমে উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করেন, যা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। প্রশিণের মাধ্যমে অর্জিত দতা দ্বারা সহায়ক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণী কে পাঠদানকে প্রাণবন্ত করা সম্ভব হচ্ছে। উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউ.আর.সি) ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দায়িত্বে ও ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প ভিত্তিক ইউ.আর.সি’র জন্ম হয়। পিটিআই সুপার সভাপতি ইউআরসি ইন্সট্রাক্ট্রর সদস্য সবিচ সহ ৫ সদস্যের অন্যরা হলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। জনবল কাঠামোতে ১ জন ইন্সট্রাক্টর, ১ জন সহকারী ইন্সট্রাক্টর ও ১ জন কম্পিউটার অপারেটর ও ১ জন নাইটগার্ড। ইন্সট্রাক্টর হলেন প্রধান কর্মকর্তা। উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিকদের প্রশিণের নবতর সংযোজন হল ইউ.আর.সি।

আমার মা কাঠামোর সেই ইন্সট্রাকটর। উপজেলা পর্যায়ে যথেষ্ট আগ্রহী শিক্ষক না থাকার কারণে তিনি ইংরেজি এবং গনিত দুটি বিষয়ের ট্রেনিং দিয়ে থাকেন। তার সাথে এই প্রশিক্ষন কর্মসূচী গুলো ঘুরে আমার যথারীতি চমৎকার সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। চমৎকার এই ট্রেনিং এ অংশগ্রহনের জন্য ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে দুই -বেলা খাবার ব্যবস্থা। বিভিন্ন স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষকদের বিভিন্ন শীফটে একত্রিত করে ট্রেনিং এর এই ব্যবস্থার মান নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। সেই সাথে রয়েছে পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা। ধরা যাক "ক" স্কুলের শিক্ষক প্রশিক্ষন নিয়েছেন, এরপর তাকে 'খ" স্কুলে একটি ক্লাস পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হবে, পর্যবেক্ষন করবেন ট্রেনার ও ইন্সট্রাকটর। এই পর্যবেক্ষন থেকে বেরিয়ে আসবে সামনের প্রশিক্ষক।

কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকদের এই ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরী। তাদের প্রশিক্ষন তাদের মনোবল ও শিক্ষাদানকে শক্তিশালী করে তুলবে। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না- একজন আলেমই একজন একজন ভালো শিক্ষক হবেন এই কথাটি সম্পূর্ন ভুল। ইন্টার্নশীপ যেমন দক্ষ ডাক্তার তৈরি করে, তেমনিভাবে ট্রেনিং তৈরি করে চমৎকার শিক্ষক। শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের সমান সমান দায়িত্ব একজন শিক্ষকের এই কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ট্রেনিং পর্যায়ে ভবনে ক্লাস পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, ট্রেনাররা এদের ক্লাস নেন, পর্যবেক্ষন করেন ট্রেনিং করতে আশা শিক্ষকেরা। উপস্থিতির জন্য এদের হাতে তুলে দেয়া হয়, রং-পেন্সিল, কলম, স্কেল, বোর্ড পেপার, ম্যাগাজিন ইত্যাদি। কওমী মাদ্রাসা ছাত্রদের এ ধরনের ট্রেনিং এ সমন্বয় করলে তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে, তারাও নতুন করে ভাবতে শেখবে।

তৃতীয় ক্ষেত্রে সমন্বয় প্রয়োজন সামজিক ও জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে। আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠান তথা- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস সরকারী কমিশন অনুযায়ী স্কুল-কলেজের ছাত্র- ছাত্রীদের কে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহন বাধ্যতামূলক। পতাকা উত্তোলন, শোভা-যাত্রা- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিই আয়োজন করা হয় সাধারনত সকালে। এছাড়া বিকালে অভিনয়, আবৃতি, কোরান তেলাওয়াত, ছবি আঁকা, বিস্কিট দৌড়, কক- ফাইটিং ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্তাবধানে, যেখানে উপস্থিত থাকেন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং সাধারন জনগণ।
প্রতি বছর উপজেলার প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সে বছর কি-ধরনের অনুষ্ঠান হবে। আমার পরিবার রাজনৈতিক ভাবে সম্পৃক্ত থাকায় আমার জানার সুযোগ হয়েছে এই কাঠামো সম্পর্কে জানবার। আমি মনে করি প্রশাসনের উচিত কওমী মাদ্রাসা গুলোকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠাবার। এবং তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করবার। এমন নয় যে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়না, কিন্তু উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়না মূলত, এভাবেই মূল অনুষ্ঠান থেকে বিছিন্ন হতে হতে একসময় কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা ভেবে নেয়- এইগুলো হয়ত বিজাতীয় সংস্কৃতি। এদের বুঝাবার এবং অংশ গ্রহন বাঞ্চনীয়, নয়তো এরা ধীরে ধীরে নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলে সমাজ থেকে, মুখাপেক্ষী হয়ে যায় বড়- হুজুরের।

এই অনুষ্ঠান গুলো যেমন আমাদের, তেমনি তাদের, তাদেরকে এই উদযাপন এই আনন্দ এই ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত করতেই হবে। নইলে যেই লাউ সেই কদু হয়ে যাবে।

আমার নিজের দেখা একটি অনুষ্ঠানের কথা বলছি, ২০০৯ সালের পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির প্রশাসক ছিলেন আমার বাবা। তিনি নিশ্চিত করেছিলেন মাদ্রাসার উপস্থিতি। শিক্ষকদের হাটা প্রতিযোগিতায় এক মাদ্রাসা শিক্ষক প্রথম হয়েছিলেন। তেল দেয়া কলাগাছ বেয়ে পিতলের কলসী জিতেছিল এক মাদ্রাসা ছাত্র। বড় পুকুরে ১২ টি হাস ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, পুকুরের চারদিক থেকে সাঁতরে গিয়ে হাস দখল করার খেলা, যে ধরতে পারবে হাঁস তার, মাদ্রাসার ছাত্ররা পাঞ্জাবী খুলে পায়জামা পরেই ঝাঁপিয়ে পরেছিল পুকুরে, বিকালের মেলায় মাদ্রাসার স্টল ছিল, তারা আতর বিক্রি করেছে, পিঠা বিক্রি করেছে।

হয়ত আমাদের প্রয়োজন সঠিক সমন্বয়, তবেই ধীরে ধীরে আমাদের এই অংশটি আমাদের থেকে আলাদা হবে না। দিন শেষে এরাও কারো সন্তান, কারো ভাই তাদের আলাদা নয় বরং সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের যেন ব্যবহার না হয়, তারা যেন দিকভ্রান্ত না হয়। আমাদের যেন তলাবিহীন ঝুড়ি না হতে হয়। কামনা করি সমন্বয়ের শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের।

কওমী মাদ্রাসা সিলেবাস-
বর্তমানে কওমী মাদরাসাগুলোতে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : (১)আল-কুরআন (২) তাজবীদ-কুরআন পঠননীতি (৩) ইলমুল ক্বিরাআত-কুরআনের উচ্চারণনীতি (৪)তাফসীর-কুরআনের ব্যাখ্যা (৫) উসূলে তাফসীর-কুরআন ব্যাখ্যার নীতিমালা (৬) উলূমুল কুরআন- কুরআনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (৭) আল-হাদীস (৮) উসূলে হাদীস-হাদীস ব্যাখ্যার নীতিমালা (৯) উলূমুল হাদীস-হাদীসের শাস্ত্রীয় জ্ঞান (১০) ফিক্বহ-ইসলামী আইন (১১) উসূলে ফিক্বহ-ইসলামী আইনের নীতিমালা (১২) উলূমুল ফিক্বহ-ইসলামী আইনের শাস্ত্রীয় জ্ঞান(১৩)ফিক্বহে মুক্বারান-তুলনামূলক ইসলামী আইন (১৪) ইলমুল ফারায়েয-উত্তারাধিকার সম্পদ বণ্টন আইন (১৫) ইলমুল আক্বাইদ – ঈমানবিষয়ক জ্ঞান (১৬) মানতিক- যুক্তিবিদ্যা (১৭) ফালসাফা- দর্শনশাস্ত্র (১৮) আরবী ভাষা ও সাহিত্য (১৯) উর্দু (২০) বালাগাত- শব্দালংকার (২১) ফাসাহাত- বাক্যালংকার (২২) ইলমে মা’আনী-শব্দ তত্ত্ব (২৩) ইলমে বয়ান- বাক্য তত্ত্ব (২৪) ইলমে বাদী- বাচনিক তত্ত্ব (২৫) ইলমে নাহু-বাক্য প্রকরণ (২৬) ইলমে সরফ- শব্দ প্রকরণ (২৭) ইলমে লুগাহ- শব্দ কোষ (২৮) ইলমে তারিখ-ইতিহাস (৩০) সীরাত- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনী। এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, অংক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান ও ফার্সি শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

লেখক-
সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড
সাংস্কৃতিক সম্পাদক
বাংলাদেশ সোসাইটি
সেন্ট পিটার্সবার্গ
লেনিনগ্রাদ।


মন্তব্য

সাইদ এর ছবি

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সাথে কওমী মাদ্রাসার কোন সম্পর্ক নেই। আপনি হয়ত গুলিয়ে ফেলেছেন। কওমী মাদ্রাসার বেশিরভাগ কিন্তু তাবলীগ জামাতের আদর্শ অনুসরণ করে। দেওবন্ধের অনুসারী ওরা। আর চরমোনাই পীর এর অনুসারীদের অনেকেই কওমী মাদ্রাসার সাথে জড়িত।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রাথমিক স্তরে সমন্বয় এর কথা বলেছি। ভীষণ গরীব রকমের পরিবারের ছেলেরা কওমী মাদ্রাসায় যায়, একরকম বাধ্য হয়েই, এদের মনন ঘটাতে না পারলে একসময় এরা যেকোন রকম অনুসারী হয়ে যাবে। হেফাজতে ইসলাম যেভাবে ব্যবহার করল এদের, নিশ্চয় দেখতে পেরেছেন। সাত গ্রামে একটা ডিসপেন্সারী না থাকলেও সাত গ্রামে সাতটা কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। কেটে দিয়ে হিসাব করা সম্ভব হবে না। বরং সমন্বয় ও আধুনিকায়ন এর মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে।

সত্যপীর এর ছবি

দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত না? কোন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের কথা হইতেছে?

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান এর ছবি

না। দেওবন্দীদের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সম্পর্ক বৈরি। খুব বেশিকিছু জানি না কিন্তু যতটা জেনেছি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং মতাদর্শের প্রচুর শাখা প্রশাখা এবং মতান্তর আছে, কিন্তু দেওবন্দীদের সাথে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর বিরোধীতা প্রবল।

সাইদ এর ছবি

@তানিম এহসান- হ্যা আপনি ঠিক বলেছেন। একেবারে ১৮০ ডিগ্রি পার্থক্য। এই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রতিষ্টা বলে হয় Ahmed Raza Khan Barelvi কে যিনি দেওবন্দীদের মতাদর্শ পছন্দ করতেন না

কারু এর ছবি

আপনি যে বিষয়ে কথা বলেছেন, সেগুলো লেখকের বক্তব্যের সঙ্গে মোটেও সাযুজ্যপূর্ণ নয়। মনে হচ্ছে আপনি একটি অনাহূত বিষয়েকে এখানে টেনে এনেছেন শুধুমাত্র বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য।

সাইদ এর ছবি

@পীর সাব- আপনার রেফারেন্স ঠিক আছে। তবে আমি এদের কথা বলি নাই। নিচে লিঙ্ক দিলাম যাদের কথা বলেছি।
http://en.wikipedia.org/wiki/Jamaat_Ahle_Sunnat

বাংলাদেশে এদের মুখপাত্র সুন্নিবার্তা নামক একটি ম্যাগাজিন

সত্যপীর এর ছবি

আচ্ছা বারেলভির জমাত আহলে সুন্নাতের কথা হচ্ছে। বুঝছি।

হেফাজত লিডার শফির হাটহাজারী মাদ্রাসা তো দেওবন্দী? আবার তালিবান, সিপাহে সাহাবাও ছিল দেওবন্দী। এইখানে কি ভুল আছে কোন?

..................................................................
#Banshibir.

সাইদ এর ছবি

হেফাজত লিডার শফির হাটহাজারী মাদ্রাসা তো দেওবন্দী? আবার তালিবান, সিপাহে সাহাবাও ছিল দেওবন্দী। এইখানে কি ভুল আছে কোন?

নাহ কোন ভুল নাই

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ।

চরমোনাই পীরের ব্যাপারটা কি? এরা কিরকম দেওবন্দী, হাটহাজারি ঘরানার না গ্যাঞ্জাম আছে?

..................................................................
#Banshibir.

সাইদ এর ছবি

নাহ গ্যাঞ্জাম নাই, তবে এরা মাঝে মাঝে জামাতের সাথেও এক হয়ে যায়। রেফারেন্সটা হাতের কাছে নাই। এরাও দেওবন্দী, তবে স্বার্থের কারণে মঅদুদীবাদী হতেও পিছপা হয় না হাসি

সাইদ এর ছবি

@পীর সাব- আর আপনি যাদের কথা বলছেন দেওবন্ধী তারা হল উইকিপিডিয়া অনুসারে
"Ahle Sunnat Wal Jamaat, alternate name for banned Sipah-e-Sahaba Pakistan, a Deobandi organisation and formerly registered Pakistani political party. It was banned in Pakistan because of its terrorist activities.।"

http://en.wikipedia.org/wiki/Sipah-e-Sahaba_Pakistan

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই বিভিন্ন মত পার্থক্যের ধারা অনুসারীদের একটা ছবি একেঁ বোঝালে ভালো হত।

অতিথি লেখক এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

(১৬) মানতীক, (১৭) ফালসাফা নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে -- দুইটার অবস্থাই খুবই করুণ। মানতীকে যা আছে তা আভিসিনিয়ান লজিক পর্যন্ত, কিছু এরিস্টোটলীয় লজিক আছে যা নাম মাত্র (যেহেতু আভিসিনিয়ান লজিক গ্রীক লজিক থেকেই উদ্ভুত, সে জন্য উপেক্ষা করা সম্ভব হয় নাই) -- এর পর আর কিছুই নাই। মূলত কওমীওয়ালাদের মানতীক আটকে আছে সেই বারশ শতাব্দীতে। আর ফালসাফার অবস্থা আরো করুণ (মূলত গাজ্জালীয় দর্শন দিয়ে ভরপুর)। আর গণিত পুরাই উপেক্ষিত।

কিন্তু আমার মতে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে পারে। আমার জানা মতে সেখানে মানতীকের কামীল পর্যায়ে উচ্চতর গাণিতিক যুক্তিবিদ্যা (এমনকি স্নাতক পর্যায়ে গোডেলের অসম্পূর্ণতা তত্ত্বও পড়ানো হয়), যা আমাদের দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ানো হয় না।

সমস্যা হল, মোটামোটি সব কওমী মাদ্রাসাগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে, আর এইসব যায়গায় আমাদের মূলধারার পাঠ্যসূচী হঠাৎ করে ঢুকানো সম্ভব নয়, হুজুররা এই ব্যপারে খুবই গোড়া। খুবই সূক্ষ্মভাবে এদের পাঠ্যক্রমে (বিশেষতঃ যুক্তিবিদ্যা আর দর্শনে) অন্যান্য আধুনিক (এবং যা হুজুরদের দর্শনের সাথে সাংঘার্ষিক নয়) এমন সব বিষয় ধীরে ধীরে ঢুকানো যেতে পারে। আমরা "আধুনিকীকরণ" বলতে যা বুঝি, কওমীদের কাছে তার অর্থ এক নয়, পুরাই আলাদা।

যেমন রোগ তার চিকিৎসাও সেরকম হতে হবে, তানা হলে কওমীদের চিন্তার বলয়ে পরিবর্তন আশা করা কঠিন।

-- রামগরূড়

শিশিরকণা এর ছবি

চলুক

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অগ্নির এর ছবি

তার মানে তারা নিজেরাই কেউ ধর্ম বিষয়ে একমত না, কিন্তু সারা দেশরে মানতে হবে ! ঠিক কি মানতে হবে তাও তারা জানেনা !!

সুমাদ্রী এর ছবি

এই দেওবন্দীরাই তো ইংরেজী শিক্ষার কঠোর বিরোধিতা করেছিল ব্রিটিশ যুগে, এবং এই বিরোধিতার কারণে মুসলমানদের বিরাট একটা অংশ ইংরেজী শিক্ষাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল, এরা এখনও সেই পুরোনো মতাদর্শই ধরে রেখেছে।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।