২০০৭ সালে, বায়তুল মোকাররমের খতিবের কাছে গিয়ে ‘’তওবা’’ করে এসেছিলেন মতিউর রহমান, এককালের চীনপন্থি কমিউনিস্ট।
ধর্মানুভূতিতে আঘাতকারি একটি ব্যঙ্গচিত্র, প্রথম আলোর ‘’আলপিন’’ ক্রোড়পত্রে প্রকাশের দায়ে সে সময়ের আলপিন-সম্পাদককে চাকরিচ্যুত ও তাঁর সহকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এবার হাসনাত আব্দুল হাই এর আবর্জনাটি ছাপার পর আবারো সেই ‘দুঃখ প্রকাশ’ এর পালা। গল্পটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যিনি গল্পটি ছাপানোর নেপথ্যে ছিলেন, এবার তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে?
১৬ এপ্রিল, প্রথম আলো সংখ্যার প্রথম পাতায় ‘ক্ষমাপ্রার্থনা’তে লেখা হয়েছে যে, গল্পটিতে (অর্থাৎ আবর্জনাটিতে) যে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে তা ‘এই পত্রিকার নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
একটু তর্ক করা যাক। ধরা গেলো এটি নিছক একটি গল্প, এবং নিছক গল্প হিশেবে এটি নববর্ষ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। কোনো লেখক প্রবন্ধে যেভাবে সরাসরি তাঁর মত সরাসরি ব্যক্ত করেন, গল্পে তা করেন না; তাহলে সেটি আর গল্প থাকে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। ধরা গেলো, হাই সাহেবের গল্পে পরোক্ষে কোনো ব্যক্তিগত মতামত প্রতিফলিত হয়েছে, বা কোনো মতামত একেবারেই প্রতিফলিত হয়নি। এটি স্রেফ ক্রোড়পত্রের আর দশটি গল্পের মতোই একটি গল্প। সেক্ষেত্রে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বলতে পারতো যে, ‘লেখক একটি গল্প লিখেছেন যার ঘটনাগুলো কাকতালীয়ভাবে কোনো বাস্তব ঘটনার সাথে মিলে যায় এবং গল্পের যেকোনো মতামত লেখকের ব্যক্তিগত মত। এ ক্ষেত্রে পত্রিকা কোনো দায় নিতে পারে না।’ বরং এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে হতো। এইভাবে তারা বিতর্ক এড়াতে পারতো চাইলেই। প্রসঙ্গত, আলপিনের প্রথম পাতার নিচেও এরকম একটি বাক্য লেখা থাকতো।
কিন্তু সংবাদপত্রের এথিকস অনুসারে, কোনো লেখা প্রকাশের পর যদি তাতে দুরভিসন্ধিমূলক কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়, তার জন্য লেখক ও কর্তৃপক্ষ উভয়েই সমানভাবে দায়ী থাকবে। আবার, যদি এমন কোনো লেখা প্রকাশের জন্য আসে- যা পত্রিকার মতাদর্শের সাথে মেলেনা, তাহলে পত্রিকা সেই লেখা ফিরিয়ে দিতে পারে। এমনটি ঘটেনি। স্ববিরোধিতা লক্ষ্যণীয়; প্রথম আলো লেখাটি ছেপেছে- একেবারে পহেলা বৈশাখের দিনেই, ইলাস্ট্রেশনসহ- কিন্তু পরবর্তীপর্যায়ে বলছে যে এই লেখা (আবর্জনা) তাদের নীতিবিরোধী। তাহলে ছাপা হলো কেনো? কর্তারা কি ঘুমোচ্ছিলেন, না প্রমোদ বিহারে গিয়েছিলেন? ফিরে এসে দেখলেন এতো বড়ো ‘সর্বনাশ’ ঘটে গেছে? সম্পাদকেরা তো দায় এড়ানোর উপরোক্ত পন্থাও অবলম্বন করেননি। তারমানে জেনেশুনেই ওই লেখা ছাপা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, ‘...... পত্রিকার নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’ গোলমেলে মনে হচ্ছে না?
ক্ষমাপ্রার্থনার পরের লাইনে বলা হচ্ছে, ‘অসাবধানতাবশত লেখাটি মুদ্রণের জন্য প্রথম আলো আন্তরিকভাবে দুঃখিত...।’ প্রায় দেড়-দুই হাজার শব্দের একটি গল্প (আবর্জনা) কীভাবে অসাবধানে ছাপা হয়ে যায়, এটা বোঝা যাচ্ছে না। প্রুফরিডার, কম্পোজার, পেস্টিং এর লোকজন, পাতার ইন-চার্জেরা কোথায় ছিলেন? অসাবধানতায় কী করে একটি লেখা এক পাতার অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল করে রাখে? লোকজন কি যার যার কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন সে রাতে, আর জ্বিন এসে সে আবর্জনা ছাপানোর ব্যবস্থা করে রেখে গেছে?
লেখকেরও একটি বিবৃতি ( সত্যিই হাই সাহেবের নিজের বিবৃতি এটি?) ছাপা হয়েছে প্রথম পাতায়। তিনিও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দাবি করেছেন, পাঠকের ‘কোমল’ মনে ফুলের টোকাও নাকি তাঁকে আহত করে। আবর্জনাটি লেখার সময়ে কোথায় ছিলো এই দুঃখ, সেটি জাতিকে বললে বোধহয় ভালোই হতো। লেখকের চারিত্রিক দৌর্বল্য বেশ চোখে পড়ে।
এর নিচে ‘প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন আছে। তাঁর একটি লাইন, ‘গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রথম আলোর কয়েকটি কপিতে আগ্নিসংযোগ করেন অল্প কয়েকজন তরুণ।’ কয়েকজন শব্দটিই যথেষ্ট ছিলো, অল্প শব্দটি বাহুল্যমাত্র, কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। লাইনখানা পড়লে মনে হতে পারে যে, কয়েকটা পাগল-ছাগলের মনে চেয়েছে বলে তারা আগুন-টাগুন দিয়ে, নাচা-কুদা করে ক্ষোভ নিবৃত্ত করেছে। উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনে অনলাইনে প্রতিবাদের বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। যেনো প্রতিবাদ ওই ‘অল্প’ কয়েকজনেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
প্রথম আলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ‘মেহেরজান’ ছবি বিষয়েও তারা বেশ ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলো; কেনো করেছিলো সেটাও অনেকের কাছে স্পষ্ট। দুরভিসন্ধিমূলক বর্জ্য ছাপিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে একধরনের সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের অভ্যাস এদের পুরোনো। কিন্তু শুধুই কি সস্তা জনপ্রিয়তা? পাকিস্তান বিষয়ে তাদের ‘ক্ষমাসুলভ’ মনোভাব, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অতিরিক্ত কভারেজ, ইউনুস প্রসঙ্গ, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ –প্রথম আলোর দেবতা-পুরোহিতেরা আসলে কোন চিন্তাধারার আর কার প্রভাবে চলে, বোধহয় এসব বিষয়ে অনুসন্ধানের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ব্রাত্য রাইসুর মতো অশিক্ষিতের ঠাঁই হয় সেখানে; পাঁচ উপসম্পাদকের কয়েকজন- বিশেষত আনিসুল হক (এ সময়ের হটেস্ট ব্রান্ড) , সাজ্জাদ শরীফ (এরশাদ আমলে যে নাকি মজলিশি কবিতা লিখতো) – আজকে দেখা যাচ্ছে জাতির বিবেক হয়ে উঠছে। ফরহাদ মঝার অনেক আগেই প্রথম আলোতে তার মন্দির বানিয়ে রেখে গেছে দেখা যাচ্ছে। বেশ পূজো চলে সেখানে। নাকি তার চেয়েও বড়ো কোনো ‘আন্তর্জাতিক’ দেবতার উপাসনার চল আছে ওই ভবনে?
কবে আমরা বদলে যাবো, বদলে দিবো?
মন্তব্য
প্রাসঙ্গক লেখা। অনেকাংশেই একমত। লেখকের নাম চোখে পরে নি ধন্যবাদটা দিবো কাকে?
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
সুবোধ অবোধ
আন্তর্জাতিক দেবতার খেলাই তো সব কিছু-শেষ বিচারে। এ খেলায় প্রথম আলো অভিজ্ঞ।
ভাল লাগলো লেখাটি। মতিউর রহমান সম্পর্কে তথ্যটি অবশ্য সঠিক নয়, তিনি চীনপন্থি কমিউনিষ্ট ছিলেন না। বরং সোভিয়েতপন্থি দল হিসেবে পরিচিত সিপিবি'র মুখপাত্র "সাপ্তাহিক একতার" তিনি ছিলেন সম্পাদক। বহু আগে হাসনাত আব্দুল হাইয়ের লেখালেখিতে কোন কোন সময় চীনপন্থি সমাজতন্ত্রের প্রতি প্রচ্ছন্ন অনুরাগ প্রকাশ পেত।
তার মানে কি খারাইলো?? আমার ডিপার্টমেন্টের হেড উৎপল স্যার সব সময় একটা কথা বলতেনঃ- "ইংরেজরা ভালো কাম করছে একখান, সরি ওয়ার্ডখান রাইখা গেছে। এখন কারো মাথা ফালায়া দিয়া তারপরে সরি কইলেই সব কাটাকুটি। কাটা মাথাও পড়তে পড়তে ভদ্রতা কইরা কয় 'ইটস ওক্কে!' "
নিজেরে ক্যান জানি কাটা মাথা মনে হইতাছে!!!
আওয়ামি পুটুতে লেগেছে ??
মনে হয় এই কেনোর উত্তর সবার কাছেই আছে, শুধু অনুচ্চারিত এই যা।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আব্দুল্লাহ এ এম
আপনি ঠিক। ভুলটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
নতুন মন্তব্য করুন