আমার "সাইঞ্ছে" পড়া জ্ঞান দিয়ে কিছু কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৭/০৪/২০১৩ - ১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি তখনও স্কুলে ভর্তি হই নি। আমার সবার বড় বোন সেবার ক্লাস নাইনে উঠলো। তখন সবার কথা শুনে বুঝতে পারলাম যে, পড়ালেখা আসলে দুই প্রকার। যারা বেশি পড়ালেখা করে, তারা হয় "সাইঞ্ছে পড়ে" আর নয়তো "আর্সে পড়ে"। সাইঞ্ছে পড়ে মানুষ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর "বৈজ্ঞানিক" হয়। আর যারা আর্সে পড়ে, তারা উকিল হয়, নইলে অফিসে চাকরি করে। যাই হোক, সেবার আমার বোন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর বৈজ্ঞানিক হবার পথেই হাঁটলো, আর আমার মধ্যেও এই "সাইঞ্ছ" জিনিসটার প্রতি একটা আগ্রহ চলে আসলো।
তার পরের বছর আমি স্কুলে ভর্তি হলাম। ছোট ছেলে বলে আমাকে ভর্তি করা হলো বাড়ির কাছেই "ইসলামী একাডেমি" নামের একটা স্কুলে। আমার আরেক বোন তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে প্রাইমারি স্কুলে। তার কী সুন্দর বিজ্ঞান বই, কিন্তু আমার ক্লাস ওয়ানে শুধু বাংলা, ইংরেজি আর অংক বই, আর আছে ইসলামী একাডেমীর স্পেশাল আরবি বই। আমার মনে আছে, আমি ক্লাস ওয়ানে থাকতে যতো না নিজের বই পড়েছি, তার চেয়ে বেশি পড়েছি আমার বোনের ফাইভের বাংলা বইয়ের "প্রাণীজগৎ এক বিস্ময়" আর বিজ্ঞান বইয়ের সৌরজগত অধ্যায় ।(ছোটুবেলা থেকেই আমার মাথা পরিষ্কার বলে বুঝতে কষ্ট হয় নাই খাইছে) তখন সৌরজগতের পরে ছিলো কীভাবে পৃথিবীর চলাচলের জন্য দিন-রাত হয়, ঋতু পরিবর্তন হয় এইসব। তখন আমি ঋতু পরিবর্তন পড়তে পারতাম না "ঋ" আর "ঝ" এর মাঝে তালগোল পাকিয়ে পড়তাম "ঝতু পরিবর্তন"। এসব পড়ে হাতে কলমে পরীক্ষাগুলো করার জন্য আমার দরকার হলো একটা গ্লোব। সেই গ্রামের বাড়িতে গ্লোব আমি কোথায় পাই। শেষে আব্বার কাছে বায়না ধরতে হলো। একটা গ্লোব আমার গরীব পিতার জন্য আসাধ্য না হলেও অযথা ব্যয় মনে হওয়াতে আমি সেটা পাই নি অনেকদিন পর্যন্ত।
যাই হোক, এভাবে দিন গড়াতে লাগলো, আর আমি ক্লাস থ্রিতে উঠলাম। প্রথমবারের মতো আমি পেলাম বিজ্ঞান বই, আর সমাজ বই। আমি তখন পুরোনো ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে বইয়ের মলাট লাগাতাম। আমার মনে আছে আমি ক্যালেণ্ডারের সবচেয়ে সুন্দর ছবিওয়ালা পাতা দুইটি দিয়ে মলাট লাগিয়েছিলাম এই দুই নতুন বইয়ের। আমার সেই স্কুলে সরকারি কারিক্যুলামের বই পড়ানো হতো না, পড়ানো হতো "ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি" নামের একটা সঙ্ঘের বই (অনেক মাদ্রাসায় এই বইগুলো পড়ানো হতো) । আমার বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায় ছিলো "বিজ্ঞানময় গ্রন্থ আল ক্বোরান"। কীভাবে বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কারের কথা ক্বোরানে সব বলা আছে, তা নিয়েই এই অধ্যায়। সম্পূর্ণ বইটাই ছিলো মূলত একটা ধর্মগ্রন্থ। ক্লাস ফোরের বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়ও দেখি একই। বাকি বইয়ের লেখা হুবুহু এক না হলেও বিষয়বস্তু একই, ধর্মচর্চা। মানুষের চাঁদে অভিযানের বর্ণনায় লেখা কীভাবে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের আগাগোড়া একটা ফাটল আর অচেনা সুর শুনে পৃথিবীতে এসে সেই সুরের সন্ধান করে জানতে পারলেন সেটা আজানের সুর আর সাথে সাথে মুসলমান হয়ে গেলেন। সেই সাথে সেই বিজ্ঞান বইয়ে বর্ণনা ছিলো কীভাবে মহানবীর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিবিভাজিত হয়েছিলো আর সেই মোজেজার সম্মানে এখনও চাঁদে ফাটলটি রয়ে গেছে, আর তার পবিত্রতা প্রকাশ করছে চাঁদের বুকের আজানের ধ্বনি। একই বইয়ের সৌরজগত অধ্যায়ে উল্কার বিষয় আসলে বলা হয় উল্কা আসলে শয়তানের মহাকাশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ছুটে ছুটে পাহারা দেয়, কারণ শয়তান প্রায়ই অলৌকিক জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে মহাকাশে যাত্রা করে।
এতসব কিছুর মাঝেও বিজ্ঞান বইয়ে কিছু বিজ্ঞানও থাকতো, সেগুলোর জন্যই অন্তত কিছুটা হলেও স্বাদ পেতাম "সাইঞ্ছের"।

বিজ্ঞানের নামে এরকম বই আরও দেখেছি। ক্লাস নাইনে একবার রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারের পুরষ্কার হিসাবে পেলাম (সম্ভবত) মোহাম্মদ আব্দুল হাকীম নামের একজন উকিলের লেখা বিজ্ঞান বই "পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে"। বইয়ের প্রথম পাতায় লেখকের চ্যালেঞ্জ "কেউ যদি কোরান-হাদীস, বেদ-বাইবেল, ত্রিপিটক-জিন্দাবেস্তার কোথাও দেখাতে পারেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে অথবা শুধু এইটুকু যে পৃথিবী ঘোরে, তবে তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হবে"। বোঝাই যাচ্ছে বইয়ের বিষয়বস্তু। উকিল সাহেব নানা যুক্তি দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, সমস্ত ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রমাণ এনে দেখিয়ে দিলেন কীভাবে পৃথিবী স্থির আর সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। লাভের মাঝে লাভ, আমার মাঝে যতোটুকু ধর্মবিশ্বাস ছিলো তাও উঁবে গেলো। (আরেকটা লাভ অবশ্য হয়েছিলো, বইয়ের যুক্তিগুলো খণ্ডন করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম) আমার অনেক বন্ধু যারা অনেক ভালো ছাত্র এবং এখন বড় বড় জায়গায় লেখাপড়া করছে, তারা এই বই ধার নিয়ে পড়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো।

এরপর কলেজ পাশ করার পর আরেকটা বই পেয়েছিলাম "স্রষ্টার সৃষ্টি" নামে। লেখক হিসাবে নাম ছিলো একই সাথে বেশ কয়েকজন ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ারের। সেই চটি সাইজ বই লিখতে কেন এতোজন লেখক লেগেছিলো তা জানি না, সম্ভবত প্রমাণ করা যে অনেক মানুষ বইটার বক্তব্যের সাথে যুক্ত। বইয়ে ডারউইনের তত্ত্ব কীভাবে এই শতকের গোড়ার দিকে ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং তা কতো হাস্যকর তার অনেক অনেক যুক্তি লেখা। আগের বই পড়ে মেজাজ গরম হওয়ার অভিজ্ঞতায় এই বই আর পড়িও নি, যুক্তি খণ্ডন দূরে থাকুক।

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ, কোন বিজ্ঞানীও নই, বিজ্ঞান খুব ভালো বুঝি তাও না। শুধু এইটুকু বুঝি, বিজ্ঞানের নামে যতো অপকর্ম হয়, তা আর কোন কিছুর নামেও হয় না (অনেকে বলবেন ধর্মের নামে বেশি অপকর্মের কথা। কিন্তু ধর্ম নিজেই কি বিজ্ঞানের নামে অপকর্ম করে না? "ইহা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত" কথাটা কি ধর্মীয় বিষয়ের সাথেই ব্যবহার করে না কাঠমোল্লা থেকে মিশনারি থেকে জাকির মোল্লারা?) আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত নানামুখী বিভাজনে। বিভাজন রেখেই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান পড়ানোর হাইব্রীড সলিউশন দিচ্ছেন অনেকে। মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তিও চলছে। আমি নিজে মাদ্রাসার সিলেবাসে পড়ে এসেছি দেখে আমি জানি যে এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য কিছু নয়। আমি "মডারেট" মাদ্রাসায় পড়েছি বলে চক্ষুলজ্জায় তাও কিছুটা "মডারেট" শিক্ষাদান চলতো, ক্বওমী মাদ্রাসায় কী হয়, তা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। ভুল বিজ্ঞানের চাইতে অজ্ঞতা শ্রেয়, কারণ ভুল বিজ্ঞান মানুষকে একটা ভুল বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে অজ্ঞ মানুষ নিজের বিবেক বুদ্ধির জোরে অন্তত মানুষ হিসাবে অবশিষ্ট থাকে। ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ বিনা দ্বিধায় শুদ্ধজ্ঞানে অন্যায় করে ফেলে, তারপর ভাত খাওয়ার পর হাত ধোয়ার মতো করে বিনা অপরাধবোধে হাত ধুয়ে ফেলে। আমরা যদি দেশের সব শিশুর জন্য একটি সাধারণ সিলেবাসে শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তবে প্রস্তুত থাকুন, যেদিন একজন "সাইঞ্ছে পড়া" উচ্চশিক্ষিত উচ্চপদস্ত লেজহীন স্বাভাবিক মানুষ বলবে চাঁদের বুকে সাঈদির মুখ বিজ্ঞান স্বীকৃত, কারণ সে তার বিজ্ঞান বইয়ে তা পড়ে এসেছে। এবং প্রমাণসহ।

- সুচিন্তিত ভুল


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

বিজ্ঞান যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিখতে এই চলটাই আমাদের দেশে নাই। অমুকে বলছে, তাই বিশ্বাস করতে হবে এই তরিকায় আমরা ধর্ম আর বিজ্ঞান একইভাবে অন্ধবিশ্বাস কএর বড় হই।
অথচ অনুসন্ধান করে দেখতে গেলে যে ধর্ম পরীক্ষায় ফেল মারে আর বিজ্ঞান টিকে যায় এই তফাৎ টা আমরা চক্ষু কর্ণ, ঘিলু দিয়ে অনুধাবন করতে পারলাম না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ শিশিরকণা। সচলে এটা আমার প্রথম পোস্ট। এবং আপনার কমেন্টটি আমার পাওয়া প্রথম কমেন্ট (যদিও সচল হইতে অনেক দেরি) আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

- সুচিন্তিত ভুল

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

- সুচিন্তিত ভুল

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

বই থাকলেই তো আর সব সমস্যা সমাধান হবে না। অনেকে ভাবছেন যা মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য একটা করে বিজ্ঞান বই ছাপিয়ে পাঠিয়ে দিলেই সারা দেশে বিজ্ঞানের আলো জ্বলে উঠবে, আসলে কি তাই? যাঁরা এটা পড়াবেন তাদের কি হবে? তাঁরা যদি বলে, "বইয়ে লিখা আছে তো কি হইছে, চাঁদে কোনদিনই কেউ যাইতে পারে নাই" [১]। এটা অনেকেই বিশ্বাস করে নেবে।

আবার, এর প্রমাণ পাবার জন্য বেশিদূরও যাবার দরকার নেই। আমাদের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজি বই নিয়ে তো কম পরীক্ষা হয় নি, অনেক রকম বই এসেছে, আমাদের দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষার হাল তথৈবচ [২]।

আমাদের দেশে এখন সৃজনশীল প্রশ্ন এসেছে, তার প্রভাবে কতটা সৃজনশীল প্রজন্ম পাচ্ছি আমরা? আমাদের এখানে এখনও আমরা এটা জানি যে, "নিজে নিজে মোটামুটি কিছু লেখার চাইতে, গাইডবই বা স্যারের নোট মুখস্থ লিখে দিলে বেশি নাম্বার মিলবে" আমাকে এটা কেউ কোনদিন বলেনি যে , "তোমার লেখাটা তো অত ভালো হবে না; তুমি ক্লাস ফাইভে পড়ছ, আর যিনি গাইডবই বা নোট লিখেছেন, তিনি স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে তবেই লিখছেন।"

যাই হোক, কিছুটা অপ্রাঙ্গিকতা ঢুকে গেল মন্তব্যে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমার ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হয়ত।

@ লেখক, লেখা ভালো লেগেছে, আপনার লেখনী সচল থাকুক।

টীকা:
[১] এটা নিয়ে কন্সপিরেসি থিয়রী আছে জানি। আমি উদাহরণ হিসেবে এটা ব্যবহার করেছি, আশা রাখছি কেউ ভুল বুঝবেন না।
[২] মাতৃভাষাকে মোটেও খাটো করে দেখিনি এখানে। আমাদের ইংরেজি শেখানোর দুর্বলতাটাই বলতে চেয়েছি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটিতে বড় গলদ আছে। তাই শিক্ষার্থীরা বাংলা বা ইংরেজী - কোনটাই ঠিকভাবে শিখে উঠতে পারে না। ছাপানো পত্রিকাগুলোতে মাইনেকরা প্রুফ রিডার থাকে বলে বোঝা যায় না। কিন্তু যদি ব্লগ বা পরীক্ষার খাতা (তা যে ক্লাসেরই হোক) পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন সেখানে অধিকাংশ জনের লেখায় বাংলায়ও অসংখ্য বানান ভুল, ভুল প্রতিশব্দ, বাক্য গঠণে ব্যাকরণগত ভুল ইত্যাদি। আর কথা বলতে দিলে ১০% লোকেও সঠিক উচ্চারণে বাংলা বলতে পারবে কিনা সন্দেহ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি" একটি হার্ডকোর জামায়াতী প্রতিষ্ঠান। এর পাহারাদার-ঝাড়ুদার পর্যন্ত জামায়াতের সদস্য। সারা দেশে এদের অগণিত কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, মাদ্রাসা আছে। বাংলা, ইংরেজী, আরবী - তিন মাধ্যমেই তারা আছে। এদের প্যারালাল টেক্সটবুক বোর্ড আছে। এইসব শিক্ষায়তনগুলো জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের কর্মসংস্থান, আবাসন ও নতুন সদস্য রিক্রুটমেন্টের জায়গা। এই সিনিস্টার সোসাইটিটি সম্ভবত ১৯৭৩ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্র বা রাজনৈতিক দলগুলোর কোন ভাবনা নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

স্যাম এর ছবি

চলুক
কেউ লিখুক ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি নিয়ে

অবনীল এর ছবি

চলুক

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

অতিথি লেখক এর ছবি

"ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি"র বইগুলো উল্টে-পাল্টে দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে পুরাই ব্রেইন ওয়াশিং কাজ কারবার। প্রাইমারি লেভেলের বাচ্চাদের এই বইপত্র পড়ানো খুবই বিপজ্জনক। এই বছর প্রাইমারির সব বাচ্চারা সবাই নতুন এবং রঙ্গিন বই পেয়েছে (আগে গ্রামের স্কুলগুলোতে অর্ধেক নতুন বই, এবং বাকি অর্ধেক ছেড়া পুরোনো বই দেওয়া হতো), আর দেশের শিশু শিক্ষার্থীদের একটা অংশের হাতে যা-তা লিখে পড়ার জন্য ধরিয়ে দেওয়া, এটা মানা যায় না।

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। একথা ঠিক যে সিলেবাস/বই এক হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু তখন পুরো জাতির এক প্রজন্মের সবার মাঝে একটা সাধারণ বোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টার একটা গ্রাউণ্ড অন্তত থাকবে। অবশ্যই তারপরও তাদের বেড়ে উঠার পরিবেশ, মেধা, নিজস্ব চিন্তাশক্তির ভিন্নতার জন্য একেকজনের মন মানসিকতা একেক রকম হবে, কিন্তু এখন একটা ইংলিশ মিডিয়ামের বাচ্চা আরেকটা মাদ্রাসার বাচ্চার পড়ালেখার মাঝে যেই বিশাল ব্যবধান, তাতে একজন যে আরেকজনকে সব সময় ভিন গ্রহের সদস্য মনে করবে এটাই তো স্বাভাবিক। এরা কি কখনও একজন আরেকজনের জন্য ভাবতে পারবে?

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক এর ছবি

ইংরেজির ছাত্র। থার্ড ইয়ারে Riders to the Sea (1904) পাঠ্য ছিল। যথারীতি স্যার 'পড়ানো' হয়ে যাবার পর তাঁর লেখা নোট দিলেন। জেরক্স কপি - তার থেকে আমাদেরকে আবার জেরক্স করে নিয়ে আসলটা স্যারকে ফেরত দিতে হবে।
পরে, ঘরে বসে পড়তে পড়তে সেই নোটে একটা লাইন পেয়েছিলাম - 'the text, composed during the early years of this century...' স্যার ভুলে গেছিলেন যে সেঞ্চুরি বদলে গেছে।
কে জানে হয়তো সেই নোটের এখন সিলভার জুবিলি বা ওই জাতীয় কিছু চলছে। কারণ এই ঘটনা ২০১২র। মানে নোটটা অন্তত বারো বছরের পুরোনো। তার আগে আরো কত বছর - সে হিসেব বোধহয় পরম পূজনীয় অধ্যাপক মহোদয়েরও মনে নেই।

সম্রাট দাশুগুপ্ত

পুনশ্চ: আমরা সেই নোট পড়ে উত্তর লিখে বিএ পরীক্ষা পাশ করেছিলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার অনেক ভালো লেগেছে। মজা পেলাম গুল্লি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দেঁতো হাসি

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পেলাম, আপনার পরিস্থিতির সাথে আমার শৈশবের কনেক কিছুর মিল পেলাম।

তবে উল্কার ব্যপারে অনেকের দ্বিমত আছে, শৈশবে ময়-মুরব্বীদের কাছে জেনেছিলাম উল্কা হলো শয়তানের কুলুখের ঢিলা, সে জন্য উল্কা দেখার সাথে সাথে লা-হাওয়া-লা-কুওয়াতা পড়া দস্তুর আছে। শয়তান যেহেতু আগুনের তৈরি, সুতরাং কুলুখের ঢিলায় আগুন থাকাটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু একটা ব্যপার আমাকে মাঝে মাঝে ভাবায়, যারা উল্কার সাথে শয়তানের কুলুখের মাসায়েল বের করেছিলেন তারা কিভাবে জানলেন যে উল্কা এক প্রকার "ঢিলা"? যারা বা যে ব্যক্তি এই মাসায়েলের সাথে জড়িত, তারা নিশ্চই কোথাও না কোথাও উল্কাপিন্ড পড়তে দেখেছিলেন এবং সেইটা হাতে নিয়ে ভাল ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই উপরোক্ত মাসায়েল পয়দা করেছিলেন। এই এই তত্ত্ব পয়দা করতে কিন্তু তাদের একটা পর্যায় পর্যন্ত বৈজ্ঞনীক পদ্ধতি ধরেই এগিয়ে যেতে হয়েছে (উল্কাপিন্ড দেখে ভয়ে তওবা, নফল নামায ইত্যাদি না পড়ে সাহস করে ব্যপারটা কাছে থেকে নিরীক্ষা করার ব্যপারটা) -- যা সামান্য হলেও প্রশংসার দাবি রাখে।

-- রামগরুড়

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ রামগরুড়। হ্যা, উল্কার ব্যাপারে আপনার শোনা বিশ্বাসটাও আমি শুনেছি। মানুষের মুখে মুখে শুনলে তবুও মানা যায়, কিন্তু পাঠ্য বইয়ে, যা আবার বিজ্ঞান নামে পড়ানো হচ্ছে, তাতে এইসব ছাঁইপাশ লিখে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া উচিত

- সুচিন্তিত ভুল

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

@ রামগরুড়:
লেখক যেটা বলেছেন সেটা অনেক বেশি প্রচলিত একটা বিশ্বাস। অনেকের মুখে শুনেছি ছোটবেলায়। এর উৎস হল একটি অসমর্থিত ( জাল বা দুর্বল) হাদিস। যেখানে উল্কা মেরে শয়তান তাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। কোন একজায়গায় জাল হাদিসের উপর একটা লেখাতে এটা পড়েছিলাম [রেফেরেন্স দিতে পারছি না, দুঃখিত।]

আপনার অ্যানালাইসিসটাও অনেক ভাল, কেউ হয়ত হাতে তুলে দেখেছিল যে এটা একটা পাথর। তারপর, হয়ত ঠিক পথে ভাবলে অনেক কিছু জানতে পারত লোকটা, সেটা না করে অকারণে 'কুলুখ' বলে ঘোষণা দেবার কি দরকার ছিল জানি না অ্যাঁ

অতিথি লেখক এর ছবি
রামগরুড় এর ছবি

তবে যাইই বলেন, আমার কিন্তু "কুলুখ" হাইপোথিসিসটাই বেশী পছন্দ।

আনু-আল হক এর ছবি

হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ দারুণ । হাসির উদ্রেককারী অভিজ্ঞতার সাথে ধর্মীয় গোঁড়ামি, বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করে যে হতাশা এবং ক্ষোভের মিশ্রণসহ লেখাটা লিখেছেন, এরকম খুব কমই পড়েছি । লেখার হিউমার, বিষয়বস্তু, ব্যাখা - সব মিলিয়ে অসাধারণ লিখেছেন । চালিয়ে যান । এ বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই বলে, অন্যদের মত চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারছি না যদিও ।

- তালেব মাষ্টার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।